#শখের_সাদা_শাড়ি_২,০৫,০৬
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
৫.
বিদঘুটে এক টা দিন। পাত্রপক্ষ সবে মাত্র দেখে গেল মেঘনা কে। এক আকাশ সমান বিরক্তি নিয়ে বসে ছিল মেঘনা। উর্মির মাঝে কেমন বাচ্চা বাচ্চা ভাব। অথচ মেয়ে টা হাতে পায়ে সব দিক থেকেই বিবাহযোগ্যা। বাবা চোখ রাঙালেন। এক মাত্র ছোট মেয়ে কে তিনি ভীষণ ভালোবাসেন। তার এই মেয়ে টি যে ভীষণ উদার। যখন তখন নিজেকে উজাড় করে দেয়। এই নিয়ে কিছু বছর পূর্বে খুব চিন্তিত ছিলেন তিনি। তবে আজকাল আর ভাবেন না। মেয়েটি যেমন উজাড় তেমনি কর্মঠ আর বুদ্ধিমতী। শুধু আবেগ টাই যা বেশি। জীবনে চলার পথে এসব তো লাগেই। নয়ন কে দেখেই সবার পছন্দ হয়েছে। এদিকে মেঘনা করছে ছটফট। কখন ছাড়া পাবে। পাত্র পক্ষ চলে যেতেই মেঘনা ছুটে আসে স্বীয় কক্ষে। সেখান টায় দাড়িয়ে কল করে আলিদ কে। বাবা কে ফাঁকি দিয়ে চলে আসলে ও ছোট বোন কে ফাঁকি দিতে পারে নি মেঘনা। ব্যলকনি তে দাঁড়িয়ে কথা শুনে উর্মি।
” তুমি কবে আসবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে? না না এক সপ্তাহ পর আসলে হবে না। কাল ই আসো। জানি না কি করে ম্যানেজ করবে বাট আসো। আই লাভ ইউ সো ভ্যারি মাচ। প্লিজ আলিদ কিছু করো। ”
এমনি কিছু কথা শুনতে পায় উর্মি। মেয়ে টি অনেকক্ষণ নীরব থাকে। মেঘনা চলে যেতেই উর্মি বেরিয়ে আসে। ফোন ঘাটে লুকিয়ে। দেখতে পায় বোনের ভালোবাসা ময় কিছু মুহুর্ত। স্বভাব চরিত্র দেখতে শুনতে কোনো টা তেই ঘাটতি নেই আলিদ এর। তবে বিপত্তি ঘটে যখন মেঘনা জানতে পারে আলিদের পরিবারের সাথে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কথা। মেঘনা কে বলি হতে হয়। মূলত নিজ ইচ্ছে তে সপে দেয় সে। বাবা হয়তো কোনো দিন জানতে ও পারলেন না তাঁর ছোট মেয়ে টি নয় বরং তাঁর বড় মেয়েটির প্রতি আরেকটু যত্নশীল হওয়া উচিত ছিল। ছোট মেয়েটি যেমন আবেগী চালাক চতুর তদ্রুপ বড় মেয়ে টি অভিমানী আর চাঁপা।
আলিদ এর সাথে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে চলে আসে মেঘনা। আলিদ কে সব টা বলার পর আলিদ বলেছিল যেটা ভালো মনে করো সেটাই করো আমি কখনো বিরোধ করবো না। তোমায় ভালোবাসি, তোমায় অন্তরে অনেক আগেই গেঁথে ফেলেছি। তুমি না চাইলেও আমার হয়েই থাকবে। প্রতি উত্তরের ভাষা ছিল না মেঘনার নিকট। কতো রকম ছল ছাতুড়িই না করলো উর্মি। পড়াশোনার লোভ, স্বাধীনতা হারানো, সংসার জীবনের কষ্ট কত হাজার আহাজারি। অথচ ফল এলো শূন্য। সময়ের স্রোতে নয়নের সাথে মিশে যায় সকলে। ভালো মানুষির মুখেশে থাকা মানুষ টির সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় মন দিয়ে বসে মেঘনা। ভুলে বসে কিংবা ভোলার চেষ্টা করে পুরনো ভালোবাসা। তবে তাকে আর ও একবার ভুল প্রমানিত করে প্রতারণা করলো নরপশু টি। জীবন সুন্দর আর বিচিত্র।
বর্তমান
