অব্যক্ত_প্রিয়তমা,09,10

0
277

#অব্যক্ত_প্রিয়তমা,09,10
#ফাতেমা_তুজ
#part_9

অনিন্দিতার ইচ্ছে পূরন হয় নি। সব ইচ্ছে যে সবার জন্য নয়। ঘরে ঘাপটি মেরে বসে আছে নির্ভীক। অনিন্দিতা কে অসহ্য লাগছে তাঁর। একটু সহজ হতে চাইলে ও মেয়েটার জন্য সহজ হতে পারে না। সারাক্ষণ চোখে মুখে তৃষ্ণা নিয়ে থাকে। যা দেখে বিতৃষ্ণায় জর্জরিত হয় নির্ভীকের মন। চারটে বছর ধরে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে। যদি না এন এস ইউর সাথে তিন বছরের চুক্তি স্বাক্ষরিত না হতো তাহলে এখনি কানাডা চলে যেতো। এ দিকে রোজ নেই মানে স্বস্তি টুকু ও নেই। প্রচন্ড রকমের অসহ্য লাগছে। রাত প্রায় আট টা। এখনো চারুলতা এসে পৌছায় নি। নির্ভীকের হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। কেউ কিছু বলার সুযোগ পাবে না তবে যদি কেউ কিছু বলে ফেলে। যদি শব্দ টা বড্ড যন্ত্রণার।
এই একটা কথা ভেবেই নির্ভীক গুটিয়ে যাচ্ছে। বাইরে বের হলেই অনিন্দিতা চলে আসে। কিছুতেই বুঝে না তাঁকে সহ্য করতে পারে না নির্ভীক। ভবিষ্যত বিপর্যয় গ্রস্ত , না জানি কোন ঝড় তুলে মেয়েটা।
ভাবনার মাঝে ঘুমিয়ে পরে নির্ভীক। ঠিক তখনি ঘরে প্রবেশ করে অনিন্দিতা। বাইরেই ঘাপটি মেরে ছিলো। বেশ অনেকক্ষণ কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে উঁকি দেয়। তখনি পরিলক্ষিত হয় গভীর ঘুমে টলে আছে নির্ভীক। এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে মেয়েটার মুখে। পা টিপে রুমে প্রবেশ করে। নির্ভীকের পায়ের কাছে বসে পরে। পায়ের আঙুল গুলো হালকা হাতে ছুঁইয়ে দেয়। এই পায়ে ও ঠায় নেই মেয়েটার। ইসস যদি কেউ বলতো সারা জীবন নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে পারবে কি না।
অনিন্দিতা নির্দ্বিধায় সম্মতি জানাতো। হঠাৎ কলিং বেশ বেজে উঠে। নির্ভীকের ঘুম খুব ই পাতলা। অনিন্দিতা চলে যাবে তাঁর পূর্বেই উঠে বসে। প্রচন্ড অবাক হয়ে বলে
_ আবার কেন এসেছেন ? আপনি আমাকে বদনাম করিয়ে ছাড়বেন।

_ আমি সে রকম কিছুর জন্য আসি নি।

_ আমাকে দেখতে এসেছেন তাই তো ?

ভদ্র মেয়ের মতো মাথা কাত করে অনিন্দিতা। নির্ভীক ভাষা হারিয়ে ফেলে। ঐ দিকে কলিং বেল বেজেই চলেছে। রাগে গজগজ করে উঠে। অনিন্দিতার দিকে তেঁতে আসে। মধ্য আঙুল উঁচিয়ে বলে
_ ফারদার এমন কিছু হলে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যাবে। আপনাকে ছাড় দিয়ে অন্যায় করেছি আমি।

_ আমি তো আপনাকে ডিস্টার্ব করি না নির্ভীক ভাইয়া। একটু কাছাকাছি থাকতে চাই শুধু।

যাওয়ার মাঝে থেমে যায় নির্ভীক। পেছন ঘুরে বলে
_ এটাই আমার সমস্যা। আমার কাছাকাছি থাকার অধিকার নেই আপনার। আপনি বয়সে আমার অনেক ছোট তবু ও কড়া কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি , মনে রাখবেন নির্ভীক মাহতাব নারী শরীরের নেশায় পরে না।

কথা টা বলেই চলে যায় নির্ভীক। মেঝে তে বসে পরে অনিন্দিতা। সন্ধ্যার সেই কথার জন্য এতো বড় কথা টা বলে গেলো নির্ভীক।

বৃষ্টি তে ভিজে একাকার চারুলতা। বাসার গাড়ি গুলো ছেলে আর স্বামী ই নিয়েই গেছে। নির্ভীকের গাড়ি ওয়াসের জন্য দেওয়া হয়েছে। তাই লোকাল গাড়িতেই গিয়েছিলেন। গলির মোর থেকে হেঁটে এসেছেন।

অনিন্দিতা টাওয়াল নিয়ে আসে। চারুলতা মাথা মুছে বলেন
_ এতো লেট কেন হলো দরজা খুলতে?

