ছদ্মবেশ,পর্ব ৫৭,৫৮

0
800

#ছদ্মবেশ,পর্ব ৫৭,৫৮
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৫৭

দিন যতই যাচ্ছে এদিকে নীলার বিয়ের কথাবার্তা ততই এগিয়ে যাচ্ছে। নিবিড় ও নীলার মধ্যিখানে এখন দুইটা প্রব্লেম প্রাচির হয়ে দাড়ালো। প্রথমটা হলো নিরা৷ আর দ্বিতীয় টা হলো তার উপর থাকা পুলিশি অভিযোগ টা।

সেদিন তুষার নীলার বিয়ের খবরটা দিলে, সেদিনের পর থেকেই মনের ভেতর যেন কেমন একটা অন্যরকম অনুভূতি হতে শুরু করলো তার।
এই যেন মনটা সমুদ্রের কিছু ঢেউয়ের ন্যায় উত্তাল হয়ে থাকে। আবার নিরা ও তার বাচ্চা এটা ভাবতেই পুকুরে আবদ্ধ হওয়া পানির ন্যায় শান্ত হয়ে যায় মনটা।

সব কিছুর ভিড়ে আরেকটা ভাবনা তাকে বার বার আফসোসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বন্ধুকে বাচাতে পুলিশের কপ্পরে পরার কারণে তার কোনো বিন্দু মাত্র আপসোস নেই। বন্ধুকে বাচাতে পেরেছে এটাই অনেক।
তবুও ছোট আফসোসটা হলো ফারিহা ও তার বাবা-মা, আর তার ফোনে দেখা সেই চোট্ট ফাহাদের ছবি। মনটা ছটপট করছে যেন পুলিশি অবিযোগটা দুর হলে পরতমেই ছুটে সেই বাড়িতে চলে যাবে সে। কিন্তু বাড়িটা কোথায়? ঠিকানা তো জানেনা সে? তাহলে কোথায় যাবে সে?
আর অপরিচিত ঐ মানুষ গুলোর জন্য বুকটা এমন খাঁ খাঁ করছে কেন? চুটে যাওয়ার ইচ্ছে, আর এই আকর্ষণ যেন চম্বুকের চেয়েও শক্তিশালী।
এ যেন একটা গান মনে করিয়ে দেয় বার বার,

‘এতো রক্তের সাথে রক্তের টান, সার্থের অনেক উর্ধে,
হটাৎ অজানা ঝড়ে তোমায় হারালাম, মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।
বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায়,,,,,,,,’

গানটা অনেক প্রিয় তার। কারণ সেও তার বাবাকে দেখেনি।
লাইফে ডিপ্রেশন যখন চেপে ধরে তখন সব দিক থেকেই আসে। নিবিড়ের ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম নয়। পুলিশের ভয়, নীলার বিয়ে হয়ে যাওয়ার ভয়, বাবা মাকে কি খুজে পারে এই চিন্তা। সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহ যেমন ঘুরে তেমনই সব যেন মাথার উপর দিয়ে গুরছে নিবিড়ের।
,
,
রুশান এখন মোটামুটি ভালোর দিকে। আর কয়েকদিন হসপিটালে রেখে পুরোপুরি সুস্থ হলে তাকে রিলিজ দেওয়া হবে।
সেই সুবাধে সেখানে রাজ থেকে আর বাকি সবাইকে পাঠিয়ে গিলো বাসায়। আর রিদ তো এমনিতেও আছে সেখানে।
রিমা প্রথমে আপত্তি করলেও পরে বুঝিয়ে বললে বিষণ্ন মনে যেতে রাজি হয়।

রুশানকে খাইয়ে দিয়ে বাইরের দিকে গেলো রাজ। রুশান খাওয়া শেষে বিশ্রাম নিচ্ছিলো। এই কয়দিন রিমা তার পাশেই বসে থাকতো। আজ না দেখায় ব্যাপারটা একটু চোখে হারানোর মতো ফিল তৈরি করছে। তবুও নিজেকে এতোটা দুর্বল ভাবা ঠিক না। চোখের আড়াল মানেই তো আর দৃষ্টির আড়াল নয়। মনের তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে চোখ বন্ধ করলে প্রিয় মানুষটাকে অনুভব করা যায়।

