#শখের_সাদা_শাড়ি_২,১৫,১৬
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
১৫.
সমীর এর বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম তিথি। বয়স বাড়লে ও সাধারণ সৌন্দর্য্য টা এখনো অক্ষুন্ন রয়েছে।অতিরিক্ত সুন্দর বিধায় ই হয়তো সওলাত খান প্রেমে পরেছিলেন। মিষ্টি নিজেকে শক্ত করলো। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তিথির গলায় খুব জোর থাকলে ও এখন মুখে রা নেই। মিনমিনে কন্ঠে কেবল বললেন “আপা আপনারা বসেন। দাঁড়িয়ে আছেন কেন। ”
সিয়াম প্রচুর বিরক্ত। তবে সমীর স্থির নয়ন এ তাকানো। সে দেখতে চায় কি ঘটে। সওলাত খান এগন ভীষণ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি অনুভব করছেন। মিষ্টি তিথির নিকটে এলো। আচানাক গাল ছুঁইয়ে দিয়ে বললেন
” তুমি দেখতে খুব ই সুন্দর। ”
ঈষৎ লজ্জা পেলেন তিথি। মিষ্টি ফের বললেন ” আর সেই জন্যেই আমি তাকে ধরে রাখতে পারি নি। ”
বুকে ব্যথা অনুভব করলেন সওলাত। মিষ্টি কে তিনি কখনোই মূল্য দেন নি। কারণ টা ওনার ও অজানা। সে সময় টায় মানসিক ভাবে বিবাহের জন্য তৈরি ছিলেন না তিনি। কিন্তু বাবা জোর খাটালেন। লোভ দেখালেন সম্পত্তির। অনেক টা বাধ্য হয়েই বিয়ে টা করেছেন। কখনো বা ভালোবাসা অনুভব করেছেন তখনি হয়তো ছুটেছেন মিষ্টির কাছে। যার ফল স্বরূপ আজ দাঁড়িয়ে দুই সন্তান। দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লেন তিনি। তিথি সিয়াম এর কাছে এলো। সিয়াম কে দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড রাগ জমায়েত করে রেখেছে। হাসলেন তিনি। ” তোমাকে দেখে চোখ বন্ধ করে বোঝায় যায় তুমি তোমার বাবার সন্তান। অনেক মিল তোমাদের। ”
শুনে না সিয়াম। তিথি আলতো হাতে সিয়াম কে স্পর্শ করতেই ছিটকে সরে আসে। বিষয় টা সকলের ই চোখে লাগে। তবু কেউ কিছু বলে না। খানিক বাদেই স্কুল ব্যাগ কাঁধে একটি মেয়ে বাসায় প্রবেশ করলো। এতো মানুষ দেখে প্রথমে ভরকে গেলে ও কিছু সময় পর সমীর এর নিকট ছুটে আসে। চোখ দুটো চকচক করছে। ” দাদা ভাই, তুমি ই তো আমার দাদা ভাই। ”
” তুমি…! ”
” তোমাদের বোন, তিতির। ”
বাবার থেকে চোখ সরিয়ে নিলো সমীর। তিতির আহ্লাদে আত্মহারা। সে বলল
” আমি দেখেছি, তুমি খুব ভালো কস্টিটিউম ডিজাইন করো। আমাকে একটা বানিয়ে দিবে প্লিজ? ”
” দিবো। তুমি বোধহয় স্কুল থেকে এসেছো। যাও ফ্রেস হয়ে আসো। ”
” ঠিক আছে। ”
তিতির চলে গেল। মিষ্টি হতাশ নয়নে তাকালো সে পথে। সওলাত খানের মুখে এতো সময় পর আলাদা দ্যুতি টা ফিরে এসেছে। হয়তো মেয়ের প্রতি কেবল দায়িত্ব বোধ নয় বরং প্রচুর ভালোবাসা আছে।
