শখের_সাদা_শাড়ি_২,পর্ব-০৭,০৮

0
360

#শখের_সাদা_শাড়ি_২,পর্ব-০৭,০৮
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
৭.
হসপিটালে প্রবেশ মাত্র উর্মি কে মুখোমুখি হতে হলো সমীর এর ছোট ভাই সিয়াম এর নিকট। উর্মি কে চিন্তে অসুবিধা হয় নি ওর। ছেলেটার চোয়াল শক্ত। পর পর হাতের মুষ্টিবদ্ধ করলো ” কেন এসেছেন? ”

” তুমি? ”

উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না সে। উর্মির উপর চেচাতে লাগলো ” লীলা! লীলা খেলা দেখাতে এসেছেন। আমার ভাইয়ার জীবন টা শেষ করে দিয়ে এখন সুখে সংসার গড়েছেন। স্বার্থপর একটা। ”

” তোমার ভাইয়া এখন কেমন আছে? ”

” চুপ একদম কথা বলবেন না। বেরিয়ে যান বলছি। আমার ভাইয়ার মুখ দর্শন ও করবেন না আপনি। ”

” সিয়াম দেখো, তোমার ভাইয়ার সাথে দেখা করা জরুরী। ”

” কোনো দরকার নেই। বেরিয়ে যান এখনি। লাগবে না কাউ কে। আমার ভাইয়া এমনি তেই সুস্থ হয়ে যাবে। ”

আবার ও চেঁচাতে লাগলো সিয়াম। উর্মি উদাশীন ভাবে বেরিয়ে যেতে নিয়ে ও গেল না। চোখের কোন থেকে পানি মুছে সিয়াম কে অবজ্ঞা করে ছুটতে লাগলো। পথিমধ্যে শৌখিন কে পেয়ে গেল।
” শৌখিন ভাই সমীরের কি অবস্থা? ”

” ঠিক আছে এখন। ”

” আমি দেখা করতে পারি? ”

” মেইবি। দেখো ফাইফ জিরো থ্রি কেবিনে আনা হয়েছে। ”

” ধন্যবাদ। ”

ফাইফ জিরো থ্রি কেবিনে এসে থমকে গেল উর্মি। বাহিরে দাঁড়ানো সমীর এর বাবা সওলাত খান। ভদ্র লোক কে চিনে উর্মি। বিখ্যাত একজন মানুষ! অস্বস্তি ঠেলে দাড়ায় উর্মি।
” আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। আমি উর্মি, সমীর এর বন্ধু। ওর সাথে দেখা করা যাবে? ”

সওলাত খান উত্তর দেওয়ার পূর্বেই সিয়াম বাঁধা হলো।
” বললাম না চলে যেতে। এখনো যান নি কেন। লাজ লজ্জার লেশ মাত্র নেই। ”

” ভদ্র ভাবে কথা বলো। আমি তোমার বড়। ”

” অভদ্রতার কি দেখেছেন? অভদ্র প্রতারক তো আপনি। ”

” আমি প্রতারক। সব ঠিক আছে। প্লিজ এখন জেতে দাও। ”

” না কোথাও যেতে পারবেন না আপনি। ”

সওলাত খান মাঝ থেকে এবার বললেন ” ওকে যেতে দাও সিয়াম। ”

রাগের মধ্যে আর ও রাগ জেগে উঠে সিয়াম এর। সওলাত খান কে দু চোখে সহ্য হয় না ওর। ছেলের দৃষ্টি তে ঘৃনা দেখে আহত হলেন তিনি। তবু বললেন ” ভেতরে যাও উর্মি। ”

চলে গেল উর্মি। রাগে কটমট করতে করতে চলে যাচ্ছে সিয়াম। যাওয়ার সাথে সাথে ওয়েটিং চেয়ার গুলো তে লাথি মেরে গেল। সওলাত খান দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন। ছোট ছেলে সম্পর্কে যতো টুকু জানতেন এ যেন বিপরীত চিত্র। মানুষ বুঝি এভাবে পরিবর্তন হয়?

