#ছদ্মবেশ,পর্ব ৬১,৬২
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৬১
বিয়ের আগের দিন রাতেই বিয়ে ভাঙা নিয়ে এক প্রকার ঝামেলা তৈরি হয়ে গিয়েছিলো অনেকটা। নিলয় ঠান্ডা মাথায় কথা বলার পর কিছুক্ষন নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলো ছেলেটা।
কিছুক্ষন নিরব থাকার পর নিলয় আবার শান্ত ভাবে বলে,
– আপনাদের ভদ্রলোক মনে হচ্ছে, তাই ভদ্র ভাবে বুঝিয়েছি। অভদ্র হতে বাধ্য করবেন তো…..
এতটুকু বলেই লোকটার চেহারার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো নিলয়। মুখে হাসি রেখে বলে,
– আমাদের সম্পর্ক হাসি অব্দিই সীমাবদ্ধ থাকুক। আরেকটা বিষয় হলো এখানে তিনটা জীবনের প্রশ্ন। তারা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। সেখানে আপনি জোড় করে যদি তাকে বিয়েও করেন, তাহলে কি হ্যাপি হতে পারবেন? কখনোই না। সবচেয়ে বড় কথা হলো এতে আমার বন্ধুর জীবন জড়িয়ে আছে। সে কষ্ট পাবে এটা কিভাবে মেনে নিবো বলুন?
লোকটা এখনো কিছু না বলে চুপচাপ নীলয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। নিলয় আবার গম্ভির মুখ করে বলে,
– আপনি শুধু আমার ফ্রেন্ডশীপ টাই দেখেছে। গভিরতা দেখেন নি। যাই হোক, এখন চুপচাপ নীলার বাবার সামনে গিয়ে বলবেন যে, ওরা যেহেতু একে অপরকে ভালোবাসে তাহলে আপনি আর জোড় করে তা ভাঙতে চান না। ওরা সুখে থাকুক এটাই আপনি চান। সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলবেন। যেন বুঝতে না পারে আমার কারণে আপনি এসব বলছেন। আর আপনার বিয়ের প্রস্তুতি, খরচাপাতি, আয়োজন এসব কিছুর যদি ক্ষতিপুরণ চান তাহলে আমার থেকে নিয়ে যাবেন।
লোকটা এবার মুখ খুলে বলে,
– আসলে ভাইয়া, সবাইকে দাওয়াত দেওয়া……
নিলয় এবার রাগি লুক নিয়ে বলে,
– আমার কাছে আপনার ওসব ফালতু কাহিনি শোনার একধম সময় নেই। বেশিক্ষন বকবক করে আমার সময় নষ্ট করবেন তো, আমি আপনার জী’বন ন’ষ্ট করে দিবো। চুপচাপ যা বললাম তা গিয়ে করবেন।
লোকটা এবার শান্তভাবে তাদের সামনে এসে বলে,
– আমি আসলে বুঝতে পারিনি বিষয় টা। দুনিয়ায় সবচেয়ে দামি হলো ভালোবাসা। ভালোবাসা না থাকলে জোর করে পাওয়া হয়না। ভাইয়াটার কথায় আমি বুঝতে পেরেছি নীলা ও নিবিড় ভাইয়া একে অপরকে খুব ভালোবাসে। আমি চাই ওদের ভালোবাসাটা পূর্ণতা পাক। ওদের জন্য আমার দোয়া ও ভালোবাসা থাকবে সব সময়।
লোকটার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না তার বাবা ও ছোট ভাই। তারা কিছু বলতে চাইলেও লোকটা কোনো রকম বুঝিয়ে তাদের টেনে ধরে সবার থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত বাইরে চলে গেলো।
নিলয় চুপচাপ ফরিদা আন্টির কাছে গিয়ে তাকে কানে কানে কিছু বলে আবার সরে গেলো। ফরিদা আন্টি নিজের মাঝে কিছু ভেবে নিবিড়কে ডেকে নিয়ে একপাশে চলে গেলো। বাকিরা বসে আছে সোফায়।
নিবিড়কে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফরিদা আন্টি বলে,
– এখনো মায়ের সামনে ঢং করার দরকার নেই। যেটা প্রশ্ন করবো তার ফটাফট উত্তর দিবি।
নিবিড় কিছুটা কৌতুহলী ভাবে ফরিদা আন্টির দিকে তাকালো।
ফরিদা আন্টি স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– নীলাকে ভালোবাসিস তা বুঝলাম। বিয়ে করতে পারবি? এই দুই দিনের ভেতর?
