অনুভূতিহীন,পর্ব ২,০৩

0
549

#অনুভূতিহীন,পর্ব ২,০৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
০২

আমি ভ্রু-কুচকে রিদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। লোকটাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার। বাবা মা এই কোন মানুষের পাল্লায় পরলো কে জানে?
আমি ভেবেছিলাম বাসর ঘরে কথা গুলো বলার পর মানুষটার দুইটা প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
১- তোমাকে বিয়ে করেছি কি আলাদা থাকার জন্য? এখন তুমি আমার বিয়ে করা বৌ, সো তোমাকে ছুলে আমার একটুও পাপ হবে না।
এই টাইপের কিছু,,,

২- আচ্ছা সমস্যা নেই আগে তুমি আমায় চিনো জানো। তারপর না হয় আমার কাছে এসো। তুমি যতো সময় নিবে নাও আমার প্রব্লেম নেই। আমি কখনো তোমার কিছুর জন্য জোড় করবো না।
এই টাইপের কিছু,,,,

কিন্তু আমার ভাবনাকে জলে ফেলে লোকটা কোনো পাত্তাই দিলো না আমাকে। অপমানিত বোধ করলাম আমি।
আর লোকটা নিচে বিছানা করে শুয়ে পরে কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে। আমিও আর এটা নিয়ে ভাবলাম না। কাপর চেন্জ করে নিলাম। অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমাতে হবে।

সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি সে এখনো ঘুমাচ্ছে। সারা রাত এদিক ওদিক ছটপট করলো, ইদুরের মতো। হয়তো নিচে ঘুমানোর অভ্যেস নেই তার।
এক মুহুর্তের জন্য হলেও আমার একটু মায়া হয়েছিলো মানুষটার জন্য। যাই হোক স্বামি তো। তবুও আমি মানবতা দেখালাম না। আমাকে পাত্তা না দেওয়ার উসুল নেবো আমি। জ্বালানো তো সবে মাত্র শুরু।

সকালে তারাতারি উঠে গেলো রিদ ভাই। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে রাতে ঘুম হয়নি তার। তবুও আমি কাটা গায়ে নুনের ছিটকা হিসেবে তাকে বললাম,
– রাতে ঘুমাতে পারেন নি তাই না? আমাকে বলতেন, যে আপনি নিচে ঘুমাতে পারেন না। তাহলে প্রয়োজনে আমিই নিচে ঘুমাতাম।
রিদ ভাইয়া এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। বুঝাই যাচ্ছে আমার কথায় খুব বিরক্ত বোধ করলো সে। এর পর নিরবতা ভেঙে বললো,
– জুতা মেরে গরু দান করতে ভালোই পারো দেখছি।

এর পর লোকটা আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। লোকটা আসলেই সুবিধার নয়, যতোটা সহজ সরল ভেবেছিলাম, তার চেয়ে দিগুন ঘাড়ত্যাড়া সে। ভালোই হয়েছে। নিরামিশ হলে জ্বালিয়ে মজা পেতাম না।

একটু পর মা আসলো রুমে। দরজায় নক করতেই দরজা খুলে দিলাম আমি। মা রুমে এসেই আগে আমার উনি মানে রিদ ভাইকে খুজছে। দেখে মনে হচ্ছে এখন আমি না উনিই তার আপন। আমি মায়ের দিকে চেয়ে বললাম,
– উনি ওয়াশ রুমে গেছে ফ্রেশ হতে।
মা আমার হাত ধরে নিয়ে খাটের উপর বসালো। এর পর বললো,
– রিদের সাথে কথা হয়েছে তোর?
আমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। এর পর বললাম,
– হুম হয়েছে, তবে মানুষটা এতো সুবিধার না। কেমন গম্ভির প্রকৃতির। ভাব বেশি মনে হয়।
– ডাক্তার’রা এমনই হয়। আস্তে আস্তে সব বুঝে যাবি। এখন সে বের হলে ওকে নিয়ে নাস্তা করতে আয়।
,
,
দুপুরে খাওয়া শেষে আমাকে নিয়ে রওনা দিলো আমার শশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। দুইটা গাড়ি, প্রথমটাতে মামা মামি আর ড্রাইভার। আর দ্বিতীয় গাড়িতে আমি সে আর তার দুই বন্ধু। ভাইয়ার দুই বন্ধু সামনে বসলো। একজন গাড়ি চালাচ্ছে আরেকজন পাশে। আর আমি আর সে বসলাম পেছনের সিটে।
বাবা মা আমার সাথে যাচ্ছে না। তারা কলেজ খোলার আগের দিন গিয়ে আমায় নিয়ে আসবে। এখন এই কয়েকদিনের জন্য পাঠাচ্ছে যাতে শশুর বাড়িটা একটু ভালো করে দেখে বুঝে বাড়ির সাথে পরিচিত হয়ে আসতে পারি। এর পর আমার এক্সাম শেষে তখন অনুষ্ঠান করে তুলে নিয়ে আসবে।
গ্রীষ্মের সময় কাটাতে শশুর বাড়িতে পাঠাচ্ছে আমাকে। অদ্ভুত না বিষয় টা?

