তোমার_আমার_প্রণয়,10,11

0
1271

#তোমার_আমার_প্রণয়,10,11
#israt_jahan_arina
#part_10

আজ আকাশে কালো মেঘ জমেছে।এই মেঘ সবার দৃশ্যপটে আসলেও এক কিশোরীর মনে আকাশে যে মেঘ জমেছে তা দৃশ্যমান নয়। ভীষণ মন খারাপ নিয়ে বারান্দায় বসে দেয়ালে আঁকাআঁকি করছে দৃশ্য। এটা তার ছোটবেলার স্বভাব। যখনই মন খারাপ হবে বারান্দার দেয়ালে বিভিন্ন নকশা আঁকতে শুরু করবে।বারান্দার দেয়াল তার হাজারো নক্সায় ভরপুর। এর জন্য মায়ের কাছে হাজার বকুনি খেয়েছে। কিন্তু তবুও এ বাজে স্বভাব ছাড়তে পারেনি। আজও তার ভীষণ মন খারাপ।

মাহাদের সাথে তার সম্পর্কটা আসলে কি সেটা সে জানে না। নিজের থেকে পাঁচ বছর সিনিয়র একজনকে ঠিক বন্ধুও বলা যায়না। শুধু এটা জানে মাহাদের সাথে কথা বলতে তার ভীষণ ভালো লাগে।সারাক্ষণ সেই ধূসর চোখ গুলো দেখতে ইচ্ছে করে। আচ্ছা ছেলেদের চোখে কি এত সুন্দর হয়?

মাহাদকে নিয়ে তার অনুভূতিটাও এই কিশোরী মনটা বুঝতে পারেনা। স্কুলের প্রায় অনেক মেয়েই মাহাদের ওপর ভীষণ ইমপ্রেস। এ কথা দৃশ্য নিজেও জানে। কিন্তু মাহাদকে কখনো কোন মেয়ের সাথে খুব একটা মিশতে দেখেনি। তার মতে মাহাদ একমাত্র তার সাথে সবচেয়ে ভালো এবং ইজি ভাবে মিশেছে। কিন্তু আজ রামিসার সাথে মাহাদকে ঠিক সহ্য করতে পারেনি দৃশ্য। কেন এমনটা হয়েছে তা সে জানে না।

গত কাল রাত থেকে মাহাদ তাকে অসংখ্য বার কল আর মেসেজ করেছে।সে কোনো রেসপন্স করেনি।আজ সে স্কুলে আর কোচিং এ যায়নি। মাহাদ বেশ কয়েকবার কল করেছে ওকে কিন্তু সে রিসিভ করেনি। মেসেঞ্জারে কোন রিপ্লাই দেয় নি।তার কিশোরী মনে প্রচন্ড অভিমান জমা হয়েছে।

দৃশ্যর হঠাৎ চোখ পরল পাশের বাসার বারান্দার দিকে। তমা আপু বারবার বারান্দায় আসছে আবার ফিরে যাচ্ছে। শত অভিমান এর মাঝেও মুখে হাসি ফুটে উঠল দৃশ্যর। কারণ তমা বারবার ফাহিমের রুমের জানালার দিকে তাকাচ্ছে। সুন্দরী মেয়েদের যদি লিস্ট করা হয় সেখানে তমা আপুকে অনায়াসেই জায়গা দেওয়া যায়। তমা আপুর চুল দেখে ছেলেরা ক্রাশ খায়। হাঁটু অব্দি লম্বা ঘন চুল তার। ভীষণ শান্ত আর লজ্জাবতী মেয়ে সে। ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছে ফাহিম ভাইয়ের প্রতি সে ভীষণ দুর্বল। হবেনাই বা কেন? তার ভাই কম কিসে? 5 ফুট 11 ইঞ্চি লম্বা উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রঙের ছেলেদের দেখলে সব মেয়েরাই দুর্বল হয়ে পড়ে। তাছাড়া এলাকায় ফাহিম ভাইয়ার বাপের ক্ষমতার একটা প্রভাব রয়েছে। যেটা তিনি প্রয়োজন ভেদে প্রয়োগ করে থাকেন।বাহিরে ফাহিম যেমন হোক না কেনো,ভাই হিসেবে সে বেস্ট। হাসবেন্ড হিসেবেও নিশ্চয়ই ভীষণ কেয়ারিং হবে?
দৃশ্য মুচকি হেসে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

-“ভাইয়া বাসায় নেই আপু।”

হঠাৎ দৃশ্যর কথায় তমা বিচলিত হয়ে পড়ল।এতক্ষণে সে দৃশ্যকে খেয়াল করলো।এই বিচ্ছু যে এই জায়গাতে বসে আছে টা সে বুঝতে পারেনি।কিছুটা ঘাবড়ে বললো

-“তুই এই সময়ে বাসায় কি করিস? কোচিংয়ে যাসনি?”

-“গেলে কি আর এই জায়গায় দেখতে?”

-“আজ যাসনি কেনো?”

-“এমনি।ভালো লাগছে না তাই।”

-“তোর কি মন খারাপ?”

