রক্তিম_চন্দ্র #পর্ব_১১

0
442

#রক্তিম_চন্দ্র
#পর্ব_১১
#তুষার_আব্দুল্লাহ_রিজভী

জেনি তরলটা নিয়ে উপস্থিত হলো। তরলটা জেনি রিপের হাতে তুলে দিল। রিপ ডায়েরির এক পাতা উল্টাচ্ছে আর তরলটা লাগাচ্ছে কিন্তু ডায়েরির শুরুর কিছু পাতায় কোনো লেখাই ছিল না। রিপ ভাবল, হয়তো এই ছবিগুলো ছাড়া আর কিছু নেই। কোনো লেখাও নেই ওর ডায়েরিতে।
হঠাৎ রিপ দেখল একটা পাতায় তরল দেওয়াতে কিছু লেখা ভেসে উঠল। এভাবে আস্তে আস্তে অনেক গুলো পাতায় তরল লাগাতে থাকে আর সেই সাথে লেখাও ভেসে উঠতে থাকে।
রিপের মনে আনন্দের ঝলকানি দিয়ে উঠল। রিপ ডায়েরির সব গুলো পাতায় তরল লাগিয়ে নিল। ডায়েরির সকল পাতায় লেখাগুলো ভেসে উঠতে লাগল।
রিপ শুরু থেকে সব পড়তে শুরু করল।

“আমার প্রিয় সন্তান। এখন তোর বয়স মাত্র ২ মাস৷ তুই আমার ভিতরে আছিস। তোকে আমি সব জানাবো আস্তে আস্তে। তাই আমাকে ডায়েরিটা লিখতে হচ্ছে। না হলে তুই কখনো বুঝতেই পারবি না কী হচ্ছে তোর সাথে কখনো।
আজ থেকে প্রায় ৫-৬ মাস আগে তোর বাবা ড.ভ্যালি। সমুদ্র ভ্রমণে একবার গিয়ে একটা জায়গা থেকে হারিয়ে যায়। সে এমন জায়গায় চলে যায়। সেটা হলো ভ্যাম্পায়ারদের রাজ্য। সেখানে শুধু ভ্যাম্পায়ারদের বসবাস। আজ পর্যন্ত সেখানে কেউ যেতে পারে নি। গেলেও ফিরে আসতে পারেনি। ভ্যাম্পায়ার কিং হলিক তোর বাবাকে নিয়ে যায়। কিং হলিকের খুব প্রয়োজন ছিল তোর বাবাকে। সেখানে গিয়ে সে জানতে পারে কিং হলিক অনেক বিপদে পড়েছে। কিং হলিক ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ কিং হলিকের রাজ্যে ওদের ঈশ্বরের অভিশাপ লেগেছে। সেই অভিশাপ থেকে মুক্তি করতে পারবে একমাত্র সেই যার শরীরে অর্ধেক ভ্যাম্পায়ার আর অর্ধেক মানুষ। এর জন্য তোর মতো একজনকে জন্মা প্রয়োজন পড়ে। তোর বাবাকে কিং হলিক সব বুঝিয়ে বলাতে সে রাজিও হয়ে যায়। তখন তোর বাবার শরীরে ভ্যাম্পায়ারদের রক্ত প্রবেশ করানো হয়। কারণ তোকে হতে হবে ভ্যাম্পায়ার+মানুষ দুটো মিলিয়ে। তাহলেই তুই ওখানকার ঈশ্বরের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারবি তাদেরকে। এরপর তর বাবা চলে আসে। আর তারপর এখন তুই আমার পেটে। এর পিছনেও তোর বাবার কিছু স্বার্থ ছিল।
স্বার্থ খারাপ ছিল না। সেগুলো হলো ‘ভ্যাম্পায়াররা যার রক্ত পান করবে সেও ভ্যাম্পায়ার হয়ে যায়। এই বিষয়টা প্রায় ভ্যাম্পায়ার দ্বারা আক্রমণ হওয়া মানুষের মধ্যে দেখা যায়। এটা হতো যদি আক্রমণ হওয়ার পর কোনো মানুষ কোনো কারণে বেঁচে যেতো। কিন্তু এর একটা ভ্যাক্সিন ছিলো ভ্যাম্পায়ারদের কাছে যার মাধ্যমে মানুষকে ভ্যাম্পায়ার আক্রমণ করলেও সেটার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। সেটা দিবে তোর বাবাকে। সে এইটার দ্বারা মানুষকে সুস্থ করে তুলবে আর অনেক সুনামও কামাবে। একটা সময় এসে