নীল আকাশের শুকতারা ,০৭,০৮
(৭ম পর্ব)
তারা মনে মনে ঠিক করলো ক্লাস শেষ হলেই সোজা বাসায় চলে আসবে।এতটুকু পথ একাই আসা যায় নীরার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে মাঝখানে নানা রকম ঝামেলা হয়।নীরাকে আর এ বিষয়ে কিছু বললো না কারণ তারাকে ও কখনই একা আসতে দিবে না।
ক্লাস শেষে তারা দ্রুত বেরিয়ে আসছিল হঠাৎ কোথা থেকে নীল এসে হাজির হয়ে বললো,ক্লাস শেষ হয়ে গেছে তাই না? চলো তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি।
তারা অবাক হয়ে বললো, আপনার ক্লাস এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল?
নীল জবাব দিলো না।তারা এই কয়েক দিনে খেয়াল করেছে নীল কলেজে এসে মোটেও ক্লাস করে না।যতবারই তারা ক্লাস থেকে বেরিয়েছে নীলকে ক্যাম্পাসে দেখছে।তারা একটু সাহস সঞ্চয় করে বললো,আপনি ক্লাস করেন না তাই না?তো কলেজে আসেন কেন চেহারা দেখাতে?
তারা কথাটা বলে নিজেই নিজের সাহস দেখে চমকে উঠলো।নীল নিশ্চয়ই এখন ক্ষেপে যাবে।হয়তো এতো লোকজনের সামনে ধমক দিবে।
তারা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নীলের ধমকের অপেক্ষা করতে লাগলো।
কিন্তু নীল তারাকে অবাক করে দিয়ে কিছুই বললো না।
তারা চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো নীল ওর দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে।
তারা চোখ পরিষ্কার করে আবার তাকালো,সত্যিই নীল হাসছে।
সে প্রচন্ড অবাক হয়ে গেল।এতোবড় একটা কথা শুনেও নীল কিছু না বলে হাসছে ব্যপারটা অবিশ্বাস্য।ও মাথা চুলকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো,চারিদিক থেকে কয়েকটা মেয়ে ওদের দেখছে।এতক্ষণে তারা বুঝতে পারলো নীলের রিয়েক্ট না করার কারণ।
নীল এবার বললো,এই যে ম্যাডাম যাবেন আমার সাথে?
তারা কী বলবে ভেবে না পেয়ে মাথা নাড়ালো।
বিকেলে তারা আর নীরা মিলে ছাদে হাটছিল হঠাৎ আরাফাত সাহেব ওখানে গিয়ে উপস্থিত হলেন।
আরাফাত সাহেব গম্ভীরভাবে বললেন,তারা তোমার মা ফোন দিয়ে ছিলেন তুমি আমার ফোনটা নিয়ে ওনাকে একবার ফোন করে কথা বলো।
তারার একদমই ইচ্ছে নেই মায়ের সাথে কথা বলার পৃথিবীর সমস্ত রাগ যেন মায়ের উপরই ওর।
মানুষ যাকে বেশি ভালোবাসে তার উপর সবচেয়ে বেশি রাগও করে এটাই নিয়ম।তারা আরাফাত সাহেবের থেকে ফোন নিয়ে মাকে কল দিলো।
কলি ফোনটা রিসিভ করেই কান্না শুরু করেছেন।
তারার নিঃশব্দে মায়ের কান্না শুনছে।কলি কাঁদতে কাঁদতেই বললেন,তোর মামারা আমার জন্য পাত্র দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেছে ওনারা চাইছেন আমি নতুন করে সংস্যার শুরু করি।তোর বাবা তো আমার জীবনটা শেষ করেই দিয়েছে এখন আমি কীভাবে নতুন সংস্যার শুরু করবো বল।কলি কথাগুলো বলে আবার কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
তারার এই মুহুর্তে মাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে,বলতে ইচ্ছে করছে তুমি শুধু আমার মা,সারা জীবন আমার আমার মা হয়ে থাকবে।তোমার সংস্যার মানেই আমি।তুমি আমাকে আর দূরে সরিয়ে রেখো না মা।কিন্তু তারা কথাগুলো বলতে পারলো না।নীরবে চোখের জল ছেড়ে গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বললো,মামারা যেটা চাইছেন সেটাই ভালো হবে।এক জীবন তুমি সুখী হতে পারলে না মা নতুন জীবনে সুখী হও।রাখছি।
তারা ফোনটা কান থেকে নামিয়ে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো।নীরা এসে ওকে কোনরকমে শান্ত করিয়ে বাসায় নিয়ে গেল।
তারা হালিমা বেগমকে রাতের রান্নায় সাহায্য করলো।তারপর টেবিলে খাবার দিয়ে আরাফাত সাহেবকে ডাকতে গেল ওনার ঘরে।নীরাও বাবার সাথে বসে আছে।
তারাকে দেখে আরাফাত সাহেব বললেন,আমি তোমাকেই ডাকতে চাইছিলাম মা।
তারা শান্ত গলায় বললো,কিছু দরকার আংকেল?