নিবিড় যেন আকাশ থেকে পরলো। তার প্ল্যান ছিলো আজ কোনো মতে বিয়েটা ঠেকিয়ে সব কিছু স্বাভাবিক করে নেওয়া। কিন্তু হুট করে বিয়ে অব্দি তার প্ল্যান ছিলো না। তাই অবাক তো কিছুটা হবেই।
ফরিদা আন্টি আবার বলে,
– অনন্তত আমার সামনে ঢং করবি না। বিয়ে করতে পারবি কি না সরাসরি বল।
তখন সেখানে তুষারও এসে ডুকে গেলো। আর নিবিড়ের কাধে হাত রেখে বলে,
– আরে আন্টি সে তো এক পায়ে রাজি। লজ্জায় আপনার সামনে ঢং করছে। জানেন, সে ভেবে ছিলো আপনি আর তাকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিবেন না। কখনো এসব মেনেও নিবেন না। তাই সে নীলাকে নিয়ে অন্য কোথাও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার প্ল্যান করেছিলো।
এবার তুষারের কথায় যেন বেকুব বনে গেলো নিবিড়। তুষারের এত বড় মিথ্যা কথা শুনে সে কিছু বলতে গেলে তুষার তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
– ভাই লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আমাকে বলতে দে। আর আন্টি আপনি গিয়ে নীলার বাবার সাথে কথা বলুন বিয়ের বিষয়ে। নিবিড়ের থেকে পুরোপুরি পাকা। লজ্জায় ওর বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না।
ফরিদা আন্টি সেখান থেকে চলে গেলে নিবিড় অবাক হয়ে বলে,
– আজব তো আমি কখন বললাম নীলাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করবো!
তুষার এবার নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– নীলাকে বিয়ে করতে চাস না?
নিবিড় কিছু না ভেবেই বলে,
– হ্যা, কিন্তু,,,
তার আগেই তুষার বলে,
– আমিও তো ওটাই বলেছি যে তুই রাজি। চুপচাপ থাক ভাই, অনেকদিন কারো বিয়ে খাইনি।
নীলার বাবা ওর কিছু রিলেটিভ ও অফিসের ক্লায়েন্টদের অলরেডি দাওয়াত দিয়েছে। সবাইকে দাওয়াত দিয়ে এখন বিয়ে কেন্সেল হওয়ার বিষয়টা জানানোটাও অনেকটা লজ্জা জনক।
আর এদিকে ফরিদা আন্টির কথা ও এই বিষয়টা ভেবে নীলার বাবা একটা সিদ্ধান্ত নেয় যে, কালকে গায়ে হলুদটা বাদ দিয়ে পরশু রাতে ডিরেক্ট বিয়েও সেরে ফেলবে। গেস্টদের থেকেও দাওয়াত ফিরিয়ে নিতে হবে না। আর সেই সাথে বিয়েও হবে। মাঝখানে একটা পরিবর্তণ শুধু বর বদল।
তবে পরশু বিয়ে হলেও একটা শর্ত রাখলো নীলার বাবা। নিবিড় পড়াশুনা শেষ করে নিজের পায়ে না দাড়ানো অব্দি নীলা তার বাবার কাছেই থাকবে। সব কিছু আগের মতোই থাকবে। মাঝখানে শুধু দুজনের বিয়েটাই সম্পন্ন হয়ে থাকবে দুজনের।
,
