#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১৪,১৫
Tahrim Muntahana
১৪
পার্টিতে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। প্রত্যেকটা মানুষের নিশ্বাসের শব্দটাও যেন ভয়ানক লাগছে। আদরের চিৎকারে সবাই এগিয়ে আসলেও হৃদান আসে নি। সে এগোতে পারছে না। তার মনে হচ্ছে ভেতর থেকে হৃদপিন্ডটা কেউ খুবলে নিচ্ছে। পান্চু দৌড়ে সিড়ি টপকে এসেই আগন্তুক আক্রমণকারীকে ধরে ফেলে। চারপাশ থেকে গার্ডরা ঘিরে ধরে তাকে। আতইয়াব দৌড়ে গিয়ে আদর কে নিজের কাছে নিয়ে আসে। হাতে ভালোই কেটেছে ছুরির আঘাতে। গলগল করে রক্ত পড়ছে হাত থেকে। আদর চোখ মুখ কুচকে আছে। হাতটা ব্যাথায় শিরশির করছে। জ্বালাটা যেন একটু একটু করে বাড়ছে। তারিম ঝটপট ওদের নিয়ে উপরে চলে গেলো। এখানে থাকা নিরাপদ নয়। আবার কখন আক্রমণ হয় কে জানে!
পার্টিতে আর একটা মানুষ ও নেই। সবাই নিজ নিজ বাড়ি চলে গেছে। যাওয়ার আগে গার্ডরা ভালো করে চেক করে নিয়েছে। এর মধ্যে তিনজন কে সন্দেহজনক মনে করে গোপন কক্ষে নিয়ে এসেছে। হৃদান সেভাবেই দাড়িয়ে আছে। নড়ার শক্তিটুকু তার মধ্যে নেই। চোখের সামনে শুধু আদরের হাত থেকে গল গল করে রক্ত পড়া ; চিৎকার কানে ভেসে আসছে বারবার। হাত দিয়ে কান চেপে ধরলো হৃদান। গগণ কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলো। আতকে উঠলো সবাই। আদরের ব্যান্ডেজ প্রায় শেষ। ফিনিশিং টা বাকি। হৃদানের চিৎকারে আদর ভয় পেয়ে যায়। এটার ভয় ই সে পাচ্ছিলো। দৌড়ে নিচে নেমে আসে। ওর দেখাদেখি তারিম আতইয়াব ওরাও নেমে আসে। হৃদান ড্রয়িং রুমে ভাঙচুর করছে। একের পর এক ফুলদানি টি-টেবিল ভেঙে চলছে। একটু আগের পাওয়া মনের ধাক্কা টা যেন রাগ দিয়ে পুষিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু এ জ্বালা তো এসব ভেঙে হবে না। তার মনে আগের সেই হৃদান চৌধুরীর অস্তিত্ব টের পাচ্ছে। রক্ত নিয়ে খেলার ইচ্ছেটা পুনরায় জেগে উঠছে তার। পিয়াস চুপটি করে দাড়িয়ে আছে। সে বুঝে নিয়েছে এরপর কি হবে কিন্তু সে চাইলেও এটা পরিবর্তন করতে পারবে না। তার থেকে চুপ থাকায় শ্রেয়।
আতইয়াব আদরের একহাত শক্ত করে ধরে আছে। আদর চাইলেও হৃদানের কাছে যেতে পারছে না। আতইয়াবের চোখে মুখে রাগ উপচে পড়ছে। মনের মধ্যে রাগ জমা হচ্ছে হৃদান চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তার বোনের সাথে হওয়া একটু আগের ঘটনা টার জন্য হৃদানকে দোষ দিচ্ছে সে। যেও বা একটু আগে ভেবেছিলো হৃদানের সাথে আদরের এই সম্পর্কটা সে স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিবে কিন্তু নাহ! এখন কোনো ভাবেই সম্ভব না। হৃদান চৌধুরীর সাথে তার বোনের জীবন জড়িয়ে গেলে তার বোনের জীবন হুমকিতে থাকবে। কোনো ভাই ই চায় না তার বোন কষ্টে থাকুক।
আদরের অস্তিত্ব টের পেয়ে ভাঙচুর বন্ধ করে হৃদান। পাগলের মতো এগিয়ে আসে আদরের দিকে। মনে হচ্ছে ছুরিটা আদরের হাতে না তার কলিজায় লেগেছে। চোখ দুটো অসম্ভব লাল! মাঝখানে বাধাপ্রাপ্ত হলো আতইয়াবের। চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠলো,
আমি চাইনা আমার বোনের জীবনে হৃদান চৌধুরীর কোনোরকম ছায়া থাকুক। আমার বোন থেকে দূরে থাকবেন। নাহলে আমি আতইয়াব তাযিন ইততেয়াজ কি করতে পারি সেটিও দেখতে পারবেন।একদম মাটির সাথে মিশিয়ে দিবো হৃদান চৌধুরীর নাম। মাইন্ড ইট!