-“না।”

তমা বুঝতে পারলো দৃশ্যর কোনো কারণে মন খারাপ।তাই সে বললো

-“গলির মোড়ে ফুচকা খেতে যাবি?”

মুহূর্তেই দৃশ্য চোখ চকচক করে উঠলো। ফুচকা আইসক্রিম চকলেট এসব জিনিস সে কিছুতেই মানা করতে পারে না।
_______________________
সকাল থেকেই মাহাদের মেজাজ ভীষণ গরম। গতকাল বিকেল থেকে দৃশ্য কে কল করে যাচ্ছে কিন্তু সে কিছুতেই রিসিভ করছে না। তাই সে সকল সকাল রেডি হয়ে কলেজে চলে গেল। ভেবেছে কলেজে দৃশ্য সাথে কথা বলবে। কিন্তু সেখানে যেও দৃশ্যর কোন দেখা পেলো না। না দৃশ্য এসেছে আর না নাবিলা। মৌকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো আজ দৃশ্য স্কুলে আসেনি। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল তার।ক্লাসে খুব একটা মনোযোগ দিতে পারেনি। সারাটা দিন খুব কষ্টে কাটিয়ে বিকেলে দৃশ্যর কোচিংয়ের মোড়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। না সেখানেও আজ দৃশ্যর কোন দেখা পেল না। মাহাদকে মন খারাপ করতে দেখে জয় বললো

-“দোস্ত তোর তো পুরাই দেবদাসের মতো অবস্থা? আমাদের পিচ্চি ভাবি মাহাদকে পুরা দেবদাস বানাইয়া ছাড়ছে।”

জয়ের কথা শুনে রাফসান আর তানিম হেসে উঠলো।
মাহাদ বিরক্ত নিয়ে বললো

-“শালা মজা নিস না। মন-মেজাজ এমনি খারাপ।”

রাফসান মজার সুরে বললো
-“একটা বাচ্চার প্রেমে পড়ছিস এবার বুঝ মজা। নিজের মনের কথা না বলতে পারছিস, আর না ওই বাচ্চাটা নিজে থেকে বুঝতে পারছে?”

তানিম বুঝতে পারলেও মাহাদের মেজাজ গরম হচ্ছে। তাই সে বললো

-“চল কোথাও ঘুরে আসি। পাশের এলাকায় একটা নতুন শর্মা হাউজ খুলেছে। চল সেখানে ঢু মেরে আসি।”

তামিমের কথায় সবাই রাজি হয়ে গেল। তারা বেরিয়ে পড়লো। সেখান থেকে ফিরতে রাস্তায় হঠাৎ মাহাদের চোখ পরল। দৃশ্য খুব মজা করে ফুচকা খাচ্ছে। পাশের আরেকটা মেয়ে যার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে আর একটা করে ফুচকা মুখে পড়ে নিচ্ছে। দৃশ্য সে হাসি যেন মাহাদের অন্তরে জ্বালা ধরিয়ে দিল। এই মেয়ের টেনশনে গতকাল রাতে সে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি। আজ সারা দিন চরম অস্থিরতায় কাটিয়েছে। যে মেয়ের জন্য তার বন্ধুরা তাকে দেবদাস টাইটেল দিয়ে ফেলেছে, সে মেয়ে কিনা আরামসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে? মানে মনে ভীষন রাগ হল দৃশ্যর উপর।

সে ফোনটা বের করে দৃশ্য কে কল করলো। দৃশ্য হাতে থাকা ফোনের দিকে একবার তাকিয়ে আবার ফুচকায় মনোযোগ দিল। মাহাদের রাগটা যেন আরো বেড়ে গেল।এই বাচ্চা মেয়েটা কিনা তাকে ইগনোর করছে? মাহাদ যে রেগে আছে সেটা তার বন্ধুরাও খেয়াল করলো। মাহাদ যেমন শান্ত ঠিক তেমনই পাগলাটে। বন্ধুরা মাহাদের রাগ সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত।ঠিক তখনই রেগে মাহাদ সামনে এগোতে গেলে তানিম তাকে আটকালো। আর বললো

-“প্লিজ মাহাদ এখানে কোন সিনক্রিয়েট করিস না। এতে দৃশ্যর সমস্যা হতে পারে। আর আমি যতটুকু জানি দৃশ্য এই এলাকাতেই থাকে। তাই এখন এখানে রাগ ঝাড়তে যাস না।”

রাফসান আর জয়ও একই কথা বললো। মাহাদ নিজেকে কিছুটা শান্ত করে সেখান থেকে চলে গেল।
রাত আটটার দিকে মাহাদ বাসায় ফিরলো। বাসায় ফিরেই আমজাদ রহমানের সাথে দেখা হলো তার। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলেন ছেলের কোন কারণে মন খারাপ। তাই তিনি বললেন

-“কি ব্যাপার আমার রাজপুত্রর কি মন খারাপ?”

মাহাদ জোরপূর্বক মুচকি হেসে বলল
-“কই নাতো বাবা?”

-“তা বাবা তোমার গানের প্র্যাকটিস কেমন চলছে?”

-“ভালো। তুমি ঢাকায় যাবে কবে বাবা?”

