তোমার_আমার_প্রণয়,part_27

0
1195

#তোমার_আমার_প্রণয়,part_27
#israt_jahan_arina

পড়ন্ত বিকেলে রংবেরঙের আলোকসজ্জায় বাড়িটা অপরূপ লাগছে। দোতলা বাড়িটার সামনে কিছুটা জায়গা জুড়ে বিভিন্ন রঙ বে রঙের ফুলের বাগান। বাড়ির গেটের সামনে রিকশা থামতেই দৃশ্যর হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল।ভয়ে হাত পা কাপছে।প্রেমিকের পরিবারের সাথে প্রথম সাক্ষাতে সকল প্রেমিকাদের নিশ্চয়ই এমন নাজেহাল অবস্থা হয়। মাহাদ বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে দৃশ্যর মাথায় ঘোমটা দিয়ে বললো

-“নাও একদম পার্ফেক্ট লাগছে।”

বাসার কর্নিংবেল চাপতেই আখি রহমান দরজা খুলে দিলেন।ছেলের পাশে একটা মেয়েকে দেখে অনেকটা অবাক হলেন।দৃশ্য চোখ বন্ধ করে বলতে পরে এটা মাহাদের মা।কারণ মাহাদের সাথে অনেক মিল রয়েছে।দৃশ্য ভয়ে ভয়ে সালাম দিলো।তিনি জবাব নিয়ে বললেন

-“মাহাদ মেয়েটা কে?”

মাহাদ ব্রু নাচিয়ে বললো
-“গেস করো।”

আখি রহমান কিছু একটা ভেবে অবাক হয়ে বললো
-“এটা দৃশ্য?”

মাহাদ খিল খিল করে হেসে বললো
-“তোমার সেন্স অফ হিউমার অনেক ভালো মা। যাই হোক দেখো পছন্দ হয় কিনা?না হলে বলো, সোজা তার বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি।”

দৃশ্য ভয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে। মাহাদের কথা শুনে আড়চোখে তার দিকে তাকালো।এইভাবে তাকে ধরে বেধে নিয়ে এসে মায়ের সামনে ভালো ছেলে সাজা হচ্ছে।কেনো যে এই অসভ্য লোকের কথা শুনে আসতে গেলো আল্লাহই জানে।আখি রহমান বললেন

-“মারবো এক চর।তোর যেতে মন চাইলে যা আমার মেয়ে কোথাও যাবে না।”

কথাটা বলে আখি রহমান দৃশ্যকে ভেতরে আনলেন।দেখলেন মেয়েটা একটা কালো শাড়ি পরেছে।চোখে কাজল আর ঠোট হালকা লিপস্টিক।উজ্জল শ্যামলা গায়ের রঙের মেয়েটাকে ভীষণ লাগছে।যার মধ্যে কোনো কৃতিম সাজ নেই।যাকে বলে ন্যাচারাল সুন্দরী। মেয়েটাকে দেখেই বোঝা যায় বয়স খুব বেশি না। ছেলে কি করে বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়ল।দৃশ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন

-“মাশাআল্লাহ। আমার মেয়েটা তো ভারি মিষ্টি।”

দৃশ্য লজ্জায় কিছুই বলতে পারছে না।সোফার রুমে আসতেই দৃশ্য দেখলো সেখানে বেশ কয়েকজন আছে।তার মধ্যে রয়েছে মাহিম ভাইয়া আর তানিম ভাইয়া।আরো দুটো মেয়ে একটা ছেলে। এর মধ্য বয়স্ক দুইজন মহিলা ও পুরুষ। দৃশ্যত ভাবতেই পারেনি এতো মানুষ থাকবে।দৃশ্য সকলকে সালাম জানালো।সবাই অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।দৃশ্যর ভীষণ অসস্তি হতে লাগলো।

মাহিম দৃশ্যকে দেখেই খুশি হয়ে উঠে দাড়ালো আর দৃশ্যকে বললো
-“ভাইয়া সত্যি আমার কথা রাখবে ভাবতেই পারছিনা।থাংস ভাবী আসার জন্য।”

মাহাদ মাহিমের চুলে টান দিয়ে বললো
-“বার্থডে বয় কিছু একটা চেয়েছে, না দেই কি করে?”