সিয়ামের করা বেয়াদবি শোনা মাত্র রেগে গেল সমীর। উর্মি করুণ চোখে তাকালো শৌখিন এর নিকট। শৌখিন বলল ” থাক ছেলেটা কে আর কিছু বলিস না। ”

” সেটাই। ছোট মানুষ বুঝে উঠে নি ঠিক। তাছাড়া কোনো কিছুই তো মিথ্যে নয়। ”

” চুপ করো তুমি। ওর সাহস কি করে হয় এমন বেয়াদবি করার। এমন হলে তো চলবে না। ”

” বাদ দাও এসব। এখন চুপ করে শুয়ে থাকো তো। ”

” শুয়েই তো আছি। ”

পুরো কথা টা কানে আসলো না উর্মির। দু চোখ এখনো ভেজা। সমীর এর নিকট আসতেই আর ও বেশি জ্বালা করছে চোখ। শৌখিন চলে গেছে। সমীর উঠে বসার চেষ্টা করলো ” উঠো না। ”

” কিছু হবে না। তুমি কাঁদছো কেন? ”

” কান্না করবো না? তুমি কি বলো তো। কেন এমন করছো। না খেয়ে থেকে আবার সিগারেট এর গন্ধ শুকতে গেছো। পাগল তুমি? ”

” পাগল ই তো। এটা তো তুমি ভালোই জানবে। ”

” চুপ করবে প্লিজ। ”

কিছু সময় চুপ রইলো সমীর। ঘড়ির দিকে নজর যেতেই বলল ” রাত এগারো টা বাজে। বাড়ি ফিরতে হবে তো। ”

” উহু যাবো না। ”

” পাগল হলে? ”

” কেন? ”

” শশুর বাড়ি তে তুমি। এখনো গেস্ট আছেন ঐ বাসায়। কি ভাববে সবাই? ”

” যা ভাবার ভাবুক। আর কিসের শশুর বাড়ি? বিয়েই তো না। ”

” আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। বিয়ে না হোক। ঐ টা তোমার দায়িত্ব ছিলো বোকা। আর দায়িত্ব পালন করবে না? ”

” একদিন ই তো। ”

” অনেক টা সময়। কাল না হয় আবার এসো। আজ যাও প্লিজ। ”

উঠে এলো উর্মি। যাওয়ার পূর্বে ভেজা চোখে তাকালো। ছেলেটার কপালে বার বার ঠোঁট ছোয়াতে ইচ্ছে হচ্ছে। তবে কেন যেন কাজ টা করতে পারছে না। দরজার নিকটে এসে রুখে দাড়ালো। আচানাক ছুটে এসে সমীর এর হাত মুঠো বন্দী করলো। ছেলেটার কপালে শুষ্ক চুমু দিয়ে বলল ” আমার মরণ কেন হয় না বলো তো। আমি যে সমস্ত কুল হারিয়ে ফেললাম। ”
.

সৌমেন এর মেজাজ গরম। কারণ গত দুদিন ধরে উর্মি কে দেখতে পায় নি সে। মাইশা মাইশা করে পুরো বাড়ি মাতিয়ে ফেলেছে। এদিকে ওকে সামলাতে গিয়ে সবার হীমসীম অবস্থা। উর্মি গত দুদিন ধরে নিজের বাসায় অবস্থান করছে। সে যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ! সৌমেন এর খাবারে আর মেশাবে না ঔষধ। এখন কি উপায়? ঔষধ না মেশালে যদি কোনো কিছু ঘটে যায়। এ সকল চিন্তা থেকেই দুদিন নিজের বাসায় থাকলো সে। তবে আজ যেতেই হবে। ফোন এসেছে। সৌমেন পাগলামি করছে। বউ বউ করে মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে। অথচ উর্মি ওর বউ ই না। অবশ্য কাগজে কলমে এ কথা মিথ্যে। মনের সত্যতায় যায় আসে কার? সব তো কাগজের খেলা। রিক্সায় উঠলো উর্মি। গেটের কাছে এসে দাড়িয়েছে মেঘনা। কোলে সাগরিকা। উর্মি লক্ষ্য করলো চার তলার ব্যলকনিতে দাঁড়ানো আলিদ। উর্মি হাসলো। আজ কাল কেমন যেন ভালোবাসায় তিক্ততা অনুভব হয়। তবে আলিদ কে দেখলে প্রশান্তি মেলে।ঐ যে ছেলেটা কেমন করে আগলে চলেছে মেঘনাকে। বিলাসবহুল বাড়ি গাড়ি ছেড়ে পুরনো বাড়ি টায় ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেছে। শুধু মাত্র মেঘনার নিকটে থাকার জন্য। বাচ্চা টাকে নিয়ে পরে থাকে সারাক্ষণ। গত রাতেই কথা হয়েছে উর্মির সাথে। আলিদ জানিয়েছে সাগরিকা কে নিজের সন্তানের স্নেহ দিতে চায়। মেঘনা যেহেতু চায় না সম্পর্ক হোক সেহেতু নাই বা হলো সম্পর্ক। তবে বাচ্চা টার ভালো মন্দে পাশে থাকাই তো যায়?
উর্মি বিশেষ কিছু মতামত দেয় নি। কারন ও জানে একদিন না একদিন দুটি হৃদয় এক হবে। অবশ্য সেটার জন্য খুব বেশি কসরতের ও দরকার নেই। উর্মি তো ভেবেই নিয়েছে। কিছু দিন পর এই নিয়ে পারিবারিক এক সভায় বসবে। পাছে ভয় যদি কেউ বাজে কথা শোনায়। আজকাল এর পরিস্থিতি আর মানুষের বিবেচনা বোধ নিয়ে প্রশ্ন না করাই ভালো। মেঘনা ছুটে এসে বোনের হাত টা ধরলো।
” কি হলো আপা? ”