উর্মি খেয়াল করলো সৌমেন কেমন থ হয়ে আছে। কিছু যেন ভাবে সারাক্ষণ। স্যুপের বাটি রাখলো টেবিলের পাশে। ছাঁদের ঘটনার পর উর্মি নিজের বাড়ি ফিরে এসেছিল। বিষয় টা মাথা থেকে যাচ্ছিলোই না। উর্মির কষ্ট হয়েছে বিষয় টা মেনে নিতে। সৌমেন এর নিকট আসতে অস্বস্তি শুরু হচ্ছিল। তবে এখন ঘটনা স্বাভাবিক।
” স্যুপ নিয়ে এসেছি স্যার। ”
জবাব এলো না। উর্মি আবার ও ডাকলো এবার ধ্যান এলো সৌমেনের। চোখাচোখি হতেই উর্মি লক্ষ্য করলো সৌমেন এর দু চোখ যেন নিষ্প্রাণ। সেদিনের ঘটনায় বেশ আঘাত পেয়েছে কি না। সৌমেন চুপচাপ খাচ্ছে। ধীরে ধীরে পুরো বাটি টাই শেষ করলো। উর্মি তখনো দাঁড়িয়ে।
” আপনার কি মন খারাপ? ”
” উহু। ”
” তাহলে অমন শুকনো কেন মুখ? ”
” এমনিই হয়তো। ”
” না এমনি না। আপনি হয়তো লুকাচ্ছেন কিছু। ”
” কি লুকাবো? ”
” সেটাই তো বুঝতে পারছি না। ”
উর্মি চুপ রইলো সৌমেন এর উত্তরের জন্যে। তবে সোমেন নিরুত্তর।পাশে বসে উর্মি। আলতো করে কাধে হাত রাখে। ” সেদিন এর ঘটনা নিয়েই হয়তো আপনি চিন্তিত। আসলে….! ”
” বুঝতে পেরেছি। তুমি টেনশন করো না। আমি ও না সেদিন যাই হোক কখন ফিরেছো? ”
” একটু আগে। ”
” অহ। ”
মেঘে ঢাকা আকাশের মতো থমকে গেল আবার। উর্মি চাচ্ছে সৌমেন কে হাসি খুশি রাখতে। ডাক্তার বলেছেন এমন রোগী কে কখনো প্রেশার দেওয়া যাবে না। যতো টা সম্ভব আনন্দে রাখতে হবে। উর্মির ফোন টা বেজে উঠে। খেয়াল নেই তার। সৌমেন ই বলে ” ফোন বাজে। ”
” হু? ”
” কল এসেছে, দেখো। ”
” অহ আচ্ছা। ”
সমীর এর কল। সৌমেন এর সামনে কথা বলা যাবে না। উর্মি উঠে আসে। সৌমেন হয়তো অগোচরে তাকালো একবার। তবে খুব একটা মনোযোগ দিলো না। তার সব ভাবনা পানসে হয় আছে। দ্বিধায় ফেটে যাচ্ছে মস্তিষ্ক। কোথাও একটা ভয় কাজ করে। প্রচন্ড সংকটে থরথর করে কাঁপে।
সমীর বলল ” খেয়েছো? ”
” হুম। ”
” কল দিলে না যে আর। সেদিন বললে একটু ফ্রেস হতে চাও। কিছু দিন সব কিছু থেকে দূরে থাকবে। তারপর ই আর হদিশ নেই। ”
” দূরে থাকতে চাইলেই কি দূরে থাকা যায় সমীর? কোথাও না কোথাও থেকে যেতেই হয়। তুমি বললে না সেদিন, জীবনে একা থাকা যায় না। আসলেই হয়তো একা থাকা যায় না। ”
” তোমাকে বিষণ্ন শোনায়। তুমি কি খুব যন্ত্রণায় আছো উর্মি? ”
” আমি নিজেই তো একটা যন্ত্রণা। ”
সমীর হতাশ স্বরে বলল ” মাহফুজ আঙ্কেল এর সাথে কথা বলেছিলে? ”
” না। ”
” কেন? ”
” টাকা ফেরত দিলেই বা কি লাভ সমীর? এই মুহুর্তে বিচ্ছিন্ন হওয়া তো সম্ভব না। ”
” তবু তুমি আলাদা থাকতে পারতে। নিজের মতো করে নিজের বাড়ি তে। ”
” আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ”
” অহ। ”
নীরব হয়ে এলো সমীর। উর্মি ও অন্যমনস্ক হয়ে গেল। দুজনেই যেন সরে যাচ্ছে একটু একটু করে বহুদূর।
সময় যাচ্ছে আলোর গতিতে। সমীর খুব বেশিই চিন্তিত। লায়লার নিঁখোজ হওয়া টা ওকে খুব যন্ত্রণায় ফেলেছে। চারপাশে খোঁজ করে ও খুব একটা লাভ হলো না। কি হলো মেয়েটার?
