#শখের_সাদা_শাড়ি_২,০৯,১০
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
৯.
সেদিনের পর তিন দিন কেঁটে গেল। উর্মি ম্যাসেজ টার হদিশ পায় নি আর। কে পাঠালো কে জানে! গত তিন টে দিন বেশ চিন্তায় ছিল। আজকাল সৌমেন কে নিয়ে বেশ ভয় হয় তার সাথে সমীর এর খোঁজ না পাওয়া। সব মিলিয়ে রুদ্ধশ্বাস ফেলেছে কেবল। হঠাৎ ই কাল সমীর ফোন করল। জানালো ছোট্র একটা দূর্ঘটনায় আটকে পরেছে। সেই জন্যেই যোগাযোগ করা হয় নি। উর্মি যে কি কান্না টা করলো। সমীর অবশ্য নিশ্চুপ ছিল। কেন যেন উর্মির মনে হয় সমীর ওর থেকে দূরে যেতে চায়। হয়তো মেনে নিতে পারে নি বিষয় টা।যত ভালোবাসাই থাকুক না কেন, কোন পুরুষ চাইবে বিবাহিত মেয়ে কে?
উর্মির ভাবনা হারিয়ে যায়। আজ আবার এলো নিজের বাড়ি। আলিদ এর সাথে বিশেষ আলোচনা রয়েছে। গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার থাকে ছেলেটা। এসি লাগায় নি এখনো। গত দিন নাকি জ্বর ও এসেছিল। মেঘনা ফোন করে বললো যাতে বোঝায় ছেলে টা কে। এভাবে জীবন থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। উর্মির ইচ্ছে করে স্বার্থপর হতে। বোনের জীবন কে রাঙিয়ে দিতে। পরমুহুর্তেই থেমে যায়। আলিদের মতো সুন্দর স্বভাবের মানুষ টি শুধু শুধু নিজের জীবন কে তুচ্ছ করছে। এটা সত্যি ই কষ্টকর। উর্মি বসলো। আলিদ কে বেশ ব্যস্ত দেখায়। চা নাস্তার ব্যবস্থা না করলেই নয়। উর্মি বাঁধা দিলো। তবু কফি বানিয়ে নিয়ে আসে। হেসে বলে উর্মি
” গরমে গরম খাওয়াবেন আলিদ ভাই? ”
” ঠান্ডা কিছু খাবে? আমি এখনি নিয়ে আসছি। ”
” দরকার নেই। বসেন আপনি। ”
” প্রথম বার এলে,একটু আধটু..! ”
” বসেন তো আপনি। দুটো কথা বলবো। ”
” ঠিক আছে। আগে কফি খাও। ”
কফি নিলো উর্মি। যা গরম পরেছে। উর্মি ঘাম মুছে বলল ” কষ্ট হয় না আলিদ ভাই? ”
” কষ্ট! কেন বলো তো। ”
” গরম তো আপনার সহ্য হয় না। ভার্সিটি তে যখন আসতেন চারপাশে জুনিয়র রা পাখা নিয়ে বসতো। মাঠে বের হলে ও তাই। ”
” এই তে আর কদিন। এসি টা এলো বলে। কনেকশনে একটু প্রবলেম ছিল। ”
” তবু খারাপ লাগে আমার। আপা চাইছে না আপনি থাকেন এখানে। ”
” তোমার আপা তো সব সময় ই এমন। ”
