Death line,Part: 05 last

0
3662

Death line,Part: 05 last
Writer: Abir Khan

আবির কথাটা শেষ করার আগেই বিদ্যুৎ গতিতে পশু মতো আকৃতি ধারণ করা কয়েকটা দানব এসে বলে,

– তাহলে তুই এখানে৷ আজ আর তোকে ছাড়ছি না৷ অনেক জ্বালিয়েছিস। তোদের দুইটাকে আজ মেরে রক্ত দিয়ে আমরা গোসল করবো।

তিশা পিছনে ঘুরে তাকানোর আগেই দানবগুলো আক্রমণ করে৷ আবির মুহূর্তের মধ্যে তিশাকে ওর পিছনে নিয়ে ওর হাত দিয়ে দানবটাকে থামায়। তিশা এই দৃশ্য দেখে ভয়ে হতভম্ব হয়ে যায়৷ ওর জীবনে ও এরকম কিছু দেখে নি। তিশার চোখ দিয়ে গলগল করে পানি পড়ছে। ও প্রচন্ড ভয়ে কাঁপছে। আবির ঘুরে একবার তিশার দিকে তাকায়। তিশা আবিরকে এভাবে দেখে কান্না আরো বেড়ে যায়৷ আবির শুধু একটা মুচকি হাসি দেয়৷ আর এরপরই শুরু হয় আসল ফাইট। আবির একটা লাফ দিয়ে দানবটার উপর ওঠে তার মাথাটা ধরে এক টানে ছিড়ে ফেলে। বাকি দানবগুলো এ দৃশ্য দেখে একসাথে আবিরের উপর হামলা করে৷ তিশা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে৷ কারণ ও ভাবে আবির বোধহয় এবার শেষ। কিন্তু আসলেই কি তাই? তিশাকে অবাক করে দিয়ে আবিরের দুই হাতের ভিতর থেকে ধারালো দুইটা তলোয়ার বের হয়ে আসে৷ তিশা স্তব্ধ হয়ে আছে৷ আবিরকে এখন প্রচন্ড শক্তিশালী লাগছে৷ আবির হাসতে হাসতে ওর তলোয়ার দিয়ে প্রতিটা দানবের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করছে। একে একে সব দানবগুলোকে মেরে ফেলে আবির। বেঁচে আছে শুধু সবচেয়ে বড়ো লিডারটা। ওদের মাঝে তুমুল ফাইট হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎই লিডারটা আচমকা একটা ধারালো ছুরি আবিরের হাত বরাবর মেরে ঢুকিয়ে দেয়৷ এই মারাত্মক দৃশ্য দেখে তিশা আর নিতে পারে না৷ ও ঠাস করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। ওর আর কিছু মনে নেই।

তিশা খুব অন্ধকার একটা জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করে। ওর খুব ভয় করছে। চারপাশ একদম অন্ধকার। তিশা আবিরকে ডাকে, ওকে খুঁজে। কিন্তু পায় না। ও দ্রুত সামনে দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে তিশা হঠাৎ থেমে যায়। ও দেখে, সেই পশুর মতো দেখতে দানবগুলো আবিরকে ছিড়ে থুবড়ে খাবলে খাচ্ছে। তিশাকে দেখে তারা রক্তাক্ত মুখ নিয়ে যেই ওর দিকে তাকায়, ও ভয়ে জোড়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে। আর সাথে সাথে ওর জ্ঞান ফিরে আসে। ও তাকিয়ে দেখে আবির ওর পাশে বসে আছে। আবিরকে দেখে মনে হচ্ছে, যেন কিছুই হয় নি। তিশা হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। আবির কিছু না বলে তিশাকে ওর বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। তিশা আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। আবির ওর মাথার পিছনে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ আর বলছে,

– শান্ত হও। আর ভয় নেই। সব ঠিক আছে।

তিশা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। আবির ওকে সামনে এনে ওর ঠোঁটটাকে নিজের করে নেয়৷ ঘটনার আকস্মিকতায় তিশা ধাক্কা খায়। ফলে একটু আগে কি হয়েছে তা থেকে ও অনেকটা সরে এসে শান্ত হয়৷ আর আবিরকে ভালো দেখে ওর মনটাও শান্ত হয়। কিছুক্ষণ পর আবির ওকে ছেড়ে দিয়ে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিলে তিশা দ্রুত খেয়ে ফেলে। ও আশেপাশে ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে। আবির ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

– আর ভয় নেই এটা আমার বাসা।
~ আবির এগুলা কি? ওরা কারা ছিল? আর তুমি!
– আজই একটা প্রশ্ন করেছিলাম তোমাকে মনে আছে?