_ আমি ঘুমিয়ে ছিলাম আম্মু। আর অনিন্দিতার রুমে কলিং এর শব্দ পৌছায় না।

_ আরে এভাবে কেন বলছিস? আমি অন্য কিছু মিন তো করি নি । শুধু বলেছি , অনি মা যাহ তো আমার ঘর থেকে শাড়ি নিয়ে আয়। ভিজে শরীরে ঘরে যাবো না।।

অনিন্দিতা চলে যায়। চারুলতা নির্ভীকের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
_ আমার সোনা ছেলে। তোর প্রতি আমার পূর্ন বিশ্বাস আছে। এমন কিছু করবি না যাতে আমরা অসম্মান হই।

_ আর এমন কাজ করবে না কখনো। পরিস্থিতি ঠিক নেই , কিছু না ঘটলে ও মানুষ ঘটিয়ে ছাড়বে।

.

সকাল সকাল বেরিয়েছে নির্ভীক। ঘুম থেকে উঠে অনিন্দিতা তাই বুঝতে পারলো। সে বুঝে গেছে নির্ভীক তাঁর থেকে পালিয়ে বেঁচেছে। চারুলতা কাল আসার সময় নীল রঙের শাড়ি নিয়ে এসেছেন । আজ সেটাই পরবে অনিন্দিতা। পার্পল শাড়ি টা থাকলে পার্পল শাড়ি টাই পরতো। তবে সে শাড়ি তাঁর গায়ে উঠে নি। ভালোই হয়েছে নির্ভীকের সাথে বসে যখন যাওয়া হবে না পার্পল শাড়ি পরে কি লাভ ? অনিন্দিতা সাজ গোঁজ পছন্দ করে। তবে বেশ অনেক দিন ধরে সাজে না। আজ সাজবে, নির্ভীকের মনের মতোই সাজবে। অবশ্য অনিন্দিতা হলো বিষাক্ত গ্যাসের মতো যা সহ্য করতে পারে না নির্ভীক। শাড়ি পরে চুল গুলো ছেড়ে দিলো, হালকা মেকআপে মিষ্টি দেখতেই লাগছে। রুম থেকে বের হতেই আজমালের সাথে দেখা। অনিন্দিতা শুধাল
_ আজ অফিসে যাবেন না আঙ্কেল ?

_ শরীর টা ভালো নেই। তোকে পৌছে দেওয়ার জন্য ই যাবো না ভেবেছিলাম। এখন দেখি শরীর টাই মেজ মেজ করছে।

_ সমস্যা নেই আঙ্কেল। আমি একাই যেতে পারবে।

_ ওকি কথা ? আজ প্রথম দিন একা কেন যাবি ? নিহাল ও তো যাচ্ছে ওর সাথেই যাবি।

জুসের গ্লাস নিয়ে করিডোর দিয়ে আসতে আসতে কথা টা বললেন চারুলতা। আজমাল ওহ সম্মতি জানালো। অনিন্দিতা কিছু বলতে চেয়ে ও বললো না। চারুলতা গ্লাস টা এগিয়ে বললেন
_ নাস্তা তো করে যাবি না। বাসা থেকে খালি পেটে বের হতে নেই। জুস টা খেয়ে যাহহ।

_ আচ্ছা। নির্ভীক ভাইয়া এতো আগেই চলে গেলেন যে।

_ বলিস না আর পুরো বজ্জাত ছেলে। দেখ বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মজেছে। আজ তো ওর সব বন্ধুরাই আসবে ভারসিটিতে।

সবার দোয়া নিয়ে বের হয় অনিন্দিতা। নিহাল গাড়ি তে অপেক্ষা করছে। অনিন্দিতার দিকে তাকিয়ে স্বচ্ছ হাসলো। একটু প্রশংসার স্বরে বলল
_ দেখো আবার কাউ কে মন দিয়ে এসো না।

_ মন কেউ নিবে না নেহাল ভাইয়া।

_ সেকি কথা এতো সুন্দর মেয়েটার মন কেউ দিবে না।

_ হ্যাঁ। যাই হোক , ফেরার পথে আমি একাই ফিরবো।

ভ্রু কুটি করে তাকায় নিহাল। কথা টা যেন তাঁর পছন্দ হয় নি। অনিন্দিতার দিকে না তাকিয়ে স্টিয়ারিং এ হাত দেয়। তারপর বলে
_ বয়ফ্রেন্ড থাকলে তাঁর সাথেই আসতে পারো তবে সমস্যা হচ্ছে আম্মু বার বার বলে দিয়েছে তোমাকে নিয়েই ফিরতে।

_ একটু ম্যানেজ করে দিবেন প্লিজ । আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবো।

_ আচ্ছা সমস্যা নেই। তুমি আমাকে কল দিয়ে জানিয়ে দিও। মোরে এসে এক সাথে আসবো।

কৃতঙ্গতা প্রকাশ করে মেয়েটা। সিটে মাথা এলিয়ে দেয়। শরীর টা মেজ মেজ করছে। সারা বছর ই হালকা পাতলা অসুস্থ থাকে মেয়েটা। রোজ কান্নার ফলে চোখের নিচে দাগ থাকে। কেউ একটু খুঁটিয়ে দেখলেই ধরা খেয়ে যায়। কারন শরীরে থাকে অজ্রস আঘাতের রেখা।

গাড়ি পার্কিং এ রেখে চলে যায় নিহাল। অনিন্দিতা দম ফেলে হাঁটা লাগায়। শরীর দূর্বল লাগাতে এনার্জি ড্রিঙ্কস কিনে। ক্যাপ খুলে খাওয়ার আগেই মাথা ঘুরে যায়। তবে কেউ একজন আগলে ধরে। ব্যগ্র কন্ঠে বলে
_ ঠিক আছো অনি ? হঠাৎ পরে যাচ্ছিলে কেন ?