আজ আমার খুব খারাপ লাগছে। বিষয়টা এমনও না যে একেবারে শশুর বাড়ি চলে যাচ্ছি। বরং, ১০-১২ দিন পর আবার কুমিল্লায় ব্যাক করবো বাবা মায়ের কাছে। এর পর এক্সাম পর্যন্ত যত মাস সময় লাগে তা বাবা মায়ের সাথেই থাকবো। তবুও কেন যেন মনে হচ্ছে আমি আমার বাবা মাকে ছেরে অনেক দুরে সরে যাচ্ছি। বাবা মায়ের সাথে আমার অনেক দুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। এই তো আর কয়েকটা মাস, বাবা মায়ের থেকে সত্যিই অনেক দুরে হারিয়ে যাবো। আমার বিয়ে হয়ে গেছে এটা ভাবতেই বুকটা কেমন যেন করছে। আসিফের কথা মনে পরতেই অদ্ভুত ভয় কাজ করছে মনে। আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান এর ছেলে। তাদের একটা গ্যাং আছে। খুব খারাপ তারা। আমাকে কলেজে যাওয়ার পথে প্রায়ই ডিস্টার্ব করতো সে। এটাও বলেছিলো, তাকে ছারা আর কাউকে বিয়ে করলে, আমাকে আর আমার স্বামী দুজনকেই মেরে ফেলবে। তাই হয়তো বাবা হুট-হাট এভাবে বিয়েটা দিয়ে দিলো। এখন আমার স্বামীর বাড়ি তো অনেক দুর ঢাকা। কিন্তু বাবা মায়ের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে আমার। আমার বাবা মায়ের কিছু হলে আমি বাচতে পারবো না।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো তা বুঝতেই পারিনি।
– এই রাফি কয়েকটা টিসু পেপার দে তো, নাহলে এক্ষুনি তোদের ভাবি গাড়িটাকে অথৈ জলে ভাসিয়ে দেবে।
রিদ ভাই কথাটা বলতেই তার দুই বন্ধু হাসা শুরু করলো। আমি বুঝতে পারছি না সে কি টিসু চাইলো, নাকি আমায় ইন-ডিরেক্টলি অপমান করলো।
সে এক হাতে ফোন টিপছে অন্য হাতে আমার দিকে টিসু পেপার এগিয়ে দিলো। আমি টিসু নিয়ে অশ্রু মুছে নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। প্রায় সন্ধা ঘনিয়ে এসেছে। আর আমরাও চলে এসেছি প্রায়।

কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসতে আসতে সন্ধা পার হয়ে গেলো। বাড়ির গেটের সামনে এসে গাড়ি থামলো। দেখি বাড়িটা কৃত্রিম আলোয় জ্বলছে। দারোয়ান গেট খুলে দিলে গাড়ি একটা একটা করে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো।
গাড়ি পার্কিং করে দেখি বাড়ির সদর দরজার সামনে কতগুলো মেয়ে ফুল হাতে দাড়িয়ে।
মামি আমাকে ধরে ভেতরে নিয়ে যাওয়ার সময় মেয়ে গুলো ফুল ছিটাতে থাকলো।
,
,
ফ্রেশ হয়ে প্রতিবেশিদের সাথে পরিচিত হলে সবাই একে একে চলে গেলো। আমি চুপচাপ বসে আছি ড্রয়িং রুমে। অনেক আগে এসেছিলাম এই বাড়িতে ঠিক ভাবে মনেও নেই। আর আগের থেকে এখন বাড়ির চেহারাও বদলে গেছে।
রিদ ভাই নাকি হসপিটালে চলে গেছে জরুরি কল পেয়ে। কতো ব্যস্ততা তার, নতুন বৌ কে সঙ্গ দেওয়ার সময় পাচ্ছে না সে। একেবারে অনুভূতিহীন একটা মানুষ।
আমি কিচেনে মামির কাছে গেলাম। দেখি শিলা(কাজের মেয়েটা) রাতের জন্য রান্না করছে। আর মামি চা বানাচ্ছে।
আমি মামিকে বললাম,
– আমি একটু বাড়িটা ঘুরে দেখবো মামি।
মামি শিলাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– আরশিকে বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখা তো। আমি এদিক টা দেখছি।
মামির কথা শেষ হতেই আমি বললাম,
– না না তোমাকে কষ্ট করতে হবেনা মামি। ও বরং রান্না করছে করুক। আমি পারবো সমস্যা নেই।
মামির সন্মতি পেয়ে আমি বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। এখন রাতের বেলায় ছাদের উপরে যাওয়া ঠিক হবে না বলে, ছাদ টা দিনের বেলায় দেখবো ভাবছি।

সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এর পর একটা রুমে ঢুকে আমি অবাক হলাম। শুধু অবাক না খুব বেশিই অবাক হলাম। রুমটার দেয়ালে অনেক গুলো ছবি ঝুলানো। যেগুলো অন্য কারো নয়, আমারই ছবি।
আমি অবাক হয়ে দেওয়াল থেকে একটা ছবি নামিয়ে হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম। তখনি পেছন থেকে একটা পুরুষ কন্ঠ ভেষে এলো কানে,
– এই মেয়ে, আমার রুমে কি করছো? আমার অনুমতি ছারা কেউ আমার রুমে ঢুকা নিষেধ।
আমি পেছন ফিরে রিদ ভাইয়াকে দেখে হুট করে বলে দিলাম,
– আমারও অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হবে এখানে?
হুট করে এমন কথা কেন বললাম, তা আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। আমি কি অধিকার খাটিয়ে কথা বললাম?

আমার হাতে ছবিটা দেখে রিদ ভাইয়া এগিয়ে এসে ছবিটা নিয়ে নিলো। তার পর আমার দিকে চেয়ে বললো,
– এগুলো আজকে বিকেলেই লাগানো হয়েছে। আর এটা মায়ের কথা মতোই লাগিয়েছে। এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। আর আমার রুমের সব কিছুই আমার ব্যাক্তিগত। আর আমার ব্যাক্তিগত জিনিসে কারো হাত লাগাটা আমার পছন্দ না।
বলেই তিনি ছবিটার উপরে হাত বুলিয়ে প্রথমে যেখানে ছিলো ওখানে লাগিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।
তবে সে একটা কথা মিথ্যা বলেছে তা আমার কাছে পরিস্কার। আর তা হলো ছবি গুলো আজকে লাগানো হয়নি। কারণ আমি যখন ছবিটার উপরে হাত বুলিয়েছিলাম থখন ছবিটাতে বালির উপস্থিতি টের পেয়েছিলাম। যদিও খালি চোখে তা দেখা যাচ্ছিলো না তবুও বুঝলাম ছবিটায় কিছু বালির উপস্থিতি ছিলো। আর যা আজকের দিনেই এই রুমে আসা অসম্ভব। তার মানে ছবি গুলো অনেক আগে থেকেই এই রুমে সেট করা।
কেন জানি আমার মুখ দিয়ে একটা হাসি ফুটে উঠলো। লোকটা কি আসলেই অনুভুতিহীন, নাকি এগুলো মাত্রই অভিনয়?