দৃশ্য মুচকি হেসে মাহিম কে বির্থডে উইসে করলো আর তার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললো

-“এটা আপনার গিফট ভাইয়া।”

-“এসবের কি দরকার ছিল ভাবী?”

-“প্লিজ ভাইয়া।”

মাহিম গিফট হাতে নিয়ে নিজের মাকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“কি বউমা পছন্দ হয়েছে?”

আখি রহমান হেসে বললেন
-“বৌমা না।ওকে তো নিজের মেয়ে করে রাখবো আমি।কিরে মা তোর সমস্যা আছে?”

দৃশ্য মাথা নেরে না জানালো।মাহিম মুচকি হেসে বললো
-“ভাবী সবাইকে মা,বাবা, ভাই ভাবলেও আমার ভাইকে কিন্তু ভাই ভেবে বসো না।তাহলে আমার ভাই নির্ঘাত হার্ট এ্যাটাক করবে।”

মাহাদ মাহিমের কান মলে বললো
-“বেশি পেকে গেছিস।”

সোফায় বসা বাকি সবাই হা করে সব দেখছে।তারা কিছুই বুঝতেছে না।তবে আমরিন যা বুঝার বুঝে গেছে।এটা নিশ্চয়ই সেই মেয়ে যাকে মাহাদ পাগলের মত ভালবাসে।দৃশ্যকে দেখে তার কাছে কোনো আহামরি সুন্দরী মনে হচ্ছে না।তবে মাহাদ এই মেয়ের এত পাগল কেনো?

আখি রহমান সবার সাথে দৃশ্যর পরিচয় করিয়ে দিলেন।দৃশ্য বুজলো এরা মাহাদের মামা মামী।আর বাকিরা কাজিন। মাহাদের বড়ো মামা বললেন
-“দারুন মিষ্টি তো মেয়েটা। তো বিয়ে কবে করবে?”

মাহাদ লাজুক হেসে বললো
-“মামা ষ্টাডি শেষ হোক তার পর।”

সকলেই দৃশ্যকে দেখে অনেক প্রশংসা করলেন। আরমান মুচকি হেসে বলল
-“মাহাদ ভাই ভাবি কিন্তু সেই হইছে। ভাবি আপনার কোন ছোট বোন টোন আছে?”

মাহাদ বলে উঠলো
-“কেনরে ভাই আমার শালিকা দের খবর নিয়ে কি করবি?”

-“না মানে ভাই আমরাও যদি এমন মিষ্টি কোন মেয়ে পেতাম।”

-“নারে ভাই আমার বউ একাই ওর কোন বোন নাই। তবে কাজিন সিস্টার আছে চাইলে দেখতে পারিস।”

দৃশ্য কপাল কুঁচকে মাহাদের দিকে তাকালো। মাহাদ চোখ টিপ দিলো।দৃশ্য দ্রুত মাথা নিচু করে ফেললো।এই ছেলের কোনো লজ্জা নেই।তখনই উপর থেকে নেমে আসলেন আমজাদ রহমান।দৃশ্যকে দেখেই হেসে বললেন

-“আরে আমার ঘরের লক্ষী চলে এসেছে আর কেউ আমাকে জানালো না।”

মাহিম হেসে বললো
-“তোমাকে কেন জানাবো তুমি তো সবার আগেই ভাবিকে দেখে বসে আছো।”

-“চিন্তা করো না ছোট রাজপুত্র তোমার আনা লক্ষ্মী কেও আমি ঠিক এভাবেই সাদরে আমন্ত্রণ জানাবো।আখি মা কোথায়?”

