অব্যক্ত_প্রিয়তমা,23,24

0
277

#অব্যক্ত_প্রিয়তমা,23,24
#ফাতেমা_তুজ
#part_23

” অনি ”

” হ্যাঁ আসিম ”

” থমকে গেলে কেন ? ”

” না কিছু না তো, চলো ”

আসিম অনিন্দিতার হাত ধরে আবারো এগিয়ে যায়। পেছন ঘুরে চারপাশে চোখ ঘোরায় অনিন্দিতা। ভেতর টা কেমন যেন করছে। এই ডাকের সঙ্গে অনেক বেশি পরিচিত ওহ। নির্ভীকের উপস্থিতি অনুভব করার শক্তি হারিয়েছে সে। বহু দিন হলো ছেলেটার ছবি ও দেখা হয় নি। চর্চা না থাকলে সময়ের সাথে সাথে মানুষ তাঁর গুন হারিয়ে ফেলে যে , অনিন্দিতা তাঁর উদাহরন। অথচ একটা জিনিস কিছু তেই মিলছে না। আজ এতো গুলো দিন হয়ে গেল নির্ভীক কে ভুলতে পারে নি সে। সময় মানুষ কে পরিবর্তন করে তবে অনিন্দিতার মাঝে কেন এই পরিবর্তন হলো না ?

সন্ধ্যার আজান পরে যায়। আসিম আর আগায় না। যাওয়া প্রয়োজন, তাই আবারো পেছনে মোর নেয়। অনিন্দিতার পাশাপাশি হেঁটে চলে গাড়ির দিকে। হঠাৎ করেই আসিম লক্ষ্য করে অনিন্দিতা গভীর চিন্তা মগ্ন। তাছাড়া আশে পাশে চোখ বুলাচ্ছে। যেন কাউ কে খুঁজছে। বিস্ময় নিয়ে আসিম বলে
” কি হয়েছে অনি ? ”

” না কিছু না। এমনি তেই ভাবছিলাম কতো টা দেরি হয়ে গেল। ”

” আরে কিচ্ছু হবে না। আমি আমার ককপিট দিয়ে মিনিটেই চলে যাবো। আসো আসো ”

অনিন্দিতা হাসে। আসিম কে দেখে মনেই হয় না একটা কোম্পানি তে সবার উপর ছুড়ি ঘোরায়। ছেলেটার মাঝে চঞ্চলতা প্রচুর। বলতেই হয় লাখে একটা।

গাড়ি থামতেই ছুটে আসে হীর। অনিন্দিতা কে জড়িয়ে বলে
” কেমন আছো আপু ? ”

” ভালো আছি। অনেক লেট করে ফেললাম তাই না ? আমার অরু মাম্মাম কোথায় রে ? ”

” ঘরেই আছে। ”

অনিন্দিতা চলে যায়। হীর বলে
” আরে আসিম ভাইয়া আসুন। আপনাকে এখন অতিথির মতো বরন করতে হবে নাকি ? ”

” আরে ধ্যাত কি যে বলো। আমি হলাম ঘরের লোক। আসলে হয়েছে কি অরুর জন্য গিফ্ট এনেছিলাম সেটা বাসায় ফেলে এসেছি। ”

” তাঁতে কি ? ”

” তেমন কিছুই না। ওর জন্য চকলেট তো নিয়ে আসি এখন। না হলে আমার খারাপ লাগবে। ”

” হায়রে , তাড়াতাড়ি আসবেন। একদম ই সময় নেই। ”

” আচ্ছা। ”

আসিম চলে যায়। চোখে মুখে আতঙ্ক। এক হাতে ড্রাইভ করে অন্য হাতে কল করে ইশরাক কে। কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আসিম বলে
” কাজ টা কি ঠিক হচ্ছে ডক্টর ইশরাক ? ”

” কি বলতে চাচ্ছো আসিম? ”

” না বোঝার ভান করবেন না। আমি শিশু বাচ্চা নই।”

” আসিম ! ”

” প্লিজ । এবার অন্তত নির্ভীক স্যার কে ফোন টা দিন। ”

” সেটা কি করে সম্ভব? ওহ তো কানাডা তে আছে। ”

” কামন ডক্টর ইশরাক। আমি কানে কালা নই। অনিন্দিতা একা নয় আমি ও নির্ভীক স্যারের কন্ঠ শুনেছি। ”

ওপাশ থেকে কথা বলে না ইশরাক। রগরগা কন্ঠে আসিম বলে
” লোকেশন ম্যাসেজ করুন আমি এখনি আসছি। ”

ইশরাক লোকেশন পাঠিয়ে দেয়। স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে আসিম এগোয়। আজ একটা কিছু হবেই। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না।
.