_ আসলে মাথা ঘুরে গিয়েছিলো।

_ নট ফেয়ার। নির্ঘাত নাস্তা করো নি। আসো আমার সাথে।

_ আমি ঠিক আছি আসিম। চলো ভেতরে যাওয়া যাক।

_ নো কোনো কিছু ঠিক নেই। তুমি এখনি নাস্তা করবে আমার সাথে। আর লিসেন কিউট গার্ল , ফাংশন এখনো শুরু হয় নি।

প্রচন্ড প্যারা খেয়ে যেতেই হলো অনিন্দিতা কে। আসিম বক বক করে যাচ্ছে। একটা রেসট্রন এ এসে দু কাপ কফি আর স্যান্ডুইচ অর্ডার করলো।
আসিম নাস্তা করে এসেছে তাই শুধু কফি ই খেলো। অনিন্দিতা সংকোচ ছাড়াই খাচ্ছে। আসিম কফি কাপে চুমুক দিয়ে বলল
_ বাই দ্যা ওয়ে আজ একা এলে যে ? নির্ভীক স্যার আসে নি তোমার সাথে ?

_ রোজ কি ওনার সাথে আসবো। আর ওনি তো আজ অনেক আগেই এসেছেন।

_ আচ্ছা। নির্ভীক স্যার কিন্তু অনেক কঠোর।

অনিন্দিতা হাসলো। সে এটা ভালো করেই জানে। আসিম কিছুক্ষণ নিরব থেকে অনিন্দিতার উদ্দেশ্য শুধাল
_ তুমি কি কোনো কারনে আপসেট ?

_ নাহ। আমি ঠিক আছি , তবে ভারসিটির কিছু স্টুডেন্ট একটু অন্য রকম আচারন করে।

_ আচ্ছা আসো আমার সাথে আমি প্রবলেম সলভ করে দিবো।

ভারসিটি তে প্রবেশ করতেই গোলাপ দিয়ে বরন করা হলো। আসিম অবাক করা এক কান্ড করলো।ফুলের গুচ্ছ থেকে পাঁচ টা ফুল নিয়ে অনিন্দিতার হাতে দিয়ে দিলো। অনিন্দিতা বলল
_ এতো গুলো নিলে কেন ?

_ তুমি স্পেশাল। তাই তোমার কাছে বেশি গোলাপ থাকবে।

খলবিলিয়ে হাসে অনিন্দিতা। আসিম একটু গায়ে পরা তবে খুব ভালো। অনিন্দিতা আসিমের সাথেই হাঁটতে লাগলো। ফুল হাতে নির্ভীকের কথাই ভাবছে সে।

এন এস ইউর বিশাল ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আসিম চিৎকার করে ডাকলো।
_ এটেনশন গাইস। লুক দ্যা বিউটিফুল গার্ল সী ইজ মাই পার্সোনাল ফ্রেন্ড। আই হোপ ওকে কেউ বিভ্রান্ত করবে না।
যদি এমন কিছু হয় তো জানোই তো কি হবে।

সবাই অনিন্দিতার দিকে তাকালো। আসিমের পড়াশোনা আর সৌন্দর্য দুটোর ই নাম ডাক আছে সাথে বাবার পাওয়ার। ছেলেটার এমন কান্ডে হতবাক হয় অনিন্দিতা। আসিম অনিন্দিতার দিকে তাকাতে ই অনিন্দিতা চোখ পাকায় যার অর্থ তুমি পুরো পাগল।
.

এসে থেকেই চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুঁজে চলেছে এক মানব কে। কিন্তু সে মানবের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। বুক টা কেমন করছে। শূন্যতা যেন ওকে আঁকড়ে ধরেছে।

হন্তদন্ত হয়ে খুঁজে চলেছে নির্ভীক কে। অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে বেশ অনেকক্ষণ। বেশির ভাগ সময় আসিম তাঁকে সাথে রেখেছে। তবে আসিমের বন্ধু মহলের সাথে অনিন্দিতা একা থাকতে তো পারে না। তাই সে নিজ থেকেই বলেছে আমি আশে পাশে ঘুরে আসি। আসিম বারন করে নি। সে নিজে ও বোধহয় স্পেস খুঁজছিল।

অনিন্দিতার সাথে দেখা হয় মেহেরিমার। হাত উঁচিয়ে ডাকে অনিন্দিতা কে। একটু অবাক হয় সে। মেহেরিমার কাছে গিয়ে বলে
_ Good afternoon miss.

_Good afternoon. এভাবে ছুটছো কেন অনিন্দিতা। শাড়ি পরে আছো , পা পিছলে যাবে তো।

_ এক্সচেলি মিস

_ ওকে। এক্সপ্লেইন করার প্রয়োজন নেই। তোমাকে খুব মিষ্টি লাগছে। বাই দ্যা ওয়ে তুমি বোধহয় বিব্রত হয়েছো।

_ নো মিস আম

অনিন্দিতা কে বলতে দেয় না মেহেরিমা। মৃদু হেসে অনিন্দিতার শাড়ির আঁচল ঠিক করে দেয়। ভারী অবাক হয় মেয়েটা। মেহেরিমা বলে
_ আমি আসিমের বড় বোন ।

