ফাগুন_হাওয়ায়_হাওয়ায়,২০,২১

0
383

#ফাগুন_হাওয়ায়_হাওয়ায়,২০,২১
#আফসানা_মিমি
|বিশ তম পর্ব |

–” আপনাদের সাথেও কী আপনাদের দাদী-নানীরা এমন আচরণ করেছিল?”

যাবির ভাইয়া উপস্থিতিতে সকলেই চমকালেন। যাবির ভাইয়া পুকুর থেকে গোসল করে এসেছেন। তবে গতকালের মতো খালি গায়ে নয় পাঞ্জাবী পরিধান করে কাঁধে গামছা ঝুলিয়ে আসেন। উপস্থিত মহিলাগণের মধ্যে একজন বলেন, –” কি সব বলছো বাবা।”
যাবির ভাইয়া পাঞ্জাবীর হাতা দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে প্রত্যুওরে বললেন, –” বলছি যে, এতদিন জানতাম বিয়ের আগে হলুদ দিয়ে এভাবে গোসল করায়। বিয়ের পরেরদিন সকালে যে এভাবে গোসল করায় আজ প্রথম দেখলাম। এজন্যই জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের দাদী নানীরাও কী এমন আচরণ করতো?”
যাবির ভাইয়ার চাচী এবার মুখ খুললেন। আমার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বললেন, –” বিয়ের পরের সকালে ফরজ গোসল করবে না। অপবিত্র অবস্থায় উঠোনে পা রাখবে তা তো আর আমরা হতে দিব না।”
উনার কথা অসম্পূর্ণ রয়ে গেলো এর আগেই যাবির ভাইয়ার চিৎকার কর্ণধারে আসে, –” আপনারা এজন্যই সকাল সকাল আমার বউকে নিয়ে বাহিরে চলে আসেন। পুকুরের ঠান্ডা পানি নিয়ে এসে গোসল করাচ্ছেন। এদিকে রাস্তা দিয়ে যত পুরুষ মানুষ আছে সবাই আমার বউকে ভেজা অবস্থায় গোসল করছে। এখন কী আমার বউ অপবিত্র হচ্ছে না?”

সকলেই নিশ্চুপ। আমি ঠান্ডায় থরথর কাঁপছি। হাত পা ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে যতটুকু পারছি ওড়না দিয়ে ঢেকে রেখেছি। ইতিমধ্যে একজন ভাবী মুখ খুলেন। তিনি বলেন, –” তুমি গোসল করে এসেছো। বউ কি গোসল করবে না?”

যাবির ভাইয়া রেগে গেলেন। হাতের গামছা মাটিতে ফেলে দিয়ে বললেন, –” আমার বউ এখনো ছোট। বিয়ে করেছি বলে বউয়ের বয়সের দিকে খেয়াল রাখবো না ততটা কাপুরুষ নই। আর রইলো গোসলের কথা, সকালে গোয়ালঘর পরিষ্কার করতে গিয়েছিলাম শরীর গন্ধ করছে বলে গোসল করেছি। এই সুযোগে আপনারা, বাহ!”

সকলের মাথা নীচু করে রেখেছে। কারোর মুখে কথা নেই। আমি মাথা উঁচু করে ছলছল চোখে উনার দিকে তাকালাম। উনার দৃষ্টি আমার দিকেই নিবদ্ধ। এগিয়ে আসলেন আমার কাছে। উঠোনে রশিতে ঝুলে থাকা তোয়াল এনে আমার গায়ে পেঁচিয়ে দিলেন। সকলের সামনে আমাকে কোলে তুলে চলে আসলেন সেখান থেকে।
————