” আমার ও তাই মনে হয়। আপনি শুধুই নিজের জীবন টা কে…! ”
” সাগরিকা আমার সন্তান উর্মি। আমি ওর জন্য আছি। তোমার আপা তো সেই প্রথম দিন ই আমার হয়ে গেছে। মনে প্রানে সে সব সময় ই আমার। মানছি আমাদের বিচ্ছিন্ন ঘটেছে। সংসার হয়েছে মেঘনার। স্বামীর প্রতি জন্মেছে ভালোবাসা। সব টা অতি স্বাভাবিক নয় কি? তবে সাগরিকা কে আমি আমার সন্তান মনে করি। জন্ম দিই নি বলে বাবা হতে পারব না তোমরা এমন টা কেন ভাবো বলো তো। ”
সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে উর্মি ” আমরা তেমন টা বলি নি। ”
” জানি। বুঝি আমি। তবু ও কোথাও একটা সংশয় তো থাকেই তাই না? ”
উর্মি চুপ রইলো। তারপর ই জীবনের সব থেকে বড় সিদ্ধান্ত জানালো আলিদ।
” দ্বিতীয় সন্তান চাই না আমার। আমি আমার এক সন্তান নিয়ে সন্তুষ্ট। এটা হয়তো সত্য আরেক টা সন্তান এলে আমি সাগরিকা কে অবহেলার চোখে দেখবো। এটা আমি নিজে ও নিশ্চিত বলতে পারি না। তাই আমার এই সিদ্ধান্ত। ”
” পাগল হলেন? কেউ কি করে..! ”
” এটাই আমার সিদ্ধান্ত। যদি এর পর ও মেঘনা না চায় আমাকে নিজের সাথে জড়াতে তবে আমি দূর থেকেই সাগরিকা কে লালন করতে চাই। ”
মানুষের জীবন অদ্ভুত। সকালের ঘটনা টা কয়েক বার স্মরণ করেছে উর্মি। আলিদ কে দেখে অবাক হচ্ছে! ছেলেটা এমন কেন? অন্য মনস্ক হয়ে ভাতের লোকমা মুখে দিতেই নাকে উঠে গেল। জোৎস্না পানি এগিয়ে দিলেন। মেঘনা তাকানো। গভীর তাঁর দৃষ্টি। ” অন্যমনস্ক লাগছে তোকে? ”
” এই তো ঠিক আছি আপা। ”
” সব সময় একি কথা বলিস। ”
” এবার সত্যি। ”
হাত ধুয়ে সৌজন্য বলল ” তোমাদের বলা হয় নি। আমার একটা চাকরি হয়েছে। ”
” ঠিক বলছো? ”
” হু। ”
” তবে এটা তো বেশ ভালো খবর। মিষ্টি কোথায়? ”
” আনবো, আজ থেকে যাবি তো। ”
” থাকতে পারছি না ভাইয়া। ”
” কেন? আজ ই তো এলি। ”
” কিছু সমস্যা রয়েছে। সৌমেন স্যার কে নিয়েই চিন্তিত থাকতে হয়। ”
” অহ। ”
মেঘনা প্রায় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
সৌজন্য চলে গেছে এখনি। বিকেলের আগে মিষ্টি নিয়ে ফিরবে। অন্তু বললো চকলেট নিয়ে আসতে। তারপর মেঘনার কানের কাছে এসে বলল পিংকি কে নাকি দিবে একটা। সেসব শুনলো উর্মি। সত্যিই তবে ছেলেটা স্বভাব বদলাবার নয়!
