অনুভূতিহীন,পর্ব ১৬,১৭

0
399

#অনুভূতিহীন,পর্ব ১৬,১৭
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
১৬

রিদ ভাইয়া কখনো আমার গায়ে হাত তুলবে তা ভাবতেও পারিনি আমি। গালে হাত দিয়ে আহত চক্ষু জুগল তার দিকে দৃষ্টি স্থির করে আছি।
আর তিনি তার মতো করে অনেক কথা শুনিয়ে গেলো আমায়। বেশিক্ষন ওনার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। দৃষ্টি ফ্লোরে স্থির রেখা বসে আছি।
আবার আচমকাই আমার পাশে এসে বসে আমাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,
– কেন এমন করলে তুমি? আজ তোমার কিছু হলে আমি কিভাবে বাচতাম বলো? সেই ছোট্ট বেলা থেকে তোমায় ভালোবাসি আমি। আমার যে বেচে থাকার অক্সিজেন টাই তুমি।

হটাৎ তার এমন পরিবর্তনে অবাক হয়েছি খুব। সে কি বলছে তা কানের পাশ দিয়েও যাচ্ছে না আমার। বিকেল থেকে এখন রাত পর্যন্ত সব কিছু একটা ঘোরের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে এটা একটা স্বপ্ন। একটু পরই ভেঙে যাবে।
,
,
একটা জামা নিয়ে পাশের রুমে চলে গেলাম আমি। একটা চেয়ারে বসে আছে সাবিহা। সারা শরির ভেজা। সাবিহাকে ধরে দাড় করালাম। সে ক্লান্ত শরিরে কপালে হাত রেখে বললো,
– মাথা টা ব্যাথা করছে প্রচুর।
আমি আবারও গায়ে হাত দিয়ে চেক করলাম। জ্বরে পুরে যাচ্ছে গা।
– চল জামা চেন্জ করে নিবি।
– আমায় দে আমি করে নিচ্ছি।
– পারবি?
– হুম,,

সাবিহার বাসা থেকে কল আসছে সন্ধা থেকে৷ কিন্তু উত্তেজনা বসত কেওই ফোন ধরতে পারেনি। হয়তো কয়েক বার বিরক্তও হয়েছে। কিন্তু এখন সব শেষে একটু আগে আবার আসলো। বাবা ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে সাবিহার বাবা উত্তেজিত হয়ে বললো,
– আমার মেয়ে কোথায় ভাই জান? সেই সকালে আরু মার সাথে বেড়িয়েছিলো এখনো বাসায় আসেনি। আরু-মা কোথায়? সে কি বাসায় ফিরেছে?
বাবা ঠান্ডা মাথায় তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো,
– টেনশন করবেন না, আরুর সাথে আমাদের এসেছে সাবিহা। বাড়িতে একটা ছোট অনুষ্ঠান ছিলো। আজ রাত এখানেই থাকবে।
ওনার যেন এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। বাবাকে বললো,
– সত্যি কি আমার মেয়ে আপনাদের বাসায়?
– হ্যা, কথা বলবেন?
– জ্বি তাকে একটু কষ্ট করে দিতে পারবেন? টেনশন হচ্ছে খুব।
বাবা ফোন টা কানের কাছ থেকে একটু নিচে নামিয়ে উচু গলায় মা কে ডাক দিলো।
– আরিশার মা, কোথায় তুমি? সাবিহা কি জেগে আছে, নাকি ঘুমিয়ে গেছে?
মা বাবার রুমে যেতে যতে বললো,
– হ্যা একটু আগে অল্প খেয়ে মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। কার ফোন?
– ওর বাসা থেকে ফোন এসেছে।
– আচ্ছা বলে দিন, আমাদের বাসায় এসেছে, আর এখন ঘুমিয়ে পরেছে।
– হুম,,,,

