শখের_সাদা_শাড়ি_২,১৭,১৮

0
511

#শখের_সাদা_শাড়ি_২,১৭,১৮
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
১৭.
মিষ্টি দুইটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিদ্ধান্ত গুলোর মধ্য কড়া হলো সওলাত খান কে ডিভোর্স দিবেন আর দ্বিতীয় টি হচ্ছে দুই ছেলে কেবল মোট সম্পত্তির অর্ধেকটা নিবে। আর বাকি টা যাবে সওলাতের দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান তথা তিতির এর নামে। দুই ছেলে কে ডাকলেন তিনি। নিজের সিদ্ধান্ত টা জানাতেই সিয়াম চটপট উত্তর করে ” ওনার সম্পত্তি চাই না আমার। ”

” উহু। তুমি তোমার অংশ কে অবহেলা করতে পারো না। নিজের অধিকার ছেড়ে দিতে নেই। ”

” তবু চাই না আমার। ওনি… ”

” কথা বাড়াবে না। আর ওনি কি ভাষা? সে তোমার বাবা হয়। ”

” স্যরি মা। তবে আমার সব অসহ্য লাগে।”

” মাথা গরম করিও না। তোমার মতামত জানালে না সমীর? ”

” হু? ”

” কিছু বলেছি আমি। ”

” কি? ”

” তোমার মন কোথায় সমীর? কি ভাবো এতো। ”

” কিছু না মিষ্টি মা। কি বলেছিলে তুমি? ”

” মায়ের থেকে লুকাও? তুমি হয়তো জানো না তোমার মা মুখে কম কথা বললে ও সব বুঝতে পারে। ”

” দুঃখিত মিষ্টি মা। ”

” কিছু মনে করো না সমীর। একটা কথা মাথায় রেখো ভাগ্যের বেশি কেউ দিতে পারে না। ”

মিষ্টির কথায় থমকালো সমীর। কিছু দিন পূর্বে ও ভদ্র মহিলা বলছিলেন উর্মি কে ছেড়ো না। সে ও তোমায় খুব ভালোবাসে। একটা ভুল কখনো সত্যি হতে দিও না। ঠিক সেই কথার ই বিপরীত কথা বললেন আজ। নিজ জীবনে নিশ্চয়ই হাল ছেড়ে দিয়েছেন। সেই জন্যেই হয়তো আজ এই কথা বললেন। সমীর প্রায় কিছু সময় পার করলো। তারপর ই বলল ” আমার মনে হয় তোমার সিদ্ধান্ত কেই সম্মান জানানো উচিত। ”

” আরেক টা কথা, আমি চাচ্ছি তোমার বাবার থেকে নিজের নাম সরিয়ে দিতে। ”

এতো টা সময় মনোযোগে না থাকলে ও এবার মনোযোগী হলো সমীর। সিয়াম প্রায় প্রতিবাদ করে বলল ” কি বললে? ”

” সিম্পল একটা টপিক। তোমাদের বাবার সব কিছু থেক‍ে নিজেকে আলাদা করতে চাই। ”

” তুমি ঠিক আছো মিষ্টা মা? ”

” একদম ঠিক আছি। ”

” তোমার জন্য আমি এতো কিছু করেছি। সব টা মেনে নিয়েছি। যাতে বাকি সময় টুকু ভালো কাঁটে। আর তুমি….! ”

” আমি সেসব জানি সমীর। তবে এখন আমার মনে হয় আমাদের আলাদা হওয়া উচিত। তাকে দায় বদ্ধ থেকে মুক্ত করতে চাই। ”

চটপটে ছেলে সিয়াম। হাতের কাছে যা ছিল সেটাই ভেঙে ফেললো। চিৎকার করে উঠলো ” পাগল হলে তুমি? কি সব বলে যাচ্ছো। আলাদা হবে! ”

” রাগ দেখিও না সিয়াম। বয়স অল্প তোমার। একটু তেই ঘাবড়ে যাচ্ছো। বাবা তোমার। নিজ রক্ত। তাই চাইছো না এমন কিছু হোক। তবে এটা হওয়া উচিত। ”

” সিয়াম একা না। আমার ও একি কথা মিষ্টি মা। ”

” তোমরা চাও আমি ভালো থাকি? ”