ক্ষত দেখে সৌমেন এগিয়ে আসে। ব্যস্ত হয় উর্মি কে নিয়ে। ছেলটার মুখের ভঙ্গিতে বোঝার উপায় নেই সে অসুস্থ। কিছু বকা খেতে হলো ওকে। উর্মি ভীষণ পরিশ্রান্ত। তবু বলল ” চলেন কোথায় ঘুরতে যাবেন।”
সঙ্গে সঙ্গে ধমকে উঠে সৌমেন। উর্মি চমৎকার হাসে। যেই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে ভয়। ড্রয়িং রুমে বসে ছিল লায়লা। আরাম করে নখে পলিস করে যাচ্ছে। সৌমেন এর চড়া কন্ঠে হাত থেকে পরে যায় পলিস। মেঝে রঙে ডুবে। প্রিয় নেল পলিস পরে যাওয়ায় আহত হয় সে। সাথে বিরক্তির স্বরে জানায় ‘ এতো বেশি লাউড আর আহ্লাদ করার কি আছে। ঐ তো একটু খানি কেঁটেছে। ”
রাগে কেঁপে উঠে সৌমেন। উর্মির হাত টা চেপে ধরে নিয়ে যায় ঘরে। বেডের উপর ফেলে দিয়ে বেশ বকতে থাকে। হতভম্ব উর্মি! এই তো সেই আগের মানুষ টা। এ সকল ভাবনার মাঝে চোখের পলকে সৌমেন এর আচারণ বদলে যায়। ছলছল করে উঠে উর্মির চোখ। বিড়বিড় করে
” আপনি কেন সুস্থ হচ্ছেন না সৌমেন স্যার। তাহলেই তো আমার মুক্তি হয়। এতো যন্ত্রণা আমার আর সহ্য হয় না। ”
উর্মির ভেতর টা জ্বলছে। সৌমেন চলে গেছে ফুটবল হাতে। মানুষ টা একটু আগেই স্বাভাবিক আচারণ করছিল। হঠাৎ ই কেমন বদলে গেল। নিজের ক্ষত নিজেই পরিষ্কার করলো উর্মি। ব্যথা টা অতিরিক্ত লেগেছে। ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। নিচে বসে ছিল অনেক গুলো মানুষ। তার ই একজন সমীর। উর্মি কে দেখে ও না দেখার ভান করলো। এতে উর্মি আবার আহত হয়। তবে পরিস্থিতির কথা মনে করে চুপ হয়ে যায় মন। লতিফা বেগম চা নাস্তা দিয়ে যান। মাহফুজ সাহেব সকল কে নাস্তা করার কথা বলে। উর্মি বুঝে এটা ব্যবসায়িক আলোচনা। তাই চলে যায় সেখান থেকে। লতিফা বেগম এর সাথে কাজে হাত লাগায়। ভদ্র মহিলা কিছু সময় পর উর্মির হাত টা লক্ষ্য করে। আঁতকে উঠেন। ” হাত! তোমার হাতে ব্যন্ডেজ কেন উর্মি? ”
” তেমন কিছু না। একটু লেগেছিল। ”
” দেখি। ”
হাত নাড়াচাড়া করতে করতে লতিফা বেগম এর চোখ ভরে উঠে। সৌমেন এর জন্য তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই উর্মির এই অবস্থা। উর্মি সান্ত্বনা দেয়। পর পর ই চলে আসে কিচেন থেকে। মিটিং প্রায় শেষ। সকলে উঠে চলে যায়। সমীর এখনো বসে আছে। মাহফুজ সাহেব এর সাথে কি যেন আলোচনা করছে। উর্মির ভালো লাগে না। চলে আসে স্বীয় কক্ষে। চোখ বন্ধ করে। কিছু সময় পর আওয়াজ হয় বেশ। উর্মি তাকাতে দেখতে পায় মিরর ভেঙে পরে আছে! আর পাশেই হা হয়ে তাকিয়ে আছে সৌমেন। উর্মি কিছু বোঝার পূর্বেই সেই কাঁচে হাত লাগায় সৌমেন। সঙ্গে সঙ্গে হাতে ক্ষত হয়। আতকে উঠে উর্মি। সৌমেন চেচায়। পর পর ই ছুটে বের হয়ে যায়। ফুটবল সরিয়ে উর্মি নিজে ও ছুট লাগায় সৌমেন এর পিছু। সিড়ি তে ধরে ফেলে। সৌমেন এর হাত থেকে ফিনিক দিয়ে তরল ঝরে।
” কেউ মেডিসিন নিয়ে আসো। ”