,
ঐ রাতটাও পার হয়ে গেলো। পরদিন সকালে বাইরে যেতেই গেটের সামনে একটা খাম পায় তুষার। যার উপর লেখা,
“রাজ ছারা অন্য কারো এটা খোলা নিষেধ।”
তুষারের মাঝে কৌতহল জাগলো এটা কি? যে রাজ ছারা অন্য কেও দেখতে পারবে না। খুলে দেখবে কি দেখবেনা এটা নিয়ে কিছুক্ষন ভাবলো সে। পরে নিজের মাঝে সিদ্ধান্ত নিলো যে, না থাক অন্যার পার্সনাল জিনিসে হাত না দেওয়াই ভালো হবে।
আর কিছু না ভেবে খামটা নিয়ে রাজের হাতে দিয়ে বলে,
– তোমার জন্য প্রেম পত্র এসেছে। তাই অন্য কারো দেখা নিষেধ।
রাজ কিছুটা অবাক হলো ওটা দেখে। কিছুটা ভেবে খামটা ছিড়ে দেখে একটা চিরেকুট।
যেখানে প্রথমেই ধমক দিয়ে লেখা,
‘সমস্যা কি আপনার? জানেন যে আপনাকে না দেখে আমি থাকতে পারিনা। তবুও আমায় কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে তাই না? বলেছিলেন তো প্রতিদিন আসবেন। আচ্ছা আপনি কি আবার অসুস্থ হয়ে গেছেন? আচ্ছা অসুস্থ হলেও সন্ধায় আপনার বাসার সামনে একটা গাড়ি যাবে। সেটাতে উঠে সোজা চলে আসবেন। বেশি অসুস্থ হলে প্রয়োজনে একটু দেখা করে আবার চলে যাবেন। আপনাকে আবার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসবে তারা।
লিখা দেখেই বুঝে গেছেন, তাই পরিচয় দিয়ে আর কি করবো? আর না বুঝলেও মনকে প্রশ্ন করুন। সে বলে দিবে এটা কার চিঠি।”””
সত্যিই তো আরোহিকে আবারো ৩-৪ দিন পড়াতে যেতে পারেনি রাজ। আর এদিকে আগামি কাল ঠিক করেছে নিবিড় ও নীলার বিয়ে। আজ না গেলে আগামি কালও যেতে পারবে না। তারচেয়ে আজ কিছুটা ঝামেলা কম আছে। আজ গিয়ে কাল ও পরশু যেতে পারবে না বলে দিলেই হবে।
তবে মেয়েটা ইদানিং বেশি বেশি করছে। কয়েকদিন না গেলেই এমন শুরু করে যেন তার অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছে রাজ। সেই জায়গায় টিউশনি অফ করে দিলে কি করবে এটা রাজ নিজেই বুঝতে পারছে না।
আরোহিকে পড়াতে গেলে প্রথমে কিছু প্রশ্ন ছিলো এমন যে, কেন আসেননি? কি হয়েছে? এমন নানার প্রশ্ন।
ইদানিং ব্যস্ততার কথা বলে কোনো মত তা এড়িয়ে গেলো রাজ।
পড়ার সময় আরোহি কিছুটা চিন্তিত ভাব নিয়ে বলে,
– আচ্ছা আপনার প্রিয় রং কি?
রাজ কিছুটা ভ্রু-কুচকে বলে,
– কেন?
আরোহি একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,
– ওফ বলেন না।
রাজ বইয়ের দিকে চোখ রেখে বলে,
– নীল ও কালো।
আরোহি আবার বলে,
– কোনটা বেশি ভালো লাগে?
রাজ এবার বিরক্তি নিয়ে বলে,
– এসব জেনে তোমার কাজ কি?
