Death line,Part: 03

0
3817

Death line,Part: 03
Writer: Abir Khan

আবিরের হঠাৎ এ কথায় তিশাসহ ওর সব বান্ধবীরা স্তব্ধ হয়ে যায়। তিশা দ্রুত স্বরে লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

~ এ কি বলছো তুমি? মাথা ঠিক আছে?
– আছে৷ আমি শুধু তোমার।
~ যাক ভালোই হলো আমাদের বান্ধবীর কপালে শেষমেশ এই নাছর বান্দা অদ্ভুত ছেলেটাই জুটলো। তিশা কংগ্রেস বান্ধবী। (নাতাশা হাসতে হাসতে বলল)

তিশা আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ওর বান্ধবীরা হাসাহাসি করছে। তিশা আর কি বলবে, আবির সত্যিই অদ্ভুত। এভাবে মনের কথা সবার সামনে বলে দিল! তিশা লজ্জাসিক্ত হয়ে কোন ভাবে টিফিন খেয়ে আবিরকে নিয়ে হাঁটা দেয়৷ ওর বান্ধবীরা বলে,

~ যা যা। আমরা তোদের ডিস্টার্ব করবো না সমস্যা নাই। হাহা।

তিশা আবিরকে নিয়ে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে৷ হঠাৎই আবির ওকে টান মেরে একটা খালি ক্লাসে ঢুকে পড়ে৷ দরজা লাগিয়ে দিয়ে তিশাকে দেয়ালের সাথে জড়িয়ে ধরে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কি থেকে কি হয়ে গেল তিশা বুঝতেই পারলো না। ক্লাসের জানালা ভেদ করে আলো আসছে৷ সে আলোতে আবির তিশাকে দেয়ালের সাথে জড়িয়ে ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখছে৷ তিশা নিজেকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু আবির এত শক্তিশালী যে ও কোনভাবেই পেরে উঠছে না। তিশা বলে উঠে,

~ আবির এসব কি? আমাকে ছাড়ো। কি হয়েছে তোমার?

আবির তিশার গোলাপি ঠোঁট জোড়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

– এই ভার্সিটিতে এত সুন্দরী মেয়ে থাকতে আমি কেন তোমাকে পছন্দ করেছি জানো?
~ কেন? (লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে)
– কারণ তোমার মনটা একদম পরিষ্কার। তোমার মাঝে এমন একটা কিছু আছে যা আর কোন মেয়ের মাঝে আমি পাই নি।
~ হয়েছে, এগুলা বলে আমাকে পটিয়ে লাভ হবে না। আমাকে ছাড়ো।
– ছাড়ার জন্য ধরি নি। আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি তোমাকে ধরে রাখবো।
~ তাই?
– কোন সন্দেহ আছে?
~ প্রমাণ কি?
– প্রমাণ চাচ্ছো? আচ্ছা দিচ্ছি।

আবির একমুহূর্তও আর অপেক্ষা না করে তিশার নরম গোলাপি ঠোঁটটা একদম ওর করে নেয়৷ তিশা স্তব্ধ হয়ে চোখগুলো বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে৷ তবে একসময় আবিরের আবেশে ওর চোখগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তিশা ওর জীবনে কখনোই এরকম অনুভূতি পায় নি। এ যেন পরম শান্তি। আবির তিশার মাঝে হারিয়ে যেতে চাচ্ছে৷ তিশা আবিরকে থামায়। আর বলে,

~ পাগল হয়ে গিয়েছো তুমি। ক্লাসে চলো।

আবির আজ প্রথম তিশার লজ্জাসিক্ত মুখখানার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়৷ তিশা প্রথম আবিরের হাসি দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে৷ আবির তিশার কাছে এসে ওর কপাকে একটা চুমু দিয়ে বলে,

– আজ তো থামিয়ে দিলে। অন্যকোন একদিন তা আর পারবে না৷ হিহি।

তিশা লজ্জায় মরে যাচ্ছে৷ ও কোন রকম নিজেকে ছাড়িয়ে দরজা খুলে সাবধানে ক্লাসের বাইরে চলে যায়। আবির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু হাসে৷ ওর চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে।

তিশা দৌড়ে এসে ক্লাসে ঢুকে। নাতাশা একা ওর কাছে এসে বলে,

~ কিরে হাপাচ্ছিস কেন? কি হয়েছে?
~ দোস্ত ও অনেক পঁচা।
~ সে আর নতুন কি। কেন কি করেছে ও?
~ যা বলবো না৷ লজ্জা করে।
~ এই এই কি করেছে বলনা? আমাকে বলবি না?
~ লজ্জা করে তো।
~ আচ্ছা কানে কানে বল।