আদরকে নিয়ে হাটা ধরলো আতইয়াব। হৃদানের নিজেকে হেল্পলেস লাগছে। এই প্রথম কেউ তাকে হুমকি দিলো। এই প্রথম হৃদান চৌধুরী তার পরাজয় মেনে নিচ্ছে শুধুমাত্র ভালোবাসার জন্য। পেছন ঘুরে তাকালো আদর। চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করে নিলো হৃদান। ওই চোখে তার মরণ লুকিয়ে আছে! ওই চোখেতেই হৃদান চৌধুরী নিঃশেষ! আদর রা চলে যেতেই হৃদান ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। তারিমের চোখেও পানি। কিন্তু সে একটা কথাও বলেনি আতইয়াবকে। না বুঝে এমন করার কারণে আতইয়াব কে শাস্তি পেতে হবে! সেই শাস্তি সে ভালোবাসা থেকে দূরে থেকেই পাবে। দুটো লাফবার্ড কে আলাদা করে সে তো নিজে ভালোবাসার গল্প রচনা করতে পারেনা। তার ও প্রাপ্রতা আছে। কষ্টের বদল কষ্ট!
গোপন কক্ষের দরজায় দাড়িয়ে আছে পান্চু। তার চোখে মুখে রাগের সাথে ব্যাথাতুর একটা আবাশ পাওয়া যাচ্ছে। সন্দেহজনক চারজনের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ফেরার পরেই পান্চু তার খেলা দেখাবে এই আশায় দরজায় দাড়িয়ে আছে। যদিও সে যথেষ্ট কনফিউস হৃদান চৌধুরী তাকে সেই সুযোগ দিবে কিনা তবুও আশা তো থাকতেই পারে! অন্ধকার নয় আলোতেই চারজন কে রাখা হয়েছে। যেন জ্ঞান ফেরার পর একেঅপরকে দেখে চমকে উঠে। ভয় ই তো দেখবে আজকে হৃদান চৌধুরী। হঠাৎ ভেতর থেকে চিৎকার আসতেই পান্চু হেসে দিলো। জ্ঞান ফিরেছে সবার। নিশ্চিত পান্চু; একেঅপরকে দেখে ওরা ভাবছে কি করে হলো। দরজাটা একটু খুলে চোখ রাখলো ভেতরে। আদরের উপর ছুরি চালানো লোকটা একজন কে বলছে,
তুই এখানে কিভাবে? সারাবাড়ি খুঁজেছি তোকে। তোর জন্যই সব ব্লান্ডার হলো!
লোকটি হতাশ কন্ঠে বলে উঠলো,
আমি প্রশিক্ষণ রুম চেক করছিলাম। হঠাৎ কে যেন এসে এমন জোরে চিৎকার করে উঠলো আমি ভেবেছি আমাকে দেখে চিৎকার করেছে। সে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম!
পান্চু ফট করে নিচের দিক তাকালো। তাকাতেই তার চোখ মুখে ব্যাথা ফুটে উঠলো। যেন চেইন লাগানোর সময় পাওয়া ব্যাথাটা এখনো পাচ্ছে সে। আবার নিজেকে বাহুবাও দিলো পান্চু। সে যদি ব্যাথার জন্য ওইভাবে প্রশিক্ষণ রুমে গিয়ে চিৎকার না করতো চক্র টা ধরা পড়তো না। খুব বড় ক্ষতি হয়ে যেতো তাহলে। তার জন্যই সম্ভব হয়েছে ভেবেই নিজের টাক মাথায় হাত বুলিয়ে নিলো সে। ভেতরে গার্ড চারটি নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করেই যাচ্ছে। কে কার দোষ কাকে দিতে পারবে। তারা ভুলেই গেছে যে হৃদান চৌধুরীর হাতে পড়েছে তারা। প্রাণপাখিটা উড়ার অপেক্ষা শুধু। হঠাৎ ই পায়ের ফট ফট শব্দে পান্চু দরজাটা ঠাস করে অফ করে দিলো। সোজা হয়ে দাড়িয়ে রইলো। এই হাটা তার বসে। সে চিনে!
গোপন রুমের সামনে পান্চুকে দেখেও হৃদান কিছু বললো না। সে বলার মধ্যেই নেই। দরজা টা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলো। পিছনে পান্চুও গেলো। পিয়াস দরজায় এসে দাড়িয়েছে। আবার সেই রক্তের খেলা। অনেকদিন হলো দেখে না। ভালোয় চলছিলো তো হঠাৎ করে কার মরার শখ হলো যে ঘুমন্ত নিষ্ঠর হৃদান চৌধুরীকে জাগিয়ে তুলতে হলো। আবার শুরু হবে রক্ত দেখে আনন্দ নেওয়া। যতদিন পযর্ন্ত শেষ না দেখছে হৃদান ততদিন থামবে সে পিয়াস শিউর।সে বললেও কিছু হবে না উল্টো তাকে বন্দী করে নিজের কার্য সচল রাখবে হৃদান।
হৃদানকে দেখেই চারজন গার্ড ঝগড়া থামিয়ে দেয়। এতক্ষণে হয়তো মনে পড়েছে তারা জমের দুয়ারে রয়েছে। চোখ মুখে একরাশ ভয় এসে হানা দিলো। কাঁপতে লাগলো তারা। সবচেয়ে বেশী ভয় তো তার রে ছুরিটা চালিয়েছে। হৃদান এটিটিউটের সাথে চেয়ারে বসলো। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
তোদের কে পাঠিয়েছে জিজ্ঞেস করবো না। হৃদান চৌধুরীর রুলসের বাহিরে এটা। সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো। তোদের সাহস আছে তাইনা? হৃদান চৌধুরীর বাড়ি এসে হৃদান চৌধুরী কলিজার উপর হামলা! দম আছে বলতে হবে! তো শুরু করা যাক দমের খেলা! কত দম আমাকেও তো দেখতে হবে নাকি?