ভেজা কাপড় ছেড়ে গতকালের কিনে দেয়া লাল জামাটা পড়ে নিলাম। আমাকে এই বাড়ি থেকে এখনো কোনো পোশাক দেওয়া হয়নি। যাবির ভাইয়াও ব্যস্ত ছিলেন তাই কোথাও যাননি। বিছানার উপর চুপচাপ বসে আছি। উনি মোটা কাঁথা ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আমার কাছে এসে বসলেন।
দুজনের মাঝেই নীরবতা। আমি ভাবছি তখনকার কথা। উনাদের কথার মর্মার্থ বুঝতে অনেকটা দেরি হয়েছে। যখন বুঝতে পারি তখন ভীষণ লজ্জা পাই। উনি আকস্মিক আমাকে জড়িয়ে ধরেন। আমাকে কিছুক্ষণ উনার শরীরের সাথে মিশিয়ে রাখলেন। যখন বুঝতে পারলেন আমার শরীর গরম হয়ে গেছে তখন ছেড়ে দিলেন। আমি উনার দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছি। একজন মানুষ কীভাবে এতটা ভালবাসতে পারে তা ভাবছি। আমি ভাবতাম, পৃথিবীতে আমি একজন পাগলি প্রেমিকা যে নাকি একজন পুরুষকে খুব ভালোবাসে কিন্তু এখন বুঝতে পারলাম আসলে আমার ধারণা ভুল। আমি তো ভালোবাসার মানে বুঝিই না। উনার প্রত্যেকটা কথা আজকে আমার অন্তরে গেঁথে গেছে। আমাকে সাহস যুগিয়েছে পৃথিবীর সাথে যেন লড়তে পারি। উনার কথা কিছুক্ষণ পর আমার কর্ণধার এসে পৌঁছায় উনি বলেন, –” এতটা নরম হয়ো না মায়াবিনী। পৃথিবীর মানুষ খুবই খারাপ। তোমার নরমতার সুযোগ পেয়ে, তোমায় নিস্তেজ করে ফেলবে।”

উনার কথা শুনে হাসলাম। উনার বুকে মাথা রেখে বললাম, –” আপনি আছেন তো, ভয় কীসের।”

এভাবেই সকালের সময়টা কীভাবে অতিবাহিত হয়ে গেল বুঝতে পারিনি। সকালের নাস্তা আমরা দুজনের একজনও করিনি। মজার ব্যাপার হলো আমার শ্বশুরবাড়িতে কেউ কারোর খবর রাখে না। এত বড়ো পরিবারে কে খেয়েছে, কে ঘুমিয়েছে তার খবর কেউ রাখে না। বিশেষ করে খাবারের ক্ষেত্রে। যে যার খাবার খেয়ে নিতে পারলেই বাঁচে। খাবারের সময়ে এক ঘন্টা পর যদি কেউ খাবার খেতে উপস্থিত হয় তো পাতিলের তলার পুরা ভাত ছাড়া তার কপাল আর কিছুই জুটবে না। এদিকে আমরা দুজন যে না খেয়ে আছি তার খবর কেউ রাখেনি।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলো। যাবির ভাইয়া তখন আমার সাথে ঘরেই ছিলেন। অনেক গল্প করলেন সাথে উপদেশ দিলেন। উনার কিছু কিছু কথা মর্মার্থ যা বুঝতে পারলাম উনি আমাকে এখানে রেখে ঢাকা চলে যাবেন।

দুপুরের আহারের সময় ফারিহা এসে উপস্থিত হয়। আমাদের দুজনকে শ্বশুর বাবা ডেকেছেন বলে হাঁক ছাড়ে। উনি আমার হাত ধরে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। শ্বশুর বাবা খেতে বসেছেন মাত্র। আমাকে এবং যাবির ভাইয়াকে বাবার পাশে বসতে ইশারা করলেন।
বড়দের কথা চিরধার্য আমি এবং যাবির ভাইয়া বসে পড়লাম বাবার পাশে। কিছুক্ষণ পর আমাদের খাবার পরিবেশন করা হলো। সকাল থেকে অনাহারে আছি। পেটে ক্ষুধায় ম’রে যাচ্ছি। লজ্জায়, ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারিনি। এমনকি যাবির ভাইয়াকেও না।
আমার অপর পাশে শাশুড়ি মা এবং চাচী শাশুড়িরা মুখে আঁচল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি মাথা উঁচু করে একবার চারপাশে নজর ঘুরালাম। আমি একমাত্র মেয়ে যে কিনা সব পুরুষের মাঝে বসে খেতে বসেছি। খুবই লজ্জা পেলাম। এই বাড়ির নিয়ম কানুন শিখতে আমার অনেক সময় লাগবে তা বুঝতে পারলাম। আমার ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটলো শ্বশুর বাবার কথায়, –” বউকে তো ঘরে তুলেছো। এখন তুমি কি করবে? বাবার ঘাড়ে বসে খাবে নাকি চাকরি-বাকরি কিছু করবে।”

–” আমি ভাবছি বাবা, মায়াকে এখানে রেখে ঢাকায় চলে যাব। মায়া বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করবে আর আমি ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করব এবং চাকরি করব।”

–” খুব ভালো সিদ্ধান্ত। মেয়েরা কেন পিছিয়ে থাকবে। আমার বাড়ির ছেলেরা যেমন শিক্ষিত আমি চাই আমার ছেলের বউরাও তেমন শিক্ষিত হোক। তোমার বড় ভাই কবে আসবে? সে কি তোমার বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানে?”

