#নীল_আকাশের_শুকতারা,১১,১২
(১১ম পর্ব)
তারা রান্নাঘর গুছিয়ে নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করতে গিয়ে হা হয়ে গেল নীল ওর ঘরে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তারা ঘরে ঢুকতেই নীল চোখ লাল করে তারার দিকে তাকালো।
তারা ভয়ে ভয়ে বললো,আপনি এখানে কী করছেন?আর আমার দিকে এভাবে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন কেন?
নীল দাঁত কটমট করে বললো, আমাকে রাগী দানব বলা তাই না?সবার সামনে আমাকে কফি না দিয়ে অপমান করা।অনেক সহস বেড়েছে তোমার।নীল কথাগুলো বলতে বলতেএক পা, এক পা করে তারার দিকে এগিয়ে আসছে,নীল যত আগাচ্ছে তারা তত পিছিয়ে যাচ্ছে।এক পর্যায়ে তারা দৌড় দিতে যাবে নীল দ্রুত তারার হাত চেপে ধরে ওকে আটকে ফেললো।
তারা কাচুমাচু করে বললো,আপনি আমার হাত কেন ধরলেন, ছাড়ুন বলছি।
নীল বিদ্রুপের হাসি হেসে বললো, সাহস থাকলে হাতটা ছাড়াও।দেখি তোমার ক্ষমতা কতটুকু।
তারা জোরাজোরি করেও হাত ছাড়াতে পারলো না হঠাৎ ওর মনে হলো অন্যভাবে নীলের থেকে মুক্তি পেতে পারে ।তাই দরজায় তাকিয়ে দ্রুত চেঁচিয়ে বললো আন্টি এসেছেন, দেখুন আপনার ছেলে কীভাবে আমার হাত ধরে আছেন।
নীল দরজার বিপরীত দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিল কথাটা শুনে চমকে উঠে তারার হাত ছেড়ে পেছন ফিরে তাকালো।এই সুযোগে তারা এক দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে নীলের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বললো,দেখেছেন তো আমার সাহস আর ক্ষমতা এবার আমার ঘর থেকে বিদেয় হোন।
নীল দাঁত কটমট করে এক পা এগুতেই তারা এক
দৌড়ে নীরার ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে হাপাতে শুরু করলো।নীরা বিছানায় বসে ছিল তারাকে হাপাতে দেখে উঠে এসে বললো, কী হয়েছে তারা হাপাচ্ছো কেন?
তারা হাপাতে হাপাতে বললো,পানি দাও আপু বলছি।
নীরা,এক গ্লাস পানি এনে তারার হাতে দিলো।তারা এক চুমুকে একগ্লাস পানি সাবাড় করে দিয়ে বললো,রাগী দানব দৌড়ানি দিয়েছে আমাকে।
তারার কথা শুনে নীরা রেগে গিয়ে বললো,কী? ভাইয়া না আজকাল যা তা শুরু করেছে আজকে বাবা বাসায় আসুক সব বলে দিবো আমি।
তারা ঢুক গিলে বললো, না না আপু আংকেল এসব শুনলে খুব রেগে যাবে তাছাড়া সারাদিনে কোর্ট থেকে এসে এসব শুনলে ভাববে এই বাসায় এখনও কেউ আমাকে পছন্দ করে না তাহলে তো ঝামেলা শুরু করবে।তুমি,আন্টি তো কত ভালোবাসো আমাকে শুধু একজনের জন্য বাসায় ঝামেলা লাগিয়ে লাভ নেই আপু, মেহমানরাও আছেন।
নীরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুচকি হাসলো,তারপর তারার গাল টিপে দিয়ে বললো,লক্ষ্মী মেয়ে একটা সবকিছুর খেয়াল রাখে।ঠিক আছে আজকে সারাদিন তুমি আমার সাথে সাথে থেকো দেখি ভাইয়া কী করে তোমাকে।
তারা মাথা নাড়ালো।
আজ পাঁচই ডিসেম্বর তারা আঠারো বছরে পা রাখলো।পরিবারে যত যাই সমস্যা থাকুক না কেন এই দিনটা কলি আর সাহেদ একসাথেই তারার সাথে কাটাতেন।
এবার তিন জন তিনটা আলাদা জায়গায়।প্রকৃতি সময়ের সাথে কতকিছু বদলে দেয় ভাবতেই তারার চোখ দুটি জলে ভরে উঠলো।
ফজরের নামাজ শেষ করে দু হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করলো বাবা মায়ের জন্য,যে পরিবারে এখন তারা আছে সে পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষের জন্য।
জায়নামাজ তুলে রেখে তারা দরজা খুলে বেরোলো।তারপর সিড়ি বেয়ে নেমে এলো নিচে উদ্দেশ্য রান্নাঘরে যাবে।আজকে শীতটা একটু বেশিই পড়েছে কুয়াশার চাদরে চারিদিকটা ঢেকে আছে।আরাফাত সাহেব বা হালিমা বেগমের সারাশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।তারা চা না বানিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।বসার ঘরের কাচের জানালায় শিশির বিন্দু জমে জানালাটা ছাপসা হয়ে আছে।ও জানালার কাছাকাছি এগিয়ে গেল।আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে বাইরে অনেক কুয়াশা।ভোরের পাখির কিচিরমিচির ডাক তাকে কেমন যেন মোহগ্রস্ত করে তুলছে।
তারা আনমনে জানালার শিশির জমা কাচে লিখলো ‘ শুভ জন্মদিন শুকতারা’
হঠাৎ কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে তারা দ্রুত পেছন ফিরে তাকালো।আকাশ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।
তারা তাকাতেই বললো,কী করছিলেন শুকতারা?
