#নীল_আকাশের_শুকতারা,২০,২১
(পর্ব- ২০)
আকাশ ঢোক গিলে এক নিঃশ্বাসে বলা শুরু করলো,আমি তারাকে খুব পছন্দ করি সবার মতামত নিয়ে আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।তারারও এই বিয়েতে কোনো অমত নেই।
আকাশের কথা মাত্র নীরার বুক ধুকপুক এক মুহুর্তে গায়েব হয়ে গেল ঠিকই কিন্তু হৃদপিণ্ড স্তব্ধ হয়ে গেল।কেউ যেন কানে কানে বলছে নিঃশ্বাস নিবি না নীরা।দম বন্ধ হয়ে এখনই প্রাণ ত্যাগ কর।কেউ যেন ভিতর থেকে কলিজাটা ছিড়ে বের করে দিচ্ছে।
অথচ নীরার চোখদুটো শুকনো।আকাশের কথাটা বিশ্বাসই করতে পারছে না ওর মন।
নীল মুহুর্তে উঠে দাঁড়ালো।শরিরের রক্ত হিম হয়ে গেছে তার।আকাশ তারাকে বিয়ে করতে চায় তাও আবার বলছে তারার এই বিয়েতে অমত নেই।
মানে আকাশের সাথে তারার সেরকম কথাবার্তা হয়ে গেছে অথচ তাকে কিছুই জানায় নি।তাহলে বিয়ে করতে চাই না বা ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না এসব কিছু ওর শুধুমাত্র নাটক ছিল।নীলের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার ভালোবাসা নিয়ে মজা করেছে সে।নীলের মাথার ভিতরটা আস্তে আস্তে ফাঁকা হয়ে যেতে লাগলো।তারাকে নিয়ে এই ঘৃণিত কথা গুলো চিন্তা করতেও কষ্ট হচ্ছে তার।
হালিমা ততক্ষণে আতিয়ার হাতটা ছেড়ে দিয়েছেন।প্রচন্ড ভয়ার্ত চোখে নীরার দিকে তাকিয়ে রইলেন। সঙ্গে সঙ্গে আতিয়া চেঁচিয়ে উঠলেন,কী বললি তুই ওই মা-বাপহীন আশ্রিতা, গাঁয়ে পড়া মেয়েটাকে বিয়ে করবি তোর এতো বড় সাহস।এর জন্যই তোকে আমি দেশে নিয়ে এসেছিলাম?
আকাশ অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,মা তুমি এভাবে কেন বলছো?শুকতারা খারাপ কীসে?ওর বাবা মায়ের সংসার হয়তো টিকেনি কিন্তু সে তো মা বাবাহীন না।তুমি নিজেও জানো সে কতটা ভালো মেয়ে।
আতিয়ার গলা আরও বেশি চওড়া হলো,তুই আর একটা কথাও বলবি না।কোন মেয়ে খারাপ কোন মেয়ে ভালো সেটার বিচার আমি করবো।আমি তো ভাবতেও পারিনি তোর পছন্দ এতো খারাপ।আমি ভেবে ছিলাম আমার পছন্দই তোর পছন্দ।সে জন্য কখনও তোকে আলাদা করে কিছু বলিনি।কিন্তু আজ বলছি তোর বিয়ে আমি আমার পছন্দের মেয়ের সাথেই দিবো।
আকাশ অসহায় চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,মা সারা জীবন আমি তোমার পছন্দকে সম্মান করেছি।তোমার ইচ্ছের গুরুত্ব দিয়েছি।তুমি যেটা চেয়েছো সেটাই করেছি।আজ প্রথমবার তুমি আমার পছন্দের একটুও মর্যাদা দিবে না?
আকাশ এবার নীল আর নীরাকে উদ্দেশ্য করে বললো,নীল, নীরা তোরা অন্তত মাকে বুঝিয়ে বল।নীরা তুই তো জানিস সবটা,আর কেউ না বুঝলেও তুই আমার আর তারার সাথে থাকবি এটা আমি জানি।তারা কেমন মেয়ে তোর থেকে ভালো কেউ জানে না প্লিজ মাকে বুঝা।
নীরার চোখদুটো এবার আর কোনো বাধ মানলো না, দু-ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো ওর চোখ থেকে।মুখ ঘুরিয়ে চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে যন্ত্রের মতো বসার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
হালিমাও মেয়ের পেছন পেছন বেরিয়ে গেলেন।
আরাফাত সাহেব এক দৃষ্টিতে মেঝেতে তাকিয়ে আছেন, কী ঘটছে কিছুই তিনি বুঝতে পারছেন না।
ছোট বোন অনেক আগেই আদর করে ওনার একমাত্র মেয়েকে বউ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
নিজেদের মধ্যে আত্মীয়তা করার ইচ্ছে না থাকলেও বোনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন নি।
অথচ আজ তারই ছেলে অন্য কাউকে বিয়ে করবে বলছে।
আতিয়া নীরার চলে যাওয়ার দিকে লক্ষ করে হঠাৎ করে কেঁদে উঠলেন,আর কান্নামাখা কন্ঠে বললেন,তুই আমাকে কোথায় এনে দাঁড় করালি আকাশ, আমি আমার ভাইজির সামনে কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবো।
আকাশের চোখেমুখে বিস্ময় ফুটে উঠলো,অবাক হয়ে বললো,ভাইজির সামনে কোন মুখে দাঁড়াবে এর মানে কী মা?
