মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড় #পর্ব_১০ (বোনাস-২),১১

0
491

#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১০ (বোনাস-২),১১
Tahrim Muntahana
১০

রাত ১০ টা বাজে। রেস্টুরেন্টের এই আলোকসজ্জা যেন চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মনের মধ‍্যে শান্তি, আনন্দ না থাকলে পরিবেশ যতই আনন্দঘন হোক সবকিছুই বিষাদ লাগে। তেমনি রেস্টুরেন্টে বসে থাকা সবার মনেই বিষাদ ঘেরা। আদর সেই যে কান্না শুরু করেছে আর থামার নাম ই নেই। হৃদানের কাছে নিজ পৃথিবীটা এলোমেলো লাগছে। উলোটপালট করে দিতে ইচ্ছে করছে সবকিছু। যার কান্না তার হৃদয়টাকে ক্ষত বিক্ষত করে দেয়, নিরব রক্তক্ষরণ হয় সেই মেয়েটি প্রায় ২০ মিনিট ধরে তার বুকে কাঁদছে। আর তাকে সেটি মানতে হচ্ছে। কিন্তু এখন সে মানতে পারছে না। এখন মনে হচ্ছে সে নিজেই মারা যাচ্ছে। আর আতইয়াব! সে তো এখন থেকেই নিরব কেঁদে যাচ্ছে। তার যে বোনের চোখে এক ফোঁটা পানি সহ‍্য হয় না। কিন্তু তার বোনকে সে কিছুই বলতে পারছে না। তার কাছে সবকিছুই ধোঁয়াশা লাগছে। হৃদান ধমক দিয়ে বলে উঠলো,

স্টপ ক্রায় আদর। কিছু বলছি না বরে সুযোগ পেয়ে গেছো। থামতে বলেছি আমি। তোমার কান্নায় আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় আদুপরী। কেন কাঁদছো। প্লিজ সে। আ’ম ওয়েটিং।

ধমক শুনে আদর কান্না থামিয়ে দিলেও কান্নার ধাঁচে এখনো তার শরীর মৃদ কাঁপছে। হৃদানের দিকে একপলক তাকিয়ে সামনে তাকালো সে। হাসান শিকদারকে দেখেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো। রাগ হচ্ছে তার এখন। তবুও শান্ত সুরে বলে উঠলো,

আমার বাবা কোথায় মি. শিকদার?

আতইয়াব চমকে উঠলো। ঘামতে শুরু করলো সে। কি বলছে আদর? বাবা কোথায় মানে? ও কি সব জেনে গেছে? কিভাবে জানলো? কি হবে সামনে? আদরের কথায় হৃদান ও চমকালো। আদরের বাবা! আদরের কোনো দিক খেয়াল নেই। ঠাস করে চড় বসাতে নিলেই হৃদান হাত ধরে ফেললো। এই মুহূর্তে তার বড় ছোটর খেয়াল নেই। যে তার অপরাধী তাদের সে একটুও ক্ষমা করে না। আদরের আচরণে সবাই বিশাল অবাক হচ্ছে। আদরের এমন ব‍্যবহার কেউ নিতে পারছে না। হৃদান আদরের হাত আলতো ভাবে ছুঁয়ে দিয়ে বলল,

এই হাত পবিত্র! আমার হৃদয়ের ফুল তুমি। এই হাত দিয়ে অপবিত্রতায় স্পর্শ করা নিষেধ।

আদর মায়াবী চোখে তাকিয়ে রইলো আদর। হৃদান আরেকটু কাছে এসে বললো,

কে তোমার বাবা?

সবাইকে অবাক করে দিয়ে আদর বলে উঠলো,

কমিশনার আহনাফ চৌধুরী!

হৃদান দু’পা পিছিয়ে গেলো। কি বলছে আদর। তার সুপারহিরোর মেয়ে আদর? কি করে সম্ভব! হৃদানের অবাক হওয়া দেখে আদর মুচকি হাসলো,

হ‍্যা আপনার সুপারহিরো আমার বাবা। একজন সৎ পুলিশ কমিশনার।

আতইয়াব আর নিতে পারছে না। আদর কে হারিয়ে ফেলার ভয় তার হৃদয়কে প্রচন্ড ভাবে গ্রাস করছে। তারিম আতইয়াবের একটি হাত শক্ত করে ধরে রইলো। আতইয়াব যেন ভরসা পেলো। এই হাতটা যেন তাকে বলছে, ‘রিলেক্স, কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তো!’ আতইয়াবের এমন অবস্থা দেখে আদর হৃদান কে ছেড়ে তার দিকে এগিয়ে গেলো। আতইয়াব করুণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আদর আতইয়াবের গালে হাত দিয়ে আবেগি কন্ঠে বলল,

ভয় নেই। বোন টা ডক্টর আতইয়াব তাযিন ইততেয়াজের। হারাবো না। ভাই-বোনের সম্পর্ক আজীবনের! হৃদয়ের সাথে মিশে থাকে না?

আতইয়াব ঝটপট আকড়ে ধরলো আদরের হাত। চোখ তার পানিতে টইটম্বুর। আদর আবার হৃদানের কাছে ফেরত এলো। হৃদান হিসেব মেলানোর চেষ্টায় ব‍‍্যস্ত।

সব জানতে পারবেন আগে এর স্টুপিডের কাছে শুনুন আমার বাবা কোথায়?

