বেসামাল_প্রেম,১৬,১৭

0
2172

#বেসামাল_প্রেম,১৬,১৭
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১৬
কলেজ যাবার পথে রিকশায় বসে অন্যমনস্ক হৈমী। ভাবছিল, শেখ বাড়িতে তার আয়ুকাল আর মাত্র তিনদিন। মাহের ফেরার পর নিজের বাসায় ফিরতে হবে। এই ফিরে যাওয়া আনন্দের হওয়ার কথা ছিল। যেখানে সে শেখ বাড়িতে আসতে, ক’দিন থাকতে রাজিই ছিল না, সেখানে তিনদিন পর ফেরার কথা ভাবতে খুশিতে গদগদ হওয়ার কথা। অথচ সে খুশি নয়, তার মন বিন্দু মাত্র আনন্দিত হচ্ছে না৷ বরং সুক্ষ্ম এক ব্যথায় হৃদয়স্থল চিনচিন করছে৷ যে ব্যথার উৎসে রয়েছে রুদ্র। একটি মেয়ে একটি ছেলের কাছে অ্যাটেশন পেতে চাচ্ছে, চাতক পাখির মতো কদিন ধরে ঘুরঘুর করছে একটুখানি অ্যাটেশন পেতে অথচ পাচ্ছে না। এ দহন যে বড়োই ভয়াবহ। রিকশা চলছিল তার আপন গতিতে। হৈমীও রুদ্রকে ঘিরে ভাবনার রাজ্য ডুবে ছিল। সে ডুবে থাকার মাঝেই গোলাপি কোমল ওষ্ঠজোড়া নড়িয়ে বিরবির করল,
-” আমি আপনাকে শুধু একটা চিঠি দিয়েছিলাম। চিঠির কথাগুলো যতটা না সিরিয়াস ছিল, তারচেয়ে বেশি দুষ্টুমিই ছিল। কিন্তু এর ফল আমাকে কঠিন ভাবে ভুগিয়েছেন আপনি। যে কাঠিন্যতা বিষবীজ হয়ে আমার হৃদয়ে রোপণ হয়েছিল। সে বীজ অঙ্কুরিত হতে পারল না৷ আপনি হতে দিলেন না। ভেবেছিলাম আপনাকে নিয়ে আজীবন হৃদয়ে বিষবৃক্ষ লালন করব। ঘটল উলটোটা এর জন্য আপনিই দায়ী। এবার এই ছোট্ট হৃদয়ে প্রেমতরঙ্গ বয়ে আনার অপরাধে সারাজীবন অপরাধী করে রাখব আপনাকে। একটুও ক্ষমা করব না একটুও না।”

আপনমনে ভীষণ লজ্জিত হলো হৈমী। ছোট্ট করে নিশ্বাস ছেড়ে উরুর ওপর দুহাত জোড়া করে থমথমে মুখে বসে রইল। গাল দুটো টমেটোর মতো ক্রমশ লাল হতে থাকল তার৷ শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক শিহরণ জাগছে, নিঃশ্বাসে বাড়ছে গভীরতা। অন্তঃকোণে যেন সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ দোলায়িত। সন্তর্পণে এক ঢোক গিলল সে জ্যামে আঁটকে রইল কয়েক মিনিট। জ্যাম ছাড়ার পর পুনরায় রিকশা টান দিতেই আকস্মাৎ রুদ্রকে দেখতে পেয়ে বুকের ভিতর ধড়াস করে ওঠল৷ শহরের এক নাম করা রেষ্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে রুদ্র৷ হৈমীর বুকের ভিতর ধড়াস, ধড়াস ক্রমশ বাড়তেই থাকল। রিকশাওয়ালাকে বলল,
-” মামা মামা থামেন থামেন৷ একটু দাঁড়ান একটু দাঁড়ান। ”