নীল এক কোনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আকাশের এই কথাটা শুনা মাত্র ওর কাছে এসে দাঁড়িয়ে রুক্ষ গলায় বললো, কিছু বুঝতে পারছিস না?
আকাশ উঠে দাঁড়িয়ে বললো, আসলেই আমি কিছু বুঝতে পারছি না,নীরা কেন এভাবে উঠে চলে গেল আর মা কেন বলছে নীরার সামনে মুখ দেখাতে পারবে না।
নীল গর্জন করে উঠলো,নাটক করছিস?তুই জানতিস না নীরা তোকে পছন্দ করে?
আকাশের ভ্রু কুচকে এলো,ভাবতেই পারছে না নীল এসব কী বলছে।কাঁপা গলায় বললো,এসব কী ভুলভাল কথা বলছিস নীল?
–ভুলভাল না যা বলছি সত্য তুই আজ না মানলেও সত্য তো সত্যই থাকবে।কিন্তু সব জেনেশুনে তুই আমার বোনের সাথে এটা কীভাবে করতে পারলি আকাশ?
আকাশ নিজের কপালে হাত চেপে ধরে বললো,বিশ্বাস কর আমি এসবের কিছুই জানতাম না।আর নীরা যদি আমাকে পছন্দ করতো তবে কেন ও সেটা আমাকে বলেনি?
নীল ঝালালো কন্ঠে বললো,সব বলতে হবে কেন কিছু জিনিস তো নিজে থেকে বুঝতে হয়।নীরা তোকে পছন্দ করে এটা আমি বুঝতে পারলাম,মা -বাবা বুঝতে পারলো,ফুপি বুঝতে পারলো তবে তুই কেন বুঝবি না?
নীলের কথার পরেই আতিয়া বললেন,শুধু নীরা পছন্দ করে না আমিও পুত্রবধু হিসেবে ওকে পছন্দ করি।আর সেটা অনেক আগেই আমি ভাইজান আর ভাবীকে জানিয়েছি।আমি ছেলে-মেয়েদের এসব জানাতে চাইনি তবুও নীরা যদি কোনোভাবে এটা জেনে থাকে আর তোকে স্বামী হিসেবে পছন্দ করে থাকে তবে এটাই ওর উচিৎ ছিল।ভুল তো আমি করেছি নিজের ছেলের উপর ভরসা করে।ভেবে ছিলাম আমার ছেলে আমার কথার পরে আর কথা বলতে পারবে না, জানতাম না তো ছেলে আমার বড় হয়ে গেছে আর এতোটাই বড় যে মায়ের কথার গুরুত্ব আর ওর কাছে নেই।
আতিয়া কাঁদতে কাঁদতে উঠে চলে গেলেন।
আকাশ মাথায় হাত দিয়ে ধপাস করে সোফায় বসে পড়লো।মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে।সব কিছু যেন উলোটপালোট হয়ে গেল।
নীল হনহন করে বেরিয়ে গেল।
আরাফাত সাহেব উঠে এসে আকাশের মাথায় হাত দিয়ে প্রশ্ন করলেন,তুমি নিশ্চিত তারার এই বিয়েতে মত আছে?
আকাশ ছলছল চোখে তাকিয়ে উত্তর দিলো,হ্যাঁ মামা।
আরাফাত সাহেব চোখ বন্ধ করে বড় করে নিঃশ্বাস নিলেন।
বাইরে চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে তারা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো নীরা এদিকেই আসছে।কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে হেলেদুলে হাঁটছে।তারার মনে হলো নীরা অসাবধানে যেকোনো মুহুর্তে পড়ে যাবে তাই একটু চিন্তিত হয়েই এগিয়ে গেল।নীরার হাত ধরে প্রশ্ন করলো,আপু নিচে কী কথা হলো সব ফাইনাল তাই তো।কিন্তু তোমাকে এরকম দেখাচ্ছে কেন?