To be continue……

#অনুভূতিহীন (পর্ব ৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

রিদ ভাইয়ার চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে রইলাম আমি। মানুষটা বড়ই অদ্ভুত প্রকৃতির। এর পর সারা রুম হেটে ছবি গুলো দেখছিলাম। কতো সুন্দর করেই ফ্রেম করে সাজানো। বিয়ের আগে তো আমাদের দেখাই হয়নি। এতো ছবি কোথায় থেকে সংগ্রহ করেছে সে?
এর পর বেলকনিতে গেলাম। দেখি একপাশে একটা গোলাপ গাছ। কয়েকটা ফুল ফুটে আছে, বাকি গুলো এখনো কলি।
আমি হাত বাড়িয়ে ছেতে যাবো তখনই মনে হলো, রিদ ভাই তো বলে গেছে তার ব্যক্তিগত জিনিসে হাত না লাগাতে। এসব ভাবতেই বাড়িয়ে নেওয়া হাতটা আবার গুটিয়ে নিলাম।

ফোনের শব্দ কানে আসতেই হাতে থাকা ফোনটার দিকে তাকিয়ে দেখি আন-নোন নাম্বার থেকে কল।
আপু কয়দিন আগে নতুন সিম কিনেছিলো। হয়তো আপুই ফোন দিলো। আমি ফোন রিসিভ করে কানে তুলতেই, ওপাশ থেকে ছেলের কন্ঠ ভেষে আসে।
– এই খা** মা** তোর সাহস কি করে হলো অন্য কাউকে বিয়ে করার? কি বলেছিলাম তোকে আমি? তোকে আর তোর জামাই দুজনকেই মে*রে দিবো আমি। তোর বিয়ের স্বাধ আমি মিটাবো খা**।

আমি ফোনটা কানের কাছ থেকে দুড়ে সরিয়ে নিলাম। কি বিশ্রি ভাষা তার। শুনতেই গা রি রি করে উঠে।
এর পর কানের কাছে নিতেই, লোকটা আরো কিছু বলতে শুরু করলো,
– এতোদিন আমার ভালো রুপ দেখেছিস। এবার দেখবি আমার আসল রুপ টা। কলেজ খুললে আবার ফিরবি না, বাড়িতে? ফিরবি তো। ক্লাস করতেও তো যাবি। তখন রাস্তা থেকে তু*লে নিয়ে যাবো তোকে। তখন দেখবো তোর কোন বাপ এসে তোকে বাচায়। খা**

ঘৃনায় ফোনটা কেটে দিলাম আমি। খুব কাঁন্না পাচ্ছে আমার। আমার সাথেই কেন এমন হয়? ওই লোকটা কেন এভাবে আমার পিছনে পড়েছে? বাড়িতে থাকতেও ঠিক ভাবে কলেজে যেতে পারতাম না ওই লোকটার ভয়ে। আর এখন বিয়ে করে এখানে এসেও তার শান্তি নেই।
বাবা সব সময় বলতো, আমাকে অনেক পড়াবে। আমি যতদুর চাই, ততদুর আমার হাত ধরে এক সাথে নিয়ে যাবে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবে আমাকে। আমাকে নিয়ে নাকি তার অনেক স্বপ্ন। আমরা দুই বোন ছিলাম বাবার চোখের মনি। আমাদের কোনো ভাই নেই দেখে বাবার সব স্বপ্ন আমাদের ঘিরে। আপু পড়ালেখায় তেমন একটা ভালো ছিলো না। তাই ইন্টার পাশ করে আর পড়েনি। এর পর আপুকে বিয়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু পড়ালেখায় বরাবরই সিরিয়াস ছিলাম। তাই বাবা সব সময় বলতো, আমাকে দিয়েই তার সব স্বপ্ন পুরণ করবে।
কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস। কলেজে উঠতেই আমার উপর চোখ পড়ে চেয়ারম্যান এর ছেলে আসিফ এর। এর পর নানা ভাবে উত্তক্ত শুরু করে আমাকে। কোনো মতো ফাষ্ট ইয়ার শেষ করে সেকেন্ড ইয়ারের কয়েক টা মাস পার করলো। এর পর সমস্যা টা আরো বেড়ে যায়, আমায় প্রপোজ করার পর থেকে। যখন আমি তাকে রিজেক্ট করে দিয়েছিলাম। কারণ তাকে খুব ভয় লাগতো আমার। আর তারা খুব নষ্ট বললেও ভুল হবে না। বাবার পাওয়ার খাটিয়ে বেচে যায় সবসময়।
এর পর কলেজে যাওয়া খুব কষ্টকর হয়ে দাড়ায় আমার জন্য। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে রে*প করার হুমকিও দিয়েছিলো ওই ছেলেটা। বাবা বাধ্য হয়ে চেয়ারম্যান এর কাছে নালিশ করে। কিন্তু চেয়ারম্যান লোক দেখাতে ছেলেকে দুইটা থাপ্পর মারতো। এর পর আবার সেই আগের মতোই ডিস্টার্ব করতো। আর গত কাল কলেজ থেকে ফিরেই শুনলাম আমার বিয়ে। তাও রিদ ভাইয়ের সাথে। হয়তো বাবা আমাকে নিয়ে ভয়ে ছিলো, তাই হুটহাট এমন সিদ্ধান্ত নিলো আমাকে না জানিয়েই। এখন ভয় হচ্ছে প্রচুর। বাড়িতে গেলে কি করবে সে? আমি কি এক্সাম টা দিতে পারবো না ঠিক ভাবে?

