#বেসামাল_প্রেম,১০,১১
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১০
ভরসন্ধ্যায় দু’মগ কফি বানিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করল মাহের। সুইচ টিপ দিয়ে অন্ধকারে আচ্ছন্ন রুমে ঝকঝকে আলোর আবির্ভাব ঘটাল। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল বিছানায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে সূচনা৷ ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানার এক পাশে বসল সে। বেড সাইট টেবিলে কফির মগ দুটো রেখে সন্তর্পণে সূচনার কাঁধে স্পর্শ করল। এটুকু স্পর্শ করার অধিকার দেড়মাসের বিবাহিত জীবনে ঠিক জব্দ করে নিয়েছে সে। পুরুষালি শক্ত হাতের নরম স্পর্শ পেয়ে মৃদু কেঁপে ওঠল সূচনা। ধাতস্থ হয়ে ওঠে বসল সে। নত মুখে গলায় জড়িয়ে রাখা ওড়নাটা ঠিকঠাক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল মুহুর্তেই। তবুও আড়াল করতে পারল না রক্তিম মুখের ফোলা ফোলা চোখ দু’টিকে। তার অমন বিষাদমাখা মুখশ্রী দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মাহের। শীতল কণ্ঠে বলল,
-” মাথা ব্যথা করছে আপনার? কফি নিন, নিজ হাতে বানিয়েছি আমাদের জন্য। ”
বলতে বলতে এক মগ কফি এগিয়ে দিল সূচনার দিকে৷ সূচনা জড়তার সঙ্গে নিল। মৃদু হেসে নিজের মগটাও হাতে নিল মাহের। সূচনাকে ইশারায় চুমুক দিতে বলে খুবই সাবলীল ভঙ্গিতে নিজের মগে এক চুমুক দিল৷ কয়েক পল নির্নিমেষ দৃষ্টিতে সে দৃশ্য দেখে চোখ ফিরিয়ে নিল সূচনা। নিজের মগে ধীরস্থির ভাবে এক চুমুক দিয়ে গভীর শ্বাস ছাড়ল৷ বলল,
-” ধন্যবাদ। ”
ঈষৎ হেসে মাহের জিজ্ঞেস করল,
-” কেমন হয়েছে? ”
-” ভালো। ”
-” শুধুই ভালো? ”
জবাব দিল না সূচনা। মাহের তাকিয়ে রইল তার দিকে। বউয়ের মন খারাপের মাত্রাটা টের পেল নিখুঁত ভাবে। মন ভালো করার জন্য কী করবে? কী করলে একটু হাসবে তার বউ? খুঁজে পেল না সে। তাই অফার দিল,
-” বাইরে ঘুরতে যাবেন? রিকশায় ঘুরব চলুন। ”
বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল সূচনা। ফ্যানের পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে পুনরায় বিছানায় এসে বসল। শান্ত গলায় বলল,
-” প্রয়োজন নেই। ”
সূচনার গম্ভীর মুখটায় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মাহের। গভীর এক জোড়া দৃষ্টিতে চিন্তার রেশ স্পষ্ট। সে চিন্তান্বিত দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে সূচনা পুনরায় বলল,
-” আমি একদম ঠিক আছি মাহের। আপনি চিন্তা করবেন না। ”
হাত বাড়িয়ে সূচনার এক গাল স্পর্শ করল মাহের। শীতল কণ্ঠে বলল,
-” আপনি বুদ্ধিমতী সূচনা। আমার বিশ্বাস আপনি একপাক্ষিক চিন্তা করবেন না। ”
ছোট্ট নিশ্বাস ছেড়ে সূচনা জবাব দিল,
-” হুম। ”
কফি শেষ করে মগ দুটো রেখে আসার জন্য পা বাড়িয়েছে সূচনা। অমনি ফোন বেজে ওঠল তার। মাহের স্ক্রিনে দাদিন লেখা দেখে ফোন এগিয়ে দিল। কফির মগ দুটো নিয়ে বলল,
-” কথা বলুন আমি রেখে আসছি। ”
মগ দুটো রেখে পুনরায় রুমে আসতেই দেখল সূচনা হন্তদন্ত হয়ে তার পার্স নিয়ে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায়ই রুম থেকে বেরিয়ে গেল। পেছন পেছন সে নিজেও বের হলো। একের পর এক প্রশ্ন করল,