_ হ্যাঁ।

_ ইয়েস। ওহ আমাকে তোমার কথা বলেছে আরো পাঁচ ছয় মাস আগেই।

_ ওহহ।

_ তোমাকে বলতেই হয় শুধু মাত্র এন এস ইউ তে এডমিশনের জন্য এক বছর গ্যাপ দেওয়া সত্যি ই দুষ্কর কাজ। আম ড্যাম সিউর তুমি তোমার লক্ষ্য জয় করবেই অতি শীঘ্রই ।

_ শুকরিয়া মিস।

_ ওকে ডিয়ার আমি যাচ্ছি, আসিম এর সাথে একদিন এসো বাসায়।

হাত নাড়িয়ে চলে গেলো মেহেরিমা। অনিন্দিতার চোখ বিচলিত হলো। চাতক পাখির মতো খুঁজে চলেছে প্রিয় ব্যক্তি টি কে। চোখ যায় ক্যান্টিনের দিকে। বুক টা ধক করে উঠে। নির্ভীকের সাথে রোজ অনেক ক্লোজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

অনিন্দিতা আর নিতে পারে না। দৌড়ে চলে যায় বাইরে। অসতর্কতার কারনে শাড়ি পিছলে পরে যায়। দুটো মেয়ে দেখে ও না দেখার ভান করে। অনিন্দিতা একা উঠার চেষ্টা করে। পায়ের হাঁটু তে বোধহয় ছিলে গেছে। ব্যথায় টনক নেড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ এক টা হাত তাঁর সামনে আসে, হাতে হাত রেখে উঠে দাঁড়ায়। নিহালের দৃষ্টি বিচলিত। সে শুধায়
_ এভাবে পরে গেলে কি করে ? এর জন্য ই শাড়ি পরা একদম ই পছন্দ নয়। দেখি কতো টা ব্যথা পেয়েছো। আসো হসপিটাল থেকে ওয়াস করে যাবে।

_ আমি ঠিক আছি নিহাল ভাইয়া। চলুন বাসায় যাবো।

_ একদম নয় আগে হসপিটালে যাবে দ্যান বাসায়। আচ্ছা একটু বসো আমি নির্ভীক কে নিয়ে আসি। ওহ ডিপার্টমেন্ট থেকে ট্রিটমেন্ট করার ব্যবস্থা করে দিবে।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_10

” সারপ্রাইজ টা কেমন দিলাম বল তো ? তোর বক বক না শুনলে আসলেই ভালো লাগে না। তাই চলে এলাম। তুই কানাডায় ফিরছিস কবে। তোকে ছাড়া দিন চলে না ইয়ার। ”

রোজের দিকে তাকিয়ে হাসছে নির্ভীক। এই মেয়েটা তাঁর হাসির কারন। দুদিন আগেই রোজ কে বলেছিলো ভালো লাগছে না। আর তাই রোজ চলে এসেছে। কৃতঙ্গতার দৃষ্টি দিয়ে নির্ভীক বলল
_ মনে হয় না যেতে পারবো আগামী দুই বছর। মাথা পুরো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনিন্দিতার পাগলামি বেড়ে গেছে। আমি আর নিতে পারছি না।

_ তুই ওকে সত্যি টা কেন বলছিস না ? আমরা কতো দিন লুকাবো বিষয় টা ?

_ আই ডোন্ট নো ইয়ার। তুই প্লিজ তোর বাসায় ম্যানেজ কর আমি খুব তাড়াতাড়ি কিছু একটা করবো।

_ আরে সেটা তে প্রবলেম নেই। মম ডেড এ বিষয়ে সমস্যা করবে না। বাট তুই কতো দিন অনিন্দিতার থেকে এভাবে পালাবি ? তুই তো পাগল হয়ে যাচ্ছিস। আঙ্কেল কে আমি বলবো কানাডার কথা ?

নির্ভীক চেয়ার টেনে বসে। রোজ তাঁর মসৃন হাতে নির্ভীকের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
_ তুই ঠিক আছিস তো ? আমি ও আর নিতে পারছি না। আমি কি অনিন্দিতার সাথে কথা বলবো?

_ নো। ওহ বুঝবে না। তুই জানিস কাল কি হয়েছে ওহ , আই কান্ট এক্সপ্লেইন ইয়ার। আম ড্যাম সিউর বিয়ের পর ওহ এমন পাগলামি করবে। তখন আমি কি করবো বল তো ? মান সম্মান বলে কিছু থাকবে ?

নাক ফুলিয়ে বসে রোজ। নির্ভীকের শার্টের কলার ঠিক করে দিয়ে বলে
_ নাও পারফেক্ট।

_ হেয়ালি করছিস কেন ?

_ স্টপ হেয়ার । তুই আমার সাথে কানাডায় যাবি। এমনি তে ও তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না। আর বিডি তে থাকা সম্ভব নয়।

কথা টা বলেই নির্ভীকের কাঁধে মাথা রাখে রোজ। নির্ভীক একটু করে হাসে। স্বস্তি টা এ মেয়ের মাঝেই পাওয়া যায়। তাই তো এতো ভালোবাসে।

দশ মিনিট খোঁজার পর ক্যান্টিনে নির্ভীকের দেখা মিলে। নিহাল এক প্রকার ছুটেই আসে। নির্ভীকের কপালে ভাজের সৃষ্টি হয়। নিহাল পর পর শ্বাস ফেলে ঢক ঢক করে পানি পান করে।
_ কি হয়েছে তোর? এভাবে হন্তদন্ত হয়ে আসছিস যে ?