হো হো করে বিকট আওয়াজে হেসে উঠলো হৃদান। উন্মাদ লাগছে তাকে এখন। পান্চু পিছিয়ে এসে পিয়াসের সাথে দাড়িয়েছে। তার ও ভয় করছে এখন। তবুও সাহস নিয়ে বলে উঠলো,
বস ক্ষমা করবেন কাজের মধ্যে কথা বলার জন্য। কিন্তু আমার একটা অনুরোধ আছে। আর অনুরোধ টা আপনাকে রাখতেই হবে। আমি বিনা পয়সায় আপনার গোলামি করে যাবো সারাজীবন তবুও আমার অনুরোধ আপনাকে আজ রাখতেই হবে।
হৃদান ভ্রু কুচকে তাকালো পান্চুর দিকে। এই মুহূর্তে তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতটা বিরক্ত হয়েছে সে। পান্চু ঢোক গিলে স্ট্রং হয়ে বলল,
আপনি সবাইকে মারেন কাটেন যাই করেন ছুরি চালানো কালপ্রিটটাকে শেষ আঘাত আমিই করবো। আমার সামনে ম্যামের গায়ে ছুরি চালিয়েছে ও। আমি শেষ করতে চাই ওকে। প্লিজ বস!
হৃদান হাসলো। ভালোবাসা! সত্যিই ভালোবাসা সুন্দর। আগে কখনোই এমন সময়ে তার মুখে হিংস্রতা ছাড়া কিছু থাকতো না বাট আজকে! তার মুখে হাসি, প্রিয়জনকে পাওয়ার আকুলতা, প্রিয়জনকে হারানোর ব্যাথা প্রকাশ পাচ্ছে! ভালোবাসা সুন্দর! মাথা নেড়ে সায় জানাতেই পান্চুর মুখ কঠিন হয়ে এলো। যেন সে এখনি কুচি কুচি করে কা! ট! ছে। পান্চু এগিয়ে গিয়ে হৃদানের সামনে কিছু অস্ত্র তুলে ধরলো। পছন্দ সই অস্ত্র নিয়ে একের পর এক আঘাত করতে লাগলো তিনজন কে। বেচারা তিনজন চিৎকার ও করতে পারছে না মুখ বন্ধ থাকায়। ভেতর থেকে মরে যাচ্ছে। প্রাণ পাখি যাই যাই তবুও যেন যায় না। আর একজন তো এসব দেখে ভেতর থেকে শেষ ই হয়ে যাচ্ছে ভয়ে। ওদের তিনজনকে ছেড়ে হৃদান ছুরি চালানো লোকটার সামনে এসে দাড়ালো। চিৎকার করে বলে উঠলো,
এই হাত দিয়ে আঘাত করেছিলি আমার কলিজাকে? এই হাত দিয়ে? এই কেমনে পারলি আঘাত করতে। তোর একটুও মনে হলো না হৃদান চৌধুরীর সামনে তার কলিজাকে আঘাত করলে এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। কিছু না ভেবেই ছুরিটা বসিয়ে দিলি। এই দেখ মনে হচ্ছে তোর ছুরির আঘাতটা ওর হাতে না আমার কলিজায় লেগেছে। ক্ষত বিক্ষত হয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে কলিজাটা। দগ্ধ হচ্ছি প্রতি সেকেন্ড। যাকে ধরতে গেলে আমি একশো বার ভেবে ধরি, ব্যাথা পাবে কিনা; যার সাথে কথা বলতে গেলে একশো বার ভাবি, আমার কথায় কষ্ট পাবে কিনা; সেই ফুলটাকে তুই আঘাত করলি? এমন আঘাত করলি রক্ত ঝরলো ফুলের শরীর থেকে। ওর লাল রক্ত যে তোর রক্তের পিপাসা জাগিয়েছে আমার। রক্ত চাই তোর! তোর চোখ মুখে আতঙ্ক দেখতে চাই! বাঁচার জন্য আকুলতা দেখতে চাই! হৃদান চৌধুরীক শেষ করে দিতে চাইছিলি তুই? নিজের চোখে নিজের মৃত্য দেখ!
