আমি_ফাইসা_গেছি(১৫)

0
670

#আমি_ফাইসা_গেছি(১৫)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

কুশান ভাইয়া!আজ আমরা অনেক মজা করলাম।ভাবি যে এতো মিশুকে স্বভাবের সত্যি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।আমি,সোনিয়া আর ভাবি একসাথে বসে এতোক্ষণ কেরাম খেললাম,বিকালবেলা কফি খেতে খেতে অনেক মজার মজার গল্প করলাম।ভাবি এতো মজার মজার জোকস জানে আমরা দুইজন তো হাসতে হাসতে একদম গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম।সত্যি খুব এনজয় করেছি আজকের দিনটা।তাই না ভাবি?
এই বলে সুমন তোড়ার দিকে তাকালো।

তোড়া কিছু বলার আগেই সোনিয়া বললো,হ্যাঁ কুশান ভাইয়া।আজ সারাদিন আমরা ভাবির সাথেই ছিলাম।

সুমন আর সোনিয়ার মুখে এরকম কথা শুনে কুশান হাসতে হাসতে বললো,

তাহলে তো আমি বাসায় এসে তোদের সবাইকে ডিস্টার্ব করে ফেললাম?

সুমন তখন নিজেও হাসির ছলে বললো, তা অবশ্য ঠিক বলেছিস ভাইয়া।তুই না আসলে আরো কিছুক্ষন খেলতে পারতাম আমরা।তুই এসে মজাটা একদম নষ্ট করে দিলি।

কুশান তখন বললো তাহলে আমি আবার চলে যাই।যাতে তোরা আবার এনজয় করতে পারিস।

সোনিয়া তখন সুমন কে বললো,ভাইয়া?তুই কি সব ইয়ারকি শুরু করলি?
চল না এখন আমরা চলে যাই।কুশান ভাইয়া মাত্র বাসায় ফিরলো।ও ফ্রেশ হয়ে নিক এখন।

–আচ্ছা ভাবি আসি এখন।এ ভাইয়া যাই তাহলে এই বলে সোনিয়া সুমনকে টানতে টানতে রুম থেকে নিয়ে গেলো।

কুশান তার ব্যাগ টা টেবিলের উপর রেখে ঘেমে যাওয়া শার্ট টা খুলতে ধরতেই তোড়া তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
আই মিস ইউ ভেরি মাচ কুশান।এতো গল্প আর আড্ডার মাঝেও বার বার শুধু তোমার কথাই মনে হয়েছে।নিশ্চয় তুমিও আজ সারাদিন আমাকে অনেক বেশি মিছ করেছো?

তোড়ার এমন আবেগঘন কথা শুনেও কুশান কোনো রিয়্যাক্ট করলো না। সে উলটো তোড়ার হাত সরিয়ে দিয়ে তার শার্ট টা খুলে ওয়াল হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রেখেই ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো।

–ব্যাপার কি? কুশান এরকম রিয়্যাক্ট করলো কেনো?কুশান কেনো কোনো কথা বললো না?
কু,,,,,।তোড়া কুশানের নাম ধরে চিৎকার করতে ধরে থেমে গেলো।আর নিজেই নিজেকে শান্ত্বনা দিয়ে বললো,
কন্ট্রোল তোড়া কন্ট্রোল!নিজের মুখ কে এখন সংযত কর।এখন একদম কোনো কথা বলবি না।বেচারা মাত্র বাসায় ফিরেছে।সেজন্য বড্ড ক্লান্ত সে।তাছাড়া সারাদিন ধরে তোকে একবারের জন্যও কাছে পায় নি।মন মেজাজ সেজন্য তার ভীষণ ভাবে বিগড়ে আছে।
এজন্য এখন কিছু বলা যাবে না তাকে।

হঠাৎ জারিফ চৌধুরীর কন্ঠ ভেসে উঠলো।

তোড়া মা?এদিকে একটু এসো তো?
তোড়া তার শশুড়ের ডাক শোনামাত্র তাড়াতাড়ি করে ওনার রুমে চলে গেলো।
তোড়াকে দেখামাত্র কামিনী বললো, সবার জন্য সন্ধ্যার নাস্তা কি রেডি করেছো?