রাত তখন ১২ টা ছুই ছুই। পাশের বাড়ি থেকে কারো চিল্লাচিল্লির আওয়াজ ভেষে আসছে। বড় কাকা ক্ষেপেছে খুব। চাচিকে নাকি সেই সন্ধা থেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফোন দিলেও দেখে ফোন বন্ধ। আমার বিপদের কথা শুনেই নাকি সে পালিয়েছে বাড়ি থেকে। কারণ কয়দিন আগে সে যেটা স্বপ্নে দেখেছিলো তাই ঘটেছে আমার সাথে। তাই ভয় পেয়েছে খুব। অভি ভাইয়ার মৃত্যুর পর চাচা যেমন তাকে ৩ রাত গাছের সাথে বেধে রেখেছিলো। তেমনই আজ হয়তো সারা জীবনের ঘুর হারাম করে দিবে। সেই ভয়ে খবর পাওয়ার সাথে সাথেই বাড়ি থেকে ভেগেছে সে। বড় কাকা তার শশুর বাড়িতে ফোন করে জানতে পারে চাচি সেই সন্ধায় বাপের বা্রি চলে গেছে। চাচাও কড়া গলায় বললো, এক জগ পানি নিয়ে ওর সামনে বসে থাকবেন। ও যেন কিছুতেই ঘুমাতে না পারে। ঘুমালেই একটা অঘটন ঘটায় এই বাড়িতে।
,
,
ঘুম আসছেনা আমার। দুই হাটু ভাজ করে বসে আছি বিছানায়। আমার পাশে সাবিহা গভির ঘুমে। এক দৃষ্টিকে তাকিয়ে আছি তার দিকে। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষন কাঁন্না করি। সে না থাকলে হয়তো আজ আমার গল্প টা অন্য দিকে মোড় নিতো। মেয়েটা চাইলে পালিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু নিশ্চিৎ বিপদ জেনেও আমায় বাচাতে ছুটে গিয়েছে।
রিদ ভাইয়ার বুকে মাথা রেখে অনেক্ষন কাঁদতে ইচ্ছে করছে আজ। পরিবারের সবাইকে ধরে অনেক্ষন কেঁদে নিজেকে হাল্কা করার তীব্র ইচ্ছে জাগছে মনে।
এক মুহুর্তের জন্য হলেও মনে হয়েছিলো আর কারো মুখ বোধ হয় দেখতে পাবো না। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না আজ আমি ওখান থেকে বেচে ফিরেছি। নয়তো আগামি কাল সকালে আমার লা*শ ভাসতো কোনো নদীতে বা লুকিয়ে থাকতো কোনো জঙ্গলের মাটির নিচে। আর বেছে থাকলেও সবাই মুখের উপর আঙুল তুলে বলতো ওই তো ধ*র্ষিতা মেয়েটা।
ভাবতেই হাটুতে মুখ গুছে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি।

রাত প্রায় এক টা। হয়তো আজ কেও ঘুমাচ্ছে না। কারো চোখে ঘুম নেই সকলের মুখ দেখেই বুঝা গেছে কে কতখানি দুঃশ্চিন্তার মাঝে সময় পার করেছে।
তেমনই চোখে ঘুম নেই রিদেরও। বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে ফোনটা তার কানের মাঝে ধরা। হয়তো কারো সাথে কথা বলছে গভির রাত জেগে। দুই চোখ লাল হয়ে আছে তার। উত্তেজনায় সারা শরির জুড়ে র*ক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। কাউকে ফোনে বললো,
– তুমি এখন কোথায়?
অপর পাশের লোকটা বললো,
– আপাততো হোটেলে আছি।
রিদ একটা নিশ্বাস নিয়ে বললো,,
– ওরা যতক্ষন শান্তিতে ঘুমাবে ততোক্ষন আমার চোখে ঘুম আসবে না।
বিপরিত মানুষ টা বললো,
– সকালের আগেই কাজ হয়ে যাবে।
– গুড,,, আর শুনো, জানে মা*রার দরকার নেই শুধু এতটুকুই বুঝিয়ে দিবে যে কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছিলো।
– আচ্ছা। আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন।
রিদ বেলকনিতে হাটতে হাটতে বললো,
– তোমার ফোন না আসা অব্দি আমার ঘুম আসবে না।
– আচ্ছা,,,,