_ দশ মিনিট ধরে পুরো ভারসিটি খুঁজে চলেছি তোকে।

_ আমাকে খুঁজছিস কেন ?

_ তোর ফোন অফ। আসলে অনিন্দিতা পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে।

কথা টা শোনা মাত্র ই বিষাক্ততা ছেয়ে যায় নির্ভীকের চোখে মুখে । মুখ দিয়ে বিরক্তিকর শব্দ তুলে। এ মেয়েটা শান্তি দিবে না। সত্যি দেশান্তর হতে ইচ্ছে করছে।
.

বাসায় ফিরে রেস্ট নিচ্ছে অনিন্দিতা। তিন দিন ভারসিটি তে যাওয়া লাগবে না বলে দিয়েছেন চারুলতা। নাছোড়বান্দা অনিন্দিতা পড়াশোনার দোহাই দিয়েছে। যাঁর ফলে আজমাল বলেছেন কয়েক দিন নির্ভীক তাঁকে পড়াবে। কথা টা শুনেই চোখ চক চক করে উঠেছে। রাত প্রায় সাড়ে আট টা। চারুলতা খাবার নিয়ে এসেছেন।
_ অনি খাবার গুলো খেয়ে নে তো মা। বেড রেস্ট করতে হবে এ কদিন।

_ আমি নিচে যেতে পারতাম আন্টি। শুধু শুধু কষ্ট করলে তুমি।

_ কথা বাড়াস না মা। খাবার কি খাইয়ে দিবো ?

_ আচ্ছা।

ভাতের লোকমা বাড়িয়ে দেয় চারুলতা। অনিন্দিতা সন্তপর্নে তা মুখে তুলে।ফোন বেজে উঠে। হীর ফোন করেছে। রিসিভ হতেই হীর বলে
_ এই আপু ব্যথা পেলে কি করে ? তোমার এন এস ইউর প্রথম দিনেই নাজেহাল অবস্থা। বাহহ , কাকে দেখে পিচলে গেলে তুমি। জিজুর নাম টা বলো প্লিজ।

_ থামবি তুই ! আশ্চর্য তোর দিওয়ানা থাকতে আমাকে ফোন করেছিস কেন ? গলায় ঝুলে গেলেই তো পারতি।

_ দিওয়ানা টা কে ?

_ বাসায় ফিরে আয় তারপর ই বোঝাবো তোকে। আমি তোকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবো দিওয়ানা টা কে।

ফোন রাখে অনিন্দিতা। খাওয়া প্রায় শেষ। চারুলতা বলে
_ নির্ভীক পড়াতে আসবে। বই নিয়ে বস অনি।

ডায়েরী বের করে অনিন্দিতা। নির্ভীকের হাস্য উজ্জল ছবি টা নিয়ে হাসে। উজ্জল শ্যাম রঙের সুশ্রী মুখ নির্ভীকের। আচ্ছা কোনো মানুষ ই তো পারফেক্ট নয়। তাহলে নির্ভীকের খামতি টা কোথায়। হাজারো পলক ফেলে ও খামতি খুঁজে পায় না অনিন্দিতা।

_ অনিন্দিতা ঠিক হয়ে বসুন।

দরজার ওপাশ থেকে কথা টা বলে নির্ভীক। এলোমেলো হয়ে বসে ছিলো সে। নিজেকে ঠিক ঠাক করে নির্ভীককে উদ্দেশ্যে করে বলে
_ আপনি আসতে পারেন।

নির্ভীক আসে। অনিন্দিতা এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। নির্ভীকের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাবে না আর। যথা সম্ভব লুকিয়ে প্রিয় মানুষটাকে দেখে যাবে। ফিজিক্স এর বই নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে নির্ভীক। অনিন্দিতা কে বলে
_ আপনার প্রথম আর শেষ ক্লাস টা আমার। অর্থাৎ ফিজিক্স আর ইংলিশ দুটো ক্লাস রয়েছে। তাই আমি ভারসিটি তে যা পড়াবো এই তিনটে দিন সেগুলোই পড়াবো আপনাকে।

_ আচ্ছা।

অনিন্দিতার বাড়তি কথা না পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে নির্ভীক। তবু ও অনিন্দিতা কে একটা বিষয় বলে
_ এন এস সিউর রুলস কি জানেন ?

_ না মানে আমি তো যেতে পারবো না কয়েকদিন।

কথা টা মিনমিনে স্বরে বলে অনিন্দিতা। নির্ভীক ভ্রু কুটি করে তাকায়। অনিন্দিতার উদ্দেশ্যে ছিলো শুধুই এন এস ইউ তে চান্স পাওয়া। কি রুলস আছে না আছে তার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। প্রয়োজনেই নির্ভীক বলে
_ পর পর তিনটে সাপ্তাহিক পরীক্ষা তে ফেল করলে সোজা বের করে দিবে। আর পর পর পাঁচ টা সাপ্তাহিক পরীক্ষায় 80% নাম্বার না পেলে দশ দিন সময় দেওয়া হবে যদি সে সময়ের মধ্যে পড়া শোনা কমপ্লিট করে এক্সাম এ ভালো করেন তহালেই ভারসিটি তে রাখবে আর না হলে বের করে দিবে। তাই আল্লাহর ওয়াস্তে একটু মনোযোগী হবেন।