তোড়া কামিনীর কথা শুনে জিহবায় কামড় দিয়ে মনে মনে বললো ,
সে তো কেরাম খেলার চক্ররে ভুলেই গিয়েছিলো নাস্তার কথা।এই জয়া আর টুনিও তো তাকে মনে করে দিলো না একবার।এখন আবার কুশানও মাত্র ফিরলো বাসায়।এখন সে কোনদিকে যাবে?রান্নাঘরে?না নিজের রুমে?
এদিকে কুশান যদি তাকে রুমে না দেখে তাহলে তো একদম চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিবে।এখন কি করবে তোড়া ভেবে পাচ্ছে না।

কামিনী তোড়াকে চুপচাপ থাকা দেখে বললো, কি হলো?ওভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে কেনো?আমার কথা কি শুনতে পারো নি নাকি?

–হ্যাঁ আম্মু শুনেছি।এই বলেই তোড়া সোজা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।
কিন্তু তোড়া রান্নাঘরে গিয়ে দেখে টুনি আর জয়া কি যেনো রান্না করছে।
তোড়া ওদের কে দেখে বললো কি রে কি করছিস এখানে?

টুনি তখন বললো,ভাবি খালা আর খালুজানের জন্য চা আর আপুদের জন্য কফি রেডি করছি।

তোড়া তা শুনে বললো আমাকে একবারও ডাকলি না যে?আমি তো একদম ভুলেই গিয়েছিলাম।

–আপনি,সোনিয়া আপু আর সুমন ভাইয়ার সাথে ঘরে বসে খেলছেন দেখে আর ডাক দেই নি।সেজন্য ভাবলাম আপনাকে না বলেই নাস্তা বানায়।

–খুব ভালো করেছিস।আমার একদম মনেই ছিলো না।আব্বু আর আম্মু তো নাস্তা খাবে এখন।তোড়া এই বলে আর কথা না বাড়িয়ে জারিফ চৌধুরীর জন্য দুধ চা,কামিনীর জন্য চিনি ছাড়া রং চা আর পিরিচে কিছু সবজি পাকোড়া নিয়ে সবগুলো ট্রে তে করে কামিনীর রুমে চলে গেলো।

তোড়া খুব তাড়াহুড়ো করছিলো।সে নাস্তা গুলো দিয়েই যেতে ধরলো, তা দেখে জারিফ চৌধুরী বললো, মা বসো একটু।এতো তাড়াহুড়ো করছো কেনো?একসাথে নাস্তা করি।

তোড়া তখন বললো, না মানে আব্বু কুশান এসেছে।ওর জন্য কোল্ড কফি রেডি করতে হবে।এই বলেই তোড়া বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

কুশানের কথা শোনামাত্র কামিনী একটা জোরে করে নিঃশ্বাস ছাড়লো।কামিনী তো ধরে নিয়েছে কুশান তাকে পুরোপুরিই ভুলে গিয়েছে।তা না হলে বাসায় ফিরেও একটিবার মায়ের সাথে দেখা করলো না?এতোই পরিবর্তন এসেছে কুশানের মাঝে।তাহলে মানুষ যা বলে সেটাই বোধ হয় ঠিক।আসলেই ছেলেরা বিয়ে করে পর হয়ে যায়।সারাদিন বাসায় ছিলো না,একটিবার ফোন করে জিজ্ঞেস ও করলো না তার আম্মু কি করছে?আগে ভার্সিটিতে গেলে কতবার কল দিতো?আর এখন বাসায় এসেও ঘরের মধ্যে চুপটি করে বসে আছে।

জারিফ চৌধুরী কামিনীকে চুপচাপ থাকা দেখে বললো,চা ঠান্ডা হয়ে গেলো কামিনী।ওসব আজাইরে চিন্তা করে কোনো লাভ নেই।তুমি যেটা ভাবছো তেমন কিছুই হয় নি।তোমার ছেলে এখনো তোমারই আছে।

কামিনী জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে চা টা আবার ট্রে তে রেখে বললো,আমি আজাইরে চিন্তা করছি মানে?তুমি কিন্তু ইদানীং আমার ব্যাপারে বেশ নাক গলাচ্ছো।আমাকে নিয়ে একটু কম ভাবো।

–আমি আবার কি করলাম তোমায়?তুমি চা খাওয়া বাদ দিয়ে ছেলেকে নিয়ে ভাবছো আমি শুধু সেটা বললাম।
কামিনী জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে রাগ করে বললো, আমি কখন বললাম যে আমি কুশানের কথা চিন্তা করছি?