রিকশা থামল। হৈমীও দূর থেকে সুক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে রইল৷ পিটপিট করে তাকিয়ে আপাদমস্তক রুদ্রকে দেখতে লাগল। মিনিট দুয়েক পর একটি রিকশা এসে থামল রুদ্রর সামনে। মুহুর্তের মধ্যেই রিকশা থেকে নেমে এলো এক সুদর্শনীয় রমণী। চঞ্চলা চিত্ত সহসা মিইয়ে গিয়ে চোখেমুখে বিবর্ণতা ফুটে ওঠল হৈমীর৷ কিঞ্চিৎ বিস্মান্বিতও হলো। রুদ্র তো অমন ছেলে নয়। আবার ভাবল কেমন ছেলে নয়? যে ছেলে অল্প পরিচয়ে তার সঙ্গে ওসব করতে পারে সে কি পারে না আরে ডজনখানেক মেয়ের সঙ্গে বেহায়াপনা করতে? তাহলে সূচনা কেন বলেছিল তার ভাই নারীবিদ্বেষী! এই কী তাহলে তার নমুনা। কেন জানি কান্না পেল খুব৷ কিন্তু কেন পেল কান্না? প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারল না। শেষে আপনমনেই বিরবির করল,
-” উনার এত সাহস ডজনখানেক মেয়ের সঙ্গে বদমায়েশি করবে! যদি তাই করবে আমার সঙ্গে লুতুপুতু করল কেন? আমাকে যে অতগুলো চুমু খেল তার কী হবে? প্রয়োজনে আমি মামলা করব তবুও এত মেয়ের সঙ্গে লুতুপুতু করতে দিব না৷ কিন্তু মামলা করলে তো প্রুফ লাগবে, হ্যাঁ প্রুফ আছে ঐ যে সেই ভিডিয়েটা। ”

-” কই যাবেন, রিকশা টানুম? কিছু কন না ক্যা? ”

চমকে ওঠল হৈমী। ওষ্ঠাধর ফাঁক করে লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ল। এরপর তড়িঘড়ি করে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে মাথায় ওড়না চেপে মুখে মাস্ক লাগালো৷ ততোক্ষণে রুদ্র ধীরেধীরে আগত নারীটির সঙ্গে রেষ্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করেছে। হৈমীও ত্বরিত গতিতে রেষ্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকল৷ দেখল রুদ্র একেবারে কর্ণারের টেবিলে মেয়েটার মুখোমুখি হয়ে বসেছে৷ দূর থেকে মেয়েটার মুখ যতটুকু দেখেছে আর পেছন থেকে যতটা দেখছে নিঃসন্দেহে মেয়েটা ভীষণ স্মার্ট এবং সুন্দরী। যার ফলে তীব্র ঈর্ষায় কপালের রগ গুলো দপদপ করে ওঠল হৈমীর৷ কোনক্রমে একপাশে গিয়ে বসে মেনুকার্ড দেখার ভাণ ধরল। আড়াল থেকে তীক্ষ্ণ নজর রাখলো পেছনের রুদ্র এবং আগত নারীটির দিকে। দশমিনিটের মাথায় এক কাপ কফি অর্ডার করল। কফি খাওয়ার মুড নেই তবুও রুদ্র আর তার সম্মুখের মেয়েটিকে কফি খেতে দেখে সে নিজেও অর্ডার করল। আধঘন্টার মতো আলাপচারিতা শেষে মৃদুহাস্য ওঠে দাঁড়াল রুদ্র। হৈমী খেয়াল করল মেয়েটার ঠোঁটেও মৃদু হাসি। হাসির ফাঁকে বার বার রুদ্রর দিকে তাকাচ্ছেও। ঘনঘন সামনে আসা চুলগুলো কানে গোঁজারও চেষ্টা করছে৷ যা দেখেই গা জ্বলে ওঠল হৈমীর৷ বিরবির করে কতক্ষণ বকলও। সুন্দরী মেয়েটা আগে আগে বেরিয়ে পড়ল। রুদ্র বিল মিটিয়ে বেরোতে যেয়েও হঠাৎ ভ্রু কুঁচকে ডানপাশে তাকাল। হৈমীর আড়চোখে রুদ্রকে তার দিকে তাকাতে দেখে খটমটে ভাব শুরু করে দিল৷ এই ওড়না টানছে, এই মাস্ক ঠিকঠাক মুখে আছে কিনা দেখছে, এই ফোন ঘাঁটছে। বিরবির করে আবার দোয়া দরূদও পড়তে শুরু করল৷ রুদ্র হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে ফোন বের করে কিছুক্ষণ পূর্বে মিট করা মেয়েটিকে ফোন করল। ওপাশে রিসিভ হতেই বলল,
-” মিসেস. নিশিতা, আমার ইমারজেন্সি একজনের সঙ্গে মিট করতে হবে। তাই আপনাকে পৌঁছে দেয়ার কথা থাকলেও পারলাম না। ”

-” ইট’স ওকে ব্যাপার না। ”

ফোনে কথা শেষ করে যেই রুদ্র হৈমীর সামনে যেতে উদ্যত হলো অমনি তড়াক করে ওঠে দাঁড়াল হৈমী৷ কোনক্রমে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে রেষ্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। অমনি সত্বর হয়ে হৈমীর হাত টেনে ধরল রুদ্র। রেষ্টুরেন্টে কয়েক জোড়া কাপল ছিল তারা সকলেই তাকাল ওদের দিকে। কারো কারো চোখে বিস্ময়। হৈমী মুখ নিচু করে হাত ছোটানোর চেষ্টা করল। রুদ্র শান্ত গলায় শক্ত হুমকি দিল,
-” নো ছোটাছুটি ডার্লিং। এতক্ষণ যেখানে চোরের মতো বসে ছিলে এখন ঠিক সেখানে গিয়েই বসবে। একদম ভদ্র মেয়ের মতো৷ নয়তো সকলের সামনে একটি মিষ্টি, রোমাঞ্চিত সিনক্রিয়েট হবে। ”