–কিছু না এমনিই বাইরের কুয়াশা দেখছিলাম।
–কুয়াশায় দেখতে আপনার ভালো লাগে?
— আমার কুয়াশা ঢাকা ভোর অনেক ভালো লাগে।সবুজ ঘাসের উপর শিশির বিন্দু জমে থাকে যে তার উপর খালি পায়ে হাটতে অনেক মজা লাগে।
আকাশ মুচকি হেসে বললো,বাইরে তো এখন অনেক কুয়াশা, নিশ্চিত ঘাসের উপর শিশির বিন্দু জমেছে তো বাইরে গিয়ে খালি পায়ে হাটছেন না কেন?
তারা বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস গিলে বললো,সব সময় সব ইচ্ছেকে প্রশ্রয় দিতে নেই।
আকাশ চোখের চশমাটা পরিষ্কার করে বললো,হয়তো সব ইচ্ছেকে প্রশ্রয় দিতে নেই কিন্তু এমন ছোটখাটো ইচ্ছে গুলোকে প্রশ্রয় না দিলে নিজের সাথে অন্যায় করা হবে।চলুন বাইরে আজ আপনার মতো আমিও খালি পায়ে ঘাসের উপর হাটবো।
তারা খানিকটা অবাক হয়ে বললো,অনেক ঠান্ডা বাইরে।
আকাশ সদর জরজা খুলে বললো,শুকতারা বাইরের কুয়াশা ঢাকা ভোর আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে,ঘাসের উপর শিশির বিন্দু গুলো আপনার স্পর্শ পাবে বলে বেকুল হয়ে আছে।ভোরের পাখিরা সারারাত জেগে আপনার অপেক্ষায় বসে আছে গান শুনাবে বলে। তারপরও আপনি যাবেন না?
ঠিক আছে আমি বলে দিচ্ছি আজ আপনারা বিদেয় হোন, ম্যাডাম আসবেন না।
আকাশের কথাগুলো শুনে তারা বাচ্চাদের মতো খিলখিল করে হাসি শুরু করলো।
আকাশ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তারার দিকে
কুয়াশা ঢাকা ভোরে শিশির বিন্দুর মতোই যেন স্নিগ্ধ,পবিত্র মেয়েটার হাসি।
তারপর আনমনে নিজেই তারার সাথে তাল মিলিয়ে হেসে দিলো।
তারা ওর পরনের জোতাটা খুলে হাতে নিলো আকাশও তাই করলো।দুজনেই খালি পায়ে ঘাসের উপর হাটছে।নীরবতা ভেঙে তারা বললো,কেমন লাগছে বলুন তো?
আকাশ চোখ বন্ধ করে বললো,যেটা অনুভব করছি সেটা সহজে বর্ণনা করতে পারবো না।মনে হচ্ছে এই ভোরটা আমার জীবনে না এলে আমি পৃথিবীর সেরা একটি মুগ্ধতার দেখা পেতামই না।
আকাশ চোখ মেলে প্রাণভরে নিশ্বাস টেনে নিয়ে বললো,থ্যাঙ্কিউ শুকতারা,থ্যাঙ্কিউ সো মাচ।
তারা অবাক হয়ে বললো,কেন?
এতো সুন্দর একটা ভোর আমার জীবনে এনে দেয়ার জন্য।শিশির জমা ঘাসের উপর খালি পায়ে হাটার অন্যরকম একটা অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য।
তারা হাসলো।
আকাশ মুচকি হেসে বললো, আমি কী আপনার বন্ধু হতে পারি শুকতারা? আপনার মতামত না পেলেও অবশ্য কোনো সমস্যা নেই কারণ আমরা এমনিতেই অন্তত কালের বন্ধু আপনি জানেন?
তারা অবাক হয়ে হাসলো,তারপর বললো,কীভাবে?
–শুকতারা আর আকাশ অনন্ত কালের বন্ধু না?
আকাশ কথাটা বলে আঙুলের ইশারায় আকাশকে দেখিয়ে বললো,ওই আকাশ আর শুকতারার কথা বলছি।
তারা আবার খিলখিল করে হেসে উঠলো,তারপর বললো,আপনি অনেক সুন্দর করে কথা বলেন।
আকাশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,আমি আপনার বন্ধু হতে পারলাম না তাই না?