” সব থেকে বেশি। তবে এটা ভালো থাকার প্রক্রিয়া হতে পারে না। ”

” হতে পারে। যদি আমার ভালো চাও আর ভালোবেসে থাকো তাহলে এই নিয়ে আর কথা বাড়াবে না। আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড়। ”

সওলাত খান ভেঙে পরেছেন। সমীর এর মুখ থেকে এতো সব শুনে বুকের মাঝে হারিয়ে যাওয়া ব্যথা টা আবার জেগে উঠলো। তিনি ভাঙা গলায় সামান্য কিছু আর্তনাদ করলেন ” আমার যন্ত্রণা কি কখনোই লাঘব হবে না! ”

” যন্ত্রণা নিজ থেকেই সৃষ্টি করেছো বাবা। আমিও আর এ বিষয়ে কিছু বলছি না। মিষ্টি মা যা বুঝেছে সেটাই হবে। যাই হোক আমাদের কোনো প্রপার্টিজ ও চাই না বাবা। ভালো থেকো। ”

” সমীর! ”

” যেখানে সম্পর্ক গুলোই নড়বড়ে সেখানে সম্পত্তি নামক বিলাসিতা বিষের মতোই।”

” তুমি ও বুঝলে না আমায়। ”

” সময় টাই খারাপ বাবা। বিগত বছর গুলো তে আমরা নিশ্চয়ই ভালো ছিলাম না। কষ্ট হয়েছে খুব। সামান্য টাকা নিয়ে বের হয়েছিলাম। কখনো ভেবেছো কতো টা ভুগতে হয়েছে। কত সহ্য করেছি আমরা।”

” আমি তোমদের নিকট গিয়েছিলাম। তোমরা আমায় গ্রহণ করো নি।”

” সেটা কেবল লোক দেখানো। ”

গুমোট হয়ে এলেন সওলাত খান। তিনি ভেজা নয়নে আওড়ালেন ” দোষ কি শুধুই আমার একা? ”

নিস্তব্ধ হয়ে গেল আলিদ। গত দুই মাস যাবত দম ফেলা ও যাচ্ছে না। না জানি কার নজর লেগেছে ব্যবসা তে। ছেলেটা প্রায় রুগ্ন শরীর নিয়ে বাসায় এসেছেন। আতাউর হোসেন প্রায় চিৎকার করে বসলেন। ছেলের এমন অবস্থা মেনে নিতে কষ্ট হয়। ” বাবা, কি হলো তোর। ”

” মাথা ঘুরে গেছে বাবা। ”

মেঘনা রুফটপ থেকে নামছিল। আলিদ কে দেখে দ্রুত নেমে এলো ” কি হয়েছে? বাবা ওর কি হলো। এমন দেখাচ্ছে কেন! ”

” মাথা ঘুরে গেছে। ”

” সেকি! ”

আলিদ এর মাথা টা নিচু ছিলো। মেঘনা তুলতে তুলতে বলল ” এতো টা ভেঙে পরলে কবে? ”

” কিছু দিন ধরেই চাপ যাচ্ছিল। ”

” বললে না তো এক বার ও। দেখেছেন বাবা আপনার ছেলে কেমন। কোনো কথাই বলে না। সব সময় লুকিয়ে রাখে সব টা। ”

” কি হয়েছে আলিদ? ”

” বিজনেস এর ডিল গুলো ক্যানসেল হচ্ছিল লাগাতার। কিছু তেই ফুসরত পাচ্ছিলাম না। ”

” লাগাতার? ”

” হ্যাঁ। ”

” কেউ ইচ্ছে করে বিরোধিতা করেছে। ”

” আমার ও তেমনি মনে হচ্ছে। তবে কে হতে পারে! ”

” চিন্তা করো না। বুদ্ধি দিয়ে কর্ম করো দেখবে সফল হবেই। ”

” হ্যাঁ বাবা। ”

বেডে গা এলিয়ে দিলো আলিদ। মেঘনা ওর হাতের উপর মাথা টা রেখে বলল
” খুব টেনশনে আছো? ”

” অনেক না। হাল্কা বলতে পারো। ”

” তোমায় দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আর তুমি বলো যে ঠিক আছো। ”

” তুমি আবার টেনশন নিচ্ছো? ”