কিছুক্ষন পর বাইরে থেকে এসে রুশানের পাশে বসে রাজ। টিসু দিয়ে কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নিলো সে।
রুশান চোখ খুলে রাজের দিকে তাকালো। রাজ ফোন বের করে একটু কৌতহল নিয়ে রুশানের দিকে একটা ছবি দেখিয়ে বলে,
– চিনতে পারিস তাকে?
রুশান কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বলে,
– তার সম্পর্কে তো ডিটেইলস কিছু বলিনি। বের করলি কিভাবে?
রাজ ফোন আবার পকেটে নিয়ে হেসে বলে,
– ওর সম্পর্কে আমার কাছে তোর কিছু ডিটেইলস জানার থাকলে বলতে পারিস।
,
,
এদিকে লোকটার থেকে অ’জ্ঞান করার ঔষধ টা আনার পর সারা রাত ধরে প্লেন করলো তুষার। সব কিছু প্লেনিং শেষে পরদিন সকালে তার এক পরিচিত ডাক্তারকে সবকিছু খুলে বলে ম্যানেজ করে নিলো।

বিকেলে নিরার কাছে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় তুষার। বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা বাইরে দাড় করিয়ে ভেতরে চলে গেলো তুষার।
সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে দরজার সামনে দারিয়ে চারপাশে একবার শেয়ে নিলো তুষার। তারপর একটা কাপর দিয়ে নিজের মুখটা পেচিয়ে নিলো যাতে নিরা চিনতে না পারে।
সব ঠিকঠাক থাকলে দরজায় টোকা দেয় সে। একটু পর নিরা ক্লান্তি নিয়ে এসে দরজা খুলে দেয়। হয়তো বিকেলে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলো।

হুট করে দরজা খুলে বাইরে মুখ বাধা কাউকে দেখলে ‘কে’ সূচক শব্দটা মুখ থেকে উচ্চারিত হওয়ার আগেই তুষার রুমাল চেপে ধরলো মুখে। কিছুক্ষনের মাঝেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে নিরা।
তুষার তাকে নিয়ে সোজা গাড়িতে তুলে নিলো। দাড়োয়ান কারণ জানতে চাইলে তুষার বলে,
– হুট করে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো। তাই হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি।

লেকটা বলেছিলো একবার ব্যাবহার করলে ৫-৬ ঘন্টার মতো কাজ করে। এই ৫-৬ ঘন্টার মাঝেই সব কমপ্লিট করতে হবে। সময় যথেষ্ট আছে আবার বেশিও নেই।

নিরাকে নিয়ে তার DNA টেষ্ট করে বাসায় ফিরতে মোটামুটি ৪ ঘন্টার মতো লেগেছে। তবুও জেগে যাবে ভেবে ডাক্তার একটা ইনজেকশান পুষ করে দিয়েছিলো। এবার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জ্ঞান ফিরার কোনো চান্স নেই।

বাসায় এনে নিরাকে তার রুমে শুইয়ে দিয়ে বের হয়ে গেলো তুষার। সব কিছু শেষ হতে প্রায় রাত নেমে এলো। এখনো অনেক কাজ বাকি। আজকের মাঝে সব করতে হবে। হাতে সময় খুবই কম।

রাহাত নামের ছেলেটার সম্পর্কে সেদিনই খোজ নিয়েছিলো তুষার। কোথায় থাকে কোথায় আড্ডা দেয়। এভ্রিথিং অল।
বাইরে কিছুক্ষন আড্ডা শেষে বাসায় ফিরছিলো রাহাত। তুষার পেছন পেছর গিয়ে রুমাল চেপে ধরলো ছেলেটার মুখে।
একই ভাবে তাকেও হয়সপিটালে কিয়ে গিয়ে DNA টেষ্ট করে পুনরায় রাহাতের বাড়ির গেটের সামনে রেখে যায় তাকে।