ফোন রেখে রুম থেকে বের হয়ে আসে রিদ। আরশি যেই রুমে আছে ওই রুমের দরজার কাছে এসে দাড়ায়। ভেতরে ঢুকতে গিয়েও ঢুকলো না। কারণ ভেতরে আরশি একা নয়। অন্য একটা মেয়েও আছে তার সাথে। তাই হুট করে আর ঢুকে যাওয়া যায় না। দরজায় টোকা দিতে গিয়েও থেমে গেলো। কি ভেবে আবার উল্টো রুমের দিকে হাটা ধরলো। বেলকনিতে এসে একটা শ্বাস নিলো সে। হয়তো আরশিকে একটু দেখতে মনটা বেকুল হয়ে আছে। কতো ভয়েই না ছিলো সে।

তখন ভোর সারে চার টা। বেলকনির গ্রিল ধরে এখনো দাড়িয়ে আছে রিদ। চোখ দুটু এখনো লাল হয়ে আছে। এটা তোর ছোট বেলার সমস্যা। রাগ হলেই চোখ দুটু লাল হয়ে যায় তার। তার উপর সারা রাত এক সেকেন্ডও ঘুমায় নি।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করলো। তখন ফোনটা বেজে উঠে,
– কাজ হয়েছে?
– হুম,,,,
– আচ্ছা তুমি হোটেলেই থেকো বের হওয়ার দরকার নেই। দুপুরের পরই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো আমরা।
– আচ্ছা।
কল কেটে রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো রিদ। এবার যেন রাজ্যের সমস্ত ঘুম একটু একটু করে আসতে শুরু করেছে।
,
,
চার রাস্তার মোড়ে তিনটা ছেলে পরে আছে। সারা শরির র*ক্তাক্ত। সারা এলাকায় খবর ছড়িয়ে গেলো চেয়ারম্যান এর ছেলে আর তার সাথের দুইজন কে কারা মে*রে চার রাস্তার মোড়ে ফেলে গেছে। র*ক্তাক্ত অবস্থায় দুইটা শুয়ে শুয়ে গোগাচ্ছে বাকি একটা শুয়ে আছে লম্বা হয়ে।
ওদেকে ঘিরে চার পাশে মানুষের ভির। কেও তাদের কাছে যাচ্ছে না। কিছুক্ষন পর ওখানে চেয়ারম্যান এর গাড়ি দেখে সকলে সরে গেলো। আরিফ সাহেব ছুটে ছেলের পাশে গিয়ে বসলো। ছেলের জন্য প্রায় পাগল হয়ে আছে সে। অথচ এই ছেলেই গতকাল রাতে তাকে থাপ্পর মেরেছিলো। কিন্তু সকাল হতেই ছেলের বিপদ শুনে সব রাগ হাওয়া হয়ে গেলো তার। বাবা তো বাবাই হয়। ছেলে মেয়ে যতই কষ্ট দিক, তাদের বিপদ শুনলে সবার আগে মা বাবাই কেঁদে উঠে।

