#তোমার_আমার_প্রণয়,06,07
#israt_jahan_arina
#part_6
নাইট ক্লাবের এক পাশের টেবিলে বসে ড্রিংকস্ করছে মাহাদ। তার সাথে বসে আছে জয়। জয় বারবার মাহাদ কে বেশি ড্রিঙ্ক করতে মানা করছে। কাল আরেকটা গানের রেকর্ডিং আছে। আর যদি বেশি ড্রিঙ্ক করে ফেলে তাহলে এটার হ্যাংওভার টা কাল পর্যন্ত রয়ে যাবে। আজ বেশ কিছুদিন পর সে মাহাদের সাথে দেখা করেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে মাহাদ অ্যালকোহলিক হয়ে উঠেছে। তবে আজ বোধহয় একটু বেশি করছে। কারণটা ঠিক জয় ধরতে পারছে না। জয় একবার ক্লাবের আশেপাশে চোখ বোলালো। কিছুটা দূরে মহাদেবের অ্যাসিস্ট্যান্ট রবিন দাঁড়িয়ে আছে।
আশেপাশের বেশকিছু সেলিব্রিটিদের দেখা যাচ্ছে। এই ক্লাবে মূলত সেলিব্রিটিদের আনাগোনা বেশি হয়ে থাকে। বেচারা জয় অলরেডি কয়েক পেক গিলে ফেলেছে। এর চাইতে বেশি খেলে বাসায় পৌঁছাতে পারবে না। কিন্তু মাহাদ টোটালি ড্রাংক হয়ে বসে আছে। জয় কিছুটা বিরক্ত নিয়ে মাহাদ কে বললো
-“মাহাদ আর ড্রিংক করিস না। কি হয়েছে বলতো? আজ মনে হচ্ছে মুড ভীষণ খারাপ?”
-“আজ কতগুলো বছর পর ওকে দেখেছিস জানিস? চার বছর পর।”
জয় কিছুই বুঝতে পারছেনা। তাই বললো
-“কাকে দেখেছিস?”
-“দৃশ্য”
জয় অবাক হয়ে মাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তে কি বলা উচিত তা সে বুঝতে পারছে না। সে বললো
-“দৃশ্য! কোথায় দেখেছিস ওকে? ও ঢাকায়?”
-“হ্যাঁ ঢাকায়। ও আমার ফ্যাশন হাউজের জব করে।”
জয় এবার বিস্ময় নিয়ে মাহাদের দিকে তাকালো। ভীষণ খারাপ লাগছে তার এই বন্ধুটার জন্য। বহুকষ্টে তো নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছিলো কিন্তু এবার?
__________________
আজ অফিস থেকে ফিরে দৃশ্য আর রুম থেকে বের হয়নি। মনটা ভীষণ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে তাই। শেষমেষ ওই মানুষটার ফ্যাশন হাউসে জবটা পেলো। সে চাইলেই আর এই জবটা ছাড়তে পারবে না। ঢাকা শহরে একটা চাকরি পাওয়ার সোনার হরিণ পাওয়া একই কথা। সে চাকরি টা পাওয়ার পর আগের সব টিউশনি ছেড়ে দিয়েছে। কয়দিন পর থার্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা তার। কলেজে অলরেডি তার অনেক দিনের বেতন ডিউ পড়ে আছে। পুরো টাকাটা না দিলে পরীক্ষায় বসতে দিবে না। তাছাড়া সে প্রতিদিন ক্লাস করতে পারে না। লতা আপু এখনো তার কাছ থেকে অনেকগুলো টাকা পাবে।এই মাসে বেতন পেয়ে কিছুটা দিতে পেরেছে। লতাআপু নিজের থেকে চাইবে না কিন্তু নিজের কাছেই ভীষণ খারাপ লাগে। সে মানুষটা তো বহুকষ্টে ঢাকা শহরে টিকে আছে নিজের ফ্যামিলিকে সাপোর্ট করার জন্য। আর কিছুই ভাবতে পারছেনা দৃশ্য। এই মুহূর্তে চাকরি ছড়াটা তার জন্য প্রায় অসম্ভব।
দৃশ্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। তার লাইফের সবকিছু এত কমপ্লিকেটেড কেন? সে তো আট-দশটা মেয়ের মতোই একটা স্বাভাবিক জীবন চেয়েছিল?