” ওকে চলে যেতে বল না প্লিজ। আমার ভীষণ অস্বস্তি হয়। ”

” ধুর। অস্বস্তি কেন হবে? মানুষ টা তো ভালোই চায়। তাছাড়া এই বিষয়ে আমি বললে ও ভাইয়া শুনবে না। ”

অন্যমনস্ক ভাবে উত্তর করলো মেঘনা
” কি করি বল তো। ওর গরম সহ্য হয় না। অথচ তিন পাখা ওয়ালা লো পাওয়ারের ফ্যানের নিচে দিন কাটাচ্ছে। ”

” এতোই যখন চিন্তা তবে হাত পাখা নিয়ে বাতাস কর না। ”

মুখ চেপে হেসে নিলো উর্মি। মেঘনা ভ্রু কুচকে বলল
” সাবধানে যাস। ধকল তো কম যাচ্ছে না। ”

” হুম। হসপিটাল হয়ে তারপর ফিরবো। ”

” পৌছে কল করিস। ”

” হুম। ”

রিক্সা চলতে শুরু করলো। বাতাসের গতি খুব বেশি নয়। তবে গরম লাগছে না খুব একটা। শাড়ি পরেছে উর্মি। আঁচল টা হালকা উড়ে যেতেই একটা ঘটনা স্মরনে এলো। সমীর এর সাথে বন্ধুত্ব তখন। এক দিন দুজনেই রিক্সায় উঠেছে। মূলত লেট হয়ে গিয়েছিল। সেদিন ও শাড়ি পরেছিল উর্মি। আঁচল উড়ে গিয়ে রিক্সার চাকায় বিঁধে যায় একটুর জন্য দূর্ঘটনা ঘটে নি। তারপর থেকে সমীর সব সময় উর্মির আঁচল ধরে বসে থাকতো! বিষয় টা মজা দিতো ওকে। কত সুন্দর ছিল সেসব। অথচ দমকা হাওয়ায় এলোমেলো আজ। হসপিটালের ভেতরে চমক অপেক্ষা করছিল উর্মির জন্য। সৌমেন এর পুরো পরিবার দেখতে এসেছে সমীর কে। সৌমেন ও আছে। উর্মি কে দেখেই ছেলেটা রাগ করলো। সকলের সামনেই বকতে শুরু করলো ” দুদিন ধরে খোঁজ নেই তোমার। কোথায় ছিলে? আমায় ফেলে চলে যাওয়ার ধান্দা! এবার বেঁধে রাখবো।”

প্রতি টা মানুষের চোখ ওদের দিকে। লজ্জা লাগছে উর্মির। সমীরের সাথে চোখাচোখি হতেই সমীর হাসলো। এবার উর্মির কষ্ট হতে লাগলো। কিছু সময়েই সব টা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সৌমেন সমীর এর নিকটে এসে পরলো। চোখ পিট পিট করে বলল ” এমন চেহারা করেছো কেন সমীর? বড্ড বেমানান লাগছে। ”

” কি করবো সৌমেন ভাই? আমি যে এমনি বেমানান। ”

” হা হা। হসপিটালের বেডে শুয়ে ও মজা করছো। ”

সমীর হাসলো। সৌমেন উর্মির নিকটবর্তী হলো। কতো টা স্বাভাবিক ভাব। খানিক সময় যেতেই কেমন করে যেন আবার পরিবর্তন এসে গেল। ভীষণ কান্না পাচ্ছে উর্মির। জীবনের সবটা অংশ জুড়েই কেমন ব্যথা। শখ সুখ কিছুই নেই।

কলমে ~ ফাতেমা তুজ
চলবে…..