তারা ভ্রু কুচকে বললো,কেন হতে পারবেন না, আমি কী না করেছি?আপনি তো বললেন আমরা অনন্তকালের বন্ধু।
–বন্ধুরা কী আপনি আপনি করে কথা বলে?
তারা খানিক্ষণ চিন্তা করে বললো,তুই করে বলে।
আকাশ ঢুক গিলে বললো,না না তুই না,আমরা তুমি করে বলবো।
তারা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো।
আকাশ এবার বললো,আচ্ছা শুকতারা তোমার সব চেয়ে প্রিয় বন্ধু কে?
–কেউ না।
–কেন কেউ না?
তারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,প্রিয় বন্ধুরা কী কখনও ছেড়ে চলে যায় নাকি?
–তোমার বন্ধুরা ছেড়ে চলে গেছে?
–হুম,আমার বাবা মায়ের ডিভোর্সের বেশ কিছুদিন আগেই ওরা আলাদা হয়ে ছিলেন সেগুলো জানাজানি হয়ে সব বন্ধুরা আমার সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয় যেন বাবা মায়ের ডিভোর্সের জন্য আমি দায়ী।এমনিতেও আমার তেমন বন্ধু ছিল না, কারণ বাবা মায়ের বনিবনা হতো না সেটা আমার সহপাঠীদের বাবা-মায়েরা আন্দাজ করতে পারতেন।তাই ওনাদের ছেলে মেয়েকে আমার সাথে মিশতে দিতেন না।
তারার কথাগুলো শুনে আকাশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,আমাদের দেশে এই ব্যপার গুলোকে অনেক বাজে ভাবে দেখা হয় কিন্তু কেউ এটা চিন্তা করে না মনের অমিল নিয়ে একসাথে থেকেই বা কী হবে।তার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো।আর ডিভোর্সি বাবা মায়ের সন্তানকে যেভাবে দেখা হয় এটার কোনো মানে নেই আসলে।তুমি জানো শুকতারা তুমি কত মিষ্টি একটা মেয়ে?তোমার এতটুকু জীবনে অনেক কিছুই দেখেছো তুমি,অনেক কষ্ট জমে আছে তোমার মনে তবুও বাইরে থেকে কাউকে সেটা বুঝতে দাও না ।সব সময় নিজের কষ্ট ভুলে আশেপাশের লোকজনদের হাসিমুখে ভালো রাখার চেষ্টা করো।
তোমাকে যদি কেউ চিনতে না পেরে খারাপ কথা বলে সেটার জন্য তুমি দায়ী নও, দায়ী যে খারাপ কথা বলেছে তার মানসিকতা।তাই এসব ভেবে একদম মন খারাপ করবে না ঠিক আছে?আর আজকের পর থেকে জেনে রেখো তোমার এমন একটা বন্ধু আছে যে কখনও কোনো পরিস্থিতিতেই তোমাকে ছেড়ে যাবে না।
আকাশের কথা শুনে তারা মুচকি হেসে বললো,চলুন এবার যাই আংকেল আন্টি হয়তো জেগে গেছেন ওনাদের রোজ চা বানিয়ে খাওয়াই আমি।
আকাশ অভিমানী গলায় বললো আমি যাবো না।
তারা অবাক হয়ে বললো, কেন?
–আপনি করে বললে তো আমি যাবো না।কী কথা হলো আমাদের, আমরা একে অপরকে তুমি করে বলবো।
তারা হেসে বললো,আচ্ছা চলো।
ঘরে ঢুকে তারা সোজা রান্নাঘরে চলে গেল।হালিমা বেগম চা বসিয়েছেন তারাকে দেখতে পেয়েও না দেখার ভান করে দাঁড়িয়ে রইলেন।তারা এগিয়ে গিয়ে বললো,আন্টি আমি চা বানিয়ে ঘরে দিয়ে আসবো আপনি যান।
হালিমা রুক্ষ গলায় বললেন,থাক আমি বানিয়ে নিতে পারবো।
তারা অবাক হয়ে বললো,আন্টি রোজ তো আমি আপনাদের চা বানাই আজ কী হলো আপনার?
হালিমা বেগম দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,আকাশের সাথে বাইরে কী করছিলে তুমি?
তারা ইতস্তত করে বললো,হাটছিলাম আন্টি বাগানে।
–কেন?
–আমি বাইরে হাটবো বলছিলাম উনি বললেন উনিও যাবেন তাই একসাথে হাটতে গিয়ে ছিলাম।আন্টি আমি কী ভুল কিছু করেছি?
