তুমি_কেনো_এলে_জানিনা_এখনও #অষ্টম_পর্ব

0
638

#তুমি_কেনো_এলে_জানিনা_এখনও
#অষ্টম_পর্ব
#লেখনীতে_সুহানা_সুলতানা

রুমে গিয়ে মেঘাকে বেডে বসিয়ে দিয়ে ওর হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল ইয়াসির। কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন সার্ভেন্ট প্লেটে খাবার দিয়ে গেলো। ইয়াসির মেঘার উদ্দেশ্যে বললো,,,

তাড়াতাড়ি খাবারটা খেয়ে নাও। তারপর প্যাকেটের মধ্যে যেই ড্রেসটা আছে ওটা পড়ে নীচে চলে আসবে। আমি জেনির কাছে যাচ্ছি। ডু ইট ফাস্ট।

মেঘাও ইয়াসিরের কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করে নীচে গেলো। দুজনে একসঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কারে উঠলো। ইয়াসির গাড়ি স্টার্ট দিলো।

মেঘ?

হ্যাঁ, বলুন।

কালকে কিন্তু আমাদের কোর্টে যেতে হবে। তুমি যাবে তো?

অবশ্যই যাবো।

আরও টুকটাক কথাবার্তা বলতে বলতেই ওরা শপিং মলে পৌঁছে গেলো।

আপনি এখানে এলেন কেনো?

এখানে মানুষ কি করতে আসে?

একটা কথার উত্তরও আপনার থেকে সোজা সাপটা আশা করা যায় না।

অনেকক্ষন পর মেঘা স্বাভাবিক হয়েছে। তাই এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে আর কোনো কথা বললো না ইয়াসির। দুজনেই শপিং মলের ভেতরে ঢুকলো। দুই ঘণ্টা সময় কেটে গেলো শপিং করতে করতেই।

আপনি এই দিকে কোথায় যাচ্ছেন? বাড়ির রাস্তা তো ওই দিকে।

একটা স্পেশাল জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি তোমায়। এখন চুপচাপ থেকে গান শোনো নয়তো বাইরের পরিবেশ দেখো।

মেঘা কাঁচ ভেদ করে সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ঝোড়ো হাওয়া বইছে। রাস্তার দুই পাশে থাকা গাছগুলি প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে হাওয়ায় নিজেদের ভাসিয়ে দিয়ে নেচে উঠেছে। চারিদিকে সন্ধ্যা সন্ধ্যা ভাব নেমে এসেছে। প্রকৃতিবিলাস করতে করতেই বেশ কিছুক্ষন পর ওরা গন্তব্যে পৌঁছে গেলো।

গাড়ি থেকে নেমে মেঘা আলো আঁধারিতে খেয়াল করলো ওরা একটা লেকের পাড়ে এসেছে। চারিপাশ থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ভেসে আসছে। টিমটিমে আলো জ্বালিয়ে জোনাকিরা নিজেদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছে।

মেঘা আর একটু সামনে এগিয়ে গেল। ইয়াসির ওর পেছনে বুকে হাত গুঁজে ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘা দুই হাত প্রসারিত করতেই বেশ কয়েকটা জোনাকি ওর হাতের ওপর চুলের ওপর বসলো। মেঘা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। ইয়াসির ওর হাসিমাখা মুখটির দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইল।

ইয়াসির সাহেব, এই জায়গাটা সত্যিই খুব স্পেশাল। খুবই সুন্দর।

মেঘা আরও কয়েকপা সামনে এগোতেই ইয়াসির ওকে নিজের দিকে টেনে নিল।

তুমি কি দেখতে পাচ্ছো না আর একটু এগোলেই লেকের জলে পড়ে যেতে? এতোটা কেয়ারলেস তুমি কি করে হতে পারো।