“ওরা এখনো ম*রেনি।”
দুজন হাতেল পালস চেক করে বললো। আরিফ সাহেব দ্রুত গাড়িতে উঠিয়ে তাদের নিয়ে হসফিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। এম্বুলেন্স আসার অপেক্ষা করছে না সে।
,
,
সকাল ৯ টা ঘুম ভেঙে গেলো রিদের। এর আগে মা এসে দুইবার ডেকে গেছে। উঠছেনা দেখে আর ডাকেনি। বিষয় টা সহজ ভাবে নিলেও একটা জিনিস সহজ ভাবে নিতে পারলো না সে।
কয়েক মাস আগে যখন আরশি তার কাছে ছিলো। তখন সকাল হতেই আরশির অত্যাচার শুরু হতো। পাশে বসে ডাকতে থাকতো। উঠতে না চাইলে টেনে উঠাতো, নয়তো গ্লাস এনে মুখে পানি ছিটিয়ে মারতো। সেই ১০-১২ দিন তাকে কম জ্বালায় নি মেয়েটা।
কিন্তু আজ একবারের জন্যও ডাকতে আসলো না। গত কাল রাতেও আরশিকে এতো কথা বলেছে তবুও কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আর আজ সে আমার কাছে আসছে না।
বিছানা থেকে নেমে চোখ কঁচলাতে কঁচলাতে রুম থেকে বের হলো সে। ড্রয়িং রুমে বাবা-মা, ফুফা-ফুফি আর আরশির বান্ধবি টা বসে আছে। সবাইকে গত কালকের পুরো কাহিনি বিস্তারিত বলছে। আরশি এতোক্ষন ছিলো সেখানে। হয়তো ভালো লাগছে না দেখে চুপচাপ রুমে চলে গেলো। তার সাথে তো তেমন বেশি কিছু হয়নি। তবুও সবার সামনে দারাতে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে তার। খুব নিচু মনে হচ্ছে আজ।

রিদ রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। আরশি এখানে নেই মানে রুমেই আছে। রুমে প্রবেশ করে কাউকে না দেখে বেলকনিতে চলে গেলো। দেখে আরশি মন মরা হয়ে দাড়িয়ে আছে। এগিয়ে আরশির পাশে গিয়ে দাড়ালো ভেবেছে হয়তো আরশি কিছু একটা বলবে। না হয় কিছু একটা করে বসবে। হয়তো কেঁদে দিবে নয়তো জড়িয়ে ধরবে। কারণ মেয়েটার আবেগ সম্পর্কে অনেক ধারনা আছে তার। খুব বেশি আবেগি মেয়েটা।
কিন্তু আজ যেন সব আবেগ কোথায় হারিয়ে গেলো। চুপচাপ সেখান থেকে চলে যেতেই রিদ হাত টা ধরে ফেলল। আরশির মাঝে অবাক হওয়ার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। সে একেবারে শান্ত। শান্ত গলায় বললো,
– নাস্তা করেছেন?
রিদ ছোট করে জবাব দিলো,
– না, মাত্র উঠলাম,,,,
– আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নিন আমি নিয়ে আসছি।
বলেই চলে গেলো আরশি। রিদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। এমন পরিস্থিতিতে তার কি করা উচিৎ, তা জানেনা সে। সব কিছুই যেনো আজ তার কাছে শুধুই একটা দির্ঘশ্বাস।