লায়লা বলল ” এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত দাও তো উর্মি। ”
পানি নিতে এসেছে উর্মি। মেয়ে টা কে দেখেই বাহনা পাকিয়ে দিয়েছে। উর্মি প্রায় ক্ষোভ নিয়েই শরবত বানালো। সৌজন্য মূলক হাসলো লায়লা। ফোনে মনোযোগ রেখেই শুধালো ” সৌমেন বেশ রোমান্টিক জানো তো। কিন্তু খারাপ লাগছে তোমার সাথে তেমন কিছুই চোখে পরলো না। ”
” সে অসুস্থ আপু। ”
” সব সময় তো অসুস্থ না। হুট হাট স্বভাব টা বাচ্চা দের মতো হয়ে যায় এই তো প্রবলেম টা। তাছাড়া তো ঠিক ই আছে সব। ”
” এসব কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। আপনি দয়া করে বলবেন না আর। ”
” কেন? বললে কি হয়। জানো তো তোমার জন্য আমার বেশ আপসোস হয়।”
” আপসোস! ”
” হু। আপসোস! এই যে তুমি বিয়ের এতো গুলো দিন কাটিয়ে দিলে। প্রায় মাস দুই সময়। অথচ বরের ভালোবাসায় সিক্ত হওয়া তো বহু দূর জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর সৌভাগ্য অব্দি হলো না। ”
” আপনার এসব কথা শুনতে ইচ্ছে হয় না আমার।এটা আমাদের ব্যক্তিগত। ”
” সম্পর্ক টা বহু দূরে আটকে আছে তাই না? ইসসস কি একটা পরিস্থিতি! ”
আগুনের ফুলকির মতো ফুসতে লাগলো উর্মি। লায়লা ওকে বার বার অপদস্ত করে। নানান কায়দায় সম্পর্ক টা কে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। স্বীকার করাতে চায় উর্মি নিজে ও এ সম্পর্কের বিরুদ্ধে। তবে আজকের কথা গুলো লেগেছে খুব। কিছু কথা যেন ভেঙে দিয়েছে উর্মি কে।
রাতে বিছানা করার সময় সৌমেন বলল
” তুমি অনেক বদলে গেছো মাইশা। ”
” কেমন? ”
” কেমন যেন। আগে হুটহাট কাছে আসতে চাইতে। কত বাহনা করতে। এখন দূরে পালাও। এর পেছনে আমার অসুস্থতা দায়ী তাই না? ”
” বিষয় টা এমন নয়। আর আপনি অসুস্থ দেখেই…। ‘ কথার খেই হারিয়ে ফেলেছ উর্মি। ” আসলে পরিস্থিতি টা যেন কেমন। আপনি ঘুমাবেন এখন? ”
” না। ভালো লাগছে না। কিছু দিন কেন যে আমার এতো ঘুম পেতো। তুমি খুব বিরক্ত হয়েছো তাই না? ”
” উহু। আপনি এতো চিন্তা করছেন যে।”
” জানি না। তবে মনে হলো। ঐ যে লায়লা বললো না স্বামীর থেকে ভালোবাসা পাও না তুমি। ”
ছ্যঁত করে উঠলো উর্মির হৃদয়। সৌমেন হতাশ ভঙ্গিতে বলল ” শুনলাম তখন। এটা ও শুনলাম আমি নাকি হুট করে বাচ্চা দের মতো হয়ে যাই। এটা কি সত্যি? ”
” মিথ্যে বলেছে। আপনি কান দিবেন না সেসব। ”
” ভুলাতে চাইছো? ”
” না। আমি কিচ্ছু ভুলাতে চাইছি না। শুধু বলবো আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন। আর সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
নিরুত্তর রইলো সৌমেন। উর্মি বিছানা গুছিয়ে বললো
” অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পরেন। ”
কয়েক বার বলার পর ও চুপ থাকে সৌমেন। উর্মি কাছে এসে দাঁড়ালো। বাতাস আসছে চার পাশ থেকে। শীতল এক ঠান্ডা হাওয়া। উর্মির আঁচল উড়ে এসে ঢেউয়ের রূপ ধারণ করে। সৌমেন এর দু চোখে জল। আচানাক মেয়েটি কে জড়িয়ে ধরে। বলে ” তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমালে খুব কি অসুবিধা হবে তোমার? আমার না কিচ্ছু ভালো লাগছে না। শান্তি লাগছে না কিছুই। মনে হচ্ছে সব এলোমেলো! আমি ভুলের সাথে বাস করি। মনে হয় আমি পুরো টাই খাপছাড়া। সব টা দ্বিধায় ভরপুর। ”
চলবে……
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
#শখের_সাদা_শাড়ি_২
১০.