চেচাতে থাকে উর্মি। মাহফুজ সাহেব আর সমীর উপরে তাকায়। প্রথমে বুঝে না ঘটনা। পরে যখন বুঝতে পারে ছুটে আসে। উর্মির হাত কাপছে। সৌমেন এর হাত থেক গলগলিয়ে র’ক্ত ঝরে। ছেলেটার হাত চেপে আছে উর্মি। অথচ র’ক্ত থামার নাম ই নেই। দোপাট্টা টা চেপে ধরে। তাতে ও কাজ হয় না। লাল হয়ে যায় উড়না। এতো টা কেঁটে গেছে অথচ সৌমেন এর চোখে ব্যথা নেই যা আছে তা বোঝার উপায় নেই। বাচ্চা আর বড় মানুষের স্বভাব মিশ্রিত হয়ে সে যেন নতুন কোনো প্রানী। সৌমেন কে ধরে বসানো হয়। সমীর মেডিসিন নিয়ে এসেছে। সৌমেন এর হাত পরিষ্কার করতে যেতেই খপ করে মেডিসিন নিয়ে নেয় উর্মি! আপাততো ওর কোনো দিকে খেয়াল নেই। ব্যস্ত হয়ে যায় সৌমেন এর হাত নিয়ে। আলগোছে উঠে আসে সমীর। মাঝে উর্মির খেয়াল হয়। বেশ ধাক্কা খায়। একটু আগের কথা মনে পরতেই বুকের ভেতর মোচর দেয়। চেয়ে থাকে সমীর এর পানে। হাত টা আলগা হওয়া তে সৌমেন ছুটে পালিয়ে যায়। উর্মি ছুটতে গিয়ে ও ছুটে না। মাহফুজ সাহেব বলেন ” আমি দেখছি।”
বাড়ির মেইন ফটকে এসে সমীর এর পথ আগলায় উর্মি। চোখ দুটো ভেজা।
” সরে দাড়াও। কেউ দেখে নিলে মান যাবে। ”
” দেখুক। ”
” পাগলামি করো না। ”
” আমি হাপিয়ে গেছি। এই দুদিনেই আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। ক্লান্ত আমি। দেখতে পারছো না আমার আজ কি অবস্থা? ”
সমীর উত্তর করে না। নিরালায় বেরিয়ে যায়। উর্মির দেহ কেঁপে উঠে। জীবনে সব থেকে বড় দুটি ভুল হলো সমীর কে ভালোবাসা আর সৌমেন কে বিয়ে করা।
লেখনী : ফাতেমা তুজ
চলবে……
#শখের_সাদা_শাড়ি_২
৬.
সৌমেন এর খাবারে ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত করতে গিয়ে উর্মির হাত টা কেঁপে উঠলো। আজ দশ টা দিন হলো নিজেকে আড়াল করতে ছেলেটার খাবারে ঘুমের ঔষধ মিশায় সে। কখনো কখনো অনুসূচনা হয় আবার বা কখনো নিজের প্রতি রাগ হয়। সবার ভালো থাকার দায়িত্ব নিশ্চয়ই ওর কাধে না? তবে বার বার কেন নিজেকে অসুখী করে অপর কে সুখী করবে সে!
এসব ভাবতে ভাবতেই মেঘনার কল এলো। ভিডিও কল হওয়া তে সাগরিকার মুখ টা দেখতে পেল উর্মি। কি সুন্দর মায়াবি সেই চাহনী। ফোনের ওপাশ থেকে হাত নাড়াচাড়া করে। যেন ছুটে আসতে চায় উর্মির নিকটে। দু চোখ ছলছল করে উঠলো। একটু আগের কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়। সৌমেন এর খাবারে আর কখনো ঘুমের ঔষধ মিশাবে না বলে স্থির করে। সমীর এর সাথে আজ এক সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ নেই। উর্মির মন ভীষণ ক্ষিপ্ত। শুকিয়ে যায় গলা। চোখ পিট পিট করছে। ভাঙা গলায় আওড়ায় সে ” ভাগ্যের উপর সব ছেড়ে দিলাম। যা হবার হবে। ”
মেঘনা ওপাশ থেকে বলে ” কি বলিস তুই। এভাবে বিড়বিড় কেন করিস? ”
” না রে আপা। কিছু বলছি না তো। সাগরিকা কে খাইয়েছিস? ”
” হ্যাঁ। একটু আগেই খেয়েছে। জানিস বোন মেয়েটা না খুব ই লক্ষী। এই যে এখন খেল সারা রাত না খেলে ও জেগে উঠে না। উল্টো আমি টেনে তুলে খাওয়াই। ”