-” কী হয়েছে সূচনা? কোথায় যাচ্ছেন আপনি? ”
জবাব দিল না সূচনা। মাহের তাকে বোঝানোর চেষ্টা করল। বলল,
-” এমন করছেন কেন? দাঁড়ান আমি বাইক বের করছি, কোথায় যাবেন, ও বাড়ি যাবেন? আমি নিয়ে যাচ্ছি জাস্ট দুমিনিট অপেক্ষা করুন।”
কিন্তু নাহ সূচনা দাঁড়াল না। মাহেরকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বিক্ষিপ্ত চিত্তে রাস্তায় এসে অটো দাঁড় করাল সে। এরূপ আচরণে ভয়ানক রাগ হলো মাহেরের। তবু নিজেকে সংযত করে নিল। হাত টেনে ধরল সূচনার। শান্ত কণ্ঠে বলল,
-” আমি জিজ্ঞেস করেছি আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আমি বলেছি আমি দিয়ে আসব ও বাড়িতে। ”
এক ঝটকায় মাহেরের হাত সরিয়ে দিল সূচনা৷ ডুকরে ওঠে বলল,
-” আমি আপনাকে কোনো উত্তরই দেব না। আমি আপনার একটা কথাও শুনব না। ”
ত্বরিতগতিতে অটোতে ওঠে বসল। অটোওয়ালাকে সদর হাসপাতালের সামনে যেতে বলল। অটো স্টার্ট হতেই মাহের থামতে বলল। অটো থেমে গেল, মাহেরও ওঠে বসল অটোতে। সূচনার ওড়নার এক কোণা চাকা ছুঁই ছুঁই হয়েছিল মাহের ওড়না টেনে সন্তর্পণে সূচনার গায়ে জড়িয়ে দিল। অটোও চলতে শুরু করল৷ সে কাঁদতে থাকা সূচনাকে থমথমে কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
-” কার কী হয়েছে? দাদিন অসুস্থ? ”
সূচনা উত্তর করল না। মাহের আলতো করে তার কাঁধ চেপে ধরল। স্বান্তনা দিয়ে বলল,
-” কাঁদবেন না প্লিজ কার কী হয়েছে বলুন আমায়। ”
হাসপাতালের সামনে অটো থামতেই সূচনা নেমে দাঁড়াল। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফোন করল সাদমানকে। মাহের ভাড়া মিটিয়ে কল করল রাদিফের নাম্বারে। ওদের এসে সাদমান নিয়ে গেল ভেতরে। মাহেরও জানতে পারল রুদ্রর এক্সিডেন্ট হওয়ার কথা। গাড়ি ব্রেক ফেল করে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে। মাথায় এবং থুতনিতে বেশ ইনজুরি হয়েছে। মাথায় সেলাই পড়েছে ছয়টা, থুতনিতে তিনটা৷ পেটের যে অংশে কাচ গভীর হয়ে ঢুকেছিল সে অংশেও তিনটা সেলাই পড়েছে৷ হাত, পা শরীরের বিভিন্ন অংশে কাচ ঢুকেছিল। মোটকথা শরীরের বিভিন্ন অংশই ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তার৷ মাথার কাটা অংশে সেলাই করার জন্য মাথা ভর্তি ঘাড় ছোঁয়া চুলগুলো কেটে একদম ছোটো করে ফেলা হয়েছে। কাটা থুতনিতে সেলাই করার জন্য কেটে ফেলা হয়েছে কুচকুচে কালো ঘন, লম্বা দাঁড়ি। তার এমন করুণ অবস্থা দেখে সূচনা নিজেকে আটকে রাখতে পারল না। হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। নার্স রুদ্রকে শার্ট পরতে হেল্প করছিল। বোনের কান্নায় চোখ ঘুরিয়ে রাশভারী কণ্ঠে রুদ্র বলল,
-” কাঁদছিস কেন মরে যাইনি, বেঁচেই আছি। তোর ননদ কোথায়? তার খোঁজ নিয়েছিস? ”
শেষ বক্যে রুদ্রর কণ্ঠ বিচলিত। আকস্মাৎ সূচনার কান্না থেমে গেল৷ মাহের ভ্রু কুঁচকে তাকাল। পকেট হাতড়ে ফোন বের করল। রুদ্র তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ক্রমেই অস্থিরতা বাড়ছে তার। মাহের কল করল হৈমীর ফোনে কিন্তু হৈমী ফোন ধরল না। এরপর কল করল টিশাকে। টিশার ফোন রিসিভ করল তার হাজব্যান্ড রউফ৷ তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারল হৈমী তাদের সঙ্গেই আছে। হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে ফোন কেটে দিল সে। রুদ্র এমন ভাবে হৈমীর কথা জিজ্ঞেস করল মনে হলো হৈমী তার সঙ্গে ছিল। এক সঙ্গে একই গাড়িতে। হুঁশ ফিরল মাহেরের বলল,
