রক্তিম_চন্দ্র #পর্ব_৮

0
360

#রক্তিম_চন্দ্র
#পর্ব_৮
#তুষার_আব্দুল্লাহ_রিজভী

কয়েকদিন পর। জাহাজে দুদিন থাকার পর তৃতীয় দিন আজ। দিন না বলে রাত বলতে হয়। রাতের আকাশে একফালি চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোই আলোকিত হয়ে আছে সমুদ্রে চারদিক। সমুদ্রের পানি চিকচিক করছে সেই আলোর কারণে। রিপ জাহাজের একদম কিনারে দাঁড়িয়ে সাগর দেখছে। পরনে নীল টি-শার্ট আর কালো জিন্স।
সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ। জাহাজে প্রায় ৭ জন আছে। মাঝারি জাহাজ। সেখানে শুধু রিপ আর বাকিরা কর্মচারি জাহাজের। তারা জাহাজ পরিচালনায় ব্যস্ত।
রিপের মামা একটা জাহাজটা ম্যানেজ করে দিয়েছে ভাগ্নেকে। এবার আর ওর মামা ওর পিছনে লোক লাগাইনি। যদি লাগাতো তাহলে ও বুঝতে পারতো। তাছাড়া ভাগ্নের আবদার আর ফেলবে না ওর মামা সেটা রিপ ভালো করেই জানে।
বেরিয়ে আসার সময় তার মায়ের দেওয়া ডায়েরি আর সঙ্গে সেই নীল ডায়মন্ডটা নিয়ে এসেছে৷ নীল ডায়মন্ডটা ওখানে নিরাপদে রাখতে পারতো তবে নিজের কাছে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করে রিপ। তাই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। হয়তো মন বলছিল এই ডায়মন্ড ওর খুব প্রয়োজন। মনের ডাকে সায় দিয়েছে রিপ।
হঠাৎ জাহাজে বিপদ সঙ্কেতসূচক সাইরেন বাজানো হলো। বুঝতে আর বাকি রইলো না। যেখান থেকে জাহাজ হারিয়ে যায় সেই এরিয়ার আশেপাশে আছে তারা। তাছাড়া নির্দিষ্ট কোনো জায়গা শনাক্ত করা যায়নি যে যেখানে পৌঁছে গেলো ঠিক সেখান থেকে জাহাজ উদাও হয়ে যায়।
সেখানে কিছুক্ষণ চলার পর জাহাজের উপর এক বিশাল মেঘ এসে উপস্থিত হলো। দেখতে একদম সাদা-কালো মিশে আছে। কিন্তু মেঘটা মাথার উপর থেকে জাহাজ বরাবর নামতে লাগল। রিপ বাহিরে দাঁড়িয়ে বিষয়টা খেয়াল করল। দেখে অবাক লাগলেও অনেকটাই আতঙ্কিত হয়ে গেছে ও। সেটা দেখে সকলে ভয় পেয়ে গেল। জাহাজ ঘুরানোর চেষ্টা করল নাবিকেরা। কারণ কোনো মেঘ তো কখনো নিচে নামে না কখনো। সবাই মনে করেছিলো বৃষ্টি কিংবা ঝড় হবে।
কিন্তু ঘটলো উল্টো টা। মেঘ নিচে নামছে। রিপ ব্যপারটা বুঝতে পেরে চলে গেল কেবিনে। কেবিনেই কিছুটা নিরাপদ থাকবে রিপ। গিয়ে আগে ডায়েরিটা আর ডায়মন্ডটা নিজের কাছে নিয়ে নিল।
হঠাৎ মেঘটা নির্দিষ্ট একটা দূরুত্বের নিচে এসে থেমে গেল। এদিকে জাহাজ ঘোরানোর চেষ্টা চলছে কিন্তু জাহাজের জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল। মেঘকে থেমে থাকতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ হওয়াতে শুরু হয় আবার কোলাহল। সকলে ছুটে যায় এদিক ওদিক। জাহাজের ইঞ্জিন ঠিক করার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায় সকলে। দ্রুত ঠিক করতে হবে৷ নইলে তারা ফিরতে পারবে না।
মেঘের ভিতর থেকে একটা বিকট শব্দ বেরিয়ে এল। শব্দের মাত্রা এত বেশি যে সকলে দু’হাত দিয়ে দু’কান চেপে ধরেও কাজ হলো না। শব্দটা যেনো কানের পর্দা নাড়িয়ে দিয়ে গেল সকলের।