#শখের_সাদা_শাড়ি_২
৮.
সৌমেন কে নিয়ে বড় চিন্তিত মাহফুজ সাহেব। ইদানিং ওনার মস্তিষ্ক কাজ করে না। বেশ অনেক গুলো দিন থেকে গেলেন লতিফা বেগম। ব্যক্তিগত ভাবে সৌমেন এর সাথে লায়লার সম্পর্ক তৈরি করতে চান না তিনি। তবে তাঁর মেয়েটা বড় অধৈর্য! সৌমেন কেই তাঁর চাই। এক প্রকার রাগের মধ্য দিয়েই চলে গেলেন তিনি। শুধু থেকে গেল লায়লা। উদ্দেশ্যহীন ভাবে এ ঘর ও ঘর ঘুরে বেড়ায় আজকাল। মাঝে সাঝে উপস্থিত হয় সৌমেন এর নিকট। হুট করেই সেদিন বলল ” আমার থেকে পালিয়ে লাভ নেই সৌমেন। তুমি ধরা পরে গেছো। ”

সৌমেন সেসব কে গ্রাহ্য করলো না অবশ্র।বরং লায়লার দিকে একটা বল ছুড়ে দিয়ে বলল ” বল ধরতে পারে না। বল ধরতে পারে না।”
আর তার পর পর ই শুরু হলো খিটমিটে হাসি। লায়লা বিরক্ত হয়ে চলে গেল। আর সৌমেন আবারো বল নিয়ে ছুটোছুটি করতে লাগলো।

একদিন দুপুর বেলা ঘুমিয়ে ছিল উর্মি। আচানাক তাকে ডেকে তুললো লায়লা! উর্মি হতবাক। ” কি হয়েছে? ”

” আসো আমার সাথে। ”

” কোথায় যাব? ”

” গেলেই দেখতে পাবে। সব পরিষ্কার করে দিব আমি। নোংরা খেলা টা শুরু হয়েছে সেটা শেষ করে দিবো। ”

” তোমার কথা বুঝতে পারছি না। ”

” কথা বলো না। ”

উর্মি কে টেনে হিছড়ে নিয়ে গেল লায়লা। গেস্ট রুমে নিয়ে যেতেই দেখলো সৌমেন শুয়ে আছে মেঝের মাঝ বরাবর। উর্মি ব্যগ্র হয়ে বলল ” সৌমেন স্যার। কি হয়েছে ওনার।”

” কিছু হয় নি। ঢং করছে এখন। ”

সৌমেন এর ফোন নিয়ে নিলো লায়লা। ফোন ঘাটতে ঘাটতে বলল ” জাস্ট আ মিনিট। এখনি সব পরিষ্কার করে দিবো।”

সৌমেন কে ডাকতে লাগলো উর্মি। লায়লা ফোন হাতে নিয়ে কি সব করছে। কিছু সময় যেতেই কপাল কুচকে ফেললো। আর তারপর বলল ” ড্যাম ইট। ” সৌমেন এর বুক পিট এধার ওধার খুঁজতে লাগলো কিছু একটা।

” কি করছেন কি আপনি? মাথা ঠিক আছে। একজন অসুস্থ মানুষের উপর…!”

” থামো,অসুস্থ! কে অসুস্থ? কেউ অসুস্থ নয়। এসব হচ্ছে নাটক। ”

” কারো উপর অভিযোগ টানার আগে প্রমাণ থাকতে হয়। আপনি ভুলে যাচ্ছেন বোধহয়। ”

” কিচ্ছু ভুলি নি আমি। প্রমাণ ছিল,জানি না কি করে কি করেছে। ভুল হয়েছে ফোন টা রেখে যাওয়া। ”

” আপনার উদ্দেশ্য জানি আমি। তাই আমাকে ভুল বুঝাতে আসবেন না। আর কিছু জানতে বুঝতে চাই না আপনার থেকে।এমনি তেই আপনার জন্য অনেক ক্ষতি করেছি ওনার। আর নয়! রেহাই দিন। চলে যান দয়া করে। সৌমেন স্যার… ”

জ্ঞান নেই সৌমেন এর। লায়লা নিজের চুল নিজে ছিড়ে। উর্মি খুব রেগে যায়।
” কি করেছেন কি ওনার সাথে। উনি কথা বলছেন না কেন। ”