আরোহি ‘চ’ সূচক একটা শব্দ করে বলে,
– আছে কাজ আছে। এটা একটা সাইকোলজিক্যাল পরিক্ষা। আমি টেস্ট করে নিই তারপর আপনাকে বলবো।
রাজ এবার কিছুটা জানার কৌতহল নিয়ে বলে,
– আচ্ছা করো দেখি? সাইকোলজিক্যাল বিষয় নিয়ে ধারণা রাখাও ভালো।
আরোহি এবার অনুমতি পেয়ে বলে উঠে,
– ধরেন আপনার সামনে দুইটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। একটা পরে আছে নরমাল জামা, আরেকটায় পরে আছে শাড়ি। আপনার কাছে কোনটাকে দেখতে ভালো লাগবে?
রাজ আবারও কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
– এসব আমার কেমন প্রশ্ন?
আরোহি বলে,
– এটা আমাদের স্যার শিখিয়ে দিয়েছে। বলেছে বাসায় প্রেক্টিস করতে। মেয়েরা ছেলেকে দিয়ে করতে হয়। আর ছেলেরা মেয়েকে দিয়ে। তো আমি কাকে দিয়ে প্রেক্টিস করবো বলেন। আমার তো আছেন শুধু আপনি।
রাজ কিছুটা ভাবার পরও বুঝতে পারছে না আরোহি কোন সাইকোলজির মাঝে পরেছে? তাই আর উত্তর জানতে কিছু না ভেবেই উত্তর দিলো,
– শাড়ি পরাটা ভালো লাগে নরমালোর থেকে।
আরোহি আবার বলে,
– আচ্ছা প্রথম ধাপ পার হলেন। এখন সেকেন্ড ধাপ হলো, আপনার সামনে দুইটা শাড়ি পরা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। একটা পরেছে নীল শাড়ি, আরেকটা পরেছে কালো শাড়ি। আপনার কোনটাকে ভালো লাগবে?
রাজ সাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়,
– নীল।
আরোহি আবার বলে,
– সাথে কাচের চুড়ি থাকলে কেমন লাগবে।
রাজ আবার বলে,
– সুন্দর লাগবে।
আরোহি এবার একটু মুচকি হেসে বলে,
– আপাতত দুই ধাপ কমপ্লিট। এবার টেস্ট করে আপনাকে ফলাফল জানানো হবে। আপনার ভাবনা অনেক জটিল। এটা নিয়ে একটু সময় নিয়ে গবেষণা করে দেখতে হবে।
রাজ এবার ভ্র-কুচকে বলে,
– এটা কি সত্যিই কোনো সাইকোলজিক্যাল বিষয়? নাকি আমায় নিয়ে মজা করছো?
আরোহি একটু হেসে বলে,
– মজা না এটা সিরিয়াস। আর মজা করলেও কি হবে? আপনার সাথে মজা করবো না তো কার সাথে করবো? আপনি ছারা আমার আর কে আছে বলুন তো।
এর মাঝে কারো গলার আওয়াজ পেলো তারা। কাজের মেয়েটা নাস্তা নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো। নাস্তা গুলো টেবিলের এক পাশে রেখে রাজের হাতে মাস শেষে বেতনের খামটা দিলো। এরপর চলে গেলো মেয়েটা।
,
,
রাজ বাসায় আসার পর ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে খামটা খোলে। দেখে টাকার সাথে বড় পাতায় কিছু লেখা। টাকা গুলো এক পাশে রেখে চিঠিটা হাতে নিলে সেই সময়ে ড্রয়িং রুম থেকে ফরিদা আন্টির ডাক আসে।
রাজ চুপচাপ কাগজ টা এক জায়গায় রেখে দিয়ে ফরিদা আন্টির কাছে চলে গেলো। সবাই মিলে বিয়ের আলাপ করছে। কালকের দিন শেষে সন্ধায় সব শুরু হবে। মাঝখানে কালকের দিনটাই আছে। তাই সবাই মিলে প্ল্যানিং করছে।
প্ল্যানিং শেষে আসে রুশানের টপিক। সে এখন মোটামুটি সুস্থ হলেও কয়েকদিন বিশ্রামের জন্য বাসায় রেখে এসেছে।
আর এখানে নিবিড়ের বিয়ে। সে কি না থাকলে হয়? নিলয়কে সহজ সরল দেখে তাকে দায়িত্ব দিলো রুশানকে নিয়ে আসার।
নিলয় যেমনই হোক। সবার কাছে সে সরল মনের একজন ছেলে। তাই কিছু বলতেও পারছে না কাউকে।
তার মানে তাকে আবার সেই রুশানের বাসায় যেতে হবে?