সেদিন ই বললো আমি সব টা খুব দ্রুত করে ফেলবো। চিন্তা করো না। আর তার পর ই নিরুদ্দেশ। যন্ত্রণা করে মাথা। সিয়াম ঘরে আসার আগে বলে ” তুই কি ব্যস্ত? ”
” না। কেন বল তো। ”
” কিছু কথা ছিল। ”
” আয়, বোস ঐ খানে। ”
চেয়ার টেনে বসলো সিয়াম। সমীর আগ্রহ দেখিয়ে বলল ” কি হলো তোর? ”
” আমার ভালো লাগছে না এসব। আমি কিছু তেই এসব মেনে নিতে পারছি না। মায়ের সামনে যেতে লজ্জা হয়। কি করে আমি আমার মায়ের সতীন কে মেনে নিতে পারি বল তো। ”
” তোর কথা সত্য। তবে সময় আমাদের বিপরীতে। আর সেই জন্যেই এসব মেনে নিতে হবে। ”
” আমি পারছি না। ”
” আমি ও পারি নি। সেই জন্যেই ছুটে এসেছিলাম। তবে এখন মনে হয় বাবার সাথে মিষ্টি মায়ের সম্পর্ক টা ঠিক করা যেতেই পারে। এমনি তেই মিষ্টি মা কষ্টে আছেন আর বাবা ও। ”
সিয়াম নাক ফুলালো। ” মিথ্যে। সে যদি কষ্টে থাকতো তবে অন্য মহিলা কে বিয়ে করতো না। ”
” হয়তো এখন অনুতপ্ত। ”
” অনুতপ্ত হয়ে লাভ কি? তিনি কি পারবেন আমার শৈশব ফিরিয়ে দিতে? পারবে তোর জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় যে সময়ে বাবার টাকায় আরাম আয়েশ করার কথা সেটা ফিরিয়ে দিতে। ”
উত্তর খুঁজে পেল না সমীর। সিয়াম চোখে মুখে দৃঢ়তা এনে বলল ” মায়ের জীবনের সুন্দর সময় গুলো নষ্ট হয়ে গেছে ভাইয়া। তিনি চাইলে ও আর কখনোই সেগুলো ফিরাতে পারবেন না। মা এখন নেতিয়ে যাওয়া গাছের মতো। শুধু আমাদের জন্য আজ মায়ের এ অবস্থা। ”
গুমোট কান্নায় ভেঙে পরে সিয়াম। কান্নার এক পর্যায়ে বলে ” আজ যদি তুই আর আমি না থাকতাম তাহলে মা নিজের জীবন কে গোছাতে পারতেন। ”
” তুমি কি মনে করো আমার জীবন টা অগোছালো? ”
মিষ্টি কে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয় সিয়াম। সমীর নড়েচড়ে বসে। মিষ্টি বলেন ” সন্তান কতো টা গুরুত্বপূর্ণ তা শুধু মাত্র একজন মা ই বুঝেন। তোমরা কখনোই আমার জীবনের বিষন্নতা বা এলেবেলে ভাবের জন্য দায়ী না। বরং সৃষ্টিকর্তার রহমত তোমরা। তোমাদের নিয়েই তো আমি বেঁচে আছি। ”
সিয়াম নিশ্চুপ থাকতে পারলো না। ছেলে টার স্বভাব ভিন্ন। ছোট থেকে দূরে দূরে থাকে। মিষ্টি বরাবর বড় ছেলে কে বেশি কাছে টেনেছেন। তাঁর মানে এই না সিয়াম কে কাছে টানেন নি। তবে সিয়ামের দিক থেকে কাছে আসার প্রবণতা কম ছিল। অন্যদিকে সমীর ছিলো মা ভক্ত। আদুরে সন্তান। মায়ের আঁচলের নিচে গুটি মেরে বসে থাকতো। মিষ্টি সিয়ামের গালে স্পর্শ করলেন। আজ বহু বছর পর মা কে জড়িয়ে ধরলো সিয়াম। হাউ মাউ করে কাঁদছে ছেলেটা। সমীর এর হৃদয় টা পুষ্পে ভরে উঠে। সে ভাবে ‘আজ যতো ইচ্ছে কেঁদে নে। সব দুঃখ সরিয়ে নেয়।’
চলবে…..