এক হাত ঘোমটা দিয়ে পাত্র পক্ষের নিকট উপস্থিত হলো মেঘনা। বুকের ভেতর ধক করে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে! উর্মির হাত টা খিচে রইলো। উর্মি আরেকটু শক্ত করে ধরে রাখে। কিছু টা সাহস পায় মেঘনা। আলিদ ছেলে ভদ্র। বিয়ে টা লুকিয়ে নয় বরং সকলের সম্মুখে করতে চায়। আর সে আয়োজনে বিন্দু মাত্র ক্রুটি থাকা যাবে না। মেঘনার হাত ঘামছে!এমন পরিস্থিতি জীবনে আসবে কখনো কল্পনা ও হয় নি। আলিদ এর বাবা আতাউর হোসেন প্রথম দিকে বিরোধ করেছেন। বেশ দ্বিমত ছিল ওনার। কিন্তু ছেলের চাওয়ার কাছে হার মেনে যান। একটাই ছেলে ওনার। একটু আধটু তো সংশয় থাকবেই। তবু ও তিনি মেনে নিতে বাধ্য। বহু পূর্বেই ওনার সাথে মেঘনার বাবার বিরোধ ছিল। সেই বিরোধ টা কে কেন্দ্র করেই না এতো কিছু। না হয় মেঘনা কে অপছন্দ করার কিছু নেই। ছোট থেকেই চিনেন তিনি। ভারী মিষ্টি স্বভাব। মাঝে সাঝে ওনার সাথে কথা ও হতো। তখন মেঘনা খুব ই ছোট। দেখলেই লম্বা করে সালাম দিতো। কখনো রাস্তা ঘাটে লাফালাফি করতে দেখে নি। সর্বদা একটা নরম স্বভাব বিরাজমান। সেই জন্যেই হয়তো ওর জীবন টা কুল হারিয়েছে। তীরে এসেছে ঠেকে তরী। মেয়েদের নরম হতে নেই। এই পৃথিবী তে নরম হলে বাঁচা যায় না। মেয়ে মানেই আগুন হতে হয়। স্রোতের মতো ধারালো হতে হয়। নতুবা জীবনে ঠকে যাওয়া টাই হয় ধর্ম।আতাউর হোসেন কষ্ট অনুভব করলেন। হয়তো বা জীবন গুলো আর ও সুন্দর হতো। অস্বস্তি বোধ হয় ওনার। আলিদ বাবা পাশাপাশি বসে।
বাড়ির বড় সদস্য অমর। বোন কে দ্বিতীয় বারের মতো বিয়ে দেওয়া অস্বস্তির বিষয়। মোটামুটি সবার মাঝেই একটা দ্বিধা কাজ করছে। আলিদ লক্ষ্য করেছে সেসব। তাই সে নিজ থেকেই বলল ” ভাইয়া আপনার মা বাবা নেই। যদি থাকতেন তাহলে হয়তো মেঘনার হাত টা তাদের থেকে চেয়ে নিতাম। কিন্তু সেটা এখন হচ্ছে না। বাড়ির বড় সদস্য আপনি। আপনার থেকে মেঘনার হাত চাইছি আমি। বিশ্বাস আর ভরসায় কখনো ঠকবেন না। কথা দিলাম। আমি আমার সন্তানের মা কে কখনো কষ্ট পেতে দিবো না। ”
ঘোমটার আড়ালে মেঘনার চোখ ছলছল করলো। অমর যেন কথা পেল। ” বড় ভাই আমি। তবে ভাই বোন দের প্রতি কখনোই দায়িত্ব পালন করে উঠতে পারি নি। নানা বাধা আর মানসিকতার কারনেই এমন টা হয়েছে। বড় সদস্য যেহেতু সেহেতু অনেক দায়িত্ব নিতে হবে।অবহেলা করা টা মানায় না। ভুল হয়েছে অনেক। স্বার্থের রাজ্যে বাস করে পরিবার নামক শব্দ টি বুঝতে পারি নি। তুমি নিশ্চয়ই ভালো পাত্র। ভরসা আছে দেখেই কিছু টা নিশ্চিন্তে বসে আছি। আমার বোনের কপাল তো জানোই। ”
” সেসব কথা বাদ দেন ভাইয়া। পুরনো কথা না মনে করাই শ্রেয়। ”