” টেনশন নিবো না। এই যে তুমি মাথা ঘুরে গেলে। সমানে অশান্তি তে ভুগছো। এক বার ভেবেছো তোমার কিছু হলে আমাদের কি হবে? ”

” আহ মেঘনা। আসো তো দেখি। ”

বাচ্চা দের মতো হিচকি তুলে মেঘনা। আলিদের বুকে মাথা গুজে বলে ” সব টা যেন ঠিক থাকে। আমি আর কিছু হারাতে চাই না। সৃষ্টিকর্তা আমায় এতো দিন পর সুযোগ দিয়েছেন। সেই সুযোগ টা ফেলনা না নিশ্চয়ই। ”

” তুমি খুব ভালো বুঝলে। ”

” আবার!”

” সত্যিই খুব ভালো। তোমার মতো মেয়ে কে যে পায়ে ঠেলেছে সে নিশ্চিত নিজের কপাল কে মাটি তে ছুড়েছে। ”

” রাখো সেসব। তুমি ঠিক থাকলেই হবে আমার। ”

” ঠিক ই আছি, বাবা। ”

ইষৎ কান্না করে দিলো সাগরিকা। ঘুমের মাঝেই বাচ্চা টি কেমন ছটফট করছে। বুকে টানলো আলিদ। মেঘনা ব্যস্ত হলো।
” আবার ওর ব্রেনে পেইন শুরু হয়েছে বোধহয়। ”

” ডাক্তার দেখাতে হবে তাহলে। ”

” কিন্তু যিনি ওর অপারেশন করেছেন সে তো নেই এখন। বিদেশী ডাক্তার। ”

” আমার পরিচিত এক ডাক্তার আছেন। তাকেই দেখাবো। ”

” কিন্তু…! ”

” কিসের কিন্তু। আসো আমার সাথে। ”

সাগরিকার খবর টা শুনতে পেয়েই ছুটে এসেছে প্রায় সকলে। চিন্তার ছাপ সবার মুখে। সৌজন্য এদিক সেদিক করছে। বাচ্চা টি কে অতিরিক্ত স্নেহ করে সবাই। অসহ্য যন্ত্রণায় সিগারেট ধরালো। সঙ্গে সঙ্গে একজন নার্স বললেন ” স্যার স্মোকিং ইজ নট এলাউ। ”

ফেলে দিলো সিগারেট। উর্মি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে আছে। সাগরিকার রোগ টা কি তবে এখনো শেষ হয় নি?

মেঘনার নিশ্চল দেহ টা জোৎস্নার পেটের ভেতর ঢুকে যাবে যেন। ওয়েটিং চেয়ারে খাপটি মেরে শুয়ে আছে। মাথায় হাত বুলায় জোৎস্না। অমর এতো সময় অন্তু কে ধরে বসে ছিল। রাত অনেক হলো। অন্তুর চোখ বুজে আসে। অমর উঠলো এবার। ” কি হলো আবার। ”

” ডাক্তার না আসা অব্দি বলা যাচ্ছে না। ”

হাত দুটো বুকে ভাঁজ করে আছে আলিদ। কপালে চিন্তার রেখা। সৌজন্য কাছে এলো। কাঁধে হাত রেখে বলল ” ভেঙে পরা যাবে না। এর আগে ও এমন হয়েছে। বড় অপারেশন ও হলো। ”

” হু। ”

একদলা কান্না এসেছে সকলের গলায় আটকে আছে যেন। আলিদ চোখ বুজে রইলো। বাচ্চা টির কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না আলিদ।

ডাক্তার এলো। আলিদ এর পরিচিত হওয়া তে প্রথমেই তিনি বললেন ” সমস্যা নেই। বেবি সুস্থ আছে। শুধু ব্রেনে একটু প্রবলেম দেখা দিয়েছিল। ”

কেঁদে ফেললো মেঘনা। দু হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করলো। আলিদ এর বুকের ভেতর টা এখন শীতল। সে ডাক্তার এর সাথে কথা বলতে বলতে বের হলো। এক পর্যায়ে বলল ” মূলত আমার মেয়ের ব্রেনে অপারেশন হয়েছিল। খুব ছোট তখন। ”

” আর ইউ সিউর? ”

” হ্যাঁ। ”