To be continue………..
~ নিবিড়ের বিয়েটা আপাতত শেষ হোক। তারপর খেলা শুরু করবো।?
#ছদ্মবেশ (পর্ব ৬২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
রাতের খাওয়া শেষ হলে রুমে গিয়ে খামের ভেতর পাওয়া কাগজটা বের করে রাজ। আরোহির মা কাগজটাতে কি এমন বার্তা দিয়েছে তা দেখার কৌতূহল যেন বেড়েই চলছিলো এতোক্ষন ধরে।
কাগজটা খুলে দেখে পুরো কাগজ ভর্তি লেখা। যেন একটা রচনা লিখে দিয়েছে তাকে।
রাজের কৌতূহল বেড়েই চলছে ক্রমশ। বইয়ের মাঝে কাগজটা নিয়ে পড়তে শুরু করলো সে। লেখার প্রথমেই আরোহির মা তাকে সাবধান করে দিলো যে,
“তুমি যদি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে পা রাখো তাহলে তোমায় প্রথমেই বলে দিচ্ছি যে এদের পেছনে লাগতে আসা মানে নিজের জীবনটা হাতে নিয়ে কোনো স্রোতময় নদীতে ঝাপ দেওয়া। একবার হাত থেকে হারিয়ে গেলে দ্বিতীয় বার খুজে পাবেনা।
তাই প্রথমেই বলে রাখছি পড়ালিখা করতে এই শহরে এসে থাকলে এসব থেকে দুরেই থাকো। এটাই তোমার জন্য ভালো হবে। কারণ যেখানে দেশের পসাশন ও অনেক বড় বড় নেতারা তার সাথে কানেক্টেড। সেখানে তোমার নত সাধারণ ছেলে একবার ঢুকে গেলে কোনো গভিরতা খুজে পাবে না।
তবুও আমি মনে করে অনেক মাস হবে তুমি আরোহিকে পড়ানোর নামে এই বাড়িতে এসেছো। বছর খানেক মত। আমি দেখতে চাইছিলাম নিজের প্রতি কতটা আত্মবিশ্বাস আছে তোমার? কয়েকদিন যেতেই এসব থেকে সরে যাও কি না।
বাট তুমি নিজের অবস্থানেই রয়েছো। পিছু পা হাটছো না। হয়তো সব পরস্তুতি নিয়েই নেমেছো তুমি। যদি তোমার মনে হয় তুমি শেষ অব্দি টিকবে তাহলে আমার কথা গুলো শুনো।
এতটুকু পড়েই অপর পৃষ্টায় গেলো রাজ। যেই বিষয়ের জন্য আরোহিদের বাসায় পা রাখা তা বোধহয় তার হাতে এসে পৌছেছে।
চার পাশটায় একবার চেয়ে আবার পড়া শুরু করে রাজ।
” সে আমাদের কাছে একসময় ফেরেস্তার মতো ছিলো। যেমনটা এখন দেশের মানুষরা ভাবে তাকে। আগে ফ্যামিলিকে সময় দিতো সে। আরোহি ছোট থাকতে দুদিন পর পর বাসায় এসে আরোহির সাথে সময় কাটাতো। বলতে মেয়েকে না দেখলে তার অস্থির অস্থির লাগে।
কিন্তু কয়েক বছরের মাঝে তা পরিবর্তণ আসতে শুরু করে। কখনো সাপ্তাহ খানেক পর আসতো। এর পর মাস খানেক। আর এখন তো কয়েক মাস পর একবার বাসায় আসে।
একদিন বিষয়টা সন্দেহ হলে আমি তাকে ফলো করে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি।
