এক_খণ্ড_কালো_মেঘ #পর্ব_২০,২১

0
873

#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_২০,২১
#নিশাত_জাহান_নিশি
২০

সোফার এক কোণায় ঠেসেঠুসে বসে আছে প্রিয়া। মুখশ্রীতে তার প্রখর আতঙ্কের ছাপ। কেমন যেন আড়চোখে সে তার দৃষ্টির সম্মুখে হাতে মোটা বেল্ট নিয়ে বসে থাকা রাফায়াতের দিকে বিভ্রান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে! ম’রে যাচ্ছে যাচ্ছে অবস্থা তার! রাফায়াতও নাছোড়বান্দা। হাতে থাকা বেল্টটি সে বারংবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্রিয়াকে অতিশয় ভয়ঙ্কর কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে!

রাফায়াতের রুদ্রাংশের মত হাবভাব দেখে প্রিয়ার ভীতসন্ত্রস্ততা বেগতিক বাড়তে লাগল। ফুসফুসে দম সঞ্চার করতেও দারুন বেগ পেতে হচ্ছে তার। আগ বাড়িয়ে বিপদ ডেকে আনার চেয়ে বরং লেজ গুটিয়ে এখান থেকে পালানো শ্রেয়! যেই ভাবা সেই কাজ৷ পালানোর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রিয়া যেইনা ফট করে তার জায়গা থেকে ওঠে দাঁড়ালো অমনি রাফায়াত তার হাতে থাকা বেল্টটি সোফার এক কোণায় বিকট শব্দে বারি মারল! রাফায়াতের ইশারা বুঝার সাথে সাথেই প্রিয়া ভয়ে বিপুল বেগে কেঁপে উঠল। ধুম করে আবারও সে তার আগের জায়গায় বসে পড়ল! সময় নষ্ট না করে রাফায়াত প্রিয়ার দিকে শকুনের দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“চঞ্চল তোর বড়ো না ছোটো বল?”

“ববববড়ো।”

“বড়োদের সাথে কীভাবে আচরণ করতে হয় শিখায়নি মা?”

“শিশিশিখিয়েছে।”

“না শিখায় নি। আমার মা তোকে সুশিক্ষা দিতে পারেনি। যদি সত্যিই আমার মা তোকে সুশিক্ষা দিতে পারত তবে তুই আজ এতটা বিগড়ে যেতিস না। নিজের মানুষ্যত্ব, বিবেক-বুদ্ধি, শরীর এভাবে নিলামে বেচে খেতিস না!”

আঁতকে উঠল প্রিয়া! শুকনো ঢোঁক গিলে রাফায়াতের দিকে বিচলিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। তবে কী সে যা শুনেছিল তাই সত্যিই প্রমানিত হলো? রাফায়াত সত্যিই জানতে পেরে গেছে তার কুকীর্তির কথা? তবুও প্রিয়া রাফায়াতকে বাজিয়ে দেখার চেষ্টা করল। কম্পিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“শশশরীর বেবেবেচে খেয়েছি মানে?”

“কেন রে? বুঝছিস তুই না আমার কথা? আমি কী তোর সাথে ফ্রান্সের ভাষায় কথা বলছি? তুই কী ভেবেছিস প্রিয়া? ভেতরে ভেতরে তোরা রাফায়াতকে ঠকাবি, তার পরিবারকে ঠকাবি রাফায়াত তার টেরও পাবে না? এতটাই বোকা রাফায়াত হ্যাঁ? এতটাই বোকা?”

সাত পাঁচ না ভেবে প্রিয়া লুটিয়ে পড়ল রাফায়াতের পায়ে! সস্তা সহানুভূতি আদায় করার চেষ্টা করল। রাফায়াতের পা দুখানা সে শেকড়ের মত আঁকড়ে ধরল। ফুঁপিয়ে কেঁদে বলল,,

“আমাকে মাফ করে দাও রাফায়াত প্লিজ। তোমার পা ধরে ক্ষমা চাইছি আমি। ভুল হয়ে গেছে আমার। বিরাট বড়ো ভুল হয়ে গেছে। ভুলটা শুধরে নেওয়ার সুযোগ দাও আমায় প্লিজ। একটা সুযোগ দাও।”

প্রিয়ার হাত থেকে পা দুটো ঝাড়া দিয়ে রাফায়াত ছাড়িয়ে নিলো। তার থেকে এক গজ দূরত্বে সরে গিয়ে দাঁড়ালো। হেয় দৃষ্টিতে তাকালো প্রিয়ার দিকে। হাতে থাকা বেল্টটি সে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,,