কিছুক্ষণ নীরবতা বিরাজ করলো সেখানে। হঠাৎ একটা সাদা আলো এসে পড়লো জাহাজের উপর আর জাহাজ উধাও হয়ে গেলো। রিপ জাহাজের কেবিনে থাকাতে বেশি কিছু বুঝতে পারল না।
অনেক সময় কেটে গেল। কারো কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে রিপ কেবিন থেকে বেড়িয়ে এল। জাহাজের উপরে কেউ নেই। জাহাজের কিনারায় এসে দেখলো জাহাজ লাল বর্ণের মাটির উপর। কোথাও কোনো পানির ছিটে ফোঁটা নেই। রিপের মাথায় কাজ করছে না। মাথা ঘুরতে লাগল এসব দেখে। কিন্তু কিছু সময় পর ওর কাছে বিষয়টা দারুণ উপভোগ্য বলেই মনে হচ্ছে।
ওর জানা মতে, কিছুক্ষণ আগেও তার জাহাজ ছিল সমুদ্রের মাঝে। এত জলদি কখনোই সম্ভব না কোনো ভূমির উপর এসে পৌঁছানো। আশেপাশে যদি কোনো দ্বীপ থাকেও তবুও অনেক সময় তো লাগবে।
একটা বিশাল সাদা-কালো বর্ণের মেঘ তাদের জাহাজের ঠিক উপরে আকাশ থেকে নামতে দেখে সে কেবিনে চলে যায়। তাহলে কী সেই মেঘের কারণে? হলেও হতে পারে কিন্তু বাকি লোকেরা কোথায় জাহাজের।
সে সেখান থেকে নেমে আশেপাশে দেখতে লাগলো। রিপ আশেপাশে যতই চোখ বুলাচ্ছে ততই অবাক হচ্ছে।
পায়ের নিচে লাল বর্ণের মাটি। উপরের আকাশও লাল বর্ণের। সূর্য নাকি চাঁদ বোঝা গেল না ততটা। ওটাও লাল বর্ণের হয়ে আছে। আশে-পাশের গাছ, গাছের পাতা ও মাটির উপরে ঘাসও লাল বর্ণের। সবকিছু লাল বর্ণের। এই জায়গাটা বোধহয় লাল বর্ণেরই কোনো জায়গা। যেখানে হয়তো অন্য কোনো বর্ণের আলোক রশ্মির তেমন অস্তিত্ব নেই।
রিপ যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। সে খুঁজতে লাগল তার জাহাজের বাকি সদস্যদের। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করেও পেলো না কাউকে।
রিপ আস্তে আস্তে সামনে দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ সে খেয়াল করলো তার সামনে বিশাল বনভূমি। সে এগিয়ে যেতে থাকলো হাতে ডায়েরি আর পকেটে শুধু সেই নীল বর্ণের ডায়মন্ড (হীরা) – এর ব্যাগটা।
সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। সামনে বনভূমির গাছ গুলো কালো বর্ণের। সব কিছু লাল বর্ণের হওয়াতে মনের মাঝে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তার। কিন্তু এইটা দেখার পর আতঙ্ক কিছুটা কমে গেছে। স্বাভাবিক মনে হলো সব ওর কাছে।
বনভূমির ভিতরে দেখে মনে হচ্ছে অন্ধকার৷ কোনো আলো নেই। কোনো উপায় না পেয়ে সাহস করে ঢুকে গেল ভিতরে। অন্ধকারে এক পা, দু’পা করে বনভূমির ভিতরে যেতে লাগল রিপ।
কিছুদূর যাওয়ার পর সে খেয়াল করলো সামনে গাছের পাতা ভেদ করে আলো আসছে ভিতরে। এটা দেখে রিপ একটু সাহস পেল। এগিয়ে গেল সেখানে। গাছের পাতা গুলো সরিয়ে দেখল একটা বিশাল উঁচু দেয়াল।
দেয়ালটা যেনো আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে। এতই উঁচু! আশে-পাশে আর কিছু দেখা যাচ্ছে না তেমন। দেয়ালের মাঝে একটা বিশাল দরজা। সেটাও দেখে মনে হবে আকাশ ছুঁয়ে গেছে।