–হ্যাঁ, তোমার বাবা ফোন করেছিল, বললো তোমার সাথে কথা বলতে চায় আমি যেন তোমাকে এটা বলি।আর তুমি যদি ওর সাথে কথা বলতে না চাও তবে তোমাকে বলতে বললো..
আরাফাত সাহেব এটুকু বলে থামলেন।
তারা আগ্রহ নিয়ে বললো,কী বলতে বলেছে বাবা?
আরাফাত সাহেব জোরে নিশ্বাস টেনে বললেন,তোমার বাবা কালকে মনে হয় রেহানা নামে কারোর সাথে আঁকত করবে, বললো সম্ভব হলে তোমাকে যেন কালকে নিয়ে যাই।
তারার চোখদুটো ছলছল করে উঠলো,আমি কোথাও যাবো না আংকেল।
কথাটা বলে তারা আরাফাত সাহেবের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।ওর বুক ভেঙে কান্না আসছে।তারা দ্রুত নিজের ঘরের দিকে হাটা ধরলো সামনে পড়লো নীল।তারা মাথা নিচু করে নীলকে এড়িয়ে চলে আসতে চাইলে নীল পেছন থেকে গলা চওড়া করে ডাকলো,দাঁড়াও।
তারা দাড়ালো না।নীল দ্রুত এগিয়ে গিয়ে তারার হাত শক্ত করে টেনে ধরলো।নীল এবার ওর সামনে গিয়ে বললো,কী যেন বলছিলে আজকে, কলেজে আমি চেহারা দেখাতে যাই।হ্যাঁ যাই,তোমার কী তাতে? খুব সাহস হয়ে গেছে না? একদম নিজের সীমানা ছাড়াবে না বলছি, যে জায়গায় আছো সেখানেই থাকো।তখন কলেজে সবার সামনে কিছু বলতে পারিনি, আছো তো আমাদের বাসায় আশ্রিতা হয়ে আর আমাকে এতো বড় একটা কথা বলার সাহস হয় কী করে তোমার?
নীল চেঁচিয়ে উঠলো, উত্তর দাও।
তারা কেঁপে উঠলো।তারপর ছলছল চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে বললো,অনেক বড় অন্যায় হয়ে গেছে ক্ষমা করে দিন আমাকে।আর কখনও এমন হবে না।
তারা কথাগুলো বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
তারার এমন আচমকা কান্নায় নীল থতমত খেয়ে গেল।বুঝতেই পারেনি তারাকে কখন আশ্রিতা বলে ফেলেছে এটা তো না বললেও চলতো।
সামান্য একটা কথার জন্য এতো কথা শুনিয়ে ফেললো।নীল মাথা নিচু করে এসব ভাবছিল তাকাতেই দেখলো তারা দ্রুত পায়ে হেটে চলে যাচ্ছে।
নীরা দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিল সবটা তারা চলে যেতেই এগিয়ে এলো,ভাইয়া তুই আবার এই অসহায় মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যবহার করলি?
নীল ঢুক গিলে বললো,আমাকে কী বলেছে জানিস?
–যাই বলে থাকুক তারা যে সেরকম কোনো খারাপ কথা বলবে না আমি ভালো করেই জানি।
তুই জানিস মেয়েটা একটু আগে কী খবর পেয়েছে?
–কী?
–সাহেদ আংকেল কালকে নতুন বিয়ে করতে চলেছেন,যেটা আবার বাবাকে বলে তারাকে বিয়েতে দাওয়াত করেছেন।বুঝতে পারছিস সাহেদ আংকেল তারার বাবা হোন।নিজের বাবার নতুন বিয়ের খবর পেলে একটা মেয়ের মনের অবস্থা কী হতে পারে বুঝতে পারছিস তো?