অমর কে নিশ্চুপ দেখালো। আতাউর কথা বলার প্রয়োজন বোধ করলেন। উর্মি আজ একটা কথা ও বলে নি। সৌজন্য পাশেই দাঁড়ানো। জোৎস্না নাস্তা দিচ্ছেন। মেঘনা কাঁদছে। ” তোমার বাবার সাথে আমার এক সুক্ষ্ম ঝামেলা ছিল। সে ঝামেলার জল এতো দূর গড়াবে জানলে সেদিন ই মিটমাট করে নিতাম সব। যা হবার তা হয়েছে। আমি আলিদ এর বাবা আজ এখানে উপস্থিত। দ্বিধান্বিত ছিলাম। তবু ছেলের কথা ভাবতে হয়। তাছাড়া মেঘনা কে নিয়ে প্রশংসা করে ও শেষ হবে না। শুধু কিছু ভুল…”
” থাক না বাবা। ”
” হুম। পুরনো কথা বলে ঘটনা কে কঠিন করে লাভ নেই। আমি মেঘনার হাত চাইছি আমার ছেলের জন্য। সাথে ছোট ফুটফুটে প্রাণ টা কে চাই আমার নাতনি হিসেবে। ”
মেঘনা আর আলিদের বিয়ে ঠিক হলো। অনুষ্ঠান নিয়ে মেঘনার বেশ আপত্তি। সে জন্য আলিদ অতো ঘাটালো না। শুধু মাত্র বিয়ের অনুষ্ঠান টা ধুমধাম করে করবে বলেই স্থির হলো। মিষ্টি নিয়ে এসেছে সৌজন্য। কয়েক রকমের সুস্বাদু মিষ্টি। প্রথমে মেঘনার মুখে দিয়ে তারপর আলিদ কে খাওয়ালো। আলিদ কে জড়িয়ে ধরে বলল
” দেখে রেখো আমার শান্ত বোন টা কে। বড় চাপা স্বভাবের। ”
” রাখবো ভাইয়া। জীবনের সব টুকু দিয়ে আগলে রাখবো। ”
রাতের খাবার না খাইয়ে ছাড়লো না উর্মি। রাত এখন দশটার কাছাকাছি। তড়িঘড়ি করে বের হতে নেয় উর্মি। তখনি মেঘনা বলে ” আজ থেকে যা প্লিজ। ”
” থাকা যাবে না আপা। ”
” কেন? ”
” সৌমেন স্যার কে নিয়ে ভয় হয়। জানোই তো লায়লার কান্ড। ”
” একটা কথা বলবো? ”
” হুম। ”
” আমি লায়লার কথা ফেলে দিতে পারছি না। কেন যেন মনে হচ্ছে বিষয় টা যতো সহজ দেখায় আসলে ততো সহজ না। ”
” প্রথম দিকে আমার ও তাই মনে হয়েছে। কিন্তু আপা এটা সত্য নয়। তুই জানিস সেদিন সৌমেন স্যার কতো টা ছটফট করেছে। লায়লার থেকে সেসব কথা শুনে ওনি প্রায় পাগল। অনেক কষ্ট বুঝ দিয়ে তবু সারা রাত ঘুমালো না। নির্ঘুম রাত্রি তে বার বার বলছিল আমার সাথে থাকতে তোমার কষ্ট হয় মাইশা? আমি মানুষ টাই ভুল তাই না। তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি। কেন এলে আমার জীবনে। তাহলে তো সব ঠিক হতো। আমিই বরং দোষী। সে সময় টা তোমাকে নিয়ে এতো ভয় সংকোচ ছিল যে পাগল হয়ে গেলাম। পাগলামি শুরু হলো। আর সে জন্যেই হুট করে হলো বিয়ে টা। তোমাকে সময় দেওয়া দরকার ছিল। ”
কথার মাঝে থামে উর্মি। অন্যমনস্ক হয়ে বলে ” জানিস আপা। আজকাল না আমি বড় দ্বিধায় আছি। বড্ড দ্বিধা আমার এ মনে। সব টা যেন এলোমেলো। ”
” কি হলো আবার? ”
” সমীর এর থেকে দূরে চলে এসেছি। বহু দূরে। হয়তো সমীর আমাকে আর ভালোবাসে না। সব টাই…”
” তোর ভুল ধারণা। দেখ উর্মি জীবন টা কে কঠিন করে ফেলেছিস তুই। আমাদের সাগরিকার কিছু হতো না সেদিন। আল্লাহ ছিলেন তো পাশে। ”
দীর্ঘশ্বাস ফেললো উর্মি। ঠিক ভুল বিচার করতে পারলো না। হয়তো সেদিন সাগরিকার কিছু হতো না কিন্তু যদি কিছু হয়ে যেতো?