এবার শুধু রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষা।
,
,
গভির রাত। আকাশে গুরুম গুরুম শব্দ হচ্ছে। হয়তো একটু পর বৃষ্টি ফোটা আছড়ে পরতে শুরু করবে ধারার বুকে। অন্ধকারে পিন্টুদের গোপন আস্তানার সামনে এসে দাড়ালো রাজ। মাথায় হুডি পরা মুখে মাস্ক। চিকচিক করা ধারালো ছু’রিটায় একবার আঙুল দিয়ে পরিক্ষা করে নিলো সে। একটু মুচকি হেসে সামনের দিয়ে পা বাড়ালো।
দেখে সেখানে কয়েকজন ছেলে বাইরে হাটাহাটি করছে। আর ভেতর থেকে কয়েকটা মেয়ের চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসছে রাজের কানে।

বাইরে থাকা ৭ জন ছেলের মাঝে কিছুক্ষন দৃষ্টি রেখে সমিকরণ মিলিয়ে নিলো রাজ। ধাড়ালো ছুড়িটা ডান হাতে শক্ত করে ধরে ভেতরে চলে গেলো রাজ।
হাতে থাকা ধারালো ছু’রিটা ও নিজের তেজস্ব শক্তি দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ওখানে থাকা চারজন ছেলের মাতা আলাদা করে ফেললো সে।
ভেতরে থাকা ছেলেগুলো মেয়ে নিয়ে ফূর্তিতে মেতে উঠায় বাইরের দিকে খেয়াল নেই তাদের।

বাইরে থাকা বাকি তিনজন ছেলে ভেতরে থাকা লোকদের ডাকার চেষ্টা করে আবার রাজের দিকে তেড়ে আসলে তাদেরও বাকি চারজনের মত একই অবস্থা হলো।
সেই তিনজনের বিপদ সংকেত ভেতরের কয়েকজনের কানে গেলে তাদের মাঝে দুজন বেড়িয়ে আসার মুহুর্তে দরজা ক্রশ করতেই গলায় হাত চলে যায় তাদের। নিজেদের র’ক্ত-স্রোত আটকানোর আপ্রান চেষ্টা করছে তারা। কিন্তু কিছু সেকেন্ডের মঝেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো তারা।

তাদের ধাপ’ড়ানো গায়ের উপর দিয়ে পা বাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে রাজ। সেখানে একেক রুমে ছিলো মোট মিলে ৬ জন লোক। এক এক করে দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে লোক গুলোর মা’থা আলাদা করে দিয়ে মেয়েগুলো থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো রাজ। মেয়ে গুলোর মাঝে কেউ এতোক্ষন ঐ নরপশুদের হাত থেকে বাচার জন্য আকুতি মিনতি করছিলো। আর কাউকে চিড়ে খাওয়ারা মতো প’শুর মতো ঐ লোক গুলো ঝাপিয়ে পরেছিলো। আর দুজন তাদের থেকে রেহাই পায়নি। রাজ আসার আগেই নিজেদের সব হারালো না চাইতেও।

ফ্লোর খামছে ধরার মতো করে কাঁদছে মেয়ে গুলো। আবার কেও এমন পরিস্থিতিতে ভয়ে জড়সড় হয়ে এক কোনে দেওয়ালের সাথে মিশে আছে।
সেখানে মেয়ে ছিলো টোটাল আট জন। সবাইকে এক জায়গায় হতে বলে রাজ অন্যদিকে ফিরে সবাইকে অভয় দিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।
তারপর সবাইকে সেখান থেকে বের করে বলে, সময় নষ্ট না করে যত তারাতারি পারে এখান থেকে চলে যেতে। ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। আফসোসেরও কিছু নেই। ভেবে নিবেন এটা ভাগ্যেরই লিখন ছিলো।