-“আমি তো কাল বিকেলে যাব।”

-“তোমার জন্য অনেক ঝামেলা হয়ে যায় তাই না বাবা ঢাকা টু রাজশাহী।”

আমজাদ রহমান কিছুটা হেসে বললেন
-“তাতো একটু হয়। কিন্তু আম্মা ঢাকায় যেতে চায় না তাই তো বাধ্য হয়ে আমার একা একাই ঢাকা থাকতে হচ্ছে।”

-“চিন্তা করো না বাবা। ইন্টার শেষ করে আমিও ঢাকায় ভার্সিটিতে ভর্তি হব। তখন তুমি আমি একসাথে ঢাকায় থাকবো।”

-“হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে। তখন আর আমি রাজশাহী ফিরবো না দেখবি তোর মা আর দাদী সুড়সুড় করে ঢাকায় চলে এসেছে।”

মাহাদ হেসে বললো
-“বাবা আমি কিন্তু গানটাকে আমার ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চাই।”

আমজাদ রহমান ছেলের কাঁধে হাত রেখে বললেন
-“অবশ্যই কেন না? আমার ছেলের প্রতি আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে।তুই অবশ্যই গানে খুব ভালো ক্যারিয়ার করতে পারবি।”

-“থ্যাংক ইউ বাবা আমাকে সাপোর্ট করার জন্য।”

-“তোদের দুই ভাইকে আমি সবসময় সাপোর্ট করি।”

বাবা-ছেলের কথার মাঝে সেখানে আখি রহমান উপস্থিত হলেন। তিনি মাহাদ কে উদ্দেশ্য করে বললেন

-“কি ব্যাপার মাহাদ বাসায় আসতে এতো দেরি কেন হলো? এতো লেট করে বাসায় আসা কিন্তু আমার মোটেও পছন্দ না। এতদিন মাহিম লেট করে আসতো এখন তুই ও শুরু করেছিস?”

মাহাদ মুচকি হেসে মাকে বললো
-“সরি মা আর এমন হবেনা।”

-“গানের প্রোগ্রাম থাকলে তো আমি মানা করি না রাতে বাসায় বাইরে থাকতে। কিন্তু অকারণে বাড়ির বাইরে রাতে থাকাটা আমার পছন্দ না।”

মাহাদ মায়ের কোলে মাথা রেখে বললো
-“ওকে আম্মাজান এরপর থেকে খেয়াল রাখবো।”

আখি রহমান হেসে ছেলের মাথায় হাত বুলাতে থাকলেন।
পরদিন স্কুলে এসেই মাহাদ দৃশ্যের খোঁজ করলো। এখনো স্কুলে আসেনি। স্কুলের গেটে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখতে পেল দৃশ্য আর নাবিলা আসছে। মাহাদ ইশারায় দৃশ্যকে কাছে ডাকলো। কিন্তু দৃশ্য না দেখার ভান করে ক্লাস রুমে চলে গেল। মাহাদ অবাক হয় সে দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। দৃশ্যর এমন করার কারণ সে কিছুতেই ধরতে পারছে না। সে চলে গেল সোজা অডিটোরিয়ামে। কাল স্কুলে অনুষ্ঠান তাই তাকে বেশ কিছু কাজ দেখাশোনা করতে হবে।
টিফিন আওয়ারে দৃশ্য, নাবিলা,মৌ আর সায়মা বের হলো ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে। অডিটোরিয়ামের পাশ দিয়ে যেতেই তারা সবাই দাঁড়িয়ে পড়ল। কাল অনুষ্ঠানের জন্য অডিটোরিয়াম কে সুন্দরভাবে সাজানো হচ্ছে। তারা দাঁড়িয়ে সে সাজানো দেখতে লাগলো। কিন্তু দৃশ্য নজর অন্যদিকে। মাহাদ মই দিয়ে উপরে উঠে বেলুন সাজাচ্ছে। আর নিচে দাঁড়িয়ে রামিসা মাহাদকে বেলুন পাস করছেন। দুজনের মধ্যে বেশ কথা হচ্ছে। হঠাৎ সায়মা বলে উঠলো

-“রামিসা আপু আর মাহাদ ভাই কি রিলেশন আছে?”

মৌ কপাল কুঁচকে বললো
-“জানিনাতো? তোর এমন কেন মনে হলো?”

-“আরে দেখিস না, ইদানিং রামিসা আপু আর মাহাদ ভাই কেমন চিপকে থাকে।”

-“ঠিক বলেছিস আমিও বিষয়টা খেয়াল করেছি। কিন্তু এই রমিসা আপুকে আমার মোটেও ভালো লাগে না। ভীষণ রকমের ঢঙ্গী মাইয়া। এর আদিখ্যেতা দেখলে গা জ্বালা করে।”