নীরা চোখ তুলে তাকাতেই তারা খেয়াল করলো ওর চোখ দুটো ভেজা।নীরা এক মুহুর্ত তারার দিকে তাকিয়ে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।তারা অবাক হয়ে পেছন পেছন দরজার সামনে অবধি গেল।
বুঝতেই পারছে না হঠাৎ নীরা এমন আচরণ কেন করছে।হালিমা বেগমকে বিচলিত হয়ে এদিকেই আসতে দেখে তারা খানিকটা এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করলো,আন্টি নীরা আপুর কী হয়েছে?
হালিমা কোনো জবাব দিলেন না মুখ, চোখ শক্ত করে নীরার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
নীরার দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে ডাকলেন,ও মা দরজা খুল।ও নীরা আমার কথাটা শুন,খুল বলছি।
তারা কিছু বুঝতে না পেরে নিচে কী হয়েছে বুঝার জন্য সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসতে গিয়ে সিড়িতে নীলের সাথে দেখা হলো।
তারার দিকে চোখাচোখি হতেই নীল দ্রুত চোখ নামিয়ে নিয়ে পাশ কেটে চলে যেতে লাগলো।
তারা সেখানেই দাঁড়িয়ে বললো,নিচে কী হয়েছে?
নীল পেছন ফিরে তাকালো,ওর চোখ থেকে যেন আগুন ঝড়ছে।
ফিরে এসে তারার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতে লজ্জা করছে না?
তারা অবাক হয়ে বললো,মানে,কী বলছেন এসব?
নীল আর জবাব না দিয়ে উপরে চলে গেল।তারাও পেছন পেছন গিয়ে বললো,কেন আপনি এটা বললেন,নিচে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করা কী আমার অপরাধ?
নীল নিঃশব্দে হাঁটছেই।
তারা আবার বললো,বলছেন না কেন কী হয়েছে?
নীল এবার থামলো।কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে তারাকে টানতে টানতে সোজা ছাদে নিয়ে গেল।
তারপর গর্জন করে বললো,ভালোই তো নাটক করতে পারো।ঠিকই তোমাকে চিনে ছিলাম আমি সেই প্রথম দিন।মাঝখানে কেন যে আমি তোমার মতো মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম কে জানে!তুমি এতোটা জঘন্য কল্পনাও করতে পারিনি আমি।ছিঃ ভয়ংকর ছলনাময়ী তুমি।
নীলের কথাগুলো তারার কাছে প্রচন্ড অদ্ভুত লাগলো,চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে বললো,
কী করেছি আমি?
–এখনও বুঝতে পারছো না কী করেছো?
–আসলেই আমি বুঝতে পারছি না আপনি এতো খারাপ খারাপ কথা কেন বলছেন আমাকে, আমি কী এমন করেছি?
তারার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।
নীলের কেমন যেন মায়া হলো তারার দিকে তাকিয়ে, তবুও নিজেকে শক্ত করে বললো,আকাশের সাথে চুটিয়ে প্রেম করছিলে আর আমার সাথে নাটক।ছেলেরা পেছন পেছন ঘুরলে খুব মজা লাগে তাই না?কারোর আবেগ নিয়ে খেলতে খুব মজা পাও।
তারা এবার চেঁচিয়ে উঠলো,যা তা ভুলভাল বলছেন তখন থেকে,আপনি আর একটাও খারাপ কথা বলবেন না আমাকে।
নীল এবার চিৎকার করে তারার হাত দুটি দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো,একদম চুপ,আমি যখন কথা বলবো তখন চুপচাপ শুনবে।আমি আমার কথার উপর কারোর কথা বলা পছন্দ করি না।শুনে রাখো তোমার জন্য আমি কষ্ট পাচ্ছি ঠিক আছে।পুড়িয়ে পুড়িয়ে আমাকে কয়লা বানাচ্ছো তাও ঠিক আছে কিন্তু যদি আমার বোন তোমার জন্য কষ্ট পায় তোমাকে আর ওই আকাশকে ছাড়বো না আমি।
নীল কথাগুলো বলে হনহন করে নিচে চলে গেল।তারা বুঝতেও পারছে না নীলের এমন অদ্ভুত কথাবার্তা বা খারাপ আচরণের কারণটা কী।
তারা ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
কিছুক্ষণ কেঁদে চোখ মুছে নিচে নেমে এলো।এই মুহুর্তে আকাশের সাথে কথা বলা জরুরি।আকাশ কী এমন বলেছে যে নীরা আর নীল এমন আচরণ করবে!
