#ছদ্মবেশ,পর্ব ৪৭,৪৮
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৪৭
– ঐ কাজের জন্য আমি স্যরি। যদিও আমার দৃষ্টিতে আমি কোনো ভুল করিনি। তবুও আপনার গোমড়া মুখ টা আমার একদমই ভালো লাগে না। আ’ম রিয়েলি স্যরি৷
মাথাটা নিচু করে কথাটা বললো আরোহি। রাজ এবার আরোহির দিকে তাকিয়ে বলে,
– কেন করেছিলে এমন টা?
আরোহি কোনো সঙ্কোচ ছারা বলে,
– আপনাকে ভালো লাগে দেখেই এঁকেছি আমি। নয়তো এর আগে কোনো ছেলের ছবি অঙ্কন করিনি। আর যতদুর জানি কাউকে ভালো লাগা টা কোনো অপরাধ বা দোষের কিছু না। একটা মানুষ হিসেবে আরেকটা মানুষকে ভালো লাগতেই পারে। যাই হোক, আ’ম স্যরি।
রাজ আরোহির দিকে চেয়ে বলে,
– এখন এসব ভাবার বয়স না। এখন তোমার পড়ালেখার বয়স। কয়দিন পর এইচ’এস’সি দিবে। এসব মাথায় থাকলে কি ভালো রেজাল্ট করতে পারবে তুমি?
আরোহি স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– জানি আমি সেটা। আমি এতোটাও ছোট নই। যাই হোক, এখন থেকে আপনার অপছন্দ হয় এমন কাজ আর কখনো করবো না।
রাজ বলে,
– গুড, মনে থাকে যেন। পড়া ছারা অন্য কোনো টপিক নিয়ে কোনো আলোচনা করবে না।
আরোহি বিষণ্ন মনে মাথা নাড়িয়ে বলে,
– আচ্ছা।
,
,
ওদিকে সন্ধার পর বাসা থেকে বের হয় রুশান। যাওয়ার পথে রিমার বাসার সামনে থেমে রিমার কাছে যায় বিদায় নিতে।
দেখে রিমা পড়ছে। রুশান মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
– চলে যাচ্ছি আমি। এক্সাম টা ভালো করে দিবি বুঝলি? তোর এক্সাম শেষ হওয়ার পর দেখি সুজুগ হলে আসবো।
রিমা তার দিকে চেয়ে বলে,
– সুজুগ হলে আসবে। কেন নিজে কি সুজুগ বের করে আসা যায় না?
রুশান এবার একটু ভ্রু-কুচকে বলে,
– সব জায়গায় একটা না একটা দোষ খুজে বেড়াস আমার। বললাম তো সুজুগ বের করে আসবো। এখন আসি।
রিমা বলে,
– আমার ব্রেন টা না খুলছে না। মানে কেমন যেন লক হয়ে আছে। এমনটা একবার একটা মুভিতে দেখছিলাম। মেয়েটা পড়তে বসলে এমন সমস্যা দেখা দিতো। এর পর ছেলেটা এসে মেয়েটার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু দিলে মেয়েটা ব্রেন খুলে যেত আবার। তবে মুভিটা অনেক সুন্দর ছিলো।
রুশান ভেতর ভেতর হাসতে চাইলেও চুপচাপ রিমার দিকে চেয়ে আছে।
তারপর সেও বলে,
– তুই মুভির কথা মনে করালি তাই মনে হলো। ঐ দিন আমিও এমন একটা মুভি দেখেছিলাম। মেয়েটার এক্সাম চলছিলো। তাই মাথায় অনেক পড়ার চাপ ছিলো। তখন ছেলেটাও অনেক দিন পর মেয়েটার কাছে এসেছিলো। আর আবেগে মেয়েটার কপালে একটা চুমু দিয়েছিলো। এরপর মেয়েটার পড়ার চাপ ও ছেলেটার চুমুর মিশ্রনে মেয়েটার ব্রেনে একটা বিশাক্ত প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিলো। যার কারণে শেষমেশ বেচারি মেয়েটা পাগলই হয়ে গেলো।
রিমা চোখ-মুখ কুচকে কথাটা ঝেড়ে ফেলে দেওয়ার মতো করে বললো,
– যাহ্,,,
রুশানও সিরিয়াস লুক নিয়ে বলে,
– হুম এমনটাই হয়েছিলো। এখন চুপচাপ পড়তে থাক। ঠিকঠাক ভাবে এক্সাম দিয়ে ভালো রেজাল্ট করতে পারলে, এরপর তোর মুভির বাকি কাহিনিটা শুনবো। এখন আসি বায়। ভালো থাকিস। আর নিজের যত্ন নিবি। আমি কিন্তু আন্টি ও রামিম ভাইয়ের কাছে ফোন দিয়ে খোজ নিবো, ঠিকঠাক ভাবে খাচ্ছিস, ঘুমাচ্ছি কি না।
,
,
রাতে বাসায় ফেরার পর দেখে সবাই কোথাও যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনকি ফরিদা আন্টিও।
রাজকে দেখে ফরিদা আন্টি বলে,
– এসেছো? তোমার জন্যই বসে ছিলাম। আজ এতো দেড়ি করে ফিরলে যে?