কিঞ্চিৎ ভয়ে দেহ কেঁপে ওঠল। বারকয়েক ঢোক গিলে স্থির হয়ে গেল হৈমী৷ দুর্বোধ্য হেসে রুদ্র ইশারা করল বসতে। কাঁদো কাঁদো হয়ে হৈমী গিয়ে বসল। রুদ্রও শান্তরূপে তার সম্মুখে বসে। হৈমীর থমথমে রক্তিম মুখশ্রীতে নিবিড় চাহনি নিক্ষেপ করল। শীতল কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
-” কী অর্ডার দেব? ”

হৈমী মুখ ফিরিয়ে রইল। রুদ্র উত্তরের অপেক্ষা করল না। নিজের জন্য কফি, হৈমীর জন্য স্যান্ডউইচ অর্ডার করে দিল। হৈমী চাপা স্বরে রাগান্বিত কণ্ঠে বলল,
-” আমার কলেজ আছে। আমি কলেজ যাব। ”

বাঁহাতের কব্জিতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে টেবিলের ওপর দু-হাত রেখে কিছুটা ঝুঁকে বসল রুদ্র। হৈমী জড়োসড়ো হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। রুদ্র বলল,
-” ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আমার পিছু নিচ্ছ। আমি বুঝি এতটাই জরুরী? ”

-” একদম বাজে কথা বলবেন না৷ আপনার পিছু নিইনি আমি। শুনুন আমি জাস্ট আপনার আসল রূপটা দেখতে এসেছিলাম। আর কিছুই নয়। আপনি যে কত ধরনের খারাপ লোক হারে হারে টের পেয়েছি। ”

-” এত তাড়াতাড়ি কীভাবে টের পেলে? ”

তীব্র রোষাগ্নিতে তাকিয়ে হৈমী বলল,
-” আপনার গার্লফ্রেন্ড জানে তো আপনি আরেকজনের কী সর্বনাশ করেছেন? ”

ভ্রু কুঁচকে রুদ্র বলল,
-” মানে? ”

-” ওওও এখন মানে বুঝছেন না। দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতা হয়ে গেছেন। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। জোর করে চুমু খেলেন আমাকে আর রেষ্টুরেন্টে এসে লুতুপুতু করছেন ঐ মেয়ের সঙ্গে! ”

চোখ বড়ো বড়ো করে চাপা ধমক দিল রুদ্র। বলল,
-” শ্যাট আপ! ক্লাস বাদ দিয়ে এখানে কেন? তোমার আদর্শ ভাই জানে এসব? ”

-” উচিৎ কথা বলছি বলে ধমকাচ্ছেন? ঐ মেয়েটা কে? রেষ্টুরেন্টে মেয়ে এনে এসব করে বেড়ান বাড়ির লোক জানে? ”

রুদ্র সোজা হয়ে বসল। মুখ গম্ভীর। হৈমী তার দিকে তাকিয়ে ছিল। রুদ্র সে তাকানোতে গম্ভীর চাহনি নিক্ষেপ করল৷ হৈমী এক ঢোক গিলে বলল,
-” আমি কলেজ যাব৷ ”

রাশভারী কণ্ঠে রুদ্র বলল,
-” ক্লাস শুরু হয়েছে আধঘন্টা আগে। ”

-” আমি বাড়ি যাব। ”

-” কোন বাড়ি? ”

-” ভাবি…”

-” এসো। ”

হৈমী ওঠে দাঁড়াল। ওঠল রুদ্র নিজেও। বিল মিটিয়ে দিয়ে বের হলো সে। গাড়ির কাছে গিয়ে হৈমীকে ইশারা করল আসতে৷ হৈমী চটপটে পায়ে এগিয়ে এসে বলল,
-” শুনুন আপনাকে আমি একটা কথা বলতে চাই। যদি শুনেন আপনারই মঙ্গল। ”

রুদ্র গাড়িতে ওঠে সামনের ডোর খুলে দিল। বলল,
-” ওঠো। ”