দৃশ্য ওদের কথা শুনছে আর রাগে ফুঁসছে। আবার চোখ ফিরালো মাহাদের দিকে। মাহাদ মই থেকে নিচে নামতেই রামিসা মহাদের বুকের পাশে এসে হাত দিয়ে শার্ট ঝড়তে লাগলো।আর মাহাদ হেসে তাকে মানা করতে লাগলো।এই ঘটনাটা দৃশ্যর কোমল মনে ভীষণ আঘাত হানে। মাহাদকে অন্য কোনো মেয়ে স্পর্শ করছে এইটা সে কিছুতেই মানতে পারছে না।তার চোখ জোড়া মূহুর্তে ভিজে উঠলো।মনে মনে সে মাহাদকে বেশ কয়েকটা গালি দিলো।খুব সাবধানে সবার আড়ালে চোখ মুছে নিলো।আর ভাবলো

আর জীবনে কোনো দিন এই ব্যাটাকে দেখবে না।কোনোদিন এই লোকের সাথে কথা বলবে না।আর একবার তাকে কল দিলে অনেক গুলা গালি দিয়ে দিবে।দৃশ্য ছোট বেলা থেকে ভীষণ আদরে বড়ো হয়েছে।সবার ছোট হওয়াতে কোনোদিন নিজের কোনো জিনিস কারো সাথে শেয়ার করতে হয়নি।তাই সে নিজের জিনিসের ভাগ দেওয়া কখনো শেখেনি।তবে আজ তার মনে হচ্ছে কেউ তার সবচাইতে প্রিয় জিনিসে ভাগ বসাচ্ছে। যেটা সে কিছুতেই মানতে পারছে না।পরক্ষণে ভাবলো সে কি কোনো ভাবে ওই মানুষটাকে নিজের বলে ভাবছে?আদো ওই মানুষটাকি তার?

#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_11

রাত বাজে সারে চারটা। স্বাভাবিকভাবেই এই সময়টাতে চারিদিক থাকে নিস্তব্ধ। সকলেই গভীর ঘুমে মগ্ন। শুধু ঘুম নেই মাহাদের চোখে। ফ্লোরে বসে খাটে হেলান দিয়ে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে এসি চলছে তাই মাথার উপরে ফ্যান টা আস্তে আস্তে ঘুরছে। রাতে জয় তাকে রুমে দিয়ে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে ছিল। নেশাটা তোর এখনো রয়ে গেছে কিন্তু ঘুম, সে তো দূর দুরান্তে ও দেখা যাচ্ছে না।
আজ তো অনেক ড্রিঙ্ক করলো সে। তবুও দৃশ্যর ভূত মাথা থেকে কিছুতেই নামাতে পারছে না। এটা আজ নতুন না।এই চার বছরে সে এক মুহূর্তের জন্য এই পিচ্ছিটাকে ভুলতে পারেনি সারাদিন নিজেকে ব্যাস্ত রাখলেও দিনশেষে পৃথিবীতে যখন নিস্তব্ধতা নেমে আসে তখন মাহাদের হৃদয়ে চলে দৃশ্য নামক তাণ্ডব।মদের নেশার চাইতেও ওই পিচ্চির নেশাটা মাথায় বেশি জেঁকে বসেছে। পিচ্চি কেন বলছে সে? দৃশ্যত আর এখন সেই পিচ্চিটা নেই। পিঠ অব্দি চুলগুলো এখন কোমর অব্দি চলে এসেছে। অ্যাস কালার জিন্স সাথে লং কুর্তি। গলায় বাঁধা সে ছোট স্কার্ফ। আর যাই হোক তাকে পিচ্চি তো লাগছিলো না। সেই কিশোরী এখন যুবতী হয়ে উঠেছে। শুধু বদলাইনি একটা জিনিস। আগেও শুকনো ছিল এখনো তেমনি আছে। এই মেয়েটা কি ঠিকমত খায়না। তার অতি আদরের ভাই তার কি এখন সে খেয়াল রাখে না?

আজ বিকেলে মাহাদ দৃশ্যকে নিজের অফিসে একদমই আশা করেনি। যখন দৃশ্যকে দেখেছিলো মুহুর্তেই তার হৃদস্পন্দন থমকে গেছে। যেমনটা প্রথম দেখায় হয়েছিল। মেয়েটার জন্য একদিন সে নির্ঘাত হার্ট এটাক করবে। যখন-তখন হার্টবিট বন্ধ করে দেয়। এই চার বছরে বহু মেয়েকে দেখেছে। যারা তার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে। একটা বার তার সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা করে। হাজারো মেয়ের সাথে তার ওঠাবসা হয়েছে। কাজ করেছে অনেক মডেলের সাথে ও। কিন্তু কেউ তার হার্টকে ছুঁতে পারেনি। কাউকে দেখে মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি যে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হয়নি তাকে দ্বিতীয়বার দেখাটা জরুরি। অথচ এই মেয়েটা, এই মেয়েটা তো প্রতিনিয়ত তার হার্টে আঘাত করে যাচ্ছে।