“তোর কোনো ক্ষমা নেই প্রিয়া। তুই শুধু আমাকেই নয়। বর আমার মায়ের মত একজন কোমল মনের মানুষকে ঠকিয়েছিস। আমার বাবার মত একজন সরল মনের মানুষকে ঠকিয়েছিস। আমার ভাই-ভাবির মত দুজন ভালো মনের মানুষকে ঠকিয়েছিস। তাদের ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি নিয়ে খেলেছিস। এত সহজে তোর ক্ষমা নেই প্রিয়া। তোর মুখোশ আমি এক্ষণি সবার সামনে খুলব। বেশী দিন তোর এই ভালো মানুষির অভিনয়টা প্লে করতে হবেনা।”

হনহনিয়ে রাফায়াত রুমের দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই প্রিয়া ঝট করে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। কান্না সিক্ত গলায় সে পেছন থেকে রাফায়াতকে ডাকল। তেজী গলায় বলল,,

“এক সেকেন্ড রাফায়াত। তুমি যে কথাগুলো বলছ তার কোনো প্রমাণ আছে তোমার কাছে? কীসের ভিত্তিতে তুমি এই কথাগুলো বলছ বলো?”

পিছু ঘুরে তাকালো রাফায়াত। শার্টের কলার ঝেড়ে শক্ত গলায় বলল,,

“কেন? তোর প্রেগনেন্সি রিপোর্ট! পুরো রিপোর্টটাই কিন্তু আমার কাছে আছে প্রিয়া।”

“দেখাও তাহলে রিপোর্টটা। সবাই তো প্রমাণ চাইবে তাইনা?”

প্রিয়ার চোখদুটো যেন অন্যকিছু ইশারা করল! ভয় ভীতি এবং আতঙ্কের পাশাপাশি কেমন যেন উচ্ছ্বলতার ছাপও দেখা গেল! রাফায়াতের মনে কেমন যেন খচখচানির উদয় হলো। প্রিয়া কিছু একটা অঘটন ঘটিয়েছে বুঝতে বেশি সময় ব্যয় করতে হলোনা তার। হাতে থাকা বেল্টটি ফেলে সে দ্রুত কদমে হেঁটে নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরল৷ হন্তদন্ত হয়ে সে রুমে প্রবেশ করে আলমারিটা খুলতেই দেখতে পেল তার পুরো আলমারিটা লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে! রিপোর্টটিও ড্রয়ার থেকে উধাও! মাথায় হাত চলে গেল রাফায়াতের। প্রিয়া কীভাবে জানল তার প্রেগনেন্সির একটা রিপোর্ট রাফায়াতের কাছেও আছে? তবে কী অনিক কোনোভাবে জানতে পেরে গেছে সেদিন চঞ্চল ডক্টরের চেম্বারে গিয়ে রিপোর্টটা এনেছিল? আর অনিকের কথা মতই প্রিয়া আজ রিপোর্টটা তার আলমারি থেকে সরিয়ে ফেলেছে?

রাফায়াত দিশাহীন হয়ে চঞ্চলকে তার রুমে ডেকে আনল। হম্বিতম্বি হয়ে চঞ্চল রাফায়াতের রুমে প্রবেশ করতেই দেখল রাফায়াত পুরো রুম লণ্ডভণ্ড করে ফ্লোরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। বৈরাগ্য ভাব তার। দুঃশ্চিন্তায় নিষ্পেষিত। চঞ্চল উদগ্রীব হয়ে রাফায়াতের পাশে বসল। রাফায়াতের কাঁধে হাত রেখে উত্তেজিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কী রে? কী হয়েছে তোর? রুমের এই অবস্থা কেন? আর এভাবেই বা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছিস কেন?”

মাথা থেকে হাত সরালো রাফায়াত। এক ঝটকায় চঞ্চলের হাতটি তার কাঁধে থেকে সরিয়ে নিলো! শরীরে অসহ্য হিট নিয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। গরম দৃষ্টিতে চঞ্চলের দিকে তাকালো। উঁচু গলায় শুধালো,,

“প্রিয়া যখন আমার রুমে ঢুকেছিল তখন তুই কোথায় ছিলি হ্যাঁ?”

বেকুব বনে গেল চঞ্চল। চোখদুটো তার রসগোল্লার মত হয়ে গেল। হতবাক গলায় পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল,,

“সিরিয়াসলি? প্রিয়া তোর রুমে ঢুকেছিল?”

“হ্যাঁ ঢুকেছিল। এখন প্রেগনেন্সি রিপোর্টটাও আলমারি থেকে উধাও!”

“অদ্ভুত তো। প্রিয়া কী করে জানল প্রেগনেন্সি রিপোর্টটা তোর কাছে আছে?”

“আই গেস অনিক হয়ত কোনোভাবে খবর পেয়ে গেছে। ঢাকা থেকে আমার পেছনে আঙুল দেওয়া হচ্ছে না? আজ শা’লা’রে খাইছি আমি! ওয়েট মা’দা’র’বোর্ডকে এক্ষণি কল করছি!”