–একটা ছেলের সাথে একা একা হাটাহাটির কী আছে? আবার বেহায়ার মতো বলছো ভুল কিছু করেছি নাকি!তুমি কী বাচ্চা মেয়ে,বুঝো না কিছু? একটা ছেলের সাথে একা একা ভোরবেলা যখন সবাই ঘুমিয়ে তখন সময় কাটানো যে খারাপ কাজ এটাও আমার বলে দিতে হবে।
তারা ছলছল চোখে কাঁপা গলায় বললো,আন্টি আমি তো শুধু ওনার সাথে হাটছিলাম।
হালিমা ধমক দিয়ে বললেন,নির্লজ্জ মেয়ে যাও এখান থেকে মুখে মুখে কথা বলবে না।
তারা এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে থেকে সোজা নিজের ঘরে চলে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লো।জন্মদিনের সকালেই এতো বাজে অপবাদ কপালে জুটলো তার এর থেকে হালিমা আন্টি যদি গলা টিপে মেরে ফেলতেন তাও হয়তো ভালো ছিল ।
চলবে…
লিখা: উম্মেহানি মিম
#নীল_আকাশের_শুকতারা ★
—————(১২তম পর্ব)
তারা এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে থেকে সোজা নিজের ঘরে চলে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লো।জন্মদিনের সকালেই এতো বাজে অপবাদ কপালে জুটলো তার, এর থেকে হালিমা আন্টি যদি গলা টিপে মেরে ফেলতেন তাও হয়তো ভালো ছিল। সকাল নয়টার দিকে নীরা তারার দরজায় নক করলো।তারা কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়ালই নেই।নীরার ডাকে কেঁপে উঠে ঘুম ভাঙলো তার।কেন যেন মনে হলো ভোরে হালিমা বেগমের কথাগুলো স্বপ্নে দেখেছে সে।কিন্তু যখনই আবার বুঝতে পারলো কিছুই স্বপ্ন ছিল না তখন আবার আধার নেমে এলো ওর মনে।তারা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।নীরাকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছে।তারা দরজা খুলতেই নীরা ভিতরে প্রবেশ করে বললো,কী ব্যপার তারা রানী কখন থেকে ডাকছি সাড়া দিচ্ছো না যে।
তারা হাতের উল্টো পিঠে চোখ কচলে বললো,আপু আসলে আমি ঘুমাচ্ছিলাম তো তাই তোমার ডাক শুনতে পাইনি।
–তুমি তো এতো বেলা করে ঘুমাও না প্রতিদিন নিচে গিয়ে দেখি রান্নাঘরে মায়ের সাথে নাস্তা বানাচ্ছো আজকে দেখতে না পেয়ে তোমার ঘরে এলাম।তোমার কী শরির খারাপ?
–না আপু আসলে ঘুম ছাড়ছিল না।আন্টি একা একা নাস্তা বানাচ্ছে তাই না, আমিও না ঘুমিয়ে গেলে আর কিছুতে হুশ থাকে না।চলো আপু নিচে যাই।
নীরা তারার গাল টেনে বললো,তাড়াহুড়ো করতে হবে না তুমি আস্তে আস্তে ফ্রেশ হয়ে আসো আমি যাচ্ছি।
তারা মাথা নাড়ালো।
হাত মুখ ধুয়ে তারা রান্নাঘরে আসতেই দেখলো হালিমা বেগম প্রায় নাস্তা বানিয়ে ফেলেছেন।তারা ভয়ে ভয়ে বললো, কিছু বাকি থাকলে আমি করে দেই আন্টি।
হালিমা বেগম তারার দিকে না তাকিয়েই নরম গলায় বললেন,তোমাকে কিছু করতে হবে না আমি করে নিয়েছি।নীরাকে ডেকে বলো নীল আর ওর বাবাকে ডাকতে।আমি আকাশদের ডেকে আনছি।
তারা নীরাকে ডাকতে চলে যাচ্ছিলো হালিমা বেগম পেছন থেকে ডাকলেন।তারা দাঁড়ালো।হালিমা এগিয়ে এসে তারার সামনে দাঁড়ালেন।তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,ভোরে তোমাকে যে কথাগুলো বলে ছিলাম তার জন্য আমার অনেক খারাপ লাগছে তারা।আমি এই কয়দিনে এটুকু বুঝতে পেরেছি তুমি আর যাই হোক স্বভাব-চরিত্রে খারাপ না।সকালে তোমাকে আর আকাশকে ঘরে ঢুকতে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল তারও অবশ্য একটা কারণ আছে।আমি তো একজন মা তাই সন্তানের ভালোর জন্যই আমরা মায়েরা বকাবকি করি।শাসন করি।তুমি কিছু মনে করো না।
হালিমা বেগমের কথা শুনে তারার চোখের কোনে জল জমে উঠলো।এই জল কষ্টের না আনন্দের।তারা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো,আন্টি আমি কিছু মনে করিনি।আপনি একশো বার আমাকে শাসন করতে পারেন।
হালিমা মাথা নিচু করে বললেন,শাসন করতে পারি কিন্তু অপবাদ দিতে পারি না মা। তোমাকে এভাবে কথা শুনিয়ে আমি শান্তি পাচ্ছিলাম না।
তারা হালিমা বেগমের হাতদুটো আলতো করে ধরে বললো, আন্টি আমি সব ভুলে গেছি এসব বলে আপনি আর নিজেকে এবং আমাকে ছোট করবেন না।
হালিমা পরম মমতায় তারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
নীরা তখন রান্নাঘরে প্রবেশ করলো।তারাকে আর হালিমা বেগমকে এভাবে দেখতে পেয়ে মায়ের গা ঘেসে দাঁড়িয়ে বললো,সকাল সকাল তারাকে এতো আদর করছো কেন মা?