আকাশে যেন হাজার খানেক তারা। সেই তারার দিকে নির্লিপ্ত চেয়ে আছে নির্ভীক। আসিমের রাগ হচ্ছে। এই মুহুর্তে নির্ভীক কে পাহাড় থেকে ফেলার ইচ্ছে জেগেছে। তবে সে ইচ্ছে সম্ভব নয়। আকাশের দিকে তাকিয়েই নির্ভীক বলে
” কফি খাবে আসিম ? ”

” কফি ! ”

” হুম কফি। আশ্চর্য কেন হচ্ছো ? পড়া শোনার কি অবস্থা। ”

” নির্ভীক স্যার। আমি এই বিষয়ে কথা বলার জন্য আসি নি। প্লিজ একটু সিরিয়াস হোন। ”

” কি বলতে চাও আসিম ? নির্ভীক সিরিয়াস নয়। ”

” তেমন টা বলি নি আমি , ডক্টর ইশরাক। আপনি দেখেছেন অনিন্দিতার পরিবর্তন? ওহ এখন ভালো আছে। ”

রহস্য হাসে নির্ভীক। পাহাড়ের খাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে এগিয়ে আসে আসিমের দিকে। বরাবরের মতোই আসিমের কলার উঁচু করা। এই স্টাইল টা নির্ভীকের বেশ পছন্দ। তবু ও সে এগিয়ে আসে আসিমের দিকে। কলার ঠিক করে দিয়ে বলে
” জীবনে অনেক বড় হবে তুমি। তবে অতিরিক্ত কনফিডেন্স একদম ই ভালো নয়। ”

” আমার কনফিডেন্স নিয়ে এখনো সন্দেহ স্যার? আমি আবারো প্রমান করে দিবো আমি কনফিডেন্স কেন। ”

নির্ভীক উত্তর দেয় না। লাইটার বের করে একটা সিগারেট ধরায়। বিন্দু মাত্র অবাক হয় না আসিম। কখনো সিগারেট মুখে তুলে নি ছেলেটা। তবে আজ খাবে। নির্ভীকের সাথে তালে তাল মিলিয়ে তিন তিনটে সিগারেট শেষ করে ফেলে। নির্ভীক বলে
” তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আসিম। ”

” হচ্ছে না। আমি ক্লিয়ার হতে চাই। ”

” কি ক্লিয়ার হতে চাও ? ”

” আপনি কানাডা থেকে এখানে কেন ? ”

” কিছু দিন পর এমনি তেই আসতে হতো। তাছাড়া রোজের শরীর টা ও ভালো নেই। বিডি তে একা আসা যাওয়া করা রিক্স হয়ে গেছে। তাই ওর সাথেই এসেছি। ”

” অনি কে ডাকলেন কেন ? ”

ভ্রু কুটি করে তাকায় নির্ভীক। আসিমের প্রশ্নের আগা মাথা বুঝতে পারে না। আসিম বলে
” আমরা যখন পাহাড়ের উপর উঠছিলাম তখন আপনার ডাক শুনেছি আমি। ”

” ওহ। ঠিক ই শুনেছো। আমি হঠাৎ অনিন্দিতা কে দেখে চমকে গিয়েছিলাম। নিজেকে লুকাবো কি করে , ঠিক বুঝতে পারি নি। ইশরাক আমাকে টেনে নিতেই আমি অনিন্দিতার নাম উচ্চারন করে ফেলি। আর কিছু ? ”

আসিম কথা বলে না। সিগারেট তুলে নিতেই হাত ধরে ফেলে নির্ভীক। বলে
” টিচার এর পাশে বসে তিনটে সিগারেট শেষ করেছো। এটা অনেক বেশি লজ্জাজনক বিষয়। আর খেও না কেমন ? ”

“এখনো বলবেন, আপনি অনিন্দিতা কে ভালোবাসেন না নির্ভীক স্যার? ”