আখি রহমান বললেন
-“মা নিজের রুমে আছেন।”

-“যাও যাও যলদি মাকে ডাকো। আমার ঘরের লক্ষী কে দেখে যাক।”

আখি রহমান মুচকি হেসে চলে গেলেন। মাহিম দৃশ্যর পাশে বসে বললো
-“বুঝলে ভাবী এখন তোমার দেখা হবে এ বাড়ির সবচেয়ে ডেঞ্জারাস সদস্যের সাথে। বুড়ি কিন্তু সেই লেভেলের কুটনি আছে। তাই তার থেকে সাবধানে থাকবে।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই শামসুন্নাহার বেগম চলে আসেন। আমজাদ রহমান তাকে দৃশ্যর পাশে বসিয়ে বললেন
-“মা দেখো তো পছন্দ হয় কিনা আমার ঘরের লক্ষী কে?”

দৃশ্য লজ্জায় তাকাতে পড়ছে না।বহু কষ্টে সালাম জানালো। শামসুন্নাহার বেগম বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দৃশ্যকে পর্যবেক্ষণ করলেন। আর বললেন

-“তুমিই সেই মাইয়া যে আমার নাতির মনে ধরছে? এর লাগি তো কই দুই দিন পর পর আমার নাতি কিসের টানে রাজশাহী ছুঁতে আসে।”

মাহিম হেসে বললো
-“বুঝলে বুড়ি চিন্তা করছি আমিও একটা নাত বউ এনে দেই তোমাকে তাহলে দেখবে তার টানে আমিও তোমার পাশেই বসে থাকবে সারাদিন।”

-“ওই পোলা তোর কি প্রেম করণের বয়স হইছে?”

-“প্রেম করতে বয়স লাগেনা বুড়ি।”

আমজাদ রহমান মাহিম কে চুপ করতে বললেন। শামসুন্নাহার বেগম মুচকি হেসে বললেন
-“মাহাদ তো মাশাল্লাহ ভালো মাইয়া চয়েস করছে। দেখতেও কেমন বাচ্চা বাচ্চা। চেহারার মধ্যে মায়া আছে।তোমার নাম কি?”

দৃশ্য ভয়ে ভয়ে জবাব দিলো
-“নুরপা জাহান দৃশ্য।”

-“সুন্দর নাম। তা তোমার বাপে কি করে?”

দৃশ্য এবার কিছুটা ভয় পেলো।আচ্ছা সবাই যদি তার সঠিক পরিচয়টা জেনে যায় তবে কি ঠিক এমন ব্যাবহার করবে?দৃশ্য কিছু বলার আগেই মাহাদ বললো
-“দাদি এত ইনভেস্টিগেশন কেন করছো? নাতবউ পছন্দ হলে খুশি হয়ে কিছু গিফট করবা তানা প্রশ্ন করে যাচ্ছ।”

-“আরে আমি তো ভুলেই গেছি। আর শোন নাতবৌ আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আমার নাতির চয়েজ আছে বলতে হবে।”

এর মধ্যেই আখি রহমান দৃশ্যর পাশে বসেন একটা বক্স হাতে।দৃশ্য লজ্জায় মাথা নুয়ে ফেললো।মাহাদের মা বক্স থেকে স্বর্ণের একটা মোটা চেইন বের করে দৃশ্যকে পরিয়ে দিতে গেলে দৃশ্য কিছুটা থতমত খেয়ে গেল। সে অস্থির হয়ে বললো

-“আন্টি প্লিজ আমি এটা নিতে পারবো না।আপনি শুধু দোয়া করবেন।”

আখি রহমান হেসে বললেন
-“দোয়া তো অবশ্যই করবো। তবে এইটা আমি আমার ছেলের বউ না আমার মেয়েকে দিচ্ছি।কি নিবে না?”