নীরার কথাগুলো শুনে নীল আর কিছু বললো না সোজা নিজের ঘরে চলে গেল।কিছুক্ষণ পায়চারি করে হাটা ধরলো তারার ঘরের উদ্দেশ্যে।
তারার ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার শব্দ দরজার বাইরে থেকে পরিষ্কার শুনা যাচ্ছে।
নীল পৃথিবীর সব কিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু কারোর কান্না কেন যেন সহ্য হয় না ওর।ও আস্তে আস্তে তারার দরজায় নক করলো।কয়েক সেকেন্ড পর তারা ভেতর থেকে জবাব দিলো,কে?ভিতরে আসুন দরজা খোলাই আছে।
নীল ভিতরে প্রবেশ করলো।ওকে দেখে তারা কিছুটা অবাকই হলো।তারার চোখ মুখ ফুলে আছে।এখনও চোখের কোনে পানি লেগে।নীল ইতস্তত করে বললো,তারা আমি সচরাচর আমার বাবা মা ছাড়া পৃথিবীর কারোর কাছে ক্ষমা চাই না।আমি কাউকে সরি বলতে পারি না।আমার আজকের আচরণে যদি কষ্ট পাও..
নীল থামলো তারপর চোখ বন্ধ করে জোরে নিশ্বাস টেনে নিলো,মা ডাকছে খেতে এসো।
কথাটা বলেই নীল দ্রুত পায়ে হেটে তারার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।তারা অবাক হয়ে ভাবছে এই মানুষটা এতো কঠিন কেন।সামান্য সরি টুকুও বলতে তার এতো সংকোচ কিন্তু মানুষকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে তার কোনো সংকোচ নেই।
তারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখটা আবার ভালো করে মুছে নিলো।
কয়েক মাস কেটে গেল তারার বাবার বিয়ে হয়েছে।আর তারার খোঁজ নেয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেন সাহেদ।কলি মাঝেমধ্যে ফোন দিয়ে তারার খোঁজ নেন।
হালিমা বেগমের প্রিয় না হতে পারলেও এখন আর অপছন্দের কেউ না তারা।
আরাফাত সাহেবের স্নেহে আর নীরার ভালোবাসায় মেয়েটা নিজের কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করতে শুরু করেছে মাত্র।নীল আগের মতো অকারণে বকাবকি করে না তারাকে কিন্তু একটু এদিক সেদিক হলেই ঠিকই কথা শুনায়।তারার এখন আর এসবে মন খারাপ হয় না কারণ তারা এখন নীলের নাম দিয়েছে রাগী দানব যেটা নিয়ে ও আর নীরা মিলে খুব হাসাহাসি করে।নীলের রাগ এখন তারা আর নীরার হাসির খোরাক।
প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ করে কলেজ বন্ধ হয়েছে মাস খানেকের জন্য।তারার এখন সারাদিন বাসাতেই কাটে অপেক্ষা করে নীরার ছুটির।আজকে নীরার পরীক্ষা শেষ হলেই ওর আর নীলের ছুটি।
হালিমা বেগম আজ সকাল থেকে বেশ ব্যস্ত কালকের পরের দিনই মেহমান আসবেন বাসায়।কারা আসছেন তারা এখনও এ ব্যপারে কিছু জানে না।হালিমা বেগমের তোরজোর দেখে বুঝা যাচ্ছে যারাই আসছেন ওনাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ই হবেন।
আরাফাত সাহেব কোর্ট থেকে এসে প্রতিদিনই নতুন নতুন জিনিস বাজার থেকে নিয়ে আসেন।নিচের ঘর গুলো পরিষ্কার করে সাজানো, গোছানো হচ্ছে।
তারা হালিমা বেগমকে ঘর গোছানোর কাজে সাহায্য করছে।দুজনেই চুপচাপ।নীরবতা ভেঙে তারা বললো,আন্টি কারা আসবেন?
হালিমা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে বললেন,আমার একমাত্র ননদ আতিয়া ইংল্যান্ড থেকে আসছে ওর দুই ছেলেকে নিয়ে।মাস খানেক থাকবে আমাদের এখানে।এবার অবশ্য ওদের আসার বিরাট এক কারণ আছে সেসব পরে বলবো।তুমি এখন আকাশে আর মেঘের ঘর গুলো একটু গোছাও তো।ছেলে দুইটা দুইটা বিদেশ থেকে আসছে ওরা বিদেশেই বড় হয়েছে সবকিছু পরিপাটি না দেখলে ওদের পছন্দ হয় নাকি?
তারা মুচকি হেসে বললো,আমি সব ঠিকঠাক করে রাখবো আন্টি।আতিয়া আন্টির ছেলেদের নাম বুঝি আকাশ আর মেঘ?
–হুম।
–বাহ আকাশ-মেঘ, দুই ভাইয়ের নামটা কী সুন্দর।
–ওদের নামের মতো ওরা দুজনেই খুব সুন্দর এলেই দেখতে পাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো ওরা মোটেও বিদেশি ছেলেদের মতো ঘরকুনো স্বভাবের না।খুবই মিশুক আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় খুব সুন্দর বাংলা বলতে পারে।
তারা এবার ঘর গোছানোর কাজে মন দিলো তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো।
হালিমা তারাকে পাঠালেন কে এসেছে দেখতে।
তারা দ্রুত পায়ে সদর দরজার দিকে এগুলো..