_ জি আমি মেনে চলবো সব রুলস।

_ ওকে তাহলে দেখুন ফিজিক্স এর প্রথম অধ্যায়ে আজ কি পড়াবো।

অনিন্দিতা পড়ায় মনোযোগী হয়। নির্ভীকের জন্য পাগলামি কমবে না ঠিক ই তবে পাগলামি চলবে মনে মনে।

আজ বিকেলের ঘটনা। পা ওয়াস করার পর নির্ভীকের সাথেই এসেছে অনিন্দিতা। কারন নিহালের কোনো কাজ পরে গেছে। নির্ভীক এই সুযোগ টাই চেয়েছিলো। একটা খোলা মাঠের দিকে নিয়ে যায় অনিন্দিতা কে। অনিন্দিতার এতোটাই বিশ্বাস যে এক বার ও প্রশ্ন করে নি কেন তাকে এখানে নিয়ে আসা হলো। নির্ভীক অনিন্দিতার হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে বলে
_ আমাকে রেহাই দিন অনিন্দিতা। আপনি এমন সব কান্ড করছেন যে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি ও তো মানুষ ? আপনি ভালোবাসেন ঠিক আছে , তাঁর জন্য আমাকে কেনো কষ্ট দিচ্ছেন ?

_ আমি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছি ?

_ হ্যাঁ দিচ্ছেন। আমার দিকে এলোমেলো দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকেন, আমার জন্য ছুটে আসেন, পড়াশোনা করেছেন শুধুই আমার জন্য এই সব দেখার পর একটা মানুষ কতো টা অপরাধ বোধে ভুগে জানেন আপনি ?
আমার লজ্জা করে অনিন্দিতা। আপনাকে আমি বোঝাতে পারি না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি না।

নির্ভীকের শেষের কথা টুকুই অনিন্দিতার আত্মা কাঁপিয়ে তুলে। সে ঠিক করে নিজেকে সংযত রাখবে। সত্যি ই তো এখানে নির্ভীকের কি দোষ ? ভালো তে সেই বাসে , তহালে নির্ভীক কেন অপরাধ বোধে ভুগবে ? তা ছাড়া ওর হাত নিজ থেকে স্পর্শ করেছে নির্ভীক। এক টা আবেদন রেখেছে তাঁর কাছে। তাই ভেবে নেয় নিজের কলিজা টা পুরাবে , নিজের কষ্ট টুকু নিজেই গ্রহন করবে।

_ অনিন্দিতা !

নির্ভীকের কন্ঠ স্বরে ধ্যান ভাঙে অনিন্দিতার। হতচকিয়ে বলে
_ দুঃখিত স্যার।

নির্ভীক একটু অবাক হয় তাকে স্যার বলায়। তবে সে দিকে পাত্তা না দিয়ে ইংলিশ বই হাতে ঘাটতে থাকে। যথা সম্ভব অনিন্দিতাকে পড়া শোনা কমপ্লিট করাতে হবে।

*

পনেরো টা দিন কেঁটে গেছে। অনিন্দিতা নিজেকে সংযত রেখেছে বলতে শুধু মাত্র নির্ভীকের চোখ থেকে সংযত রেখেছে। আড়চোখে প্রিয় মানুষ টাকে দেখার লোভ সামলাতে পারে নি সে। নিজের কাজে নিজেই হাসে অনিন্দিতা। যাঁকে ছাড়া এক মুহুর্ত চলে না তার থেকে নিজেকে সংযত করার মিথ্যে প্রয়াস না করাই উত্তম। দাঘিমা রেখা বদলে শীতের আবির্ভাব ঘটেছে। কয়েক দিনেই পরিবেশ যেন শান্ত হয়ে গেছে। আবহাওয়া বিদ দের মতে পরিবেশের হঠাৎ পরিবর্তন ঘটেছে । না হলে এমন সময়ে শীতের আগমন ঘটতো না। নিজের বাসায় ফিরে এসেছে দশ দিন হতে চললো। এই কয়েক দিনে ভারসিটি তে যাওয়া হয়েছে মাত্র তিনদিন। কেন যেন ভারসিটির প্রতি অনিহা সৃষ্টি হয়েছে। বোধহয় নির্ভীকের না থাকাই এর প্রধান কারন। ভারসিটির কাজে আজ নয় দিন হলো ভারতে গিয়েছে নির্ভীক । কোনো এক বিশেষ অনুমোদন নিয়েই গেছে। অনিন্দিতার ফোন বেজে চলেছে অথচ তাঁর ধ্যান নেই। হীর হন্তদন্ত হয়ে বলল
_ এই আপু তোমার ফোন বাজছে।

_ কি ?

_ ফোন বেজে চলছে ধরো।

অনিন্দিতার মাথায় এখনো কথাটা ক্যাচ করে নি। সে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে হীরের দিকে। হীর বিরক্ত হয়, পৃথিবীর সাথে কথা বলছিলো সে। ছেলেটার সাথে রসায়ন জমেছে তাঁর। মামা বাড়ির দশ দিন ছিলো স্বপ্নের মতো। পৃথিবীর সাথে খুনসুটি ভালোবাসাতে পরিনত হয়েছে। এক গুচ্ছ কদম হাতে প্রপোজ করেছে তাকে। নিজের ভাবনা কে দমিয়ে ফোন তুলে নেয় হীর। রিসিভ করেই বলে
_ কে বলছেন, আপু গভীর ধ্যানে মগ্ন রয়েছে। ফোনের দিকে ধ্যান নেই তাঁর।

কথাটা শুনে দু ভ্রু সংকুচিত হয় আসিমের। হীরের বাজ খাই গলাতে এক প্রকার চমকে উঠে। কান থেকে নামিয়ে দেখে নাম্বার সঠিক কি না। হ্যাঁ নাম্বার তো ঠিক ই আছে। নিজেকে সামলে নিয়ে আসিম বলে
_ অনি কে দেওয়া যাবে ?