” বহু বার একি প্রশ্ন করেছো আসিম। আমি উত্তর দিয়েছি। ভালোবাসি না বলেই আমি চলে গিয়েছিলাম। অনিন্দিতা কে কাছে ডাকার সাধ্য আমার নেই। তাই আমি চাই না আমার জন্য অনিন্দিতার কোনো ক্ষতি হোক। এবার তোমার যাওয়া প্রয়োজন। ”

আসিম উঠে চলে যায়। নির্ভীকের বলা কথা গুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ওভার কনফিডেন্স কে সত্যি কার অর্থে ব্যবহার করে দেখাবে আসিম।

” রোজ কে দেখে রাখিস। আমি যাচ্ছি, আর হ্যাঁ ভুলে যাস না ওহ প্রেগনেন্ট। ”

” নির্ভীক। আমাকে এখনো ক্ষমা করিস নি ? ”

” বলেছিনা না জীবন থাকতে তোকে কখনো ক্ষমা করবো না। আশা করি এখন তুই শুধরে গেছিস। জীবনে আর ভুল করিস না। সুখী হ। ”

অজানার পথে হাঁটে নির্ভীক। পেছন থেকে চিৎকার করে ইশরাক বলে
” আর যাই হই না কেন তোর মতো পাষান নই আমি। জীবনে সেক্ররিফাইজ টাই সব নয়। কিছু সময় প্রিয় মানুষ টা কে ও মূল্য দিতে হয়। এখনো সময় আছে নির্ভীক। তুই চাইলেই সব কিছু ঠিক হতে পারে। ”

আনমনেই হাসে নির্ভীক। পকেট থেকে ছোট ক জোড়া পুতুল বের করে তাকিয়ে থাকে।
সব কিছু ঠিক হয় না। ভালোবাসার কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না। ঠিক তেমনি ভাবে অনিন্দিতার প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই ওর। কিন্তু যাঁদের সাথে এতো গুলো বসন্ত পেরিয়ে এসেছে। তাঁদের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। যাঁর মাশুল গুনে গুনে দিবে নির্ভীক ।
.

” আসিম এতো দেরি কেন করলে তুমি ? ”

” স্যরি অনি। আসলে রাতের পরিবেশ টা উপভোগ করছিলাম । ”

” ধ্যাত আসো তো। তোমার জন্য কেক কাঁটা হয় নি। ”

মৃদু হাসে আসিম। অনিন্দিতা বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। অরু কে কোলে নিয়ে কেক কাঁটিয়ে নেয়। সবাই বেশ হৈ হুল্লরে মেতে উঠে। চারুলতার মন ভালো নেই। অনিন্দিতা বলে
” কি হয়েছে আন্টি ? ”

” কি হয় নি বল তো অনি। নির্ভীক টা পরে আছে কানাডায়। এদিকে নিহাল টা ও আসে নি। কতো বার ফোন করলাম , বলে কি না কাজের চাপে বিজি। একা একা বিজনেস করে কি হবে আমি বুঝি না। দুটো ছেলেই আমাকে পাগল করে দিলো।”

” সেসব বাদ দাও এখন আসো ডিনার করবে। ”

” হুমম। ”

ডিনার করে বসার ঘরে আসর জমায় সকলে। হীর , পৃথিবী , অনিন্দিতা আর আসিম আসে ছাঁদে। যে যার মতো ব্যস্ত কথা বলায়। কোনো কিছু ই ভালো লাগে না আসিমের। নির্ভীক এখনো ওর কাছে রহস্য। কি আছে এর পেছনে ?

” আসিম এদিকে আসো। ”

” হুমমম ভাই আসছি। ”

” একা কেন দাঁড়িয়ে আছো ? ”

” এমনি তেই ভালো লাগছে না। আচ্ছা পৃথিবী ভাই আমি রেস্ট নেই। আপনারা গল্প করুন। ”

” সেকি আসিম চলে যাবে মানে ? ”

” অনি তোমরা গল্প করো। আসলে আমি একটু ক্লান্ত। ”

” আচ্ছা তাহলে যাও। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমায় ডেকো। ”

” ওকে ”

সকল কে বিদায় জানিয়ে চলে যায় আসিম। ফোন হাতে নিয়ে ভাবতে থাকে কি করা যায়। রোজ আর ইশরাকের সম্পর্ক টা এখনো ঠিক ঠাক বুঝতে পারে নি ওহ। সব কেমন যেন এলোমেলো।