চলবে..
লিখা: উম্মেহানি মিম
★ #নীল_আকাশের_শুকতারা
———————(৮ম পর্ব)
তারা দরজা খুলতেই নীল হুরমুরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।সে খানিকটা কেঁপেই দরজা থেকে সরে গেল।একটুর জন্য নীলের সাথে ধাক্কা লাগেনি।
নীল এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো মা কোথায়?
তারা জবাব দিলো, কাজ করছেন।
–তুমি একটা কাজ করতে পারবে?
–জ্বি,বলুন।
— এক প্লেট ভাত তারকারি সাজিয়ে নিয়ে একটু টেবিলে রাখবে?
তারা কেন জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলো না।নীলকে দিয়ে বিশ্বাস নেই কখন আবার রেগে যায়।
সে সোজা রান্নাঘরে গিয়ে ভাত তারকারি নিয়ে টেবিলে এনে রাখলো
নীল একজন লোককে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।
তারপর লোকটাকে টেবিলে বসিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে খাওয়ালো।
তারা একটু অবাক হয়েই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।
লোকটা খুশি মনে খেলো।নীল আর লাগবে কী না জিজ্ঞেস করতে লোকটা না করলো।
খাওয়া শেষে নীল কিছু টাকা দিয়ে লোকটার সাথে বাসার বাইরে চলে গেল।তারা দরজায় দাঁড়িয়ে ওদের খেয়াল করলো।নীলের সাথে আসা লোকটা রিকশাওয়ালা।সম্ভবত ওনার রিকশা করেই নীল এসেছে।
হালিমা এগিয়ে এসে বললেন,কাকে নিয়ে এসেছিল নীল?খাওয়ালো মনে হয়?
তারা মাথা নাড়িয়ে বললো,একজন রিকশাওয়ালা।
হালিমা বেগম হাসলেন,নীলের কাজই হলো এটা কখনও রিকশাওয়ালা, কখনও ভিখারি ধরে এনে খাওয়াবে।আমার ছেলেটাকে না আমি নিজেই বুঝতে পারি না মাঝে মাঝে মনে হয় অনেক নরম মনের আবার মাঝে মাঝে মনে হয় অনেক কঠিন।
যাই হোক আমি একটু ঘরে যাই তারা তুমি নীরাকে বলে দিও নীলকে খেতে দিতে।তুমি আর নীরাও খেয়ে নিও আমি একটু পরে খাবো।পায়ের ব্যথায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।
তারা মুচকি হেসে বললো, আপনি ঘরে যান আন্টি আপনার খাবার আমি ওখানেই দিয়ে আসবো।আর ওনাদেরও দিয়ে দিবো।
হালিমা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। মেয়েটাকে কয়েক দিন আগেও সহ্য করতে পারতেন না কিন্তু এই মেয়েটাই কীভাবে যেন ওনার খুব কাছের হয়ে যাচ্ছে।
বিকেল হতেই আকাশ অন্ধকার হয়ে বৃষ্টি নেমে এলো।তারার একটা সময় বৃষ্টি খুব পছন্দ ছিল।কিন্তু এখন কেন জানি বৃষ্টি দেখলেই ওর মন খারাপ হয়ে যায়,মনে হয় আকাশ কাঁদছে।তখন তারারও খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে।
ঘরে একা একা বসে জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখছিল তারা, হঠাৎ নীরা বেশ অস্থির হয়েই এলো।
নীরা এসেই তারাকে ফিসফিস করে বললো,ভাইয়ার ঘর তুমি গুছিয়েছো তাই না?
তারা মাথা নাড়ালো।
নীরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,ভাইয়া ডাকলে এখন ওর সামনে যেও না।আর প্রয়োজন মনে করলে আমাকে ডেকো আমি আমার ঘরে আছি।
নীরা চলে যাচ্ছিল তারা পেছন থেকে ওকে ডাকলো,আপু।
–হুম
–কী হয়েছে?
–ভাইয়া ওর ডায়রিটা খুঁজে পাচ্ছিল না এখন পেয়েছে কিন্তু ওর ঘরে কিছু জিনিস এদিক সেদিক করা তুমি যে ঘরটা গোছিয়েছো সে জন্যই।ভাইয়া ওর ব্যক্তিগত জিনিস অন্য কেউ ধরা পছন্দ করে না।ভাইয়ার ঘর যখন গোছালে মা তোমাকে না করেনি?