” আমার মনে হয় আপনার কোনো ভুল হচ্ছে। কারন ওর মাথায় কোনো রকম অপারেশন হয় নি। শুধু ব্রেনে একটু প্রবলেম। সেটার কারনেই কান্না করেছিল। এটা ম্যাটার করে না। খুব ই সামান্য মাথা ব্যথা করবে। তবে আপনি কোথাও ভুল করছেন। আপনার মেয়ের মাথা তে কোনো রকম অপারেশন ই হয় নি।

চলবে…
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

#শখের_সাদা_শাড়ি_২
১৮.
বদ্ধ ঘরে বেঁধে রাখা হয়েছে লায়লা কে। আজ প্রায় সাত মাস ধরে ঘরবন্দী। শুধু খাবার খাওয়ার সময় আর বিশেষ কাজের সময় বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। বিগত কিছু দিন ধরে বেশ পাগলামি করাতেই এভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে ওকে। লায়লা চুপ করে ছিল। খাবারের প্লেট নিয়ে কেউ একজন প্রবেশ করতেই চেঁচালো।
” সরে যাও, সরে যাও বলছি। মুক্তি দিবে না আমায়। আমি বুঝে গেছি। সরো বলছি,চলে যাও।”

লোক টা সরে গেল। লায়লা মাথা নিচু করে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো। আচানাক ঘরে প্রবেশ করলো সৌমেন। বাঘিনীর মতো চেঁচামেচি করা লায়লা একদম নিশ্চুপ হয়ে এলো। সৌমেন এর পায়ের শব্দ যতো বাড়ে লায়লা ততো জড়ো হয়ে বসে।
” খাবার খাও নি কেন? ”

মাথা টা ঈষৎ উঁচু করলো লায়লা। সৌমেন এর হাতে ভাতের থালা। মেয়েটির বরাবর বসলো সে। ভাতের থালা থেকে খাবারের লোকমা বানিয়ে সামনে এগিয়ে দিলো।
” শুধু শুধু নিজের ক্ষতি করো না। হা করো। ”

” কেন এমন করছো আমার সাথে? ”

” সেটা তুমি জানো। ”

” ক্ষমা চেয়েছি তো আমি। ”

” কিছু সময় অপেক্ষা করো। মুক্ত করে দিবো। ”

” চাই না মুক্তি। আমায় বরং মে ‘রো ফেলো। ম’রে যাই আমি। ”

” বাজে কথা বলো না। তোমায় স্নেহ করি আমি। হয়তো আমাদের সম্পর্কে একটা দূরত্ব রয়েছে। তবে আমি সর্বদা মাথায় রাখি তুমি আমার বোন। ”

এবার লায়লা তাকালো। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। ” কেন আমায় ভালোবাসলে না বলো তো। কেন আমি তোমায় পেলাম না।”

” কারন টা তুমি জানো। ”

” জানি না আমি। ”

” তবে শোনো। তোমাকে কখনো আমি অন্য নজরে দেখি নি। তাছাড়া তোমার স্বভাবের কারনে আমাদের সাধারণ সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। ” দম ফেললো সৌমেন। ফের বলল ” হা করো। ”

বাচ্চা ছানার মতো খাবার খেয়ে নিলো লায়লা। সৌমেন মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
” পাগলামি করো না আর। আমি বলে যাচ্ছি ওরা তোমায় আর বেঁধে রাখবে না।”

একদম ই শান্ত হয়ে গেল লায়লা। সৌমেন যাওয়ার পূর্বে লায়লা কে দেখলো। ওর বুক চিড়ে কেবল বের হলো দীর্ঘ নিশ্বাস।

সময় কেবল একটা সংখ্যা মাত্র। আজ সাগরিকার জন্মদিন। মেয়েটি এক বছর পূর্ণ করলো সবে। আলিদ বিশাল আয়োজন করেছে। সৌমেনের পুরো পরিবারের আসার কথা। ফোনে উর্মি তেমন টাই বলেছে। এমন কি আলিদ নিজ থেকে ফোন করেছে সবাই কে। কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই উর্মি কে কল করা হয়েছে। উর্মি জানিয়েছে রাস্তায় ওরা। আলিদ গেটের নিকট অপেক্ষা করছিল। মেঘনা ডাক দিতেই সরে এলো। উর্মিরা যখন পৌছালো তখন সন্ধ্যা সাত টা। লতিফা বেগম ইদানিং উর্মির সাথে তেমন কথা বলেন না। কেমন যেন গা ছাড়া ভাব। উর্মি ওসব দেখে ও দেখে না। ও কেবল ওর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে চলেছে। উর্মি যেতেই সৌমেন বলল ” আমার এসব ভালো লাগে না মাইশা। আমি ফিরে যাচ্ছি। ”