সিটে বসার পর ডোর লক করতে পারল না হৈমী৷ রুদ্র ঝুঁকে এসে লক করতেই হৈমী দম বন্ধ করে কাচুমাচু হয়ে বসে রইল। রুদ্র সরে যাওয়ার পর একেবারে নিঃশ্বাস ছাড়ল। গাড়ি স্টার্ট হলো শেখ বাড়ির উদ্দেশ্যে৷ হৈমী আড়চোখে গম্ভীর চিত্তে বসে থাকা রুদ্রর পানে তাকাল। স্টিয়ারিংয়ে থাকা বলিষ্ঠ হাতদুটো একবার দেখল তো আরেকবার দাম্ভিক এবং গম্ভীর মুখটায় দৃষ্টিপাত করল। এরপর বারকয়েক নিঃশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করল,
-” দেখুন আপনি কিন্তু এসব একদম ঠিক করছেন না। আমি না হয় ঘরের মেয়ে, আমাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। ঘরের মেয়ের দিকে নজর যেতেই পারে তাই বলে পরের মেয়ের দিকেও নজর দেবেন? আপনি আবার ভাববেন না আমি আপনাকে পছন্দ করি। আপনার মতো মানুষকে পছন্দ করার প্রশ্নই আসে না। চুপিচুপি আপনার পিছু এসেছি বলে ভাববেন না আমি আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড। এসব একেবারেই নয়৷ কিন্তু আপনি আমার সাথে যেসব করেছেন ওসবও ভুলার মতো নয়৷ ঐসব ভেবেই আমি চিন্তিত। আমি শান্তশিষ্ট, ভদ্র একটা মেয়ে। আজ পর্যন্ত একটা প্রেমও করিনি৷ একটা ছেলে আমাকে ছুঁয়েও দেখেনি৷ সেখানে আপনি আমার সঙ্গে যা করেছেন তা কি ভুলার মতো? একবার ভাবুন তো কোন ছেলে এসব জানলে আমাকে বিয়ে করবে? আমার বিয়ে হবে? ”

আকস্মাৎ গাড়ির ব্রেক কষলো রুদ্র। হৈমী চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল তার দিকে। রুদ্র কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” সারমর্ম বলো? কথার সারমর্ম জানতে চাই। ”

বারকয়েক ঢোক গিলে চটপটে গলায় বলল,
-” আপনি যেসব করেছেন এরপর আপনাকে আমার ক্ষমা করা উচিৎ না৷ শাস্তি দেয়া উচিৎ। ”

-” শাস্তি? দাও। ”

হৈমী শান্ত হয়ে এলো। রুদ্রর ভাবমূর্তি কিছু না বুঝে বলল,
-” আপনি কি এখনো আমাকে পছন্দ করেন? ”

মুহূর্তেই পরিবেশ নরম হয়ে ওঠল। একটি সহজসরল বাক্যই তৈরি করল সেই নম্রতা। রুদ্রর কান দুটো ঝিম ঝিমিয়ে রইল। হৈমীর দিকে তাকিয়ে রইল নরম চোখে নির্নিমেষে। হৈমী আমতাআমতা করে বলল,
-” ওভাবে তাকাচ্ছেন কেন? ভাবির কাছে সব শুনেছি আমি সব। আপনার হঠাৎ পরিবর্তনের কারণটাও জানি। ”

-” না পছন্দ করি না। ”

অপমানে থমথমে হয়ে বলল,
-” তাহলে কাকে পছন্দ করেন ঐ মেয়েকে? ”

বাঁকা হাসলো রুদ্র। হৈমী ক্রোধান্বিত হয়ে বলল,
-” আমি ঐ মেয়েকে সব বলে দিব। ”

-” কী বলে দেবে? ”

-” আপনি যা করেছেন। এসব জানলে নিশ্চয়ই উনি আপনার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না। ”

রুদ্র মাথা নাড়িয়ে বোঝাল না। হৈমী উল্লসিত চোখে তাকাল। রুদ্র বাঁকা হেসে সহসা হৈমীর দিকে ঝুঁকে এলো। একথোকা উত্তপ্ত নিশ্বাস হৈমীর মুখশ্রীতে ছেড়ে বলল,
-” সেবার যা ছিল সবটা ঝোঁকের বশে করে ফেলা ভুলমাত্র। আজ যা হবে একদম ঠান্ডা মাথায় সুস্থ মনে। ”

বলতে বলতেই নিমেষে হৈমীর কপোলদ্বয়ে বলিষ্ঠ হাতদ্বারা আবদ্ধ করে নিল। কেঁপে ওঠল হৈমীর কোমল ঠোঁটজোড়া। সে কাঁপা দৃশ্য দীর্ঘসময় নিয়ে দেখার ধৈর্য্য হলো না রুদ্রর৷ নিজের পুরু ওষ্ঠাধর ফাঁক করে সন্তর্পণে নরম অধর আবৃত করে নিল। এঁটে দিল হৃদয়স্পর্শী উত্তপ্ত গাঢ় চুম্বন। হৈমীর ছোট্ট নরম হৃদয়ে লিখিতভাবে নামকরণ করে দিল শুধুই রুদ্র রুদ্র রুদ্র।