–আসলে আপু আমি তো ইচ্ছে করেই সব ঠিক করেছি অগোছালো ছিল সব।আন্টিকে কিছু বলিনি।আমি আসলে বুঝতে পারি নি।
–আমি জানি তুমি বুঝতে পারো নি কিন্তু ভাইয়া তো ক্ষেপে গেছে ওর সামনে আপাতত যেও না।
-না আপু আমার এতো সাহস আছে নাকি সেচ্ছায় ওই রাগী দানবের কাছে যাবো।আমার ঘাড়ে তো একটাই মন্ডু নাকি?
তারার কথা শুনে নীরা হেসে ফেললো।তারাও হাসলো।
নীরা হাসতে হাসতেই বললো,তুমি কিন্তু একেবারে পারফেক্ট একটা নাম দিয়েছো।যাকগে আমি একটু রেস্ট নেবো তারা তুমিও তোমার ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকো।
তারা মাথা নাড়ালো। নীরা চলে গেল।
কিছুক্ষণ পরই তারার দরজায় টুকা পড়লো।ও ইতস্তত করেই দরজা খুললো।
নীলকে দেখে তারার বুক ধরফর করা শুরু করলো।
নীল রাগী রাগী মুখ করে তাকিয়ে আছে তারার দিকে।
তারা ঢুক গিলে তেতলাতে তোতলাতে বললো,আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আপনি? আমি কিছু করেছি?
নীল কোনো জবাব না দিয়ে তারাকে ওর ঘরে টেনে নিয়ে গেল।তারপর একটা নীল রঙের খাম হাতে নিয়ে বললো,এই খামের ভিতর একটা চিঠি ছিল চিঠিটা কোথায়?
তারা ভালো করে তাকিয়ে বললো,খামের ভিতর তো কিছু ছিল না, খামটা মেঝেতে পেয়ে ছিলাম আমি তাই অপ্রয়োজনীয় ভেবে এটা ডাস্টবিনে রেখে দিয়েছি।
নীল অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করে বললো,ভালো করে মনে করো হলুদ রঙের একটা কাগজ ছিল এর ভিতরে।
তারা ঝটপট উত্তর দিলো,হ্যাঁ একটা হলুদ রঙের কাগজ মানে একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল কিন্তু খামের ভিতর ছিল না সেটাও মেঝেতে ফেলা ছিল।
–এটা মেঝেতে পরে থাকার জিনিস না তাও বলো কী করেছো কাগজটা?
তারা ভয়ে ভয়ে হাতের ইশারায় জানালা দেখিয়ে উত্তর দিলো,ওটা আমি জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছি।
নীল চিৎকার করে উঠলো, কী?
তারপর ও দ্রুত জানালার কাছে গিয়ে নিচে তাকালো,বৃষ্টির পানিতে কাগজটা ছিড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
নীল গর্জন করে উঠলো, কী করেছো এটা তুমি?এই কাগজটা আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ জানো?
তারা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,আমি বুঝতে পারিনি।আপনি দয়া করে এভাবে চিৎকার করবেন না, আন্টি ঘুমিয়ে আছেন।আন্টির শরিরটাও তেমন ভালো না।আমাকে যা শাস্তি দেয়ার দিন তবুও চেঁচামেচি করবেন না।
নীল দাঁতে দাঁত চেপে বললো,শাস্তি চাও তুমি?যে অপরাধটা করেছো তার জন্য আমি তোমাকে যে শাস্তিটাই দিবো সবটাই কম হবে।এসো আমার সাথে শাস্তি কী জিনিস দেখাচ্ছি তোমাকে।
নীল তারাকে টেনে নিয়ে ছাদে চলে গেল।তারপর ওকে বৃষ্টিতে রেখে বললো এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে এখানে।এটাই তোমার শাস্তি।
নীল হনহন করে নিচে নেমে এলো।তারা অসহায়ের মতো বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে রইলো।ওর সারা শরির কাঁপছে।চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি যেন একসাথে হয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে কে কত দ্রুত ঝড়ে পড়তে পারে।
নীরার ঘুম ভাঙলো ঘন্টা ঘানেক পরে, তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।সে হালিমা বেগমের ঘরে গিয়ে ওনাকে ডেকে তুললো।
মা-মেয়ে মাগরিবের নামাজটা পড়ে নিলেন।
তারার কোনো সারাশব্দ নেই এতক্ষণে তো নামাজ পড়ে এসে চা বানিয়ে সবাইকে ডাকে ।
আজকে কী করছে ঘরে! এসব ভাবতে ভাবতে নীরা তারার ঘরে গেল।দরজা খোলা ভিতরে তারা নেই।নীরা অবাক হয়ে এদিক ওদিক খুঁজে তারাকে না পেয়ে নীলের ঘরের দিকে গেল।দরজা ভিতর থেকে বন্ধ নীরা দরজায় কয়েকটা ধাক্কা দেয়ার পর নীল এসে দরজা খুললো।ওর চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।
নীরা আস্তে করে বললো, ভাইয়া তারাকে দেখেছিস?