” কিছু করি নি। জ্ঞান হারিয়েছে শুধু। তবে শোনো উর্মি তোমাকে আগেই সাবধান করছি তুমি একটা খেলার গুটি হয়েছো কেবল। যাকে বিশ্বাস করে আমায় কথা শুনালে সে আসলে ভন্ড। ”

লায়লার কথা আমলে নিলো না উর্মি। সৌমেন এর মাথা তুলে পানির ছিটে দিল। চোখ পিট পিট করে তাকালো সৌমেন। দু চোখ মেলেই উতলা হয়ে পরলো। উর্মি পিঠের কাছ টায় হাত বুলাচ্ছে। ” আপনি ঠিক আছেন স্যার? ”

কথা বললো না সৌমেন। মাথা টা চেপে রেখে হঠাৎ ই উঠে গেল। টলমল শরীরে নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিল। উর্মি বিহ্বলের মতো পরে রইলো সেখানে। লায়লার উদ্দেশ্য টা আজ পরিষ্কার। বেশ কিছু দিন ধরেই লায়লা বলছিল সৌমেন নাকি প্রতারক। এসব নাটক মিথ্যে। প্রথম দিকে উর্মির হৃদয়ে সংশয় ঘটে। লায়লার দেওয়া সকল যুক্তি ওকে অন্ধ করে দেয়। সৌমেন কে চোখে চোখে রাখে। পরে দেখা যায় লায়লার কথার কোনো প্রমান নেই। উর্মি বুঝে যায় ওকে দ্বিধান্বিত করা হচ্ছে। সব স্বাভাবিক হয়েই গিয়েছিল আজ হঠাৎ ই এমন কান্ড করে বসে লায়লা। চাপা রাগ জন্ম নিলো উর্মির হৃদয়ে। কতো টা নিচে নামতে পারে একটা মানুষ?

সমস্ত ঘটনা সমীর কে বলতেই সমীর বলল ” তোমার মন কি বলে? ”

” আমার মন কি বলে আবার। আমি জানি লায়লা ভন্ড। শুধু শুধু অভিযোগ টেনেছে সৌমেন স্যার এর উপর। কোন কারনে সৌমেন স্যার নাটক করবে বলো তো? কি স্বার্থ ওনার!”

” সেটাই। ”

” শুধু তাই নয়। বিয়ে তো সৌমেন স্যার করতে চায় নি। সৌমেন স্যার কেবল আমাকে মাইশা ভেবেছে। বিয়ে টা তো ওনার বাবা করিয়েছেন। আমি বুঝি না মানুষ কি বুঝে। যদি দোষ দিতেই হয় তবে ওনার বাবা কে দেওয়া উচিত। ”

” শান্ত হও তুমি। ”

” কি করে শান্ত হবো বলো তো। সৌমেন স্যার কে অচেতন করে ফেলেছিল আজ। কি সব প্রমান দেখাবে আমায়। ফোন ঘেটে কিছুই পায় নি। আমায় অশিক্ষিত ভাবে হয়তো। আমি শুধু ভদ্রতার খাতিরে ওনার কথা গুলো কাউ কে জানাই নি। ”

সমীর চুপ করে রইলো। রেগে যাচ্ছে উর্মি। বার বার একি কথা বলে যাচ্ছে। যেন বহু দিনের ঝাল বেরিয়ে এসেছে। আলগোছে মেয়েটির মাথায় স্পর্শ করে সমীর। হাত বুলিয়ে বলে ” শান্ত হও তুমি। এভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে। ”

শান্ত হলো না উর্মি। আর ও কিছু সময় একি কথা বলতে লাগলো। এক পর্যায়ে সমীর বলল ” আমায় যেতে হবে আজ। একটু কাজ আছে। ”

” যাবে? ”

” হুম। ”

” ঠিক আছে। ”
মনমড়া হয়ে গেছে উর্মির। সমীর বিশেষ কিছু বললো না। উর্মি ফিরে এসে আবার ও চিন্তিত হয়ে পরলো। লায়লা নামের মেয়েটি সৌমেন এর ক্ষতি করবে বলে শঙ্কাগ্রস্ত। বেশ কিছু দিন ধরে আলাদা থাকছে উর্মি। কারন সৌমেন কে ভরসা করতে পারছিল না। আজ কেন যেন একা ছেড়ে দিতে ইচ্ছে হলো না। সৌমেন এর ঘরে গিয়ে দেখলো শুয়ে আছে ছেলেটা। পাশেই চুপ করে বসে রইলো। অবিন্যস্ত চুল গুলো গুছিয়ে দিলো। ঘুমের ঘোরে উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে নড়েচড়ে উঠে সৌমেন। সৌমেন এর হাত টা আলতো করে উর্মি কে স্পর্শ করে। অদ্ভুত শিহরণ জাগে। হাত সরালো না উর্মি। সৌমেন এর পাশে বসে কাটিয়ে দিলো সে রাত্রি। কেন যেন ভালো লাগছে আজ!