দৃশ্য মাহাদের দিকে তাকালো। মাহাদ মুচকি হেসে সায় দিলো।মাহিম মুচকি হেসে বললো
-“নিয়ে নাও ভাবী।পড়ে দেখা যাবে সব দাদী লুফে নিবে। এমনি নিজেকে ভাইয়ার বৌ হিসেবে দাবি করে।”

শামসুন্নাহার বেগম ধমক দিয়ে বললো
-“ওই পোলা তোর মুখে কিছু আটকায় না? তোর বউরে আমি কিছু দিমু না।”

-“ইসস!আমার বউ বসে আছে তোমার ওই আদি যুগের গহনার জন্য।”

দৃশ্য মুচকি হাসছে।সে বুঝতে পারলো এই দুইজনের মাঝে দা নেউলের সম্পর্ক।
শামসুন্নাহার বেগম ও একজোড়া বালা দৃশ্যর হাতে পরিয়ে দিলেন।সকলেই কিছুক্ষণ পর এক সাথে কেক কাটলো। মাহিম আমরিন কে বললো দৃশ্যকে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখাতে। আমরিন কিছুটা অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দৃশ্যকে নিয়ে উপরে চলে গেল। দুজন একসাথে হাঁটছে।দৃশ্যর কেন যেন মনে হলো এই একটা মানুষ যে তাকে পছন্দ করে নি।হাঁটতে হাঁটতে আমরিন বললো

-“মাহাদ ভাই তোমার মত একটা বাচ্চার প্রেমে কি ভাবে পড়লো তাই বুজলাম না।তবে আমার মনে হয় এটা আবেগ।যা সময়ের সাথে সাথে শেষ হয়ে যায়।”

দৃশ্য কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না।সে বললো
-“আপু আপনি আমার বড়ো।তাই সব বিষয়ে আমার চাইতে বেশি জানেন।তবে মাহাদের ভালোবাসা নিয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই।আপনি হয়তো তাকে এখনো বুঝে উঠতে পারেননি।”

-“জানি না, হয়তো।”

দৃশ্য আর কথা বাড়ালো না।আমরিন সব রুম দেখিয়ে লাস্টে মাহাদের রুমে আসলো।তারা দেখলো অলরেডি মাহাদ সেখানে বসে আছে। মাহাদ আমরিন কে বললো

-“আমরিন তুই যা।আমি ওকে নিয়ে আসছি।”

আমরিন কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে গেল।বাইরে বেরিয়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো।মানুষটাকে সে মনের কথাটা কোনোদিন বলতেই পারলো না।সে বেরুতেই দৃশ্য রেগে বললো

-“এইটা কি হলো?আপু কি ভাববে?”

মাহাদ দৃশ্যর কোমর চেপে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আকর্ষিক ঘটনায় দৃশ্য কিছুটা কেঁপে উঠল। মাহাদ দৃশ্যর কপালে ওষ্ঠ জোড়া ছুয়ে বললো

-“ভাববে দুই প্রেমিক প্রেমিকা প্রেম করছে।মাখো মাখো প্রেম।”

-“অসভ্য একটা।”

মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“তোমার জন্য আমি সারা জীবন অসভ্য থাকবো।”

বাসা থেকে বেরিয়ে মাহাদ আর দৃশ্য আবার রিকশা নিলো।উদ্দেশ্য মৌদের বাড়ি। মাহাদ বললো

-“বাসার সবাইকে কেমন লাগলো?”

দৃশ্যর হটাৎ দাদীর কথা মনে পড়লো।তারা আসার সময় তিনি দৃশ্যকে তার পাশে বসিয়ে বললেন

-“আয় নাতবৌ পাশে বস।”

দৃশ্য পাশে বসতেই বললেন
-“আমার নতিডারে একেবারে আঁচলে বাধিয়ে ফেলেছিস।তয় নাতি আমার বউ পাগলা হইবো বুইজা গেছি।কিন্তু আমার নাতি কিন্তু চেতা আছে।রাগলে দিন দুনিয়ার ভুইলা যায়।সামলাইতে পারবি তো?”

লজ্জায় দৃশ্য কিছুই বলতে পারছে না।শুধু মাথা নেড়ে হে জানালো।দাদী আবার বললো
-” বিয়ের পর কিন্তু আমার নাতির ঘরে পতি দেখতে চাই। তাই তোর বাসায় জলদি প্রস্তাব পাঠাতে বলতেছি। ঘরের লক্ষী বেশিদিন বাইরে থাকবো এটা আমার পছন্দ না।”

দৃশ্যর তখন মাটিতে মিশে যেতে মন চাইছিলো।তার কি বাচ্চা পালার বয়স নাকি?
বাস্তবে ফিরে দৃশ্য মুচকি হেসে বললো
-“ভীষণ ভালো। মাহাদ তারা কি আমার ফ্যামিলির উপর রেগে আছে? মানে ভাইয়ার সাথে তোমার ঝামেলা নিয়ে তারা কি রেগে আছে?”