To be continue,,,,,

#অনুভূতিহীন (পর্ব ১৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

মায়ের কোলে মাথা রেখে চুপটি মেরে শুয়ে আছি আমি। না চাইতেও চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। মা তার হাতের আঙুল দিয়ে আমার চুলে বিলি কে**টে দিচ্ছে। আমি কাঁদু স্বরে মাকে বললাম,
– আমার সাথেই কেন এমন হলো মা। আমি তো চাইনি এমন টা। এমন টা তো আমার মাথাতেই ছিলো না। কালকে যখন শেষ এক্সাম টা দিতে যাচ্ছিলাম। তখন বাবার মাঝে খুশির কতো উত্তেজনা দেখতে পেয়েছিলাম। আমি এক্সাম দিয়ে বের হওয়ার পর কেমন যেন অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছিলো আমার। এই বুঝি বিদায়ের সময় এসে গেছে। তুমি বাবা আপু সবাইকে ছেরে চলে যাবো ঢাকায়। কিন্তু হুট করে কি হয়ে গেলো আমি নিজেই বুঝতে পারিনি। ওখানে যতক্ষন বসে ছিলাম, এক মুহুর্তের জন্য হলেও আমার মনে হয়েছিলো, তোমাদের আর দেখতে পাবো না। রিদ ভাইয়ার মুখটা বার বার ভেষে উঠছিলো। এমন টা কেন হলো বলতে পারো মা?
মা আমার চুলে বিলি কা**টতে কা**টতে বললো,
– কিছুই হয় নি। ভেবে নে ওটা একটা দুঃস্বপ্ন। দুঃস্বপ্ন দেখার পর সকালে উঠলে যেমন অনুভূতি হয় ওটা অনুভব কর।
আমি কেঁদে মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– এমনটা চাইলেও পারছি না মা। ওনার কাছে গেলেই লজ্জায় ও আত্ম সম্মানের কথা ভাবতেই মাথা নিচু হয়ে আসে আমার।
– এগুলো মাত্রই তোর মনের ধারণা। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল ওসব।
– মা জানো ঢাকায় ওদের অনেক নাম ডাক। খবর টা ওখানে জানাজানি হয়ে গেলে ওদের মান সম্মান টা কোথায় যাবে বুঝতে পারছো মা।
মা আর কিছু না বলে চুপচাপ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
,
,
কথা ছিলো এক্সামের পর বড় করে অনুষ্ঠান করে আমায় এখান থেকে নিয়ে যাবে। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে তা আর হচ্ছে না। আমাকে আর এক মুহুর্তের জন্যও এখানে রেখে যেতে চায় না সে। আজ বিকেলেই ওদের সাথে নিয়ে যাবে আমাকে। ওখানে একটা পার্টির আয়োজন করে রিলেটিভ সবাইকে জানিয়ে দিবে।