সেদিন স্কুল থেকে ফিরে এসে মাহাদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেছিলো। তার কিছুক্ষণ পরে মাহাদের এসএমএস আসলো।
-“কি করো পিচ্ছি?”
-“কিছুনা ভাইয়া।”
ইসস! এই ভাইয়া ডাকটা মাহাদ কিছুতেই সহ্য করতে পারেনা।পৃথিবীর সব মেয়েকে সে বোন বানাতে রাজি আছে,কিন্তু এই পিচ্চিকে না।কিছু ভেবে সে বললো
-“তোমার ফ্রেন্ড লিস্টে এতো ছেলে কেনো?”
দৃশ্য কিছুটা অবাক হল। এই লোক তার ফ্রেন্ড লিস্ট চেক করে ফেলেছে?
-“এতো ছেলে মানে? সবাই তো আমার ভাইয়া হয়।”
-“এই তোমার কত ভাইয়া লাগে? তোমার কি নিজের ভাই নেই যে জগতের সব ছেলেদের ভাই বানিয়ে ঘুরে ফিরছো?”
-“আমার ভাই আছে তো আপনার সাথে পরে। তবে অন্য কলেজে। আর এই জগতের সব ছেলেই আমার ভাই বুঝলেন?”
মাহাদ কিছুটা বিরক্ত নিয়ে লিখলো
-“আজকে রাতের মধ্যে ওইসব ভাইয়া গুলো ডিলিট করবা।”
-“কেনো?
-“আমি বলেছি তাই।”
-“ওকে”
মাহাদ মনে মনে খুশি হল। যাক পিচ্ছি টা বেশি
প্রশ্ন না করে কাজটা করবে বললো।খুশি মনে সে ডিনার করতে চলে গেলো।
আজ মাহাদের বাবা আমজাদ রহমান বাসায় এসেছেন।তিনি ভীষণ রসিক মানুষ।ছেলেদের সাথে তার বন্ধুসুলভ সম্পর্ক। মাহাদকে টেবিলে আসতে দেখেই বললেন
-“এই যে আমার রাজপুত্র এতক্ষণ লাগে আসতে?”
মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“এইতো বাবা এসে পড়েছি।
-“তা আমার ছোট রাজপুত্র কই?
মাহাদের দাদি বললো
-“তোর ছোট পোলা কি বাসায় থাকে? সারাদিন বাইরে টইটই করে ঘুরে বেড়ায়।”
আমজাদ রহমান মুচকি হেসে বললেন
-“মা এখনই তো বয়স একটু ঘোরাফেরা করার বড় হলে কত দায়িত্ব মাথায় চলে আসে।”
-“হ্যাঁ তোর লাই পেয়ে ছেলে দুইটা মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটা তো গান বাজনা নিয়ে পড়ে আছে, আর অন্যটা টই টই করে ঘুরে বেড়ায়।”
দাদীর কথার মাঝে মাহিম বাসায় ঢুকলো। বেসিন থেকে হাত ধুয়ে টেবিলে বসে পড়ল। দাদি রেগে মাহিম কে বললো
-“সারাদিন তোর বাইরে কি? আর এসে পরিষ্কার না হয়েই হাত ধুয়ে খেতে বসে পড়লি?”
মাহিম হেসে বললো
-“কিউটি বেবি তোমাকে না রাগলে অনেক কিউট লাগে। দাদা নিশ্চয়ই তোমার এই কিউটনেস এর প্রেমে পড়েছিলো?”