পিনপতন নীরবতা চলছে। লায়লা এক গ্লাস ওয়াইন ঢেলে নিয়ে বলল ” কাহিনী ঘুরে গেছে। ”
” ঘুরে গেলে চলবে না। তোমাকে সহজ করতে হবে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে হবে সব টা। ”
” তুমি বললেই তো সেসব হচ্ছে না। পুরো বিষয় টাই এতো জট পাকানো যে….। ”
” নেহাত ই জট পাকাচ্ছো তুমি। এতো দিনে ও পারলে না কিছু প্রমান করতে। ”
” আমাকে দোষ দিবে না সমীর। তুমি নিজে ও বা কি করেছো? ”
রেগে গেল সমীর। ” আমি এক পা আগালে ও আমাকে টেনে ধরা হবে। বুঝেছো তুমি,এটা কেবল খেলা। না হয় আমার থেকে উর্মি কে আলাদা করা হতো না। আমি চাইলেই সব টা প্রমান করতে পারি না। ”
” হুম। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। মাস খানেক এর মধ্যেই আমাকে চলে যেতে হবে। এভাবে আমার দিন যাচ্ছে না। স্বামী সংসার ফেলে আমি আর পারছি না এভাবে থাকতে। ”
” বুঝি লায়লা। তবে আমরা খুব ধীর আগাচ্ছি। তুমি আমি এক সাথে কাজ না করলে লাভের লাভ কিছু হবে না। ”
” সেটাই…। ”
ফ্রন্ট গেট দিয়ে একটা গাড়ি ঢুকলো। লায়লা বুঝতে পারলো উর্মি এসেছে। হতাশ গলায় বলল ” উর্মি এসে গেছে। আজকাল তো সৌমেন এর ঘরেই থাকে। সারাক্ষণ নজর বন্দী। বিষয় টা কে আর ও দৃঢ় করে দিলো উর্মি। ”
” বাদ দাও সেসব। যা করার দ্রুত করতে হবে। সামনেই আমি একটা প্ল্যান করেছি। আশা রাখ…। ”
” আমাকে যেতে হবে। রাখছি এখন। উর্মি এদিক টা তেই আসছে। ”
লায়লা মেকি হাসি দিলো, অনেক টা ঘাবড়ে গিয়েছিল। তবে মুহুর্তেই নিজেকে ঠিক করে বলল ” কি খবর তোমার? ”
” ভালো। এতো রাতে আপনি এখানে? ”
” কেন আসতে পারি না? ”
” পারবেন না কেন। অবশ্যই পারেন। তবে আপনাকে কেন যেন বিশ্বাস হয় না আমার। ”
” অন্ধ জগতে বাস করছো তুমি। তাই সব কিছু তেই রহস্য খুঁজো। অথচ চোখের সামনের…। ”
” এসব কথা বহু বার শুনেছি আমি। আর আপনার প্ররোচনায় ভুল ও করেছি। বেশ অন্যায় করেছি সৌমেন স্যার এর সাথে। সেসবের জন্য তিনি আর ও অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন। আপনার কথা আর শুনবো না আমি। খুব দ্রুত আপনার মুখোশ উন্মোচন করবো। ”
তাচ্ছিল্য হাসলো লায়লা। ” একদিন তুমি আপসোস করবে। ”
” সেসব আপনার ভাবা লাগবে না। শুধু বলবো মাথায় থাকা উদ্ভট চিন্তা গুলো বাদ দিন। ভালো থাকুন আর ভালো থাকতে দিন। ”
চলবে…..
কলমে ~ ফাতেমা তুজ