-” হৈমীর যেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে। আমার খালাতো বোনের বাসায়। ”
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে মুখ ফিরিয়ে নিল রুদ্র। সাদমানকে জিজ্ঞেস করল,
-” গাড়ি কোথায়? ”
সাদমান বলল,
-” থানায় নেয়া হয়েছে। দাদাভাই পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছে তুমি চিন্তা করো না। ”
-” এবার বাড়ি নেয়ার ব্যবস্থা কর নয়তো একাই চলে যাব। ”
সাদমানকে কথাটা বলেই সূচনাকে বলল,
-” এখনো কাঁদছিস কেন? এদিকে আয় পাশে বোস।”
ধীরপায়ে সূচনা গিয়ে রুদ্রর পাশে মোড়া টেনে বসল। রুদ্র মাহেরের দিকে তাকাল বলল,
-” আপনিও বসুন। ”
______
পায়ে ব্যথায় হাঁটতে পারছে না হৈমী। তাই সাড়ে পাঁচ মাসের পেট নিয়ে তার কাছে এসে বসে আছে টিশা। হৈমীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা শুনে ঠোঁটজোড়া ফাঁক করে গালে হাত রেখে টিশা বলল,
-” হায় হায় রে দিন দুপুরে আমার বোন ডাকাতি! আর তোর সাহস কীরে কীভাবে পারলি ঝাঁপ দিতে। আমি তো জীবনেও পারতাম না। তার মানে তুই কী লিজেন্ড? ভাগ্যিস বড়ই আচারের জন্য ফোন করেছিলাম। নয়তো জানতেই পারতাম না তুই অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে আছিস৷ ভাগ্যিস ছিনতাইকারীর হাতে বা অসৎ লোকের হাতে পড়িসনি তাই তো সহি সালামতে ফিরতে পারলি। আল্লাহ বাঁচিয়েছে তাই না রে? ”
পায়ের গোড়ালি চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে হৈমী বলল,
-” ও আল্লাহরে কী ব্যথা রে, ও টিশা আমার পা কী ভেঙে দিলরে? তোর জামাই কোন কষাই এনে মট্রস করে আমার পা টা ভাঙলোরে। হায় হায় রে এখন আমার কী হবে রে। ও টিশা ভাইকে একটা ফোন দে, আম্মুকে জানা আমার কী বেহাল দশা হইছে। ”
-” ভাই তো ফোন করেছিল তোর দুলাভাই কথা বলছে। তোর খবর নিতে ফোন দিছিল। উনি তোর এই দশার কথা জানায়নি চিন্তা করবে তাই। তাছাড়া অসুস্থ শুনে তোকে যদি এসে নিয়ে যায়? তখন আমার আর বাবুর কী হবে? আমরা কার সঙ্গে গল্প, গুজব করব৷ তোর দুলাভাইয়ের সঙ্গে মশকরাই বা করব কীভাবে? তুই থাকলেই তো মাঝরাতে চুপিচুপি তোর কাছে এসে শুয়ে পড়তে পারব৷ জামাই আমার ঘুম ভাঙতেই দেখব বউ নাই, বউ নাই। শোন হৈমী বউ থাকা অবস্থায় বউ নাই বউ নাই ফিলিংসটা কিন্তু জোশ হয়৷ আমি কত দয়ালু বউ বল? আমার জামাইকে এই জোশ ফিলিংসটা মাঝেসাঝে ফিল করাই। ”
খিলখিল করে হাসতে লাগল টিশা। হৈমী হঠাৎ আঁতকে ওঠে বলল,
-” এই টিশু উনার খবরটা তো নেয়া হয়নি। কী হালে আছে বাড়ির কেউ এক্সিডেন্টের কথা জানে কিনা সেসব তে জানা হয়নি। আচ্ছা শোন উনি যা করেছে আজ এটা গোপন রাখি বেচারার কী দশা কে জানে? একটু দয়া তো আমি করতেই পারি। তুই দয়ালু তোর বোন হিসেবে আমারও একটু দয়ালু হওয়া উচিৎ।”
পিটপিট করে তাকিয়ে রইল টিশা। বলল,
-” হ্যাঁ তা উচিৎ আমি জামাইকে দয়া দেখাই তুই না হয় বেয়াইকে দেখাবি। ব্যাপার না আমি কিছু মাইন্ড করব না চিল। ”