যাবির ভাইয়া চুপ হয়ে রইলেন। আমারও বিগত দিনগুলোতে ভাইয়া ভাবীর কথা একটুও মনে পড়েনি। উনারা কি কিছুই জানেন না? হঠাৎ মনে প্রশ্ন জাগলো, ভাইয়া ভাবী জানতে পারলে তো অবশ্যই উনারা চলে আসতেন অথবা যাবির ভাইয়া কিছু বলতেন। যাবির ভাইয়ের উত্তর শুনে আমি স্তব্ধ বনে গেলাম উনি বাবার উদ্দেশ্য বললেন, –” ভাইয়া ভাবী কিছুই জানে না।”

–” জানানোর প্রয়োজন ছিল। এতদিন তার বাড়িতে থেকে খেয়ে, পড়াশোনা করে এমন একটা ঘটনা ঘটালে। তার জানার উচিত ছিল। আর আমি যতদূর জানি, তোমার ভাইয়ের বাসা থেকে বউমার বাসার দূরত্ব বেশি না। সুতরাং যদি কোন চাপ দেওয়া হয় তাহলে তোমার ভাইকে দেওয়া হবে।”
যাবির ভাইয়া নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। উনার চেহারায় স্পষ্টত চিন্তার ভাব বিদ্যমান। শ্বশুর বাবা আবারো বলেন, –” আজ মাহমুদকে ফোন দিবে এবং সেখানকার পরিস্থিতি জানবে।”

বাবা ছেলের মাঝে আর কোন কথা হলো না। ইতিমধ্যে আমাদের খাবারের পর্ব শেষ। উনার সাথে বাড়ির পিছনটায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার সামনে বড়ো পুকুর রয়েছে। দূর দূরান্তে ধান চাষ করা হয়েছে। চোখের সামনে সবুজে সমারোহ। যাবির ভাইয়া পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমার কাঁধে থুতনি রেখে বললেন, –” তোমার আরেকটু বড়ো হলে কী হতো? না পারি তোমাকে কাছে টানতে, না পারি তোমাকে ছেড়ে যেতে।”

–” ছাড়তে কে বলেছে।”
–” আমার বিবেক। তোমাকে ছুঁয়ে দিতে চাই কিন্তু ভাবি, তোমায় কীভাবে ছুঁয়ে দিবো। আমার ছোঁয়াতে যদি মূর্ছা যাও?”

যাবির ভাইয়ার কথায় লজ্জা পেলাম। আমার লাজুক রাঙা মুখ দেখে উনি আবারো বলেন, –” এভাবে লাজরাঙা হয়ো না প্রিয়া, তোমার লাজরাঙা মুখশ্রী দেখে ম’রে যাবো।”
———–

বিয়ের দশদিন পরই যাবির ভাইয়া আমাকে রেখে ঢাকা চলে যান। উনি চলে যাওয়ার পর আমাকে আর ফারিহাকে এক রুমে থাকতে দেন শ্বশুর বাবা। আজ প্রায় একমাস পার হলো আমি সিরাজগঞ্জে এসেছি। এক মাসে অনেক কিছুই সহ্য করেছি। আবার অনেক কিছু সয়ে নিয়েছি আবার অনেক কাজ শিখেছি। যেমন: পাতিল মাজা, ধান মারিয়ে নেওয়া, ছোট মাছ কা’টা,বড় মাছ কা’টা, সবজি কা’টা, রুটি বানানো। এগুলো সব শিখিয়ে ফেলেছি। এমনি এমনি শিখিনি। শাশুড়ির ত্যাড়া কথা, চাচীদের খোঁচা কথা এগুলো শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। শাশুড়ি মা এবং চাচীরা মিলে তিন বেলা রান্না করেন। তরকারি বা প্রয়োজনীয় কাজ এতদিন কাজের লোক করতো। আমি আসার পর কাজের লোকরা অন্য কাজ করে আর আমি উনাদের রান্নার কাজে সহায়তা করি।