নাতির এই লাগামহীন কথা শুনে শামসুন্নাহার বেগম কিছুটা লজ্জা পেলেন। এই মাহিমটা হয়েছে ভীষণ দুষ্ট। আমজাদ রহমান হেসে বললেন
-“ছোট রাজপুত্র আপনার নামে কিন্তু অনেক বিচার পেয়েছি?”
-“আমার নামে বিচার কে দিল? নিশ্চয়ই আমার কিউটি দাদী?”
শামসুন্নাহার বেগম এবার কিছুটা ভয় পেলেন। না জানি আবার কোন লজ্জায় ফেলে তার এই ছোট নাতি। তিনি দ্রুত খাওয়া শেষ করে রুমের দিকে চলে গেলেন। দাদির কান্ড দেখে তারা তিন বাবা-ছেলে হাসতে লাগলো।
মাহাদের মা আখি রহমান এবার বলে উঠলেন
-“তোমাদের বাপ ছেলেদের কি লজ্জা নেই ।বয়স্ক মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তোমরা কি জানো না। তুমি ছেলেদের তো শাসন করো না। আদরে আদরে দুইটা কে বাঁদর বানাচ্ছো।”
মাহাদ মা কে কিছুটা হাগ করে বললো
-“আমি মোটেও বাঁদর না। বাঁদর তো তোমার ছোট ছেলে।”
মাহিম চোখ মুখ কুঁচকে বললো
-“বাবা দেখলে ভাই আমাকে বাঁদর বলছে। তুমি ছাড়া তো আর কেউই আমাকে ভালবাসে না।”
-“তোকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছি তাই।”
দুই ভাইয়ের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হতে পারে ভেবে বাবা দু’জনকেই থামিয়ে দিল।
ডিনার শেষ করে রুমে এসে ফোন হাতে নিলো।কিছুক্ষণ পর দেখলো মাহাদকে দৃশ্য আনফ্রেন্ড করে দিয়েছে। এটা দেখে তো মাহাদ প্রচন্ড পরিমানে রেগে গেলো। প্রচন্ড রাগ নিয়ে সে দৃশ্য নাম্বারে কল দিল। দৃশ্যর আইডির সাথে সাথে ওর নাম্বারটা ও সে কালেক্ট করে নিয়েছে।
ততক্ষণে দৃশ্য ঘুমে কাদা কাদা হয়ে গেছে। দুইবার রিং হওয়ার পর ঘুম ঘুম কন্ঠে ফোনটা রিসিভ করলো।
-“হ্যালো কে বলছেন? এত রাতে কাউকে ফোন করা কোন ম্যানার্স এর মধ্যে পড়ে?”
মাহাদের সব রাগ যেনো মুহূর্তেই পানি হয়ে গেলো। পিচ্চিটার এই ঘুমধঘুম কন্ঠটা মাহাদের মনে সুখ অনুভুতি ঘটালো। কয়েক মুহুর্ত পর ফোন করার আসল কারণটা মনে করে কিছুটা ধমকের সুরে বলে উঠলো
-“তুমি আমাকে আনফ্রেন্ড করেছো কেনো?”
-“আরে ব্যাটা তুই আমার কোন কালের ফ্রেন্ড যে তোরে আনফ্রেন্ড করবো?”
মাহাদ কিছুটা রেগে বললো
-“তোমাদের সাহস কম না তুমি আমাকে তুই করে বলছো? কশিয়ে কানের নিচে একটা দিলে বাদরামি বের হয়ে যাবে।”
দৃশ্য এবার কিছুটা থতমত খেয়ে গেল। মুহূর্তেই সে ঘুমের রাজ্য থেকে বেরিয়ে আসলো। আর বললো
-“কে ভাই আপনি সমস্যা কি?”
-“আমি মাহাদ এবার বুঝতে পারছ?”
দৃশ্য যেন আকাশ থেকে পড়লো। এই লোক তার নাম্বার পেয়েছে কিভাবে?
-“আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?”
-“এটা কোন ব্যাপার না কি? যেটা জিজ্ঞেস করছি তার আনসার দাও আমাকে আনফ্রেন্ড কেন করেছো?”