হৈমী তৎক্ষনাৎ কল করল মাহেরের নাম্বারে। মাহের ফোন রিসিভ করে হৈমীকে কিছু বলতে না দিয়ে ব্যস্ত গলায় বলল,
-” হৈমী আমি এখন ব্যস্ত আছি। রুদ্র এক্সিডেন্ট করেছে অবস্থা মোটামুটি বাড়ি নিয়ে যাব এখন। আজ সূচনাদের বাড়িতেই থাকতে হবে আমাকে। তোমাকে আমি পরে ফোন করব। ”
হৈমীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিল মাহের। মন খারাপ হয়ে গেল হৈমীর। রুদ্রর অবস্থা জানতে পেরেই মন খারাপটা হলো৷ কী থেকে যেন কী সব ঘটে গেল। সব কেমন এলোমেলো লাগছে পরিস্থিতি ভীষণ অস্বাভাবিক।
-” কীরে বেয়াইসাবের অবস্থা কেমন বলল? ”
-” মোটামুটি বলল রে। ”
-” ও হৈমী তোর কী মন খারাপ লাগছে? তোর কী বুকের ভিতর কষ্ট হচ্ছে? তুই আবার সত্যি সত্যি গুন্ডা বেয়াইয়ের প্রেমে পড়িসনি তো? ওগো শুনছেন? দেখে যান হৈমী বেয়াইসাবের জন্য মন খারাপ করছে। হেগো কোথায় আপনি তাড়াতাড়ি আসুন। ”
সহসা হৈমী টিশার মুখ চেপে ধরল। চোখ পাকিয়ে বলল,
-” টিশু মার খাবি অমন কিছু না৷ বিশ্বাস কর আমার উনার প্রতি অমন কোনো ফিলিংসই হচ্ছে না৷ শুধু সাধারণ পাবলিক হিসেবে একটু খারাপ লাগছে। ব্যস এটুকুই।”
____
বেশ গভীর রাতেই শেখ বাড়ির সকলে ঘুমাতে গেল। মাহের সূচনার জন্য অপেক্ষা করছিল। রাত তিনটা পেরিয়ে যাওয়ার পরও সে রুমে এলো না। তাই মাহের করল সূচনাকে। বলল,
-” রুমে আসছেন না কেন? অপেক্ষা করছি। ”
-” আমি দাদিনের সঙ্গে শুয়ে পড়েছি। ”
-” ওহ, জানানো উচিৎ ছিল। ”
ওপাশ থেকে উত্তর এলো না৷ শুধু দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনতে পেল। আগ বাড়িয়ে আর একটি কথাও বলল না মাহের। ফোন কেটে দিয়ে শুয়ে পড়ল সে। ভাবল রুদ্রর সঙ্গে কথা বলবে। সূচনা তাকে অযথা ভুল বুঝছে হয়তো রুদ্রও অহেতুক রাগ করছে। একজনের ভুল বোঝা, অপরজনের রাগ এসবে আত্মীয়তার বন্ধন নষ্ট হবে, পারিবারিক অশান্তি বাড়বে।
মাহেরের ভার্সিটি খোলা দশটা পয়তাল্লিশে প্রথম বর্ষে ক্লাস আছে তার। তাই পরেরদিন ভোরে ওঠে সূচনাকে টেক্সট করল,
-” আমার ক্লাস আছে তাই ফিরতে হবে। আপনি ক’টা দিন থাকুন এখানে। ”
দু’মিনিট পর রিপলাই এলো,
-” নাস্তা তৈরি করছি খেয়ে যাবেন… ”
-” রুদ্রর এক্সিডেন্টের জন্য আমাকে দায়ী করে দিচ্ছেন? ”
উত্তর দিল না সূচনা। মাহের ঈষৎ হেসে পা বাড়াল রুদ্রর রুমের দিকে। নিচ থেকে এ দৃশ্য দেখে সূচনা ছুটে এলো। রুদ্র বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ফোন ঘাঁটছিল। দরজায় নক করল মাহের। রুদ্র বলল,
-” দরজা খোলাই আছে। ”
মৃদু কেশে ভিতরে প্রবেশ করল মাহের। ফোন রেখে সোজা হয়ে বসল রুদ্র। বলল,
-” গুড মর্নিং বসুন, ঘুম ভালো হয়েছে? ”
মৃদু হেসে রুদ্রর পাশে বসল মাহের। বলল
-” কেমন ফিল করছেন? ”
-” ঐ আর কী.. ”
গম্ভীর স্বরে বলল রুদ্র। মাহের কয়েক পল নিশ্চুপ থেকে বলল,
-” সাবধানে চলাফেরা করবেন। ”
কিছুকাল পিনপতন নীরবতা চলল। পুনরায় মাহের বলল,
-” ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড কিছু কথা বলতে পারি? ”
-” সিয়র। ”
-” বোনকে ভীষণ ভালোবাসেন তাই না? ”
গভীর দৃষ্টিতে তাকাল রুদ্র। মাহের স্বভাবতই মৃদু হাসি হেসে বলল,
-” আমিও আমার বোনকে ভীষণ ভালোবাসি। বাবা মারা যাওয়ার পর সেই ভালোবাসায় আরো গভীরতা বেড়েছে। পাশাপাশি দায়িত্ববান হতে শিখিয়েছে। ”