আক্রোশিত হয়ে রাফায়াত তার নতুন সিমটা দিয়ে অনিকের নাম্বারে ডায়াল করার পূর্বেই চঞ্চল এসে রাফায়াতের হাত থেকে ফোনটি কেড়ে নিলো। কপাল ঘঁষে চিন্তিত ভাবে কোমড়ে হাত গুজল। উঁচু গলায় বলল,,

“তুই কী পাগল হয়ে গেছিস রাফায়াত? অনিক তোকে ধরার জন্য জাস্ট একটা জাল পেতেছে। রাগের বশে তুই সেই জালে পা দিতে চাইছিলি? তুই এখন এই নাম্বার থেকে কল করলেই তোকে ট্রেস করতে অনিকের বেশি সময় লাগবেনা। তাছাড়া অনিক নিশ্চয়-ই এতক্ষণে জানতে পেরে গেছে অয়ন্তী তোর সাথেই আছে। যখনি তুই অয়ন্তীর সাথে দেখা করতে যাবি তখনি অয়ন্তী এবং তোকে ট্রেস করতে অনিকের বেশী সময় লাগবেনা কিন্তু।”

চঞ্চলের কথাগুলো ঠাণ্ডা মাথায় ভাবল রাফায়াত। মাথায় হাত দিয়ে সে বিছানার উপর ধপ করে বসে পড়ল৷ দুঃশ্চিন্তায় ভুগে নিরুপায় গলায় বলল,,

“কী করব এখন আমি? মা তো ব্যস আট ঘাট বেঁধে নেমেছে প্রিয়ার সাথে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। প্রমাণ ছাড়া আমি প্রিয়াকে ধরব কীভাবে? তাছাড়া ঐ ডক্টরটিও এখন নিশ্চয়ই মুখ খুলতে চাইবেন না। জানের ভয় তো সবারই আছে।”

শার্টের কলারটা টেনে ছিঁড়ে ফেলার মত জোঁ হলো রাফায়াতের। রাগ এবং জেদ যেন তার আকাশ ছুঁইছিল! ইতোমধ্যেই হঠাৎ মিসেস শায়লা মির্জা রাগে গজগজ করে রাফায়াতের রুমে প্রবেশ করলেন। পাশেই রয়েছে প্রিয়া! ন্যাকা কান্না করে অবস্থা তার নাজেহাল। রাফায়াতের রুমে প্রবেশ করে-ই মিসেস শায়লা মির্জা জিভ কাটতে বাধ্য হলেন। কোমড়ে হাত গুজে তিনি রাফায়াত এবং চঞ্চলের দিকে আগ্রাসী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। তাদের দুজনকে শাসিয়ে বললেন,,

“এই? তোরা আবার ঝগড়াঝাটি শুরু করেছিস নাকি? ঘরে দোরের এই অবস্থা করেছিস কেন তোরা?”

রাফায়াত এবং চঞ্চল জায়গা থেকে ওঠে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। মিসেস শায়লা মির্জার পাশে প্রিয়াকে দেখেই যেন রাফায়াতের মাথাটা ৪২০ ভোল্টের হিটে গরম হয়ে গেল! তেড়ে গেল সে প্রিয়ার দিকে। চোঁয়াল উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এই তুই আমার রুমে কী করছিস হ্যাঁ?”

প্রিয়া কাতর হয়ে মিসেস শায়লা মির্জার পেছনে লুকালো। হাবভাব দেখে মনে হলো যেন মিসেস শায়লা মির্জাকে সে হা’য়া’র করে এনেছে তার ছেলের পেছনে লাগার জন্য! প্রিয়ার হয়ে মিসেস শায়লা মির্জা প্রতিবাদ করলেন। রাফায়াতের দিকে কঠিন গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,,

“কী করেছে মেয়েটা তোকে হ্যাঁ? কেন ঝগড়া করেছিস তার সাথে? বেল্ট নিয়ে নাকি মারতে গিয়েছিলি তাকে? বিয়ে না করতেই এত অধিকার খাটাচ্ছিস? বিয়ের পরে তো তুই আমার মেয়েটাকে নখে তুলে মারবি!”

মেজাজ চটকে গেল রাফায়াতের। আর সহ্য করা যাচ্ছেনা এসব সস্তা মানের নাটক। রাগে রি রি করে রাফায়াত ক্ষুব্ধ গলায় তার মাকে বলল,,

“মা প্লিজ যাও তো তুমি। তোমার এসব ন্যাকা ন্যাকা কথা গুলো শুনতে আমার মোটেও ভালো লাগছেনা।”

বিক্ষিপ্ত হয়ে রাফায়াত এবার প্রিয়ার মুখোমুখি দাঁড়ালো। প্রিয়ার আধো আতঙ্ক মুখের দিকে আঙুল তাক করল। ঝাঁজালো গলায় বলল,,

“ইউ থার্ড ক্লাস মেয়ে। তোকে আমি দেখে নিব। তোকে শায়েস্তা করার ভালো ভালো টেকনিক কিন্তু জানা আছে আমার।”