তিশা মনে করে দেখে। হ্যাঁ ওর মনে পড়েছে। তিশা আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ তার মানে তুমি সত্যিই আমাদের মতো সাধারণ কেউ না?
– হুম। আমি এ পৃথিবীর কেউ না। আমার পুরো শরীরটা একটা অস্ত্রের মতো।
~ আবির তুমি তাহলে কি?
– আমি? আমি কিলার। ডেভিলস কিলার৷ বেশ কয়েকশো বছর আগে পৃথিবীর বাইরে থেকে এসব পশু জাতীয় দানবগুলো এখানে এসেছে৷ তারা এতদিন লুকিয়ে ছিল পাতালে। গত ৫০ বছর যাবৎ তারা লোকালয়ে বের হয়েছে পৃথিবীকে ধ্বংস করার জন্য৷ আর তাদের দমনেই আমাদের আগমন।
~ কয়েকশো বছর! তাহলে তোমার বয়স এখন কত?
– ৬৫৬ বছর।

তিশা চোখ বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়ে। আর বিড়বিড় করে বলে,

~ আমি বোধহয় কোন স্বপ্ন দেখছি। এসব স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না৷ এগুলো কখনো বাস্তব হতে পারে না।
– তিশা..এটা বাস্তব। এই পুরো মহাজগৎ জুড়ে এখনো কোটি কোটি রহস্য আর অজানা অনেক কিছু আছে৷ যা তোমরা কিছুই জানো না৷ মাত্র একাংশ জানো। কখনো ব্ল্যাক হোলের নাম শুনেছো?
~ হ্যাঁ।
– সেখানে অনেক রহস্য, অনেক শক্তি লুকিয়ে আছে। তবে সেখানে সাধারণ মানুষের যাওয়া হয়তো কখনো সম্ভব না৷ আমরা সেই ব্ল্যাক হোলের ভিতরে থাকি।
~ আবির প্লিজ বলে দেও এসব মিথ্যে। আমি যে এগুলো আর নিতে পারছি না।
– শান্ত হও৷
~ কিভাবে শান্ত হবো আমি? তোমাকে আমার বয়সী ভেবেছিলাম। আর এখন বলছো তুমি আমার থেকে শতশত বছর বড়ো। কিভাবে সম্ভব!
– তা অবশ্য ঠিক। তবে এটাই সত্য।

তিশার মাথা লাটিমের ঘুরছে। ও আস্তে আস্তে বলে,

~ আবির এর শেষ কোথায়?
– খুব তাড়াতাড়ি। গত পঞ্চাশ বছরে আমরা অনেক শত্রুকে শেষ করেছি। আমাদের কাছে শত্রুর একটা ডেথ লাইন আছে৷ সেটা এখন শেষের পথে৷

তিশা আবিরের হাত ধরে বলে,

~ তোমার কিছু হবে নাতো?

আবির তিশার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর আচমকা হাসি দিয়ে বলে,