মাহাদের মুখটা নিমিষের মলিন হয়ে গেল। তবুও জোরপূর্বক হেসে বললো
-“আরে তেমন কিছু না তুমি চিন্তা করো না।”

রাতে মাহাদ বাসায় ফিরে সোফার রুমে আসতেই দেখল মাহিম বসে তার গিফট বক্স খুলছে। মাহাদ বললো

-“কিরে আমার পক্ষ থেকে গিফট না নিয়েই বাকি গিফট খুলছিস?”

-“আরে বাবা! আরো গিফট আছে নাকি?”

-“হমম! আছে।”

ঠিক তখনই বাসার ডোর বেল বেজে উঠলো। মাহাদ হেসে বললো
-“যা দেখ মনে হয় তোর গিফট চলে এসেছে।”

মাহিম অবাক হয়ে দ্রুত দরজা খুলে দিলো। আর সাথে সাথেই বেশ চমকে গেল। সে কি সত্যি দেখছে?মাহিম একবার মাহাদের দিকে তাকিয়ে বললো

-“ভাই এটা কি সত্যি?”

মাহাদ খিলখিল করে হেসে দিল। মাহিম সামনে থাকা ব্যক্তি থেকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো

-“চাচ্চু সত্যি তুমি এসেছ? আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। এটা আমার বেস্ট গিফট।”

আরিফ রহমান হেসে বললো
-“আমার ছোট বাবাটা এতো বড় হয়ে গেছে?”

-“আই মিস ইউ চাচু।”

-“আই মিস ইউ টু।

শামসুন্নাহার বেগম এতো দিন পর ছোট ছেলেকে দেখে অজরে কাদতে লাগলেন।আরিফ রহমান বহু কষ্টে তাকে শান্ত করলেন।আমজাদ রহমান খুশি হয়ে ছোট ভাইকে বেশ কিছুক্ষন বুকে জড়িয়ে রাখলেন।

শামসুন্নাহার বেগম বিলাপ করে বলতে লাগলেন
-“বাপজান তুই কেমনে আমারে ছাইড়া বিদেশে থাকতে পারলি?তোর মনে কোনো দয়া মায়া নাই?এক মাইয়ার লাইগা তুই জীবন শেষ কইরা ফেলেছিস।না বিয়া করলি না সংসার হইলো।আমার কি কষ্ট হয়না?”

দাদীর বিলাপ শুনে মাহিম বললো
-“বুড়ি একটু চুপ যাও। এতদিন পর চাচ্চু আসলো আর তুমি শুরু করে দিলে?”

-“ওই নাতি তুই চুপ থাক আমি আমার পোলার লগে মনের দুঃখ কইতাছি। একদম নাক গলাবি না তাইলে নাক কাইটা দিমু।”

-“আমার নাক কাটলে কষ্ট তোমার বাড়বে। নাক কাটা ছেলে কোনো মেয়ে বিয়ে করবে না।তখন তোমার ছেলের সাথে সাথে নাতিও ব্যাচেলর থাকবে।”

রাতে ডিনার শেষে মাহাদ আর আরিফ রহমান মাহাদের বারান্দায় বসে বেয়ার খাচ্ছে।আরিফ রহমান বললো
-“দৃশ্য দেখতে কেমন রে?”

মাহাদ বেয়ার খেতে খেতে বললো
-“আমার প্রেমিকা দেখতে তোমার প্রেমিকার মতো।”

আরিফ রহমান রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো
-“তোদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছি।যখন দৃশ্যর পরিচয় জানলি তখন কেনো এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসলি না?”

মাহাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
-“ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছিলো চাচু।ততদিনে সে আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছে।নিজের অস্তিত্বকে কি করে ছুড়ে ফেলতাম?”

