রক্তিম_চন্দ্র #পর্ব_১০

0
452

#রক্তিম_চন্দ্র
#পর্ব_১০
#তুষার_আব্দুল্লাহ_রিজভী

নীরবে হাঁটছে রিপ আর জেনি। রিপ চারপাশে তাকিয়ে দেখছে ভ্যাম্পায়ারদের রাজ্যটাকে। উপভোগ করছে। সবকিছু লাল বর্ণের আলোয় মুখরিত। এখনো সেই আগের অবস্থায় আছে, না আলো কমছে না বাড়ছে।রাত হওয়ার আগ মুহুর্তে যে আলো থাকে সেরকম এখানে সবসময়।
এই রাজ্যের চারদিক অদ্ভুত রকমের। চারপাশে বহু এক ধরণের গাছ। যার পাতা থেকে শুরু করে সব অংশ লাল বর্ণের আর তাও নির্দিষ্ট দূরত্বে গাছগুলো। প্রত্যেকটা গাছে নিচে একটা করে গর্ত কবর আকৃতির।
চুপচাপ হাঁটছে আর দেখছে মনোমুগ্ধকর এই রাজ্য। মনোমুগ্ধকর হলেও ভৌতিক এই রাজ্যটা।
জেনি বেশিক্ষণ চুপচাপ না থেকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি এতো ভাবছেন?”
রিপ মাথা নাড়িয়ে বলল, “নাহ, তেমন কিছু না।”
“ওহ,” একটু থেমে জেনি বলল, “এইতো এসে পড়েছি প্রাসাদে।”
রিপ জেনির কথা শুনে সামনে তাকিয়ে একটা বিশাল প্রাসাদ দেখতে পেল। রিপ অবাক দৃষ্টিতে প্রাসাদের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মুভিতেও এমন ধরণের প্রাসাদ দেখে নি কখনো। সামনে থেকে দেখে ভৌতিক আর বিস্ময়সূচক হচ্ছে ওর চেহারা।
প্রাসাদের গঠণটা মনোমুগ্ধকর। লাল চাঁদের আলোয় ফুটে উঠেছে প্রাসাদটা। দূর থেকে দেখলে শুধু দেখতেই মন চাইবে।
বাহির থেকে বেশি দেখতে পারল না রিপ। জেনির সাথে প্রাসাদের সদর দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল। জেনি রিপকে নিয়ে প্রাসাদের বিশাল এক কক্ষে প্রবেশ করল। রিপ খেয়াল করল একটা ভ্যাম্পায়ার পোশাক পরিধান করা ভ্যাম্পায়ার তার ঠিক বরাবর সামনে দাঁড়িয়ে আছে উল্টোদিকে মুখ করে। পোশাকটা সাধারণের থেকে কিছুটা ভিন্ন। একটু রাজকীয় ভাব আছে দেখলেই বোঝা যায়।
সেই ভ্যাম্পায়ারটা উল্টোদিকে মুখ রাখা অবস্থায় নরম গলায় বলে উঠল, “স্বাগতম, রিপ।”
রিপ নিজের অজান্তেই জিজ্ঞেস করে ফেলল, “কে আপনি?”
“ইনি হচ্ছেন আমার বাবা, রেডিস,” পাশে দাঁড়িয়ে থেকে জেনি বলল। “এই রাজ্যের ভ্যাম্পায়ার রাজার সহকারী।”
রিপ তাড়াহুড়ো করে বলল, “তাহলে এবার বলুন আমাকে এখানে আনা হয়েছে কেন?”
“বলব, সবি বলব,” হাসলো রেডিস। “এসেছেন এখানে বিশ্রাম করুন আগে।”
রিপ বুঝতে পারল এত আগেই সব জানতে চাওয়া ঠিক হয়নি ওর। এসেছে বিশ্রাম করে নিয়ে আস্তে আস্তে সব জানলেও তো হয়। এমনিতেই অনেক ক্লান্ত ও।
রেডিস ঘুরে দাঁড়িয়ে জেনির দিকে তাকিয়ে বলল, “জেনি, রিপকে প্রাসাদের রাজার শোবার কক্ষে নিয়ে যাও। ওটাকে রিপের বিশ্রাম কক্ষ করা হয়েছে। ওখানে এখন থেকে রিপ থাকবে।”
রিপ বিষয়টা শুনে বিস্মিত হলো। কারণ এর আগে কখনো ও এখানে আসেনি। ওর অধিকার মানে? এখানে নিশ্চয়ই কিছু সমস্যা হচ্ছে হয়তো তাদের।
রিপ বলে উঠল, “আমার অধিকার মানে?”