তারা আকাশের ঘরের সামনে যেতেই পেছন থেকে কারোর ঝাঝালো কন্ঠ শুনে পেছন ফিরে তাকালো..
চলবে..
লিখা: উম্মেহানি মিম
#নীল_আকাশের_শুকতারা
—————–(পর্ব-২১)
তারা আকাশের ঘরের সামনে যেতেই পেছন থেকে কারোর ঝাঝালো কন্ঠ শুনে পেছন ফিরে তাকালো।
আতিয়া অগ্নিমূর্তি ধারণ করে তাকিয়ে আছেন তারার দিকে।দাঁত কটমট করে বললেন,আমার ছেলের ঘরের সামনে ঘুরঘুর করছো কোন সাহসে?যা সর্বনাশ করার তা তো করে ফেলেছো।আমি প্রথম দিনই বুঝে ছিলাম তুমি সর্বনাশী মেয়ে।
লজ্জা শরম থাকলে এখনই বিদেয় হও এই বাসা থেকে।
তারা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আতিয়ার দিকে।বুঝতে পারছে না তার অপরাধ আসলে কী।
আতিয়ার কথা চলাকালীন হালিমা এসে দাঁড়ালেন, আতিয়াকে চুপ থাকতে অনুরোধ করলে আতিয়া আরও জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন,সব তোমার জন্য হয়েছে ভাবী তুমি আর ভাইজান এই মেয়েকে এতো লাই না দিলে আজ এতো বড় একটা ঘটনা করতে পারতো না।
তারা অসহায় চোখে হালিমার দিকে তাকিয়ে বললো,আন্টি দয়া করে বলবেন আমার অপরাধটা কী?ফুপি কেন আমাকে এভাবে কথা শুনাচ্ছেন।
আতিয়া গলা চওড়া করে বললেন,নির্লজ্জ মেয়ে আবার প্রশ্ন করছে কী করেছে, যেন কিছু জানে না।
আতিয়া তারা আর হালিমার থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে নীল সবটা শুনছে।তারাকে যা তা বলা হচ্ছে সেটা কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না ওর।তারপর তারার এতক্ষণে কিছু বুঝতে না পারার ব্যপারটাও ওর মনের মধ্যে এক ধরণের সন্দেহ জাগিয়ে দিচ্ছে।এমন যদি হয় তারা সত্যিই এসবের কিছুই জানে না! কিন্তু আকাশ যে বললো তারার ওর সাথে বিয়েতে মত আছে।
নীল আর কিছুই ভাবতে পারছে না খেয়াল করলো তারা চোখ মুছে উপরে চলে যাচ্ছে।
নীল তখন এগিয়ে এলো।আতিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ফুপি যদি তারা আর আকাশ দুজন দুজনকে পছন্দ করে বিয়ে করার কথা ভেবে থাকে তবে সেটা কোনো অন্যায় নয় আর যদিও অন্যায় হয় তবে সেই অন্যায়টা আকাশ করেছে তোমার অপছন্দের পাত্রি জানা সত্যেও তারাকে পছন্দ করে।তারা তো কোনো অন্যায় করেনি।ওরা যদি সত্যিই দুজন দুজনকে পছন্দ করে থাকে তবে তাদের আমি নিজে মিলিয়ে দিবো ফুপি।
আতিয়া অবাক চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে বললেন,নীল তুই কী ভুলে যাচ্ছিস নীরা তোর বোন।
–না ফুপি আমি এটা ভুলে যাচ্ছি না।আর ভুলে যাচ্ছি না বলেই বলতে পারছি জোর করে আর যাই হোক কারোর ভালোবাসা পাওয়া যায় না।মনের মিল যদি না থাকে, মন থেকে যদি দুজন দুজনকে ভালোই না বাসে তবে জোর করে এদের মিলিয়ে দেয়ার কোনো মানে হয় না।ধরে বেধে আজ আমরা আকাশের সাথে নীরার বিয়ে দিলে সে সুখী হবে না ফুপি।আমি আমার বোনকে জেনেশুনে এতোটা অসুখী জীবন উপহার দিতে পারবো না।
আকাশ কথাগুলো বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।
তারা চলে যেতে গিয়েও নীলের কথা শুনে থেমে গিয়েছিল।সিড়িতে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে নীলের কথাগুলো।তবে আকাশ ওকে পছন্দ করে আর সে ভেবেছে নীরাকে।তারার মাথাটা ঘুরে উঠলো।কটেজে সকাল বেলা নীরা ওকে বলেছিল সে আকাশকে ভালোবাসে।