যায় এমন, কিং হলিক আমাদের ডাকতে থাকে প্রায়ই তাদের কাছে। আমারাও যাওয়া শুরু করলাম। তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। তারা কখনোই আমাদের কোনো ক্ষতি করে নি। করতে চাইও নি। তারা শুধু অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে চাইতো। তোর বাবার বিশ্বস্ত একটা বন্ধু ছিল এলেক্সা নাম। আমি কখনো ততটা জানতে পারিনি এলেক্সার ব্যাপারে। তাকে নিয়েও যাওয়া আসা শুরু করা হলো আমাদের৷
এভাবে দিন গুলো কেটে যাচ্ছিল। হঠাৎ তোর পৃথিবীতে আসার সময় হয়ে এলো৷ তোর ভূমিষ্ট হওয়ার কথা ছিলো ভ্যাম্পায়ার কিং হলিকের প্রাসাদে৷ কিন্তু একটা দূর্ঘটনা সব এলো মেলো করে দিলো। তোর বাবা সেই দূর্ঘটনায় হারিয়ে যায়। আমিও এসে পড়ি তোর বসবাসের বর্তমান শহরে৷ এরপর পল আমাকে দেখে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তোর জন্ম। জন্মের পর পলে কাছে বড় হতে থাকা তোর। আপন ভাই ছিল না পল আমার। তবুও আপনের থেকে কম করেনি। পলের মতো ভাই পেয়ে আমি অনেক ভাগ্যবান। জানি না কতদিন বাঁচবো আর। কিন্তু পলের মতো কারো কাছে তোকে রেখে যাওয়া নিরাপদ।
তোর বয়স এখন ১৬ বছর। আজকেই আমার ডায়েরি লেখা শেষ করবো। আজকে ডায়েরিতে তোকে অনেক কিছু বলে যাবো তুই বুঝে নিয়ে তোর পথে এগিয়ে যাস আমার প্রিয় রিপ।
আমি এখানে এসে জানতে পারি তোর মামী এলেক্সা পোলেন এর স্ত্রী ছিল৷ তোর মামীর কাছে তোর বাবা ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে প্রবেশ করার জন্য একটা নীল ডায়মন্ড দেয়। তোর মামীকে দিয়ে লুকিয়ে রাখতে বলে। যাতে সেটা তুই খুঁজে বের করতে পারিস কখনো আর একটা তোর বাবার কাছে রেখে দেয় সেখানে যাওয়া আসার জন্য। এই নীল ডায়মন্ড ছাড়া কখনোই প্রবেশ করা যাবে না সেখানে।
ভ্যাম্পায়ার কিং হলিল গত ৫০০০ বছর ধরে সেখানে রাজত্ব করছে৷ তার বয়সও কম হয়নি। সে আরো ৫০০০ বছর অনায়াসে রাজত্ব করতে পারতো। কিন্তু অভিশাপের কারণে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। এতদিনে হয়তো হয়েও গেছে।
অভিশাপ থেকে ওদের মুক্ত করতে হবে। না হলে পৃথিবীতে খারাপ ভ্যাম্পায়াররা রাজত্ব শুরু করবে। মানুষের অস্তিত্ব থাকবে না। এমন আরো ১০ টা ভ্যাম্পায়ারদের রাজ্য আছে৷ বর্তমানে সবগুলোই খারাপ ভ্যাম্পায়ার গুলোর হাতে আছে। যেগুলো তোকেই নিজের দখলে আনতে হবে। এতে করে তুই পারবি মানুষের প্রতি ভ্যাম্পায়ারদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে। ভালো ভ্যাম্পায়ার অন্যান্য প্রাণীর রক্ত খেয়ে বাঁচতে চায় আর বাঁচতেও পারে। কিন্তু খারাপ গুলো মানুষকে আক্রমণ করে। তারা চায় মানবজাতির ধ্বংস। কিন্তু কিং হলিক তা চাইতো না। সে চাইতো সবাই মিলেমিশে থাকতে। তার নিয়ত ভালো ছিলো বলেই ড.ভ্যালি মানে তোর বাবা সাহায্যের জন্য সকল কিছুই করেছে!’