“সব বুঝতে পারবে রিপ আস্তে আস্তে। ধৈর্য ধরো।” জেনির দিকে বড় বড় চোখ করে রেডিস মোটা গলায় বলল, “জেনি তোমাকে কী বললাম!”
মাথা নিচে করে আস্তে করে জেনি বলল, “আচ্ছা বাবা নিয়ে যাচ্ছি!”
রিপের দিকে তাকিয়ে জেনি বলল, “আসুন আমার সাথে, রিপ।”
রিপ আর কিছু বললো না। সরাসরি জেনির সাথে ওই কক্ষ থেকে বেড়িয়ে এলো। জেনি প্রাসাদের সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় চলে আসলো। দোতালার বাম দিকে একটা কক্ষ আছে। সেটার দরজা খুলে দিলো জেনি।
দরজা খুলতেই একটা দমকা বাতাস এসে লাগলো রিপের শরীরে। জেনির পিছন পিছন রিপ-ও সেই কক্ষে ঢুকল।
রিপ কক্ষটা ঘুরে দেখলো একবার। কক্ষের মাঝ বরাবর এক গোলাকৃতির বড় মাপের বিছানা। উত্তর দিকে বিশাল এক জানালা। জানালার ঠিক সামনে একটা টেবিল। আর তাতে রাখা আছে নানাবিধ ফলমূল। বিশেষ কোনো ফল ওগুলো। কক্ষের চার দিকে কারুকার্য করা। রয়েছে একটা বিশাল আলমারি।
রিপ বিশাল জানালার কাছে গিয়ে দেখতে লাগলো বাহিরের পরিবেশ।
জেনিও রিপের পিছন পিছন ঘুরছে। জেনি বলে উঠল, “আপনি এখানে বিশ্রাম করুন। কিছু লাগলে জেনি বলে ডাকলেই হবে। এনে দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবো।”
হাসলো রিপ। কৌতুকের স্বরে বলল, “আপনি দূরে গেলে শুনবেন কী করে?”
“আমরা ভ্যাম্পায়ার। আমরা বহু-দূরের শব্দও খুব ভালো করে শুনতে পাই আর চোখের পলকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যাই,” হাসতে হাসতে বলল জেনি।
ভ্রু কুঁচকে রিপ বললো “তাহলে আমাকে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে আসলেন কেন এত দূর?”
“আপনাকে সৌন্দর্য দেখালাম আমাদের রাজ্যের,” মুচকি হাসলো জেনি।
“তাও ঠিক,” একটু চুপ থেকে রিপ বলল, “আপনাদের রাজ্য অনেক সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর।”
“হ্যা,” বলল জেনি। “আপনার হাত মুখ ধোঁয়ার জন্য যেতে হবে আপনার কক্ষ থেকে বেরিয়ে সোজা ডান দিকের কক্ষে সব ব্যবস্থা করা আছে।”
“বুঝতে পেরেছি।” রিপ কি যেনো ভেবে বলল, “আমার ভ্যাম্পায়ার সম্পর্কে ধারণা কম। এতো রিসার্চ করিনি কখনো আর এতো কাছ থেকে দেখবো, চলবো, কথা বলবো আপনাদের সাথে এটাই ভাগ্য।”
“এখন বিশ্রাম করুন,” বলেই চলে গেল জেনি কক্ষ থেকে।
রিপ তার টি-শার্টের ভিতরে লুকিয়ে রাখা ডায়েরিটা বের করে নিলো। নীল ডায়মন্ডটাও পকেট থেকে বের করে বিছানার উপর রাখল।
সব কিছুই একটা রহস্যের আকার নিচ্ছে। একটার পর একটা রহস্য। কিছুই মেলাতে পারছে না রিপ।
একটার পর একটা প্রশ্ন তার মস্তিষ্ককে ঘুরিয়ে দিচ্ছিলো বার বার। সে কিছুই বুঝতে পারছিল না।