আর যখন আকাশের সাথে কথা বললো তখন মনে হয়েছিল আকাশও নীরার ব্যপারেই বলছে।আর আকাশের কথার মাঝখানে নীরা ওকে ডেকে নিয়ে বলেছিল আকাশকে এখনই কিছু না বলতে সেই কথা শুনে এসে তারা আকাশের পুরো কথা শুনতেই পায়নি।শেষের কথাগুলো শুনে বুঝেছিল আকাশ নীরাকে ভালোবাসে সেটাই বলছে।আসলে তো সবটাই ছিল বুঝার ভুল।
তারা ভাবতেও পারছে না এতো বড় ভুল সে কীভাবে করলো।নীরার মনের অবস্থা চিন্তা করে তারার ভিতরটা বিষিয়ে উঠছে।
তারার ভিতরে ভিতরে অদ্ভুত রকমের যন্ত্রণা হচ্ছে।কীভাবে এই যন্ত্রণা নিবারন হবে সেটা তার জানা নেই।
তারা চোখ মুছে গুটি গুটি পায়ে উপরে নীরার ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো। নীরাকে ডাকার বা ওর সামবে দাঁড়ানোর সাহস হচ্ছে না।তারার চোখ থেকে অঝোরে জল গড়িয়ে পড়ছে।তারা নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে নীরার দরজার সামনে মেঝেতে বসে পড়লো।
সেই মুহুর্তে মাথার উপর কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে তারা দ্রুত পেছন ফিরে তাকালো।
আরাফাত সাহেব তারার মাথায় আলতো করে হাত বুলাচ্ছেন।
তারা চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো।আরাফাত সাহেব কিছুক্ষণ তারার দিকে নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলেন তারপর বললেন, মা একটু আমার ঘরে এসো কথা আছে।
তারা কোনো কথা না বলে আরাফাত সাহেবের পিছু পিছু ওনার ঘরে গেল।
তারা ঘরে প্রবেশ করতেই তিনি দরজা বন্ধ করলেন।তারপর নরম গলায় বললেন,তারা আমি যে প্রশ্নটা করবো নির্ভয়ে সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিবে।
তারা মাথা নাড়াতেই আরাফাত বলা শুরু করলেন,আকাশ আমার বোনের ছেলে আমার নিজের ছেলের থেকে কম না।ছেলেটাকে ছোটবেলা থেকেই চিনি আমি।খুবই ভালো একটা ছেলে।সেই ছেলেটা তোমাকে বিয়ে করবে ঠিক করেছে, বলেছে তোমারও অমত নেই।আমি জানি আকাশ কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি।তুমি খুব লক্ষ্মী একটা মেয়ে যার সংসারেই যাবে তার সংসারে আলো জ্বালিয়ে রাখবে।কিন্তু আমি একটা বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি, কিছুতেই হিসাব যেন মিলছে না।নীল,নীরা যেমন আমার ছেলে মেয়ে তুমি, আকাশ, মেঘও আমার সন্তান তুল্য।
বাবা হিসেবে আমি সব সন্তানের ভালো চাই বলেই তোমার মুখ থেকে শুনতে চাইছি তুমি কি সত্যিই আকাশকে পছন্দ করো?
আরাফাত সাহেবের কথা শুনে তারা কাচুমাচু করে বললো,না আংকেল। এসব সত্যি নয়।
আরাফাত সাহেবের ভ্রু কুচকে গেল,তিনি বললেন,বলেছি না নির্ভয়ে বলবে।
–আমি নির্ভয়েই বলছি আংকেল বিশ্বাস করুন সবটাই একটা ভুল বুঝাবুঝি ছাড়া কিছুই না।আমি আকাশকে সেরকমভাবে কখনই পছন্দ করি না।যখন জানলাম নীরা আপু ওনাকে পছন্দ করে তখন তো আমি ওদের দুজনকে একসাথে কত ভালো মানাবে সেটা ভেবেই খুশি ছিলাম। আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি উনি আমাকে পছন্দ করেন।
–তাহলে আকাশ যে বললো তোমার এই বিয়েতে অমত নেই।
তারা এবার আরাফাত সাহেবকে সব কথা খুলে বললো।
আরাফাত সাহেব সবটা শুনে কিছুক্ষণ নিঃশব্দে মেঝেতে তাকিয়ে রইলেন।তারপর গম্ভীর গলায় বললেন, ঠিক আছে তুমি এখন যাও আমি আকাশকে তোমার ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমাদের কথা বলা উচিৎ।
তারা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, আংকেল নীরা আপুর সাথে ওনার বিয়েটা হবে তো?