দৃশ্য কে দেখে সে যতটা অপ্রস্তুত ছিল হয়তো দৃশ্যও ঠিক ততটাই অপ্রস্তুত ছিল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মেয়েটার চোখ ভিজে ওঠে ছিলো। কিন্তু সেই চোখ বেয়ে পানিগুলো গড়িয়ে পড়েছে কিনা সেটা মাহাদ জানেনা।কারন ততক্ষনে সে সামনের সব কিছুই ঝাপসা দেখছিলো। কতগুলো দিন পর সে এই মেয়েটাকে দেখতে পেয়েছে।লাস্ট যখন দেখেছিল তখন তো, আর কিছুই ভাবতে পারছেনা মাহাদ। প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। মনে হচ্ছে বুকের উপরে যে পাথরটা ছিল তাতে কেউ আরো জোরে চাপ প্রয়োগ করেছে। দুই হাতে ওর চুলগুলো টানতে শুরু করলো মাহাদ। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো। সে জানে তাকে কান্না মোটেও মানায় না। অন্তত তার ব্যক্তিত্বের সাথে জিনিসটা যায় না।কিন্তু সে মনের সাথে যুদ্ধ করতে পারছে না।তার মন আর মস্তিষ্কে এই মেয়েটা তাণ্ডব চালাচ্ছে।যে তাণ্ডবে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে মাহাদ।

হঠাৎই মাহাদের মনে পরতে থাকলো সেই দিনের কথা।

সকাল সকাল মাহাদ আজ কলেজে উপস্থিত হয়েছে। বিদায় অনুষ্ঠানে সকল প্রিপারেশন তাকে দেখাশোনা করতে হচ্ছে। কিন্তু কাজের সে মন বসাতে পারছে না। পিচ্চিটা তার মাথা নষ্ট করে রেখেছে। দুদিন ধরে ভীষণ ইগনোর করছে। এই দুদিনে সে প্রায় কয়েকশ বার দৃশ্য কে কল করেছে। কিন্তু এই মেয়েটা একটা বার কল রিসিভ করেনি। আর না দিয়েছে কোন মেসেজ এর রিপ্লাই।

মন এবং মেজাজ দুটোই ভীষণ খারাপ মাহাদের। কোন কাজেই ঠিকভাবে মন বসাতে পারছে না। গত রাতেও ঠিকভাবে ঘুমাতে পারেনি। কিছুক্ষণ পরেই জয় রাফসান ও তানিম আসলো। মাহাদকে দেখেই রাফসান হেসে বললো

-“কিরে মামা মন-মেজাজ খারাপ মনে হচ্ছে?”

তানিম খোঁচা মেরে বললো
-“মাহাদকে দেখে আমার প্রেম করার সাধ মিটে গেছে। বেচারা এখনও প্রেম শুরু করতে পারেনি তাতেই এই অবস্থা।”

জয় তাদেরকে ধমক দিয়ে বললো
-“শালারা মজা পড়ে নিস। মাহাদ তুই ঠিক আছিস?”

মাহাদ মনমরা হয়ে জবাব দিলো
-“ঠিক আছি কিনা জানিনা? তবে মাথাটা গরম আছে। এই মুহূর্তে ওকে সামনে পাইলে তার কানের নিচে দুইটা লাগাইতাম। এইটুকু মেয়ে কিনা আমাকে ইগনোর করে?”

জয় বললো
-“মাথা গরম করিস না, ওর সাথে আগে ঠান্ডা মাথায় কথা বল।”

মাহাদ মাথা নেড়ে সায় দিল। তারপর ব্যস্ত হয়ে পড়লো কাজে। সে একটা কালো পাঞ্জাবি পড়েছে। দৃশ্যর ও আজ কালো শাড়ি পড়ে আসার কথা। কারণ ক্লাস এইটের মেয়েদের ড্রেসকোড কালো ছিলো।

মাহাদের কাজের মাঝেই হঠাৎ রামিসা চলে আসলো। রামিশা একটা অরেঞ্জ কালারের শাড়ি পড়েছে এটা ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের মেয়েদের ড্রেস কোড। রামিসা মেয়েটাকে একটু অদ্ভুত লাগে মাহাদের কাছে। কিছুটা গায়ে পরা স্বভাব মেয়েটার। ভলেন্টিয়ার টিমে মেয়েটা না থাকলে সে মোটেও কথা বলতে ইচ্ছুক ছিল না তার সাথে। নিতান্তই ভদ্রতার খাতিরে কথা বলা। রমিসা এসেই লজ্জালজ্জা মুখ নিয়ে মাহাদকে বললো

-“হাই মাহাদ, তোমাকে আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে।”

-“ধন্যবাদ”

মাহাদের কথায় রামিসা মনে মনে একটু কষ্টই পেলো। কলেজে আসার পর থেকে সবাই তার ভীষণ প্রশংসা করেছে। কিন্তু সেতো শুধু মাহাদের কাছ থেকে প্রশংসা শুনতে চাচ্ছে। কিন্তু মাহাদ তাকে কোন কমপ্লিমেন্ট দিলো না। সে আবার বললো

-“আমাকে কেমন লাগছে বললেনা তো?”

মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“তোমাকেও ভালো লাগছে।”

মাহাদের কথায় রামিসা সন্তুষ্ট হতে পারলো না।মাহাদ আর রামিসা করিডরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। মাহাদ বারবার গেটের দিকে তাকাচ্ছে। তার চোখ দুটো দৃশ্যকে খুঁজছে। আবারো গেটের দিকে চোখ পড়তেই মাহাদের চোখ স্থির হয়ে গেল। সে কি ভুল দেখছে?