সবার কাজে রাজ কিছুটা অবাক হলেও ফরিদা আন্টির কথায় বলে,
– একটু কাজ ছিলো তাই লেট হয়েছে। বাট এতো রাতে আপনারা সবাই কোথায় যাচ্ছেন?
পাশ থেকে তুষার বলে,
– নিবিড়ের হবু শশুড় বাড়ি যাচ্ছি। তোমাকে ছারা বরপক্ষ মিলছে না। তাই বসে আছি এতোক্ষন।
কিছু না বুঝে একটু ভ্রু-কুচকালো রাজ। ফরিদা আন্টি হেসে বলে,
– আরে সে মজা করছে। নীলার বাবা ওদের বাসায় ডিনার করার জন্য দাওয়াত দিয়েছে সবাইকে। তাই সেখানে যাচ্ছি। রুশান তো নেই। আমরা পাঁচজনই যাচ্ছি।
রাজ এবার বিষয়টা বুঝতে পেরে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে আসলো। এদিকে ফলমুল ও মিষ্টির পেকেট গুলো তুষারের হাতে চাপিয়ে দিয়েছে। নিলয়তো নেওয়ার ভয়ে ফরিদা আন্টির সাথে আগে আগে হাটা ধরেছে। আর নিবিড়ও ফোন কানে ধরে আছে। কথা বলছে নাকি সবাইকে দেখাচ্ছে তা তুষার বুজতে পারছে না।
নিবিড়ি সামনে গিয়ে বলে,
– দেখ ভাই তোর হবু শশুর বাড়ি যাচ্ছি এগুলোর মাঝে কিছুটা তুই নে। সব গুলো নিলে আমার হাত ব্যাথা হয়ে যাবে।
কিন্তু নিবিড় তাকে কোনো পাত্তা না দিয়ে ফোন কানে ধরা অবস্থায় ওদের সাথে হাটা ধরে। মনে মনে একটু বিরক্ত হলো তুষার।
কি আশ্চর্য, সবাই তাকে গাধা পেয়েছে নাকি। যে গাধার পিঠে ধরিয়ে দিলাম। আর সে সেগুলো বয়েই চললো।
এই বাড়িতে গিয়ে সব নীলার হাতে দিয়ে সোফায় বসে পড়ে তুষার। নীলাকে ইশারায় বলে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসতে।
নীলার বাবা ফরিদা আন্টির দিকে চেয়ে বলে,
– আমরা তো প্রতিবেশি। দুরের কেও না। অজথা এতকিছু আনার কি দরকার ছিলো?
ফরিদা আন্টি হেসে বলে,
– কোথায় এতকিছু? সামান্য কিছু আনলাম মেয়েটার জন্য।
নীলার বাবা একটু রসিকতা করতে বলে,
– ওহ্ তার মানে শুধু মেয়েটার জন্য এনেছেন। আমার জন্য না। তাই তো?
ফরিদা আন্টিও হেসে বলে,
– আপনি খুব রসিক মানুষ।
তাদের মত কথা বলছে তারা। তুষার বসে আছে চুপচাপ। নীলার একটা বোন বা কাজিন থাকলেও একটু গল্প করা যেত। নীলাকে পানির কথা বলেছে, তার এখনো খবর নেই।
তাই উঠে নীলার কাছে গেলে দেখে নীলা শরবত বানাচ্ছে। তুষার তা দেখে বলে,
– এখন আবার শরবতের দরকার কি? চাইছিলাম একটু পানি। এরপর না হয় ডিরেক্ট খাবার খেয়ে নিতাম।
নীলা বলে,
– পানির চেয়েও তো শরবত আরো ভালো।
তুষার এবার নীলার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করে,
– আচ্ছা তোমার কোনো কাজিন সমীতি নেই। মানে ছেলে মেয়ে মিলিয়ে। মেয়ে গুলো একটু সুন্দর সুন্দর হবে। এমন কোনো কাজিন সমীতি নেই?