-“দৃশ্য এই বিষয়ে জানে?”

-“না”

কিছুক্ষণ নীরবতার পড়ে মাহাদ বললো
-“চাচু তুমি তাকে জোর করে নিজের জীবনে কেনো নিয়ে আসলেনা?”

-“আমি চাইলেও সে আসতো না।”

-“তোমার জায়গায় যদি আমি থাকতাম।আর দৃশ্য যদি আমার সাথে না আসতে চাইতো তবে তাকে টেনে হিচড়ে হলেও নিয়ে আসতাম।তাকে ছাড়া আমি সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারবো না।”

আরিফ রহমান তার অতীতে ডুবে যেতে লাগলো।
দিশার সাথে তার প্রথম দেখা হয় কলেজে।তখন দিশা এসএসসি দিবে।মেয়েটাকে দেখে সে আটকে গেছিলো।কেমন দম বন্ধ করা অনুভূতি।মাথায় ঝুঁটি করা একটা মেয়ে রাস্তায় রিকশা থেকে পড়ে বাচ্চাদের মতো কাদতে লাগলো।সে এগিয়ে যেতেই কান্নার স্রোত বাড়িয়ে দিল।মেয়েটাকে কোনো মতে তুলে পাশের ফার্মেসিতে নিয়ে গেলো।তার পর প্রায়ই তাদের দেখা হতে লাগলো।একসময় তাদের মধ্যে প্রণয় ঘটে।আর সেই প্রণয় হয়ে উঠে গভীরতম।দিশা রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে ছিল।প্রায় কয়েক বছর পর দিশার বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ আসতে থাকে।দিশা যেনো দিশেহারা হয়ে গেলো।

আরিফ রহমান বিষয়টা বড়ো ভাইকে জানান।আমজাদ রহমান নিজেও কিছুটা চিন্তায় পড়ে যান।কারণ দিশার বাবা আবুল হুসেনের সাথে তাদের খুব একটা ভালো সম্পর্ক না।আরিফ হোসেনের বাবা এই অত্র এলাকার মেয়র।রাজনীতির সাথে তার পূর্ব পুরুষেরাও জড়িত ছিলো।আর আবুল হুসাইন পর পর দুইবার দাড়িয়ে মেয়র পদে জিততে পারেনি।এলাকার মানুষ জন আবুল হুসেনের চাইতে তার বাবাকে বেশি পছন্দ করতেন।তাই দুই পরিবারের মধ্যে একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়।কেউ কাউকে পছন্দ করে না।

আমজাদ রহমান অনেক কষ্টে তার বাবাকে রাজি করিয়ে দিশার বাবার কাছে প্রস্তাব পাঠান।কিন্তু আবুল হুসাইন আর তার দুই ছেলে বেশ ধাম্বিকতার সাথে সেই প্রস্তাব নাখোচ করে দেন।তারা ওই বাড়িতে মেয়ে বিয়ে দিবেনা।আমজাদ রহমান নিজে দিশার ছোট ভাই আশরাফ হুসেনের সাথে দেখা করেন।কিন্তু সেখানেও তাকে অনেক অপমান করা হয়।
আরিফ তখন কোনো উপায় না পেয়ে দিশাকে নিয়ে পালিয়ে যাবার প্ল্যান করে। দিশাও রাজি হয়ে যায়।কারণ তার পরিবার কোনো মোটেই তাদের সম্পর্ক মানতে রাজি না। কিন্তু দিশার বাবা ও ভাইরা মিলে তাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে।

তার পরিবার একপ্রকার জোর করে তাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দেন।সেদিন আরিফ চিৎকার করে কেদেছিলো।এই মেয়েটাকে ভুলে থাকা কিছুতেই সম্ভব না।সে যেনো উন্মাদ হয়ে গেছিলো।বহু কষ্টে নিজেকে সামলেছে এটা ভেবে যে দিশা ভালো আছে।কিন্তু না।সে ভালো ছিল না।