রুদ্র স্থির হয়ে তাকিয়ে রইল। মাহের কিয়ৎকাল থেমে আবার বলল,
-” রুদ্র, আপনার জায়গায় আজ যদি আমি থাকতাম পারতেন সূচনাকে আমার হাতে তুলে দিতে? ”
চমকে ওঠল রুদ্র। চমকে ওঠল দরজার বাইরে আড়ি পেতে দাঁড়িয়ে থাকা সূচনাও। মাহের বলতেই থাকল,
-” আমি জানি পারতেন না৷ তাহলে ভাবলেন কী করে আমি পারব? আপনার যেমন একটি মাত্র আদরের ছোটো বোন তেমন আমারো একটিমাত্র আদরের ছোটো বোন। সবচেয়ে বড়ো কথা আমার বোনটা অনেক বোকা, অনেক ছোটো, ইমম্যাচিওর। শুনতে খারাপ লাগলেও সত্যি আপনি একজন বখাটে। আপনার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো থাকতে পারে কিন্তু আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড ইজ জিরো! এমন একটা ছেলে আমার বোন জামাই হবে তা আমি ভাবতেও পারিনা৷ আমি সাধারণ ঘরের ছেলে আমার বোনও সাধারণ ঘরের মেয়ে। আমাদের অধিক সম্পদের প্রয়োজন নেই কিন্তু অধিক সম্মানের প্রয়োজন। আমার বোন সারাজীবন কুমারি থাকলেও আমি কোনো বখাটের হাতে তাকে তুলে দেব না। থাকুক সে কোটিপতি বাবার একমাত্র ছেলে আমার জায় আসে না। এতে যদি আমার স্ত্রী আমাকে ভুল বুঝে আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে রাখুক। আমার বোনের জীবন নিয়ে আমি পুতুল খেলব না বা কাউকে পুতুল খেলতেও দিব না৷ একটা কথা মনে রাখবেন গায়ের জোরে সম্মান, ভালোবাসা কোনোটাই পাওয়া যায় না৷ ভালোবাসার মতো ভালোবাসলে অবশ্যই ভালোবাসাকে জয় করা যায়। আর মন থেকে কাউকে ন্যায়ভাবে, সঠিক পথে চাইলেও উপরওয়ালা খালি হাতে ফেরায় না। আমি আপনাকে অপমান করছি না। সম্পর্কে আপনি আমার বড়ো হলেও বয়সের দিক থেকে ছোটো। বড়ো ভাই হিসেবে একটাই সাজেস্ট জীবনের গতিধারা পাল্টান। আপনি চেষ্টা করলে পারবেন। ক্ষণিকের মোহে পড়ে ভুল পথ বেছে নেবেন না। নিজেদের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি বাড়াবেন না। সঠিক পথ বাছাই করুন সঠিক ভাবে বেঁচে থাকুন। অহেতুক ক্রোধের বশীভূত হয়ে এমন কিছু করবেন না যা আপনার, আমার বোন, আমার এবং আপনার বোনের জীবনে হুমকি সরূপ ধরা দেয়! সেদিন আপনারা চলে আসার পর থেকে সূচনা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। আমাকে ভুল বুঝছে, আমাকে মাকে ভুল বুঝছে। যা একেবারেই কাম্য নয়৷ আশা করি বুঝতে পারছেন? আপনার একটি মাত্র জেদ দুটো পরিবারকে অশান্তিতে রেখেছে। ”
-” আর কোনো অশান্তি হবে না। সূচনার সঙ্গে আমি কথা বলব। ”
স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে কথাটি বললেও বুকের ভিতরটায় অস্থির হয়ে ওঠল রুদ্রর। অদ্ভুত এক পীড়া শুরু হলো গহীন কোণে। রুদ্ধশ্বাসে পুনরায় বলল,
-” আমি কিছু সময় একা থাকতে চাই মাহের। প্লিজ লিভ মি। ”
চলবে…
#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১১
রুদ্রর সঙ্গে কথোপকথন শেষে বিদায় নিল মাহের৷ রুমের বাইরে এসেই মুখোমুখি হলো সূচনার৷ সূচনার থমকে যাওয়া দৃষ্টি দেখে কিঞ্চিৎ বিচলিত হলো সে। কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই বাঁধ সেধে অবিশ্বাস্য, অভিমানী কণ্ঠে সূচনা বলল,
-” আপনি আমার ভাইয়াকে বখাটে বললেন!”