দুপুরে গোসল করে এসে আয়নার সামনে বসি। এক দৃষ্টিতে আয়নাতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখি। লম্বা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ভাবছি, পরীক্ষার আর কয়েক মাস আছে। যাবির ভাইয়া ফারিহাকে দিয়ে কিছু বই অনিয়ে দিয়েছেন। আরো কিছু বাকি আছে। একা একা যতটুকু সম্ভব রাতের আঁধারে ততটুকু পড়ি। যাবির ভাইয়া আমাকে যেই ফোন দিয়ে গিয়েছিল, এক সপ্তাহ পর শাশুড়ি মা এসে সেই ফোন নিয়ে চলে যায়। এই বলে যে, উনার ফোনটা দরকার আছে। আমিও আর সাহস করে চাইনি। উনিও আর দিয়ে যাননি। এই এক মাসে যাবির ভাইয়া যতবার ফোন করেছে মা ফোন ধরেছে। যখন আমার কথা জিজ্ঞেস করেছে তখন মা মিথ্যা বলেছে যে, আমি কাজ করছি নয়তো গোসল করছি নয়তো ফারিহার সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছি। সমস্ত কথা মিথ্যা। উনি যখন ফোন করেন তখন আমি শাশুড়ি মায়ের আশেপাশেই থাকি। কিছু বলার মতো অবশিষ্ট নেই। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।

এই বাড়িতে সবচেয়ে আপনজন হচ্ছেন আমার শ্বশুর বাবা। আমাকে খুব আদর করেন। এইতো সেদিনকার ঘটনা, আমার গোসলের সাবান শেষ হয়ে যায়। বর্তমানে আমার অভিভাবক আমার শ্বশুর বাবা এবং শাশুড়ি মা। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্য কাউকে তো আর বলা যায় না। মধ্যাহ্নভোজের বাবা মা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন উনাদের ঘরে যাই। মাথা নিচু করে আস্তে করে বলি, –” বাবা একটা কথা বলার ছিল।”
বাবা আমাকে দেখে হাসেন। জিজ্ঞেস করেন, –” কি বলবে মা?”

ইতস্ততঃ করে বললাম, –” আমার না গোসলের সাবান শেষ হয়ে গেছে।”
শ্বশুর বাবা শোয়া থেকে উঠে বসে বলেন, –” কি বলো,মা! আমাকে আগে বলবে না? শুনো মেয়ে কোন কিছু যদি শেষ হয়ে যায়, শেষ হয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে আমাকে বলে রাখবে। একদম শেষ হয়ে গেলে বলবে না। আমি থাকতে তোমার কোনো কিছু চাইতে লজ্জা পেতে হবে না।”

শ্বশুর বাবার কথা শেষ হতে না হতেই শাশুড়ি মা গর্জে উঠেন। মুখ বাঁ’ কিয়ে বলেন, –” এই পনের দিন আগে না তোমাকে গোসলের সাবান দিয়ে আসলাম, এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেছে? সাবান কই মাখো, গায়ে না কাপড়ে?”

শাশুড়ি মার কথার প্রত্যুওরে কিছু বলতে পারলাম না। কিন্তু শ্বশুর বাবা শাশুড়ি মাকে ঠিকই ধমক দেন, –”
এটা কেমন কথা মাহমুদের মা, আর একবার যদি বউমার সাথে তোমাকে খারাপ ব্যবহার করতে দেখি তাহলে আমি বরখাস্ত করব না।”

শাশুড়ি মা সেখান থেকে চলে যান আমিও নিঃশব্দে ঘর থেকে বের হয়ে আসি।
এভাবেই আমার জীবন চলছে। এই এক মাসে বাবা-মার কথা মনে করিনি তা কিন্তু না। খুব মনে পড়ে বাবার কথা বড়ো মার কথা। না জানি আমার অনুপস্থিতিতে বড়োমার সাথে কি করেছে। মা কি বড়ো মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে? নাকি বড়োমার উপর অ’ত্যা’চা’র করছে। কিছুই জানি না। আমার অনেক ইচ্ছা হয় বাবার মুখ থেকে একবার আম্মাজান ডাক শোনার, বড়ো মার হাত থেকে ভাত খাওয়ার এবং মালা মেহেদীর সাথে অনেক গল্প করতে কিন্তু তা এখন সম্ভব না। কেননা আমি তাদের থেকে অনেক অনেক অনেক দূরে। আদৌও কি তারা আমার চিন্তা করে? প্রশ্ন রইল।