ততোক্ষণে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো বাইরে থাকা শরির গুলো এতোক্ষনে নিস্তেজ হয়ে গেছে। তাদের ছিটকে পড়া র’ক্ত গুলোয় রাজের শরির লাল হয়ে আছে অনেক জায়গায়।
মেয়ে গুলো এমন পরিস্থিতিতে ভয়ে দৌড়ে চলে গেলো একসাথে। কেও দাড়িয়ে থাকলেও বাকিদের দেখাদেখি ওদের পিছু পিছু তারাও চলে গেলো। হয়তো কোনো না কোনো ভাবে তারা তাদের বাসা খুজে পাবে। তবে আজ হারানো কিছুই ফিরে পেতো না আর। হয়তো এখান তেকে মেয়ে গুলোকে চা’লান করে দেওয়া হতো অন্য কোথাও। সেখান থেকে এমন আরো অনেক মেয়ের সাথে পা’চার হয়ে যেত কোনো ভিন দেশে। হারাতো সব। ভে’ঙে যেত পরিবারকে নিয়ে গড়া বিন্দু বিন্দু স্বপ্ন গুলো।

ভেতর থেকে বেড়িয়ে বৃষ্টির মাঝে দাড়ালো রাজ। শরির ভিজে রক্তগুলো ধুয়ে ফোটা ফোটা টপ টপ করে আছড়ে পরছে নিছে। হাতে থাকা ছু’রিটা র’ক্তে লাল হয়ে থাকলেও এখন সেই র’ক্তও একটু একটু করে ধুয়ে দিতে লাগলো সেই বৃষ্টি ফোটা।
ঝুম জুম বৃষ্টির মাঝে মা’থা কা’টা লাশ গু’লো ভিজতে লাগলো। র’ক্ত গুলো মিশে যেতে লাগলো রাজ মাস্কের আড়ালে ঠোঁটের কোনে একটা বাকা হাসি দিয়ে, ছু’রি দিয়ে রং করা দেওয়ালে ছোট্ট একটা মেসেজ লিখে দিলো,

‘ফাষ্ট ওয়া’র্নিং’

To be continue………

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৫৮)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

রাত ৩ টার সময় ফোন বেজে উঠে নিলয়ের। ঘুমু ঘুমু চোখে ফোন হাতে দিয়ে উঠে বসে সে। ফোনের স্কিনে পিন্টুর নাম্বার ভেসে উঠলে ফোন রিসিভ করে বেলকনিতে চলে যায় সে।
পিন্টু কিছুটা অস্থিরতার ভাব নিয়ে বলে,
– ভাই একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।
নিলয় এক হাতে চোখ কচলাতে কচলাতে বলে,
– এতো রাতে আবার কি হয়েছে? মোটামুটি সবই তো এখন স্থগিত আছে। তাহলে ঝামেলা হয়েছে কোথায়?
পিন্তু আবার বলে,
– ঝামেলা অনেক জটিল ভাই, গ্রুপ C1 এর ১৫ জন লোককে কারা যেন মা’র্ডার করে ফেলে রেখে গেছে। যাওয়ার সময় একটা মেসেজও রেখে গেছে।

নিলয়ের মাঝে এবার এলটু সিরিয়াস ভাব ফুটে উঠলো। এক সাথে ১৫ জন লোককে মার্ডার করে যাওয়া। আবার মেসেজ রেখে যাওয়া। পুলিশ হলে তো এভাবে না মে’রে ধরে নিয়ে যেত। তাহলে ‘সি ওয়ানে’ কি এমন ঘটে গেলো?

ফোন রেখে রুমে আসে নিলয়। ট্রাউজার পরে থাকা অবস্থায় জুতা পরে বেরিয়ে যায় সে। রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় চোখ খুলে নিলয়ের দিকে তাকায় তুষার।

রাজ রুশানের সাথে হসপিটালে। আর নিবিড়ও রাজের বাসায়। বাসায় এক সাথে ছিলো শুধু তুষার আর নিলয়।
তুষার পাশ থেকে ফোন হাতে দিয়ে দেখে ঘড়ির কাঁটা তখন ৩ টা ১০ মিনিট। এতো রাতে নিলয় কোথায় যাচ্ছে? বিষয়টা একটু সন্দেহজনক মনে হলো তার।