বেডে বসে বসে চিন্তাগস্ত হয় আসিম। কিন্তু কিছুই মাথায় আসে না। ব্যগ্র হয়ে ফোন করে আসিম। ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন কন্ঠ কানে আসে
” অনিন্দিতা ঠিক আছে আসিম ? ”

” নির্ভীক স্যার ! ”

” কি হলো বলছো না কেন ? ”

” আপনি এখনো স্বীকার করবেন না ? ”

” কি স্বীকার করবো। আসিম এখন বলো এই মাঝ রাতে ফোন করেছো কেন ?
অনিন্দিতা ঠিক আছেন। ”

” আশ্চর্য হই আমি। এতো খোঁজ খবর নেওয়ার পর ও বলবেন যে অনির প্রতি কোনো অনুভূতি নেই ? ”

” হুম আছে। অবশ্যই আছে , অনিন্দিতা আমার কাছে একজন স্টুডেন্ট। অনিন্দিতা আমার কাছে একজন মানুষ। অনিন্দিতা আমার কাছে একজন প্রেমি। যে আমার জন্য পাগলামি করে। আর সেই দায়িত্ববোধ থেকেই ওনার খবর নেই আমি। ”

উচ্চস্বরে হেসে উঠে আসিম। ওপাশে থাকা নির্ভীক থত মতো খায়। বলে
” হাসছো কেন তুমি ? ”

” উফফস স্যরি স্যার। আসলে হয়েছি কি আমি কখনো আপানকে কনফিউজড হতে দেখি নি। তবে আজ অনুভব করলাম আপনি প্রচন্ড কনফিউজড। কথা দিলাম আমি আমার ওভার কনফিডেন্স দিয়ে সব খুঁজে নিবো। ”

টুট টুট শব্দ হতেই ফোন টা ছুঁড়ে ফেলে নির্ভীক। পাশে থাকা ওয়াইন এর বোতল থেকে ওয়াইন ঢালে। সিগারেট জ্বালিয়ে চলে আসে ব্যলকনিতে। শির শির বাতাসের সাথে ওয়ানে চুমুক দেয়। সাথে উড়িয়ে নেয় নিকোটিনের ধোঁয়া। চোখ থেকে নামে যায় বর্ষন। তাচ্ছিল্য হেসে এক নিমিষে ওয়াইন শেষ করে বলে
” মানুষ হলো পৃথিবীর সব থেকে অভাগা প্রানী। ”

** ধৈর্য ধারন করে গল্প পড়ুন। ব্যতিক্রম গল্প হওয়ার কারনে হয়তো একটু অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু গল্পের সমাপ্তি যখন আসবে তখন কোনো কনফিউশন থাকবে না ইনশাআল্লাহ ।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_24

অনিন্দিতা মনের খেয়া তে যেন পানি উঠেছে। সেই থৈ থৈ জলে যেন মেয়েটা ভেসে যাচ্ছে। একটু আগে শুনতে পেয়েছে রোজ প্রেগনেন্ট। ঠিক সেই সময় থেকে বুকের ভেতর নুইয়ে থাকা ভালোবাসার জ্বালা টুকু হাজার খানেক সৈন্য নিয়ে রক্তক্ষরণ করে যাচ্ছে। চোখ থেকে পানি না গড়ানো টা যেন ওকে আরো বেশি যন্ত্রনা দিচ্ছে। এলোমেলো হাতে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পরে অনিন্দিতা। মেয়ে কে বেরিয়ে যেতে দেখে শাহানা বলেন
” অনি এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছিস মা ?”

” একটু দরকার আছে আম্মু। ”

” তোকে তো বলেছিলাম আজ তোকে দেখতে আসবে। তুই তো বললি বিয়ে তে আপত্তি নেই। আমাদের পছন্দ ই তোর পছন্দ। ”

চোখ বন্ধ করে নেয় অনিন্দিতা। রোজের প্রেগনেন্ট হওয়ার খবর শুনে কি বলেছে নিজে ও জানে না। সোফা থেকে উঠে অনিন্দিতা কাছে আসেন শাহানা। কপালে হাত রেখে বলেন
” শরীর অসুস্থ লাগছে ? ”

” না আম্মু। আমার একটু বাহিরে যাওয়া প্রয়োজন। ”

” আচ্ছা যাহ। তবে সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসবি কেমন ? ”

” আচ্ছা। ”