নীলা একটু ভ্রু-কুচকে বলে,
– সমীতি?
পেছন থেকে নিবিড় বলে,
– তুষার, তুই কি জীবনে ভালো হবি না? ওর কোনো কাজিন নেই। আর তুই এখানে কি করছিস?
তুষার হেসে বলে,
– এমনি ভাবির সাথে গল্প করছি।
নিবিড় একটু হেসে তুষারের কানের কাছে বিরবির করে বলে,
– গল্প করতে এসে কাজিন খুজছিস। তুই তো মান সম্বানকিছু রাখবি না। এক কাজ কর, তোকে ফরিদা আন্টি ডাকছে। গিয়ে দেখ কি বলে।
,
,
এদিকে রুশান বাসায় এসে দেখে বাইরে থেকে তালা দেওয়া। সবাই কোথায় গেলো? রুশান ফোন বের করে কল দিতে গেলে দেখে সবাই গেট দিয়ে নিজেদের মাঝে হাসাহাসি করতে করতে ভেতরে ঢুকছে।
রুশান অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
– কোথায় গিয়েছিলে সবাই?
ফরিদা আন্টি অবাক হয়ে বলে,
– কখন এলে তুমি? আসার সময় তো ফোনও দিলে না।
রুশান বলে,
– তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আর ফোন দেওয়া হয়নি। ভেবেছি একেবারে এসেই কথা বলবো। বাট আপনারা দল বেধে কোথায় গিয়েছিলেন।
– নীলাদের বাসায় দাওয়াত ছিলো। তুমি আসবে জানলে তো তোমার জন্য অপেক্ষা করতাম।
রুশান একটু মুচকি হেসে বলে,
– সমস্যা নেই আন্টি আমি বাইরে থেকে খেয়ে নিয়েছি। এখন ভেতরে চলুন।
,
,
বিকেলে বাড়ির সামনে একটা দোকানের সামনে চা হাতে আড্ডা দিচ্ছিলো তারা পাঁচ বন্ধু। এমন সময় বাইক নিয়ে ঐ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো সেদিন কলেজে ফাপর দেওয়া অরিণের সেই কাজিন টা।
কিন্তু আজ সে বাইক থামিয়ে ফিরে আবার উল্টো দিকে চলে গেলো। সামনেও আগালো না। কোনো ঝামেলাও করলো না।
নিবিড় ও তুষার একটু অবাক হলো। ঐ দিন ফাপর দিয়ে এরপর কোনো খোজ ছিলো না আর আজ সামনে পড়েও বিড়ালের মতো আবার চলে যাচ্ছে। কাহিনি টা কি?
সেদিন ফাপর দেওয়ার পর কি হয়েছিলো?
একটা ক্লাস শেষে নিলয় কলেজ থেকে বেড়িয়ে আসে।
কলেজের এরিয়ার বাইরে এসে দেখে ছেলে গুলো বসে আছে সেখানে। নিলয়কে দেখে উঠে দাড়ালো ছেলে গুলো। তাদের অঙ্গিভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে এখনি নিলয়কে পিশে ফেলবে তারা।
এমন সময় একটা কার এসে নিলয়ের সামনে দাড়ালো। ওখান থেকে একটা ছেলে বেড় হলে নিলয় ছেলেটার কোমর থেকে পিস্তলটা নিয়ে এগিয়ে গিয়ে অরিণের কাজিনটার কলার চেপে ধরে বলে,
– গেটের বাইরে আসলে কি যেন করবি বলছিলি? এখন কর। আমার সামনে ভাই গিরি মারাস না? সালা মাদার**। চিনস আমারে? ভাই গিরি একবারে রোল করে পেছন দিয়ে ভ’রে দিবো।
ছেলেটা হা করে চেয়ে আছে নিলয়ের দিকে। নিলয় আবার বলে,
– এর পর মানুষ চিনে কথা বলবি। শুধু অরিনের কাজিন দেখে বেচে গেলি আজ। আজ যা করেছিস অনেক করেছিস। এখন আমি উল্টাপাল্টা কিছু করার আগে এখান থেকে কে’টে পর। নাহলে,,,,
ছেলেটা এবার নিজে ছাড়িয়ে বাইকে উঠে নিলয়ের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে চলে গেলো সেখান থেকে।
এরপর আর ছেলেটাকে দেখা যায়নি। আজ অনেকদিন পর সামনে পড়লো তাও বাইক ঘুড়িয়ে চলে গেলো উল্টো পথে। নিবিড় একটু অবাক হয়ে বলে,
– ঐ দিন কত বড় বড় ফাপর দিচ্ছিলো। এখন এতো ভদ্র হয়ে গেলো কি করে?