নীল কর্কশ গলায় বললো, না।
নীরা অস্থির হয়ে বললো,সারা বাসা খুঁজে দেখলাম মেয়েটা কোথাও নেই।কোথায় গেল বলতো।
নীল এবার কিছু একটা চিন্তা করে নরম গলায় বললো,কোথাও নেই?ভালো করে দেখেছিস।
নীরা মাথা নাড়ালো।
নীল এবার মুখ দিয়ে অদ্ভুত এক শব্দ করে দৌড়াতে লাগলো।
নীরা পেছন পেছন ডাকলো,ভাইয়া কী হলো?কোথায় যাচ্ছিস?
নীল আর পেছন ফিরে তাকালো না।
এক দৌড়ে ছাদে চলে গেল।মুশলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে চারিদিকটা এমনিতেই অন্ধকার।নীল চিলেকোঠার বাতিটা জালিয়ে দৌড়ে ছাদে চলে গেল।তারা অবচেতন অবস্থায় পড়ে আছে ছাদে যেখানে নীল রেখে গিয়ে ছিল ঠিক সেখানটায়।
নীল দৌড়ে গিয়ে তারার পাশে বসলো।চিৎকার করর ডাকলো,এই তারা, তারা একবার তাকাও।
নীল কল্পনাও করতে পারেনি তারা এভাবে এতক্ষন বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকবে।রাগের মাথায় তারাকে এখানে রেখে গিয়ে ভেবেছে হয়তো সে চলে যাওয়ার পরই তারা উঠে আসবে।কিন্তু মেয়েটা এভাবে এখানেই বসে থাকবে কে জানতো।
নীলের অদ্ভুত রকমের কষ্ট হচ্ছে।ও দ্রুত তারাকে কোলে নিয়ে নিচে নেমে এলো।তারাকে এভাবে নিয়ে আসতে দেখে নীরা চিৎকার করে উঠলো, তারার কী হয়েছে ভাইয়া?
নীল কোনো জবাব না দিয়ে বললো,সর ওকে ঘরে নিয়ে যেতে হবে।তারার সারা শরির আগুনের মতো গরম হয়ে আছে আর ভিজে একাকার।
নীল তারাকে ওর ঘরে নিয়ে মেঝেতে নামিয়ে রেখে নীরাকে বললো,তাড়াতাড়ি ওর জামাটা বদলে ওর গাটা মুছে দে।শেষ হলেই আমাকে ডাকবি।
আমি বাইরে আছি।
নীরা এসে তারাকে ধরে কোনরকমে জামা বদলে দিয়ে গা,মাথা মুছে দিলো।তারপর নীলকে ডাকলো।নীল এসে তারাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে বললো,ডাক্তার ডাকবো নীরা?তারার তো মনে হচ্ছে অনেক জ্বর।
নীরা বিরক্ত হয়ে বললো,আমি বুঝতে পারছি না মেয়েটা এভাবে বৃষ্টিতে কী করছিল।ডাক্তার তো ডাকবোই কিন্তু এই বৃষ্টির মধ্যে কীভাবে কী হবে।আচ্ছা বাবাকে একটা ফোন দেই?বাবার পরিচিত ডাক্তার আংকেল তো আছে ওনাকে নিয়ে আসবে বা ফোন করে আসতে বলবে।
নীল আর কিছু বললো না এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তারার দিকে।
নীলের ভিতরে ভিতরে কেমন যেন একটা অপরাধবোধ হচ্ছে।বার বার মনে হচ্ছে তারার সাথে তার আজকের আচরণটা খুব খারাপ হয়েছে।
নীরা আরাফাত সাহেবকে কয়েক বার কল দিয়েও পেল না।
নীল বিরক্ত হয়ে বললো,কী ব্যপার পেলি বাবাকে?
নীরা মুখ কালো করে মাথা নাড়ালো।
–তোর কাছে ডাক্তার আংকেলের নাম্বার নেই?
–না।
–ঠিক আছে আমি ওনার বাসা চিনি আমি নিয়ে আসছি ওনাকে।
কথাটা বলে নীল বেরিয়ে যেতে লাগলো,নীরা অবাক হয়ে বললো,তুই এই বৃষ্টির মধ্যে কীভাবে যাবি,বাইক নিয়ে?