সে ডায়েরি আর নীল ডায়মন্ডটা লুকিয়ে রাখল তার বিছানার নিচে। তারপর চলে গেল সেই কক্ষে যেখানে তার জন্য হাত মুখ ধোঁয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে তার নিজ কক্ষে চলে এসে শুয়ে বিশ্রাম করতে লাগল।
বিশ্রাম করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়ে ছিল ঠিক নেই। জেনির ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল রিপের। রিপ উঠে ফ্রেশ হতে গেল আবারও। তারপর রিপকে খেতে নিয়ে গেল জেনি।
টেবিলের একপাশে রিপ আর অপর প্রান্তে বসে আছে রেডিস মানে জেনির বাবা। টেবিলে রাখা কাচা মাংস আর বিভিন্ন ধরনের ফল আর পান করার জন্য তাজা রক্ত। এসব দেখে রিপ কী করবে বুঝতে পারছে না। ফল খেতে পারবে। কিন্তু কাচা মাংস! না কখনোই না। কি পান করে তৃষ্ণা মিটাবে এখন ! রক্ত! না এটা কি করে খাবে? রিপ বুঝতে পারছে না।
জেনি দাঁড়িয়ে ছিল রিপের পাশে। রিপ জেনির দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল, “আচ্ছা, পানি পাওয়া যাবে খাবার মতো?”
“রিপ, আপনাকে তো রক্তই খেতে হবে,” টেবিলের অপর প্রান্ত থেকে বলে উঠল রেডিস।
রিপ বুঝতে না পেরে বলে উঠল, “মানে!”
“আপনাকে এখন থেকে এগুলোই খেতে হবে, রিপ। অভ্যাস করে নিন এখন থেকে। খেয়ে ফেলুন চুপচাপ। জেনি এগিয়ে দাও তো তাজা রক্তভরা গ্লাসটা রিপের দিকে।”
রিপ এসব শুনে কী বলবে বুঝতে পারছে না। আর রক্ত ছাড়া কি কিছুই নেই নাকি তৃষ্ণা মেটানোর জন্য? পানি তো আছে তবে এখানে আনছে না কেনো? এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রিপের মনে। রিপকে এখন এটাই খেতে হবে। কারণ অনেক তৃষ্ণাত্ব। কিছু না ভেবে নাকে হাত দিয়ে চেপে ধরে নাক বন্ধ করে গিলে ফেলল রক্ত। রিপ উঠে গেলো সেখান থেকে দৌঁড়ে প্রাসাদের বাহিরে চলে গেল। বাহিরে গিয়ে ২-৩ বার বমি করল রিপ।
এর আগে কখনো রক্তের ফোঁটাও মুখে নেয় নি রিপ। আজ কিছু না বুঝতে পেরে এক গ্লাস রক্ত খেয়ে ফেলল। এটা কিসের রক্ত ছিল! মনে হলো রিপের সে বোকামি করেছে। না জেনে রক্ত পান করেছে। জানাই হলো না রিপের মানুষের রক্ত নাকি অন্য কোনো প্রাণীর? মানুষের না হলে ঠিক আছে। তবুও সে খাবে কেন? সে কি ভ্যাম্পায়ার নাকি। এসব রিপ ভাবতে ভাবতে প্রাসাদে প্রবেশ করল রিপ।
নিজের কক্ষে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়েছে রিপ। তার ভালো লাগছে না। অসুস্থ লাগছে নিজেকে। শুয়ে শুয়ে পালানোর ফন্দি আঁকছে মনে মনে। কিন্তু সে কথা দিয়েছে সকল ভ্যাম্পায়ারদেরকে বাঁচাবে। এখানে নিজের বাঁচাই হয়তো মুশকিল হতে চলেছে তার। সে কি আর বাঁচাবে তাদেরকে। নিজেকে তো বাঁচতে হবে। এসব খেয়ে কি বাঁচা যাবে!