হালিমা বেগম মুচকি হেসে বললেন,তোর হিংসা হচ্ছে বুঝি?
নীরা ঠোঁট বাকিয়ে বললো,এই মিষ্টি মেয়েটার সাথে হিংসা করা যায় না মা।তুমি যদি আমার চেয়ে ওকে বেশি ভালোবাসো তবুও আমার হিংসা হবে না কিন্তু যদি দেখি ভাইয়াকে আমার চেয়ে একটু বেশি ভালোবাসো তাহলে কিন্তু খবর আছে।
হালিমা বেগম নাস্তা গুলো ট্রেতে সাজাতে সাজাতে বললেন,নীল জানে তুই যে তারাকে ওর থেকে বেশি ভালোবাসিস?
নীরা এবার চোখ বড় বড় করে বললো,আমার ঘাড়ে কয়টা মন্ডু আছে মা যে তোমার রাগী ছেলেকে এসব জানাতে যাবো।কথাটা বলে নীরা আর তারা একসাথে হেসে উঠলো।হালিমা বেগমও নিঃশব্দে হাসলেন।
এক চিলতে সূর্যের আলো কোয়াশার আবরণ পেরিয়ে জানালা দিয়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করেছে।চকচকে রোদ আর তিন নারীর হাসি একসাথে মিশে অদ্ভুত এক মায়ার সৃষ্টি হয়েছে রান্নাঘর জোরে।
দিনটা তারার আর খারাপ কাটলো না।আতিয়া অন্য দিনের মতো তারাকে দেখলেই অদ্ভুত আচরণ করলেন না,যদিও তারা আকাশ, মেঘ বা আতিয়ার আশেপাশে না যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টাই করেছে। হালিমা বেগম সবচেয়ে বেশি আদর যেন আজকেই করলেন।আরাফাত সাহেব কোর্টে যাওয়ার আগে তারাকে ডেকে নিয়ে একটা চকলেট দিয়ে গেলেন কে যেন দিয়েছে ওনাকে। তারার চকলেট খুব পছন্দ সেটা আরাফাত সাহেব জানেন ভেবে তারার ভালো লাগলো।সেই চকলেট তারা নীরার সাথে ভাগ করে খেলো।উপরে যেতে বা নীচে আসতে কয়েক বার নীলের সাথে এক মুহুর্তের জন্য তারার দেখা হলেও কোনো ঝামেলা হয়নি।কথাও হয়নি এটার জন্যই তারার আজকের দিনটাকে নিঃসন্দেহে ভালো বলা যায়।তারা এতটুকুতেই সন্তুষ্ট।তবুও বার বার বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছিল।ভাবছিল একবার হয়তো ফোন দিয়ে তারার সাথে কথা বলতে চাইবেন কিন্তু ফোন এলো না।তারা মনে মনে এটা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিলো, হয়তো আরাফাত সাহেবের কাছে ফোন এসেছে উনি বলেছেন বাসায় এসে কথা বলিয়ে দিবেন।
প্রতিদিন আরাফাত সাহেব বেশ রাত করে ফিরেন কিন্তু আজ সন্ধার আগে আগেই ফিরে এলেন।
নীল আর আকাশ অনেকক্ষণ যাবত বাইরে ছিল আরাফাত সাহেব আসার কিছুক্ষণ পরেই দুজন ফিরে এলো।তারা নিজের ঘরে বসে আছে নীরা পেছন থেকে গিয়ে ডাকতেই তারা চমকে উঠে বুকে থু থু দিলো।নীরা হেসে বললো, এতটুকুতেই ভয় পেয়ে গেলে পাগলী মেয়ে।
তারা হেসে বললো,আসলে আপু অন্যমনস্ক ছিলাম তো তাই ভয় পেয়ে গেছি।
নীরা ভ্রু কুচকে বললো, অন্যমনস্ক হয়ে কার চিন্তা করছিলে?
তারা দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বললো,কারোর না আপু।
তারা খেয়াল করলো নীরা বেগুনি রঙের একটা তাতের শাড়ি পরেছে।হালকা একটু সেজেছেও।কী অপূর্ব দেখাচ্ছে মেয়েটাকে।
তারা মুগ্ধ চোখে নীরার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,আপু শাড়ি পরে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।শাড়ি পরেছো কেন কোথাও যাবে?