চলবে ……

#ফাগুন_হাওয়ায়_হাওয়ায়
#আফসানা_মিমি
|একুশ তম পর্ব |

সিরাজগঞ্জ ফুলজর নদীর উপর নলকা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে পানির স্রোত দেখছি। আমার পিছনে ফারিহা ঝালমুড়ি কিনছে। আড়চোখে একবার ঝালমুড়ি ওয়ালাকে দেখে নিলাম। চোখ বন্ধ করে পুরনো স্মৃতির পাতায় ডুব দিলাম। আয়ুব চাচার কাছ থেকে শেষবার আমি এবং যাবির ভাইয়া ঝালমুড়ি খেয়েছিলাম সেই কথা স্মরণ করলাম। অতীতের দুষ্টু মিষ্টি স্মৃতিগুলো সত্যিই ভালো ছিল।
ফারিহার ধাক্কানোতে স্মৃতির পাতা থেকে বেরিয়ে আসলাম। ফারিহা হাতে ঝালমুড়ি নিয়ে আমার দিকে হাসিমুখে তাক করে রেখেছে। বর্তমানে আমি এমন একটা পরিস্থিতিতে আছি, টাকা জিনিসটা কি তা আমার চোখে বাঁধে না। বাবার ঘরের আদরের দুলালী ছিলাম আর আজকে শ্বশুর বাড়িতে আশ্রিতা হিসেবে আছি। অবিশ্বাস্যকর হলেও এটা সত্যি। ফারিহা আমার মলিন মুখ দেখে কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে হয়তো। আমার কাঁধে হাত রেখে হাসিমুখে বলল, –” কষ্ট পেও না মিষ্টি মামী। দেখবে মামা যেদিন আসবে সেদিন তোমার মুখ থেকে হাসি সরবেই না।”

দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে অল্প একটু ঝালমুড়ি মুখে দিয়ে নদীর স্রোত দেখছি। আকাশ মেঘলা। প্রকৃতিও সবসময় আমার মন খারাপের সাথে সায় দেয়। চোখে জল ভরে এলো। নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না
হু হু করে কান্না করে দিলাম। বিগত এক মাসের সকল কষ্ট এই কান্নার সাথে ধুয়ে মুছে চলে যাচ্ছে। ফারিহা আমাকে কীভাবে সান্ত্বনা দিবে বুঝে উঠতে পারছে না। ভয়ে আশেপাশে তাকিয়ে শুধু বলছে, –” মামী কান্না করে না। থেমে যাও। কেউ দেখলে কি বলবে। তোমাকে আরো বকা দিবে। কান্না করে না মামী!”

প্রায় বিশ মিনিট পর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম। ঝালমুড়ি আর খেলাম না। ফারিহার হাতে ঠোঙা তুলে দিয়ে বললাম, –” চলো বাড়ি ফিরে যাই।”

মধ্যাহ্নের সময়। শাশুড়ি মা এবং চাচীদেরকে সাহায্য করার পর কাপড় নিয়ে গোসল করতে যাচ্ছিলাম ঠিক সে সময় শ্বশুর বাবা মাছ নিয়ে হাজির হোন। মাছ দেখে আর গোসলে গেলাম না। শাশুড়ি এবং চাচী শাশুড়িরা দা, ব’টি নিয়ে মাছ কুটতে বসে গেলেন। বাড়ির বউ হওয়া স্বত্বে আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। উনাদের সাথে বসে দেখে দেখে মাছ কুটতে শুরু করলাম। পনেরো মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর চাচী শাশুড়ি নামাজের বাহানা দিয়ে উঠে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর শাশুড়ি মা কোমড় ব্যথার অজুহাতে থেমে গেলেন। আমার চারপাশে হাঁটাহাটি করে চলে গেলেন। বড় মাছ হলে কাঁ’টা’কা’টি’র কোন ঝামেলা নেই কিন্তু ছোট মাছ হলে সারাদিন লেগে যায়। এই এক মাসে যতটুকু বঝতে পারলাম, আমাকে এই বাড়িতে পদাচরণ করার জন্য কাজ করিয়ে শিক্ষা দিচ্ছে। একা এতগুলো ছোট মাছ আমি কাঁ’ট’বো কীভাবে ভাবছি। মাছ কুটতে কুটতে মধ্যাহ্ন পেরিয়ে অপরাহ্নের সময় হয়ে গেছে। মাছ কিছুটা নরম হয়ে গেছে কিন্তু কি করব! একা হাতে এতগুলো মাছ কা’টা অসম্ভব। এদিকে ক্ষুধার তাড়নায় শরীর নেতিয়ে পড়ছে। ইচ্ছে করছে সব ফেলে রেখে একমুঠো ভাত খেয়ে আসি। কিছুক্ষণ পর আমার চাচি শাশুড়ি ঘর থেকে বের হয়ে আসেন আমাকে মাছ কা’ট’তে দেখে বলেন’ –” তোমার মা-বাবা কি মাছ কা’টা শিখায়নি? এই মাছ কা’ট’তে আমার মাত্র আধা ঘন্টা সময় লাগবে। সেখানে এখন দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা হতে চলল কিন্তু তোমার মাছ কা’টা আজ শেষ হচ্ছে না।”