রেডিস ও জেনি একসাথে ঢুকলো রিপের কক্ষে। জেনির হাতে একটা চাবি। রেডিস বিছানার কাছে আসতেই উঠে দাঁড়ালো রিপ বিছানা ছেড়ে।
রেডিস সরাসরি বলে উঠল, “রিপ, আপনার ডায়েরিটা বের করুন।”
“কেনো?” রিপ জানতে চাইল।
“বের করুন তো আগে পড়ে বলছি সব,” উঁচু গলায় বলল রেডিস।
কোনো উপায় না দেখে রিপ ডায়েরিটা বের করলো। রিপকে চাবিটা দিলো জেনি। রিপের আর বুঝতে বাকি রইলো না চাবিটা যে তার ডায়েরির। রিপ চাবিটা দিয়ে ডায়েরি খুলে ফেলল৷ খোলা মাত্রই ডায়েরিটা থেকে কিছু ছবি পড়ে গেল নিচে। রিপ নিচ থেকে ওগুলো উঠিয়ে দেখতে লাগলো সেখানে তার মা বাবা আর একজন রয়েছে। কিন্তু কে সে?
তার মাথায় আসলো রেডিস তো সব জানে তার ব্যপারে। তার পরিবারের ব্যাপারেও সব জানে তাহলে। তাই ছবিটা রেডিসের উদ্দেশ্যে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আচ্ছা, আপনি কি এই ব্যাক্তিটাকে চেনেন?”
“হ্যা, অবশ্যই। এটা তো ভ্যাম্পায়ার কিং,” মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল তার। গম্ভীরমুখে হাসি ফুটেছে এতক্ষণে। “আমাদের ভ্যাম্পায়ার সাম্রাজ্যের রাজা ‘কিং হলিক’।”
“তাহলে এরা আমার বাবা-মা’র সাথে কেন?” জানতে চাইল রিপ। সন্দেহ বাসা বাঁধতে শুরু করেছে রিপের মনে
“বলছি, তুমি আগে সব গুলো ছবি দেখো। পরে সব বলছি।”
রিপ সবগুলো ছবি দেখতে লাগলো। এমন সময় তাদের সাথে আরেকজন মহিলাকে দেখলো। দেখে বুঝতে আর বাকি রইলো না কে? এটা ছিলো তার মামী এলেক্সা। তার মামীর সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার সময় তার মামীর ছবি দেখেছে। তাই তাকে চিনতেও বাকি রইলো না।
তার মামী তাদের সাথে কি করছিল। মামা’তো কিছুই বলে নি আমাকে কখনো। সবগুলো ছবি ধীরে ধীরে দেখে শেষ করলো।

রিপের মাথায় এখন নতুন এক রহস্য ঘুরছে। তার মা-বাবা, মামী আর ভ্যাম্পায়ার কিং হলিক এদের মধ্যে কী যোগসূত্র আছে? সে ডায়েরিটা খুলে পাতাগুলো উল্টাতে থাকল।
তখন ঘটলো আজব এক ঘটনা। ডায়েরির ভিতরে কোনো লেখায় নেই। ডায়েরিটা পুরোপুরি ফাঁকা।
এটা দেখে রেডিস আবারও হাসলো। বলল, “এখানে অনেক কিছুই লেখা আছে। এটা কোনো সাধারণ কালির লেখা নয়। এটা দেখতে হলে এক প্রকার তরল লাগবে যা কী না রক্ত দ্বারা তৈরি।” জেনির দিকে তাকিয়ে আদেশ করল, “জেনি তরলটা নিয়ে এসো।”
জেনি চুপচাপ বেড়িয়ে গেল তরলটা আনতে।
রিপ এদিকে ভাবছে। আরো রহস্যের গভীরে চলে গেলো এসব দেখতে দেখতে। তাদের সবার সাথে যোগসূত্র কী? আর কেন-ই বা রিপ নিজে এখানে? রিপের মাথায় একটার পর একটা রহস্য ঘুরপাক খেয়েই যাচ্ছে৷ রিপ কিছুই বুঝতে পারছে না। তার মস্তিষ্কও প্রায় ক্লান্ত রহস্যের মায়াজালে।

চলবে?…

(সবাই মন্তব্য করবেন আশাকরি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here