” কেমন কথা এগুলো? সকলে খুব আশা করে আছে। ”

” আমাকে চেনে কে এখানে?আমি না থাকলে ও সমস্যা হবে না। সাগরিকার জন্য ভালোবাসা। ”

” এমন করে বলছেন কেন। আপনি আসুন,না হয় ঘরে বসে থাকবেন। ”

উর্মি কে বুঝিয়ে ও লাভ হলো না। সৌমেন মনে মনে নানান প্ল্যান কষতে লাগলো। যে করেই হোক শেষ সময়ে এসে হেরে গেলে চলবে না। দাঁত কামড়ে পরে থাকতে হবে।

সৌমেন এর হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে উর্মি। সমীর সেটা স্পষ্ট দেখলো। বুকের মধ্য স্থানে যেন কেউ সুচ বিধিয়েছে। সমীরের অন্তর টা দগ্ধ। তবে কেউ দেখার নেই। শাড়ির আঁচলে লেগে হোচট খেলো উর্মি। সৌমেন ধমকে উঠলো ” নজর কোথায় থাকে? দেখে শুনে চলতে পারো না। ”

ত‍ৎক্ষনাৎ মেয়েটির পায়ে হাত দিলো সৌমেন। বুড়ো আঙুলে কেটেছে। হালকা লাল তরল নেমে যাচ্ছে।
” সৌমেন স্যার সবাই দেখছে। ”

” তো? ”

” আপনি পায়ে হাত দিবেন না প্লিজ। ”

” চুপ থাকো। ”

অস্বস্তি হলো উর্মির। এদিক সেদিক তাকানোর সময় দেখতে পেল সমীর কে। এবার ওর চোখ জ্বালা শুরু। অথচ সমীর এর দৃষ্টি নির্মল। ঠোঁটের অগ্রভাগ প্রসারিত করে আছে। ঘাসপাতা পিষে নিয়ে উর্মির আঙুলে ধরলো সৌমেন। জ্বালা করাতে মেয়েটি আর্তনাদ করলো। ব্যথা তে খিচে ধরলো সৌমেন এর কাধের জামা। এক হাতে মেয়েটি কে ধরলো সৌমেন। উর্মি তখনো চোখ খিচে আছে। এবার ওর মাথা টা বুকের কাছে নিতেই উর্মি প্রায় লাফিয়ে সরে গেল। সৌমেন সেসব তোয়াক্কা না করে ফের বলল ” কোনো সমস্যা মাইশা? ”

বিভ্রান্ত হলো উর্মি। সৌমেন ওর কথার অপেক্ষা না করে আলতো হাতে কোমর জড়িয়ে ধরলো। ” আসো। ”

পৃথিবীর সমস্ত অস্বস্তি যেন ভর করেছে উর্মি কে। পেছন ফিরে দেখলো সমীর তাকানো এক দৃষ্টিতে। বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্ট গুলো গলায় এসে দলা পাকালো। তবে প্রকাশ করতে পারলো না নিজ অনুভূতি।

আলিদ ছুটে এলো। সমীর একটা ওয়াইন এর গ্লাস হাতে নিয়ে কিছু ভাবছে।
” তুমি কেন চুপ আছো সমীর? ”

” চুপ থাকাই কি শ্রেয় নয় আলিদ ভাই? আপনার বোন যে নিজ থেকেই সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। বোকা মেয়ে। ”

তাচ্ছিল্য টা গায়ে লাগলো আলিদের। সে বলল ” তুমি ভুল বললে। উর্মি কখনোই বোকা নয় ও কেবল ভুক্তভোগী। ”

” বোকা না হলে এতো বার বলার পর ও সৌমেন ভাই কে বিশ্বাস করতো না। আমলেই নিলো না আমাদের কাউ কে। ”