,
,
আজ শুক্রবার। নীলা ও নীলার বাবা এসেছে এই বাসায়। সেদিন আসার সময় তাদেরকেও দাওয়াত দিয়ে এসেছিলো। শুক্রবারে ছুটির দিন দেখে শুক্রবারের কথা বলেই দাওয়াত গ্রহন করলো।
দুপুরে খাওয়া শেষে আড্ডা দিচ্ছিলো সবাই মিলে। ফরিদা আন্টি বললো, চা খেয়ে একবারে যেতে। জোরাজোরিতে তারাও আর আপত্তি করেনি।
ড্রয়িং রুমে সবাই উপস্থিত ছিলো। তখন কলিং বেল টা বেজে উঠে। ফরিদা আন্টি চায়ের ট্রে টা সবার সামনে রেখে এগিয়ে গেলো দরজা খুলতে।
দরজা খুলে একটা অপরিচিত মেয়েকে দেখে অবাক হলো সে। মেয়েটা নিবিড়ের কথা জিজ্ঞেস করে ভেতরে প্রবেশ করলো।
হটাৎ নিরাকে দেখে কিছুটা অবাক হলো নিবিড়। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে বাসায় চলে আসলো।
ভেতরে গিয়ে নিবিড়ের পাশে নীলাকে বসে থাকতে দেখে একটা তাচ্ছিলের হাসি দেয় নিরা। নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– সব তো দেখি ঠিকঠাকই চলছে। তো মি. নিবিড়, আমার জীবনের সর্বনাশ করে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখাটা কি ঠিক করলে বলো।
পাশ থেকে ফরিদা আন্টি রেগে বলে,
– এই মেয়ে কে তুমি? এমন বেয়াদবের মত আচরণ করছো কেন? বাড়িতে গেষ্ট এসেছে দেখতে পাচ্ছো না?
নিরা একটু হেসে বলে,
– আমি কে সেটা নিবিড়কেই জিজ্ঞেস করুন। আমি তার অনাগত সন্তানের মা।
উপস্থিত সবার চোখ এবার নিবিড়ের দিকে পড়লো। নিবিড়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো। কি বলছে এই মেয়ে? এই মেয়ের সাথে নিবিড়ের রিলেশন ছিলো মাত্রই ফোনে কথা বলা আর মাঝে মাঝে দেখা করা পর্যন্ত। কখনো বাজে ভাবে কাউকে স্পর্শও করেনি সে। তাহলে নিরা এমন অদ্ভুত কথা কিভাবে বলছে?
নিরা এবার সবার দিকে চেয়ে বলে,
– কারো বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো? এই নিন DNA রিপোর্ট।
বলেই ফরিদা আন্টির দিকে রিপোর্ট টা এগিয়ে দেয় নিরা। ফরিদা আন্টি রিপোর্ট টা চেয়ে এবার নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে খুব রাগি দৃষ্টিতে।
To be continue…………
#ছদ্মবেশ (পর্ব ৪৮)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
নিরা এবার সবার দিকে চেয়ে বলে,
– কারো বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো? এই নিন DNA রিপোর্ট।
বলেই ফরিদা আন্টির দিকে রিপোর্ট টা এগিয়ে দেয় নিরা। ফরিদা আন্টি রিপোর্ট টা চেয়ে এবার নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে খুব রাগি দৃষ্টিতে।
রিপোর্টে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে নিরার অনাগত সন্তানের বাবা নিবিড়। উপস্থিত সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছ অবাক ভঙ্গিতে। নিবিড় নিজেও বিষয়টা বুঝে উঠতে পারছে না।
পাশ থেকে নীলা নিবিড়ের এক হাতের বাহু ধরে ঝাকি দিয়ে বলে,
– এসব কি নিবিড়?