এতো রাতে দারোয়ানকে গেট খুলতে বলাটা কিছুটা রিস্কি। এতো রাতে বাইরে গিয়েছে বিষয়টা অন্য কারো কানে গেলে তাদের মনে সন্দেহ তৈরি হতে পারে। তাই দারোয়ানকে না ডেকে সাবধানে দেওয়াল টপকে পার হয়ে গেলো নিলয়।
রাস্তার পাশে একটা গাড়ি এসে দাড়ালো। চার দিকে তাকিয়ে সেটাতে উঠে চুপচাপ চলে যায় নিলয়। কিছুক্ষন আগে ঝড় হওয়ায় বিদ্যুৎ সোংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও রাস্তার পাশে থাকা সৌর. ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় সবটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এদিকে এতোক্ষন চুপচাপ গ্রিল ধরে বেলকনি থেকে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো তুষার।

তুষারের চার পাশে এসব কি হচ্ছে? রুশান হসপিটালে ভর্তি হওয়ার পর তাকে চার পাশে পুলিশ দিয়ে গার্ড দেওয়া হচ্ছে। তারপর রাজকে এতোদিন সবাই সবচেয়ে ভদ্র ছেলেটা বলে চিনতো। আর সেই রাজও কোনো সাধারণ ছেলে না। তারপর হলো নিলয়। বন্ধু মহলে সবচেয়ে সরল মনের ছেলে হিসেবে সবাই এই নিলয়কেই চিনতো। তবে ইদানিং তার চলাফেরায় তেমন একটা সরলতা নেই। কেমন একটা ছন্নছাড়া ভাব এসে গ্রাস করে নিয়েছে তাকে। এখন রাতের বেলায় ফোন আাসা, আবার দামি গাড়ি নিয়ে কোথাও চলে যাওয়া। এই নিলয়ের মাঝে আবার কি লুকিয়ে আছে? প্রশ্ন জাগে মনে।

তুষার নিজেই যেন বন্ধুদের নিয়ে একটা ঘোরের মাঝে কাটাচ্ছে। কি হচ্ছে এসব? চার পাশটা যেন তার কাছে একটা রহস্যের বেড়াজাল হয়ে দাড়িয়েছে। রাজ, রুশান, নিলয় এদের কাউকেই তার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
,
,
নিলয় ঐ জায়গাটায় পৌছে দেখে পিন্টু ও কয়েলজন লোক সেখানে দাড়িয়ে আছে চুপচাপ। আর অনেক গুলো লা’শ পরে আছে। কারো শরির এক জায়গায় আর মাথা আরেক জায়গায়। কেও পরে আছে গ’লা কা’টা অবস্থায়। ভিজে মাটির সাথে লেপ্টে আছে তারা। নিলয় ভেতরে প্রবেশ করে দেখে ভেতরেও কয়েকটা লা’শ।
সব কিছু দেখে বাইরে এসে চিন্তিত ভঙ্গিতে দাড়ালো সে। কি নির্মম এই হ’ত্যা গুলো। পুলিশ হলে হয়তো ধরে নিয়ে যেত, নয়তো গুলি করে মা’রতো। এভাবে কাউকে মা’থা আ’লাদা করে দিয়ে, কাউকে জ’বাই করে মা’রতো না।

পিন্টুর দিকে চেয়ে প্রশ্ন করে,
– আর কি মেসেজ দিয়ে গেছে?

কিছুক্ষন আগে ঝড় বন্ধ হওয়ায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ। সৌর-বিদ্যুতের আলোয় ভতরের কয়েকটা লাউট জ্বললেও বাইরের দিকটা খুটখুটে অন্ধকার। বাইরের লাইট গুলো কয়েকটা ভাঙা অবস্থায় ঝুলে আছে।
পিন্টুর পাশে থাকা লোক গুলোর প্রত্যেকের হাতে একটা করে টর্চ লাইট। পিন্টু ওদের থেকে একটা লাইট নিয়ে দেওয়ালে ছু’রি দিয়ে লেখাটার দিকে ধরলো। নিলয় ওদিকে তাকিয়ে দেখে ছোট একটা মেসেজ। লেখা আছে শুধু ‘ফাস্ট ওয়ার্নিং’।

পাশ থেকে পিন্টু বলে,
– ভাই এমন সাহস কারা দেখিয়েছে তা আমার মাথায় ধরছে না!
নিলয় সেখানে থাকা কোনে কোনে সিসি ক্যামেরা গুলোর দিকে তাকালো। তারপর পিন্টুর দিকে চেয়ে বলে,
– সব কি ঝড়ের আগে হয়েছে নাকি পরে?
পিন্ট বলে,
– আগেই হয়েছে হয়তো। কারন ঝড়ের সময় হলে ভিজে যাওয়া কাঁচা মাটিতে ধস্তাধস্তির চিহ্ন থাকতো।