আমি কিছু বললাম না নিচের দিকে তাকিয়ে মাছ কা’ট’তে থাকলাম। এদিকে ফারিহা আমাকে এখনো মাছ কুটতে দেখে এগিয়ে আসলো আমার পাশে বসে বলল, –” দাও মিষ্টি মামী আমি তোমাকে সাহায্য করি। দেখবে দুজনে মিলে কাজ করলে তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে।”

ফারিহাকে হাত লাগাতে নিষেধ করলাম তবুও মেয়েটা হাত লাগালো। কিছুক্ষণ পর শাশুড়ি ঘর থেকে বের হয়ে দেখলো, ফারিহা আমার সাথে বসে মাছ কা’ট’ছে। এটাই ছিল যেন আমার বড়ো অপরাধ। শাশুড়ি মা এসে আমার হাত শক্ত করে ধরলেন।উনার দিকে ফিরিয়ে এক আঙ্গুল তুলে আমার উদ্দেশ্যে বললেন, –” তোমার সাহস তো কম না। বড়োরা থাকতে ছোটরা আবার কাজ করে কীভাবে? তুমি কি এই এক মাসে বুঝতে পারোনি, আমাদের বাড়িতে একটা নিয়ম কানুন আছে। আমরা বড়োরা যতদিন বেঁচে আছি শরীরে বল আছে ততদিন ছোটরা কোনো কাজ করতে পারবে না। তাদের কাজ করতে দেই না। আর তুমি এত বড়ো হয়ে কীভাবে আমার নাতিনটাকে মাছ কা’ট’তে দিচ্ছো।”

উনার কথা শুনে একবার নিজের দিকে তাকালাম আরেকবার ফারিহার দিকে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, আমি এবং ফারিহা প্রায় সমবয়সী। অথচ ফারিহার বেলায় কাজ করতে পারবে না কিন্তু আমার বেলায় কাজ করতে হবে তার কারণ, আমি এবারের বউ বলেই কী?

চাচী শাশুড়ি মুখ বেঁকিয়ে আমাকে নানান কথা বলতে বলতে নিজের ঘরে চলে গেলেন। এদিকে শাশুড়ি মা ফারিহার হাত ধরে টেনে টেনে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেলেন। আমি মাথায় লম্বা করে ঘোমটা টেনে মাছ কা’ট’তে থাকলাম। চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়ছে। এত কষ্ট কখনো করিনি।

———-
–” তুমি একা একা কি করছো বউ?”

সেই ডাক, সেই অনুভূতি, থমকে গেলাম। মাছ কা’টা বাদ দিয়ে পিছনে ফিরে তাকালাম। যাবির ভাইয়া এসেছেন। কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। আমাকে এই অবস্থায় দেখার জন্য মনে হয় তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। দুই হাতে বড়ো বড়ো ব্যাগ আলগোছে নিচে ফেলে দিলেন। এতগুলো মাছ কা’ট’তে দেখে উনি পাশে এসে দাঁড়ালেন।
–” এত মাছ কখন থেকে কা’ট’ছো? মুখ এমন শুকনো লাগছে কেনো? দুপুরে খাওনি?”

আমি নিজের চোখে এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। সত্যিই কী উনি এসেছে? আমি যেন স্বপ্নে দেখছি। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে চেয়েও ছুঁইনি। যদি সত্যি হয় তাহলে তো উনার গায়ে মাছের ময়লা লাগবে আর যদি মিথ্যে হয়! আমি চাই স্বপ্ন হলেও যেনো উনি আমার সামনেই থাকে।
উনি আমার মাথা থেকে ঘোমটা ফেলে দিলেন। কপালের উপর থেকে এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে বললেন, –” কেমন আছো মায়া? আমাকে ছাড়া অনেক কষ্ট হয়েছে বুঝি?”

না স্বপ্ন না, উনি এসেছেন। আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। উনাকে দেখে চোখে জল চলে এলো। খুব ইচ্ছে করছে উনার মুখে হাত রাখতে বলতে, এত দেরি করলেন কেনো?