ঠিক তখনি কুশান রুমে প্রবেশ করলো।

কুশানকে দেখামাত্র জারিফ চৌধুরী আর কামিনী দুইজনই চুপ হয়ে গেলো।
কুশান সোজা কামিনীর কাছে গিয়ে বসলো।আর জিজ্ঞেস করলো,
কি নিয়ে ঝগড়া করছো তোমরা?

–ঝগড়া? কখন ঝগড়া করলাম?এমনিতেই কথা বলছিলাম।
জারিফ চৌধুরীর কথা শেষ না হতেই কুশান কামিনী কে বললো, আম্মু মাত্র ফিরলাম বাসায়।এসে শুধু ফ্রেশ হয়ে নিয়েছি।

কামিনী তখন চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললো, সে কথা আমাকে বলছিস কেনো?আমি কি শুনতে চেয়েছি তুই কখন ফিরেছিস?আর এখন শুনেই বা কি করবো?তোর সাথে গল্প করার বহুত লোক আছে এখন।
–এভাবে বলছো কেনো আম্মু?
কামিনী এবার কুশানের কথা এড়িয়ে গিয়ে বললো,

কিছু খেয়েছিস বাবা?

–না এখনো খাই নি।

কামিনী তখন বললো তুই নাকি আজ একাই গিয়েছিলি ভার্সিটিতে? তাহলে আসার সময়ও নিশ্চয় একাই এসেছিস?

–হুম।

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,বাবা কোনো সমস্যা হয় নি তো?

কুশান সেই কথা শুনে বললো,তোমরা আমাকে নিয়ে অযথাই চিন্তা করো বাবা।আমি কি এখনো সেই ছোটো কুশান আছি নাকি?আমি তো এখন বড় হয়ে গেছি।তারপরেও একা ছাড়তে ভয় করো।
আর কাউকেই যেতে হবে না আমার সাথে।আমার সাথে আমার ফ্রেন্ড রা তো সবাই থাকে।

এদিকে তোড়া কুশানের জন্য কোল্ড কফি রেডি করে ঘরে নিয়ে গিয়ে দেখে কুশান নাই।সেজন্য সে সোজা কামিনীর রুমে চলে এলো।কারণ সে জানে নিশ্চয় কুশান এখন তার মায়ের রুমে চলে গিয়েছে।

তোড়া কুশানকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই ডাইরেক্ট কুশানের হাতে কফির মগ টা দিলো।কিন্তু কুশান আবার মগ টা তোড়ার হাতে দিয়ে বললো,
এখন খাবো না কিছু আমি।হোটেল থেকে খেয়ে এসেছি।এই বলে কুশান তার মায়ের সাথে গল্প করতে লাগলো।

তোড়া বুঝতে পারছে না কিছু।হঠাৎ কুশানের হলো টা কি?সে এরকম এড়িয়ে চলছে কেনো তাকে?
তোড়ার ভীষণ রাগ উঠলেও সে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আর কুশানের জন্য রেডি করা কফির মগ টা ইরার রুমে নিয়ে গেলো।কারণ ইরাও কোল্ড কফি খায়।
ইরা কোনো কথা না বলে কফির মগ টা নিয়ে নিলো।এখন তারা তিন বোনই মোটামুটি শান্ত হয়ে গেছে।যেখানে তাদের আম্মুই তোড়াকে মাথায় তুলেছে,কিছু বলছে না তোড়াকে।সেখানে ওরা তোড়াকে অপমানজনক কথা বলে উলটো কামিনীর বকা কেনো খেতে যাবে?

শাহিন কে রুমে না দেখতে পেয়ে তোড়া ইরাকে বললো,

শাহিন দুলাভাইকে দেখছি না যে?

ইরা উত্তর দেওয়ার আগেই বেলকুনি থেকে শাহিন চিৎকার করে বললো, আমি এখানে আছি তোড়া।

তোড়া সেই কথা শুনে নিজেও বেলকুনির দিকে চলে গেলো,আর শাহিন কে বললো, দুলাভাই আপনার নাস্তা কি আনবো এখন?