কথাটা বলেই শরীর থেকে হাতটা আলাদা করে দিলো লোকটা। চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে। চোখে মুখে আঘাতের ভয়াবহ ব্যাথা স্পষ্ট। হৃদান থামলো না একেরপর এক আঘাত করতে লাগলো বাকি অংশ টুকুই। এই ভাবে সারা শরীরে
দুটো ঘন্টা নিজের নিষ্ঠুর তম অত্যাচার চালিয়ে চুপ করে বসে রইলো হৃদান। তাকে কে বসতে দেখেই পান্চু দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে ছুরি চালানো লোকটা সামনে গিয়ে দাড়ালো। নিজের হাত দিয়ে চোখের ভেতর আচড় মারলো। এই চোখ তার ম্যামের উপর পড়েছে এই চোখে কোনো অধিকার নেই বেঁচে থাকার। পিয়াস চুপচাপ সব দেখে যাচ্ছে। পান্চুর কাজ দেখে সে রিতীমতো অবাক। আজ পান্চু যথেষ্ট স্ট্রং থেকে সবটা দেখে গেছে আর নিজেও আঘাত করছে! অন্যদিন তো তার পেছনে চোখ মুখ খিঁচে দাড়িয়ে থাকে। ভালোবাসা সুন্দর! পিয়াস হাসলো। হৃদান বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। গোপন রুমের দরজাটাও বন্ধ হয়ে গেলো!
নিজের ঘরে উদাসীন হয়ে বসে আছে আদর। হাতের ব্যাথার থেকে মনের ব্যাথাটা প্রখর বেশী। সে হৃদান কে ছাড়া কিভাবে থাকবে। আতইয়াব কে বুঝাতেও পারছে না তার উপর হামলার পেছনে হৃদান দায়ী না। সে যে প্ল্যান টা করেছে এমন হওয়ার ই ছিলো। আতইয়াব আদরের ফোন টাও নিয়ে নিয়েছে। হৃদান কেমন আছে, কি অবস্থায় আছে সে খুঁজ ও নিতে পারছে না। ঘুম যেন চোখে ভর করে আছে। আতইয়াব ব্যাথার ঔষধের সাথে ঘুমের ঔষধ ও খাইয়ে দিয়েছে আদরকে। সে জানে তার বোন আজ এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমাবে না। তাই তো এই পন্থা।
ঘুমে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিবে হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দ আসতেই ফট করে চোখ খুললো সে। আবছা চোখে একটা অবয়ব দেখেও কিছু বলতে পারলো না। আদরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অস্পষ্ট সুরে হৃদ নামটা বলে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো আদর। তখনি কাছে এসে দাড়ালো হৃদান। অনেক কষ্টে বেলকনি টপকে আদরের ঘরে এসেছে সে। কালো টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ে এসেছে। বাম হাতের ঠিক মাঝখানটাই ব্যান্ডেজ করা। যেমনটা আদরের ব্যান্ডেজ করা। নিজেকেই নিজে আঘাত করেছে সে। নিজের ভালোবাসাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে না পারার দায় টা মাথায় নিয়ে নিজের হাতেই ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। ব্যান্ডেজ ও করতে চায়নি। পিয়াস জোর করে ; ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ব্যান্ডেজ করিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।
আদরের ঘুমন্ত মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে হৃদান। মুখটা তেলতেলে হয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে বিছানায় ছড়িয়ে আছে। পাগল পাগল লাগছে আদর কে। কিন্তু হৃদানের চোখে এই আদর টাকেও অসম্ভব সুন্দর লাগছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী সে তার মাকেই মনে করতো। তারপর যোগ হয়েছিলো ছোট হৃদযা। এখন তার জীবনে তিনজন রয়েছে। তাদের মধ্যে আদর একজন।
আদর কিছুটা হা করে ঘুমাই। দেখতে খুব খারাপ না লাগলেও বেশী ভালোও লাগেনা। হৃদান মুচকি হেসে হা টা বন্ধ করে দিলো। একটু পর আবার মুখটা হা হয়ে এলো। হৃদানের বেশ ভালো লাগছে এমন করতে। যতবার হা করছে ততবার বন্ধ করে দিচ্ছে হৃদান। আর মরার মতো দিনদুনিয়া ভুলে ঘুমাচ্ছে আদর। টেরই পাচ্ছে না তার অগোচরে কেউ একজন তার পাশে বসে চোখ, মনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে!
ভোর রাত হতেই হৃদান অনিচ্ছা সত্তেও বের হয়ে আসে ঘর থেকে। আদরের অগোচরে সে গভীর ভাবে স্পর্শ করেনি। যদিও কপালে চুমু খাওয়ার ইচ্ছে টা জেগে উঠেছিলো ; পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়েছে সে। আসার আগে একটা প্যাকেজ রেখে এসেছে হৃদান। যা শুধু আদরের চোখেই পড়বে। ভুল বশত ওই ইবলিশটার চোখে পড়লে তার গর্দান নিবে নিশ্চিত!
সকাল ১০ টা বাজে। আতইয়াব একেরপর এক ফোন দিয়ে যাচ্ছে তারিম কে। কিন্তু তারিম ফোন সামনে রেখে বসে আছে তবুও ফোন ধরছে না। তার ভাইকে কষ্ট দিয়ে এখন পিরিত করতে আসছে! তা তো হবে না চান্দু। শিক্ষা কাকে বলে এবার টের পাবে আতইয়াব। এসব ভেবে কিটকিটিয়ে হেসে দিলো তারিম। তার যেন এমন করতে খুব আনন্দ হচ্ছে। অন্যদিকে আতইয়াব রেগে যাচ্ছে। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। প্রবলেমটা হৃদানের সাথে; সে কেন নিজের বউ ছাড়া থাকবে? দরকার পড়লে মামলা করবে তবুও তার বউ লাগবেই। এই তারিম কে যদি শিক্ষা না দিয়েছে সে। তার সাথে এমন করা, তাকে ইগনোর করা; একবার কাছে পাই তখন বুঝাবো। মনের মধ্যে ফন্দি এটে নিলো আতইয়াব।
কে কাকে শিক্ষা দিবে? শেষে কার জয় হবে? তারিমের প্ল্যান কি সফল হবে? হৃদানের ভালোবাসা কি জয়ী হবে? নাকি আতইয়াবের ভুলের জন্য হেরে যাবে?