জানতে পেরেছি ভালো মুখোশের আড়ালেও সে একটা অন্ধকার সাম্রাজ্য তৈরি করে নিয়েছে। যেখানে তার ক্ষমতা অনেক বেশি।
মা’দক দ্রব্য থেকে শুরু করে নারী পা’চার ও মানুষের শরিরের অ’ঙ্গ-প্র’ত্যঙ্গ ব্লাক মার্কেটে বিক্রি করা। বছরে হাজারো মানুষের জী’বন সে নিজ হাতে শেষ করে দিচ্ছে।
বিশেষ করে মেয়েরা তার প্রধান টার্গেট। কিছু মেয়ের সাথে হওয়া জঘন্য অন্যায় আমি নিজ চোখে দেখেছি। তার মুখোশ খুলে দেওয়ার কথা বললে সে আমাকে ও আরোহিকেও ওদের মতো শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে রাখে। আমি নিজের কথা ভাবি না। আমার জীবনের বিনিময়ে হাজারো মানুষের জীবন বাচলে এটা আমার জীবনের করা সবচেয়ে উত্তম কাজ হবে।
কিন্তু পারিনা শুধু মেয়েটার মুখের দিকে চেয়ে। ওর নিস্পাপ মুখটা দেখলে যেন আমার সবই এলোমেলো হয়ে যায়। বাচ্চা একটা মেয়ে, এখনো ভালো মন্দ বুঝতে শিখেনি। তার কাছে মনে হয় সে যেই অবস্থায় বন্ধি হয়ে আছে এটাই তার দুনিয়া। এর বাইরেও যে কতকিছু আছে বা প্রতিনিয়ত হয়ে যাচ্ছে তার ব্যাপারে বিন্দু মাত্রও ধারণা নেই তার। আমি কাকে বাচাবো? মানুষকে না নিজের একটাই নিষ্পাপ মেয়েটাকে? তোমাকে এসব বলে দিয়েছি, এটাও হয়তো আজ না হয় কাল তার কানে পৌছে যাবে। আমার যা হবে হোক। আমার মেয়েটার যেন কোনো ক্ষতি না হয়, আমার এটাই চাওয়া। সে এই কুৎসিত মানুষদের ভিড় থেকে বেড়িয়ে সুন্দর মনের মানুষদের সাথে পৃথিবীর সোন্দর্য উপভোগ করুক সুখে থাকুক এটাই আমি চাই। সে জানুক এই বন্ধি জীবনের বাইরেও সুন্দর একটা জীবন আছে।
আমি যতটুকু জানি তা তোমায় বলে দিয়েছি। সব কিছু সত্য হলেও এসবের কোনো প্রমান নেই আমার কাছে। আমি জানিনা তুমি কতটুকু বের করতে পারবে। তবুও তোমার আত্মবিশ্বাস দেখে মনে হচ্ছে কিছুটা হলেও তুমি করতে পারবে। দেশের অসহায় মানুষদের বাচাও। আমার মেয়েটাকেও বাচাও। আমি চাই সে এসবের থেকে বের হয়ে সুন্দর একটা জীবন পাক। আর বিশেষ করে তুমি নিজে সবচেয়ে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করবে। ওদের বিরোদ্ধে কেও গিয়ে কয়েকদিনের বেশি থাকতে পারে না। ওর সাথে তোমার মত একটা কম বয়সি ছেলে আছে। যার দৃষ্টি ঈগলের ন্যায় তীক্ষ্ণ। নাম জানা নেই আমার। এমন অনেক মানুষ সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার। ছদ্মবেশে আমাদের সাথেই মিশে আছে। ওদের দৃষ্টি থেকে দুরে থাকবে সবসময়। মনে রেখো একটা হিংস্র প্রানি ভর্তি জঙ্গলে তুমি পা রাখছো।”