নীরা এবার মুচকি হেসে বললো,হুম, আমার ঘরে চলো সব বলছি।
তারা কোনো প্রশ্ন না করেই নীরার ঘরে গেল।
নীরা ঘরে এসেই বিছানায় রাখা সোনালী পার কালো শাড়ি হাতে নিয়ে বললো চটপট এই শাড়িটা পরে ফেলো তো।
তারা অবাক হয়ে বললো,আমি শাড়ি পরবো কেন আপু?
–এই যে আমি পরেছি,তুমিও পরবে।
–আপু আমি শাড়ি পরতে পারি না আর আমি এসব কোনোদিনও পরিনি।কেন আজ হঠাৎ শাড়ি পরবো বলো তো?
–আজকে চুড়ই ভাতি খাবো আর আমরা যতবার চুড়ই ভাতি খাই,এভাবে শাড়ি পরি সাজি, ছবি তুলি,মজা করি।তাছাড়া আমি একটু আগে মাকে সুন্দর একটা শাড়ি পরিয়েছি।ফুপি তো এমনিতেই ভালো শাড়ি পরে সেজেগুজে থাকে আজকেও পরেছে।এখন আমিও পরলাম।আর তুমি যদি না পরো আমি কিন্তু শাড়ি খুলে ফেলবো।
তারা কাচুমাচু করে বললো, এ কেমন কথা আপু?তোমাকে কী সুন্দর লাগছে শাড়ি পরে।আমার জন্য তুমি শাড়ি খুলবে কেন।আমি পরতে পারি না বিশ্বাস করো।
-তারা তোমাকেও শাড়ি পরলে সুন্দর লাগবে বিশ্বাস করো, আর পরতে না পারলে কোনো সমস্যা নেই আমি পরিয়ে দিচ্ছি।আর শুনো শাড়িটা কিন্তু আমার না এটা মায়ের ভাজ না খোলা শাড়ি আর আমার পরনেরটাও মায়েরই।মা শাড়ি দুটো দিয়ে আমাকে আর তোমাকে পরতে বলেছে। এখন তুমি ভেবে বলো মায়ের শাড়িটা ফিরিয়ে দিয়ে আসবো আর নিজেরটাও খুলে দিয়ে আসবো নাকি তুমি শাড়ি পরবে?
তারা মাথা নিচু করে বললো, ঠিক আছে পরিয়ে দাও।
নীরা ঠোঁট ভ্রু কুচকে বললো, এভাবে মুখ গোমড়া করে বললে তো হবে না হেসে বলো।
নীরার কথা শুনে তারা ফিক করে হেসে দিলো।তারপর বললো,পরিয়ে দাও।
নীরা তারাকে শাড়ি পরাতে গিয়ে পুরোটাই হাঁপিয়ে গেল কারণ তারা সত্যিই শাড়ি পরার প ও জানে না।কিন্তু শাড়ি পরিয়ে যখন তারার দিকে তাকালো নীরার যেন চোখ সরাতেই ইচ্ছে হচ্ছিলো না।মেয়েটাকে শাড়িতে এতো মায়াবী দেখাচ্ছে।নীরা জোর করে তারাকে কাজল আর হালকা লিপস্টিক পরিয়ে কানে ছোট ঝুমকো পরিয়ে দিলো।এতেই যেন অপূর্ব দেখাচ্ছে তারাকে।রাতের আকাশের মতোই কালো শাড়িতে তারার মতোই ঝলকাচ্ছে তারার মুখটা।নীরা তারার চুল আঁচড়ে দিতে গিয়ে খেয়াল করলো ওর চুল কোমর পেরিয়ে নিচে নেমে গেছে।সুন্দর ঝলমলে চুল। নীরা অবাক হয়ে বললো,তারা তোমার চুল গুলো ভিষণ সুন্দর।আমি খেয়ালই করিনি সারাক্ষণ মাথায় ওড়না জড়িয়ে রাখো।
তারা মুচকি হাসলো।নীরা তারার চুল গুলো আঁচড়ে খুলে দিয়ে ওকে আয়নার সামনে নিয়ে এসে বললো,খোলা চুলে শাড়ি পরা তারাকে কেমন মায়াবতী লাগছে একটু দেখো।
তারা আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে যেন চিনতে পারছে না, এই প্রথম বার তারা শাড়ি পরেছে।কাজল বা লিপস্টিকও এই প্রথমবার পরেছে।নিজেকে কেমন যেন বড় দেখতে লাগছে।তারা ভাবছে সে সত্যিই বড় হয়ে গেছে।অচেনা একটা মেয়ে মনে হচ্ছে নিজেকে।
নীরা এবার একটা কাপড় দিয়ে তারার চোখদুটো বেধে দিলো।তারা আচমকা চোখ বাধায় অবাক হয়ে বললো,আপু চোখ বাধলে কেন?
নীরা হাসি চেপে বললো,মা বলেছে শাড়ি পরে দেখবে তাই মায়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছি।
–কিন্তু চোখ বেধে নিয়ে যাচ্ছো কেন?