তুই নিজে সব পারবি। এজন্যই তোর জন্ম। তোর ভিতরে ভ্যাম্পায়ার আচরণ আসবে না সহজে। তোকে আচরণ গুলো মানিয়ে নিতে হবে। আর সেই ক্ষমতা তোর মধ্যে আছে। কারণ তুই অর্ধেক ভ্যাম্পায়ার আর অর্ধেক মানুষ। যখন ইচ্ছে ভ্যাম্পায়ার হতে পারবি আর যখন ইচ্ছা মানুষ। তোকে শুধু এই পরিবর্তন হওয়ার রাস্তাটা খুঁজতে হবে। আর কিছু রহস্যের সমাধান তোকে নিজেই করতে হবে রিপ!
এই ডায়েরিটা লক খোলার জন্য আমার চোখের ব্যবহার যোগ করা হয়। আমার চোখ ছাড়া খুলবে না। আমার চোখে ছিল আসল ক্ষমতা। আমি চাইছিলাম তুই নিজে এটা খুলে নিবি। আর যদি কখনো না পারিস এর চাবি কিং হলিকের প্রাসাদে পেয়ে যাবি। এরপর সেখানেই সব কথা জানতে পারবি। আর এটাও একটা বিশেষ কালির মাধ্যমে লিখছি। এগুলো বলে যেতাম তোকে। কিন্তু না বলেও উপায় ছিল না। না হলে যে, সন্তানের জন্য কিছু করে যেতাম পারতাম না।
সবসময় কিং হলিকের ভ্যাম্পায়ারগুলো তোর খেয়াল রাখে দূর থেকে। তোকে দেখে। তোর প্রত্যেকটা পদক্ষেপ অনুসরণ করে। তোর ক্ষতি সহজে হতে দিবে না ওরা। ভরসা রাখিস যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের উপর। তোর সম্পূর্ণ খেয়াল রাখবে রেডিস। রেডিস কিং এর সহকারী। রেডিস তোকে সব বুঝিয়ে দিবে।
সব তোকে বলবো না। তাহলে সব সহজে করলে তুই কষ্ট করতে চাইবি না। এজন্য তোকেই সব করতে হবে। তুই নিজেকে যত প্রয়োগ করবি ততটা শক্তিশালী হবি। ভালো থাকিস সবসময় রিপ। তোর জন্য সবসময় ঈশ্বরের কাছে প্রে করবো। দূর আকাশ থেকে তোকে সবসময় দেখবো।”

এর পর ডায়েরিতে আর কিছু লেখা নেই। তখন রিপ সব বুঝতে পারে। সব কিছুর রহস্যের শুরুটা কোথায়। রিপ এখন বুঝতে পারল তাকে রক্ত পান করানো হলো আর কাচা মাংস তার সামনে কেনো দেওয়া হলো? কারণ তার মধ্যে ভ্যাম্পায়ারের বৈশিষ্ট্য গুলো আনতে হবে আস্তে আস্তে। সেজন্যই রেডিস বাধ্য করেছিল খেতে এসব। একে একে জটিল রহস্যের সমাধান রিপের কাছে খোলাসা হতে লাগল।

রেডিসের দিকে তাকালো রিপ। এতক্ষণ সব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো ও। রিপ রেডিসের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলল, “ধন্যবাদ, রেডিস।”

***

রিপ তার কক্ষে এখনো। রিপ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তার মনে৷ কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না। তখন রিপ রেডিসের দিকে তাকাল আর ডায়েরিটা বন্ধ করে ফেলল।
রেডিস রিপকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে, রিপ?”
রেডিস আপনি থেকে তুমিতে চলে আসলো রিপের সাথে সে নিজেও বুঝতে পারলো না।
রিপ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমার প্রায় সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি কিন্তু…”
রেডিস বলে উঠল, “কী কিন্তু?”
“কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনো রয়ে গেল,” একটু থেমে আবার বলল, “পেয়েও পেলাম না মনে হলো।”
“আমাকে বলো কী প্রশ্নের উত্তর খুঁজছো আমি খুঁজে দিচ্ছি।”
“আচ্ছা, আমার মামী তো খুন হয়েছিল তাই না?” নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করল রিপ।
“হ্যাঁ, খুন করা হয়েছিল তাকে।”
“তবে খুনটা কে করেছিল জানেন কিছু? বলতে পারবেন আমাকে?” আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল রিপ রেডিসের কাছে।
“হ্যাঁ, অবশ্যই।” দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রেডিস বলতে লাগল, “শোনো তাহলে, তোমার মামী যখন থেকে এখানে আসতেন ঠিক তখন থেকেই তোমাদের মানুষ জাতির একটা দল তাকে অনুসরণ করতো। কীভাবে যেনো বুঝে যায় তোমার মামী এলেক্সা ভ্যাম্পায়ারদের সাথে যোগাযোগ করছে। তাকে সবসময় অনুসরণ করতে থাকে। একটা সময় নীল হীরার কথাও তারা জানতে পারে৷ তখন থেকেই তারা খোঁজ নিয়ে বুঝতে পারে নীল হীরার মাধ্যমে কিং হলিকের ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে প্রবেশ করা যায়। আর এটাই এক মাত্র রাজ্য যেখানে প্রবেশ করতে নীল হীরা লাগবেই। না হলে প্রবেশ করা যাবে না। তারা চাইতো এটা তাদের করে নিতে আর আমাদের ক্ষতি করতে। কারণ আমরা চাইলেও তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবো না। এসব আবার খেয়াল করতো অন্য রাজ্যের ভ্যাম্পায়াররা। তারা সকলে একত্রিত ছিল। সেই ভ্যাম্পায়ার গুলো সেই মানুষদের সাথে হাত মিলিয়ে ফেলে। সেই মানুষগুলোও জানে না যে তারাও ধ্বংস হবে যদি ওই রাজ্য গুলোর ভ্যাম্পায়ারদের সাথে হাত মেলায়। তাদের স্বার্থ একটাই আমাদের রাজ্য ধ্বংস করা। তারা এটা করতে পারলেই তাদের হাতে এই রাজ্য চলে আসবে। আর এটা আসলেই তারা মানুষ জাতিকে শেষ করে দিতে পারবে৷ কারণ এই রাজ্যের মধ্যে লুকিয়ে আছে মানুষ জাতীকে ধ্বংস করে দেওয়ার একটা বিষ। যার দু’ফোটাও যদি পৃথিবীর বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া যায় বাতাস রুপে তাহলে পুরো পৃথিবীর মানুষ জাতি বাতাসের গতিতে শেষ হয়ে যাবে। এজন্য নীল হীরা তারা চাইতো সবসময়৷ প্রবেশ করতে পারলেই তো সব স্বার্থ হাসিল হয়ে যেতো। এজন্য একটা সময় তোমার মামীকে সুযোগ বুঝে হত্যা করে ফেলে তারা। কিন্তু তোমার মামীও কম ছিলেন না। তোমার মামী জানতেন তার সাথে খারাপ কিছু হতে চলেছে। তাই তিনি এক ধরনের নীল হীরা তৈরি করেন ২০-২৫ টার মতো৷ আর আলাদা আলাদা জায়গায় রাখেন। এর ফলে তোমার মামীর হত্যাকারীরা এখনো সেই আসল নীল হীরা খুঁজে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়।”
“বুঝতে পারলাম কিছুটা কিন্তু আমার কাছে কীভাবে আসলো আসল ডায়মন্ডটা। ওই বইটা আমার মামার হাতেই বা কেন পড়ল? যদি না পড়তো। অন্য কেউ যদি পেতো এটা তাহলে তো আমি থাকতাম না এখানে?”
“না, থাকতে না। স্বয়ং আমাদের ঈশ্বর যেখানে আমাদের সাথে আছেন সেখানে তো সবকিছুই ঠিক হবেই তাই না।”
বিস্মিত কন্ঠে রিপ বলল, “মানে! ঈশ্বর অভিশাপ দিয়েছে আপনাদের আর আপনাদের সাথেই আছেন তিনি, বুঝলাম না বিষটা?”
“স্বয়ং ঈশ্বর তোমার মামীকে সব কিছু বলেছিলেন ভবিষ্যতে কী ঘটবে? তাকে কী কী করতে হবে সব কিছুই বলে দেয় আর সব সেই অনুযায়ী তোমার মামীও সব করেন। যার ফলে তুমি হীরাটা পাও।” রিপের দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসল রেডিস।
“কিন্তু আপনাদের ঈশ্বর এটা কেন করলেন?”