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
#শখের_সাদা_শাড়ি_২
১৬.
উর্মি কে সারপ্রাইজ দিবে বলে ঠিক করেছে সবাই। প্রায় দুই মাস ধরে মেয়েটির সাথে দেখা হয় নি কারোর। জান প্রাণ দিয়ে ব্যস্ত উর্মি। কি করে সৌমেন কে ভালো করবে সেই চিন্তা। নানান হসপিটাল আর ডাক্তার দের সাথে যোগাযোগ। তবু একটা স্থায়ী ঠিক ঠাক সমাধানে আসতে পারছে না মেয়েটি। তাছাড়া ব্যক্তিগত বিজনেস নিয়ে আলিদ বাহিরে ছিলো। মেঘনার সাথে টুকটাক কথা হতো কেবল। কারো খোঁজ নেওয়ার ফুসরত অব্দি নেই।এছাড়া ও সৌমেন এর সাথে ওর পরিচয় নেই। নাম শুনেছে কেবল। এতো ঝড়ের মাঝে আর যাওয়া হয় নি। তৈরি হচ্ছে আলিদ। সাগরিকা কে কোলে তুলে নিয়ে ছেলেটি বলল ” তুমি রেডি হয়ে আসো আমি নিচে অপেক্ষা করছি। ”
” হুম। ”
সাগরিকা ঘুমিয়েছিল। আচানাক উঠে পরে। আলিদ কে দেখে হাসে। মেয়েটির গালে চুমু খায় আলিদ। গালের সাথে গাল লাগতেই শব্দ করে হাসে মেয়েটি। আলিদ এর ভীষণ ভালো লাগে। ইচ্ছে করে সব সময় সাগরিকা কে হাসাতে। ফোন বেজে যাচ্ছে অথচ কোনো তাল নেই। মেঘনা এসে বলল ” তোমার ফোন বাজে তো। ”
” অহ। দাঁড়াও দেখছি। ”
” দাও ওকে। ”
একটু সরে এসে কল রিসিভ করে আলিদ। মেঘনা সাগরিকা কে বুকের সাথে চেপে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করে। বাচ্চা টি গাড়ি তে উঠলেই কেমন উসখুস করে। ঘুমিয়ে থাকলে কিছু টা স্থির থাকে। কথা শেষ করে এলো আলিদ। মুখ টায় মুহুর্তেই মেঘ এসে জমেছে।
” কি হলো তোমার? ”
” কাজ পরে গেল। ফ্যাক্টরি তে একটা সমস্যা হয়েছে। যেতে পারছি না। ”
” থাক মন খারাপ করে কি লাভ। পরে যাবো আমরা। ”
” সেকি! তোমরা কেন যাবে না? ”
” তোমায় রেখে…..”
” আমি তো বাড়ি তে বসে থাকবো না বাবা। তোমাদের দিয়ে আসি। ভাইয়াদের সাথে চলে যেও। ”
” ঠিক আছে। ”
মেঘনা কে পৌছে দেয় আলিদ। যাওয়ার আগে কপালে অধর ঠেকিয়ে বলে ” মন খারাপ করো না। পরে কোনো একদিন যাবো আমরা। ”
গাড়ি চলছে। হঠাৎ ই আলিদ বলল ” বাবু কে কোন ডাক্তার দেখিয়েছো আগে? ”
” সিটি হসপিটালে বেবি স্পেশালিস্ট। ”
” ওর যে অপারেশন হয়েছে সেটা তো জানতাম না আমি। ”
” সেটা অনেক জটিল কাহিনী। ”
” তবু জানাতে….”