উপস্থিত সবাইকে এড়িয়ে গেল রাফায়াত। শোঁ শোঁ বেগে রুম থেকে প্রস্থান নিলো। মিসেস শায়লা মির্জা তাজ্জব বনে রাফায়াতের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলেন। সন্দিহান হয়ে মুখটা ঘুরিয়ে তিনি চঞ্চলকে কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই চঞ্চল মাথা নুইয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে গেল! পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার শতভাগ চেষ্টা করল। অতিশয় বিপাকে পড়ে মিসেস শায়লা মির্জা এবার প্রিয়ার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। কোমড়ে হাত গুজে বললেন,,

“তুই নিশ্চয়ই আমার ছেলেটাকে রাগিয়েছিস তাইনা? এজন্যই তো ছেলেটা এত ওভার রিয়েক্ট করল আমার সাথে।”

ভোলাভালা মুখশ্রী নিয়ে প্রিয়া ঘুরে দাঁড়ালো তার খালামনির দিকে। দুষ্টু হাসিতে মত্ত থাকা ওষ্ঠদ্বয়কে জম্পেশ নাটকীয়তার সাথে উল্টে বলল,,

“আমি তো কিছুই করিনি খালামনি। আমি সত্যিই জানিনা রাফায়াত সবার সাথে এমন রুড বিহেভ করছে কেন!”

_________________________________

গভীর রাত। চন্দ্রালোকিত ধরণী। চাঁদের বিলিয়ে দেওয়া অনাবিল আলোতে মানুষের ছায়া অবধি গুনতেও খুব একটা অসুবিধে হচ্ছেনা অয়ন্তীর। দখিনা বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে ব্যালকনীর গ্রীল ধরে লকলকিয়ে বাড়তে থাকা সুগন্ধী ফুলের গাছ গুলোকে! সেই সাথে সদ্য গোসল করে আসা অয়ন্তীর খোলা চুলগুলোও যেন সেই বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ছে। শরীর থেকে বেলীফুলের ঘ্রাণ বের হচ্ছে অয়ন্তীর! বেলীফুলের নির্যাসে তৈরী একটা সুগন্ধি সাবান ব্যবহার করেছে সে। যার মনমাতানো ঘ্রাণে কাবু হয়ে অয়ন্তী প্রায় একঘণ্টা ধরে বাথটাবে ছিল! নাকটা কেমন খচখচ করছে তার। ঠাণ্ডা লাগার লক্ষণ তৈরী করছে নাকের এই খচখচানো ভাবটি!

ভেজা গাঁয়ে অয়ন্তীর বিছানার সাদা চাঁদর প্যাঁচানো! গাঁয়ের জামাটা মেলে দিয়েছে ব্যালকনীর গ্রীলে। আদ্র বাতাসে যদি কিছুটা হলেও শুকিয়ে আসে সেই আশাতে! বাড়তি কোনো জামা না থাকার ফল এটা! এই ফ্লাটে আসার পর থেকে অয়ন্তী একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে। আর তা হলোঃ ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা! বিকেলের আনা খাবারটা যদিও সে একটু আগে খেয়ে শেষ করেছে তবুও এখন তার হালকা ক্ষুধা পেয়ে গেছে। এদিকে রাফায়াত যে সেই বিকেলে বের হয়ে গেছে এখনও আসার নামগন্ধ নেই তার।

ব্যালকনীতে হাঁটু ভাজ করে এলোকেশী চুলে ঠায় বসে আছে অয়ন্তী। ফ্লাটটির পার্কিং এরিয়ার দিকে সূক্ষ্ম নজর তার। কাজল লেপ্টানো চোখদুটো কারো আসার অপেক্ষায় ব্যাকুল। কিছুক্ষণ পর পর সে মানুষের চরাচরের ছায়া দেখতে পারছে।হয়তো কর্মব্যস্ত শহরের রাজ্যের ব্যস্ততা সেরে ফ্লাটের ভাড়াটিয়ারা রাতে-বিরাতে বাড়ি ফিরছে। ইচ্ছে হলেও কাউকে ডাকার সাধ্য নেই তার। কারো থেকে হেল্প চাওয়ারও সাধ্য নেই। তার গলার স্বর চারতলা বিল্ডিংয়ের নীচ অবধি আদোতে পৌঁছাবে না! মিছেমিছি কণ্ঠশক্তি অপচয় করে কোনো লাভ আছে তার? এরমধ্যেই হঠাৎ বিকট শব্দে ফ্লাটের কলিং বেল বেজে উঠল! হকচকিয়ে ওঠে অয়ন্তী প্রথমে গ্রীলে মেলে রাখা কাপড়গুলোকে চেক করে দেখল। না এখনো অবধি জামাগুলো চিপচিপে ভেজা অবস্থায়। কোনোক্রমেই জামাটা গাঁয়ে পড়া যাবেনা। এদিকে কলিংবেল চাপার আওয়াজ বিকট থেকে বিকটতর হতে লাগল। কেউ খুব শক্তি অপচয় করে দরজার কলিংবেলটা অনবরত চেপেই যাচ্ছে।