বেরিয়ে আসে অনিন্দিতা। হঠাৎ করেই রোজ কেন ওকে জুরুরি তলব করলো ঠিক বুঝতে পারছে না। কঠোর বেদনা দেওয়ার জন্য ই কি এই স্বাক্ষাৎ। আনমনেই হেঁটে যাচ্ছিলো অনিন্দিতা। অন্যমনস্ক হওয়ার কারনে পা পিছলে যায়। খপ করে হাত ধরে ফেলে নিহাল। ভ্রু কুটি করে বলে
” মন প্রান সব কিছু কোথায় ফেলে যাচ্ছো অনি ? সাবধানে যাও। ”

” আসলে স্লিপার টা পিচ্ছিল। ”

” ওহ। সাবধানে যাও। ”

নিহাল পথ আগায়। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় অনিন্দিতা। চোখ দুটো কেমন জ্বলছে। কান্না আসতে চাইছে না বরং দু আঁখি তে আগুনের উত্তাপ নেমে যাচ্ছে। ডায়েরী টা মেলে অনিন্দিতা। আজ এই ডায়েরীর পরি সমাপ্তি ঘটবে।

পেটে হাত দিয়ে বসে আছে রোজ। ভালোবাসার চিহ্ন বহনে এমন স্বাদ পাওয়া যায় জানা নেই মেয়েটার। চোখের কোনে পানি জমেছে। আবার কোথাও একটা যন্ত্রণা হচ্ছে। আপন মানুষ গুলো ভালো না থাকলে সব সুখ যেন তিক্ততার রূপ ধারন করে। প্রায় মিনিট দুয়েক ধরে রোজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনিন্দিতা। রোজ কোনো কথাই বলছে না। রাগে চোয়াল শক্ত হয় মেয়েটার। অনাগত অতিথি কে কেন জানি সহ্য হচ্ছে না। নিজের প্রেমের পরিনতি এভাবে অন্যের হতে দেখে বোধহয় কেউ ই সহ্য করতে পারে না। চার পাশে চোখ বুলিয়ে বলে
” কোন দরকারে আমাকে ডেকেছেন রোজ। ”

” পাশে বসো। ”

” ইচ্ছে নেই। ”

” আরে বসোই না। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে আমার কষ্ট হবে। বসো ”

অনিন্দিতা বসে না। বরং চোখ মুখ শক্ত করে বলে
” আমি জানি আপনি প্রেগনেন্ট। আপনি বোধহয় এটা জানাতেই আমাকে ডেকেছেন। সমস্যা নেই নির্ভীক মাহতাবের সন্তানের জন্য শুভ কামনা। এখন আমি আসি। ”

পথ বাড়ায় অনিন্দিতা। রোজ যেন আকাশ থেকে পরেছে। পরমুহূর্তেই মনে পরে অনিন্দিতার কথা। এগিয়ে আসে রোজ। বলে
” তুমি ভুল জানো অনিন্দিতা। আমি তোমাকে অন্য কিছু জানাতে চাই। ”

” কি জানাবেন আপনি ? এই যে নির্ভীক ভাই আমাকে ভালোবাসে না। এই যে এক আকাশ সমান ভালোবাসা কে অভিনয় ভাবেন তিনি। এটাই যে আমার সূক্ষ্ম মনের অনভূতি কে কবর দিয়েছেন তিনি। এটাই যে আমি ওনার জীবনের কাঁটা স্বরূপ। এটাই যে আমি ওনাকে মৃত্যু সম যন্ত্রণা দেই। এটাই যে আমি ওনাকে নিয়ে কোনো বাজি তে মেতেছি ? আমি বাজে মেয়ে। ভালোবাসা কে কাছে পাওয়ার কল্পনা কে নষ্ট চিন্তা ধারা বলে। মেনে নিয়েছি তো ? আর কি জানাতে চান। নির্ভীক ভাই আমাকে ভালোবাসে না। সব থেকে বড় কথা ওনি আমাকে ঘৃনা করেন। সব মেনে নিয়েছি।
জানি না তারপর ও কোন কারনে এই বাচ্চার জন্ম। আদৌ কি এটা কোনো নৈতিক প্রান তাও জানি না। আপনাদের মানসিকতা আমাকে রক্তাক্ত করেছে। ছিই আমি তো ”