” পরিস্থিতি এমন ছিল যে কিছু করার ছিল না। কিন্তু ওর অপারেশন এর কথা তুমি জানলে কি করে? ”
” একদিন শুনেছিলাম। সময় খারাপ যাচ্ছিলো তাই আর জিজ্ঞাসা করি নি। ”
মেঘনা স্থির হয়ে বসলো। সাগরিকা নড়েচড়ে উঠেছে দেখেই আলিদ বলল
” ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দাও না হলে জেগে যাবে। ”
” এতো খেয়াল? ”
” খেয়াল রাখা টা দোষের নাকি? ”
” উহু। তবে আমার মনে হয় আমার মেয়েটা সত্যিই ভাগ্যবতী। ”
” ভুল বললে। ”
” কেন? ”
” বলো আমাদের মেয়ে। সাগরিকা আমার ও সন্তান। ”
শীতল হয়ে এলো মেঘনার চোখ। আলিদ এর হাত টা স্পর্শ করে বলল ” তুমি কেন সেদিন আমায় যেতে দিলে। না হলে তো আমাদের সাগরিকা কে নিয়ে কখনো টেনশন করা লাগতো না। এখন আমার ভয় হয়। কখন না চার পাশ টা থেকে শব্দ আসবে সাগরিকা তুই নয়নের মেয়ে। আমি চাই না ঐ নরপশুর পরিচয় আমাদের সন্তান কে স্পর্শ করুক। ”
কাপড় গোছাচ্ছিল উর্মি। সৌমেন এর কাবাড টা পুরো এলোমেলো। পাশেই কাউচে বসে আছে সৌমেন। স্থির দুই চোখ নিবদ্ধ সামনের দিকে। উর্মি কাপড় গুলো রাখার সময় দেখলো সেটা। কাছে এসে বলল ” মন খারাপ? ”
” না। মন খারাপ করেই বা কি। ”
” তবু মন খারাপ করে আছেন তো। ”
” এটা আমার সহকারী। ”
” বুঝলাম না। ”
” আমি ও বুঝি নি। ”
” কি? ”
” জানি না। ”
কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে রইলো সৌমেন। উর্মি হতাশ হয়ে কাপড় গুলো রেখে এলো। বিছানা টা গুছিয়ে দিতে দিতে বলল ” আপনি রেস্ট করুন। ”
” তুমি কোথায় যাও? ”
” গেস্ট রুমে….”
বলতে বলতে থেমে গেল উর্মি। সৌমেন কপাল থেকে হাত টা সরালো। চোখ দুটো কেমন যেন ভেজা। একটা আকুলতা কাজ করে। উর্মির হৃদয়ে তীব্র ভয়। সৌমেন কেবল হাসে।বলে ” যাও। সমস্যা নেই। কখনো মনে হলে চলে এসো। ”
উর্মি দাঁড়ায় নি আর। কথা বললেই কথা বাড়বে। সৌমেন এখন মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হলে ও অনেক টাই সুস্থ।ওর মস্তিষ্ক কাজ করে। সেহেতু এক ঘরে থাকা টা পসিবল ই না।
অন্য মনস্ক হয়ে নামার সময় পরে যেতে নিলো উর্মি। সৌজন্য ধরে ফেললো বিধায় ফারা টা কাটলো বোধহয়। ” কোন দিকে তাকিয়ে আছিস? ”
অবাক হলো উর্মি। সৌজন্য কে দেখে হাসি ফুটে অধর জুড়ে। ” ভাইয়া! কখন এলে? একটু আগে ও তো কথা হলো। আসবে বললে না তো। ”
” সারপ্রাইজ দিবো বলেই জানাই নি। ”
” হয়েছে। বাকি রা এসেছে? ”
” হ্যাঁ। সবাই এসেছে শুধু আলিদ আসতে পারে নি। ”
” ওমা কেন? ”
” কাজ পরেছে। ”
” ওহ এটা খুব ই দুঃখজনক। ”
হাসলো সৌজন্য। উর্মির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল ” সকল সুখ তোর হোক। ”
আড্ডা চলছে। সকলে বেশ আমোদ শুরু করেছে ইতো মধ্যেই। লতিফার মাথা ব্যথা বিধায় তিনি আসেন নি। মাহফুজ সাহেব এলেন।
” খুব ই দুঃখিত। আসলে লতিফার শরীর টা ভালো নেই তাই আসতে লেট হলো। ”
” না না আঙ্কেল ঠিক আছে। আন্টির অবস্থা এখন কেমন? ”
” মোটামুটি। ঘুমিয়ে আছে। ”
” ওও। ”
” উর্মি সবার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করেছো?”