চলব…

#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১৭
উষ্ণত্ব ওষ্ঠাধর স্পর্শে কাতর হৈমী। রুদ্রর ওষ্ঠ চুম্বন ক্রমান্বয়ে গাঢ়ত্বে পরিণত হতেই তার হাতজোড়া বেসামাল হয়ে খামচে ধরল বলিষ্ঠ পৃষ্ঠদেশ। কয়েক পল পরেই সহসা সরে গেল রুদ্র। হৈমীর হৃৎস্পন্দনের প্রবল বেগে মাথা ঝিমিয়ে ওঠল। এক পলক তাকিয়ে দেখল, চঞ্চলা হৈমীর ব্যগ্র দৃশ্য। গোলগাল ফর্সা মুখটা টমেটোর মতো রক্তিম হয়ে আছে৷ বদ্ধ চোখ বেয়ে নোনা পানির বর্ষণে সিক্ত করে তুলছে গালদুটো। গাল চুইয়ে অশ্রু যখন গলদেশ ছুঁতে লাগল সন্তপর্ণে চোখ বুজে ফেলল রুদ্র। কয়েক পল ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে আবারও তাকাল। শান্ত কণ্ঠে বলল,
-” এই মুহুর্তটুকু পুরো পৃথিবীকে জানাতে পারো। শুধু ঐ একজনকেই নয়। ”

হৈমী একই রূপে বসে৷ রুদ্র আশপাশে তাকিয়ে পুনরায় ঝুঁকে গেল তার দিকে। নরম সুরে বলল,
-” সেবার কেঁদেছ ফাইন, কান্নার মতোই কাজ ছিল। এবার কান্নার রহস্য কী? ”

নিস্তব্ধ হৈমী না জবাব দিল আর না চোখ মেলে তাকাল৷ শুধু তার নিঃশ্বাসের এক অদ্ভুত শব্দে মাথা ঝমঝম করে ওঠল। এক ঢোক গিলে সরে এলো রুদ্র। অপেক্ষায় থাকল হৈমীর চোখ খোলার, স্বাভাবিক হওয়ার। দীর্ঘসময় পর ধীরেধীরে চোখ খুলল হৈমী। মুখ লুকোনোর চেষ্টা করে নত মাথা আরো নত করে ফেলল। সহসা কম্পমান সুরে রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন? ”

-” কিস করেছি বলে মনে হচ্ছে ভালোবাসি? ”

উত্তর দিল না হৈমী। সিটে গা এলিয়ে দিল রুদ্র। সন্তর্পণে চোখদুটো বুজে ঊর্ধ্বশ্বাস ছাড়ল৷ অনুরক্ত ভরাট কন্ঠে বলল,
-” তোমার বয়স অল্প। জীবনকে তুমি যেভাবে দেখো আমি সেভাবে দেখি না৷ একটা চুমুর ওপর কখনো ভালোবাসা নির্ভর করে না। দু’জন ছেলে মেয়ে আবেগের তাড়নায় কাছাকাছি আসবে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াবে, শরীরে শরীর মেলাবে। এর মানে এই না তারা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে। আবার দু’জনের মধ্যে মাইল থেকে মাইলের দূরত্ব থাকলেও ভালোবাসা হয়ে যায়। ঠোঁটে ঠোঁট না ছুঁইয়ে, শরীরে শরীর না মিলিয়ে। ”

-” তাহলে কেন আমাকে বার বার কলঙ্কিত করছেন!”

হৈমীর এই একটি বাক্যই যথেষ্ট ছিল রুদ্রর সমস্ত সত্তাকে নাড়িয়ে দেয়ার। হৈমী নত মুখে বসে। একটি বার যদি সে ডানপাশে ফিরে দেখত। তাহলে হয়তো ভয়ে তার হৃদয় কেঁপে ওঠত। কারণ রুদ্রর রক্তিম চোখ, শক্ত চোয়াল, এবং অদৃশ্য এক অস্থিরতা স্বচক্ষে সহ্য করতে পারত না সে। সহসা গাড়ি স্টার্ট হতেই কিঞ্চিৎ কেঁপে ওঠল হৈমী। রুদ্র রোবটের ন্যায় বসে স্টিয়ারিং ধরে আছে। গাড়ি যখন ব্রেক কষলো হৈমী তাকিয়ে দেখল তারা শেখ বাড়ির সামনে। তাই দুরুদুরু বুকে ত্বরিতগতিতে ডোর খুলে নামতে উদ্যত হলো। অমনি তড়াক করে রুদ্র ওর হাত টেনে নামতে বাঁধা দিল। চমকে গিয়ে ফিরে তাকাতেই রুদ্র অগ্নিমূর্তি দেখে ঢোক গিলল বারকয়েক। রুদ্র রাশভারী কণ্ঠে ভয়ানক কয়েকটি বাক্য উচ্চারণ করল,
-” ইউ মাস্ট বি মাই ওয়াইফ মাস্ট বি! ব্যক্তি হিসেবে আমি পুরোপুরি মার্জিত না হলেও আমার চরিত্রে তুমি ছাড়া অন্য কোনো নারী ত্রুটি ধরতে পারবে না। জাস্ট কিপ দিজ ইন মাইন্ড! ”