হকচকিয়ে গেল মাহের। দৃঢ় দৃষ্টিতে সূচনার মুখশ্রীতে কয়েক পল তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। দু’হাত বাড়িয়ে সূচনার কাঁধের দুপাশে স্পর্শ করে মৃদু থাপ্পড় দিয়ে বলল,
-” সত্যি যত তিক্ত এবং কঠিনই হোক আমি তা মেনে নিতে পারি, স্বীকার করতেও জানি, আবার চোখে আঙুল দিয়ে মানুষকে দেখিয়ে দিতেও কুণ্ঠা বোধ করি না।”
অপমানে মাথা নিচু হয়ে গেল সূচনার। কাঁধ থেকে ডানহাত সরিয়ে আলতো করে সূচনার চিবুক স্পর্শ করল মাহের। বলল,
-” চোখ তুলুন সূচনা। ”
নত মস্তক নতই রইল সূচনার। মাহের দৃঢ় স্বরে বলল,
-” আপনি যথেষ্ট ম্যাচিওর সূচনা, এসব ছেলেমানুষী আপনাকে মানায় না। অযথা ভুল বুঝে কষ্ট পাবেন না। খাবার রেডি করবেন বললেন? চলুন নয়তো দেরি হয়ে যাবে আমার। ”
__
টানা সাতদিন বাইরে বেরুতে দেয়া হলো না রুদ্রকে। বোনের অভিমানী কড়া নিষেধ তাকে মানতেই হলো। সাত পেরিয়ে আটদিনের মাথায় রুদ্র বাড়ি থেকে বের হলো৷ এর মধ্যে মাহের দুদিন এসেছিল সূচনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সূচনা রাজি হয়নি। কখনো রাত বিরেতে হুটহাট মাহের যখন তাকে ম্যাসেজ করতো,
-” আপনাকে মিস করছি সূচনা। বিছানার বা’পাশটা ফাঁকা রয়েছে। দেখতে ভালো লাগছে না। ”
উত্তরে সূচনা দিতো,
-” তাও ভালো বিছানার বা’পাশে ফাঁকা, বুকের বা’পাশে নয়! ”
উত্তর দেয়ার মতো কিছু খুঁজে না পেয়ে কিছুই বলতো না মাহের। কখনো যদি ম্যাসেজ দিতো,
-” কবে আসবেন? মা আপনার কথা বলে। ”
সূচনা উত্তর দিতো,
-” আমার বখাটে ভাইয়ের জন্য আপনার মায়া না থাকলেও আমার আছে। তাই তার পরিপূর্ণ সুস্থতা দেখে তবেই যাব। ”
____
হৈমীর পা ঠিকঠাক হতে সাতদিন লেগে গেল। এরপর বাড়ি ফিরল সে। ফেরার পর মায়ের মুখে রুদ্রর অবস্থা জানতে পেরে ভীষণ মায়া হলো। আবার তার করা আচরণবিধি স্মরণ হতেই বুকের ভিতরের মায়াগুলো উড়ে গিয়ে ভয় জেঁকে বসল। ভাবতে চাইল না আর রুদ্র নামক তুমুল ঝড়টির কথা৷ তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোও অন্তঃকোণে চেপে রইল। কারণ হিসেবে দাঁড় করাল কিছু কথা। যেমন,
-” গুন্ডাটা তো আর ডিস্টার্ব করেনি, হতে পারে সে এক্সিডেন্ট করে স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে। ভুলে টুলে গেছে আমাকে। আবার হতে পারে এক্সিডেন্ট করে হেব্বি একটা শিক্ষা হয়েছে। তাই নিজে নিজেই শুধরে গেছে। আগ বাড়িয়ে আর ঝামেলা টামেলার প্রয়োজন নেই। আমার দয়ার শরীর দয়া করেই ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে দিলাম হুহ! ”