এতোক্ষন বেক্কেল হয়ে থাকা নিবিরের হুশ ফিরে আসে নীলার ঝাকুনিতে। নিরার দিকে চেয়ে বলে,
– তোমার সাথে আমার রিলেশন ছিলো এটা সত্যি। ব্রেকআপও হয়েছে। কিন্তু তুমি যে এমন একটা নাটক সাজিয়ে সবার সামনে আমাকে এতোটা ছোট করবে তা কখনো কল্পনাও করিনি আমি। বিষয়টা লজ্জাজনক হলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি আমাদের মাঝে এমন কিছুই হয়নি যে তোমার বাচ্চার বাবা হতে হবে আমাকে।
নিরা কিছু বলার আগে ফরিদা আন্টি এতোক্ষণ জমিয়ে রাখা রাগ নিয়ে নিবিড়ের গালে একটা চর বসিয়ে দেয়।
তারপর রিপোর্ট টা সামনে ধরে বলে,
– তাহলে এটা কি?
এদিকে নীলার বাবা নীলার হাত ধরে সোজা বাইরের দিকে হাটা ধরেছে। পেছন ফিরে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় বাবার সাথে বাইরে চলে গেলো নীলা। সব কিছু তো ঠিকঠাকই ছিলো। তাহলে নতুন করে এতো ঝামেলা তৈরি হওয়া কি খুব বেশি জরুরি ছিলো?
ফরিদা আন্টি গম্ভির মুখে বলে,
– তোমার থেকে এমনটা আশা করিনি আমি। নিজের ছেলের মতো ভাবতাম তোমায়। বাট তুমি যে এমন জঘন্য কাজ করবে তা আমার কল্পনাতেই আসেনি। আর এমনটা করেই ফেলেছো তো নীলাকে তোমার সাথে জড়ানো টা কি প্রয়োজন ছিলো?
নিবিড় অস্থির হয়ে সবাইকে বুঝাতে চাইছে সে এসবের কিছুই জানেনা। বাট নীলা সব রিপোর্ট সাথে নিয়েই এসেছে। এখন নিবিড়ের মুখের কথা কারোরই বিশ্বাস যোগ্য নয়।
এদিকে তুষার এক মনে দুই হাত মাথায় দিয়ে জ্বিভ কামড়ে দাড়িয়ে আছে। সবার নিরবতা দেখে নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– ভাই আমাকে তো কখনো কিছু বললি না। এতোই পর ভাবির আমায়?
নিবিড় কিছু বলার আগে নিরা কাঁদু কাঁদু স্বরে বলে,
– আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে এসব শুনার পর। এখন নিবিড় মুখ ফিরিয়ে নিলে আমার আত্মহত্যা করা ছারা কোনো উপায় থাকবে না আন্টি।
ফরিদা আন্টি কিছু না বলে চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসলো। রুশান রাজ দুজনই এক পাশে দাড়িয়ে আছে। নিলয় এতোক্ষন চেয়ে থেকে এখন বলে,
– তোকে আগেই সাবধান করেছিলাম। যে শেষে কোনো না কোনো ঝামেলায় পরবি। এখন ঠেলা সামলা।
বলেই সেখান থেকে চলে গেলো নিবিড়।
এর মাঝে নীলা হুট করে নিবিড়ের পা চেপে ধরে বলে,
– প্লিজ তুমি আর মিথ্যা বলো না। আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিও না তুমি। নাহলে আমার মরন ছারা আর কোনো রাস্তা থাকবে না।
ফরিদা আন্টি কপালে হাত রেখে রুশানের দিকে চেয়ে বলে,
– ওদের নাটক বন্ধ করতে বলো। আর দুজনকেই আমার চোখের সামনে থেকে সরাও। ওদের নোংড়া মুখও আমার দেখে ভালো লাগছে না।
রুশান এবার পরিস্থিতি শান্ত করতে বলে,
– নীলাকে নিয়ে রুমে যা তুই। কথায় কথা বাড়ে।
নিবিড় হতাশার মতো করে বলে,
– যেখানে আমি কিছুই যানি না সেখানে আমি কি করে অন্য একটা মেয়ের দায়িত্ব নিতে যাবো?