আলগোছে ধরে রাখা নরম হাতটি ছেড়ে দিল রুদ্র। ঘনঘন চোখের পলক ফেলে ঢোক গিলল হৈমী৷ বাঁকা হেসে রুদ্র পুনরায় বলল,
-” আর রইল তোমার কলঙ্কিত হওয়ার কথা? যদি এটাকে কলঙ্ক ধরে নাও তাহলে তাই। শান্তি একটাই,
পুরো পৃথিবীতে একজন দ্বারাই তুমি কলঙ্কিত হচ্ছো সে আমি৷ ইউর ফিউচার হাজব্যান্ড! ”
_________
তিনদিন পর মাহের ফিরে এলো। প্রথমে নিজ বাড়ি এবং পরে শশুর বাড়ি গেল সে। গিয়ে জানতে পারল, সূচনার দাদিন সহ চাচাত ভাইরা আজ আসবে। তাই সূচনা আজই তার সঙ্গে ফিরতে নারাজ। ওদিকে হামিদা রয়েছেন বোনের মেয়ের কাছে। টিশার শেষ সময় চলছে সামনে মাসেই ডেলিভারির ডেট। তাই এই সময়টুকু সে টিশার কাছেই থাকবেন। বাড়ি ফেরা নিয়ে তাড়া রইল না মাহেরের। তবে শশুর বাড়িতেই বউকে সারপ্রাইজ দিতে হবে এ ঢের বুঝল। অনেকদিন পর ভাইকে কাছে পেয়ে হৈমী রাজ্যের গল্প জুড়ে দিল।

গত দু’দিন রুদ্র ভীষণ ব্যস্ত ছিল৷ গতকাল ভোরে ঢাকা গিয়ে ফিরেছে রাত দু’টোর দিকে। নতুন ব্যবসা শুরু করার আগে কত-শত জটিলতা যে তাকে সামলাতে হচ্ছে। এতদিন কাজ থেকে দূরে ছিল বলে টের পায়নি বাবা, চাচা, চাচাত ভাই রাদিফের পরিশ্রমের গভীরতা। এবার হারে হারে টের পাচ্ছে। মাহের এসেছে শুনেই উপর থেকে নিচে এসেছিল সে। সন্ধ্যা হয়ে এলো। মাহের এসেছে অবধি সূচনার সঙ্গে আলাদা হবার সুযোগ পায়নি। এবার যাও পেত তাও বোধহয় হৈমীর জন্য হলো না। ভেবেই মেজাজ বিগড়ে গেল রুদ্রর। মেয়েটা এত বেশি কথা বলে! শেষে কাজের মেয়েকে দিয়ে কৌশলে হৈমীকে ডেকে রান্নাঘরে নিল। কথার ঝুড়ি ফেলে হৈমীও চলে গেল রান্নাঘরে। হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে রুদ্র মাহেরকে বলল,
-” লম্বা জার্নি করেছেন রুমে গিয়ে রেস্ট করুন। ”

বলেই সূচনার দিকে তাকাল। বলল,
-” দাদিনরা বোধহয় এসে পড়ল। আমি বাইরে যাচ্ছি, ওরা এলে একটা ফোন দিস। ”

সূচনা মাথা কাত করে মাহেরকে নিয়ে উপরে গেল। রুদ্র আশপাশ তাকিয়ে ওঠে দাঁড়াতেই দেখল, হৈমী রান্না ঘর থেকে বের হচ্ছে। রুদ্র তার দিকে দৃঢ় নিক্ষেপ করতেই কোমরের দু’পাশে ঝুলে থাকা ওড়নার কোণা দু’হাতের মুঠোয় চেপে ধরল। ধীরপায়ে আগাতে আগাতে জোরপূর্বক হেসে জিজ্ঞেস করল,
-” ভাইয়া ভাবি কোথায়? উপরে গেছে? ওওও আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাই, আমি যাই। ভাইয়াদের সমুদ্র পাড়ে ছবি তো দেখাই হয়নি। ”