সোফায় বসে ফোন টিপছিলো রিদ ভাইয়া। আমি দরজার পাশে দাড়িয়ে তার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে রইলাম। আমাকে দেখেই ডাক দিলো সে। আমি বিষণ্ন মনে তার পাশে গিয়ে দাড়ালাম। একটা আবদার আছে তার কাছে।
সে আমার এক হাত ধরে টেনে তার কোলে বসিয়ে নিলো। গাল টেনে বললো,
– কি ব্যাপার গত কাল থেকে এবাবে লুকিয়ে লুকিয়ে আছো কেন? এমন ভাব দেখাচ্ছে মনে হয় আমাকে আজ প্রথম দেখছো।
এভাবে কোলে বসিয়ে গাল টেনে দেওয়াটা একটু অপমান জনক মনে হলো আমার কাছে। সাধারণত ছোট গুলুমুলু বাচ্চাদের আমরা এভাবে কোলে নিয়ে গাল টেনে দিয়ে থাকি। সেই হিসেবে সে এখন আমায় বাচ্চাদের সাথে মিলিয়ে ফেললো।
আমি গম্ভির কন্ঠে তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আমার একটা ফোন লাগবে।
আমার কথায় একটু ভ্রু কুচকালো সে। হয়তো এতো গম্ভির ভাবে এমন একটা কথা বলবো সে ভাবতে পারেনি। সে আমার দিয়ে চেয়ে বললো,
– হটাৎ ফোন কেন?
আমি এখনও গম্ভির ভাবে বললাম,
– আপনি দিবেন কিনা ওটা বলেন। আমি চাইলে বাবার থেকে নিতে পারতাম, বাট স্বামী থাকতে বাবার কাছে চাইতে বিবেকে বাধছিলো তাই চাইনি।
– আচ্ছা, ঢাকায় পিরে ওখান থেকে একটা আইফোন নিয়ে দিবো, হ্যাপি?
– আইফোন লাগবে না। ২০-২৫ হাজারে একটা ফোন হলেই হবে। আর তা এখনই লাগবে।
– এখনই, মানে আজকেই?
– আজকে না, এই মুহুর্তেই লাগবে আমার।
,
,
বিকেলে ডাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো আমরা। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে বসে আছি আমি। আমার পাশে সাবিহা। আমাদের বিদায় দিয়ে তারপর বাসায় যাবে। আমি তার পাশে বসে বললাম,
– আমাকে ভুলে যাবি?
– এর আগেও তো গেলি, তখন কি ভুলে গেছি?
আমি কিছু বললাম না। চুপচাপ ফোনের বক্সটা তার দিকে এগিয়ে দিলাম। যেটা আনার জন্য রিদ ভাইকে বলেছিলাম। উপরে গিপ্ট পেপার মোড়ানো। সে আমায় বললো,
– কি এটা?
– বাড়িতে গিয়ে খুলবি। আর শুন এবার তো অনেক দিনের জন্য চলে যাচ্ছি,, যোগাযোগ রাখিস।
– আচ্ছা মাঝে মাঝে বাবা বাসায় থাকলে তার ফোন থেকে কথা বলবো তোর সাথে।
আমি একটু হেসে বললাম,
– আচ্ছা।
সে আবার তৎক্ষনাৎ আমার দিকে চেয়ে বললো,
– আবার কবে দেখা হবে আমাদের?
– সৃষ্টি কর্তা যখন চাইবে। ওহ্ হ্যা, তোর বিয়েতে আসবো। সাব্বির ভাই একটা চাকরি পেলেই বিয়েটা করে নিবি। তখন দেখবি আমি আবার তোর সামনে।
সাবিহা মাথা নিচু করে বললো,
– আমি বুঝতে পারছি না বাবা আমাদের সম্পর্ক টা মেনে নিবে কি না। তাকে না পেলে আমিও বা*চবো না। ম*রে গিয়ে সবাইকে মুক্ত করে দিবো।
আমার একটু রাগ হলো। তাকে বললাম,
– ঠা*সিয়ে একটা চ**র খা*বি এমন আরেক বার বললে। পাওয়া না পাওয়ার সাথে বা*চা ম*রার কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহর সিদ্ধান্তই উত্তম সিদ্ধান্ত।
,
,
ওই দিন এই বারিতে আসার সময় মামা মামি বিদায় দিয়েছিলো বাবা মায়ের সাথে এসেছি। আর আজ বাবা মা বিদায় দিচ্ছে, মামা মামির সাথে আবার ওই বাড়িতে চলে যাচ্ছি। পার্থক্যটা শুধু আমি আর আমার গন্তব্য।
বাবা মায়ের থেকে দুরে চলে গেলে সব সময় আমার চোখ ভিজে উঠতো। কিন্তু আজ আমার একটু কাঁন্না আসছে না। একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো দাড়িয়ে আছি আমি। রিদ ভাই তাড়া দিচ্ছে বার বার গাড়িতে উঠার জন্য। সে নিজেও হয়তো এখন এই জেলার মাটির উপর থাকতে বিরক্ত বোধ করছে। আমি বাবা মায়ের দিকে চেয়ে বললাম,
– আসি,, তোমরা নিজের যত্ন নিও।
আর সাবিহার দিকে চেয়ে বললাম,
– তোর জন্য আমি নতুন জীবন ফিরে ফেলাম। তোর মতো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। নিজের খেয়াল রাখিস আর সাবধানে থাকিস। আবার দেখা হবে, আসি।