হৃদান আদরের চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। আজ সেই বাচ্চা আদর কে কতটা ম‍্যাচিউর লাগছে! হাসান শিকদারকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই একজন গার্ডকে ইশারা করলো। গার্ডটি হাতে করে একট ব‍্যাগ হৃদানের কাছে নিয়ে এলো। নিচু হয়ে গার্ডটি ব‍্যাগ থেকে ছুরি, রিভলবার, প্লাস, চিমটা আরো কিছু সরঞ্জাম ফ্লোরে সাজিয়ে রাখলো। হাসান শিকদার সহ উপস্থিত সকলেই আতকে উঠলো ; হৃদানের লোক ছাড়া। হৃদান বাঁকা হাসলো। আদর এত কিছুর পরেও স্ট্রং থাকার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। উপরের কঠিন সত্তাটাকে ছুড়ে ফেলে ভেতরের নরম সত্তাটা বের হয়ে আসতে চায়ছে। এত অস্ত্র দেখে তার ভেতর টাও কেঁপে উঠছে। হৃদান আদরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আদর ভড়কে গেলো। হৃদান ঠিক ধরতে পেরেছে আদরের মনের অবস্থা। গার্ডকে সম্মতি দিয়ে আদরের কাছে চলে গেলো। গার্ডটি বাঁকা হাসলো। এসব করতে করতে সে এমন পরিস্থিতিতে চলে এসেছে তার এসব না করলে শান্তি লাগে না। গার্ডটি এগিয়ে যাবে আদর থামিয়ে দিলো। তখনি দরজায় নক পড়লো। আদর গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ভেতরে ঢুকলো পান্চু। হাতে ডায়েরী! হ‍্যাঁ এটাই আদরের সেই ডায়েরী ; যা আতইয়াবের ভয়ে লুকিয়ে রেখেছিলো। আদর এবার গার্ডকে তার কাজ করতে বললো। আদর পান্চুকে কিছু বলবে পেছন ফিরে দেখে পান্চু নেই। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে পান্চু পিয়াসের পেছনে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। পান্চুর কাজে আদরের এই পরিস্থিতি তেও হাসি পেলো। হেসেই দিলো। আদরের হাসিতে পান্চু অপমানিত হলেও গায়ে নিলো না। গায়ে নিয়ে বেশী বাহাদুরি করতে গেলে নিজের ইজ্জত সে নিজের হাতেই শেষ করবে। কখন যে প‍্যান্টে হিসু করে প‍্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে কে জানে। পান্চুর ভাবভঙ্গি দেখে আদর জোরেই হাসলো। পান্চুর কাছে মনে হচ্ছে আদর তাকে বিদ্রুপ করছে। নাহ এ মেনে নেওয়া যায় না! সে কি ভিতু নাকি; খুব সাহসী সে। আজ এই অপমানের নিরব জবাব সে তার সাহস দেখিয়েই দিবে। পিয়াসের পেছন থেকে সরে গিয়ে পাশে দাড়ালো। অন‍্যান‍্য গার্ডদের মতোই বুক ফুলিয়ে দাড়ালো। নিজেকে সাহসী প্রমাণ করার একটা পথ আরকি। যখন আদরের দিকে তাকিয়ে প্রতিবাদী হাসি ফিরিয়ে দিবে ঠিক তখন মি. হাসান ঘর কাঁপানো চিৎকার করে উঠে। আর পান্চু! ভয় পেয়ে আল্লাহ গো বলেই পিয়াসের পেছনে গুটিসুটি মেরে দাড়িয়ে গেলো। তার এত সাহসী হওয়ার কাজ নাই! আগে জীবন পরে ইজ্জত! এখানে তার বিয়ে করা বা না করা বউ নেই যে ইজ্জত ধরেই রাখতে হবে নাহলে সারাজীবন খোটা দিবে!

পিয়াসের পান্চুর দিকে কোন খেয়াল ই নেই। সে তাকিয়ে আছে তার বাম হাতের দিকে। যেখানে একটা মেয়ের হাত বিচরণ করছে। শুধু বিচরণ না চিমটি, খামচি যা পারছে দিয়ে যাচ্ছে। আর মেয়েটি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে হাসান শিকদারের নাকের উপর। পিয়াস নিজের কাজ শেষে আতইয়াবদের এখানেই দাড়িয়ে ছিলো। তার সম্পূর্ণ ধ‍্যান সামনের দিকে তাই পেছন বা সাইডে কে আছে দেখতে পায়নি। হাসান শিকদারের নাক যখন প্লাস দিয়ে চেপে ধরা হয় তখন সে চিৎকার করতে থাকে। সেই চিৎকারেই মেয়েটি উত্তেজিত হয়ে একের পর এক চিমটি খামচি দিয়ে যাচ্ছে। বলি শশুড়ের পোলার হাত পাইছে নাকি?আজব। কিন্তু পিয়াস অবাক হচ্ছে এটা ভেবে যে পান্চুর মতো একজন গার্ড এসবে ভয় পেয়ে কাঁপছে; মেয়েটি চোখ বড় বড় করে দেখছে। ভয়ের রেষমাত্র নেই! মেয়ের সাহসের উপর পিয়াস গভীর ভাবে ক্রাশ খেলো। মেয়েটি হলো রোহানি। সে একাই দাড়িয়ে ছিলো মাঝখানে দুজন চলে আসে। এতক্ষণে রোহানির খেয়াল হলো সে কি করছে। ফট করে পাশে তাকাতেই পিয়াস কে দেখে ভয় পেয়ে গেলো। হয়তো ভাবছে তাকে য‍দি মেরে দেয়। পিয়াস মুচকি হাসলো। মেয়েটিকে দেখে তার মা মা লাগছে না। কেমন অন‍্যকিছুর আভাস পাচ্ছে সে। তাহলে কি সে এই বছরেই হানিমুনে যেতে পারবে! কিয়া বাত হে! দিলটা খুশিতে ভরে গেলো!

হৃদান আদরের মাথাটা একদম বুকের সাথে চেপে রেখেছে। যেন বুকের মধ‍্যেই ঢুকিয়ে দিতে পারলে তার শান্তি।‍ যত বার হাসান শিকদার চিৎকার করে উঠে ততবার আদর কেঁপে উঠে। হৃদান আদরের কাঁপুনিটা উপভোগ করে। তার শরীর ও মৃদু কাঁপে। এটা ভয়ে না প্রিয়জনের স্পর্শে!