-“আপনি না বললেন ওই সব ভাইয়া গুলো কে আনফ্রেন্ড করে দিতে। আপনিও তো সে ভাইদের মধ্যেই পড়েন। তাই আপনাকে আনফ্রেন্ড করেছি।”
মাহাদের নিজের গালে নিজেকে কষিয়ে থাপ্পড় মারতে মন চাইছে। পিচ্চিটা কি না বুঝে এমন করছে নাকি ইচ্ছে করে তাকে জব্দ করার চেষ্টা করছে?
-“তোমার ওই সব ভাইয়া গুলোর মধ্যে আমি পরি?”
-“হুঁম!”
-“আমি আবার রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছি এখনই এক্সেপ্ট করবে বেশি পাকামো করতে হবে না।”
-“ওকে। আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে ভাইয়া বাই।”
-“ওকে ঘুমিয়ে পড়ো বাই।”
দৃশ্য মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যাক এই ব্যাটা শাস্তির কথা ভুলে গেছে এটাই অনেক বেশি। দৃশ্য মুচকি হেসে ঘুমিয়ে পড়লো।
পরদিন স্কুল মাঠে দেখা হলো মাহাদের সাথে।চার বান্ধবী মিলে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে মাহাদ তাদের জন্য আইসক্রিম পাঠিয়েছে। আইসক্রিমের জন্য তাকে কি বোকাটাইনা বানিয়েছিলো একদিন। তাই আজ নিজের থেকে আইসক্রিম পাঠিয়েছে দৃশ্য জন্য। চার বন্ধুবী মনের খুশিতে আইসক্রিম খাচ্ছে। সায়মা হেসে বললো
-“আমার মনে হয় মাহাদ ভাইয়া আমাদের দৃশ্যর উপর ক্রাশ খেয়েছে।”
মৌ বললো
-“আমারও তাই মনে হয়। আগে তো মাহাদ ভাইকে কলেজে দেখাই যেত না। কিন্তু এখন প্রতিদিন আসে।”
দৃশ্য বিরক্তি নিয়ে বললো
-“ফালতু কথা কম বল। আমাকে দেখে ক্রাশ খাওয়ার কি আছে? তবে এ ভাইয়া টা দেখতে অনেক কিউট। আবার আমাদের আইসক্রিম খাওয়াচ্ছে। ক্রাশ খাওয়ার জায়গার প্রতিদিন আইসক্রিম খাওয়াইলে আমি হ্যাপি। জানিস আমারা এখন ফেসবুক ফ্রেন্ড।”
নাবিলা ভীতু গলায় বললো
-“দেখিস ফাহিম ভাই যেন আবার না জানে। না হলে কিন্তু আমাদের খবর আছে।”
দৃশ্য হেসে বললো
-“তুই এতো ভীতু হলি কিভাবে?”
-“ফাহিম ভাইকে দেখলেই আমার হাত-পা কাঁপে। কেমন গুন্ডা গুন্ডা ভাব।”
-“তুই আমার ভাইকে গুন্ডা বললি? দাঁড়া তোর খবর আছে?”
-“কেন ভুলে গেছিস একটা ছেলে তোর পিছনে দুইদিন ঘুরছিল বলে ফাহিম ভাই কি রামধোলাই না দিয়েছিলো। এরপর থেকে ভাইকে দেখলে আমার ভয় লাগে।”
-“চিন্তা করছিস কেন আমি কি মাহাদ ভাইয়ার সাথে প্রেম করতেছি নাকি?”