তার মনে হচ্ছে গেইট দিয়ে কোন পরী ভেতরে ঢুকেছে। কালো জামদানি শাড়ি,খোঁপায় বেলি ফুলের মালা। মহাদের মনে হচ্ছে ভুল করে কোনো পরী আকাশ থেকে ছিটকে পড়েছে। আর সোজা তার সামনে এসে পড়েছে।

বাহ্যিক সৌন্দর্যকে মাহাদ কখনোই প্রাধান্য দেয় না। সেতো দৃশ্যর লাল হওয়ার নাক আর কাঁদো কাঁদো চেহারার প্রেমে পড়েছিল। যেখানে ছিল বাচ্চামীতে ভরপুর। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে দৃশ্যর বাহ্যিক সৌন্দর্য তাকে দুর্বল করতে প্রস্তুত। সেতো সবচেয়ে বেশি দুর্বল হচ্ছে দৃশ্যর ঠোঁটের গারো লিপস্টিক এর প্রতি। বাচ্চা মেয়েটার এত গারো লিপস্টিক দেওয়ার কি প্রয়োজন? মাহাদের ভেতরে অনুভূতির তোলপাড় চলছে। এই মেয়েটা ঠিক কত রূপে তাকে প্রেমের জালে ফাঁসাবে তা মাহাদের জানা নেই।

মাহাদকে এভাবেই স্থির হতে দেখে রামিসা কিছুটা অবাক হলো। মাহাদের দৃষ্টি অনুসরণ করে গেটের দিকে তাকালো। দুইটা বাচ্চা মেয়ে ছাড়া আর কিছুই তার নজরে আসলো না।
দৃশ্য আর নাবিলা দুজনেই কালো শাড়ি পড়ে আজ কলেজ এসেছে। দুজনেই আজকে খোঁপা করে বেলি ফুলের মালা গেঁথেছে। এই বেলি ফুলের জন্য সকাল-সকাল ফাহিমকে ভীষণ কষ্ট করতে হয়েছে। ভোরে তাকে পাঠিয়েছে দুই বোন মিলে বেলি ফুলের মালা আনতে। তবে বেলি ফুলের মালা সে চার টা আনিয়েছে। বাকি দুইটা মৌ আর সায়মার জন্য। দুই বোন কথা বলতে বলতে স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকছে।

হঠাৎ দৃশ্যর নজর গেলো সামনে করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকা মাহাদের উপর। কালো পাঞ্জাবি পড়া। সাথে চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা। ফর্সা শরীরে কালো পাঞ্জাবি টা ভীষণ রকমের মানিয়েছে। দৃশ্য একবার নিজের দিকে তাকালো। এই লোকটা তার থেকেও দুই সেড বেশি ফর্সা। ছেলেদের এত ফর্সা কেন হতে হবে? মাহাদকে দেখে দৃশ্যের মনে হল সে ভীষণ রকমের ক্রাশ খেয়েছে। কিন্তু সেই ক্রাশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারলো না। কারণ তার পাশেই রামিসা দাঁড়িয়ে। হঠাৎ করেই পূর্বের অভিমান গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।
রামিসা যে সুন্দরী তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই দৃশ্যর। কিন্তু মাহাদের সাথে তাকে কিছুতেই দেখতে পারছেনা দৃশ্য। তার তো মন চাইছে ওই রামিসার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে। কিন্তু তবুও নিজেকে সংযত রেখে সে চলে গেল। সামনেই মৌ আর সায়মা দাড়িয়ে। দৃশ্য দ্রুত গেলো তাদের কাছে। ব্যাগ থেকে তাদের জন্য আনা বেলি ফুলের মালা গুলো খোপায় লাগালো।

দৃশ্য যে তাকে দেখেও না দেখার ভান করলো সেটা মাহাদ ঠিকই বুঝতে পেরেছে। কিছুক্ষণ পরেই অনুষ্ঠান শুরু হলো। সকল ক্যান্ডিডেটদের ফুল দিয়ে সম্বর্ধনা জানানো হলো। দৃশ্য আর তার বান্ধবীরা মিলে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। নানান পোজে তারা ছবি তুলছে। মাহাদ কোন কাজেই মনোযোগ দিতে পারছে না। দৃশ্যকে সে অনেকটা নজরে নজরেই রেখেছে। আজ সে তাকে নজর ছাড়া করতে ইচ্ছুক না। কারণ তার এই ছোট্ট পাখিটাকে যে ভীষণ আবেদনময়ী লাগছে। মাহাদ হাতের কাজগুলো গুছিয়ে গেলো ওর সামনে। দৃশ্য তখন সেলফি তোলায় ব্যস্ত। মাহাদ দৃশ্য কে ডাকলো।কিন্তু দৃশ্য না শোনার ভান করল।আর ভিড়ের দিকে চলে গেল। মাহাদ যেনো নিজের রাগকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছে না।

ভিড়ের মাঝে আসতেই দৃশ্য দেখা হলো রাকিবের সাথে। রাকিব হল নাবিলার মামাতো ভাই। সে এবার পরীক্ষার্থী। তাদেরকে দেখেই রাকিব হেসে বললো

-“আরে বাপরে, পিচ্চি গুলারে দেখি একদম পরী লাগছে।”

দৃশ্য হেসে বললো
-“ভাই আপনি কি জীবনে পরী দেখেছেন?”