হাসান শিকদার যন্ত্রণা আর সইতে পারলো না। সে স্বীকার করলে সহজ মৃত‍্য পাবে কিন্তু চুপ থাকলে এরা তাকে অমানুষিক কষ্ট দিয়ে মারবে। এর থেকে স্বীকার করায় উত্তম। চিৎকার করে বলে উঠলো সে বলতে রাজী। বাঁকা হাসলো হৃদান। আদর বুক থেকে মাথাটা উঠাতে চাইলেও হৃদান দিলো না। কারণ হাসান শিকদারের অবস্থা খুব খারাপ। রক্ত লেগে আছে সারা শরীর। দেখেই ভয় পাবে। অন‍্যদিকে পিয়াস পড়েছে চিপায়। একজন সামনে থেকে আরেকজন পেছন থেকে তার শরীরটাকে ঝাপটে আছে। না পারছে সরাতে, না পারছে কিছু বলতে। আতইয়াব শান্ত দৃষ্টিতে হৃদান-আদর কে দেখছে। তার বোন ওই হৃদানের বুকে সে মানতে পারছে না। তবুও কিছু বলতে না পারায় অসহায় লাগছে নিজেকে!

আহনাফ চৌধুরী কোথায় আছে ঠিক বলতে পারবো না বাট বেঁচে আছে উনি!

সবার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠলো। বিশেষ করে আতইয়াব, হৃদান, আদরের। আতইয়াব এক ছুটে হাসান শিকদারের কাছে গিয়ে দাড়ালো। প্রশ্ন করতে লাগলো,

কোথায় উনি? বল কোথায় রেখেছিস উনাকে? সবটা বলবি? না হলে দ্বিগুন কষ্ট দিয়ে মারবো তোকে। তাও নিজের হাতে!

আতইয়াবের হিংস্র রূপ হৃদান কে চমকাতে বাধ‍্য করলো। হাসান শিকদার ভয়ে পেয়ে বিচলিত হয়ে বলে উঠলো,

আমি জানিনা সে কোথায়। আহনাফ চৌধুরী ছিলেন একজন স‍ৎ পুলিশ কমিশনার। আমার বিভিন্ন অবৈধ ব‍্যবসায় সম্পর্কে তিনি জানতে পেরেছিলেন। তার থেকে বড় হলো চৌধুরী পরিবারের হঠাৎ করে গুম হওয়ার রহস‍্যের প্রায় শেষ মাথায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। টাকার অফার করেও লাভ হয়নি। সে তার সিদ্ধান্তে অনড়। আমার নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে তাকে মারার দরকার ছিলো। প্ল‍্যান করে বাড়িতে হামলা করি। তার এক মেয়ে ছিলো। ভেবেছিলাম মেয়েকে হাতিয়ার করে কমিশনার মানাবো। নাহ তিনি সৎ ছিলেন ; যেকোনো পরিস্থিতিতেও সৎ ই থাকবেন। উনার চোখে সামনে শাট শাট গুলি করে উনার মিসেস কে মেরেছিলাম কিন্তু মেয়েকে বাঁচিয়ে নেয় উনি। পেছনের গুপ্ত দরজা দিয়ে বের হয় মেয়েকে কোথাও লুকিয়ে উল্টো দৌড়াতে শুরু করেন তিনি। গুলি করি টার্গেট করে। পিঠে একটা গুলি লাগলেও হঠাৎ একটা গাড়ি এসে তাকে তুলে নিয়ে চলে যায়। চারপাশে খুঁজেও তার মেয়েকে পায়নি।

হাসান শিকদারে কথা শুনে সবাই স্তব্ধ। নিয়ান নিজেও। সে জানতো তার বাবা খারাপ কিন্তু এতা খারাপ জানতো না। আতইয়াব বলে উঠলো,

পাবি কি করে। তখন সে আমার কাছে ছিলো। একদম আমার বুকে। তেরো বছর বয়সে নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসি। সৎ মায়ের অত‍্যাচার, বাবার নিরব সমর্থন মানতে পারছিলাম না। আশ্রয় দেয় আহনাফ আংকেল। লুকিয়ে রেখেছিলো আমাকে। বেঁচে থাকার জন‍্য আমাকে তৈরী করছিলো। একদিন হঠাৎ করেই আংকেল ফোন দিয়ে বলে রাতে বাড়ির পেছনে থাকতে। আমিও তাই করি। আংকেল জানতো তার উপর হামলা হবে কিন্তু সেদিন ই যে হবে জানতো না। আমার কাছে আদর কে দিয়ে তোদের ল‍ক্ষ‍্য ভ্রষ্ট করতে উল্টোদিক দৌড়ায়। আমি ততক্ষণে বাগান পেরিয়ে গুপ্ত দরজা দিয়ে আদর কে নিজের বাড়িতে মানে গুপ্ত ঘরে লুকিয়ে রাখি। ওই জায়গার হদিস কেউ জানেনা। তারপর থেকেই শুরু হয় আমার লড়াই আর অপেক্ষা। আদর কে নিজের বোনের পরিচয়ে মানুষ করেছি। নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। সব আংকেলের জন‍্য। তিনি হয়তো সব জানতে পেরেছিলেন তাইতো তার সম্পত্তির ভাগ আদর আর আমাকে দিয়ে গিয়েছিলো। পরের ছেলেকে এতটা আপন করে নিয়েছিলো আমি বাবাকে ভাবতে পারিনি আর। কিন্তু তুই সব শেষ করে দিলি। কেড়ে নিলি আবার ভরসার হাতটাকে। শেষ করে দিবো একদম!

ছুরি হাতে এগিয়ে যাবে দুটো গার্ড অনেক কষ্টে আটকালো। হৃদান বলল,

চৌধুরী বাড়ির কি রহস‍্য?

সেটা আমি বলি?

হৃদানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে আদর কথাটি বলল। সবাই ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো। আদর স্বাভাবিক ভাবে বলে উঠলো,

বহু বছর আগে আপনার মা রিদিমা চৌধুরী আপনার বাবার সাথে প্রেম করতো। কিন্তু আপনার মায়ের পরিবারে প্রেম করে বিয়ের রিচুয়াল টা পুরোপুরি আউট ছিলো। মেনে নিতো না কেউ তাই তিনি পালিয়ে আসেন। সংসার শুরু হয়। আপনি এলেন। সুখেই কাটছিলো সংসার। কিন্তু রিদিমা চৌধুরীকে তার পরিবারের লোক মেনে নেয়নি। খানিকটা ডিপ্রেশনে ছিলেন এই বিষয়ে। এই সময় খুশীর সংবাদ নিয়ে এলো আপনার বোন। রিদিমা চৌধুরী আবার মা হতে চললেন কিন্তু বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময় তিনি প্রাণ হারায়। ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে বাপ-ছেলে সারাদিন পড়ে থাকতেন। আরেকটা অবাক করার বিষয় হচ্ছে আপনার বাবা ভালোবাসার জন‍্য নিজের বিলাসী জীবন ত‍্যাগ করেছিলেন। আপনার মায়ের পরিবারের সাথে যে একবার বেইমানি করে তাদের বাঁচিয়ে রাখতেন না তারা সে যত ই আপন হোক না কেন । জমিদার লোক ছিলেন! তাই লুকিয়ে ছিলেন তারা। জমিয়ে রাখা সম্পত্তি থেকে একটু একটু খরচ করতেন আর হালকা কাজ করতেন। কিন্তু তারা জানতো না তাদের কে না পেয়ে একজন মানুষ দিন রাত এক করে ফেলছে। ভাইয়ের কলিজা ছিলেন তো রিদিমা চৌধুরী। কিন্তু যখন খুঁজে পেলেন তখন আপনার বাবাকে কে যেন মেরে ফেলেছে। আপনার বোনকে কে যেন চুরি করেছে আর বাকি রইলেন আপনি। আপনি তো চৌধুরীদের বিশাল সম্পত্তির একমাত্র মালিক। আপনাকে নিজেদের কাছে রেখে তারা সম্পত্তি নিতে চেয়েছিলো। তার আগেই আপনি সুপারহিরোর হাতে পড়েন। কয়েকটা মাসের সম্পর্ক উনার সাথে আপনার। তবুও বন্ডিং টা দারণ ছিলো। বাবা সব রহস‍্য বের করেই ফেলেছিলেন। পাবলিক করার আগেই ওরা বাবাকে সরিয়ে দিয়েছে!

আদরের কথা সবাই মুখে হাত দিয়ে অবাক হয়ে শুনছে। এতকিছু কি করে জানে সে। আদর মুচকি হাসলো ওদের দেখে আবার বলল,

আমি এতকিছু জানি কি করে? কারণ রিদিমা চৌধুরীই ছিলেন আহনাফ চৌধুরীর একমাত্র কলিজা। হ‍্যা আপনার সুপারহিরো আপনার মামা হোন! আর এই ডায়েরীটা এসবের সাক্ষী। বাবা যখন আতইয়াব ভাইয়ার কাছে আমাকে তুলে দেয় তখন এই ডায়েরী টা আমাকে দিয়েছিলো। বলেছিলো লুকিয়ে রাখতে। তাই ভাইয়ার থেকেও লুকিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু এখানে সবকিছু সরাসরি না ইঙ্গিতে লিখা আছে। তাই তো আপনাকে প্রথম চিনতে পারেনি। সুপারহিরো বলায় চিনতে পারলাম।

হৃদান হাসান শিকদার কে নিয়ে যেতে বললো। একে লাগবে পরে। যাওয়ার সময় হাসান শিকদার বললো,

আমার ফোনের ম‍্যাসেজ বক্সে অনেক পুরো নো ম‍্যাসেজ আছে। তোমাদের উপকারে আসতে পারে।

সবাই ভ্রু কুচকালো। লোকটি তাদের সাহায‍্য করছে। আসলে হাসান শিকদার ভাবছে সব বললে হয়তো তাকে ছেড়ে দিবে। তা কি আদও সম্ভব! ফোনের ম‍্যাসেজ অপশন চেক করতে লাগলো। সবার নিচের ম‍্যাসেজটা ওপেন করতেই ওদের চোখ বড় বড় হয়ে এলো। কি হলো এটি? কে করতে পারে এমন? কিছুই ঢুকছে না!

চলবে..?

#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১১
Tahrim Muntahana

সূর্যটা উঁকি দিয়েছে মাত্র। হালকা বাতাসে সকাল টা একদম স্নিগ্ধ লাগছে। যে কারোর মন ভালো করে দেওয়ার মতো মনোরম পরিবেশ। এই মনোরম পরিবেশে আদর দাড়িয়ে আছে ছাদের রেলিং ঘেসে। চোখ মুখে বিষাদের ছায়া। মনের মধ‍্যে ঘুরছে নানান কিছু। শান্তি লাগছে না মনে।
কালকে রাতের কথা মনে হতেই আদর শক্ত করে রেলিং টা ধরে রইলো। বিষণ্নতা যেন কয়েকগুন বেড়ে গেলো। ভাবতে লাগলো কালকের কথা,

হাসান শিকদারের মোবাইল চেক করে ওরা একটি প্রাইভেট নম্বর থেকে ম‍্যাসেজ পায়। যেখানে লিখা ছিলো,

‘আর খুঁজার চেষ্টা করো না আহনাফ চৌধুরীকে। সে এখন আমার বন্দী। আমার উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পযর্ন্ত সে আমার খাঁচায় থাকবে। আর যেদিন আমার উদ্দেশ্যে সফল হবে সেদিন ইনফরমেশন পেয়ে যাবে। তোমার প্রতিশোধকে সেদিন তোমার খাঁচায় দিয়ে যাবো।’

ম‍্যাসেজটি পড়ে সবাই অবাক হয়েছিলো। কি উদ্দেশ্য লোকটির? হাসান শিকদার জানায় লোকটি আর কখনো ম‍্যাসেজ পাঠায়নি। তাই সবাই ধরে নেয় আহনাফ চৌধুরী এখনো বেঁচে আছে। রাত গভীর হচ্ছে বলে হৃদান আদর দের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। কোনো কথা বলে না সে। আদর ও নির্জিব ছিলো তখন। হাসান শিকদারের ঠায় হয় কোডেটে! ভয়ংকর সেই কসাই খানায়!

হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আদর ভাবনা থেকে বের হলো। নড়লো না, চুপটি করে রইলো। আতইয়াব এসেছে। আতইয়াব বোনের মলিনতা বুঝতে পারলো। তাই কথা বাড়ালো না; যদিও তার অনেককিছু জানার ছিলো। ঘুরে চলে যেতে নিবে আদর বলে উঠলো,

কালকে কেন মিথ‍্যে বলতে বললাম এটাই জানতে চাইছো তো?

আতইয়াব থেমে গেলো। হ‍্যাঁ তার এটাই জানার ছিলো। আদর ঘুরে তাকালো আতইয়াবের দিকে। মলিন কন্ঠে বলল,

জানতে পারবে। তবে এখন না! কিছুটা পর। সে পযর্ন্ত অপেক্ষা করো ভাইয়া।

আতইয়াব মাথা নাড়িয়ে নিচের দিকে হাটা ধরলো। তার মাথাটাও ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সে এমন ম‍্যাচিউর গম্ভীর বোন চায়না; কিছুঘন্টা আগের সেই চঞ্চল ইমম‍্যাচিউর বাচ্চা বোনটাকে চায়। কবে আবার সবকিছু আগের মতো হবে? কবেই বা সব রহস‍্যের উন্মোচন হবে?
____________________

আতইয়াব হৃদান মুখোমুখি বসে আছে। আগের মতো দুজনের চোখে রাগ নেই। দুজনের চোখেই প্রশ্ন। দুজন ই আদরের দিকে প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে আছে। কারণ আদর ই তাদের আসতে বলেছে। আদর নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় চা বানিয়ে নিয়ে আসলো। কিছুক্ষণ নিরাবতা পালন করে হৃদান বলল,

সুপারহিরো যে ডায়েরীটা দিয়েছে সেটি কোথায় আদর? তোমার বাবা মানে আমার মামা! একটা রাতেই সম্পর্কের পরিবর্তনটা দেখার মতো! তুমি আমি সম্পর্কে মামাতো ফুফাতো ভাই-বোন!

কে মামাতো বোন আপনার? আহনাফ চৌধুরী আমার বাবা নয়!

চমকে উঠলো হৃদান। কি বলছে আদর? একেক সময় একেক কথা কেন বলছে? তাহলে আহনাফ চৌধুরীর মেয়ে কোথায়? হৃদান কিছু বলবে তার আগেই আদর বললো,

কালকে যা বলেছি তার কিছু সত‍্য ছিলো কিছু মিথ‍্যে ছিলো। আমার বাবা হলো জার্নালিস্ট রাতাফ আহমেদ। গোপনে কাজ করছিলেন আহনাফ চৌধুরীর মিসিং রহস‍্য নিয়ে। আমার বয়স তখন ১১ বছর। বাবা জানতেন এই রহস‍্য বের করতে তাকে অনেক বিপদের মুখে পড়তে হবে। কিন্তু আহনাফ আংকেল তো বন্ধু ছিলো। বেস্টফ্রেন্ড! কি করে পিছিয়ে যেতো। মা তো সেই কবেই মরে গেছে। আমার সেইফটির জন‍্য আমাকে এতিম খানায় রেখে আসলো। বাবা থাকতেও একটা মাস আমার এতিম হয়ে থাকতে হয়েছে। বাবার উপর অনেক অভিমান জমা হয়েছিলো। এক মাস পর বাবা আসলেন।সাথে আনলেন আতইয়াব ভাইয়াকে। বললেন সে আমার বড়ভাই। এতদিন লুকিয়ে রেখেছিলো কোনো কারণে। ছোট ছিলাম বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম। সেদিন ই বাবা আমাকে আর ভাইয়াকে অন‍্যত্র পাঠিয়ে দেয়। ভাইয়া তখন ভালোয় বড়। বাবার সরল কথায় সব বিশ্বাস করে বাবাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম। কিন্তু একদিন হঠাৎ করে খবর এলো আমার বাবা দুর্ঘটনায় স্পট ডেথ! মানতে পারছিলাম না। তাড়াহুড়োয় চলার সময় দেয়ালের সাথে জোরে ধাক্কা খাওয়ায় শর্ট টাইম মেমোরি লস ছিলো। মেমোরি তো তখন ফিরে পেলাম যেদিন দেখা হলো আহনাফ আংকেলের মেয়ের সাথে। ছয় মাস আগের কথা। ভার্সিটি তে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে আর মেয়েটি পড়ে যায়।অনেক গুলো ব‍্যাগ ছিলো মেয়েটির কাছে। মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। কিছু বলবো তার আগেই মেয়েটি নিজের ব‍্যাগটা ফেলে দৌড়ে চলে যায়। তার আগে আমার সামনে একটা চিরকুট ফেলে যায়। চিরকুটে লিখা ছিলো,

আমি জানিনা আপনি কে? কেমন মানুষ তাও জানিনা। শুধু বলবো আমার ব‍্যাগটি একটু যত্ন করে রাখবেন। ব‍্যাগের মধ‍্যে রাখা ডায়েরীটা খুলে দেখবেন। তারপর নাহয় আমাকে খুঁজে বের করবেন। রহস‍্যও খুঁজতে পারেন যদি আপনি ভালো মানুষ হোন!