– আমার কি হবে? আমি আরো কয়েকশো বছর আছি এখনো৷ হাহা৷
~ সত্যি?
– হুম। সাথে তুমিও থাকবে৷
~ ধুর বোকা। সাধারণ মানুষ এত বছর বেঁচে থাকে না।
– কেন আমাদের বাবু হলে তুমিও আমার মতো হয়ে যাবে। ভাবছি ৫০/৬০ টা বাবু নিবো আমরা। হাহা
~ এইইই যাহ কি বলছো তুমি এসব! পাগল একটা।
– সত্যিই।
~ চুপ। আমার লজ্জা পাচ্ছে অনেক।
– আচ্ছা চুপ।
~ হুম। আচ্ছা তুমি আমার ভার্সিটিতে কেন ভর্তি হলে?
– তোমার জন্য।
~ আমার জন্য! (উঠে বসে)
– হুম। মনে আছে একদিন রাতের কথা? তুমি নাতাশাকে নিয়ে হেৃটে কোথায় যেন যাচ্ছিলে। হঠাৎই একজন বৃদ্ধ লোক অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। কেউ তার কাছে সাহায্যের জন্য যায় নি। কিন্তু তুমি অস্থির হয়ে লোকটাকে নিয়ে হাসপাতালে যাও। ঠিক সেদিনই আমার তোমাকে ভালো লাগে। আর একটা মজার কথা বলবো?
~ হুম।
– যে রিকশায় তুমি হাসপাতালে গিয়েছিলে সেটা আমিই চালাচ্ছিলাম।
~ তাহলে এরজন্যই আমরা এত তাড়াতাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলাম?
– হুম।
~ কিন্তু তখন তুমি তো অন্য রকম ছিলে।
– কারণ আমি আমার ইচ্ছা মতো রূপ বদলাতে পারি।
~ তাহলে তোমার আসল রূপ কি আবির?
– সেটা অজানাই থাক। আমার ইচ্ছা কি জানো, তোমার মতো সাধারণ মানুষ হয়ে এই পৃথিবীতে থাকবো। গত পঞ্চাশ বছরে আমি মানুষের জীবন দেখেছি। আমিও চাই আমার শেষ মুহূর্তটা আমার ভালবাসার মানুষের সাথে কাটাতে। কি থাকবে তো?
~ কখনো ভাবি নি জীবনটা এভাবে মোড় ঘুরাবে। তবে আমি খুশী তোমার মতো কাউকে পেয়ে। যার জন্য পুরো পৃথিবীর মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে৷
– জানো তিশা, আমি বাইরের শত্রুদের মারতে পারলেও তোমাদের মাঝে এই শত্রুদের আমি মারতে পারি না৷ জানি না হয়তো কোন একদিন এই তোমাদের জন্যই এই সুন্দর পৃথিবীটা শেষ হয়ে যাবে৷
~ এটা সত্য আবির৷ এমনটাই হবে একদিন।
– সে পর্যন্ত তোমার পাশে থাকতে চাই।
~ থেকো। এইইই আমি বাসায় যাবো। একটা ব্যাচেলর ছেলের কাছে আমি থাকতে চাই না৷ যদি কিছু করে বসো।
– হাহা। আচ্ছা আচ্ছা, চলো বাসায় দিয়ে আসি তোমাকে। তবে তার আগে তোমাকে একটু দেখতে দেও মন ভরে।
~ কেন আর বুঝি দেখা হবে না?
– কি জানি। হাহা।
~ একদম চুপ। কিচ্ছু হবে না তোমার।

আবির তিশাকে অনেকক্ষণ মন ভরে দেখে ওকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়। তিশা আবিরের ফ্ল্যাটটা ঘুরে ঘুরে দেখে। অনেক বড়ো একটা ফ্ল্যাট। ৪/৫ টার মতো রুম। তিশাকে নিয়ে আবির নিচে এসে বাইকে উঠে ওর বাসায় যেতে থাকে। তিশা আবিরকে বলে,

~ এতগুলো রুম নিয়ে তুমি একা থাকো কিভাবে?
– আমি একা থাকি কই? আমার সাথে আরো অনেকে আছে৷ তারাও আমার মতো ডেভিলস কিলার।
~ ওহ৷ কাল ভার্সিটি আসবে তো?
– দেখি। আচ্ছা তোমার কি ভয় করছে?
~ সত্যি বলতে একটু। তবে তুমি আছো জেনে তেমন ভয় করছে না৷ কারণ আমি জানি তুমি সবসময় আমাকে প্রোটেক্ট করবে।
– হুম।

আবির তিশাকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে বলে,

– আচ্ছা শোনো একটা কথা বলার ছিল।
~ হ্যাঁ বলো।
– ভালবাসি। তখন বলতে পারি নি। এখন বলে দিলাম। কারণ ভয় হয় কাল যদি আর বলতে না পারি।
~ আমিও তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি৷ এবং সারাজীবন ভালবাসবো তোমার পাশে থেকে।

আবির মুচকি একটা হাসি দেয়৷ তিশাও সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বাসায় চলে যায়৷ আবির তিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ এটাই ওর তিশাকে শেষ দেখা। আর কখনো আবির তিশাকে দেখতে পারবে না। শত্রুদের ডেথ লাইন যেমন কমে যাচ্ছে ওরও একটা নিজস্ব ডেডলাইন আছে৷ মানে জীবন রেখা৷ আর সেটা খুব দ্রুত কমে এসেছে৷ আবিরের চোখ থেকে অঝোরে অশ্রু ঝরছে। ও মারা যাবার পর এ পৃথিবীতে ওকে যারা দেখেছে কিংবা ওর সাথে যারা মিশেছে সবাই ওকে ভুলে যাবে৷ কেউ আবিরকে মনে রাখবে না। এমনকি তিশাও না। তবে ও খুশী। জীবনে ভালবাসার একটা মানুষ পেয়েছিল ও। আবির ফিরে যাচ্ছে চিরতরে হারিয়ে যাবার জন্য৷

– সমাপ্ত।

কেমন লেগেছে এই গল্পটি? জানাবেন কিন্তু। এতদিন সাথে থাকার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here