শাহিন তখন তোড়ার কথা শুনে একটু জোরে জোরেই বললো,
আমার নাস্তা আমি নিয়ে এসেছি তোড়া। শুধু আমি না,মাহিন আর তুহিন ও নিয়ে এসেছে।আমাদের জন্য তোমাকে এতো বেশি ভাবতে হবে না।আমরা বাকি সবার মতো এতো কুঁড়ে নই।নিজের কাজ নিজেরা করতেই আমরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

শাহিনের কথা শোনামাত্র ইরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।সে তখন কফির মগ টা রেখে নিজেও বেলকুনিতে চলে আসলো।আর শাহিন কে বললো, এই কি বললে তুমি?আমি কুঁড়ে?
শাহিন ইরার কথা শুনে জিহবায় কামড় দিয়ে আর কান ধরে বললো,বলো কি?তোমাকে আবার কখন আমি কুঁড়ে বললাম? তোমাকে অলস আর কুঁড়ে বলার সাহস আছে নাকি আমার?
ইরা সেই কথা শুনে রাগ করে তার মগে রাখা কফি গুলো শাহিনের দিকে ছুঁড়ে দিতে ধরলে তোড়ার দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো।তোড়া না থাকলে হয় তো তাকে আজ ভিজিয়েই দিতো।
তোড়া ইরা আর শাহিনের এমন ঝগড়াঝাটি দেখে তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
কারণ তার এখন ঝগড়া দেখার সময় নাই।তার যে এখনো আরো দুই কাল নাগিনীর জন্য নাস্তা নিয়ে যাওয়া বাকি আছে।মিরা আবার খাবে হট কফি আর লিরা খাবে গ্রীন টি।সাথে কিছু স্ট্রবেরি, পেস্তা বাদাম আর খেঁজুর।

তোড়াকে কামিনী যেদিন থেকে এই সংসারের দায়িত্ব দিয়েছে সেদিন থেকেই তোড়া তার নিজের মনের মতো করে চালাচ্ছে সংসার টা?তোড়ার মধ্যে এখন বেশ পরিবর্তন ও এসেছে।তার আর আগের মতো অতো বেশি রাগ হয় না।কথায় কথায় অভিমান হয় না।তোড়া একদম পুরোপুরি সংসারী হয়ে গেছে।সে সবার সাথে এভাবে মিলেমিশে থাকতে চায় এই সংসারে।তোড়ার সাথে সাথে এই পরিবারের বাকি সকল সদস্য দের মধ্যেও বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।কিন্তু তাদের এই পরিবর্তন শুধুই লোক দেখানো না তারা সত্যি চেঞ্জ হইছে সেটা এখনো তোড়া বুঝতে পারছে না।

তোড়া সবার রুমে রুমে নাস্তা দেওয়া শেষ করে যখন নিজের রুমে চলে গেলো,সে দেখতে পেলো কুশান বিছানার উপর বসে পড়ালেখা করছে।খুব মনোযোগ দিয়ে বই দেখছে সে।
তোড়া তা দেখে ধীরে ধীরে কুশানের কাছে এগিয়ে গেলো আর কুশানের গলা ধরে বললো,

একজন যখন সম্পর্কে অনেক বেশি গভীর হয়ে যায় তখন অপর পাশের মানুষটার ব্যস্ততা বেড়ে যায়!সম্পর্কের শুরুতে যে বেশি গুরুত্ব দেয়, একটা পর্যায়ে এসে সেই আর আগের মতো থাকে না!তবে
এরকম ব্যস্ততা দেখালে আর অবহেলা করলে অপর পাশের মানুষটার কিন্তু ভীষণ অভিমান হয়।এটা তার অবশ্যই মনে রাখা উচিত।
আর এই অভিমানের মাত্রা যখন বেড়ে যাবে,তখন কিন্তু সে আবোলতাবোল ডিসিশন নিবে।তখন কিন্তু সামলানো কঠিন হয়ে যাবে।সো মাইন্ড ইট।