তিশা লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে নাতাশাকে সব বলে। নাতাশা হাসি দিয়ে বলে,

~ ও তো আসলেই একটা লুচ্চা ছেলে। ভালো করেছিস ওকে থামিয়ে। নাহলে তো..
~ এই চুপ। ওই যে ও আসছে৷ তুই যা।
~ হুম।

আবির ক্লাসে ঢুকে তিশার দিকে আসছে। নাতাশা আড় চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে ওর সিটে গিয়ে বসে। আবির কোন পাত্তা না দিয়ে তিশার পাশে এসে বসে। একটু পরই স্যার চলে আসে। যথারীতি ক্লাস শুরু হয়। তিশা মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বারবার দুষ্ট আবিরের দুষ্টামির কথা মনে পড়ছে৷ তিশা মনে মনে বলে,

~ আবির কি সত্যিই আমাকে ভালবাসে? নাকি এসব মিথ্যা? ও কি শুধু আমার দেহকে চায়? নাকি আমাকে?

তিশা যখন এসব ভাবছি হঠাৎই আবির পাশ থেকে ওর ডান হাতটা ধরে ওর কাছে আনে৷ তিশা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়৷ ও টান মেরে হাত সরিয়ে ফেলে। আবিরও নাছরবান্দা। ও আবার তিশার হাতটা নিয়ে ওর দুই হাত দিয়ে ধরে রাখে৷ এবার তিশা টান না মেরে অপেক্ষা করে আবির ওর হাত নিয়ে কি করে তা দেখার জন্য৷ আবির তিশার আঙুলগুলো খুব আদর করে স্পর্শ করে করে দেখছে৷ তিশা যেমনটা অবাক হচ্ছে তেমনি ওর ভিতর অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে। ও অবাক নয়নে আবিরকে দেখছে৷ অনেকক্ষণ পর আবির যখন তিশার হাতটা ছেড়ে দিবে ঠিক তার আগ মুহূর্তে আবির তিশার হাতে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে দেয়। তিশা মুহূর্তেই কেঁপে উঠে। ও এটা আশা করে নি। তিশা দ্রুত হাত সরিয়ে নিলে আবির বেঞ্চে মাথা রেখে তিশার লজ্জাসিক্ত মুখখানার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর এদিকে তিশা লজ্জায় ছটফট করতে থাকে। আজ একদিনে অনেক কিছু হয়ে গিয়েছে ওর সাথে। এতগুলো ভালো লাগা, এতগুলো অনুভূতি ও একসাথে নিতে পারছে না৷

ক্লাস শেষ হলে তিশা ব্যাগে বই ঢুকাতে থাকে। নাতাশা এসে বলে,

~ চল একসাথে যাবি।
~ আচ্ছা৷

তিশা আবিরের দিকে তাকিয়ে উঠতে নিলে আবির খপ করে ওর হাত ধরে ফেলে। তিশা আর নাতাশা দুজনই অবাক হয়। তিশা বলে,

~ কি হয়েছে?
– তুমি আমার সাথে যাচ্ছো। এখানে চুপচাপ বসো। সবাই বের হলে আমরা বের হবো।

নাতাশা কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ তিশা এবার কিছুটা রাগ করে৷ ও হাত ছাড়িয়ে বলে,

~ আবির…অতিরিক্ত করছো তুমি। এতটা মাথায় উঠো না৷ অনেক হয়েছে আর না৷ নাতাশা চল।

তিশা আবিরের দিকে একবারও না তাকিয়ে নাতাশাকে নিয়ে সোজা চলে আসে। নাতাশা তিশার পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলে,

~ দোস্ত এটা ঠিক হলো না। আবির তো তোকে পছন্দ করে। তাই তোর সাথে থাকতে চায়। তুই ওর সাথে এমনটা না করলেও পারতি।
~ বেশ করেছি। ক্লাসের মধ্যে হাত ধরে বসে থাকে৷ উলটা পালটা করে৷ মনে হয় আমি ওর কেনা গোলাম।
~ আচ্ছা শান্ত হ। বাদ দে এসব।
~ হুম৷

তিশা আর নাতাশা একই রিকশায় করে বাসার দিকে আসছে৷ তিশা খুব বুঝতে পারছে ও অতিরিক্ত করে ফেলেছে। এতটা শক্ত হওয়াও ঠিক হয়নি ওর। তিশার এখন খারাপ লাগছে। ওর মুখখানা মলিন হয়ে আছে৷ নাতাশা পাশ থেকে সবটা বুঝতে পারছে৷ ও আস্তে করে বলে,