কথা শেষ করতে পারে না অনিন্দিতা। তাঁর আগেই থাপ্পড় বসিয়ে দেয় রোজ। এক হাত পেটে রেখে বড় বড় শ্বাস নেয়। অনিন্দিতার দিকে আঙুল শাসিয়ে বলে
” এই মেয়ে কি জানো তুমি ? কতো টুকু জানো তুমি। এই বাচ্চা টা নির্ভীকের একবার ও বলেছি আমি। এটা আমার সন্তান , আমি যাকে ভালোবাসি তাঁর সন্তান। আমাদের বিচ্ছেদের তিন বছর পার হওয়ার পর আমরা আবার এক হয়েছি। সেই ভালোবাসার সন্তান। ”

রোজের কথা বুঝতে পারে না অনিন্দিতা। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। ডুকরে কেঁদে উঠে রোজ। বলে
” ইশরাক হলো আমার স্বামী। আমি , নির্ভীক আর ইশরাক বেস্ট ফ্রেন্ড। ভালোবেসে সবার মতামত নিয়েই বিয়ে হয় আমার আর ইশরাকের। মাঝে আমার সাথে প্রতারনা করে ওহ। অন্য মেয়ের সাথে প্রেমে জড়ায়। ভেঙে যায় আমাদের সংসার। কাগজে কলমের বিচ্ছেদ না ঘটলে ও মনের বিচ্ছেদ ঘটে যায়। তাঁর থেকে বড় কথা নির্ভীকের সাথে ইশরাকের সম্পর্ক তিক্ততায় পরিনত হয়। ইশরাক কে খুব মেরেছিলো সেদিন। আমি আটকে নিয়েছিলাম ওকে। কারন ভালোবাসি তো।
সেদিন থেকে নির্ভীক আর আমার বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়। আমাকে আগলে রাখে ওহ। আর এই সম্পর্ক কে তুমি অনৈতিক বলে সম্বোধন করছো ? ”

কাঁদতে কাঁদতে বেঞ্চে বসে পরে রোজ। অনিন্দিতার দু চোখে বৃষ্টির ফোয়ারা নেমেছে। একটু আগে কি বলে দিয়েছে ওহ। বুকের ভেতর ধক করে উঠে। দু চোখ মুছে রোজ। অনিন্দিতার বাহু তে হাত রেখে বলে
” বাঁচাও নির্ভীক কে। ছেলে টা মরে যাবে। শেষ হয়ে যাবে ওহ। অনেক ভালোবাসে তোমায়। অনেক ভালোবাসে, যতো টা তুমি বাসো তাঁর থেকে বেশি ভালোবাসে। কানাডায় এমন কোনো দিন নেই যেদিন পাগলামি করে নি নির্ভীক। এমন কি এক্সাম হলে ও তোমার নামে সংলাপ বলেছে। খাতায় লিখেছে তোমার নাম। সেই পাগল প্রেমিকের গল্প শুনেছে স্বয়ং প্রফেসার । ওহ তোমায় ভীষন ভালোবাসে অনিন্দিতা। বিশ্বাস করো তোমাকে করা আঘাতের দ্বিগুন যন্ত্রনা নিজে নিয়েছে। কখনো বুঝতে দেয় নি। কখনো বুঝতে দিবে ও না। ছেলেটা কে বাঁচাও অনিন্দিতা। ফ্লাইট মিস হওয়ায় আজকে কানাডায় যেতে পারবে না ওহ। তবে অতি দ্রুত চলে যাবে বলেছে। ”

সর্বাঙ্গে যেন কেউ পাথর চেপে দিয়েছে। শরীর কাঁপছে মেয়েটার। অস্ফুটন স্বরে বলে
” ওনি কোথায় ? ”

” ইশরাকের সাথে পাশের লেকেই আছে। ওহ জানে না আমি তোমাকে আসতে বলেছি। দ্রুত যাও অনিন্দিতা। আজকে তোমার বিয়ের ”

রোজের কথা শুনতে পায় না ওহ। তাঁর আগেই ছুট লাগায় বহদূর। রোজ চমকায়। হিচকি উঠে যায় ওর। এ প্রেমের পরিনতি এতো নিষ্ঠুর কেন হচ্ছে ? একটা সংসারের জন্য দুটো মানুষের মন ই কি যথেষ্ট নয় ?
.