আরাফাত সাহেব কোনো জবাব না দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
তারা ওর ঘরে চলে গেল।আকাশ দরজায় নক করতেই তারা দ্রুত দরজা খুলে দিলো।
আকাশ ভিতরে প্রবেশ করে একটু অপ্রস্তুত গলায় বললো,কী থেকে কী হয়ে গেল শুকতারা বুঝতেই পারছি না।কিন্তু তুমি সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করবে না ভুলেও, আমি যেভাবেই হোক সবাইকে ম্যানেজ করে ফেলবো।মা যত যাই বলুক আমার খুশির জন্য সব করতে পারবে।আর নীরা!..আকাশ থেমে গিয়ে চোখ বন্ধ করলো, ওর চেহারায় চিন্তার ছাপ।
তারা বুঝতে পারছে না কীভাবে আকাশের ভুল ভাঙাবে।তবুও নিজেকে শক্ত করে বললো,আপনি একটা ভুলের রাজ্যে বসবাস করছেন।কটেজে ভোরবেলা আপনার সাথে আমার যা কথা হয়েছিল সবটাই ভুল বুঝাবুঝি।
আপনি তো বলে ছিলেন আপনি আমার বন্ধু কেন বন্ধুত্বের মতো এতো সুন্দর সম্পর্কের বাইরে এতসব ভাবতে গেলেন?
তারার কথা শুনে আকাশের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল,আমতা আমতা করে বললো,কী বলছো তুমি এসব?
তারা ঢোক গিলে বললো, কটেজে আপনি বলেছেন আমাকে পছন্দ করেন আর আমি ভেবেছি নীরা আপুকে।আমাদের কথার মাঝখানে নীরা আপু আমাকে ডাকতেই আমি আপনাকে কিছু না বলে দৌড়ে চলে যাই আপুর কাছে।ফিরে এসে শেষ কথাগুলো শুনে আমার মনে হয় আপনি নীরা আপুর কথা বলছেন কারণ নীরা আপু আমাকে বলেছিল সে আপনাকে ভালোবাসে।
সবটাই আমার বুঝার ভুল যার কারণে এতোকিছু হয়ে গেল।এবার দয়া করে এই ভুলটা ভাঙুক।আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন আর নীরা আপুকে নিয়ে ভাবুন।মেয়েটা আপনাকে অনেক ভালোবাসে যদি বিয়েটা না হয় আপু প্রচন্ড কষ্ট পাবে।
আকাশ অবিশ্বাস্যের চোখে কয়েক মিনিট তারার দিয়ে তাকিয়ে বললো,মজা করছো শুকতারা বা নীরা আমাকে পছন্দ করে বলে কিংবা মা তোমাকে পছন্দ করে না বলে মিথ্যে বলছো?
–এক বিন্দুও মিথ্যে বলছি না বিশ্বাস করুন।আমার আপনার প্রতি সেরকম কোনো অনুভূতিই নেই।আপনাকে তো আমি শুধুমাত্র বন্ধু ভেবেছি।আপনি খুব ভালো একটা মানুষ আর নীরা আপুও প্রচন্ড ভালো দুজনে একসাথে খুব ভালো থাকবেন আপনারা।দয়া করে নীরা আপুর সাথে কথা বলে সবটা ঠিকঠাক করে নিন।
আকাশ ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকালো।ওর চোখ ছলছল করছে।ভেতরটাতে কেউ যেন ছুড়ির আঘাতে আঘাতে ভরিয়ে তুলেছে। কাঁপা গলায় বললো, তুমি আমাকে পছন্দ করো না ইটস ওকে তারা। আমিই প্রচন্ড বোকা কী ভাবতে কী ভেবে ফেলেছি।সরি সবার সামনে তোমাকে ছোট করার জন্য।
তারা দৃষ্টি মেঝেতে রেখে বললো, ভুল যদি কারোর থেকে থাকে সেটা আমার।আপনার কোনো ভুল ছিল না।
আকাশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
তারার ঘর থেকে বেরিয়ে এ বাসার কারোর সামনে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না তবুও আরাফাত সাহেবকে খুঁজতে বের হলো।ওনার ঘরে হালিমা বেগর আর আরাফাত সাহেব দুজনেই বসে আছেন।ওনাদের বিষন্ন দেখাচ্ছে খুব। তারা কাচুমাচু করে দরজায় নক করলো।আরাফাত সাহেব তারাকে দেখতে পেয়ে বললেন, এসো।
তারা এগিয়ে গিয়ে বললো,নীরা আপু কী দরজা খুলেছিল আর?