চলবে….?
#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১৫
Tahrim Muntahana
ভার্সিটি এসেছে তারিম। আদর, সুবাহ কেউ আসেনি আজ। তারিম জানতো আদর আসবেনা কিন্তু সুবাহ’র আসার কথা ছিলো। হঠাৎ ফোন করে বলল আসবেনা। তারিম ভাবছে সুবাহ তো কথার খেলাপ করার মেয়ে না। তাহলে এমন করবে কেন? এর পেছনে কিছু কারণ নেই তো? ভাবতে ভাবতেই গেটে আতইয়াব কে দেখে তারিমের আর বুঝতে বাকি থাকলো না এই সব আতইয়াবের ই কাজ। মনে মনে নিজেও প্ল্যান করে নিলো উল্টো চাল দেওয়ার। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে নিজেকে আড়াল করে নিলো। আতইয়াব সরাসরি তারিমের ক্লাসের দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই ভিড়ের মধ্যে একটা মেয়ের কথা শুনেই তারিম রেগে ফুসে উঠলো। মেয়েটি আতইয়াব কে দেখেই ক্রাশ খেয়েছে। তারিম আর সেখানে থাকতে পারলো না। রেগে গেলেই তার সব প্ল্যান ফ্লপ। চুপি চুপি ভার্সিটির পেছন দিয়ে রাস্তায় এসে দাড়ালো। বাড়ি ফিরার কথা ভাবছে না সে। সুবাহ কেও একটা শিক্ষা দিতে ইচ্ছে করছে তার। বেস্টুর সাথে এমন করলো? রিকশা নিয়ে সুবাহ’র বাড়ির দিকে রওনা হলো।
নিজের শশুড় বাড়িতে হঠাৎ করে তারিম কে দেখে চমকে উঠলো সুবাহ। তারিম স্বাভাবিক ভাবেই সোফায় বসে শরবত গিলে যাচ্ছে। ফালাহ’র মা যত্ন করে খাওয়াচ্ছে তাকে। সুবাহ মাথা নিচু করে বসে আছে। তারিম খাওয়ার মাঝেই বলে উঠলো,
তুই আবার বেইমানি করলি আমার সাথে? একে তো পিরিত করে বলিস নাই তার উপর আজকে এমন করলি। অল্পের জন্য ফেঁসে যাচ্ছিলাম আমি। কি হতো? সবটা প্ল্যান গন্ডগোল হয়ে যেতো। এতকিছুর পরেও যে আমার না হওয়া শশুড় বাড়িতে এসেছি ; কই একটু যত্ন করবি। তা না করে মাথা নিচু করে অপরাধির মতো বসে আছিস! বলি লজ্জা করে না?
তারিমের এমন কথায় ফালাহ’র মা হিহিহি করে হেসে দেয়। সুবাহ কটমট চোখে তাকিয়ে থাকে তারিমের দিকে। তারিম ভ্রু নাচিয়ে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিবে সুবাহ ঝটপট তারিমের হাত ধরে নিজের ঘরে ঢুকে পড়ে। তারিম ঘরে ঢুকেই হো হো করে হেসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর বিছানা থেকে উঠেই বিচলিত কন্ঠে বলে,
এই না এই বিছানায় শুয়া যাবে না। আল্লাহ কি করতে যাচ্ছিলাম। আমার না হওয়া বিছানাটা! এইখানেই দুজনে রোমান্স করো তাইনা। অথচ তোদের কিছু সময় পর বিয়ে করে জামাইকে ভালোবাসিই বলতে পারলাম না। হাই কপাল!