তোড়ার এরকম কথা শুনেও কুশান সেই আগের মতোই চুপচাপ হয়ে আছে।

ব্যাপার কি? এই শালা কিছু বলছে না কেনো?তোড়ার এবার ভীষণ রাগ হতে লাগলো।সে মনে মনে ভাবতে লাগলো,সে কি আর শখের বসে এই কুশানটারে মারধর করে আর ইচ্ছামত বকাবকি করে?না,এতো বেশি করে এরে ভালোবাসা দেখানো যাবে না,অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখাতে যেয়ে এ অহংকারী হয়ে উঠেছে।
তোড়া এবার রাগ করে কুশানের বই বন্ধ করে সবগুলো বই টেবিলের উপর রেখে বললো,
এই তোর সমস্যা টা কি?কোনো কথা বলছিস না কেনো?না আমি এখন একটু ভদ্র ভাবে কথা বলি দেখে সেজন্য ভাবের ঠেলায় মাটিতে তোর পা পড়ছে না?

কুশান এবারও চুপচাপ।আর সে নিচ মুখ হয়ে আছে।

তোড়া তখন কুশানের মুখ টা উপরে তুলে বললো,
কুশান তোমার হয়েছে টা কি?এরকম কেনো করছো?কিছু তো বলো?
ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় তো একেবারে ভদ্র ছেলে হয়ে গেলে,আমাকে না হলেও কমপক্ষে একশোটা কিস করলে,
আর মনে হয় দুইশোবারের মতো বললে,
আই মিস ইউ সোনাপাখি,আমার কলিজার টুকরা টা।ভীষণ মিস করবো আজ আমার জান পাখি টারে,কিছুতেই যেতে ইচ্ছে করছে না তোমাকে রেখে।

তাহলে ভার্সিটি থেকে এসেই হঠাৎ বোবা হয়ে গেলে কেনো?

তোড়া কিছু বুঝে উঠতে পারছিলো না।তবে সে খেয়াল করে দেখলো কুশানের চোখ লাল হয়ে গেছে। আবার তার গলার রগ গুলো স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে।কুশান রেগে গেলে তো এরকম অবস্থা হয় তার?কিন্তু কুশান কিজন্য রেগে আছে তার উপর?

তোড়া সেজন্য এবার একটু শান্ত হলো।তারপর কুশানের মাথায় হাত দিয়ে বললো, এই কুশান?কি হয়েছে তোমার?
তোড়া এখনও বুঝতে পারছে না কুশানের রাগের কারণ টা কি?
হঠাৎ কুশান তোড়ার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,ডোন্ট টাচ মি তোড়া।সরে যাও আমার সামনে থেকে।এই বলে সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

তোড়াও তখন কুশানের পিছু পিছু চলে গেলো।কিন্তু তার আগেই কুশান কই যেনো চলে গেছে তোড়া বুঝতে পারলো না।তোড়া সেজন্য এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।পরে আবার সে মনে মনে ভাবতে লাগলো,কুশান আবার তার মায়ের রুমে যায় নি তো?এই বলেই তোড়া কামিনীর রুমে চলে গেলো।কিন্তু গিয়ে দেখে কুশান নাই সেখানে।জারিফ চৌধুরী একাই শুয়ে আছে।আর কামিনী ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলছে।

তোড়াকে দেখামাত্র জারিফ চৌধুরী বললো, মা কিছু বলবি?
তোড়া তখন বললো,আব্বু রাতে আপনার জন্য কি খাবার করবো সেটাই শুনতে আসছিলাম।

জারিফ চৌধুরী যখন দেখলো কামিনী ফোনে ব্যস্ত তখন সে তোড়াকে বললো,রাতের দিকে একটু ভাপা ইলিশ আর চিংড়ি মাছের দোঁপেয়াজা করলে ভালো হতো?আসলে কামিনী রাতের দিকে জারিফ চৌধুরী কে এতো বেশি খেতে দেয় না।শুধু সবজি আর রুটি খেতে দেয়।কিন্তু এখন কেনো জানি জারিফ চৌধুরীর ভাপা ইলিশ আর চিংড়ির দোঁপেয়াজা খেতে ইচ্ছে করছে।

তোড়া জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে মনে মনে ভাবতে লাগলো তার স্বামী আছে রাগ করে, এখন পর্যন্ত সে জানে না কেনো সে এভাবে ফুলে আছে?আর এদিকে তার শশুড় এসব কি রান্না করতে বলছে?
তোড়া তবুও সাহস করে বললো আচ্ছা আব্বু।আমি যাই এখন।তোড়া রুম থেকে বের হতেই টুনি এসে দাঁড়ালো। আর বললো,

ভাবি তুমি এখানে?আমি তোমাকে খোঁজার জন্য রুমে গিয়েছিলাম।কিন্তু গিয়ে দেখি তুমি নাই।কুশান ভাই শুধু একাই শুয়ে আছে।

তোড়া কুশানের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো, কুশান রুমে আছে?