গাড়িতে উঠেই চমকে গেলাম আমি। কারণ গাড়ির সামনে থাকা রাতের সে মাস্ক পরা লোকটা। যে আমাকে আর সাবিহাকে বাড়ি পৌছে দিয়েছিলো। এবার বুজলাম, তাকেও হয়তো রিদ ভাই পাঠিয়েছিলো। ওকে কিছু না বলে রিদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভির ভাবে বললাম,
– ও কি সব সময় এভাবে মাস্ক আর হুডি পরে থাকে?
– হুম, তার নাম নির্জন। তার চেহারা আমি আর বাবা ছারা কেও দেখতে পাই নি। তবে সেই অনেক আগে একবার দেখেছিলাম। এর পর আর দেখা হয় নি। আমি তো হসপিটালে থাকি সারা দিন। আর নির্জন থাকে বাবার সাথে। বাবার অনুপস্থিতিতে সেই সব সামলায়। বলতে পারো ও একেবারে আমার ভাইয়ের মতো। বাবাও নিজের ছেলের মতো ভাবে তাকে।
আমি কিচু না বলে চুপচাপ বসে রইলাম। একটা মানুষ কাওকে চেহারা না দেখানোর মাঝে কি কারণ থাকতে পারে? আমরা মানব জাতির সব সময় নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আগ্রহটা একটু বেশি থাকে। আর আমার আগ্রহটা জেগে উঠলো তার চেহারা টা দেখার।

এর পর সামনে থেকে এগিয়ে এসে গাড়িতে উঠে বসলো নির্জন। আমার হুট করে একটা কথা মনে পরলো। গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলাম। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস ফেলে এসেছি।
সবাই হা করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি ওদিকে না তাকিয়ে সোজা রুমের ভেতর গিয়ে খাতার ভেতর থেকে পেজ টা ছি*ড়ে নিলাম। তার পর তা ভাজ করে বেগে ঢুকিয়ে নিলাম। সময় হলে রিদ ভাইকে দিবো তা। এটা খুব যত্ন করে বানানো।
,
,
আমাদের আসতে আসতে সন্ধা পেরিয়ে রাত ঘনিয়ে এলো। আমাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো নির্জন।
বাসায় এসে রুমে গিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন শুয়ে রইলাম। এর পর চোখ গেলো দেওয়ালের মাঝে। আমার ছবি গুলো সেই আগের মতোই রয়েছে। কত হাসি খুশি পিক গুলো। যেই হাসি গুলো এই মুহুর্তে একধমই বেমানান লাগছে আমার কাছে। তাই চুপচাও ওগুলো দেওয়াল থেকে আলাদা করে ভাজ করে এক জায়গায় রেখে দিলাম। শুধু একটা ছবি খুললাম না। আর তা হলো আমাদের ছোট বেলার ছবি টা। ছবি তে রিদ ভাইয়ের গলা জড়িয়ে কাধে চড়ে খেলা করছিলাম আমি। ছবির দিকে আর নিজের দিকে তাকালে পার্থক্য টা বুঝা যায়। কত বড় হয়ে গেছি আমরা।
,
,
আরশি তখন ঘুমিয়ে আছে। রুমে প্রবেশ করে কিছুক্ষন দেওয়ালের দিকে চোখ বুলালো রিদ। রুমটা খুব ফাকা ফাকা লাগছে। সে কিছু না বলে চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পরলো। কারণ সে বুজতেই পারছে এটা আরশির কাজ। যাই হোক এটা কোনো বিষয় না, কারণ মেয়েটার মন মেজাজ ভালো নেই এখন তাই হয়তো এমন টা করেছে। এই ব্যাপারে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও তার কাছে বিরক্তিকর মনে হবে তা।

মাঝ রাতে হুট করে ঘুম ভেঙে গেলো রিদের। পাশে তাকিয়ে দেখে আরশি নেই। বেলকনি থেকে কারো গুন গুন কান্নার আওয়াজ ভেষে আসে। বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো রিদ। দেখে বেলকনির এক কোনে বসে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে কাঁন্না করছে আরশি। বুকটা আৎকে উঠলো তার। হুট করে আরশিকে এমন কাঁদতে দেখে খুব চাপা কষ্ট জেগে উঠলো বুকের ভেতর।

To be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here