রুশান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
– তোদের মাঝে কে সত্য কে মিথ্যা ওটা নিয়ে এখন সবাই কনফিউজড। এখন চুপচাপ ভেতরে যা, পরেরটা পরে দেখা যাবে।
– ছি ছি ছি! আমার মেয়ে হয়ে এমন একটা ছেলেকে পছন্দ করেছিলি তুই? লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার।
বাবার এমন কথার কোনো উত্তর খুজে পেলো না নীলা। সে নিজেই তো এখন নিজের ভেতরের প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুজে পাচ্ছে না।
নীলার বাবা কড়া ভাবে বলে দেয়, যে আজ থেকে যেন ঐ ছেলের আশে পাশেও নীলা না যায়।
নীলা কিছুই বলছে না আজ। সে নিজেই আজ অনেক বড় সারপ্রাইজড হয়েছে।
,
,
ওদিকে রুশানের কয়েকটা ছবি সামনে নিয়ে বসে আছে পিন্টু। যেগুলো দুর থেকে লুকিয়ে ক্যামরা বন্ধি করেছিলো সে।
রাতের বেলায় সবাই বসে আছে একসাথে। সেই মুহুর্তে নিলয়ের ফোনে মেসেজের শব্দ আসে। রাজ পাশে তাকিয়ে দেখে ফোনের স্কিনে লেখা,
Prince Pintu sent a photo.
এর মাঝে নিলয় ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে মেসেজটা ফোনের স্কিন থেকে সরিয়ে আবার আগের ধ্যান এ বসে সে।
একটু পর উঠে বেলকনিতে চলে যায় সে। মেসেজটা অন করে দেখে রুশানের একটা ছবি পাঠিয়েছে পিন্টু।
নিলয় অবাক হলো কিছুটা। রুশানের ব্যাপারে পিন্টু কিভাবে জানলো?
যাই হোক এখন এসব প্রশ্ন মাথায় আনলে চলবে না। ঠান্ডা মাথায় বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে হবে। এই পিক আর তথ্য পিন্টুর থেকে নির্জনের কাছে কোনো ভাবে পৌছে গেলে নিলয়কেই বলবে রুশানকে পেলে দিতে। বন্ধুদের মাঝে তৈরি হবে অনেক ঝামেলা। যেটা সে কখনোই চায় না।
তাই তারাতারি ছাদে চলে গিয়ে পিন্টুকে ফোন দেয় নিলয়। না জানার মতো করে প্রশ্ন করে,
– এটা কার ছবি পাঠিয়েছো?
ওপাশ থেকে পিন্টু বলে,
– ভাই এই সেই ছেলে যে আমাদের এতগুলো লোককে মে’রেছে।
যদিও নিলয় জানে তবুও বললো,
– তুমি কি শিউর?
পিন্টু বলে,
– ভাই আমি পুরোপুরি শিউর হয়ে বলছি। অনেকদিন ধরে এই বিষয়টা নিয়ে পরে ছিলাম শুধু কোন লোক এটা খুজে বের করতে। ফাইনালি বের করেও নিয়েছি।
নিলয় সিরিয়াস ভাবে বলে,
– এই ব্যাপারে আর কে কে জানে?
পিন্টু বলে,
– আপনি ছারা কাউকে বলিনি এখনো।
নিলয় একটা স্বস্থির নিশ্বাস ছেড়ে বলে,
– কাউকে বলার দরকার নেই। এতে ঝামেলা বাড়বে আরো। এসব ছোট খাটো বিষয় গুলো আমরাই সামলে নিবো।
পিন্টু একটু অমত করে বলে,
– ভাই আমার কাছে তো একটা ছোটখাটো মনে হচ্ছে না। বসকে এই ব্যাপারে জানালে রাতের মাঝেই ঐ ছেলেকে শেষ করে দিবে। এমন পথের কাটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরিয়ে পেলা ভালো।
নিলয় এবার রাগি গলায় বলে,
– আমি কি তোমার সাথে কথা বলছি নাকি ফাজলামি করছি? ভালো খারাপ বোঝার মতো যথেষ্ট জ্ঞান আমার মাঝে আছে। তোমার থেকে নিতে হবে না সেটা। তোমাকে যেটা বলেছি সেটাই করবে শুধু। আমার আগে আগে হাটার চেষ্টা করবে না।
কথাটা গায়ে লাগলো পিন্টুর। তাই আর কিছু না বলে শান্ত ভাবে বলে,
– আচ্ছা ঠিক আছে।
,
,
নিবিড়ের রুমে শুয়ে আছে নিরা। আর অন্য রুমে বাকিদের সাথে বসে আছে নিবিড়। নিলয়ও ছাদ থেকে ফিরে সবার সাথে যোগ তুষার গালে হাত দিয়ে পড়শ্ন করে,
– মামা কেমনে করলি এটা?