— ‘হ্যাঁ
–ভাইয়া একটা অটো করে যা বাইক নিয়ে গেলে বৃষ্টিতে ভিজে যাবি তো।
নীল কোনো জবাব না দিয়েই বেরিয়ে পড়লো।ঘন্টা ঘানেক পর ফিরে এলো ডাক্তারকে নিয়ে।
নীরা তারার কাছেই বসে ছিল।ততক্ষণে হালিমাও তারার অসুস্থতার খবর পেয়ে ওর কাছে এসেছেন।
তিনি তারার মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছেন।
নীল ভিজে জুবুথুবু অবস্থায় তারার ঘরে ঢুকলো।
নীরা এগিয়ে গিয়ে বললো,ডাক্তার আংকেলকে পেলি?
–হুম উনি এসেছেন গাড়ি করে।গাড়ি থেকে নেমেছেন মাত্র, এসে যাবেন।
নীরা বিরক্ত হয়ে বললো,ভাইয়া তোকে না বললাম অটো করে যেতে এখন তো ডাক্তার আংকেলের সাথেই গাড়ি করে আসতে পারতি ভিজে কী অবস্থা হয়েছে।তুইও তারার মতো জ্বর বাধাবি নাকি?ঠিক আছে এখন জামা কাপড় ছেড়ে আয়।
নীল উকি দিয়ে তারাকে দেখার চেষ্টা করে বললো,ওর জ্ঞান ফিরেছে।
নীরা না সূচক মাথা নাড়ালো। নীল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের ঘরের দিকে হাটা ধরলো।
রাতে তারার জ্ঞান ফিরলেও জ্বর কিছুতেই কমলো না। সারারাত আরাফাত সাহেব,হালিমা বেগম আর নীরা ওর কাছে বসে রইলেন।
নীল নিজের ঘরে ঘুমাতেও পারছিল না আর তারার কাছেও যেতে ইচ্ছে করছিল না।
শেষ রাতে নীলেরও প্রচন্ড জ্বর এলো। অবচেতনের মতো ঘুমের ঘুরে তলিয়ে গেল সে।
সকাল হলে তারার জ্বর খানিকটা কমলো। চোখ মেলে তার ঘরে এভাবে আরাফাত সাহেব,হালিমা বেগম আর নীরাকে দেখে অবাক হয়ে গেল।আরাফাত সাহেব সোফায় আধশোয়া অবস্থায় ঘুমাচ্ছেন।নীরা আর হালিমা তারার দুই পাশে দু-জন কোনো রকমে ঘুমিয়ে আছেন।
তারার চোখে পানি চলে এলো মানুষ গুলো সারারাত এভাবে কষ্ট করে বসে ছিলেন ওর জন্য।
তারার উঠার শব্দ পেয়ে হালিমাও জেগে উঠলেন।সারারাত দু-চোখের পাতা এক করেন নি কেউ।ভোর হতেই তারার জ্বরটা ছাড়লো তখন অজান্তেই ওনারা ঘুমিয়ে পড়েছেন।
হালিমা তারার মাথায় হাত বুলিয়ে দেখলেন জ্বর নেই।উনি ভ্রু কুচকে বললেন,এভাবে বোকার মতো বৃষ্টিতে ভিজলে কেন মেয়ে?শরিরের কী অবস্থা হয়েছিল খেয়াল আছে তোমার?আর একদম বৃষ্টিতে ভিজবে না।
তারা মায়াভরা চোখ নিয়ে হালিমা বেগমের দিকে তাকালো এক পলক।মানুষটার চেহারায় আসলেই মা মা একটা ভাব আছে।
হালিমা শাড়ি ঠিক করে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,সারারাত তো দানা-পানিও পেটে পরেনি আমি তোমার জন্য সুপ করে আনছি।শুয়ে থাকো।
তারা ওনাকে বাধা দিয়ে বললো, আমি ঠিক আছি আন্টি ব্যস্ত হবেন না।
–তুমি কেমন আছো আমি জানি,বেশি কথা না বলে চুপচাপ যা বললাম তা করো।শুয়ে থাকো।
তারা আর কিছু বললো না।তারা আর হালিমার কথোপকথনে আরাফাত সাহেব আর নীরাও জেগে উঠেছেন।আরাফাত সাহেব চোখ পরিষ্কার করে চশমা পরলেন, তারপর তারাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,এখন একটু সুস্থ লাগছে মা?