” জী। ”
” রাতের খাবার খেয়ে যাবে কিন্তু সবাই। ”
” অবশ্যই। ”
অমর এর সাথে আর ও টুকটাক কথা বললেন মাহফুজ সাহেব। তারপর ই ঘড়ি দেখে বললেন ” আমি একটু আসি। লতিফার কাছে গিয়ে বসি। শরীর টা খারাপ তো। ”
” ঠিক আছে। আপনি চিন্তা করবেন না। ”
উর্মির কথায় হাসলেন মাহফুজ সাহেব। তিনি উঠে যেতে উর্মি বলল ” সবাই কি এখানেই বসে থাকবে? ”
” না। তা কেন। তবে তোকে ছাড়া একা একা কোথায় যাবো। চরকির মতো তখন থেকে ঘুরেই যাচ্ছিস। বোস একটু। ”
বসলো উর্মি। জোৎস্না হাল্কা হাতে হাত বুলিয়ে বলল
” জীবন টা অদ্ভুত তাই না রে? ”
” কেন ভাবি? ”
” এই যে কিভাবে বদলে যায় টের ও পাওয়া যায় না। ”
” পুরোনো কথা আবার বলছো? ”
” বলতে হয়। অনুসূচনা এমন এক জিনিস যা মানুষ কে ভেঙে গুরিয়ে দেয়। ”
সৌমেন উপরে ছিলো। সকলের কথা শুনে নিচে নেমে এলো। জোৎস্নার কথা টা ওর হৃদয়ে এসে লেগেছে হুট কলেই। সকলেই প্রায় চুপ হয়ে। এতো সময় শুয়ে ছিলো সৌমেন। তাই চোখ দুটো ফোলা।
” কেমন আছেন আপনারা? ”
” ভালো। তুমি কেমন আছো? ”
” জী ঠিক আছি। ”
উর্মি খেয়াল করলো সৌমেন এর দৃষ্টি টা কেমন যেন। হয়তো মেলাবার চেষ্টা করছে মাইশার ফ্যামেলি। ওর স্মৃতি তে মাইশা ছিল একা। যার ফ্যামেলি ছিল না। তবে উর্মির পুরো পরিবার রয়েছে। সেটাই ওকে বেশ ভাবাচ্ছে। উর্মি কাছে এলো। হাল্কা করে বলল ” কফি দিবো? ”
” দাও। আমি ঘরে যাচ্ছি। ”
” হু। ”
কফি নিয়ে এলো উর্মি। মেঘনা হাত টা চেপে ধরেছে। উর্মি বলল ” কিছু একটা বোঝাতে হবে। হয়তো এতো দিন এই বিষয় নিয়ে ভাবে নি। তবে এখন ভাবা শুরু। ”
” সাবধানে বোন। ”
হাসলো উর্মি। ওর জীবনের আর কোনো সাবধানতা নেই। যা আছে তা কেবল বেঁচে থাকার প্রয়াস। উর্মির সন্দেহ ঠিক। স্থির হয়ে আছে সৌমেন। উর্মি কে দেখেই বলল
” তোমার ফ্যামেলি….! ”
” আপনি হয়তো ভুলে গেছেন আমি বলেছিলাম পরিবার আছে আমার। তবে দূরে আছি আমি। ”
” হয়তো। আসলে কিছু মাথায় আসছে না। তুমি কিছু মনে করো না। ”
” নিন আপনার কফি। ”
কফি নিলো সৌমেন। ঠিক পাশ টায় বসে উর্মি। সৌমেন হতাশ কন্ঠে বলে ” আমার সাথে বিয়ে না হলেই হয়তো তোমার জন্যে ভালো হতো। ”
” হঠাৎ এমন বললেন যে? ”
” মনে হলো। ”
” ওও আগে আপনি সুস্থ হোন। নিজের উপর প্রেসার দিবেন না। ”
” প্রেসার এসে যাচ্ছে। ”
মৌন আছে উর্মি। সৌমেন কফি নিয়ে উঠে গেল। ব্যলকনির দরজা টা খুলে গভীর করে শ্বাস নিলো। হতাশা, চিন্তা সমস্ত টা গলায় এসে বিঁধেছে।
চলবে….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