পাশে জমিয়ে রাখা কংক্রিট। একটা একটা করে লেকের পানি তে ছুড়ছে নির্ভীক। ওর পাশেই বসে নিষ্পলক চেয়ে আছে ইশরাক। বহু যন্ত্রনা জমে আছে মনে। হৃদপিন্ড যেন বুক চিরে বেরিয়ে আসে।নির্ভীকের চশমা খুলে ফেলে ইশরাক । আনমনেই হেসে বলে
” কি দরকার চশমা পরার ? সেক্রিফাইস করেই জীবনে অনেক জ্ঞানীর পরিচয় দিচ্ছিস। আর তো প্রয়োজন নেই। ”

” জ্বালাস না ইশরাক। বলেছি তো তোকে কখনোই ক্ষমা করবো না। ”

” নেশা তো করিস নি। নেশাক্ত কথা কেন বলিস ? ”

” মনের নেশার থেকে তোর দু প্যাকের ওয়াইন বড় কোনো নেশা হয়ে গেল। মন কে মানাতেই মনের নেশা করেছি। ওয়াইন পান করি নি আমি। ”

” নিজেকে সামাল দেয় নির্ভীক। এখনো অনেক সময় আছে। ”

” সময় তো ফুরিয়ে গেছে আরো নয় বছর আগেই। ভালোবেসে পাপ করেছিলাম আমি। কিশোরীর প্রেমে পরে অন্যায় করেছিলাম। আমার মতো পাগল কেউ নেই রে। তেরো বছরের মেয়ের প্রেমে পরেছি আমি। কিংবা আরো ছোট থেকেই অনভূতি গড়েছি। ”

” এতো ভালোবাসার পর ও কেন জীবন্ত কবর দিচ্ছিস নির্ভীক। সব কিছুর সমাধান হয় আর তুই নিজেই চাইছিস না সমাধান।”

” প্রকৃত প্রেমিক হলে অনিন্দিতা কেই বেছে নিতাম আমি। ছোট্ট সংসার গড়ার এবিলিটি আমার আছে। তবে কি জানিস আমি স্বার্থপর নই। ”

নির্ভীকের বাহু তে হাত রাখে ইশরাক। ব্যাথাতুর কন্ঠে বলে
” প্লিজ নির্ভীক আমি কথা বলি সবার সাথে ? ”

” একদম নয়। ভালোবাসার শাস্তি আমার আর অনিন্দিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আমি চাই না আমাদের জন্য বাকি মানুষ গুলো কষ্ট পাক। ”

” ডাফার সারা জীবন কষ্ট পাবি তোরা। ”

” সব জেনেই তো ভালোবেসে যাচ্ছি। শুধু ক্ষমতা নেই কাছে টানার। সমস্ত ভালোবাসার পূর্নতা হয় না। কিছু প্রেম তো অব্যক্ততার মাঝেই শেষ হয়ে যায়। অথবা শেষ হয়ে ও হয় না শেষ। আমার ভালোবাসা অব্যক্ত ই থাক। ”

একটু থামে নির্ভীক। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে যেন চোখ জ্বলসে যায়। অনিন্দিতা ও সূর্যের মতো। বলে
” দেখ তোর আর রোজের বিষয় টা ছিলো অন্য রকম। ইনফেক্ট তদের মাঝের দূরত্বের কারন ছিলি তুই। নিজের ভুল বুঝতে পেরে এখন ফিরে এসেছিস। রোজ ও তোকে মেনে নিয়েছে। কিন্তু আমার আর অনিন্দিতার মাঝে আছে দেয়াল। শক্ত পোক্ত দেয়াল।কিছু প্রতিজ্ঞা কিংবা প্রতিশ্রুতি। সেই সময় টা আমি নিজের চোখে দেখেছি। আমি নিজের স্বার্থের জন্য ওদের কষ্ট দিতে পারবো না। ”

” পাগল একটা। ”

” বদ্ধ পাগল। অনিন্দিতা কে ভালোবেসে মরে যে যাই নি এটাই আমার শত জন্মের ভাগ্য। অদ্ভত ভালোবাসা, দুটো মন একে অপর কে আঁকড়ে আছে অথচ বাস্তবতায় অনিন্দিতা কে কাছে টানার কোনো এবিলিটি নেই আমার। রাসকেল আমি। মেয়েটার চোখের পানি দেখে ও চুপ থাকতে হয়। বলতে পারি না অনিন্দিতা আমি আপনাকে ভালোবাসি , নিজের থেকে ও বহু গুন বেশি ভালোবাসি। ”

” কেন বলতে পারেন না নির্ভীক ভাই ? ”

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here