রিপ এগিয়ে যেতে লাগলো সেই বিশাল দরজার সামনে। কিছু একটাতে তার পা আটকে পড়ে গেল। সে সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো৷ তাকালো তার পায়ের নিচে কী আছে দেখার জন্য। সে দেখলো একটা মাথার খুলি। সে ভালো করে খেয়াল করলো। সে দেখা মাত্রই কয়েক পা পিছিয়ে গেল। এটা তো মানুষের মাথার খুলি!
সে তার আশেপাশে তাকালো। ভালো করে দেখতে লাগলো। সে যতই তাকাচ্ছে ততই তার মনের ভিতর আতঙ্ক জন্মাতে থাকলো। কারণ তার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য মানুষের মাথার খুলি আর হাড়-গোড়।
রিপ আতঙ্কিত মনে এগিয়ে গেল বিশাল দরজার দিকে। বিশাল দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো রিপ। দু’হাতে সজোরে ধাক্কা দিলো। সে ব্যর্থ হলো। সে জানে তার একার ধাক্কায় এই বিশাল দরজার এক চুল পরিমাণ নাড়ানো সম্ভব না।
কোনো উপায় না পেয়ে ভিতরে দেখার জন্য কোনো ছিদ্র জাতীয় কিছু খোঁজার চেষ্টা করলো। সে দরজা আর দেয়ালের সংযোগ স্থলে একটু ফাঁকা জায়গা দেখতে পেল। সে তার চোখ এগিয়ে নিয়ে গেলো দেখার জন্য ভিতের অংশে কিছু আছে কিনা!
কারা যেনো হাটাহাটি করছে। এদের দেখে তো সাধারণ মানুষ মনে হচ্ছে না। এদের শরীরের সবার পোশাকই একই ধরণের। তাদের শরীরে লাল-কালো বর্ণের জামা। তারা দেখতে বিশাল আকৃতির। বেশ উচু-লম্বা তারা। বিশাল দানবের মতো সকলেই। তাদের সবারই সামনের দাঁত গুলো দুটো করে বের হয়ে আছে আর তা অনেক বড়।
এদের দেখে রিপের চেনা চেনা লাগছে। মনে করতে লাগল। মনে আসতেই অবাক হলো রিপ। এটাও কী আদৌ সম্ভব! কারণ এগুলো তো মানুষ নয়। এগুলো তো ভ্যাম্পায়ার। রক্ত খেকো ভ্যাম্পায়ারদের জায়গা বলে মনে হচ্ছে। এখানে কী তাদের বসবাস?
রিপ মুভিতে দেখেছে ভ্যাম্পায়ার। এসব তো মানুষের তৈরি কোনো চরিত্র। বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। ও কখনো বিশ্বাস করতো না যে ভ্যাম্পায়ার বলে কিছু আছে।
আজ রিপ নিজ চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছে না। সে চোখ ফিরিয়ে নিলো। বিশাল দরজা থেকে বেশ কয়েক পা পিছিয়ে এসে দাঁড়ালো৷ সে এখনো এক বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ঘোরে আছে। নিজেকে সামলে নিলো রিপ।
রিপ ভাবতে থাকল, “তাহলে আমি কী এখন আর কোথাও নয় ভ্যাম্পায়ারের রাজ্যে এসে পৌঁছালাম। কিন্তু কীভাবে? এটাই কী তাহলে ভ্যাম্পায়ারদের রাজ্য। তাদের কী আসলেই অস্তিত্ব আছে? নাকি আমার ভাবনার ভুল?
রিপ বিশাল দরজার উপরে তাকালো। এতক্ষণ তার চোখে পড়েনি এমন কিছু এখন তার চোখে পড়লো। ভাঙ্গা ধূলোপড়া বিশাল কাঠের ফলকের উপর খোদাই করে কিছু একটা লেখা আছে৷ সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা। দেখে কেউ বুঝতে পারবে না কী লেখা? কিন্তু রিপ বিরবিরিয়ে পড়ে ফেলল:

“ভ্যাম্পায়ার রাজ্য- ৭ (কিং হলিক) ”

“এখানে সাধারন মানুষ বা প্রাণীদের প্রবেশ নিষেধ।”

চলবে?…

(সবাই মন্তব্য করবেন আশাকরি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here