এমতাবস্থায় অয়ন্তী বাধ্য হলো ভেজা জামাটা গাঁয়ে পড়তে! চ্যালচ্যালিয়ে হেঁটে ফ্লাটের দরজার সামনে দাঁড়াতে। দরজায় কান ঠেকাতেই রাফায়াতের তেজী কণ্ঠস্বর অয়ন্তীর কানের পোকা নাড়িয়ে দিলো! হুড়োহুড়ি করে অয়ন্তী দরজার খিলটা খুলে দিলো। অমনি রাফায়াত দরজা খুলে অয়ন্তীর মুখোমুখি দাঁড়ালো। মুখে হাত চেপে ধরে অয়ন্তী অবুঝের মত জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। চোখদুটো তার রসগোল্লার মত ফুলকো ফুলকো। রাফায়াত রুষ্ট হয়ে উঠল। ভ্রু যুগল খরতরভাবে কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অয়ন্তীর দিকে তাকালো। শার্টের হাতায় ভাজ তুলতে তুলতে তটস্থ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কী ব্যাপার? দরজা খুলতে এত দেরি হলো কেন? কী করছিলে রুমে?”

অয়ন্তী থমকালো। শুকনো ঢোঁক গিলে রাফায়াতের আগুন ঝড়া দৃষ্টিতে বার কয়েক ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টি ফেলল। অতঃপর রুক্ষ গলায় জবাবে বলল,,

“জামাটা শুকোতো দিয়েছিলাম তাই।”

#চলবে…?

#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_২১
#নিশাত_জাহান_নিশি

“জামাটা শুকোতে দিয়েছিলাম তাই।”

রাফায়াতের সতর্ক দৃষ্টি পড়ল এবার অয়ন্তীর পরিহিত ভেজা জামাটির দিকে। দূর হতেই আঁচ করা যাচ্ছে জামাটি এখনও কী পরিমাণ ভিজে আছে। বেশীক্ষণ এই ভেজা জামাটি গাঁয়ে পড়ে থাকলে নির্ঘাত জ্বর, সর্দি-কাশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এমনিতেও অয়ন্তীকে দেখতে কেমন যেন রোগা রোগা লাগছে! পেছনের চুলগুলি থেকেও টপটপ করে পানি ঝড়ছে। সদ্য শাওয়ার নিয়েছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এই মাঝরাতে হঠাৎ অয়ন্তীর গোসল করার কারণ রাফায়াত খুঁজে পায়না! এমন তো না যে অতিরিক্ত গরম পড়ছে, গরমে বিতৃষ্ণা লাগছে, সেই গরমে রুমে থাকা যাচ্ছেনা। রুমে তো এসিও ফিট করা আছে। তবুও কেন এই মাঝরাতে অয়ন্তীর গোসল করতে হবে?

রুমের দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে নিলো রাফায়াত। কপালে কয়েকদফা সন্দেহের ভাজ ফুটিয়ে তুলল। পুনরায় সে অয়ন্তীর মুখোমুখি দাঁড়ালো! গোয়েন্দা টাইপ ভাবসাব নিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত গুজল। ভ্রু জোড়া ঈষৎ উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এত রাতে গোসল কেন?”

অয়ন্তী অবাক হলো! রাফায়াতের দিকে উদ্ভট দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। নির্বোধ গলায় পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল,,

“অদ্ভুত! এ আবার কেমন প্রশ্ন?”

“অভেয়েসলি এটা একটা সময় উপযোগী প্রশ্ন! বলো এই মাঝরাতে হঠাৎ শাওয়ার নিলে কেন?”

“এই? আপনার কী মাঝেমধ্যে মাথার তার-টার ছিঁড়ে যায় না-কী? কীসব উদ্ভট উদ্ভট প্রশ্ন করে বসেন বলুন তো?”

মুহূর্তেই অয়ন্তীকে শাসিয়ে উঠল রাফায়াত! চোখ-মুখ ঘোরতোরভাবে লাল করে সে অয়ন্তীর মুখের কাছে আঙুল তুলল। ডানপিটে গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“সত্যি করে বলো রুমে কে এসেছিল?”

“মানে? কী বলতে চাইছেন আপনি?”

“অনিক এসেছিল তাইনা?”