অনিশ্চিত ছিলো ভাবনা। কার হাতে যেন পড়ে। আমি লুকিয়ে বাসায় এনে রাখি ডায়েরীটা। খোলার সাহস হয়নি। একদিন হঠাৎ করে মনে হতেই ডায়েরীটা নিয়ে বসি। যেখানে আহনাফ আংকেল নিজের কেসের সম্পর্কে বলেছিলেন। চৌধুরী পরিবারের কেসের সম্পর্কে বলেছেন। পারিবারিক শত্রুতা সম্পর্কেও বলেছেন। শুধু আপনাদের নামগুলো সাসপেন্স রেখেছেন। হয়তো উনি ভেবেছিলেন ডায়েরীটা খারাপ লোকের হাতে পড়লে আপনি বিপদে পড়তে পারেন। ডায়েরীর অর্ধেক পাতা আহনাফ আংকেল আর তার পরের পাতার লিখাগুলো সম্ভবত তার মেয়ের। বাবার বলা কিছু কথা মিলে যাচ্ছিলো ডায়েরীর সাথে। সেদিন ই হুট করে সম্পূর্ণট মনে পড়ে আমার। মেয়েটি পরের পাথাগুলোয় বলেছিলেন সেদিন হামলার রাতে তাকে আহনাফ আংকেল তার এক বন্ধুর কাছে রেখে যায়। বন্ধুটি ভালো হলেও তার বউ খারাপ ছিলো। মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মেয়েটি তখন হৃদানের সমবয়সী ছিলো। চারদিকে তো খারাপ মানুষের বালাই নেই। তার ই পাল্লায় পড়ে। সেদিন উদ্ধার করে একটা বৃদ্ধ মহিলা যিনি ছিলেন বড় ফ‍্যামিলের। সেই বাড়িতেই থাকতেন তিনি। কিন্তু বৃদ্ধটি মারা যাওয়ার পর মেয়েটিকে বাড়ির সবাই কাজের মেয়ে বানিয়ে দেয়। মেয়েটি ডায়েরী তে একবার ও ওই বাড়ির কথা উল্লেখ করেনি। নাহলে এতদিন আমি তাকে আমার কাছেই রাখতাম। মেয়েটি এত এত ধাক্কা সামলিয়েও নিজের বাবাকে খুঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওই বাড়িতে থেকে সম্ভব হচ্ছিলো না। তবুও সাহস করে বাড়ি থেকে বের হতো। যেদিন আমার সাথে দেখা হয় সেদিন ওই বাড়ির কাউকে দেখেই ভয় পেয়েছিলো হয়তো। তাই পালিয়ে গিয়েছিলো। এখন কথা হলো খুঁজবো কি করে তাকে।

এতকিছু ঘটেছে আতইয়াব হৃদান ভাবতেই পারছে না। আদর ছয়মাস ধরে এত প্ল‍্যান করে রেখেছে বুঝার উপায় ই নেই। হৃদান বলল,

কিন্তু তুমি নিজেকে সুপারহিরোর মেয়ে বললে কেন?

কারণ আমার সন্দেহ মতে আহনাফ আংকেল বেঁচে থাকলেও বা না থাকলেও অপরাধী আহনাফ আংকেলে মেয়েকে খুঁজ করতো। কারণ ডায়েরী অনেক কিছুই লিখা ছিলো। আর আপনি যার অপারেশন করিয়েছেন এসবের পেছনে কে জানার জন‍্য তার সাথে আমার একবার দেখা হয়েছিলো হসপিটালে। ফোনে সে বারবার কিসব বলছিলো। হাসান শিকদারের সাথে মেবি ঝগড়া করছিলো। আর রেস্টুরেন্টে হাসান শিকদারকে দেখে; তার উপর সুপারহিরো সুপারচ‍্যাম্প ডাক শুনে দুই এ দুই চার করলাম। আর আমার মনে হয়েছে হাসান শিকদার এসবে একা নেই। তার সাথে আরো একজন জড়িত।যে এসবের মূলে। তাই প্ল‍্যান করলাম আমি তো সব জানি তাহলে নিজেকে আহনাফ চৌধুরীর মেয়ে বললে কিছু রহস‍্য খুলতে পারে। আর আমি রেস্টুরেন্টের একদম ভেতরে দরজার পাশে একজন কে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। যে কান পেতে শুনছিলো সবকিছু। আমার মনে হয়েছে সে হয়তো শত্রুপক্ষের কেউ। তাই একটু রিস্ক নিলাম। সবটা সন্দেহের বশে করেছি। এখন ঢিলটা যদি ঠিক জায়গায় লাগে তাহলে আহনাফ আংকেল আর তার মেয়েকে খুঁজে পাবো। আর বাবার অসম্পূর্ণ কাজটা সম্পূর্ণ হবে। জার্নালিজম নিয়ে পড়াটা তো এর জন‍্যই।
আর ভাইয়া মিথ‍্যে বলেছে আমার কারণে। এক ফাঁকে ভাইয়ার কাছে গিয়ে হালকা করে বলেছিলাম এমন করে বলতে। আর আমার ভাইয়া তো কামাল করে দিয়েছে। কি এক্টিং টাই না করলো! আমি তো জাস্ট ফিদা।

আদর হেসে উঠলো। আতইয়াব বোনের মুখে হাসি দেখে নিজেও হাসলো। কিন্তু হৃদান তখনো গম্ভীর হয়ে বসে আছে। হয়তো ভাবছে কোথায় খুঁজবে তিনজন কে। তারা কি আদও বেঁচে আছে? আদর হাসি থামিয়ে আতইয়াবের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,

তোমার পরিচয় কি ভাইয়া?

আমি সবটাই বলেছি সেদিন। শুধু শেষের কথাগুলো মিথ‍্যে ছিলো। স‍ৎ মায়ের আত‍্যাচারে বাড়ি থেকে চলে আসি। হঠাৎ করেই তোমার বাবার সাথে দেখা হয়। কিছুদিনের পরিচয়ে বাবা আমাকে অনেকটা ভালোবাসা দিয়েছিলো। বাবা বলে ডাকতাম তোকে। তোমার কথা আমাকে বলতো। তোমাকে দেখার জন‍্য ছটফট করতাম। বাবা বলতো একদিন সময় হলে দেখা করাবে। সেদিন ই বললো বোন কে নিয়ে অন‍্যত্র চলে যেতে হবে। কথা দিয়েছিলাম বাবাকে তোমার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না। জানতেও দিবো না তুমি আমার রক্তের কেউ না। কিন্তু আত্মার কেউ!