চোখ হাসে উর্মির। সাগরিকার দিকে তাকিয়ে আপসোস এর সুরে বলে
” ওকে কোলে নিতে ইচ্ছে করছে রে আপা। ইস একটু যদি জড়িয়ে ধরতে পারতাম। ”
” আপসোস কেন করো উর্মি? তোমরা বেবি নিলেই তো পার। এখন তো সবাই খুব ফাস্ট। বিয়ের মাসে ও অনেক এর প্রেগনেন্ট হওয়ার খবর আসে।”
লায়লা এসে দাড়ালো। উর্মি মুখ ফুটে বললো ও না বসতে। সে নিজেই বসে পরলো পাশে। সৌজন্যতা রক্ষার্থে মেঘনা হাসলো। লায়লা হাত নাড়িয়ে মেঘনার সাথে কথোপকথন শুরু করলো ” ওয়াও, বেবির কি যেন নাম? ”
” সাগরিকা। ”
” ইয়াহ। সাগরিকা লুক লাইক আ পিন্সেস। খুব ই সুন্দর। ওর বাবার মতো হয়েছে রাইট? ”
মলিন দেখালো মেঘনার মুখ। বিরক্তি ঠেলে নিয়ে উর্মি বলল ” না। সাগরিকা আপার মতো হয়েছে। ”
” অহ আচ্ছা। বাট মেঘনা কে খুব একটা হোয়াটএভার। মেঘনা তোমার হাসবেন্ড কে তো দেখলাম না। ”
মেঘনা দিক বিভ্রান্ত হলো। উর্মির ভ্রু যুগল বেঁকে আছে। লায়লা যে ওদের খোচাতে এসেছে এই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মেঘনার চোখ দুটো ভিজে একাকার। লায়লা অধর কোনে ক্রুর হাসি হাসে। উর্মি যেই না কঠোর জবাব দিবে ঠিক তখনি মেঘনার পেছন থেকে আলিদ বলে ” বাবু ঘুমিয়েছে মেঘনা? ”
চমকিত হয় মেঘনা। আলিদ কাছে আসে। লায়লার চোখ দুটো বড় বড়। আলিদ কে দেখে হতবিহ্বল! উর্মির ঠোঁট দুটো প্রসারিত হয়। একটু বাদে আলিদ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে হাত নাড়ায় ” বোনের সাথে কথা হচ্ছে। এদিকে ভাইয়া কে ভুলে গেছিস তাই না? ”
” আপনাকে ভুলি কি করে আলিদ ভাই। ”
” হ্যাঁ। তা তো দেখছিই। আমার মেয়ে আর মেয়ের মায়ের সাথে কথা হচ্ছে অথচ আমার খোঁজ ও নিলি না। ”
উর্মি খুশি হয়। আর মেঘনা হয় অবাক। বোকার মতো তাকিয়ে থাকে লায়লা। সে যেন অবাকের শীর্ষে। যদি ও সব টা জানে সে। তবু ও মুখ খুলে না। পাছে যদি ফেসে যায়। পরিস্থিতি ঠিক না দেখে লায়লা বেরিয়ে যায়। শ্বাস ফেলে আলিদ। মেঘনা চোখ মুছে।
” স্যরি। এটা ছাড়া উপায় ছিল না। ”
উত্তর করে না মেঘনা। উর্মি বলে ” ভালো করেছেন আলিদ ভাই। উত্তম জবাব। আপা কে খোঁচা মেরেই প্রশ্ন করেছে। ”
” সেই জন্যেই ঐ সব বললাম। ”
টুকটাক কথা হলো উর্মির সাথে। উর্মি কল রাখতেই মেঘনা বলল ” কখন এসেছো? ”
” অনেকক্ষণ হলো। ”
” বসো কফি বানাই। ”
” উহু কফি খাবো না। ”
” তাহলে খালি মুখে যাবে? ”
” এই বাসাতেই তো থাকছি। প্রতিবেশি এখন। অন্য একদিন খাবো না হয়। ”
মেঘনা না বোঝার মতো করে থাকে। আলিদ সাগরিকার পাশে আধ শোয়া হয়ে শুয়ে বলে ” ইস সাগরিকা আমাদের মেয়ে হলে ও তো পারতো। ”
বাথরুমে এসে কেঁদে ফেলে মেঘনা। মানুষ টা কেন এখনো পরে আছে? কোন আশা তে পরে আছে। ওর নিকট তো কিছুই নেই। উল্টো ছেলে টা কে কষ্ট দিয়েছে। প্রতারণা করেছে। সত্যিই যদি সেদিন বাবার কথায় রাজি না হতো তাহলে হয়তো সাগরিকা ওদের মেয়ে হতো।
.