ডং করে সোফায় বসে পড়লো তারিম। সুবাহ দাড়িয়ে শুধু তারিমের কান্ড দেখছে। তাকে যে আজ তারিম জ্বালাতে এসেছে সে প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলো। তারিম আবার সোফা থেকে দাড়িয়ে গেলো। মুখে হাত দিয়ে অবাক কন্ঠে বলল,
এই আবার ভুল করতে যাচ্ছিলাম। ছি ছি। আমার না হওয়া সোফাটাই ; ভাইয়ার কোলের উপর বসে থাকো তাইনা? নট নট এখানেও বসা যাবে না। আমি বরং দাড়িয়েই থাকি।
সুবাহ এবার বিরক্ত হলো। চোখ ছোট হয়ে এলো তার। সুবাহ কে বিরক্ত করতে তারিমের তো অসম্ভব ভালো লাগছে। দেখ এবার কেমন লাগে। তাকে ভার্সিটিতে একা ফেলে এখানে সংসার করা হচ্ছে। আজকের দিনটাই মাটি করে দিবে সে। ভেবেই একগাল হেসে সুবাহ কে জড়িয়ে ধরলো। বলে হঠাৎ করেই ছেড়ে দিয়ে বলল,
এই আমি কোথায়? এইখানে থাকা যাবে না। এ তো আমার না হওয়া সেই ঘর টা। কি অলক্ষুণে ব্যাপার। আর তুই তো আমার না হওয়া জামাই টার বউ। ছি ছি তোকে জড়িয়ে ধরে কি পাপ টাই না করলাম। এ তো ঘোর পাপ। আল্লাহ আপনি মহান প্লিততত হেলেপস মি। আমাকে পরিশুদ্ধ করে দিন। আমি এ মুখ কাকে দেখাবো। আমি…
আর বলতে পারলো না তারিম। তার আগেই তার পিঠে ঝাটার বারি পড়লো। লাফিয়ে উঠলো সে। পেছনে সুবাহ কে শাশুড়ি রিনা খানের মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে আত্মা কেঁপে উঠে তারিমের। বেশীই বিরক্ত করে ফেলেছে সে। আরো কয়টা ঝাটার বারি যে তার পিঠে পড়বে এখান থেকে এই মুহূর্তে না গেলে সে ভালোয় বুঝতে পারছে। দৌড় দিতে যাবে সামনে এসে দাড়ালো ফালাহ। তারিম হাহা হেসে ফালাহ’র পেছনে দাড়িয়ে পড়লো। ফালাহ তো এতক্ষণ দরজায় দাড়িয়ে সবকিছুই শুনেছে। তার বেশ হাসিও পাচ্ছে কিন্তু বউয়ের যে রূপ দেখছে হাসা মানেই ফাঁসা!
তারিম যা ভেবেছিলো তার কিছুই হলো না। সুবাহ ঝাটা টা রেখে বিছানায় বসলো। মুখ ভার করে বলে উঠলো,
তুই কেন এসব বলছিস আমি জানি। আমার কোনো দোষ নাই। সব দোষ তোর না হওয়া জামাইটার!
তারিম কিছুটা ইতস্তত করলো। ফালাহ’র সামনে নিজের স্বরূপ বের হয়ে গেলে সেরেছে। ফালাহ সুবাহ’র কথা শুনে হো হো করে হেসে দিলো। দুই জনের চোখ ই এখন তার উপর। হয়তো ভাবছে হাসির কি হলো। হাসি থামিয়ে ফালাহ বলল,
আমার কোনো দোষ নাই। সব দোষ তোমার জামাই য়ের। আমার না হওয়া বউটার সাথে তার জামাই একান্তে কিছু সময় কাটাতে চেয়েছিলো তাই আমাকে শাসিয়ে বলেছে সুবাহ কে যেন আজকে সময় দিই! না হলে বউ ইগনোরের মামলা ঠুকে দিবে!
ফালাহ’র কথায় তারিম ভ্রু কুচকালো। ও তাহলে এই ব্যাপার। তারিম ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলো,
বুঝলাম! দোষ তো আপনারাও আছে। আপনি সবটা জেনেও রাজী হয়ে গেলেন। ওওও বউয়ের সাথে সারাক্ষণ লেপ্টে থাকতে ইচ্ছে হয় তাইনা? আপনারও শাস্তি পাওয়া উচিত। তার জন্য কি করতে হবে এই হৃদযা চৌধুরী জানে!
ফালাহ এবার থতমত খেয়ে গেলো। এই যাহ দোষ না করেও শাস্তি। একটু তো বউকে কাছে পেতে চেয়েছিলো কি এমন পাপ করেছে সে! সুবাহ মিটমিটিয়ে হাসছে ফালাহ’কে জব্দ হতে দেখে। তারিম ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। ফালাহ করুণ চোখে সুবাহ’র দিকে তাকালো। ফালাহ ভাবছে তারিম আজ ঘর থেকে যাবে না! অন্যদিকে তারিম ভাবছে অন্যকিছু। কিছুক্ষণ ভেবে আবেগি কন্ঠে বলে উঠলো,
সুবু চল আদুকে দেখে আসি। বাড়িতে একা একা কি করছে কে জানে। ওই ইবলিশ টা তো এখনো ভার্সিটি আমাকে খুঁজে চলছে। হিহিহি উচিত শিক্ষা হয়েছে। এবার বুঝবে এই হৃদযা চৌধুরী কি? এখন আমি সম্পূর্ণ হৃদযা চৌধুরী যে তার ভাইয়ের ভালোবাসার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এই সংগ্রাম চলতেই থাকবে। দরকার পড়লে হরতাল ধর্মঘট অবরোধ অনশন সব করবো তবুও পিছিয়ে যাবো না! আমার দাবী মানতেই হবে।
তারিম যেন হৃদানের বোন হৃদযার ক্যারেক্টারে ঢুকে গেছে। এ যেন বিপ্লবি কন্ঠস্বর। হৃদান চৌধুরী ছুরি চালায় এ চালাচ্ছে কথার বুলি! ফালাহ সুবাহ হা করে তারিমের কথা শুনে যাচ্ছে। তারিম একপলক ওদের কে দেখে নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে আবার নরম কন্ঠে বলল,
চল না সুবু। আদুর খুব ভালো লাগবে আমাদের দেখে। কত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে ওর সাথে আমরা গেলে কিছুটা সময় ভালো কাটবে ওর। ফোন ও তো নিয়ে নিয়েছে ইবলিশে!