আমি বুঝতে পারিনি। প্লীজ রাগ করে এই মুহুর্তটাকে নষ্ট করবেন না।

ইয়াসির মেঘাকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলে উঠলো,,,

রাগ করিনি আমি। ভয় পেয়েছিলাম। তোমায় হারানোর ভয়।

মেঘা ইয়াসিরের অগোচরে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। তারপর নিজেও পরম প্রশান্তিতে-ভালোবাসায়-প্রগাঢ় অনুভূতিতে ইয়াসিরকে জড়িয়ে ধরলো।

ভালোবাসি, ইয়াসির সাহেব।

মেঘা পা দুটো উঁচু করে ইয়াসিরের শার্টের কলার ধরে ইয়াসিরের মাথাটা নামিয়ে নিয়ে কপালে বেশ খানিকক্ষণ সময় নিয়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। মেঘা ইয়াসিরের কাছ থেকে সরে যেতে গেলেই ইয়াসির ওকে কাছে টেনে নিজেদের সামান্য দূরত্বটুকুও ঘুচিয়ে ফেললো। অবশেষে মেঘার বন্ধ চোখ জোড়ার মুখোশ্রীতে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দুই চোখের পাতায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে দুজনের ওষ্ঠ জোড়া এক করে দিলো।

মিসেস মাহিরা নৌশীনকে খুন করার অপরাধে আর বিভিন্ন অবৈধ ব্যাবসায় জড়িত থাকায় এবং ড্রাগস ডিলিং-এর মতো জঘন্য অপরাধ করে যুবসমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য এবং মিসেস মেঘা চৌধুরীকে হত্যার চেষ্টা করার জন্য মিষ্টার রোহান চৌধুরীকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হলো আদালতের পক্ষ থেকে। মিসেস মেহের চৌধুরীর ওনাকে হত্যার মতো জঘন্যতম কাজে সাহায্য করার জন্য জাব্বজিবন সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান দিলো আদালত।

জজ তার মতামত পেশ করে দিলেন। পুলিশরা যখন রোহান চৌধুরীqকে নিয়ে যাচ্ছিল মেঘা ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। মেহের চৌধুরীর দিকে ফিরেও তাকালোনা।

মেঘাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে ইয়াসির অফিসে চলে গেল। জেনির সঙ্গে খেলা করে অনেকটা সময় অতিক্রান্ত করলো। কিন্তু বিকেল হতেই ইয়াসিরের সঙ্গে কথা বলার জন্য ওর মস্তিষ্ক ওরই বিরুদ্ধাচরণ করলো। তাই কথা বলার জন্য ফোনটা হাতে নিয়ে ইয়াসিরের নম্বরে ডায়াল করলো। প্রথমবার রিং হয়ে হয়ে কেটে গেলো। দ্বিতীয়বার ডায়াল করার কিছুক্ষন পর কলটা রিসিভ হলো।

ইয়াসির সাহেব আই মিস ইউ।

ওপাশ থেকে কাশির আওয়াজ ভেসে এলো।

ম্যাম আমি স্যারের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট বলছি। স্যার একটা মিটিংয়ে আছেন। মিটিংটা শেষ হলেই আপনাকে কল করতে বলবো।

আচ্ছা।

মেঘা ছোট্ট উত্তরটা দিয়েই তাড়াতাড়ি করে ফোনটা রেখে দিল।

মেঘা তোর কি বুদ্ধিশুদ্ধি আর হবে না। ঊনিশ বছরের তো হয়ে গেলি তুই তাও ফোনের ওপাশে কোন ব্যাক্তি আছে সেটা জেনে নেওয়া উচিত তা কি তুই জানিস না? ইশ কি মনে করলো লোকটা।

প্রায় দুই ঘণ্টা পর ইয়াসির কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

সায়ন কালকে আমার অফিসে আসতে দেরী হবে। সকালের মিটিংটা তোমাকেই অ্যাটেন্ড করতে হবে। আমি ফাইলগুলো দেখে রেখেছি। আমার সাথে এখন বাড়ী যাবে আর ফাইলগুলো নিয়ে আসবে।

স্যার ম্যাম ফোন করেছিলেন।

কি বলছিলো?