হাঁটার গতি বাড়িয়ে রুদ্রকে পাশ কাটাতে যেতেই রুদ্র ওর হাত টেনে ধরল৷ শক্ত গলায় বলল,
-” পরে দেখবে। ”

ভ্রু কুঁচকে হৈমী বলল,
-” উহ, এত শক্ত করে ধরেছেন কেন? আর পরেই বা দেখব কেন? আমি এক্ষুনি দেখব। ছাড়ুন তো সব সময় খবরদারি করবেন না। বিয়ে করবেন বলেছেন আগে বিয়ে করুন তারপর খবরদারি করবেন এর আগে একদম খবরদারি নয়। আপনাকে আমি অল্পখানি পছন্দ করেছি বলে ধরে নেবেন না মাথায় চড়ে নাচতেও দেব। আর ঐ দি…”

বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে পেছন থেকে হৈমীর মুখ চেপে ধরল রুদ্র। হৈমী চাপা শব্দ করতেই অন্য হাতে পেছন থেকে পেট জড়িয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” সব সময় এত বেশি বকবক সহ্য হয় না বুঝলে? এবার ঠিক ততক্ষণ ঘর বন্দি থাকবে যতক্ষণ না আমি ফিরব। ”

নিজের বিশাল ঘরটায় হৈমীকে রেখে বাইরে থেকে রুম লক করে চলে গেল রুদ্র। যাওয়ার আগে অবশ্য শাসিয়ে গেল,
-” নো চিৎকার, নো চ্যাঁচামেচি সুইটহার্ট। যদি একটু আওয়াজও বাইরে যায় তাহলে আজ বিয়ে বিহীন সারারাত আমার সঙ্গে কাটাতে হবে। যদি বলো কীভাবে তার উত্তর দিতে না পারলেও কাজে দেখিয়ে দিতে পারব৷ আগেই বলেছি, আমি ভীষণ উদ্ধত! ”

রুদ্র চলে যাওয়ার পর হৈমী মুখ বন্ধ করে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করল কিছুক্ষণ৷ এরপর নিজেকে শান্ত করে বলল,
-” এভাবে আঁটকে দেয়ার মানে কী? বললেই তো হতো ওদের একটু সময় দেয়া উচিৎ। আমি কি বেহায়ার মতো তবুও ওদের কাছে যেতাম নাকি আশ্চর্য! ”

কতক্ষণ সময় এভাবে বন্দি থাকতে হবে জানা নেই। তাই কী করবে? কী করে সময় কাটাবে বুঝতে পারল না। পুরো ঘর জুড়ে এলোমেলো দৃষ্টি বুলিয়ে হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি খেলল। পুরো ঘরে যত সব আসবাবপত্র আছে সব ঘেঁটে দেখবে। রুদ্র মানুষটাকে তো বুঝতেই পারে না৷ আজ না হয় তার ঘর এবং ঘরের জিনিসপত্র বোঝার চেষ্টা করবে… নিমিষেই চোখ দু’টো চকচক করে ওঠল। মন হলো উচ্ছ্বসিত। সর্বপ্রথম দুম করে শুয়ে পড়ল রুদ্র বিশাল বিছানাটায়। হাত, পা চারদিকে ছড়িয়ে শুয়ে বড়ো বড়ো করে শ্বাস নিল। একবার চোখ বন্ধ করল তো আরেকবার চোখ মেলে চারদিকে দৃষ্টি ঘোরাল। চট করে ওঠে বসে আবার চট করে বালিশে মুখ গুঁজে নাক টেনে ঘ্রাণ নিল। এখানে কি রুদ্র রুদ্র ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে? খিলখিল করে হেসে ওঠল সে। মুহুর্তেই মুখে হাত চেপে হাসি থামাল। ধীরস্থির হয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। এক এক করে সমস্ত কিছু ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগল। বেডসাইট টেবিল, কাউচ, ছোট্ট বুকশেলফ, বড়ো কাভার্ড এবং দেয়ালগুলোতেও ছুঁয়ে দিল৷ এক পর্যায় দোনোমোনো করে বুকশেলফ থেকে বইগুলোর নাম পড়তে শুরু করল৷ উপরের তাকে বেহিসেবী ডায়ারি। হৈমী এক এক করে সে ডায়েরি গুলো গুনতে শুরু করল৷ ঊনিশে গিয়ে থামল সে। চোখ বড়ো বড়ো করে ওষ্ঠজোড়া ফাঁক করল। বিরবির করে বলল,
-” এত ডায়ারি! এগুলোতে কি লেখা আছে? ”