-“নাতো?”

-“তাহলে কিভাবে বুঝলেন আমাদের পরীর মত লাগছে? পরীরা তো রাক্ষসীর মতও হতে পারে?”

এবার রাকিব কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেল। আসলেই তো সে কখনোই পরী দেখিনি। পরীরা যে সুন্দর হবে এমন তো কোন কথা নেই।

রাকিব এবার একটু হেসে বললো
-“তুমি আজকে দারুন একটা কথা বলেছ দৃশ্য। পরী মানে যে সুন্দর হবে এমন কোন কথা নেই। তারা তো দেখতে বিচ্ছিরিও হতে পারে। এত সুন্দর লজিক দেওয়ার জন্য একটা ছোট্ট উপহার।”

কথাটা বলেই সে তার হাতে থাকা গোলাপটা দৃশ্যকে দিলো। দৃশ্য হাসিমুখে গ্রহণ করলো। তাদের মধ্যকার কথোপকথন মাহাদ শুনতে না পারলেও শেষের গোলাপ নেওয়াটা মাহাদ কিছুতেই মানতে পারলাম না। এবার যেন তার মাথায় রক্ত উঠে গেছে।

দৃশ্য আর তার বান্ধবীরা করিডরে হাঁটছে। তারা মূলত আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছে। দৃশ্য তার হাতে থাকা গোলাপ টা নিয়ে বিভিন্ন পোজ দিচ্ছে। আর মৌ তার ছবি তুলে দিচ্ছে। কিছুটা সামনে সায়মা আর নাবিলা দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। দৃশ্য গোলাপের সুবাস নিচ্ছে এমন একটা পোজে দাঁড়িয়ে আছে আর মৌ ছবি তুলছে। মৌ এর হঠাৎ মনে হল ক্যামেরার সামনে কেউ চলে এসেছে আর মুহূর্তেই দৃশ্য ক্যামেরা স্পটের বাইরে। মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকালো। আর দেখতে পেলো মাহাদ দৃশ্যর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।মৌ সেই দিকে যেতে গেলে হঠাৎ জয় চলে আসে তার সামনে। আর বলে

-“কি বাচ্চা বেয়াইন কোথায় যান?”

মৌ কপাল কুঁচকে বললো
-“বেয়াইন মনে? কি বলছে এসব ভাইয়া?”

-“আরে তোমার কোন বান্ধবী যদি আমার কোন বন্ধুর বাচ্চার মা হয়ে যায় তাহলে তুমি আমার বিয়াইন হবা তাই না?”

মৌ এর ছোট মাথায় কিছুই ঢুকলো না। সে শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো।

দৃশ্য চোখ বন্ধ করে গোলাপের সুবাস নিচ্ছে এমন একটা পোজ দিতে চেয়েছিল। চোখ বন্ধ অবস্থায় তার মনে হলো সে দৌড়চ্ছে। চোখ খুলেই সে হতবাক হয়ে গেল। মাহাদ তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য যেন দৃশ্য কিছুই বুঝতে পারলো না। মাহাদ তাকে সোজা লাইব্রেরীতে নিয়ে আসলো। দৃশ্য এক বার লাইব্রেরি চারিদিকে চোখ বোলালো।পুরো লাইব্রেরী খালি।পর মুহূর্তেই মাহাদের দিকে তাকাতেই তার গলা শুকিয়ে আসলো। ভীষণ রাগী চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। দৃশ্য কিছু বলার আগেই মাহাদ বলে উঠলো

-“এই তোর সমস্যা কি? আমাকে ইগনোর কেন করছিস? দুইটা দিন ধরে আমার মাথাটা নষ্ট করে রেখেছিস। কতগুলো কল করছি তোকে কত মেসেজ করেছি কোন জবাব কেন দিস না?”

দৃশ্য ভীষণ অবাক হল। মাহাদ তাকে তুই তোকারি করছে? মাহাদ কখনই তার সাথে এতটা রেগে কথা বলেনি। দৃশ্যর ভীষণ ভয় হচ্ছে। মাহাদকে একমাত্র সেই দিনই এতটা রাগতে দেখেছিল যেদিন রাব্বি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিল। আচ্ছা মাহাদ কি এখন তাকেও রাব্বির মতোই মাইর দিবে? কিন্তু সেতো এতো মার সহ্য করতে পারবেনা।আজ নির্ঘাত মাহাদের হাতে তার মৃত্যু লেখা। ভয়ে রীতিমতো তার শরীর কাপতে লাগলো। দৃশ্য কে চুপ থাকতে দেখে মাহাদ চেঁচিয়ে বলে উঠলো

-“কথা বলছিস না কেনো?”