সায়ন আমতা আমতা করে বললো,

ম্যাম আপনাকে মিস করছে।

ইয়াসির ওর দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো।

চলো বাড়িতেই তো যাচ্ছি এখন। একদম সামনাসামনি কথা বলে নেবো।

গাড়ির আওয়াজ শুনে মেঘা বেডরুম থেকে দৌঁড়ে নীচে এলো। দেখলো ইয়াসির ভেতরে ঢুকছে আর ওর সঙ্গে আর একজনও আছে। ইয়াসির দেখলো মেঘা একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

মেঘ এটা আমার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সায়ন। আর সায়ন তুমি এখানে ডিনার করেই বাড়ীতে ফিরবে।

না না স্যার। আমি বাড়ি গিয়েই ডিনার করে নেবো।

আমি একটা কথা দুই বার বলতে পছন্দ করি না।

ওকে স্যার। হ্যালো ম্যাম।

হ্যালো। আপনি আমার থেকে অনেকটাই বড়ো তাই প্লীজ ম্যাম বলে সম্বোধন করবেন না। তাছাড়াও আমি আপনার বোনের মতো তাই আপনি বলার দরকার নেই। আমাকে বোন ভাবতে পারেন।

আমি তো ভেবেছিলাম স্যারের ওয়াইফ অ্যাটিটিউডওয়ালী হবে কিন্তু আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভূল ছিলো।

মনে মনে কথাগুলো আওড়ে নিয়ে সায়ন বলে উঠলো,,,

আমারও একটা বোন ছিল কিন্তু অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে। আজ থেকে তাহলে তুমি আমার বোন হলে।

ভাইয়া তাহলে কিন্তু অবশ্যই ডিনার করে যাবেন।

আচ্ছা।

সায়ন তুমি একটু অপেক্ষা করো। আমি ফ্রেশ হয়ে ফাইলগুলো নিয়ে আসছি।

ইয়াসিরের পিছু পিছু মেঘাও রুমে গেলো।

আমার বউটা নাকি আমায় মিস করেছে?

করেছে তো। আপনি অফিসে যাওয়ার পর একটা ফোনও করেন নি ইয়াসির সাহেব। আপনি খুব খারাপ।

ইয়াসির মেঘাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।

আমার মিটিং ছিলো ব্যাস্ত ছিলাম তাই তো খোঁজ নিতে পারিনি। তুমি কি এখনও অভিমান করে থাকবে?

মেঘা ইয়াসিরের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলে উঠলো,,,

আমার অভিমান আপনার সামনে কেনো যে থাকে না। দেখুন আমি কত কিছু ভেবে রেখেছিলাম আপনি আসলে কথা বলবো না সেই সঙ্গে আরও অনেক কিছু কিন্তু যেই আপনি চলে এলেন তখন সবকিছু গুলিয়ে গেলো।

ইয়াসির শব্দ করে হেসে উঠলো।

একদম হাসবেন না। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নীচে চলুন। ভাইয়া বসে আছেন।

যথাআজ্ঞা মেঘরানী।

দুজনে একসঙ্গে নীচে নামলো। ডিনার করার পর ইয়াসির সায়নকে সবকিছু বুঝিয়ে দিল। তারপর সায়নকে বিদায় দিয়ে রুমে চলে গেলো।

কি হয়েছে আপনার? মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেনো?

মাথাটা ব্যাথা করছে। আজকের ক্লায়েন্টগুলো মাথাটাকে খেয়ে ফেলেছে। একটানা চারঘন্টা কনফারেন্স রুমে থাকতে হয়েছে তো তাই মাথাটা ব্যাথা করছে। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।

মেঘা ইয়াসিরের মাথাটা কোলের ওপর রেখে মাথা ম্যাসাজ করতে শুরু করলো।

রাত হয়েছে মেঘ ঘুমিয়ে পড়ো। এসব করতে হবে না।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here