তারিমের সম্মোহনী কথায় সম্মোহিত হয়ে সুবাহ’র মুখটাতেও দুঃখী দুঃখী ভাব এসে গেলো। আহারে! তারিম তো ঠিকই বলেছে। মেয়েটা সারাদিন একা একা কি করবে! তারা বেস্ট ফ্রেন্ড; এই সময়ে পাশে থাকা তাদের বন্ধুত্বজনিত কর্তব্য! ভেবেই থ্রিপিস নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো। সুবাহ যেতেই ফালাহ’র গলা টিপে ধরলো তারিম! ফালাহ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তারিম কিটকিটিয়ে হেসে বললো,
ভালো হয়েছে না। বউয়ের সাথে রোমান্স করবেন? করাচ্ছি না? এখন ঘরে একা একা বসে কোলবালিশের সাথে রোমান্স করেন। আমার ভাইকে কষ্ট দেওয়ার ফন্দি এটেছে ওই আতইয়াব তাযিন ইততেয়াজ। নিজেও টের পাবে হুহ! ইটস তারিম এও নট ইটস হৃদযা চৌধুরী!
ভাব নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এলো তারিম। ফালাহ এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এ যেন অন্য তারিম কে দেখছে সে। আগে তারিম কখনোই এমন ছিলো না। এখন তো কিলার কিলার লুক নিয়ে থাকে। হৃদান চৌধুরীর বাতাস পেয়েছে বলে কথা! বড় করে শ্বাস নিলো ফালাহ! আহা কষ্ট বন্ধুকে সাহায্য করে নিজে ফায়দা লুটাতে চেয়েছিলো আর এখন বন্ধু তো ছ্যাকা খেলো খেলোই; সাথে তাকেও ছ্যাকা খেয়ে আহম্মক হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। সুবাহ রেডি হচ্ছে খুশী মনে। ফালাহ’র দিকে তাকাচ্ছে না একটুও। ফালাহ অসহায় চোখে সবটা দেখে যাচ্ছে। সুবাহ রেডি হয়ে ঘর থেকে বের হতেই দেখতে পেলো তারিম তার শাশুড়ির সাথে জমিয়ে আলাপ করছে। সুবাহ যেতেই তার শাশুড়ি বলে উঠলো,
সাবধানে যাস। সন্ধ্যার দিক দিয়ে ফালাহ গিয়ে নিয়ে আসবে চিন্তা করিস না। আদরের সাথে একবার কথা বলিয়ে দিস আমাকে। আহারে মেয়েটা!
সুবাহ মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। ওরে শাশুড়ি। ধন্য জীবন! তারিম বিদায় নিয়ে সুবাহ কে নিয়ে বের হয়ে গেলো। ফালাহ নিজের ঘরের জানালা দিয়ে সুবাহ’র যাওয়া টা দেখে বিছানায় শুয়ে পড়লো চিত হয়ে। আহা বিবাহিত জীবন! পুরাই প্যারাময়!
______________________
ফোনে কথা বলা শেষ করে বেলকনিতে বসেছিলো আদর। কিছুক্ষণ পর পর মুচকি হাসছিলো। হটাৎ নিজের ঘরে তার দুই বেস্টুকে দেখে অবাক হই সে। তার চেয়ে বেশী খুশী হয়। আনস্পেক্টেড ছিলো। তারিম সুবাহ আদরকে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে ঠোঁটে দুষ্টু হাসি এনে ভ্রু নাচাতেই আদর লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। ভাবতে থাকে সকালের কথা,
সকালে ঘুম থেকে উঠেই হঠাৎ করে রাতের কথা মনে হয় আদরের। আবছা ছায়াটা সে এখনো টের পাচ্ছে মনে হয়। কে এসেছিলো? এত ঘুম ই বা আসলো কি করে তার চোখে? ভাবতে ভাবতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো ফ্রেশ হতে। বাম হাত নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে। ব্যাথাটা একটু কমলেও পুরোটা যায়নি। ওয়াশরুমের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো একটি শপিং ব্যাগ। কৌতুহলী হয়ে এগিয়ে গেলো সে। ব্যাগ টা নিয়ে আবার ঘরে চলে আসলো। কি হতে পারে ব্যাগটায়? ভেতরের জিনিসটা বের করতেই আদরের মুখ হা হয়ে গেলো। আই ফোন! নিউ! তার তো আছে। সাদা চিরকুট দেখে ঝটপট হাতে তুলে নিলো,
অবাক হয়েছো আন্ডাবাচ্চা? তোমার থেকে দূরে থাকা সম্ভব না। লুকিয়ে রেখো। কথা হবে! আই নিড ইউ পাখি!