–হ্যাঁ রুমেই আছে।কিন্তু কুশান ভাইয়ার হয়েছে টা কি?কতবার জিজ্ঞেস করলাম তিনি রাতে কি খাবেন একটা উত্তর ও দিলো না?
আচ্ছা ভাবি রাতে কুশান ভাইয়ার জন্য ভাত না রুটি করবো?

–ভাতই কর।এই বলেই তোড়া রুমের দিকে যেতে ধরলো।
হঠাৎ সে আবার ফিরে তাকালো টুনির দিকে।আর বললো,এই টুনি রাতে একটু ভাঁপা ইলিশ আর চিংড়ি মাছের দোঁপেয়াজা করিস তো।আব্বু করতে বললো।

টুনি সেই কথা শুনে বললো,কিন্তু খালু তো রাতে রুটি খাবে।
–আজ ভাতই খাবে।
— খালা শুনলে কিন্তু রেগে যাবে ভাবি।
তোড়া তখন বললো আব্বু নিজের মুখে খেতে চাইলো।একদিন খেলে কিছু হবে না।

টুনি তখন বললো, কিন্তু ভাবি,আমার যে তেমন একটা ভালো হয় না। তুহিন দুলাভাই খুব সুন্দর করে বানায় এগুলো।দুলাভাইকে রান্না করতে বলি?

তোড়া সেই কথা শুনে বললো,না।বলেছি না এ বাসার কোনো ছেলে মানুষ আর রান্না করতে পারবে না।তুই বরং দুলাভাই এর থেকে একটু শিখিয়ে নেস।

তোড়ার কথা শুনে টুনি চলে যেতে ধরলে হঠাৎ তোড়া বললো, এই দাঁড়া।দুলাভাই এর থেকে শিখতে হবে না।এই বলে তোড়া ইউটিউবে সার্চ দিয়ে ভিডিও অন করে টুনির হাতে দিয়ে দিলো।আর বললো,
এই ভিডিও টা দেখে দেখে রান্না কর।ঠিক আছে?

–আচ্ছা ভাবি।এই বলে টুনি তোড়ার মোবাইল টা নিয়ে চলে গেলো।

আর তোড়া এক মুহুর্ত দেরী না করে আবার তার রুমে চলে গেলো।

কুশান বিছানায় শুয়ে আছে।তোড়া কোনো কথা না বলে নিজেও কুশানের পাশে গিয়ে শুইলো।
কিন্তু কুশান তোড়াকে শোয়া দেখে সাথে সাথে উঠে বসলো।আর চিৎকার করে বললো,

এভাবে আমার পিছু পিছু কেনো ঘুরছো তোড়া?তোমাকে তো বললাম আমার সামনে না আসতে।আমার পিছনে এভাবে না ঘুরে বরং সুমনের পাশে বসে কেরাম খেলো,আর দুইজন গায়ে গা লাগিয়ে গল্প করো।সারাদিন আজ ওর সাথে সময় কেটে ভালোই তো লাগছিলো তোমার,তাই না?তাহলে এখন আমার কাছে কি?