মৌ হেসে বললো
-“করলে কিন্তু খারাপ হবে না তোদের দুজনকে ভালোই মানাবে। আর মাহাদ ভাইয়া যেই কিউট তোর বাসায় সবাই দেখলেই তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবে।”
মৌ এর কথা শুনে দৃশ্য আড়চোখে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মাহাদের দিকে তাকালো। বন্ধুর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আর একটু পরপর দৃশ্যের দিকে তাকাচ্ছে।
বেশ কয়দিন পর।
আজ কাল ম্যাসেঞ্জারে মাহাদের সাথে টুক-টাক কথা হয় তার। অনেকটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাদের মাঝে।আর কলেজে আগের তুলনায় মাহাদকে বেশি দেখা যায়।
দৃশ্য আর নাবিলা বিকেলে কোচিং যাচ্ছে। আতিক স্যারের কাছে ম্যাথ পড়তেই বিকেলের কোচিংয়ে যেতে হচ্ছে।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন দৃশ্য কে ডেকে উঠল। পিছনে তাকিয়ে দেখতে পেল সাব্বির দাঁড়িয়ে। সাব্বির হলো সেই ছেলে যাকে একদিন ফাহিম সেই ধোলানি দিয়েছিল। দৃশ্য সাব্বিরকে দেখে অনেকটা অবাক হলো। সেদিনের পর সাব্বিরকে কখনোই দেখেনি।সাব্বির তার সামনে এসে দাড়িয়ে বললো
-“দৃশ্য তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে?”
দৃশ্য বিরক্তি নিয়ে বললো
-“দেখো সাব্বির ভাইয়া তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই।”
-“আমি তোকে পছন্দ করি প্লিজ তুই আমার কথাটা একটু বোঝো।”
দৃশ্যর এবার ভীষণ রাগ হচ্ছে। তাদের পাড়ার আরেকটা মেয়েকেও সাব্বির ডিস্টার্ব করে। এরকম একটা ছেলের সাথে কথা বলতে চায় না। তাছাড়া ফাহিম ভাইয়া জানলে কোচিংয়ে আসাটাই বন্ধ করে দিবে। তাই সে কোন কথা না বলে সোজা কোচিং এ চলে গেল।
রাতে দৃশ্য টেবিলে বসে পড়ছিলো।আতিক স্যার এতগুলা হোম ওয়ার্ক দিয়েছে।তাই করছিলো হঠাৎ তার মোবাইলটা বেজে উঠলো। দেখলেও মাহাদ কল করেছে। ফোনটা রিসিভ করতেই মাহাদ বললো
-“কি করে পিচ্চিটা?”
-“এইতো বসে আতিক স্যারের দেওয়া হোমওয়ার্ক করছিলাম। আল্লাহ জানে এই ব্যাটার আমার সাথে কোন জনমের শত্রুতা। সারাক্ষণ আমাকে প্যারার উপরে রাখে।”
দৃশ্যর কথায় মাহাদ হেসে উঠলো।আর বলে উঠলো
-“তোমার মত বাঁদর মেয়ের জন্য আতিক স্যার যথেষ্ট।”
-“আপনি আমাকে বাঁদর বললেন? আমি কি বাঁদরামি করেছি?”
-“তুমি তো সারাক্ষণই বাদরামি করো? এত দুষ্টু বুদ্ধি তোমার মাথায় আসে কোথা থেকে?”