তারা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। নীরা তারার কপালে হাত রেখে বললো,জ্বর একদম সেরে গেছে।
পাগলী মেয়ে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে কেন বলতো।
আর এতোটাই ভিজলে যে অজ্ঞান হয়ে ছাদে পড়ে ছিলে।নেহাত ভাইয়া ছাদে গেল বলেই তোমাকে ওখান থেকে নিয়ে এলো।নাহলে আমরা তোমাকে সারারাত খুঁজতাম আর তুমি ওখানে পড়ে থাকতে।
উফফ!বাবা ভাবতে পারছি না।
আরাফাত সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,আমি একটু ঘরে গিয়ে ঘুমাবো ঘন্টাঘানেক পরে একটু ডেকে দিস তো নীরা মা।
নীরা মাথা নাড়ালো।আরাফাত সাহেব চলে গেলেন নিজের ঘরে।
তারা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, নীরা আপু তোমরা সারারাত এভাবে আমার কাছে বসে ছিলে কেন?
আংকেল-আন্টি বয়স্ক মানুষ ওনারা রাত জাগলে শরির খারাপ করবে তো।
নীরা হেসে বললো,পাকা বুড়ি একটা একদিন জাগলে কিচ্ছু হবে না।আমরা তো ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলাম তোমার যা অবস্থা হয়েছিল।
তোমার জ্ঞান ফিরছিল না আর এদিকে বাবাকেও ফোনে পাচ্ছিলাম না যে বলবো ডাক্তার আংকেলকে নিয়ে আসতে।তখন ভাইয়া বৃষ্টির মধ্যেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে ভিজে একাকার হয়ে ডাক্তার আংকেলকে নিয়ে এলো।অনেক জ্বর ছিল রাতে তোমার।
তারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললো, নিজে বৃষ্টিতে রেখে এসে আবার নিজেই বৃষ্টিতে ভিজে ডাক্তার নিয়ে এলো । রাগী দানব মাঝে মাঝে হয়তো মানব রূপে ফিরে আসে।
নীরা আর তারার কথার মাঝখানে হালিমা এসে হাজির হলেন।ওনার হাতে সুপের বাটি।তারার কাছে বসে ওকে নিজের হাতে সুপটা খাইয়ে দিলেন।
তারা নিজের মায়ের হাতে কবে খাবার খেয়েছে মনে পড়ে না।হালিমা বেগমের এতো আদর করে খাইয়ে দেয়া তারার চোখদুটো আবার ভিজিয়ে দিচ্ছে।
সকাল দশটা বাজতে চলেছে আরাফাত সাহেব কিছুক্ষণ আগেই কোর্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছেন।তারা অনেকটাই সুস্থ রান্নাঘরের আসেপাশে ঘুরঘুর করছে।হালিমা বেগম রান্না করছেন নীরা ওনাকে সাহায্য করছে কিন্তু তিনি তারাকে রান্নাঘরে ঢুকতে বারণ করেছেন।বলেছেন ওর শরির এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি ঘরে শুইয়ে থাকতে।তারার একা একা ঘরে শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না তাই রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে।
নীল এখনও জাগেনি দেখে হালিমা বেগম একটু রেগেই নীরাকে বললেন,যা গিয়ে দেখ তোর জমিদার ভাই আর কতক্ষণ ঘুমাবে।যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে না জাগে পানি ঢেলে দিবি গায়ে।
নীরা চুপচাপ নীলের ঘরের উদ্দেশ্যে হাটা ধরলো।তারাকেও সাথে নিয়ে গেল।নীলের ঘরের সামনে এসেই তারা বললো,আপু তুমি যাও ভিতরে, আমি এখানেই আছি।
নীরা আর জোর করলো না।দরজা খোলা আছে বিধায় ভিতরে চলে গেল।
নীল বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।নীরা বেশ কয়েকবার ডাকলো কিন্তু নীলের কোনো সারাশব্দ নেই।নীরা একটু চিন্তিত হয়ে ধাক্কা দেয়ার জন্য নীলের গায়ে হাত দিতেই দেখলো ওর গা প্রচন্ড গরম।
নীরা অস্থির হয়ে ডাকতে শুরু করলো,ভাইয়া কী হয়েছে তোর।
নীল চোখ বন্ধ অবস্থায় সারা দিলো তারপর বিড়বিড় করে কিছু একটা বললো।
নীরা নীলের বিড়বিড় করে কথাগুলো পুরোপুরি বুঝতে পারলো না তবে কিছুটা আন্দাজ করলো তারাকে নিয়েই কিছু বলছে।ও তারাকে ডাকলো।তারা ইতস্তত করে ঘরে প্রবেশ করলো।
নীরা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,ভাইয়ার সারা শরির পুড়ে যাচ্ছে মনে হয় জ্বর এসেছে।কী জানি বলছে তোমাকে নিয়ে একটু শুনে দেখো তো।
তারা গুটি গুটি পায়ে নীলের কাছে এগিয়ে গেল..
চলবে..
লিখা: উম্মেহানি মিম