তোড়া কুশানের মুখে এরকম আশ্চর্যজনক জনক কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।সে তো ভেবেছিলো নিশ্চয় বড়সড় কিছু ঘটে গিয়েছে।আর জন্যই কুশান এরকম বিহেভ করছে তার সাথে।
কিন্তু এখন কুশানের মুখে সুমনের কথা শুনার পর সে হাসবে না কাঁদবে সত্যি বুঝতে পারছিলো না।তবে তোড়ার বেশ হাসিই পাচ্ছিলো।সে তার হাসিকে কন্ট্রোল করতে লাগলো।তবুও কন্ট্রোল করতে পারছিলো না।

তোড়াকে আবার এভাবে হাসতে দেখে কুশানের পুরো শরীর রাগে কাঁপছিলো।

তোড়া এবার কুশানকে জড়িয়ে ধরে বললো,এই কুশান!তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি?প্লিজ শান্ত হও।আরে!সুমন তো আমার ছোটো ভাই এর মতো হয়।সম্পর্কে আমরা দেবর ভাবি।আর দেবর ভাবির সম্পর্ক তো একদম ভাই বোনের সম্পর্কের মতোই হয়।তুমি সেটা নিয়ে সন্দেহ করছো?

কুশান তখন তোড়াকে সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বললো,
এই চুপ!তুই হাসছিস?রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে আর তোর হাসি পাচ্ছে?কিছু বলি না দেখে ভাবিস না আমি দূর্বল।তুই যখন যেটা খুশি সেটাই করতে পারিস কিন্তু এভাবে অন্য ছেলের গায়ের সাথে ঢলাঢলি করতে পারিস না।সেটা এখন আমার ভাই হোক আর তোর ভাই হোক।
কুশান এবার তোড়ার গা টেলা দিয়ে বললো,আর কি বললি সুমন তোর ছোটো ভাই এর মতো হয়?ও আমার ছোটো ভাই হতে পারে কিন্তু তোর নয়।অন্যদিকে সে তোর সমবয়সীও।এরকম সমবয়সী ছেলের সাথে আমি তোকে মিশতে দিতে পারি না।
কুশান এবার রাগ করে ফুলের তোড়া টা হাতে নিয়ে মেঝেতে আছাড় দিয়ে বলতে লাগলো,
আমি নিজের চোখে দেখলাম তোরা দুইজন গায়ের সাথে গা লাগিয়ে পাশাপাশি বসে আছিস।ছিঃ তোড়া।আমি তো ভাবতেই পারছি না বাসায় না থাকলে তুই এসব রঙ তামাশা করে বেড়াবি।এই বলে কুশান রুম থেকেই বের হয়ে গেলো।

এদিকে তোড়া কুশানের এরকম ব্যবহার দেখে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।বিশেষ করে সে কুশানের মুখে তুই কথা শুনে একদম আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।কুশান সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তোড়ার সাথে যে এরকম ব্যবহার করবে সেটা তোড়া কল্পনাও করে নি কখনো।।কারণ এই প্রথমবার কুশান তাকে তুই করে বললো।

কুশান রাগের ঠেলায় ছাদে গিয়ে আগে একটা সিগারেটে আগুন ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে লাগলো।এইভাবে সে বেশ কয়েকটা সিগারেট খেয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে তবেই ছাদ থেকে নেমে এলো।
কুশান নিজেও বুঝতে পারলো সে রাগ করে তোড়াকে তুই বলে ফেলেছে।সেজন্য সে এবার নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করে আবার রুমে চলে গেলো।

তোড়া এখনো সেই আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।
কুশান এবার তোড়ার গা ধরে শান্ত সুরে বললো,

সুমন মোটেও ছোটো ছেলে নয়।সেও এবার অনার্স ফাস্ট ইয়ারে।সে হিসেবে দেখতে গেলে তোমরা দুইজন প্রায় সেম এজের।এজন্য আমি বলি কি ওর সাথে বেশি মিশবে না তুমি।আমার এসব পছন্দ না।তুমি তো জানো আমি তোমার সাথে অন্য ছেলেকে সহ্য করতে পারি না।

কুশান তোড়াকে কি বলছে সে দিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নাই।সে তো এখনো রাগে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো কুশানের দিকে।কেনো কুশান তাকে তুই করে বললো?
অথচ সে যে একটুতেই তুই তুই করে বলে সেটাতে কিছু যায় আসে না তার।তোড়া কি কুশানের রাগ ভাঙাবে?উলটো এখন সে নিজেই রেগে গেলো।
তোড়ার চোখ দুটো একদম আগুনের গোলার মতো জ্বলজ্বল করছিলো।এই চোখের দর্শনে এই বুঝি সে কুশানকে পুড়ে ভস্ম করে দেয়?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here