জীবন চলতে শুরু করল জীবনের গতিতেই। এরই মধ্যে রুদ্র একদিন সূচনাকে জানালো, সে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা যাবে। নিজের শহর, টাঙ্গাইল শহরের পরিচিত হাওয়াতে শ্বাসরোধ হয়ে আসছে। এবার তার হাওয়া বদল প্রয়োজন। সূচনা চিন্তিত হয়ে পড়ল। সেদিন মাহেরের বলা কথাগুলোতে বেশ পরিবর্তন ঘটেছে রুদ্রর। কিন্তু এই পরিবর্তন স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক বুঝতে পারছে না সূচনা৷ তাই তার চিন্তাটা গভীর হলো। বিচলিত হয়ে বলল,
-” রাদিফ ভাইয়াদের ওখানে যাবে? ”
রাশভারী কণ্ঠে রুদ্র বলল,
-” সিয়র না বাট ইচ্ছে হলে যেতেও পারি। চল বিকেলে ও বাড়িতে দিয়ে আসি তোকে। আর সময় পাবো না। ”
সূচনা সম্মতি দেয়। বিকেলবেলা ভাইয়ের সঙ্গে চলে আসে শশুর বাড়িতে। তার শাশুড়ি হামিদা ভীষণ খুশি হয়। রুদ্রকে আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ড্রয়িংরুমে সোফায় স্বভাবসুলভ গম্ভীর হয়ে বসে রুদ্র। সূচনা রুমে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে ভাইয়ের জন্য সরবত নিয়ে এলো৷ রুদ্র সরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে হামিদা বেগমের বলা কথাগুলো শুনে হু হা করছিল। এমন সময় ঝড়ের গতিতে বাইরে থেকে ড্রয়িংরুমে এসে আকস্মাৎ থমকে গেল হৈমী। কয়েক পল গোল গোল চোখ করে রুদ্রকে দেখে নিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলল,
-” ওমা এটা কে? বেয়াইয়ের মতো লাগছে না? ”
হ্যাঁ রুদ্রর মতোই তো লাগছে কিন্তু রুদ্র নয়৷ তার তো এমন ফ্রেশ মুখ, ফ্রেশ মাথা নয়! কপালে ভাঁজ ফেলে
বিস্মিত চোখে সূচনার দিকে তাকাল সে। উত্তেজিত হয়ে বলল,
-” আরেহ ভাবি তুমি এসে গেছ! এটাও তোমার ভাই? আরেহ তোমার আরেকটা ভাই আছে? কিন্তু এত্তো মিল কেন? জমজ টমজ নাকি! ”
হামিদা ওঠে এসে মেয়েকে কড়া চোখে শাসন করলেন। সূচনা কিঞ্চিৎ ভীতু হয়ে রুদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র স্থির বসে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে চঞ্চলিত হৈমীর পানে। হৈমী শান্ত, স্থির রুদ্রকে ড্যাবড্যাব করে দেখে নিয়ে হঠাৎ চিন্তিত হয়ে বলল,
-” তুমি তো বলেছিলে তোমরা দুভাই বোন। জেরিন আন্টিও তাই বলেছিল তাহলে উনি কোথা থেকে আসলো! এই যাহ মুভির মতো কাহিনী টাহিনী আছে নাকি? ঐ যে দু’টো জমজ বাচ্চা হলে একটাকে চুরি করা হয়৷ বহুবছর পর আবার চুরি হয়ে যাওয়া ছেলের খোঁজ পাওয়া যায়। ইস সিনেম্যাটিক কাণ্ড ঘটে গেল নাকি! ”
হামিদা এবার ধমক দিলেন। সূচনা বিরক্ত হয়ে বলল,
-” তোমার মাথা মনে হয় পুরোটাই খারাপ হয়ে গেছে হৈমী। কী আবল তাবল বলছো? ”
মাকে পাশ কাটিয়ে রুদ্রর সামনে এসে দু-হাত কোমরে রেখে পিটপিট করে তাকিয়ে হৈমী বলল,
-” দেখতে একদম সেম পার্থক্য এটাই উনার দয়াল বাবাদের মতো চুল, দাঁড়িতে তো ছোটোখাটো বেনি হয়েই যাবে মনে হয়! ”