আরিফের জায়গা সে ওই অচেনা মানুষটিকে কিছুতেই দিতে পারেনি।কারণ স্বামী নামক মানুষটি শুধু তার শরীরটাই চাইতো।তার মনে কখনো ঝেকে দেখেনি।এক সময় সেই মানুষটা তার গায়ে হাত তোলা শুরু করলো।দিশা মুখ বুজে সব সহ্য করছিলো।তার মন চাইতো সব ছুড়ে ফেলে আরিফের কাছে চলে যেতে।কিন্তু পারেনি।প্রায় দেড় বছর পর্যন্ত সহ্য করার পর সে আর এই মনের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেনি। জীবনের প্রতি বিরক্ত হয়েই সে সুইসাইড করে। সুখ জিনিসটা সে এই দেড় বছরে চোখেও দেখিনি। তাই অচেনা এক সুখের সন্ধানে দূরে পাড়ি জমিয়েছে।পড়ে জানা গেছে তখন সে প্রেগনেন্ট ছিলো।

দিশার মৃত্যুর খবর শুনে আরিফ সেন্সলেস হয়ে পড়েছিল। যখন জ্ঞান ফিরে তখন দৌড়ে যায় দিশার কাছে। দিশার মৃত শরীর দেখে সে পাগলের মত কেঁদেছিল।তখন মনে হয়েছিল কেনো সে দিশাকে জোর করে নিজের কাছে নিয়ে গেল না? সে তো ভেবেছিল দিশা সুখে আছে।কিন্তু তার হাতের হালকা আঘাতের চিহ্ন গুলি বলছিলো তার দিশা ভীষণ কষ্ট ছিলো।ভীষণ কষ্টে।

পরের সময়টা ছিলো আরিফের জন্য ভীষণ যন্ত্রণার। বেচেঁ থেকেও মরে গেছিলো।করো সাথে কথা বলত না।শামসুন্নাহার বেগম বিলাপ করতে শুরু করলেন

-“আমার পোলারে শেষ কইরা দিল ওই আবুল আর হের পোলারা।মাইয়াডারে আমার বাড়িতে দিলে কি কষ্টে থাকতো?আমার পোলা রাজরানী কইরা রাখতো।কিন্তু দিলো এক জল্লাদের কাছে। জল্লাদটা মাইয়াডারে শেষ কইরা দিল।এইবার হেগো তেজ কমছে? মাজখান দিয়া আমার পোলার অন্তরে আগুন জ্বলতাছে।”

তার বেশ কিছুদিন পর আরিফ বিদেশে যাবার প্ল্যান করলো। এখানে থাকলে সে স্মৃতির তারণায় শেষ হয়ে যাবে। আমজাদ রহমান ও আর বাধা দিলেন না। আরিফ সেখানে যাওয়ার পর সবাইকে জানিয়ে দিল সে আর বাংলাদেশের ফিরবে না।আর না কোনোদিন বিয়ে করবে।তবে মাহাদ জম্মের পর তিনি দেশে এসেছিলেন।নামটা নিজেই রেখেছেন।শামসুন্নাহার বেগম কোনো ভাবেই আর তাকে বিয়ের জন্য রাজি করতে পারেনি।

তিনি দেশের বাহিরে থাকলেও সবসময় মাহাদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন।তার সাথে মাহাদের সম্পর্কটা হয়ে উঠে বন্ধুত্বপূর্ণ।মাহিম একটু বড় হবার পর একবার এসেছিলেন।মাহিম তার চাচু কে ভীষণ ভালোবাসে।ফোন রেগুলার যোগাযোগ হয় দুই ভাইয়ের সাথে।

মাহাদ আগেই আরিফকে বলে দিয়েছে দৃশ্যর কথা।আর এটাও জানিয়েছে দৃশ্য দিশার ছোট ভাই আশরাফ হুসেনের মেয়ে।কথাটা শুনে আরিফ মাহাদকে এই সম্পর্ক থেকে বের হতে বলেছিলো।কিন্তু সেটা মাহাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।সে সব রকম যুদ্ধ করে দৃশ্যকে জয় করতে চায়।কিন্তু হেরে যেতে চায়না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here