–তুমি তো শাড়ি পরতে চাইছিলেই না তো মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার সময় যদি কারোর সাথে দেখা হয়ে যায় তোমার তো লজ্জা লাগবে তাই চোখ বাধলাম।
তারার অবাক হওয়ার অনুভূতি একটুও কমলো না।তবুও নীরা যখন ভেবেছে হয়তো সত্যিই তারার কারোর সামনে পড়লে লজ্জা লাগবে চোখ বেধে রাখাই ভালো।
নীরা তারাকে হাত ধরে আস্তে আস্তে ছাদে নিয়ে গেল। তারা জিজ্ঞেস করলো আপু সিড়ি বেয়ে কোথায় যাচ্ছি আমরা?
–মা তো ছাদে মায়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছি।
তারা আর কোনো প্রশ্ন করলো না।
নীরা ছাদে নিয়ে তারার চোখের বাধন খুলতে খুলতে মুখে গান খাওয়া শুরু করলো,হ্যাপি বার্থডে টু ইউ..হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার তারা হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
তারা চোখ মেলে তাকিয়েই চমকে উঠলো।
ছাদ জোরে মোমবাতি, বেলুন অসম্ভব সুন্দর ডেকোরেশন করা।একটা জায়গায় বড় করে লেখা শুভ জন্মদিন শুকতারা।একটা বেশ বড় চকলেট কেক।
আরাফাত সাহেব,হালিমা বেগম, আকাশ,মেঘ, এমন কী আতিয়াও উপস্থিত।
তারাকে দেখতে পেয়ে আরাফাত সাহেব এগিয়ে এসে বললেন,শুভ জন্মদিন শুকতারা মা।
হালিমাও বললেন শুভ জন্মদিন তারা।আগে যদি জানতাম তোমার জন্য নতুন জামার ব্যবস্থা করতাম কিছুক্ষণ আগে নীরা বললো, আজকে তোমার জন্মদিন এর মধ্যে নতুন জামা আনা তো সম্ভব না তাই আমার ভাজ না খোলা শাড়িটা দিলাম তোমাকে।খুব সুন্দর লাগছে মা কারোর নজর না লাগুক।
হালিমা কথা শেষ করে তারার মুখটা টেনে নিয়ে ওর কপালে চুমু খেলেন।
নীরা এবার হেসে বললো,তারার জন্মদিন আর শাড়ি পরলাম আমি নাহলে তো ওকে পরাতেই পারতাম না।
তারা সব কিছু দেখে এতোটাই চমকেছে যে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।কোন রকমে নিজেকে সামলে বললো,অনেক ধন্যবাদ আংকেল আন্টি, এতো কিছুর প্রয়োজন ছিল না।
তারা মনে মনে ভাবলো,আজ আমার জন্মদিন এই কথাটা তো কারোর জানার কথা না তবে কী আংকেল এতোসব আয়োজন করলেন!
তারার মনটা খুশিতে ভরে উঠলো।এই বাসার মানুষ গুলো সত্যি ওর জন্য কত ভাবে।
আরাফাত তারাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,মা তোমার বাবা-মা ফোন করে ছিলেন একবার ওদের সাথে কথা বলে নাও তারপর কেক কাটবে।
তারা ফোন নিয়ে ছাদের এক পাশে সরে গেল।
আকাশ কেকের পাশের মোমবাতি গুলো জ্বালাতে জ্বালাতে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে তারার দিকে।এই মেয়েটার চেহারায় এতো মায়া কেন কে জানে।এর আগে তো আর কোনো মেয়ের জন্য এতোটা মায়া কাজ করে নি আকাশের তবে আজ কেন এমন লাগছে।সকাল পর্যন্ত যে মেয়েটাকে বাচ্চা বাচ্চা লাগছিল এখন সেরকম লাগছে না শাড়ি পরে এতোটা বদলে গেছে মেয়েটা যে ওর থেকে চোখই সরানো যাচ্ছে না।আনমনে তারার দিকে তাকিয়ে থেকে কখন মোমবাতির আগুনে হাত দিয়ে ফেলেছে আকাশের খেয়ালই নেই,আগুনের তাপ হাতে লাগতেই আর্তনাদ করে উঠলো। নীরা কাছে থাকায় এগিয়ে এসে বললো,কী করছিলে আকাশ ভাই একটু সাবধানে তো জ্বালাও, হাত পুরিয়ে ফেলবে নাকি?
আকাশের হুশ এলো হাতে ফু দিতে দিতে বললো,অসাবধানে হাত আগুনে লেগে গেছে অল্প একটু লেগেছে।আচ্ছা নীরা নীলকে কেন দেখতে পাচ্ছি না গেল কোথায় সে?
–ভাইয়াকে আর পাওয়া যাবে কী না সন্দেহ আছে এমনিতেই যেটুকু করেছে সেটাই অনেক।
–আর পাওয়া যাবে না কেন নীলই তো ডেকোরেশনে আমাদের হেল্প করলো।ও ছাড়া আমি একা একা এসব করতে পারতামই না।মাকেও তো বুঝালো যে মেয়েটার বাবা মা কেউ কাছে নেই আমরা এটুকু না করলে হয়তো কষ্ট পাবে।আর এখন থাকবে না?