রুদ্র শান্ত চোখে তাকিয়েই রইল৷ তার অমন গভীর চোখদুটোতে কিছু একটা ছিল যা হৈমীর মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করল। চুপসে গেল সে। ধীরেধীরে পিছিয়ে গিয়ে মা, ভাবির দিকে তাকিয়ে বলল,
-” আচ্ছা উনাকে কে মেরেছে থুতনিতে আর মাথায় কীসের ব্যান্ডেজ? উনি কি কথা বলতে পারে না। ”
-” কী সব বলছো রুদ্র ভাইয়াকে তুমি চেনো না। অদ্ভুত! ”
সূচনার কথা শুনে হামিদা কঠোর স্বরে বলল,
-” হৈমী রুমে যা, রুমে যা বলছি। ”
রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল। হৈমী ঘাড় ফিরিয়ে তাকে ওঠতে দেখেই বারকয়েক ঢোক গিলে তড়াক করে চলে গেল নিজের রুমে। বিরবির করে বলল,
-” খাইছেড়ে সর্বনাশ ! ”
হৈমীর সঙ্গে সর্বনাশের মতো একটি ঘটনাও ঘটল না। মাহেরের সঙ্গে দেখা করে চলে গেল রুদ্র। হৈমীর চোখে ভাসিয়ে দিয়ে গেল পরিচিত মানুষ অপরিচিত রূপ। দ্বিতীয় রূপ। কিন্তু সে কী জানে? মানুষ বড়ো বিচিত্র। তার থেকেও বেশি বিচিত্র রুদ্র নামক এই শক্তিশালী পুরুষটি। একই মানুষের দু’টো রূপ তাকে যতটুকু দিয়েছে তার থেকে অধিক কিছু দেবে দুই রূপের এই এক মানুষের তৃতীয় রূপটি। সামলাতে পারবে তো ছোট্ট মেয়েটা? সহ্য করতে পারবে তো অপ্রত্যাশিত কিছু অনুভূতিদের? একজন পুরুষের জীবনে আসা নতুন অধ্যায় পাল্টে দেবে না তো তার ভবিতব্য?
___
ক্লান্ত বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ অপরিচিত এক ব্যক্তি পেছন থেকে জিজ্ঞেস করল,
-” আপনি মাহের, সূচনার হাজব্যান্ড?”
বাইক স্টার্ট দিতে গিয়েও থেমে গেল মাহের। পেছন ঘুরে শ্যাম বর্ণীয় হ্যাংলা, পাতলা লম্বাটে ছেলেটিকে দেখে সাবলীল ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল,
-” ইয়েস, কে বলছেন? ”
ছেলেটা হাত বাড়িয়ে দিল। বাইক থেকে নেমে মাহেরও হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করল। ছেলেটা বলল,
-” আমি লিমন। সূচনার এক্স! ”
সহসা চমকে ওঠল মাহের৷ নিজেকে ধাতস্থ করে নিল মুহূর্তেই। এক্স শব্দটা শুনতেই কান গরম হয়ে চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠল৷ বলল,
-” সো? ”
-” আপনার সঙ্গে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। একটা ছেলে হিসেবে আমি মনে করি এসব আপনাকে জানানো উচিৎ। কীভাবে আপনাকে ঠকানো হয়েছে, বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে এর পুরোটাই আপনার জানা উচিৎ। ”
তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে গেল মাহের৷ আশপাশে তাকিয়ে লোকজনকে দেখে নিল। বলল,
-” সরি? ”
-” এখানেই বলব নাকি আড়ালে কোথাও বসবেন? আপনি সম্মানিত মানুষ রাস্তাঘাটে এসব আলোচনা করা ঠিক না। বলা তো যায় না কী থেকে, কার মাধ্যমে কী রটে কী ঘটে যাবে। ”
গম্ভীর স্বরে মাহের বলল,
-” আপনি আমার সঙ্গে আসুন। ”
চলবে…