পুরোটা পড়ে চুপচাপ কিছুক্ষন বসে ছিলো রাজ। নির্জনের ব্যাপারে সে তথ্য পেয়েছিলো যে এসবের সাথে কিছুটা জড়িত সে। তাই সন্ধেহজনক ভাবে রাজের ঐ বাড়িতে পা রাখা। প্রকাশ্যে দেশের মানুষদের উপকার করা মানুষটাই যে গোপনে সেই মানুষের নিয়ে রমরমাট ব্যবসা করছে এটা তার ধরণারও বাইরে ছিলো।
এর মাঝে মনে আরেকটা প্রশ্ন আসে, তা হলো আরোহির মায়ের কথায় কতটুকু সত্যতা আছে? এমনও তো হতে পারে সে নিজের স্বামীর দলেরই লোক হয়ে রাজকে ফাদে ফেলার চেষ্টা করছে।
তবে আরোহির মনে কোনো প্যাচ নেই সেটা এতোদিন তার সাথে থেকে ভালোই বুঝতে পেরেছে রাজ। আরোহি একদিন তাকে বলেছিলো তার মা তার বাবাকে ভয় পায়। সবসময় একটা আতঙ্কে থাকে সে। কিছু একটা লুকাচ্ছে বাট তাকে বলছে না।
আরোহির কথা অনুযায়ি তার মায়ের কথা গুলোও হয়তো সত্য হতে পারে।
তবুও এ ক্ষেত্রে আগে সব কিছুর সত্যতা যাচাই করাটা বেশি জরুরি।
,
,
পরদিন নিলয় গিয়ে রুশানকে নিয়ে আসে এই বাসায়। সাদামাটা ভাবেই নিবিড়ের বিয়েটা আপাতত সম্পন্ন করে রেখে পরে সে প্রতিষ্ঠিত হলে একেবারে নিজের বাসায় তুলে নিয়ে যাবে নীলাকে।
বন্ধু মহলে আজ প্রথম একজনের বিয়ে। ব্যাচেলর লাইফেই হটাৎ যে একজনের বিয়ে হয়ে যাবে তা হয়তো ধরণাতেই ছিলো না তাদের। নিবিড়ও হয়তো জানতো না, এভাবে হুটহাত তার জীবনের সাথি নির্দিষ্ঠ কোনো মেয়ে জড়িয়ে যাবে।
গতকাল সারা রাত জুড়ে ফেসবুকে অনেক আইডি ঘুরেছে নিবিড়। ফারিহা ইসলাম, ফারিহা আক্তার এসব নাম সার্চ দিয়ে সেই ফারিহার আইডি খুজে বের করার চেষ্টা করলো সে। কিন্তু এমন একটাও খুজে পেলো না। সেদিন ফারিহার থেকে তার ঠিকানাটা জেনে নিলে হয়তো আজ ফারিহার বাবা মায়ের সাথে দেখা করে একটা বিষয়ে শিউর হতে পারতো। নিবিড়ের অস্থিরতার কারণটা হলো ফারিহার হারানো ভাইয়ের বিবরণের সাথে অনেক কিছুই মিল আছে তার। নিবিড়ের ভেতরের উত্তেজনা টা হলো, হতেও তো পারে তারাই তার বাবা মা। সম্ভাবনা কম হলেও, এমনটা হতেও তো পারে।
যদি তার ভাবনাটাই সত্য হয়, তাহলে একটা আফসোস থেকে যাবে। জীবনে বিয়ের মত একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার বাবা-মা, বোন কেউই তার সাথে নেই।
,
,
নানান আয়োজনে কেটে গেলো দিনটা। সন্ধার পরই শুরু হবে অনুষ্ঠান। সবকিছু টিকঠাকই আছে। কিন্তু সন্ধার পর থেকে নীলাকে কোথাও খুজে পাচ্ছে না কেও।
ফোন দিলেও দেখে ফোন বন্ধ তার। আজব ব্যাপার, বিয়ের দিনই মেয়েটা কোথায় গেলো?