~ সরি দোস্ত। ভুলটা আমারই। আমার জন্যই তোদের মাঝে সমস্যা হলো।
~ চুপ বোকা। তোর কোন দোষ নেই।
~ তুই মন খারাপ করিস না। আবির এত সহজে তোর উপর রাগ করবে না৷ কাল দেখিস আবার তোকে ওর পাশে বসাবে৷
~ সত্যি?
~ সত্যি৷

তিশা কিছুটা শান্তি পায়৷ অনেক কষ্টে মুখের কোণায় একটু হাসি আনার চেষ্টা করে কিন্তু কেন জানি পারে না। ওর মনে হচ্ছে ও বড়ো একটা ভুল করেছে৷ আবিরের সাথে নাতাশার সামনে এমন করাটা একদম ঠিক হয় নি। তিশা বাসায় এসে চুপচাপ মন খারাপ করে ওর রুমে চলে যায়। ও ঠিক করে কাল আবিরের কাছে মাফ চাইবে৷ এতটা রুড বিহেব করা ঠিক হয় নি ওর। তিশা এখন শুধু অপেক্ষায় আছে কালকে সকালের।

পরদিন সকালে,

তিশা দ্রুত ঘুম থেকে উঠে ভার্সিটিতে চলে আসে। এসে আবিরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। একে একে সবাই চলে আসে। কিন্তু আজ এখনো আবির আসে নি। তিশা সেই পিছনে আবিরের সিটে বসে আছে। ক্লাস শুরু হতে আর মাত্র ৫ মিনিট বাকি। নাতাশা তিশাকে বলে,

~ দোস্ত আবির মনে হয় আজকে আর আসবে না। সরি রে। আমার জন্য তোদের মাঝে এত বড়ো একটা ঝামেলা হলো।

তিশা নাতাশাকে কিছু বলে না। ওর খুব খারাপ লাগছে। ও বুঝতে পেরেছে আবির খুব কষ্ট পেয়েছে। তিশা দ্রুত ওর ফোনটা বের করে আবিরকে কল দিতে নেয়৷ কিন্তু ও পারে না৷ কারণ আবিরের নাম্বার ওর কাছে নেই। তিশা খুব হতাশ হয়ে পড়ে। ও কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না৷ তিশা ভাবতেও পারেনি আবির এতটা কষ্ট পাবে যে ক্লাসই মিস দিবে৷ ও সেদিন পুরো ক্লাস একাই পার করে। কারো সাথে কোন কথা বলে না৷ এভাবে টানা চার দিন চলে যায়। তিশা অসম্ভব অস্থির হয়ে পড়েছে৷ আবিরের সন্ধানে ও পাগল হয়ে যাচ্ছে প্রায়। খাওয়া দাওয়া, ক্লাস কিছুই ঠিক মতো করছে না৷ ওর বান্ধবীদের সাথেও তেমন মিশছেও না৷ নাতাশাও মন খারাপ করে বসে থাকে। শুধুমাত্র আবিরের জন্য এতগুলো মানুষ অশান্তিতে আছে।

পঞ্চম দিন,

তিশা ওর মলিন মুখখানা নিয়ে ক্লাসে ঢুকে। আবিরের সিটের দিকে তাকিয়ে ও অনেক খুশি হয়ে যায়৷ কারণ আবির একা বসে আছে৷ সেই আগের মতো বাইরের দিকে তাকিয়ে। তিশা দৌড়ে আবিরের কাছে গিয়ে খুব উত্তেজিত আর চিন্তিত হয়ে বলে,

~ তুমি এসেছো? এত দিন কই ছিলে? আমি খুব খুব খুব সরিইইই৷ আমার সেদিন এভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দেও।
-……
~ কি হলো চুপ করে আছো কেন? কিছু বলো।

আবির কোন উত্তর দেয় না৷ ও শুধু ওর ব্যাগটা পাশের সিটে রেখে দেয়৷ মানে ও চায় না তিশা ওর পাশে বসুক। তিশা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে। ও ভাবতে পারে নি আবির এমনটা করবে৷ তিশা খুব অসহায় হয়ে পড়ে৷ ও মলিন মুখ নিয়ে একটা ফাঁকা বেঞ্চে গিয়ে একা বসে পড়ে। ওর খুব কান্না পাচ্ছে৷ ও একটু আবিরের সাথে কথা বলতে চায়।

চলবে..?

সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here