আদরের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। রাতে আবছা ছায়াটা যে তার ক্যাবলাব্রিটিশ ছিলো বুঝতে পেরেই আনন্দিত হলো সে। বক্সটা লুকিয়ে রেখে ফ্রেশ হয়ে এলো। এখনি আবার ভাইয়া এসে যাবে। ঠিক তাই হলো ; আদর ফ্রেশ হয়ে আসতেই আতইয়াব খাবার আর ঔষধ নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আদর কিছুই বললো না। চুপচাপ আতইয়াব যা ফলে শুনে নিলো। খাবার, ঔষধ খাইয়ে আতইয়াব নিচে চলে গেলো। আদর অপেক্ষা করতে থাকে আতইয়াবের যাওয়ার। ঠিক আধাঘন্টা পর আতইয়াব বাড়ি থেকে বের হয়। তখনি ফোন টা অন করে ফোন লাগাই হৃদের নম্বরে। সেই থেকে যে কথা বলে যাচ্ছে কলিং বেলের শব্দে ফোন রেখে বেলকনিতে বসে আদর।
আদর কে ভাবনার জগতে হাসতে দেখে তারিম, সুবাহ জোরে হেসে উঠে। আদরের কাছে সবটা শুনে ওরা এটা ওটা বলে আদর কে লজ্জা দেওয়ার চেষ্টা করলেও; তেমন লাভ হয়। আদরের লজ্জাটা আবার একটু কম!
সারাটা দিন অনেক ভালো কেটেছে আদরের। প্রিয় মানুষটা হঠাৎ করে চমক দেওয়া; কথা বলা; দুই বেস্টুর আগমনে আদর যেন ভুলেই গেছে কালকের হামলার কথা। অন্যদিকে হৃদান এতকিছুর মাঝেও আদরের সাথে কথা বলতে পেরে মহাখুশী। গুনগুনিয়ে গান করছে; হাটার তালে তালে নাচছে; এ যেন অন্য হৃদান! আগের হৃদান চৌধুরী ড্রেনে ডুবে গেছে! পান্চু তো বসের আচরণে বারবার টাকলা মাথায় হাত বুলাচ্ছে। তার মনে এখন অন্য চিন্তা ঘুরছে। চিন্তাটাও বিশাল। মনের মধ্যে প্রেম প্রেম পাচ্ছে তার! প্রেম করলে সে বসের মতো উুরুউুরু মন নিয়ে থাকতে পারবে। গুনগুনিয়ে গান গাইবে, ডিউটি করতে করতে হালকা নাচবে; এও জাস্ট ইয়ো ইয়ো ব্যাপার! প্রেমের কথা মনে পড়তেই পান্চুর চোখে একটা মেয়ের ছবি ভেসে উঠে। চিক চিক করে উঠে চোখ! আহা কি সুন্দর মেয়েটা। শালীন ভাবে চলাফেরা করে। তাকে দেখেও কেমন মুচকি হাসছিলো। তাহলে কি সে ধরে নিবে মেয়েটির তাকে পছন্দ হয়েছে। ভাবতেই খুশিতে ভরে উঠলো ভেতরটা। সে ও প্রেম করবে!
সেদিন একটি কাজে বাইরে গিয়েছিলো পান্চু। হেটে হেটে আসছিলো বিকেল দিকে। হটাৎ করেই একটা মেয়েকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় পান্চু। প্রথমে মনে হয়েছে মেয়েটি তার টাক মাথা থেকে বিদ্রুপ করে হাসছে পরে যখন মেয়েটি লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে হাসছিলো তখন পান্চু তাড়াতাড়ি চলে আসে সেখান থেকে। আল্লাহ’ই জানে শত্রুপক্ষের ফাঁদ কিনা। সে এসবে জড়াবে না। পরক্ষণেই পেছনে একপলক তাকিয়ে দেখে মেয়েটি তখনো মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। গর্বে পান্চুর বুকের ছাতি ফুলে দ্বিগুন হয়ে যায়। ভাব নিয়ে গেট দিয়ে ঢুকতেই আরেকজন গার্ডের সাথে ধাক্কা খেয়ে টাকলা মাথায় ঠুস করে বারি খেয়ে আবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে পান্চু। ইতিহাস গড়েছিলো সেদিন। এরপর আর মনেই ছিলো না মেয়েটির কথা। হঠাৎ মনে আসায় ভালোই লাগছে। এবার প্রেম না বিয়েই করে ফেলবে সে। যদি টাকু দেখে পরে ছেড়ে দেয়। সে ছ্যাকা খেতে একদম অপটু! পান্চুর মতে ছ্যাকা খাওয়া মানেই বিয়ের জন্য একবছর দেরী করা। সে এটা কোনো ভাবেই চায়না!
বিষণ্ন মনে বাড়ি ফিরছে আতইয়াব। রাত ৮ টা বাজে। মুখে মলিনতা ছড়িয়ে আছে। পুরো একঘন্টা খুঁজেছে তারিম কে। না পেয়ে হসপিটাল চলে গিয়েছিলো সে। এরপর থেকেই মনটা বেশ খারাপ। একটুখানি কথা বলার জন্য ছটফট করছে সে। মনের মধ্যে নানান চিন্তা আঁকাবুঁকি করছে। মনে হচ্ছে তারিম কে হারিয়ে ফেলবে। ভাইয়ের এমন মলিন মুখ দেখে আদরের খারাপ লাগলো। বাট বেস্টুকে কথা দিয়েছে সে একদম চুপ থাকবে। তাই কিছু বলতে পারছে না। ভালো কিছুর জন্য কিছু কষ্ট ফেস করতে হয়! দেখা যাক সামনে কি হয়!
চলবে..?