“তিনি চাইতেন তুমি আমাদের রক্ষা করবে। তোমাকে আমাদের রক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। এজন্য তোমাকে সেই ভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।”
“কিন্তু ঈশ্বর তো সব জানেন। তার উপর তোমাদের অভিশাপ দিয়েছেন। তারপর আমাকে সৃষ্টিই কেনই বা করলেন আপনাদের রক্ষক হিসেবে?”
আগ্রহ বাড়ছে আরো রিপের। তাই আগ্রহ নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছে। জানতে চাইছে তার সব প্রশ্নের উত্তর।
রেডিস বলল, “হ্যা, কিন্তু অভিশাপের কারণটাতো শুনবে নাকি?”
“বলুন, সব বলুন আমাকে।” উত্তেজনা বেড়ে গেল রিপের। সব জানার ইচ্ছে তার মাঝে এখন।
রেডিস বলতে শুরু করল আবার, “ঈশ্বর সবি জানতেন শুরু থেকে কী হতে চলেছে। ঈশ্বর এটাও জানতেন ১১ টা রাজ্যের মধ্যে ১০ টা রাজ্যের কিং’রা মিলিত হয়ে মানুষ জাতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। ১১টা রাজ্য এক হলেই ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। কারণ আমাদের রাজ্যে লুকিয়ে আছে সেই বিষ। ১১ টা রাজ্য এক হলেই ওরা এতো দিনে ধ্বংস করে দিতো মানুষ জাতিকে। কিন্তু কিং হলিক কখনো এটা চাননি। কিং হলিক কখনো এক হয়নি। ঈশ্বর ছিল নিরপেক্ষ। তার কাছে বেশিরভাগ রাজ্যের মতামত এক হলে সেটাই মানতে হতো৷ কারণ সেই ঈশ্বরের উপরেও আছে আরো এক ঈশ্বর। তাই তিনি চাইলেও কিছু নিজে থেকে করতে পারতেন না তার উপরের জনের হুকুম ছাড়া। তার সেই ক্ষমতা ছিল না৷ কারণ ঈশ্বরদেরও ঈশ্বর ভ্যাম্পায়ারদের ঈশ্বরকে সেই ক্ষমতা দেন নি। অতঃপর তাই ঘটলো। মিথ্যে অপবাদ দিলো সব সাম্রাজ্যের কিং’রা মিলে আমাদের কিং হলিক ও আমাদের বিরুদ্ধে। তখন ঈশ্বর সেটাই মেনে নিলেন এক প্রকার বাধ্য হয়েই। তারা এই অপবাদ দিলেন আমাদের বিরুদ্ধে যে আমরা নাকি মানুষের ক্ষতি করছি। তাদের রক্ত পান করছি। তাদের হত্যা করছি। এই অপবাদের ফলে ঈশ্বর আমাদের এই অভিশাপ দেয় আমরা কখনো এখান থেকে বের হতে পারবো না। এই রাজ্য চিরতরে আটকে থাকবো আর আমাদের কিং হলিকও ধ্বংস হয়ে যাবেন। এরপর একসময় ঈশ্বর নিজে এখানে আসেন। তিনি আগে থেকেই এসব জানতেন তাই হলিককে লুকিয়ে লুকিয়ে সব বলে দেয় যাতে এইরকম কখনো না হয়। এটা হলে পৃথিবী ও ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন ভ্যাম্পায়াররাও থাকবে না। মানুষ জাতি শেষ মানে তারাও শেষ। ১০টা রাজ্যের ভ্যাম্পায়াররা এই বিষয়ে অবগত নয়। যে কারণে এই বিশাল একটা বড় ভুলের দিকে সকলে পা বাড়াচ্ছে। এজন্য তিনি কিং হলিককে ২টা নীল হীরা দেন বাহিরে যাওয়া আসার জন্য আর কী কী করতে হবে সময় থাকতে সব করতে বলেন। কারণ তার ধ্বংসের অভিশাপ কখনো বদলাতে পারবে না। এজন্য কিং হলিক খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তোমার বাবা ড.ভ্যালির সম্পর্কে আর তার মাধ্যমে সব করানো হয়। কিছু ভ্যাম্পায়ারকে তোমাদের খবর রাখার জন্য সাম্রাজ্যের বাহিরে রাখা হয়। তারা তোমাদের প্রতিটা পদক্ষেপ এর খবর এনে আমাদের দিতো সবসময়।”
“সবি বুঝতে পারলাম কিন্তু মানুষ জাতি ধ্বংস হয়ে গেলে ভ্যাম্পায়াররা ধ্বংস হবে কেনো?” আগ্রহ আরো বেড়েছে রিপের।
“কারণ মানুষ জাতি ধ্বংস হলে সব ধরনের প্রাণীও ধ্বংস হয়ে যাবে আর আমাদের মানে ভ্যাম্পায়ারদের প্রধান খাবার হলো কাচা মাংস ও রক্ত। বিশেষ করে রক্ত না হলে আমাদের ধ্বংসও শুরু হবে। এখন বুঝে নাও বাকিটুকু।”
“বুঝতে পারলাম সব।” রিপ নড়ে চড়ে দাঁড়াল। নিজেকে শক্ত রেখে বলল, “আমাকে কী করতে হবে এখন?”