আদরের কাছে এবার সবটা পরিস্কার। এতকিছু শুনেও হৃদান চুপ। কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না। আদর বুঝতে পারলো হৃদানের মনের অবস্থা। তাই বলল,

হৃদান শুনুন। আপনি হাসান শিকদার কে আরেকটু টাইটলি জিজ্ঞাসবাদ করেন। তার কাছেই আপনার বোনের মিসিং হওয়ার ইনফরমেশন আছে। কারণ সে এই ব‍্যাপারটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে।

এতকিছুর মাঝে হৃদান এটা খেয়াল ই করেনি। আদর ঠিক করেছে। একটা আশা খুঁজে পেলো যেন। হৃদানের মুখেও হাসি ফুটে উঠেছে। আতইয়াবের বিরক্ত লাগছে হৃদান কে। আদরের সাথে মেশাটা তার ভালো লাগে না। হৃদান উঠে চলে গেলো। তারিম বিরক্তি নিয়ে তাকালো আতইয়াবের দিকে। আতইয়াব কিছু বললো না। তার বোনের ক্ষতি সে হতে দিবে না!
_____________________

হৃদান দাড়িয়ে আছে কোডেটের সামনে। অপেক্ষা করছে সময়ের। সময়ের আগে কোডেটের দরজা খুলবেনা। সে একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছে। সময় হতেই কোড বসিয়ে ভেতরে চলে গেলো। যেখানে হাসান শিকদার কে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। হৃদান শান্ত হয়ে সোফায় বসলো। রেগে যাওয়া যাবে না। হাসান শিকদার হৃদান কে দেখেই ভয় পেয়ে গেলেন। হৃদান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

আমার বোন কোথায়?

চমকালেন মি. শিকদার। সে তো সুক্ষ্ম ভাবে এড়িয়ে গেছেন ব‍্যাপারটা। আবার নতুন করে চলে আসছে। হাসান শিকদার মুখ খুলছে না বলে হৃদান পিয়াস কে বলল,

ওর ঠিক নিচে আগুন জ্বালিয়ে দে। দেখি কতক্ষণ ঠিক থাকে!

হাসান শিকদার মিনতি করলেও কাজ হলো না। পিয়াস হৃদানের কথা মতো আগুল জ্বালিয়ে দিলো। প্রথম ঠিক ছিলো কিন্তু আগুনের শিখা যখন বাড়ছিলো আর হাসান শিকদারের শরীরটা একটু একটু করে লালচে হয়ে কালোতে রূপ নিচ্ছিলো তখন আর সইতে পারলেন না তিনি। চিৎকার করে বলে উঠলেন সে সব বলবে। হৃদান বাঁকা হাসলো। কাজ দিয়েছে! আগুন নেভানো হলো। হাসান শিকদার কে নামায়ি নিচে বসালো। তিন কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে বলল,

সেদিন মি চৌধুরী বাড়িতে ছিলেন। সাথে তোমার বোন। হামলা করি আমরা। তাকে মেরে তোমার বোনকেও মারতে চাই কিন্তু আমার লোক বুদ্ধি দিলো দ্বিগুন হারে বিক্রি করা যাবে। তাই করলাম। বিক্রির জন‍্যই নিয়ে যাচ্ছিলাম। ততক্ষণে আহনাফ চৌধুরী সব জায়গায় এসব খবর জানিয়ে দেয়। পুলিশ গাড়ি চেক করছে। ভয় পেয়ে তোমার বোন কে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। দৌড়াতে থাকি। কিন্তু হোচট খেয়ে রাস্তার একপাশে পড়ে যায় তোমার বোন। ওখান দিয়ে যাচ্ছিলেন একজন মধ‍্যবয়স্ক লোক। আমি লোকটিকে চিনি। পিজি কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। আমি অনেকবার গিয়েছি ওই কলেজে। লোকটির কি নাম যেন মনে নেই। সেই তোমার বোনকে নিয়ে যায়। ওইদিকেই যাবো কিন্ত আমি রাস্তার মধ‍্যে থাকায় একটা গাড়ি ধাক্কা মেরে দেয়। জ্ঞান হারায়। ফেরার পর অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি।

হৃদান আর দাড়ায় না। এক ছুটে বেরিয়ে যায় কোডেট থেকে। উদ্দেশ্য তার পিজি কলেজ। আজকেই এসব রহস‍্য বের করবে সে। এখান থেকে যেতে অন্তত দু’ঘন্টা লাগবে। স্পিড বাড়িয়ে দিলো। প‍ৌঁছাতে লাগলো দেড় ঘন্টা। মুখে মাস্ক পড়ে যাওয়ায় কেউ চিনে নি। আর আজ কে তাড়াহুড়োয় সে গার্ড নেয়নি। হেড অফিসে গিয়ে নিজের পরিচয় দিতেই সবাই ভয় পেয়ে যায়। হাসলো হৃদান। আজ সে যদি একজন সাধারণ পাবলিক হয়ে আসতো কিছু তেই তারা এতবছরের পুরোনো ফাইল চেক করতে দিতো না। দপ্তরি কে নিয়ে স্টোর রুমে চলে গেলো। খুঁজতে লাগলো ফাইল। কে জানে আছে কিনা। একেকটা সেকেন্ড যেন হৃদানের কাছে ঘন্টা মনে হচ্ছে। দপ্তরি হাক ছেড়ে জানান দিলো পেয়ে গেছে। দৌড়ে গেলো হৃদান। ফাইলের উপরের নামটা দেখে হৃদান অবাক হলো। সার নেইম টা তার খানিক টা পরিচিত। একটা ছবি দেওয়া আছে বাট সে চিনতে পারছে না। ফাইল টা নিয়ে দপ্তরির হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বের হয়ে এলো। গাড়ি নিয়ে ছুটলো আদর দের বাড়ির উদ্দেশ্যে। আদর কিছু হেল্প করতে পারে।

ফাইলের দিকে চোখ বড় বড় করে থাকিয়ে আছে আতইয়াব আদর। তারিম রান্না ঘরে রান্না করছে। হৃদান ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
এক্সপ্রেশন দেখে সে চিন্তায় পড়ে গেলো। আতইয়াব কিছু বলবে আদর থামিয়ে দিলো। ওদের কে ইশারা করে বাইরের দিকে যেতে লাগলো। আতইয়াব কিছুটা বুঝলেও হৃদান কিছুই বুঝলো না। তার এখন রাগ হচ্ছে। কিছু বললেও তো পারতো। এভাবে না বলে ছুটার কি আছে!