আজকাল হুটহাট লাপাত্তা হয়ে যায় সমীর। গত চার দিন ধরে ছেলেটার খোঁজ নেই। উর্মি কল করেছে বহু বার। তবে কল বাজে নি। উর্মি কয়েক বার চেষ্টা করলো সিয়াম এর সাথে যোগাযোগ করার। তবে পাত্তাই পেল না সে। এক পর্যায়ে স্নেহার নিকটস্থ হয়। সিয়ামের সাথে বিশেষ এক সম্পর্কে জড়িত মেয়েটি। এমনি খোঁজ আছে। ব্যকুল হয়ে উঠলো উর্মি। ভার্সিটি থেকে যখন বের হলো তখন প্রায় সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। স্নেহার ল্যাব ছিল আজ। উর্মি কে দেখে চিন্তে পারলো না। তবু নম্র ব্যবহার তাঁর। ” আপনি বোধহয় অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করছেন। ”

” ব্যপার না। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে স্নেহা। ব্যক্তিগত কিছু কথা। ”

স্নেহা বুঝলো বিষয় টা। বান্ধবী দের থেকে বিদায় নিয়ে উর্মির সাথে এলো। রিক্সায় করে ক্যাফে তে এলো ওরা। কথা গুলো খুব ই সেনসেটিভ। সেই জন্য ভালো স্পেস থাকা প্রয়োজন। উর্মির ব্যস্ততা, ব্যকুলতা সব ই দেখতে পাচ্ছিলো স্নেহা। বাসা থেকে কল আসা সত্ত্বেও রিসিভ করে নি তাই। শুধু ম্যাসেজ করে জানালো ফিরতে লেট হবে। উর্মি যখন হাত কচলায় তখন স্নেহা প্রশ্ন করে
” আপু এখন বলতে পারেন আপনি। আমার মনে হয় কথা গুলো যতো টা দ্রুত শুনবো ততোই সমাধানে সুবিধা। ”

আড়ষ্টতা জড়িয়েছিল উর্মি কে। তবে সমীর এর খবর যে ওর চাই ই চাই। কারো সাথে যোগাযোগ না করতে পারলে উর্মি হয়তো দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে। একে একে প্রায় সব টাই খুলে বললো উর্মি। স্নেহা বুদ্ধিমতী। হাজারো প্রশ্ন খুরপাক খাচ্ছে মাথায় তবুও ওদের ব্যক্তিত্ব কে আঘাত করলো না। একটু ভেবে চিন্তে উত্তর করলো। ” আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করবো সাহায্য করার। তবে নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছি না। বিগত কিছু দিন ধরে সিয়ামের মন ভালো যাচ্ছে না। সব সময় কেমন মন মড়া হয়ে থাকে। কিছু বলে ও নি আমাকে। এতো সব ঘটনা ঘটে গেছে অথচ আমি এর এক টুকরো ও জানি না।”

” জানি বিষয়টা খুব ই লজ্জাজনক। হয়তো তুমি আমাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন ধরতে পারো। তবে জানো তো, দ্বিধায় না পরলে বোঝা যায় না সিদ্ধান্ত নেওয়া টা কতো টা সেনসেটিভ। ”

” বুঝতে পেরেছি আপু। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ভাইয়ার খোঁজ এনে দেওয়ার। ”

আশ্বস্ত করাতে উর্মির বুকের ভাড় কিছু টা নেমে এলো। স্নেহার সাথে বেশি সময় ব্যায় করে নি আর। নানান ভাবনা নিয়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরছিল ওমন সময় একটি ম্যাসেজ আসে ” লাইফ ইজ ভেরি বিউটিফুল। তবে ডিসিশন নেওয়া টা মস্তিষ্কের উপর। তবু দুটো অপশন তোমার কাছে। বাঁচিয়ে নাও যাকে ইচ্ছে। ”

চলবে……
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here