চোঁয়াল শক্ত হয়ে এলো অয়ন্তী! রাগে তার মাথা শুদ্ধু ফেটে যাচ্ছিল। এমনিতেও তাকে কি’ড’ন্যা”প করে আনা হয়েছে। একা একটা রুমে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তার উপর খাওয়াদাওয়া, কাপড়চোপড়ের সমস্যা তো হরদম লেগেই আছে। এতকিছুর পরেও রাফায়াত কী করে পারছে তার দিকে অহেতুক আঙুল তুলতে? তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতে? মনুষ্যত্ব কি এই লোক বেচে খেয়েছে? বিবেকবুদ্ধি, জ্ঞানশক্তি সব কী জলাঞ্জলী দিয়েছে? ঝগড়ুটে ভাব নিয়ে অয়ন্তী রাফায়াতের সন্দিহান দৃষ্টিতে আগ্রাসী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। অতঃপর ঝাঁজালো গলায় বলল,,

“ফা’উ’ল কথা বলবেন না একদম। অনিকের সাথে আমি কন্ট্রাক্ট করব কী করে আজব? আমার কাছে কোনো ফোন বা অন্য কোনো অপশন আছে কী অনিকের সাথে কানেক্ট হওয়ার?”

কথার মাঝখানেই রাফায়াত হঠাৎ ঢুলুঢুলু শরীরে অয়ন্তীর কাঁধের উপর ছিঁটকে পড়ল! শরীরের ব্যালেন্স রাখতে না পেরে সে অয়ন্তীর কাঁধ থেকে ফসকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল! খাটের কর্ণারে লেগে তার কপালের অনেকখানি অংশ কেটে গেল! কপাল থেকে দড়দড়িয়ে র’ক্ত গড়ানো শুরু হতেই অয়ন্তী ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল। হচকানো প্রকাণ্ড চক্ষু দ্বারা সে চোখ বুজে পড়ে থাকা রাফায়াতকে দেখতে লাগল। লোকটা সম্পূর্ণ অনুভূতিশূণূ। কোনো রকম উহ্ আহ্ শব্দটিও করলনা। কেবল মাথাটা এপাশ থেকে ওপাশ দুলাতে লাগল। হয়ত এভাবেই ব্যথা প্রকাশ করছে!

আতঙ্কিত হয়ে অয়ন্তী রাফায়াতের মাথাটা তার পায়ের উপর রাখল। র”ক্ত বের হতে থাকা কপালটিতে আলতো হাত ছুঁয়ালো। অমনি রাফায়াত চাপা স্বরে আহ্ করে উঠল। অয়ন্তী ঘাবড়ে উঠল৷ বুঝতে পারল তার ব্যথা লাগছে। যত্ন পাওয়ার সাথে সাথেই তীব্র ব্যথার অুনভূতি বাইরে বের হয়ে এসেছে! রাফায়াতের চিরাচরিত বিভৎস মুখের দিকে তাকালো অয়ন্তী। উদগ্রীব গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কী হয়েছে আপনার? হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেলেন কেন?”

মিটিমিটি স্বরে রাফায়াত প্রতিউত্তরে বলল,,

“আ’ম সো টায়ার্ড অয়ন্তী। আই নিড টু স্লিপ।”

রাফায়াতের মুখ থেকে নেশা জাতীয় দ্রব্যের বিদঘুটে গন্ধ আসছিল! কাছাকাছি আসাতেই সেই অরুচিকর গন্ধটা অয়ন্তীর নাকে লাগল। শীঘ্রই নাক সিঁটকে নিলো অয়ন্তী। ওড়না দ্বারা নাক ঢেকে নিলো। তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“আজও আপনি নেশা করে এসেছেন হ্যাঁ?”

ব্যথা ভুলানোর সঙ্গী পেয়ে রাফায়াত হঠাৎ অয়ন্তীর কোমড় প্যাঁচিয়ে ধরল! প্রতিবার অগোছালোভাবে তপ্ত শ্বাস ফেলতে লাগল। ঘটনার আকস্মিকতায় অয়ন্তী হকচকিয়ে উঠল! কাঠের পুতুলে পরিণত হলো। তক্ষণি রাফায়াত কেমন যেন ছন্নছাড়া গলায় বলে উঠল,,

“নেশা ছাড়া আর কী আছে জীবনে বলো? আমার জীবনটাই তো নেশাময়।”

অয়ন্তী তার সর্বাত্নক চেষ্টা করল রাফায়াতকে তার শরীর থেকে ছাড়ানোর। নেশায় মাতাল হয়ে আছে রাফায়াত। উদ্দেশ্য কখন কোন দিক থেকে কোন দিকে চলে যায় বলা যায়না! তাই আগে নিজের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিতে চাইল অয়ন্তী। দু’হাত দ্বারা রাফায়াতকে ঠেলতে লাগল সে। ভীরু গলায় বলল,,

“দেখি ছাড়ুন আমায়। উঠুন এখান থেকে।”

“কেন? ভয় পাচ্ছ?”

“না তো! কীসের ভয়?”

“তাহলে এমন ছুটোছুটি করছ কেন? আগ বাড়িয়ে যখন আমায় ধরতে এসেছ তো আমি না ছাড়া অবধি তোমার আজ মুক্তি নেই!”