আরাফাত সাহেব না সূচক মাথা নাড়ালেন।
হালিমা কপালে হাত চেপে রেখে বললেন,না জানি আমার মেয়েটা কোন অঘটন ঘটায়।আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না।এক ঘন্টা যাবত ডাকাডাকি করা পরও আমার মেয়ে জবাবও দিচ্ছে না কখন থেকে বলছি দরজা ভেঙে ফেলতে নীলটাও যে কোথায় বেরিয়ে গেল কে জানে।
আরাফাত সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন,মেয়েটাকে নিজেকে সামলে নিতে দাও কেন বিরক্ত করছো?নীরা আমার মেয়ে আমি জানি সে খারাপ কিছু করবে না অন্তত আমাদের কথা ভেবে হলেও।কিছুক্ষণ একা থাকুক তারপর আমি গিয়ে ডাকবো।
হালিমা চোখ মুছে বললেন,আর ছেলেটা কোথায় গেল সে খোঁজ তো করবে একবার,ঘড়িতে একটা বাজতে চললো।
আরাফাত হালিমার কথার কোনো জবাব না দিয়ে তারাকে বললেন, কোনো প্রয়োজনীয় কথা বলতে এসেছো?
তারা খেয়ালই করেনি রাত একটা বেজে যাচ্ছে সে তো বলতে এসেছিল কলিকে ফোন করতে যেন ওকে এসে নিয়ে যায়।কিন্তু এতো রাতে সেটা কীভাবে সম্ভব আর এই বাসার যে পরিস্থিতি সবার ভুল না ভাঙিয়ে এভাবে পালিয়ে যাওয়াও তো উচিৎ না।তারা ঢোক গিলে বললো, নীরা আপুর সাথে আমার একবার কথা বলা দরকার আংকেল।
আরাফাত সাহেব উঠে দাঁড়ালেন, তারাকে ইশারা করলেন সাথে আশার জন্য।হালিমাও পিছু পিছু গেলেন।আরাফাত সাহেব নীরার দরজার সামনে এসে শান্ত গলায় ডাকলেন,মা দরজাটা খুলবে একবার?
কয়েক মুহুর্ত পর ভেতর থেকে নীরার জবাব এলো,বাবা আমি ঘুমিয়ে পড়েছি কাল সকালে কথা হবে তোমরাও ঘুমাও।
নীরার কন্ঠস্বর কান্নাভেজা।
আরফাত সাহেব এক পলক তারার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
হালিমা বার বার চোখ মুছছেন এই দৃশ্য তারার কাছে খুবই কষ্টদায়ক মনে হচ্ছে।
তারা আলতো করে হালিমার হাতটা ধরলো,তারপর আস্তে করে বললো,কাঁদবেন না আন্টি সব ঠিক হয়ে যাবে, আমাকে ক্ষমা করে দিন।
হালিমা তারার দিকে ছলছল চোখে এক পলক তাকিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলেন।
তারা ভেবে ছিল হালিমা ওকে বকাবকি করবেন কিংবা কথা শুনাবেন কিন্তু উনি এভাবে ওকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ায় তারা প্রচন্ড চমকে গেল সাথে করে ওর বুক ভেঙে কান্না বেরিয়ে এলো।
ঘড়িতে রাত দুইটা বাজে নীল এখনও বাসায় ফিরে আসেনি।ওর ফোনটাও বাসায় রেখে গেছে তাই কেউ যোগাযোগও করতে পারছেন না।আরাফাত সাহেব বসার ঘরে পায়চারি করছেন আর সদর দরজায় বার বার তাকাচ্ছেন।হালিমা বার বার চোখ মুছছেন আর প্রশ্ন করছেন আমার ছেলেটা ফিরে আসছে না কেন বলো তো।
আতিয়া হালিমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন ওনারও দুঃশ্চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে।
মেঘ আর আকাশ দুজনেই বেরিয়েছে নীলের খুঁজে কিন্তু এখনও ওরা কিছু জানায়নি।
তারা অপরাধীর মতো বসার ঘরের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে।
নীলের জন্য প্রচন্ড চিন্তা হচ্ছে তার।আর কেউ না জানুক তারা তো জানে নীল আজ আকাশের কথা শুনে কতটা কষ্ট পেয়েছে।এক দিকে বোনের কষ্ট আরেক দিকের কষ্টটা তারা অনুভব করতে পারে না তবুও অনুমান করতে পারে হয়তো ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে ফেলার কষ্ট অনেক বেশি।