হীর তাঁর বাজ খাই গলায় অনিন্দিতা কে আপু বলে ডেকে নেয়। এবার সে কন্ঠ কর্নপাত হয় মেয়েটার। ফাঁকা ঢোক গিলে বিরক্তি প্রকাশ করে বলে
_ কি হয়েছে ?

_ তোমার ফোন।

_ কে করেছে ?

_ জানি না।

অনিন্দিতা কথা বাড়ায় না। ফোন হাতে তুলে নেয়। নাম্বার টা অচেনা দেখে একটু অবাক হয়। ফোন কানে তুলে সালাম দিয়ে বলে
_ কে বলছেন।

_ অনি আমি আসিম বলছি। ভারসিটি আসো না কেন তুমি ?

_ একটু অসুস্থ বোধ করছি আসিম।

অজুহাত না দিলে আসিম অনেক প্রশ্ন করবে তাই এটাই বেস্ট বলে মনে হয় অনিন্দিতার। তাছাড়া সত্যি ই সে অসুস্থ। সারা বছর ই ঠান্ডা জ্বর লেগে থাকে। আসিম সামান্য চিন্তিত স্বরে বলে
_ দ্রুত মেডিসিন নাও কেমন। আমি ফোন করে খবর নিবো তোমার।

_ আচ্ছা।

কথা টা বলেই ফোন রেখে দেয় অনিন্দিতা। আসিম ছেলেটা বন্ধুর থেকে ও বেশি কিছু। অনিন্দিতা উপলব্ধি করে আসিম তাঁর প্রতি একটু ঝুঁকে পরেছে। অবশ্য সে দিকে পাত্তা দেয় না সে। কারন সে নিজে ও আরেক জনের প্রতি ঝুঁকে আছে। কালের বিবর্তনে সে বুঝে গেছে মানুষ যাকে চায় তাকে পায় না। মিথ্যে সান্ত্বনা গুলো ই সময় কাটাতে সাহায্য করে। অনিন্দিতা তাঁর স্বপ্নের রাজ্যে গিয়ে নির্ভীকের বুকে মাথা রাখে। নির্ভীকের দিকে ভালোবাসার দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে। কোনো এক তীরের আঘাতেই হৃদয়ের ফাঁক ফোকর গলে ঢুকে পরেছিলো নির্ভীক নামক বসন্ত। যা থেকে পরিত্রাণ মানেই মৃত্যু। হয়তো শরীরের মৃত্যু ঘটবে না তবে আত্মার মৃত্যু ঘটবে নিশ্চিত।

বোনাস পার্ট

সকাল আট কি সাড়ে আটটা। বাড়িতে অনাকাঙিক্ষত অতিথীর আগমনে প্রচন্ড অবাক হয়েছেন শাহানা। মেইন ডোর খুলে হা হয়ে তাকিয়ে আছেন সামনে থাকা বিশ একুশ বছর বয়সী ছেলেটার দিকে। ফর্সা রঙের লম্বা করে ছেলেটাকে রাজপুত্র বললে ও ভুল হবে। এমন সুন্দর ছেলেটা কে এতোক্ষন ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন যে সে দিকে খেয়াল ই নেই। হঠাৎ ই ভেসে আসে সুন্দর ছেলেটার কন্ঠস্বর
_ হ্যালো আন্টি।

সচকিত হয় শাহানা। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে যেন লজ্জা পায়। কোনো প্রশ্ন না করেই বলেন
_ ভেতরো আসো।

_ জি।

ছেলেটা ভেতরে আসে। শাহানার বোধগম্য হয় ছেলে টা কে পরিচয় নিয়ে এখনো প্রশ্ন করেন নি ওনি। তাই বলেন
_ তোমাকে তো চিনতে পারলাম না।

_ আমি আসিম, আসিম মাহতাব। অনির বন্ধু বলতে পারেন। যদি ও এখন আমি এক ব্যাচ সিনিয়র।

_ ওহহ আচ্ছা আচ্ছা বসো তুমি আমি অনি কে ডেকে পাঠাই।

_ ইটস ওকে আন্টি। আমাকে অনিন্দিতার রুম দেখিয়ে দিন আমি গিয়ে দেখা করে আসি।

শাহানা একটু অবাক হোন। এতো টা নিঃসংকোচে কথা বলা তিনি আশা করেন নি। অধর কোনে হাসি ফুটিয়ে বলেন
_ ডান দিকের করিডোরের শেষ রুম টাই অনিন্দিতার।