ফারিহার আগমন ঘটে। উনাকে দেখে মামা বলে এসে জড়িয়ে ধরে। উনিও একমাত্র ভাগ্নিকে জড়িয়ে ধরে বলেন, –” বাড়ির সবাই কোথায়?”
–” বাড়ির সবাই তো এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন যার যার ঘরে। তুমি ঘরে যাও তোমার নাস্তার ব্যবস্থা করি।

যাবির ভাইয়া গেলেন না। কলপাড় থেকে হাত-পা ধুয়ে এসে আমার পাশে বসে পড়লেন।
–” একা একা মাছ কা’ট’ছো কেনো? মাছের সব মাথা তো ফেলে দিলে। আসো আমি তোমাকে সাহায্য করি।”
এতক্ষণে মুখ খুললাম। ধরালো স্বরে বললাম, –” এইতো হয়ে এসেছে। আপনি ঘরে যান বিশ্রাম করুন। আমি আসছি।”

–” তোমাকে বাড়তি কথা বলতে বলিনি। তুমি হাত ধুয়ে আসো আমি কে’টে দিচ্ছি।”

আমি গেলাম না বরং উনার সাথে বসে মাছ কাটতে লাগলাম। উনি আমাকে শিখিয়ে দিচ্ছেন কীভাবে কোন মাছ কা’ট’তে হয়। এতক্ষণ সব মাছের মাথা শুধু কে’টে রেখে দিয়েছি। উনি খুব সুন্দর ভাবে এক এক করে মাছ কা’ট’ছে’ন।

মাছ কা’টা শেষ হতে ফারিহা লবণ নিয়ে হাজির হয়। পুকুর পাড়ে গিয়ে মাছগুলো লবণ দিয়ে খুব সুন্দর করে ধুয়ে হাতে তুলে দিলেন।

ইতিমধ্যে শাশুড়ি মা এসে উপস্থিত হোন। যাবির ভাইয়াকে এসে জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু যাবির ভাইয়া শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। উনার দৃষ্টি আমার নিকে নিবদ্ধ। নির্বাক দৃষ্টিতে দেখছি উনার চোখে আজ কোনো ভালোবাসা নেই আছে শুধু রাগ আর অভিমান।

–” আমার আব্বাটা কখন আসছে? তুই আজকে আসবি ফোন করে বলবি না! বড় মাছ আর ভাত উঠিয়ে রাখতাম। ঈশ রে আমার ছেলেটা কাজ করতে করতে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।”

–” এতগুলো মাছ মায়াকে একা হাতে কে কা’ট’তে বলেছে আম্মা?”

শাশুড়ি মা চুপ হয়ে গেলেন মিন মিন করে কিছু বলছেন। শেষে ফারিহা মুখ খুলে বলে, –” দুপুরে একসাথে সবাই মাছ কা’ট’তে বসেছিল কিন্তু নানুমণি আর ছোট নানুমণি উঠে চলে যায় তারপর থেকে মামী একা একা মাছ কা’ট’ছে।”

যাবির ভাইয়া অসহায় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। –” আমি ঘরে বিশ্রাম নিতে যাচ্ছি।” একথা বলে আমার হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে আসলেন।
—————
সন্ধ্যা নেমেছে। মাগরিবের আজান হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। মুসল্লিরা মাথায় টুপি পড়ে নামাজ পড়তে বেড়িয়েছেন। যাবির ভাইয়া অজু করে নামাজ পড়তে গেছেন যাওয়ার আগে আমাকে আদেশ করে গেছেন নামাজ পড়তে। দুপুরে উনি আসার পর থেকে ঘর থেকে একবারের জন্যও বের হইনি। উনি আসার সময় বিরিয়ানি নিয়ে এসেছিলেন। হয়তো জানতেন এই সময় কোন খাবার পাবেন না। মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই উনি চলে এসেছেন। খাবারে পর্ব সেড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছেন। আমি ঘুমাইনি এক মনে উনাকে দেখেছি। এতদিন একটি পলক দেখার জন্য আমার চোখ তৃষ্ণার্ত হয়েছিল। উনাকে দেখে একবার মাথা ছুঁয়ে দিয়েছি তো একবার গাল ছেড়ে দিয়েছি। আবার কখনো বুকে মাথা রেখে চুপটি করে শুয়ে রয়েছি।
নামাজ শেষে বসে বই খাতা উল্টাপাল্টা করছিলাম। তখন যাবির ভাইয়া ঘরে আসেন। আমাকে পড়তে বসতে দেখে মিষ্টি হাসি উপহার দেন।

উনার সাথে পরিচয় হবার পরে প্রায় দুই তিন মাস সৌভাগ্য হয়েছিল উনার কাছে পড়াশোনা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার। পরবর্তীতে উনি আমাকে পাত্তা দেন নাই। আজ অনেকদিন পর আমার পাশে এসে বসলেন হাতে হাতে কিছুক্ষণ পড়িয়ে আমাকে পড়া দিলেন। আমি পড়ছি। আজ কোন কিছুতেই বিরক্তি লাগছে না। ফারিহার কথাই সঠিক, যেদিন উনি আসবেন সেদিন আমার মুখে হাসি ছাড়া কিছুই দেখা যাবে না। সত্যি।