–ভাইয়ার মুড কখন কী হয় তা তো বুঝি না কিন্তু তুমি বলো তো আজকে যে তারার জন্মদিন তুমি জানলে কীভাবে? সেই সকাল থেকে প্রশ্ন করছি বলছো না কিছুই।আমার তো প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি কিন্তু যখন বাবা এসে বললো আজ ওর জন্মদিন তখন নিশ্চিত হলাম।তারা তোমাকে বলেছিল?
–তোর মনে হয় শুকতারা নিজের জন্মদিনের কথা কাউকে জানাতে চাইবে?
–না তা মনে হয় না, সে জন্যই তো ভাবছি কীভাবে জানলে।
–শুকতারা ভোরে যখন জেগেছিল তখন ড্রয়িং রুমের জানালায় কুয়াশা জমে ঝাপসা হয়ে ছিল আর সেখানে সে আঙুল দিয়ে ‘শুভ জন্মদিন শুকতারা’ লিখে সেটাই আমি দেখে ছিলাম পেছন থেকে তবে ওকে বুঝতে দেইনি।তুই কিন্তু এটা ওকে বলবি না।
আকাশের কথা শুনে নীরা অবাক হয়ে বললো,তুমি আসলেই এতো কিছু খেয়াল করো মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যাই।
আকাশ হেসে বললো,এবার নীলকে ডেকে নিয়ে আয়।
নীরা আকাশের কাছ থেকে সরে এসে মেঘকে বললো,যা তো মেঘ ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আয়।
মেঘ ভ্রু কুচকে বললো,তোকে বলেছে ভাইয়া তুই আমাকে বলছিস কেন?
নীরা রেগে বললো,তুই জীবনে একটা কাজ করবি না।
মেঘ বিরক্ত হয়ে বললো,আচ্ছা যাচ্ছি।
মেঘ চলে যাবে নীরা পেছন থেকে ডাকলো,শুনে যা।ভাইয়াকে বলবি বাবা ডাকছে, আমার কথা বলবি না।
–ইউ আর অ্যা লায়ার!
–থাম তো তুই এখানে লায়ারের কী আছে আমার কথা বললে ভাইয়া আসবে না চুপচাপ গিয়ে বল।
মেঘ চলে গেল নীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে,ভাইয়া আসবে তো!না আসলে অবশ্য কিছু না তারা তো চিনেই ওকে তবুও হয়তো মেয়েটা ভাববে ভাইয়া ওকে পছন্দ করে না সেটা আজকের দিনে না ভাবালেই হয়তো ভালো ছিল।
তারক ফোনে বাবা- মায়ের সাথে কয়েক মিনিট কথা বলে এলো।নতুন কোনো কথা হয়নি দুজনেই শুভ জন্মদিন বলেছেন। এটুকুতেই তারার মন ভালো হয়ে গেছে।
নীরা তারাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এসে বললো,বার্থডে গার্ল আসো ছবি তুলি একসাথে।
তারা নীরার সাথে ছবি তুললো।নীল তখনই ছাদে এলো।ওর মুখটা দেখে মনে হচ্ছে মেঘ জোর করে নিয়ে এসেছে।মেঘ এসে নীরাকে বললো,আমি মিথ্যে বলিনি নীল ভাইয়াকে, সত্যি বলেই এনেছি।যদিও আসতে চায়নি ফোর্স করতে হয়েছে।
নীরা ইশারায় বললো মেঘকে চুপ করতে।
তারপর তারাকে নিয়ে গিয়ে সবাই মিলে একসাথে কেক কাটলো।
নীরা নীলকে জোর করেও কেক কাটতে নিতে যেতে পারে নি।নীল খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।তারার দিকে একবারও তাকাচ্ছে না কেন যেন মনে হচ্ছে তাকালেই মায়ায় পড়ে যাবে। নীল মায়ায় পড়তে চায় না, মোটেও না।
তারা নিচে নেমে এসে নিজের ঘরে গেল খুব ক্লান্ত লাগছে শাড়িটা খুলে ফেললে হয়তো ভালো লাগবে।
ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো সে।তারপর সবার দেয়া উপহার গুলো বিছানায় রাখতে যাবে খেয়াল করলো বিছানায় একটা প্যাকেট আর সাদা গোলাপের একটা তোরা রাখা।তারার সাদা গোলাপ ভিষণ পছন্দ কিন্তু এখানে কে রাখলো! তারা প্যাকেটটা হাতে নিয়ে খুলে ফেললো একটা বড় চকলেট বক্স।তারা খেয়াল করলো ফুলের সাথে একটা চিরকুটও রয়েছে।সে দ্রুত চিরকুটটা হাতে নিলো।যেটাতে লেখা..
চলবে…
লিখা: উম্মেহানি মিম