তুষারের কথায় নিবিড় সিরিয়াস লুক নিয়ে বলে,
– আমি বিপদে আছি আর তোর কাছে সব ফান মনে হচ্ছে?
পাশ থেকে রুশান বলে,
– আচ্ছা তোদের কাহিনিটা আমাকে খুলে বলতো।
নিবিড় বলতে শুরু করে,
– হুট করে ওর সাথে পরিচয় হয়েছিলো। এরপর চ্যাটিং ফোনালাপ এসব করে সময় কাটাতাম। তিন বার দেখা করে টাকা নিয়েছিলাম ২৬ হাজার। এর চেয়ে বেশি কিছু না। এর পর তো এক রাতে সবার সাথেই ব্রেকআপ হয়ে গেলো। ভাই প্রয়োজনে ওর সব টাকা ফেরত দিবো। আরো চার হাজার বাড়িয়ে ৩০ হাজার ফেরত দিবো। তবুও আমার আর নীলার জীবন থেকে সরে যেতে বল প্লিজ।
পাশ থেকে নিলয় বলে,
-এখন বললেই কি সব হবে? মেয়েটা সব প্রমান নিয়েই এসেছে। এখন তোর মুখের কথা কেউই বিশ্বাস করবে না। আর মেয়েটাকে তার বাসা থেকেও বের করে দিয়েছে। এখন তুইও ফিরিয়ে দিলে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। মেয়েটা আত্মহত্যাও করতে পারে, অথবা এসব রিপোর্ট নিয়ে তোর বিরোদ্ধে মামলাও করতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো মেয়েটার জীবনটা একেবারে নষ্টের পথে চলে যাবে। তাছারা তুই নিজেও কি নিজের সন্তানকে ফেলে দিতে পারবি? হয়তো আমাদের সামনে লজ্জায় কিছু বলছিস না। কিন্তু এখন সব ফাস হয়েই গেছে। তোর এসব লোকলজ্জা কোনো কাজে আসবে না।
নিবিড় আবারও হতাশার ভঙ্গিতে বলে,
– ভাই তোরা বন্ধু হয়ে আমাকে না বুঝলে আমি কার কাছে এসব বোঝাতে যাবো বল।
পাশ থেকে তুষার আবার বলে উঠে,
– আমি ভাবছি হাওয়ার উপর একটা মেয়ে কিভাবে প্র্যাগনেট হয়? তোর কোনো অদৃশ্য শক্তি আছে নাকি?
নিবিড়ের এমনিতেই মাথা গরম হয়ে আছে তার উপর তুষারের এমন ফাজলামি দেখে রেগে বলে,
– তোরে সালা এবার জু’তা খুলে মা’রমু।
সেই সময়টায় নিরা সেখানে এসে নিবিড়কে ডাক দিলো। নিবিড় উঠে নিরাকে পাশের রুমে নিয়ে যায়। এমনিতেই আজ মাথা গরম হয়ে আছে প্রচুর। রাগের মাথায় নিরার চুলের মুঠি চেপে ধরে বলে,
– কোন উদ্দেশ্যে আবার আমার লাইফে আসলি তুই? আমার আর নীলার মাঝে কেন ঢুকলি তুই? ভেবেছি, আগে যাই করি ভবিষ্যৎ জীবনটা সবার প্রিয় হয়ে কাটাবো। সব ঠিকটাকই ছিলো? এর মাঝে কেন তুই এমন একটা নোংরা অপবাদ তুলে আমায় সবার কাছে খারাপ ও অপ্রিয় করে তুললি?
নিরা অসহায়ের মতো করে বলে,
– এটা তোমারই সন্তান নিবিড়। বিশ্বাস করো আমি একটুও মিথ্যা বলছি না।
নিবিড় বিরক্ত হলে নিরা আবার বলে,
– আচ্ছা তুমিই বলো এসব যদি মিথ্যাই হয়, তাহলে আমার প্রেগনেন্সি রিপোর্ট ও DNA রিপোর্ট কি মিথ্যা? দেখো নিবিড় তুমি এখন অস্বীকার করলে কেউই বিশ্বাস করবে না। আমার কাছে সব প্রমান আছে। আর তুমি অস্বীকার করলেও আমি সুইসাইড করবো। আর সুইসাইড নোটে সবটা লিখে রেখে যাবো। সাথে এই রিপোর্ট গুলোও থাকবে।
নিবিড় এবার সন্দেহজনক লুক নিয়ে বলে,
– তুমি আসলে চাও টা কি?