হেসে কৃতঙ্গতা প্রকাশ করে আসিম। শাহানা নাস্তা বানাতে কিচেনের দিকে আগান।

অনিন্দিতার রুমে এসে উঁকি ঝুঁকি দেয় আসিম। তবে অনিন্দিতার দেখা পাওয়া যায় না। ফট করেই ঢুকে পরে ছেলেটা। যদি ও মেয়েদের রুমে ঢোকার আগে পারমিশনের প্রয়োজন হয় তবে সে পারমিশন নেয় না। একটু চঞ্চল প্রকৃতির ছেলেটা সোজা বারান্দায় চলে যায়। ব্যালকনির টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে অনিন্দিতা। নাকের সাইটে তেল জমেছে। রাতে নিশ্চয়ই এখানেই ঘুমিয়েছে। একটু করে ডাকে আসিম। তবে অনিন্দিতার ঘুম ছাপিয়ে সে ডাক কানে পৌছায় না। আসিম চোখ কুঁচকে নিয়ে অনিন্দিতার বাহু ধরে বলে
_ এই অনি, উঠো তো।

কথা টা জোড়ে বলায় হুরমুরিয়ে উঠে যায় অনিন্দিতা । মেয়েটা প্রচন্ড অবাক হয়েই বলে
_ তুমি।

_ তো , আসতে পারি না ?

হাই তুলে অনিন্দিতা। আসিমের গাঁয়ে জোরে ধাক্কা দেয়। প্রচন্ড অবাক হয় আসিম। খলবিলিয়ে হাসে অনিন্দিতা। হাই তুলে বলে
_ আমার ঘুম ভাঙানোর শাস্তি।

_ আর আমি যে তোমার চিন্তায় ঘুমাতে পারলাম না তাঁর কি হবে ?

_ এটা ও তোমার শাস্তি।

মুখ গোমড়া করে নেয় আসিম। অনিন্দিতা দম ফেলে আকাশের দিকে তাকায়। এতো সকালে এসেছে আসিম ?

_ কি ভাবছো তুমি ?

_ ভাবছি তুমি ছেলেটা খুব ভালো, তবে আমার প্রতি ঝুঁকে যাচ্ছো।

আসিম হাসে। অনিন্দিতার এক গুচ্ছ চুল হাতে পেঁচিয়ে বলে
_ আমি তোমাকে বন্ধুর মতোই ভালোবাসি অনিন্দিতা। সবাই বলে আমি অনেক সার্প মস্তিষ্কের , তাই তোমাকে অন্য নজরে দেখার সাহস হলে ও আগানোর সাহস হয়ে উঠে নি । তবে সত্যি বলতে বন্ধু্র থেকে ও বেশি ভালোবাসি।

কৃতঙ্গতার চোখে তাকায় অনিন্দিতা। আসিমের বাহু টেনে বলে
_ হয়েছে সার্প ব্রেনের অধিকারী। এতো ভালোবাসা লাগবে না , এখন বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।

_ আন্টি কিচেনে গেছেন। সো তোমার যেতে হবে না। আজ তুমি আমার সাথে ভারসিটি যাচ্ছো।

_ভালো লাগছে না আমার।

_ আপনার পড়াশোনার দায়িত্ব টা আমি নিয়েছি অনিন্দিতা।

কথাটা শুনেই ধুক করে উঠে অনিন্দিতার বুক। নির্ভীকের কথা যেন মাথায় আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। একটু করে দম ফেলে উঠে যায়। আসিম বলে
_ পালিয়ে যাচ্ছো অনি ? নিজের কষ্ট লুকিয়ে মরে যেতে চাও ?

অনিন্দিতার কি যেন হয়। ডুকরে কেঁদে উঠে মেয়েটা। আসিমের পায়ের কাছে বসে পরে। হাত দুটো মুঠো বন্দী করে বলে
_ আমি ওনাকে ভালোবাসি আসিম। আমি মরে যাবো, সত্যি ই মরে যাবো।

আসিম উত্তর দেয় না। নিজেকে শক্ত করে, অনিন্দিতা সেই সব প্রেমিকার দলে পরে যাঁরা উম্মাদ। যাঁরা ভালোবাসা কে অন্যের হাতে তুলে দিতে পারে না। ভালোবাসার ভালো চায় ঠিক ই তবে নিজের সাথেই দেখতে চায়। এক প্রকার ছ্যছরামি করে বেড়ায়। অনিন্দিতার জন্য মায়া হয় আসিমের। প্রথম থেকেই মেয়েটার প্রতি ঝোঁক ছিলো তাঁর। আইসক্রিম পার্লারে নির্ভীককে লুপ্ত দৃষ্টি তে দেখেছিলো অনিন্দিতা। সেদিন ই ঠিক করেছিলো অনিন্দিতার প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিবে। তবে কোথাও একটা সুপ্ত ভালোবাসা জাগে, যার ফলে সে নিজেকে ধাতস্থ করে অনিন্দিতার খেয়াল রাখবে। তবে এটা ও সত্য অনিন্দিতার প্রতি অনুভূতি আগাতে দেয় নি ছেলেটা।

[ অনিন্দিতার পাগলামি গুলো যদি নির্ভীক করতো তাহলে একটা ও নেগেটিভ মন্তব্য হয়তো আসতো না। মেয়েরা পাগলামি করলে সত্যি ই কি দোষ হয়ে যায়।একটা কথা, সবাই পারে না নিজের প্রিয় মানুষ কে অন্যের হাতে তুলে দিতে। কারন যতো যাই বলি প্রিয় মানুষ টি কে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে নিজে সুখী হওয়া যায় না। দু একটা ব্যতিক্রম থাকতেই পারে। যেমন আসিম , তবে এটা ও সত্য সে তাঁর অনুভূতি আগাতে দেয় নি। ]

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here