ততোক্ষনে বিদ্যুৎ চলে এলো। বন্ধ হয়ে থাকা কয়েকটা বাড়তি লাইটও জ্বলে উঠলো এবার। নিলয় নিজের মাঝে বিড়বিড় করে বলে,
– ঝড়ের আগে হলে সব পরিস্কারই দেখা যাবে।
বলেই ভেতরের দিকে হাটা ধরলো সে।

ভিডিও ফুটেজে দেখছে একটা ছেলেই করেছে সব। কারো সাহাজ্য নেয়নি। তবে মাথায় হুডি পরে ও মুখে একটা জুকারের মাস্ক পরায় তাকে চেনা যাচ্ছে না। চোখ গুলোও দেখা যাচ্ছে না ঠিক ভাবে। ছেলেটা আবার ইচ্ছেকৃত ভাবেই একবার ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে মুঠো হাতের হাতের মধ্যম আঙুল দেখিয়ে গেলো। যা দেখে মেজাজ বিগড়ে গেলো নিলয়ের।
একা একটা ছেলে এতো কিছু করে ফেললো। অতছ কেও তার কিছুই করতে পারলো না? আর এই ছেলেটাই বা কে? তার সাথে শত্রুতা টা কিসের? কেন করেছে এসব?
সব কিছু জানা যাবে, তার আগে জানতে হবে এই ছেলেটা কে?

নিলয় এবার পিন্টুর দিকে চেয়ে বলে,
– লা’শ গুলো সরিয়ে সকাল হওয়ার আগেই এখানে সবকিছু আগের ন্যায় স্বাভাবিক করে নে। যেন টিমের অন্য মেম্বার রা এসব দেখে আতঙ্কিত না হয়।
,
,
রুশান ও রাজের কথা মত নিবিড়কে পুলিশের কাছে নিয়ে যায় তুষার। রুশান সব মেনেজ করে নিলেও অভিযোগ থাকায় নিবিড়ের থানায় যোগাযোগ করাটা জরুরি ছিলো। তাই রুশান আশ্বাস দিয়ে রাজকে বললো, নিবিড়কে থানায় পাঠানে। দু’এক দিনের মাঝেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে নীলার বিয়ের বাকি আছে আর ৫ দিন। এখনো নিবিড়ও পুরোপুরি ঝামেলা মুক্ত হয়নি। আর তুষারের হাতেও এখনো রিপোর্ট গুলো আসেনি। আসবেই বা কি করে? গতকাল রাতের মাঝেই তো টেস্ট গুলো করিয়েছে।

নিবিড় নিজের মাঝে একটু নার্ভাস হয়ে বলে,
– খারাপ কিছু হবে না তো?
তুষার আশ্বাস দিয়ে বলে,
– কিছু হবে না। তবে তোকে যদি কোনো কিছু জিজ্ঞেস করে তখন আমি যেমনটা বলে দিয়েছি ঠিক তেমনই বলবি। রুশান বলেছে এসব বলতে। আর অভিযোগ উঠে গেলেই তুই পুরোপুরি মুক্ত। আর তখন তোর জন্য আমার পক্ষ থেকে একটা সারপ্রাইজ থাকবে৷
নিবিড় কিছুটা কৌতুহল নিয়ে বলে,
– সেটা কি?
তুষার হেসে বলে,
– সময় হলে দেখবি।
নিবিড় মনটা বিষণ্ন করে বলে,
– নীলার বিয়ে হয়ে যাবে এটাই সারপ্রাইজ তাই তো?
তুষার বলে,
– বলে দিলে তা আর সারপ্রাইজ থাকে না।
,
,
আরো এক দিন কেটে গেলো। এদিকে নিজের রুমে চুপচাপ দুই হাটুতে মুখ গুজে বসে আছে নীলা। আর চার দিন আছে বাবা বলছে বিয়ের প্রস্তুতি নিতে।
এক দিকে বাবার এমন ডিসিশন অন্য দিকে নিবিড়ের বিপদ। নিবিড় তার না হলেও সে সব সময় চায় নিবিড় কোনো না কোনো ভাবে ভালো থাকুক। সব মিলিয়ে চোখ দুটু ভিজে উঠছে বার বার।