ঠিক সেই মুহূর্তেই দৃশ্যর অন্য হাতের সেই গোলাপটা চোখে পড়লো। মাহাদ মুহূর্তে এই গোলাপটা ছিনিয়ে নিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিল আর পা দিয়ে গোলাপটাকে পিষতে শুরু করলো। দৃশ্য যেন এবার ভয়ে মরে যাবে। মাহাদ কি তাকে ঐ গোলাপটার মতই পিসে ফেলবে?
প্রচন্ড রেগে মাহাদ বললো

-“রাকিবের থেকে গোলাপ নিয়েছিস কেন? ওই রাকিব কে কি ভালো লাগে? আর কোনদিন যেন ওর সাথে কথা বলতে না দেখি?”

এতক্ষণে দৃশ্য থর থর করে কাঁপতে লাগলো। মুখ দিয়ে কোন কথা বের করতে পারছে না। মাহাদ এবার দৃশ্যর হাত ছেড়ে দু’কদম এগিয়ে আসলো। মাহাদকে আগাতে দেখে দৃশ্য দু’কদম পিছিয়ে গেল। মাহাদ দৃশ্যর বাহু ধরে একদম তার কাছে নিয়ে আসলো। চোখ গরম করে বললো

-“দেখো দৃশ্য পাখি বেশি উড়তে যেওনা? তাহলে একদম অদৃশ্য করে দিব।”

দৃশ্য এবার নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না। গর গর করে তার দুচোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। ভীষণ অভিমান জমা হলো তার মনে।অনেক কষ্টে সাহস জোগাড় করতে লাগলো। অনেকটা অভিমানের সুরে কাঁদতে কাঁদতে দৃশ্য বললো

-“আমি যার সাথে খুশি তার সাথে কথা বলবো তাতে আপনার কি? আপনি যদি রামিসা আপুর সাথে কথা বলতে পারেন তাহলে আমি কেন রাকিব ভাইয়ের সাথে কথা বলতে পারবোনা?”

এতক্ষণে মাহাদ আসল ঘটনা বুঝতে পারলো। মুহূর্তে যেন তার রাগটাও গায়েব হয়ে গেল। সে দৃশ্য কাছে এসে কানে ফিসফিসিয়ে বললো

-“তুমি কি কোন কারনে জেলাস?”

দৃশ্যের অভিমানগুলো যেনো এবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। হিচকি তুলে বললো

-“আমি জেলাস কেনো হবো? আপনার যার সাথে খুশি তার সাথে কথা বলুন আমার কি?”

মাহাদ তার হাত দুটো দৃশ্য চিবুকে রাখলো। দৃশ্য মুখটা উচু করে ধরলো। আর হাতের বুড়ো আঙুলে দৃশ্য চোখের পানি মুছে দিলো। দৃশ্য যেন বরফের মতো জমে গেছে। মাহাদের স্পর্শে দৃশ্য অদ্ভুত কিছু ফিল করছে। তার পুরো শরীর যেন আবারো কাপতে শুরু করলো। তার পুরো শরীর জুড়ে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। তার এই পনেরো বছর জীবনে কখনই এমন অনুভূতির সম্মুখীন হয়নি। মাহাদের দিকে সে কিছুতেই তাকাতে পারছে না। মাহাদের চাহুনি তার বুকে ধারালো ছুরির মত আঘাত করছে।

হঠাৎ মাহাদ পকেট থেকে একটা টিস্যু বের করলো। একহাতে দৃশ্যর ঠোঁটের লিপস্টিক টা মুছতে শুরু করলো। দৃশ্য যেনো এবার আর নিজের মধ্যে নেই। এই ছেলেটা তাকে পাগল করা অনুভূতি কেন দিচ্ছে? সে যে কিছুতেই এই অনুভূতির সাথে ডিল করতে পারছে না। মাহাদ নিচু স্বরে বললো

-“ঠোঁটে আর কখনো এতো গাঢ় লিবিসটিক দিবে না। আমি কিন্তু নিজেকে সামলাতে পারবো না। আর বিয়ের আগে আমি বেসামাল হতে চাই না। বিয়ের পর যত খুশি লিপস্টিক দিও।”

দৃশ্য যেন মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো। সে চোখ বড় বড় করে মাহাদকে দেখছে। এই লোকটা কি পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি? বিয়ের কথা কেন বলছে? আর কিছু না ভেবে দৃশ্য বোকার মত প্রশ্ন টা করেই ফেললো

-“আমার লিপস্টিক দেওয়ার সাথে আপনার বিয়ের কি সম্পর্ক?”

মাহাদ মনে মনে হাসছে। এই বাচ্চাটা আসলেই বাচ্চা। না হলে এই কথার মর্ম ঠিকই বুঝে নি তো। সে মুচকি হেসে বললো

-“অবশ্যই সম্পর্ক আছে। আমার বউয়ের ঠোঁটের সাথে তো একমাত্র আমার সম্পর্ক থাকবে তাই না?”

দৃশ্য ভীষণ কনফিউজড হয়ে বললো
-“তাহলে আমাকে কেন লিপস্টিক দিতে মানা করছেন?

-“কারন আমার বউ তো তুমি হবা।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here