“তুমি আমাদের রক্ষক। তোমাকে যুদ্ধে নামতে হবে তাদের বিরুদ্ধে। তোমাকে সেই ১০ জন কিং’এর বিরুদ্ধে এক ময়দানে এক সাথে লড়তে হবে। তাদের হারাতে পারলে ঈশ্বর আমাদের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে দেবেন। আর তুমি হবে “ভ্যাম্পায়ার কিং” সব রাজ্যের কিং।”
রিপ সকল বিষয় বুঝতে পারল। নিজের মনকে শক্ত করল। বললো, “আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করছি রেডিস আপনার কাছে, আমি আপনাদের রাজ্যকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করাবো আর পুরো মানব জাতিকে ক্ষতির হাত থেকে মুক্ত করবো।”
রেডিস অত্যন্ত খুশি হলো রিপের প্রতিজ্ঞাতে। বলল, “দেখো রিপ, তুমি চাইলেও এখন তাদের সাথে যুদ্ধে যেতে পারবে না। এজন্য তোমাকে এই রাজ্যের কিং হতে হবে। নিজেকে অনেক প্রস্তুত করতে হবে। তারপর তাদেরকে যুদ্ধের জন্য আহ্বান জানাতে হবে। এই রাজ্যের কিং যদি যুদ্ধ ঘোষণা করে তাহলে লড়াই করতে বাধ্য তারাও।”
“আমি তৈরি রেডিস সব করতে। আমি আজই কিং এর আসন গ্রহণ করতে চাই। আর খুব দ্রুতই ওদের মোকাবিলা করতে চাই।” জোর গলায় বলল রিপ।
“রিপ তুমি যোদ্ধা হও নি। অনেক সময় লাগবে পুরোপুরি যোদ্ধা হতে।”
“সেটা আমি বুঝবো। আপনি ব্যবস্থা করুন সব।”
“যৌবন বয়সে রক্ত গরম থাকে রিপ মনে রেখো।” দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল রেডিস।
তাকালো রিপের দিকে। চোখে চোখ রাখল রিপের। রেডিস রিপের চোখে চোখ রেখে দেখতে পেলো আগুন জ্বলছে তার ভিতরে। খারাপদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের আগুন। তার বাবাকে হারানোর আগুন। তার মামীকে হত্যার প্রতিশোধের আগুন। তার জীবনের উদ্দেশ্য আজ সফল হয়েছে। রেডিস এতদিন যা দেখতে চেয়েছিল তাই পেয়েছে সে এইমাত্র রিপের মাঝে।
রেডিস আবার বলল, “আজ থেকে তুমি হলে এই রাজ্যের কিং।”
জেনি এতক্ষণ সব চুপচাপ শুনে যাচ্ছিল।
রেডিস জেনির দিকে তাকিয়ে ইশারার মাধ্যমে সব বুঝিয়ে দিলো। জেনি কক্ষ থেকে বেড়িয়ে গেল।
রিপ বলে উঠল, “আমি নিজেকে তৈরি করতে চাই খুব শীঘ্রই।”
“আচ্ছা, তুমি বিশ্রাম গ্রহণ করো রিপ, আমি সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করছি,” বলল রেডিস।
রেডিস কক্ষ থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে গেল। রিপ বিশ্রামের জন্য শুয়ে পড়ল বিছানায়।

চলবে?…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here