প্রচণ্ড কৌতূহলদ্দীপক হয়ে একটা ডায়ারি নিয়ে মলাট উলটালো। একি! একটি বর্ণও লেখা নেই। একদম নতুন চকচকে, ঝকঝকে ডায়ারি। কৌতূহল দমিয়ে ডায়ারিটা রেখে দিয়ে আরেকটা নিল। এবারেরও একই দৃশ্য। একে একে সবকটা ডায়ারি দেখে শেষ একটা না দেখেই বিরক্ত হয়ে পিছন ঘুরল। আবার চট করে শেল্ফের দিকে ঘুরে ভাবল,
-” যদি এই শেষটায় কিছু পাই? ”
_____
শাওয়ার নিয়ে বের হতেই সূচনাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখল মাহের৷ মৃদু হেসে এগিয়ে এলো সে। বলল,
-” এতদিন পর দেখা অথচ মুখে হাসি নেই। আপনি কি খুশি হননি? ”

আঁতকে ওঠল সূচনা৷ ঝটপট ওঠে দাঁড়াল। আমতা আমতা করে বলল,
-” ছিঃ ছিঃ খুশি হবো না কেন? ”

-” খুশি হয়েছেন? ”

মাথা ঝুঁকিয়ে প্রশ্নটা করল মাহের৷ সদ্য গোসল করে আসাতে ছোটো ছোটো চুল কপালে লেপ্টে আছে। সে চুল চুইয়ে কয়েক ফোঁটা পানি টোপ করে প্রথমে লম্বাটে নাক এবং পরবর্তীতে চিকন পাতলা ঠোঁটদ্বয়ে স্পর্শ করল। সূচনা সে দৃশ্য দেখে লজ্জা পেয়ে চোখ সরাতে গিয়ে চোখ দিয়ে ফেলল মাহেরের পুরুষালী উন্মুক্ত বক্ষঃস্থলে। এবার পুরোপুরি ফেঁসে গিয়ে দ্রুতপায়ে মাহেরকে পাশ কাটাল। কাভার্ড থেকে টিশার্ট বের করতে করতে বলল,
-” খুশি হবো না কেন অবশ্যই খুশি হয়েছি। ”

বাক্যটির সমাপ্তি দিয়ে যেই পিছন ঘুরেছে তৎক্ষণে মাহেরের লম্বাটে নাকের সঙ্গে তার কপালে ধাক্কা লাগল। কিঞ্চিৎ পিছিয়ে গিয়ে কাভার্ডের সঙ্গে পিঠ লেগে গেল সূচনার। গাঢ় চোখে তাকিয়ে আলতো হাসল মাহের। সূচনার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে ওঠল৷ টিশার্ট এগিয়ে দিয়ে মুখ ছোটো করে বলল,
-” এটা পড়ুন। ”

হাত বাড়িয়ে টিশার্ট নিল মাহের। আশ্চর্য সুন্দর হাসি দিয়ে বলল,
-” কতটুক খুশি আপনি? ”

আমতা আমতা করে সূচনা বলল,
-” অনেক অনেক। ”

উত্তর শুনে দম ছাড়ল মাহের। সুঠাম শরীরটা টান টান করে দাঁড় করিয়ে নিবিড় চোখে তাকাল। নরম সুরে বলল,
-” এ কদিন ভীষণ মিস করেছি আপনাকে। মনে হচ্ছে কতকাল পর প্রিয়তমার দর্শন পেলাম। অদ্ভুত শান্তি লাগছে। আপনারও কি শান্তি লাগছে? ”

সূচনা মাথা নাড়াল। ঠোঁটের কোণায় দুষ্টুমি ভরে হাসল মাহের। বলল,
-” একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরবেন? বড্ড অস্থির লাগছে। ”

শ্বাসরোধ হয়ে এলো সূচনার। অধর কামড়ে ধরে বিচলিত ভঙ্গিতে এক পা আগালো। কিন্তু জড়িয়ে ধরতে পারল না। তার পূর্বেই তার হাত, পা কাঁপতে শুরু করল। গাল দু’টো লাল হয়ে নাকের ডগা ফুলে ওঠল। তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মাহের বলল,
-” আমি সাহায্য করব? ”

চোখ বন্ধ করে সমানে মাথা নাড়াল সূচনা৷ হেসে দিল মাহের একটু শব্দ করে। সে হাসি নিমিষেই বন্ধ করে দু’হাতে সূচনার ঠান্ডা হয়ে আসা নিশ্চল দেহটা টেনে বুকের ভিতর লুকিয়ে ফেলল। প্রথমবারের মতো নিজের বিবাহিত স্ত্রীকে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে নিল বুকের মধ্যখানে। আচমকাই সূচনা দু’হাতে তার পৃষ্ঠদেশ আঁকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে ওঠল।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here