সিগারেট ধরালো সমীর। এই নিয়ে পর পর আটাশ টা সিগারেট নষ্ট করেছে ছেলেটা। অথচ এক টা সিগারেটের এক অংশ ও বুকে টানার সাধ্য হলো না। হবেই বা কি করে! সিগারেটের ভোটকা গন্ধে ওর নিজের ই বমি আসে সেখানে খাওয়া তো দূরের কথা। তবে এক সপ্তাহের চেষ্টায় সিগারেট কে নাকের কাছে নেওয়ার মতো ক্ষমতা লাভ হয়েছে। জীবন টাই এমন। সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই বদলে যায়। মানুষ এর স্বভাব কিংবা দীর্ঘদিনের অভ্যেস। সব বদলাতে বাধ্য।
মিষ্টি মৃধা ছেলের পাশে এসে বসলেন। দ্রুত সিগারেট লুকালো সমীর। মায়ের দিকে তাকানোর সাহস হলো না। মিষ্টি মৃধা চুপ রইলেন। অন্য সময় হলে বিষয় টা ভিন্ন হতো। ছেলের গালে হাত বসাতে দু বার ভাবতেন না তিনি। আর সমীর নিজে ও এভাবে গুটিয়ে থাকতো না। মা ছেলের মৌনতা যেন কাটছেই না। হঠাৎ ই মায়ের কোলে মাথা এলিয়ে দিলো সমীর। বুকের ভেতর টা ধক করে উঠলো মিষ্টি মৃধার। ছেলের মাথায় হাত রেখে ক্ষনিকেই বুঝে গেলেন ছেলের ভেতরের অবস্থা। হাউ মাউ করে কাঁদতে চাইছে তার ছেলেটা। অথচ কান্না আসছে না। স্বভাবে নেই যে। কিছু সময় থেকে উঠে এলেন মিষ্টি মৃধা। বুকের ভেতর টা যন্ত্রণায় হাঁফসাঁফ করছে। কি করবেন ছেলেটার জন্য?
জীবনের বহু বছর পর সওলাত খান কে ফোন করলেন মিষ্টি মৃধা। দুজনেই চুপ। মিষ্টি মৃধা কথা বলছেন না দেখে সওলাত খান বললেন ” কে বলছেন? কথা বলুন। কে আপনি? ”
কয়েক বার চেষ্টা করে ও ব্যর্থ হলেন মিষ্টি মৃধা। কল কেটে দিয়ে চোখ বুজলেন। ছেলের মুখ টা মনে হতেই নতুন করে জেগে উঠলেন তিনি। আবার ও কল করলেন। এবার কথা বলার পূর্বেই সওলাত খান বললেন ” মিষ্টি? ”
শতেক সুচের আঘাতের মতো কথা টা কানে এসে লাগলো। মিষ্টি মৃধা কাঁদছেন। তবে সেটার প্রকাশ নেই। গলা টা ধরে আসছে তবে সেটার স্বর নেই। তিনি খুব ই স্বাভাবিক ভাবে বললেন ” মানেন বা না মানেন আমি এখনো আপনার স্ত্রী। কোনো দিন কিছু চাই নি আপনার নিকট। আজ চাইবো। আর সেটা দিতে ও হবে।”
সওলাত খান সাবলীল গলায় হেসে বললেন
” বলো তোমার কি চাই? ”
” আমার ছেলের সুখ। ”
সিয়াম এসে খবর দিলো সমীর নাকি জ্ঞান হারিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি মৃধার গলা টা কেঁপে উঠলো। ছুটে গেলেন তিনি। জীবনে কোন ঝড় আসতে চলেছে?
মাথা ধরেছে উর্মির। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কল টা রিসিভ করলো।
” কেন আমার ভাইয়ের জীবন টা নষ্ট করলেন? কি করেছিল আমার ভাইয়া। কি দোষ ছিল? বলেন কেন আমার ভাইয়া কে ধোঁকা দিলেন। ”
আকাশ থেকে পরলো উর্মি। সে বলল
” বুঝতে পারছি না কিছু। কে আপনি? ”
” এখন বুঝবেন ও না। রাজত্ব পেয়েছেন কি না। আপনার জন্য, শুধু মাত্র আপনার জন্য আমার ভাইয়া হসপিটালে শুয়ে আসে। গট ইট যদি আমার ভাইয়ার কিছু হয় আমি কাউ কে ছেড়ে দিবো না। ”
উর্মির হৃদয়ে আঘাত লেগেছে। সন্দেহ টা সঠিক হলো যখন শৌখিন ওকে কল করলো। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো উর্মি। বার বার নিজেকে সব কিছুর জন্য দায়ী মনে হচ্ছে।
চলবে……
কলমে ~ ফাতেমা তুজ