“আমি তো আর ইচ্ছে করে আপনাকে ধরতে আসিনি। মাথা ফেটে গিয়েছে আপনার, তাই মানবতার খাতিরে ধরতে এসেছিলাম!”

“ঐ একই হলো। একবার যেহেতু ধরেই ফেলছ তো আমি না ছাড়া অবধি আমার হাত থেকে তোমার কোনো পরিত্রাণ নেই!”

“আরে এসব ভাট বকা বন্ধ করুন প্লিজ। ছাড়ুন আমাকে। কপালে ব্যান্ডেজ করতে হবে আপনার।”

“এখানে ব্যান্ডেজ পাবা কই?”

“ব্যান্ডেজ না পেলেও অন্য একটা ব্যবস্থা তো করতে-ই হবে।”

“আমি জানি কী ব্যবস্থা করবে!”

“কী ব্যবস্থা?”

“ফিল্মের হিরোইনদের মত এখন তোমার ওড়নার কাপড় ছিঁড়ে নিশ্চয়ই আমার কপালে বেঁধে দিবা! তাই আগে ভাগেই বলছি এসব ফিল্মি স্ক্রিপ্ট আমার সাথে করতে এসো না। তুমি বরং কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে বসে থাকো। র’ক্ত পড়া এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। শরীরের র’ক্ত তো এমনিতেই একটু একটু করে শেষ হয়ে আসছে তাইনা? আর কত ঝড়বে তারা? কিছুদিনের মধ্যে এই ক্ষতটাও হয়ত শুকিয়ে যাবে। শরীরের ক্ষত নিয়ে আমি এই মুহূর্তে ভাবছিনা। মনের ক্ষতটা আমায় বাঁচতে দিচ্ছে না! সেই ক্ষত সারানোর ঔষধ যেহেতু আমি একবার পেয়ে-ই গেছি আজ রাতের জন্য সেই ঔষধ আমি ছাড়ছিনা!”

অয়ন্তীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রাফায়াত স্বস্তির শ্বাস ফেলল। ব্যথার মাঝেও একরাশ সুখ নিয়ে নিশ্চিন্তে চোখজোড়া বুজল! অয়ন্তী নির্বাক মূর্তি হয়ে বসে রইল। দেহ থেকে প্রাণ বুঝি তার বের হয়ে আসছিল। এই কেমন সর্বনাশা স্পর্শ রাফায়াতের? দেহ শুদ্ধু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে তার। কাঁটা দিয়ে উঠছে সমস্ত শরীর। শিরদাঁড়া বেয়ে উষ্ণ ঝড় বইছে। তবে সেই ঝড়কে অচেনা কোনো কারণেই অয়ন্তী থামাতে চাইছেনা! এমনকি আজ তার গাঁয়ে কলঙ্কের দাগ লাগলেও না! যেই ছোঁয়ায় সুখ থাকে সেই ছোঁয়া কোনো সীমাবদ্ধতা মানেনা। কোনো বাঁধা-বিঘ্নতা মানেনা। মাতাল চাহনিতে অয়ন্তী বার কয়েক রাফায়াতের নিবিড় মুখশ্রীতে তাকালো। এসি চলছে তবুও যেন রাফায়াতের ঘাড়ে, গলায়, মুখে ঘামের উৎপত্তি দেখা যাচ্ছিল। ভাবুক হয়ে অয়ন্তী খুব সাবধানতার সাথে রাফায়াতের গাঁ থেকে শার্টটা খুলে দিলো। যদিও কালো রঙের শার্টটিতে রক্তের দাগ তেমন মাখোমাখো ভাবে দেখা যাচ্ছেনা। তবুও চিপচিপে ভিজে দাগটা চাইলেও নিষ্পত্তি করা যাচ্ছেনা।

শার্টটা গাঁ থেকে খুলতেই অয়ন্তী হঠাৎ আঁতকে উঠল! বুকে, পিঠে এবং নাভীর কাছাকাছিতে গভীর কালসিটে দাগ পড়ে আছে রাফায়াতের! হাতের কব্জিতেও নেই বৈ কী! বিকেলেও তো এই দাগগুলো ছিলনা রাফায়াতের গাঁয়ে। তবে এখন হঠাৎ এই দাগু গুলোর উদয় ঘটল কীভাবে? তার মানে কী রাফায়াত কারো সাথে মা’র’পিট করে এসেছে? এই মানুষটার কাজ-ই কী কেবল কোমলমতী দেহটাকে মা’র’পি’ট করে ক্ষত-বিক্ষত করা? এ আবার কেমন ধাঁচের মানুষ? যার মধ্যে নিজের প্রতি বিন্দুমাত্র যত্নশীলতাও নেই?

অয়ন্তী পড়ে গেছে মহা ফ্যাসাদে। না পারছে রাফায়াতকে তার শরীর থেকে সরাতে আর না পারছে রাফায়াতকে এই বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখতে! যদিও এই মুহূর্তে রাফায়াতের সেবা-শ্রুশ্রুষা এবং চিকিৎসা অনিবার্যভাবে প্রয়োজন। তবুও যেন রাফায়াত সেই অনিবার্য বিষয়টি নিয়েই বড্ড উদাসীনতা দেখাচ্ছে!