একটা একতালা বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো আতইয়াব। আতইয়াবের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে ভিষণ চিন্তিত। আর আদর সে তো আজানা কৌতুহলে ছুটেই চলছে। হৃদান মুখটা গম্ভীর করে ওদের পেছনে হাটতে লাগলো। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো একজন মধ‍্যবয়স্ক লোক সোফায় বসে আছে।
আদর গিয়ে সোফায় বসে পড়লো। মিসেস দেলোয়ারা রান্না করছিলেন। আদর কে দেখেই ছুটে এলেন। আদর কে তার একদম ই সহ‍্য হয়না। আদর কোনো দিক না তাকিয়েই বলল,

তারিমের প্রতি আপনাদের অবহেলার কারণ টা কি? নিজের মেয়ে তো আপনাদের?

চমকালো দুজন ই। হৃদানের রাগ হলো আরো। সে কি বর্তমানে তারিমের সমস‍্যা সমাধান করতে আসছে। আগে তার বোনকে খুঁজে বের করতে হবে। তারপর নাহয় তারিমের টা দেখবে সে। তারিমকেও সেখুব ভালোবেসে ফেলেছে। মিসেস দেলোয়ারা কিছু বলবে মি. তারেক চোখ রাঙিয়ে তাকালেন। শান্ত সুরে বললেন,

কে অবহেলা করেছে?

দেখুন আংকেল সোজাসাপ্টা উত্তর দেন। এমনিতেই মাথা ভনভন করছে। তারিম আপনার নিজের মেয়ে না তাইতো? আপনার বাবা তারিম কে কুড়িয়ে পেয়েছিলো তাইতো? তার জন‍্যই এত অবহেলা!

এবার মি. তারেক রেগে গেলেন। তাই তো পরের মেয়েকে সে কেন আদর করবে। কোথাকার কোন মেয়ে কে বলতে পারে? খারাপ কাজের ফল নাকি কে জানে? তাকে কেন ভালোবাসবে সে? রেগে বললেন,

হ‍্যাঁ তারিম আমার মেয়ে না। বাবা একদিন একটা মেয়েকে এনে বলে সন্তানের পরিচয়ে মানুষ করতে হবে। কোথাকার কোন মেয়ে। সম্পত্তিও লিখে দিলো মেয়েটিকে। তাই তো কিছু করতে পারিনি। বাড়ি থেকেও বের করতে পারিনি।

আদর আতইয়াব এবার হৃদানের দিকে তাকালো। হৃদান চোখ বড় বড় করে সব শুনছে। আদরের চোখ হৃদানের অবস্থা দেখে ছলছল করে উঠলো। মানুষটা কত কিছু সহ‍্য করেছে। আদর মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই হৃদান চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। তার এত বছরের অপেক্ষার আজ সমাপ্তি হয়েছে। আস্তে আস্তে হেটে বাইরে চলে গেলো। মি তারেক এবং মিসেস দেলোয়ারার উদ্দেশ্য আদর বললো,

কোথাকার কোন মেয়ে যাকে বললেন সে হলো নাবিল চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে। হৃদান চৌধুরী বোন। আরেকবার উল্টাপাল্টা বলে দেখেন কি হয়!

ওরাও চলে গেলো। মি তারেক আর মিসেস দেলোয়ারা মুখে হাত দিয়ে বসে আছে। চিন্তা করছে। ভয় হচ্ছে বোনকে অবহেলার জন‍্য তাদের মেরে ফেলবে না তো!

রান্না শেষ করে ড্রয়িং রুমে এসে কাউকে না পেয়ে তারিম ভড়কে গেলো। সদর দরজাটাও খোলা। কি হলো বুঝার জন‍্য দরজার দিকে যেতেই কেউ ঝড়ের বেগে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। তারিম আকস্মিক এমন হওয়ায় ভয় পেয়ে গেছে। কথা বলার সাহস টুকু পাচ্ছে না। নিজের ঘাড়ে গরম পানির আবাশ পেতেই ফট করে মাথা তুললো। হৃদান কে দেখেই অবাক হলো সে। হৃদান তারিমের কপালে শব্দ করে চুমু খেলো। তারিম হা হয়ে শুধু দেখছে। পাশেই আতইয়াব আদর দাড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে তারিম কে সব কথা জানালো সে। তারিম তো বিশ্বাস ই করতে পারছে না হৃদান তার আপন ভাই। একদম লেপ্টে আছে হৃদানের বুকে। ভাই-বোনের মিলনে আতইয়াব-আদরের মুখেও হাসি। কিন্তু হৃদান কে আতইয়াবের পছন্দ না। সে বোনকে হৃদানের হাত থেকে শতহাত দূরে রাখবে। বোনের ক্ষতি সে হতে দিবে না।

প্রায় সব রহস‍্য খোলাশা হয়েছে। শুধু আহনাফ চৌধুরী এবং তার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া বাকি। সাথে এর মূলে আসল কালপ্রিটকে শাস্তি! ওরা কি আদও পারবে?

চলবে….?

( গল্পের নাম এবং থিম দেখেও যদি আপনারা না বুঝেন মেইন জুটি কে তাহলে কিছু বলার নেই! সত‍্যি!

রিচেক করিনি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। শুকরিয়া!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here