বিকেলের দিকে তুষার নীলাকে ফোন দিয়ে বলে, নিবিড় পুলিশি ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়েছে।
যা শোনার পর থেকেই যেন নীলার নিজেকে কোনো বন্ধি খাচার পাখির মতো মনে হতে লাগলো। নিবিড়কে কাছ থেকে দেখার ইচ্ছেটা আরো তীব্র হয়ে হানা দিলো মনে। মানুষটা অন্য কারো জানার পরও কেন এতো কাছে যেতে ইচ্ছে করে?
নিবিড়কে দেখতে বাড়ি থেকে বের হতে চাইলে তার বাবা কঠোর ভাবে নির্দেশ দেয়। বিয়ের আগে এই তিনদিন ঘরের বাইরেও যেন পা না রাখে।

কাঁন্নাকাটি করেও বাবার মন গলাতে পারেনি। রুমে এসে কিছুক্ষন একা বসে কাঁন্না করছিলো সে। কান্না করলে নাকি নিজেকে অনেক হালকা মনে হয়। ঠিক যেমন বৃষ্টি হওয়ার পর আকাশ পরিষ্কার হয় তেমন।

সারা বিকেল বেলকনির গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে নিলা। নিবিড় বাসায় ফিরলে বাড়িতে ঢুকার সময় এই বেকনি থেকে দেখতে পাবে সে।
কিন্তু সারা বিকেল দাড়িয়ে থেকেও নিবিড়ের দেখা মিললো না আর।
কারণ বিকেলে নিবিড় চলে গেলো রুশান কেমন আছে তার খোজ নিতে। নিরার কথা, ফারিহাকে খোজার কথা সব যেন এক মুহুর্তের জন্য ভুলে গেলো একটা প্রশ্নের আড়ালে। আর তা হলো,
“বন্ধু কেমন আছে?”

অনেকদিন পর রাজ, রুশান, তুষার এদের সবার সাথে একসাথে সময় কাটালো নিবিড়। নিলয় তো আজ সারা দিনই উধাও।
ফরিদা আন্টিও এসেছে হসপিটালে। নিবিড় যার সাথে মায়ের মত ফ্রি ছিলো, তার দিকে আজ লজ্জায় তাকাতে পারেনি। তাকাবেই বা কি করে? নিবিড় যে খুব জঘন্ন একটা অপবাদ নিয়ে তার অপ্রিয় হয়ে গেছে সে।
,
,
রাতের বেলায় নিবিড় তুষারকে সাথে নিয়ে চলে গেলো বাসায়। নিরাকে যেখানে রেখেছে সেখানে।
তুষার দরজায় টোকা দিলে নিরা দরজা খুলে তুষারের সাথে নিবিড়কে দেখে যেন চোখে মুখে আনন্দের স্রোত উত্তাল হয়ে উঠে তার। তুষারের সামনেই নিবিড়কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– কত মিস করেছি তোমায়? কেন করতে গেলে এমন? যদি তোমার কিছু হয়ে যেত? তখন আমি কিভাবে থাকতাম? পাগলেও তো নিজের ভালো বুঝে।
নিবিড় তাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
– আমার ভালো তোমার না বুঝলেও চলবে। নিজের ভালো বোঝার বয়স হয়েছে আমার।

নিরা কিছুক্ষন চুপ থেকে পেটে হাত বুলিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
– তাকিয়ে দেখো, তোমার বেবিটাও তোমাকে কত মিস করেছে।

পাশ থেকে তুষার নিজের মাঝে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
“তোর বাচ্চা আর তোর আলগা পিরিত বের করছি আমি। শুধু রিপোর্ট টা হাতে আসুক।”

নিরা আবার নিবিড়কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– এতো দিন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো আমার। খুব মিস করেছিলাম তোমার। খুব বেশিই মিস করছিলাম।

To be continue…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here