এর মাঝেই মামি এসে কাধে হাত রাখতেই আমার সারা শরির কেঁপে উঠলো। তখনও আমার শরির একটু একটু কাপছে।
মামি আমার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে বললো,
– কিরে আরশি, মা আমার। কাঁপছিস কেন? আর তোকে এমন অসাভাবিক দেখাচ্ছে কেন? কিছু হয়েছে, ভয় পেয়েছিস?
আমি নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে মাথা ঝাকিয়ে না সুচক জবাব দিলাম। মামি আমার দিয়ে চেয়ে আবার বলল,
– কি হয়েছে আমায় বল, রিদ কিছু বলেছে? কিছু বললে বল, এক্ষুনি ওর হিরো গিরি বের করবো।
আমি কথা ঘুরাতে বললাম,
– না মামি ও কিছু বলেনি। এমনি বাবা মায়ের কথা মনে পরছিলো।
আমার কথায় মামি একটু হাসলো। তার পর আমার গালে হাত রেখে বললো,
– তো এখন থেকে কি আমরা তোর বাবা-মা না? কয়দিন পর তো বাবা-মায়ের কাছে চলেই যাবি।
আমি একটু হেসে মামিকে জড়িয়ে ধরলাম। এর পর তার সাথে খাওয়ার জন্য চলে গেলাম।

খাওয়া শেষে রুমে এসে বসে রইলাম। মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। বিষয় টা কি রিদ ভাইয়ার সাথে শেয়ার করবো? নাকি এখন এসব বলা ঠিক হবে না। এমনিতেও সে আমার সাথে প্রয়োজন ছারা তেমন একটা কথা বলে না। এখন এসব বললে হয়তো আমাকেই খারাপ ভাবতে পারে। না বলাই ঠিক হবে।

কিছুক্ষন পর রুমে আসলো রিদ ভাই। ট্রাউজার ও পাতলা টি-শার্ট পরা। তাকে দেখে আমার এক ডোস ক্রাশ খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু খাবোনা। আমি এখন ওই মুডে নেই। চুপচাপ বসে আছি তার দিকে তাকাচ্ছি পর্যন্ত না। আমাকেও যে প্রচুর ভাবের উপর থাকতে হবে।
তবুও কপাল কুচকে তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আজকে কি একসাথে ঘুমাবেন?
রিদের সোজা উত্তর,
– এতো শখ নেই আমার।
– তাহলে আজকেও নিচে ঘুমাবেন?
– জ্বি না, আমার রুমে অনেক বড় সোফা আছে। আর আমি অন্যদের মতো নিজের বাপের বাড়ির পাওয়ার খাটিয়ে জামাইকে বা বৌকে ফ্লোড়ে ফেলে রাখবো না।