নিরা সহজ ভাবেই বলে,
– আমি চাই আমাদের সন্তান আমাদের হাত ধরেই পৃথিবীতে আসুক। আর আমাদের সাথেই বড় হোক একসাথে।
নিবিড় আর কিছু না বলে বিছানায় বসে রইলো স্থির হয়ে। কি হচ্ছে এসব? সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
,
,
ফরিদা আন্টি খুব কঠোর ভাবে বলে দিয়েছে। এদের দুজনের মুখও দেখতে চায়না সে। রাত পার হয়ে সকাল হলেই নিজের রাস্তা নিজে খুজে নিতে হবে।
ফরিদা আন্টির এমন কঠোর ভাব এর আগে কারো চখে পরেনি। তাই বাকিরা বিষয়টা বুঝালেও তিনি কিছু শুনতে চায়না এই বিষয়ে।
পরদিন নিবিড় না চাইলেও নিরার সাথে বেড়িয়ে যাচ্ছে এই বাড়ি থেকে। কিই বা করার আছে। কাউকে কিছু বোঝাতেও পারেনি সে। সে নিজেই বুঝতে পারছে না বিষয়টা কোথায় গিয়ে দাড়াচ্ছে। ঠান্ডা মাথায় করতে হবে সব।
ফরিদা আন্টির কাছে বিদায় নিতে গেলেও তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন।
গেট পেড়িয়ে বাইরে আসলে রাজ পেছন থেকে ডেকে বলে,
– নিবিড় শুনো। ঢাকায় আমার একজন রিলেটিভ আছে। এই নাও তার ঠিকানা। তাকে সব বুঝিয়ে বলে রেখেছি আমি। যতদিন বিষয়টার একটা সমাধান না হবে, ততদিন তার বাসায়ই থাকবে। এদিকে দেখি তোমার প্রিয় ফরিদা আন্টির মন গলাতে পারি কি না। আর নিজেদের খেয়াল রাখবে। সব সন্তানেরই অধিকার আছে বাবা মায়ের সঙ্গ নিয়ে বড় হওয়ার। লাইফে বাবা মা কতোটা প্রয়োজন তা তুমি ভালো করেই জানো। তুমি কি চাও তোমার মতো এমন কষ্ট নিয়ে তোমার ছেলেও বড় হোক? নিশ্চই চাইবে না। কোনো বাবা মা ই এমনটা চায় না। তাই এটা কষ্টকর হলেও মানিয়ে নাও। তোমারই তো সন্তান।
নিবিড়ের মনটা বিষণ্ন হলেও নিরার চোখে মুখে খুশির আভাস ভেষে আছে। সবাই নিবিড়ের দিকে দৃষ্টি রাখলেও তুষার চোখ-মুখ কুচলে নিরার দিকে চেয়ে আছে। এটা নিয়ে যতই মজা করুক সে, কিন্তু এই মেয়ের হাব-ভাব কিছুতেই ভালো মনে হচ্ছে না। এই কেঁদে দিয়ে সবাইকে ইমোশনাল করে দেওয়া, আবার এই সবকিছু আবার ঠিকঠাক। নিশ্চই কোনো গোলমাল আছে। বিষয়টা ঠিকই বের করে ছারবো আমি।
To be continue………..
~ যেহেতু গল্পটার নামই ছদ্মবেশ, তাই সবারই দৃষ্টি-ভ্রম এর মতো কিছু থাকবে এটাই স্বাভাবিক। হয়তো নিরার প্রেগনেন্সির পেছনেও কোনো রহস্য আছে। হতেও তো পারে।
আরেকটা কথা হলো, গল্প বড় হচ্ছে দেখে কারো মাঝে বিরক্তি থাকলে বা একসাথে শেষ টা দেখার তাড়া থাকলে তারা একবারে গল্পটা শেষ হলেই একবারে পড়ার অনুরুধ রইলো। কারণ আমি এমনি এমনি গল্প বড় করিনি। নিশ্চই কিছু আছে। আর আমিও চাই গল্প বেশি পার্ট না করে গুছিয়ে অল্পতে শেষ করে দিয়ে নতুন গল্প ধরতে। গল্প অজথা বড় করে আমার কোনো লাভ নেই। বরং আরো সময় নষ্ট হবে। গল্পটায় কিছু আছে দেখেই এটা বড় হচ্ছে। যারা ধৈর্য নিয়ে পড়তে পারবে তারাই উপভোগ করতে পারবে এটা। ধন্যবাদ।