তারার বুকের ভিতরটা বিষিয়ে আছে।নীল যেন এখনই ফিরে আসে এই দোয়া করছে আল্লাহর কাছে।আরও আধা ঘন্টা পেরিয়ে গেল কিন্তু নীলের কোনো খোঁজ নেই আর আকাশ, মেঘও ফিরে এলো না।আতিয়া বেশ চিন্তিত হয়ে আকাশকে ফোন দিলেন, আকাশ ফোন রিসিভ করে বললো,এখনও নীলকে পায়নি ওরা।
এবার সবার ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে আরাফাত সাহেব নিজে প্রস্তুত হলেন নীলকে খুঁজতে যাওয়ার জন্য।হালিমা ওনাকে আটকে বললেন,এতো রাতে তুমি আর বেরিয়ে যেও না। চিন্তায় চিন্তায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে আর চিন্তাটা বাড়িও না দয়া করে।
তারার এবার অদ্ভুত রকমের যন্ত্রণা হচ্ছে মনে হচ্ছে।বুক ভেঙে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে।নিজেকে সামলাতে পারছে না কিছুতেই।নীলের জন্য এতো কষ্ট হচ্ছে কেন তার!অন্যরকম যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি হচ্ছে।
পৃথিবীতে এমন অনেক অনুভূতির জন্ম হয়েছে কিন্তু নাম করণ হয়নি।
নামহীন অনুভূতি গুলো বড্ড যন্ত্রণা দায়ক।
ঘড়ির কাটায় রাত তিনটা বেজে গেছে।আরাফাত সাহেব এবার হালিমা বেগমের কথাও শুনলেন না বেরিয়ে গেলেন নীলের খুঁজে।
কিছুক্ষণ পর আকাশকে আতিয়া ফোন দিলে আকাশ রিসিভ করলো না, বেশ কয়েক বার কল দিলে রিসিভ করে অস্থির গলায় বললো,মা একটা ছেলের বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছে তাকে গুরুতর অবস্থায় হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আমরা সেই হসপিটালে যাচ্ছি।মামাও আমাদের সাথে আছেন।দোয়া করো যেন ছেলেটা নীল না হয়।
ফোন লাউড স্পিকারে থাকায় আকাশের কথা শেষ হওয়ার আগেই আতিয়া আর হালিমা হাউমাউ করে কান্না শুরু করলেন।
তারার হৃদপিণ্ড যেন থমকে গেল।কোথা থেকে একটা শূন্যতা এসে যেন ওকে গ্রাস করতে লাগলো।এমন একটা যন্ত্রণা হচ্ছে ভিতর ভিতর যে যন্ত্রণার নাম জানা নেই তারার।মন থেকে চাইছে সে এক্সিডেন্ট করা ছেলেটা নীল না হোক।নীলের এক বিন্দু পরিমাণ কষ্টও না হোক।সে ফিরে আসুক।
কিন্তু যদি নীলের কিছু হয়ে যায় তবে!
তারা ডুকরে কেঁদে উঠলো।কান্নাভেজা কন্ঠে হালিমা বেগমকে বললো,আন্টি তাড়াতাড়ি অযু করে নামাজে বসেন।
হালিমা চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালেন। হালিমা আর আতিয়া অযু করে নিলেন।
তারা দৌড়ে গিয়ে অযু করে তিনটা জায়নামাজ নিয়ে এলো। জায়নামাজে বসে পড়লো।দু-রাকাত নফল নামাজ পড়ে সেজদায় কাঁদতে কাঁদতে নীলের জন্য দোয়া করলো।
আল্লাহ এই মানুষটাকে আমার জন্য হালাল করে দাও।এই মানুষটাকে আমার জন্য বাঁচিয়ে দাও।বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ওনার প্রাণভিক্ষা দাও।ওনাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো সবার কাছে।আর আমি কখনও ওনাকে ফিরিয়ে দিবো না।কখনও না।
আতিয়া তাসবি গুনছেন তখনই ওনার ফোনটা বেজে উঠলো।তিনি দ্রুত ফোনটা রিসিভ করলেন।
হালিমা আর তারা ভয়ার্ত চোখে আতিয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন।
এপাশ থেকে আতিয়া হ্যালো বলতেই,ওপাশ থেকে আকাশের কাঁপা গলা শুনে আতিয়া চেঁচিয়ে উঠলেন, কী হয়েছে আকাশ?
হালিমা আতিয়ার কাছ থেকে ফোনটা টেনে নিয়ে লাউড স্পিকারে দিলেন।আকাশ কান্না জড়িত কন্ঠে বললো,মা ছেলেটা নীলই ছিল।
হালিমা চিৎকার করে বললেন,আমার ছেলেটা বেঁচে আছে তো আকাশ?
ওপাশ থেকে আকাশের কান্না ভেসে এলো..
চলবে..
লিখা: উম্মেহানি মিম