ওনার কথায় রাগ হলো আমার। অন্যকেউ বলতে আমাকেই বুঝালো সে। আমি জানতাম নির্ঘাত এই বেটা আমায় ওই বিষয় টা নিয়ে খোচা দিবে। কেন যে নতুন জামাইকে বাসর রাতে ফ্লোরে ঘুমাতে বললাম? তাও আবার নিজের বাপের বাড়িতে। মনে মনে নিজের উপর খুব রাগ হলো আমার।

রিদ ভাইরের রুমে টেবিলের ছোট বক্স গুলোতে অনেক গুলো বই তাক করে রাখা আছে। এক পাশে ডাক্তারি বই, আর অন্যপাশে কিছু উপন্যসের বই। অথচ আসার পর থেকে এগুলোর দিকে চোখই পড়লোনা আমার। রিদ ভাইয়া ওখান থেকে একটা উপন্যাসের বই নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। বাব্বাহ, এই অনুভূতিহীন মানুষটা আবার উপন্যাসও পড়ে?
আমি ছোট থেকেই খুব গল্প প্রেমি। রাত জেগে ফেসবুকে গল্প পড়তাম আগে।
আর উপন্যাস প্রেমিরা এমন অনেক বই একসাথে দেখলে খুশিতে পাগল হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটা তাদের মনের খোরাক।
ইচ্ছে করছে বইগুলো দেখতে। কিন্তু সে তো বললো, তার জিনিসে কেউ হাত দিতে পারে না।তার অনুমতি নিয়েই পড়তে হবে। আর এখন মন মেজাজও ভালো নেই। প্রচুর চিন্তা ঘুর পাক খাচ্ছে মাথায়। আপাতত নিজেকে একটু বিশ্রামে নিতে হবে।

চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছি আমি মথায় খুব চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। দুপুরের আগেও বাবা মায়ের সাথে ছিলাম। আর এখন তাদের জন্যও প্রচুর চিন্তা হচ্ছে।
ওই বাজে লোকটা বাবার কোনো ক্ষতি করবে না তো?
খুব চিন্তা হচ্ছে আমার তাদের জন্য। আবার মনে হচ্ছে লোকটা যদি ঢাকায় চলে আসে? যদি রিদ ভাইয়ের কোনো ক্ষতি করে? না, এসব কি ভাবছি আমি। চিন্তা যেন আমার পিছুই ছারছে না।

বেলকনিতে উকি দিয়ে তার দিকে তাকালাম। খুব মনোযোগ দিয়ে উপন্যাস পড়ছে সে। চিন্তা গুলো এক পাশে রেখে চোখ বুজে রইলাম। এই বুঝি ঘুম এসে সব চিন্তা দুর করে দিবে। কিন্তু ঘুমও আসছে না আজ।
কিছুক্ষন পর বারান্দা থেকে রুমে আসে রিদ ভাই। আমি ঘুমানোর ভান করে চোখ বুজে আছি। তিনি বইটা জায়গায় রেখে আমার পাশে এসে বসলেন। খুব মায়াময়ি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষন। হটাৎ ওনার এমন আচরণ মাথায় ঢুকছে না আমার। তিনি আমার গালে হাত রাখতে গিয়েও আবার হাতটা সরিয়ে নিলো। হয়তো আমি জেগে যাবো এটা ভেবে।
তার এমন মায়াময়ি দৃষ্টি যেন আমার ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে আমার। কেন লাগছে তা জানিনা৷ সবে আঠারো তে পা দিলাম। এই বয়সটায় অনুভুতি গুলো খুবই ভয়ঙ্কর।

তিনি আর কিছুক্ষন এভাবে তাকিয়ে থেকে একটু ঝুকে আমার কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়েই উঠে গেলেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে চুমু দিয়ে বড্ড অপরাধ করে ফেলেছে সে।
সে চলে যাওয়ার পর চোখ খুলে তাকালাম আমি। ঠোঁটে অজান্তেই একটা হাসি ফুটে উঠলো। মনে হচ্ছে সব চিন্তা দুরে ফেলে আমার মন পাখিরা ডানা ঝাপটাতে শুরু করলো। এ কেমন অনুভূতি জন্ম হচ্ছে আমার মাঝে?

To be continue,,,,,,

~ চরিত্র প্রকাশে দু’একটা গা*লি ব্যাবহার হচ্ছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরুধ রইলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here