____________________________________

সূর্যের তীব্র আলোর ছঁটা অয়ন্তীর নিবদ্ধ আঁখিদ্বয়কে দ্বিধাহীনভাবে বিরক্ত করে তুলছে! আগুনের ফুলকি ছিটকে পড়ার ন্যায় অসম্ভব জ্বালা করছে তার চোখদুটো। ঘুমের রেশ কাটিয়ে অয়ন্তীর পক্ষে সম্ভবপর হচ্ছিলনা আঁখিজোড়া টেনে মেলে ধরতে। গাঁয়েও তার কেমন যেন ভারী কিছু পড়ে থাকার অনুভূতি হচ্ছে। সমস্ত শরীরে কেমন যেন ব্যথা ব্যথাও লাগছে। অসহনীয় সেই ব্যথা। মেরুদন্ডে ভর দিয়ে উঠার মত নয়! তার শরীরকে যেন সেই ভারী বস্তুটি ঘোরতোরভাবে দখল করে রেখেছে। ব্যথার ভার আরও দ্বিগুন বৃদ্ধি করে তুলছে।

ইতোমধ্যেই অয়ন্তীর মনে হলো সাইলেন্ট মুডে তার আশেপাশেই কোথাও ফোন বাজছে! এই পর্যায়ে এসে অয়ন্তী বাধ্য হলো ঘুমের রেশ কাটিয়ে চোখ মেলে তাকাতে। অস্ফুটে নেত্রদ্বয়ে সে অগ্রে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই অপ্রত্যাশিতভাবে রাফায়াতকে তার বুকের পাঁজরে আবিষ্কার করল! নিমিষেই ভড়কে উঠল অয়ন্তী। শরীরে ভর করা আড়মোড়া না ভেঙেই সে এক ধাক্কায় রাফায়াতের ব্যথাযুক্ত মাথাটিকে তার বুক থেকে মাটিকে ছিটকে ফেলল! অথচ এইদিকে কোনো হেলদুল নেই রাফায়াতের! ম’রা মানুষদের মত নির্বিঘ্নে ঘুমুচ্ছে সে। মাথায় তুচ্ছ ব্যথার অনুভূতিও পাচ্ছেনা। কার্যসিদ্ধি হতেই অয়ন্তী ধড়ফড়িয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসল। হকচকানো দৃষ্টি ফেলল রাফায়াতের নিষ্ক্রীয় মুখশ্রীতে। আবারও সেই ফোন বাজার শব্দ। শব্দটি রাফায়াতের প্যান্টের পকেট থেকেই আসছে।

কৌতূহলী হয়ে অয়ন্তী সকল সীমাবদ্ধতা ভুলে রাফায়াতের প্যান্টের পকেট দুটো হাতাতে লাগল! অবশেষে ডান পাশের প্যান্টের পকেটটিতে সে বাজতে থাকা ফোনটিকে খুঁজে পেল। তাড়াহুড়ো করে অয়ন্তী কলটি তুলার পূর্বেই অতি শীঘ্রই কলটি কেটে গেল। নাম্বারটি ফোনে সেভ করা ছিলনা বিধায় অয়ন্তী বুঝতে পারলনা কে আসলে রাফায়াতকে কল করেছিল। ভাগ্যিস ফোনটিতে স্ক্রীণ লক ছিলনা! তাই ফোনটি খুলতে তার বেশী বেগ পেতে হলোনা। ইতোমধ্যেই নাম্বারটি থেকে একটি এম.এম.এস এলো। কেউ একটা ৫ মিনিটের ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছে ফোনটিতে।

অতি আগ্রহ নিয়ে অয়ন্তী ভিডিও ক্লিপটি অন করার পূর্বেই ঐ নাম্বারটি থেকে পুনরায় একটি মেসেজ এলো! মেসেজটি হলোঃ

“এই শা’লা! মা’ল খেয়ে পড়ে আছিস কোথায়? ভিডিও ক্লিপটা দেখ তাড়াতাড়ি। অনিক একটু আগেই ক্লিপটা আমাকে সেন্ড করেছে। কাল রাতের খু’না’খু’নির ভিডিওটা অনিকের কাছে গেল কীভাবে হ্যাঁ? কে করেছে এই ভিডিও?”

মেসেজটি পড়া শেষে অয়ন্তী বিপুল উৎসাহ নিয়ে ভিডিও ক্লিপটিতে ক্লিক করতেই আচমকা সশব্দে চিৎকার করে উঠল! মূলত ভিডিওটিতে রাফায়াত কাউকে জা’নো’য়ারদের মত একের পর এক ছু’রি’কা’ঘাত করছিল!

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here