-“কি আমাকে দুষ্টু বললেন? ঠিক আছে এই দুষ্টু মেয়ের সাথে কথা বলতে হবে না।”
কথাটা বলেই দৃশ্য ফোনটা কেটে দিলো। মাহাদ বুঝতে পারলো পিচ্চিটা রাগ করেছে। দু বার কল করলেও পিচ্চিটা ধরলো না।
আজ স্কুলে বসন্ত বরণ উৎসব। দিনটা বেশ ঘটা করে পালন করা হয় তাদের স্কুলে। সব মেয়েরা বাসন্তী কালার শাড়ি পড়ে স্কুলে আসে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় এই দিনটাতে। সকাল থেকেই দৃশ্য মায়ের আলমারিতে হামলা দিয়েছে। মায়ের বেশ কয়েকটা বাসন্তী শাড়ি থাকলেও সে কোনটা পড়বে তা ঠিক করতে পারছ না। শেষে সে নাবিলাকে ধরে নিয়ে আসলো। নাবিলা একটা হাতে ধরিয়ে বলল এটাই পড়তে। সবই ঠিক আছে কিন্তু দৃশ্য শাড়ি খুব একটা ক্যারি করতে পারে না। কিন্তু সবাই আজ শাড়ি পরবে আর সে থ্রি পিস পড়ে গেলে নিজেকে এলিয়েন মনে হবে। তাই দুই বোন মিলে শাড়ি পড়ে বেরিয়ে পড়ল স্কুলে।
স্কুলের মাঠে বিশাল বড় আয়োজন করা হয়েছে। একপাশে বিশাল বড় একটা স্টেজে করা হয়েছে। সম্ভবত সেখানে কোন প্রোগ্রাম হবে।
মাহাদকে আজ সকাল সকালেই আসতে হয়েছে স্কুলে। স্কুলের প্রোগ্রাম হবে সেখানে মাহাদ গান গাইবে না তা তো হতে পারে না। তাই সে আগেই এসে কিছুটা রিয়ার্সেল করে নিলো। আজ সে বাসন্তী রঙের একটা পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে। তার মনটা কিছুটা ব্যাকুল হয়ে আছে পিচ্চিটাকে দেখার জন্য। কালতো বলল-আজ শাড়ি পরে আসবে। এই প্রথম সে পিচ্চিটাকে শাড়ি পরা দেখবে। মনে মনে ভীষণ এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে তার।
সকাল থেকেই সে আর তার বন্ধুরা মিলে প্রোগ্রামের সবকিছু ঠিকঠাক করছে।
হঠাৎ তানিম মায়ের কাঁধে হাত রেখে বললো
-“মামা ওইটা আমাদের পিচ্চি ভাবি না?”
মাহাদের সব ফ্রেন্ডরা দৃশ্যকে পিচ্চি ভাবি বলে। বন্ধুর মনের খবর তারা আগেই বুঝে গেছে। তবে মাহাদ দৃশ্যর সামনে এমনটা ডাকতে মানা করে দিয়েছে। পিচ্চিটাকে নিজের অনুভূতির কথা গুলো সে আস্তে আস্তে বোঝাতে চায়।
তানিমের কথা শুনে মাহাদ পিছন ঘুরে তাকালো। মুহুর্তেই তার মাথাটা কেমন ঝিম ধরে উঠলো।সে লালপরী ,নীলপরীর নাম শুনেছেন কিন্তু বাসন্তী পরী আজ প্রথম দেখছেন। দৃশ্যকে দেখে মাহাদ কয়েকবার তার হার্টবিট মিস করলো।এই পিচ্চির মাঝে কি আছে যা তাকে এতোটা আকৃষ্ট করে? এই পিচ্চি কি কখনও বুঝবে তার মনের অনুভূতি গুলো? কি ভাবে বোঝাবে এই অবুঝ মেয়েটাকে যে তাকে দেখলে সে নিজের মাঝে থাকে না। মাহাদের অবস্থা দেখে রাফসান একটা পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো
-“মামা আগে একটু পানি খেয়ে নে। যেভাবে দেখছিস মনে হয় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।তবে সত্যিই আমাদের পিচ্চি ভাবীকে কিন্তু খুব কিউট লাগছে।”
তানিম মুচকি হেসে বললো
-“মামা এতদিন তোর ভাবীর বোন টাকে খেয়াল করি নাই। এই নাবিলাকে তো আমার মনে ধরছে।”
রাফসান মুচকি হেসে বললো
-“শালা তোর সব মেয়েরই মনে ধরে।”
-“আরে দোস্ত তুই বুঝতেছিস না এটা একটু স্পেশাল।”
কারো কথায়ই মাহাদের কানে ঢুকছে না। পিচ্চিটাকে হঠাৎ করেই কেমন বড় বড় লাগছে। আচ্ছা পিচ্চিটাকে বউ সাজলে কেমন লাগবে?