কথিত আছে আপনার দিকে যদি কেউ তাকিয়ে থাকে তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন। আমার বেলাও তাই উনি একমনে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন যা না দেখেও কিছুটা হলে বুঝতে পারছি। কিন্তু এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো আর পড়া হবে না। উনার দিকে মুখ করে তাকালাম বই বন্ধ করে বললাম, –” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? আমি পড়তে পারছি না। অন্যদিকে ফিরেন।”

ভেবেছিলাম আমার কথা উনি মানবেন কিন্তু না উনি ভয়ঙ্কর একটা কাণ্ড করে বসলেন। উনার অসভ্য হাতজোড়া দিয়ে আমার পেট প্যাঁচিয়ে ধরলেন। আমার চোখ আপনাআপনি বড়ো হয়ে গেলো। আমাকে উঁচু করে নিজের কোলে বসালেন। মাথার চুলে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বললেন, –” ফোন তোমার জন্য কিনেছিলাম কিন্তু সেটা মায়ের কাছে দিলে কেনো? আমার সাথে কি কথা বলতে ইচ্ছে করে না?”

–” আপনার কথা তো আমি সয়নে, স্বপ্নে সর্বক্ষণে ভাবি। আপনি আমার অন্তরে মিশে আছেন।আপনার কথা আবার মনে পড়বে না কেন?”

–” তাহলে ফোনে কথা বলতে চাইতে না কেনো? মাকে যতবার জিজ্ঞেস করতাম মা বলতো, তুমি ব্যস্ত কথা বলবে না। এখানে গিয়েছো, সেখানে দৌঁড়াচ্ছ আসলেই কি তাই?”

–” আপনার মা আপনার খুবই প্রিয়। আমি পৃথিবীর সব মাকে অনেক শ্রদ্ধা করি। যদি আপনার কাছে কেউ এসে বলে, তোমার ক’লি’জা’টা বের করে দিয়ে দাও তো এবং যে মানুষটা বলেছে তাকে আপনি খুব ভালোবাসেন। আপনি কি পারবেন পুনরায় গিয়ে আপনার তার থেকে আপনাথ ক’লি’জা ফেরত আনতে? আমার বেলাও তাই হয়েছে। পারিনি মার কাছে ফোন চাইতে।”

কিছুক্ষণ নিশ্চুপতা। সময় নিয়ে আমার মাথায় অধর ছুঁয়ে দিলেন। পরক্ষণে উনি আমার মাথায় ঘুমটা টেনে বললেন, –” চলো বাবার ঘরে যাই।”

আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলেন না উপস্থিত হলেন বাবার ঘরে। বাবা আমাদের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে রইলেন।

–” কখন এসেছো? আমার সাথে তো দেখা করতে এলে না।”

–” বিকালে এসেছিলাম। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কেমন আছেন বাবা?”

–” ভালো। তা কতদিন থাকবে?”

–” একদিনের ছুটি নিয়ে এসেছি। আগামীকাল রাতে রওনা দিব।”
–” একদিনের জন্য এত কষ্ট করে আসতে গেলে কেনো। পড়াশোনার কি খবর?”

–” ভালো। এ মাসের শেষে পরীক্ষা তাই চাচ্ছিলাম মায়াকে সাথে করে নিয়ে যাই। মায়ারও সামনে পরীক্ষা তাকেও পড়তে হবে।”

–” সে নিয়ে যাও। আমার কোন আপত্তি নেই।”

বাবার কথা শেষ হতে শাশুড়ি মা গর্জে উঠেন। বলেন, –” মেয়েদের এত পড়াশুনা করতে নেই ।বাড়িতে থাকবে কাজ করবে আর খাবে। পড়াশোনা খরে কি জজ ব্যারিস্টার হবে?”

যাবার ভাইয়া মায়ের কথা প্রত্যুওরে বললেন, –” আমার কাছে থাকবে, খাবে, পড়বে, সবকিছুই করবে। তুমি চিন্তা করো না। চাকরি যেহেতু পেয়েছি মাসে মাসে কি টাকা পাঠিয়ে দিব। আর কোন দরকার পড়লে আমাকে স্মরণ করিও আসছি।”

পাশাপাশি দুজন হাঁটছি। আমি অবাক নয়নে উনাকে দেখছি। মনে মনে ভাবছি, আদৌ কি আমি ঢাকা যেতে পারব? উনার কাছাকাছি থাকতে পারব? নাকি এগুলো স্বপ্ন চোখ খুললেই তা মিথ্যা হয়ে যাবে!

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here