” আমি কিছু করতে পারি। ”

” কিছুই পারবেন না। শুধু শুধু নিজের ক্ষতি করবেন না। এতো দিন চুপ আছেন আর ও কিছু সময় না হয় চুপ ই রইলেন। ”

” সে আমার বন্ধু সমীর। আমার ক্ষতি করার কথা ভাবতে ও পারবে না। ”

” মানুষ যখন স্বার্থপর হয়ে যায়। প্রচন্ড ক্ষুধার্ত থাকে তখন সে বিভর্ষ প্রাণীর রূপ ধারণ করে। যে নিজের সন্তান কে ও খেয়ে ফেলে ক্ষুধা নিবারণ এর জন্য। আপনি তো কেবল বন্ধু। ”

ছেলেটা ভুল বলে নি। হয়তো এখন বিষয় টি কে সহজ সরল মনে হলে ও একটা সময় এসে ঝামেলার সৃষ্টি হবে। তবে সৌমেন এর সাথে নিশ্চয়ই কথা বলবে এই বিষয়ে। কেন মেয়েটির জীবন নিয়ে খেললো। আর কেন ই বা এভাবে ঠকালো সবাইকে।

অনুষ্ঠানের একে বারে শেষ পথে এসে সৌমেন এর নাগাল পেল আলিদ। এবার আর পালাবার চেষ্টা করে নি সে। তবে খুব বেশি ভাব নিতে ও পারলো না। আলিদ দাঁত কিড়মিড় করে বলল ” কেন এমন টা করলি? ”

” কেমন টা? ”

” উর্মির জীবন নিয়ে খেলছিস কেন? ”

” ভুল বললি। আমি ওর জীবন নিয়ে খেলি নি। ওকে আমি ভালোবাসি। ”

” সত্যিই ভালোবাসিস? ”

” হ্যাঁ। ভালোবাসি বিধায় হারাতে চাই না। আশা করি আমার জীবনে কাঁটা হবি না। এই টুকু বলতে পারি উর্মি কে কষ্ট দিবো না। ”

” অলরেডি কষ্ট দিয়েছিস তুই। ”

” তখন উর্মি কেবল ভুক্তভোগী ছিল। ”

” মানে? ”

” আমার স্ত্রী উর্মি। এক ছাদের নিচে থেকে টান তৈরি হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ ই অনুভব করেছি ওকে আমি খুব ভালোবাসি। ভীষণ রকম ভাবে ভালোবাসি। ”

” এমন টাই যদি হয় তবে এখনো কেন লুকিয়ে রেখেছিস সবটা? ”

” সঠিক সময়ের প্রয়োজন। উর্মি এখনো সমীর কে ভালোবাসে। ওকে বোঝাতে হবে অনুভব করাতে হবে ওর জীবনে একটাই মানুষ। সেটা হচ্ছে সৌমেন। ”

” তুই ঠিক করলি না। ”

” তুই ও ঠিক করছিস না। ”

“কি! ”

আলিদ এর বুক পকেটে থাকা হিডেন ক্যামেরা টা নিয়ে নিলো সৌমেন। আলিদ জ্বলে উঠলো। ক্রোধ নিয়ে বলল সৌমেন
” বিষয় টা কমপ্লিকেটেড আলিদ। আমার বন্ধু বলেই ছাড় পাচ্ছিস। বাট মনে রাখিস আমি আমার স্ত্রী কে নিজের নিকটে রাখার জন্য সব করতে পারি। সব করতে পারি সব। প্রয়োজনে যে কাউ কে খু ‘ন ও করে দিতে পারি। ”

” এর পরিনাম ভয়াবহ হতে চলেছে। আগুন নিয়ে খেলছিস তুই। ”

মোচড় দিয়ে উঠলো সৌমেন এর বুক। চোখ দুটো ছলছল করছে। আলিদের সামনে এসে বলল
” অতিরিক্ত ভালোবাসি ওকে। যদি জানতাম বিষয়টা এতো জটিল হয়ে উঠবে তাহলে কখনোই এমন পরিস্থিতি তৈরি করতাম না। এখন সময় সুযোগ কোনো টাই নেই। আমি আমার স্ত্রী কে ছাড়ছি না। ”

**কি হতে পারে এন্ডিং?

চলবে…..
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here