সন্ধা পেড়িয়ে রাত হলো। মেহমান সব বাসায়। কিন্তু নীলার কোনো খোজ নেই। টেনশন বেড়েই চলছে সবার।
নিবিড় যেন পাগলপাড়া হওয়ার পথে আজ। একের পর এক ঝামেলা শেষ করে আজ একেবারে নতুন সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার দিনই আরেক ঝামেলা তেরি হলো।
– নীলা কি পালিয়ে গেছে?
একজন বলে উঠে কথাটা। আরেকজন বলে,
– ওদের তো প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হচ্ছে, তাহলে পালাবে কেন?
এমন নানার প্রশ্নের ভিড়ে চুপ করে আছে নীনার বাবা ও বাকিরা।
দেখতে দেখতে রাত ১১ টা বেজে গেলো। মেহমানরা সব চলে গেছে নিজেদের বাসায়। যেখানে কনে বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে গেছে সেখানে থেকেই বা লাভ কি? সময় নষ্ট।
নীলার ফোনটাও পাওয়া গেছে তার রুমের বালিশের পাশে। নীলা কি সত্যিই পালিয়ে গেছে নাকি এখানে কোনো ধোয়াশা আছে তা বুঝতে পারছে না কেউই।
এর মাঝে আচমকাই টনক নড়লো তুষারের। নিরা বলেছিলো তাদের শান্তিতে থাকতে দিবেনা এদের। মেয়েটা এমনিতেও সুবিধার না।
দ্রুত নিরার ফোনে কল দেয় তুষার। এলবার কল করতেই রিসিভ করে সে। হাহা করে হেসে উঠে বলে,
– এতোক্ষনে বুঝতে পেরেছিস সব? বলেছিলাম না, আমার জীবন নষ্ট হলে আমি সবার জীবন এলোমেলো করে দিবো? বিয়ে তো ভেঙে গেছে তাই না?
তুষার রাগে কটমট করে বলে,
– নীলা কোথায়?
নিরা আবার হেসে বলে,
– এখনো ভালোই আছে। তবে ততোক্ষন ভালো থাকবে যতক্ষন তোরা আমার কথা শুনবি।
পাশ থেকে রাজ আগ বাড়িয়ে তুষারকে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে?
তুষার ফোন সরিয়ে রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– নীলালে কিডনাফ করেছে নিরা মেয়েটা। বলছে তার কথা মত না চললে সব খারাপবহয়ে যাবে।
কথাটা শুনেই নিবিড় ক্ষেপে উঠলে, রাজ তাকে এক আঙুলের ইশারায় তাকে চুপ থাকতে বলে। তুষারের দিকে চেয়ে বলে,
– ও কি চায় সেটা জিজ্ঞেস করো।
তুষার স্পিকার অন করে আবার জিজ্ঞেস করলে নিরা বলে,
– বেশি কিছু না। আগামি কাল সন্ধার মাঝেই নিবিড় আমাকে বিয়ে করলে নীলা ঠিকঠাক থাকবে। নয়তো নীলাকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিতে বল নিবিড়কে।
পাশ থেকে নিবিড় রাগি গলায় বলে,
– প্রয়োজনে এই মেয়েকে খুন করে আমি এবার সত্যিই জেলে যাবো।
নিবিড়কে আবার থামিয়ে দিলো রাজ। এর মাঝে নিরা বলে,
– পাশে কি নিবিড় কথা বলছে? তাকে ফোনটা দে তো।
তুষার এবার শান্ত ভাবে বলে,
– তাকে দিতে হবে না। নিবিড় তোকে বিয়ে করবে। যদি নীলার কোনো ক্ষতি না করিস।
নিবিড় একটু চমকালেও রাজ তাকে রিলেক্স থাকতে বলে। ইশারায় বুঝালো সব ঠিক হয়ে যাবে।
নিরা আবার বলে,
– আগামিকাল সন্ধার মাঝে আমার সাথে দেখা করতে বল তোর বন্ধুকে। নয়তো নীলাকে জে’ন্ত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিতে বল।
To be continue………