আজ_মৌর_বিয়ে (২য় পর্ব)

0
747

#আজ_মৌর_বিয়ে (২য় পর্ব)
লেখাঃ Shadbin Shakil

মৌ ঘুমিয়ে পড়ল। রাতের বাকী সময় তার ঘুম ভালো হল।

সকালে তার ঘুম ভাঙল বড় ফুফুর ডাকে। ফুফু অনেক্ষন ধরে মৌ’র দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। মৌ চোখ খুলে তাকে দেখার পর হতভম্ব হয়ে বলল, “তুমি কখন এলে ফুফু?”

ফুফু হতাশ গলায় বললেন, “বাড়িতে চন্দ্র-সূর্য এক হয়ে গেছে আর তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস? কতবার করে তোকে ডাকছি। তুই একবার এপাশ ফিরে ঘুমোচ্ছিস তো আরেকবার ওপাশ ফিরে ঘুমোচ্ছিস।”

“চন্দ্র-সূর্য এক হয়ে গেছে”- বাক্যটা শুনে মৌ চমকে উঠল। গতরাতের ঘটনা এক এক করে মনে পড়তে শুরু করল। মৌ বলল, “কী হয়েছে বাড়িতে?”

“চৌদ্দ বছর পর আজ তোর বাবা ফিরে এসেছেন। সকাল থেকে তোর মা পাঁচবার বেহুঁশ হয়েছেন। এখন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।”

মৌ বিছানায় শোয়া অবস্থায় বলল, “জানালার সামনে থেকে একটু সরে দাঁড়াও তো ফুফু। তেঁতুল গাছের ডালটা কতখানি ঝুঁকে পড়েছে তুমি খেয়াল করেছ?”

ফুফুর মৌ’র কথা শুনে বিস্ময়ের সীমা রইল না। তিনি মৌ’র পাশে এগিয়ে এসে বললেন, “আমি কী বলছি তুই বুঝতে পারছিস?”

“হ্যাঁ। বুঝতে পেরেছি। বাবা ফিরে এসেছেন এবং মা বারবার বেহুশ হচ্ছেন।”- বলতে বলতে মৌ হাই তুলে আবার বামদিকে পাশ ফিরল।

ফুফু বললেন, “মৌ তোর কী হয়েছে? সুস্থ আছিস তো?”

“আমি তেঁতুল গাছের কথা মিথ্যা প্রমাণ করব ফুফু। এতবড় ঘটনার পরও আমি কাজী অফিসে যাব। তুমি আমাকে দশটার দিকে ডেকে দিও তো। এখন ক’টা বাজে?”

মৌ দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দিল, “সাতটা চব্বিশ নাকি?”

ফুফু ভয়ার্ত চোখে মৌ’র দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলল। প্রায় দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। মৌ আবারও ঘুমিয়ে পড়ল।

কাজী অফিসের বসার ঘরে আড়াই ঘন্টার উপরে অধোরা নামের শান্তশিষ্ট এক মেয়ের সাথে সানি বসে আছে।

সানি হাসিমুখে বলল, “বিয়েতে মানুষ কেমন পাঞ্জাবী পড়ে বলতে পারো অধোরা? আমাকে কি সাদা পাঞ্জাবীতে বেশী খারাপ লাগছে? সকাল থেকে কয়েকবার মনে হয়েছে আমি বিয়ে করতে না, কোন মৃত বাড়ির জানাযা পড়তে যাচ্ছি।”

অধোরা কৌতূহলী চোখে সানিকে দেখছে। মানুষটা পাঞ্জাবী নিয়ে একই কথা এই তিনবার বলেছে। আজ তার বিয়ের দিনে পাঞ্জাবী নিয়ে কৌতূহল থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু বিয়ের কন্যা মৌ’র দেখা নেই। দশটার মধ্যে তার আসার কথা। এখন বাজে বারোটা চল্লিশ। অধোরার কেন জানি মনে হচ্ছে মৌ নামের মেয়েটা সানিকে বিয়ে করতে শেষ পর্যন্ত আসবে না। না আসলেই অবশ্য ভালো হত। নিজের পছন্দ করার মানুষটাকে দাঁড়িয়ে থেকে অন্য কারোর সাথে বিয়ে দিতে এখনও সে পুরোপুরিভাবে মানুষিকভাবে প্রস্তুত নয়।

সানি বলল, “অধোরা… এখন কি আষাঢ় মাস নাকি শ্রাবণ মাস বলতে পারবে?”

অধোরা না-সূচক মাথা নাড়ল।

সানি বলল, “ছোটবেলায় একবার শ্রাবণ মাসের বৃষ্টিতে ভিজে আমার টাইফয়েড হয়েছিল। মৃতপ্রায় অবস্থা। তখন টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা শুধুমাত্র বড়লোকদের জন্য। আমরা ছিলাম গরীবের চেয়েও গরীব। আমার দুঃখিনী মা সরকারি হাসপাতালের বারান্দায় বসে দিনরাত আমার জন্য দোয়া করলেন। মহান আল্লাহ তায়ালাকে বললেন, তার জীবনের বিনিময়ে যেন আমার জীবন ভিক্ষা দেন। আল্লাহ কোনো মায়ের দোয়া ফেলেন না। আমার মায়ের দোয়াও ফেললেন না। আমি সুস্থ হওয়ার চারদিনের মাথায় আম্মার মৃত্যু হল।”

অধোরা কিছু বলল না। সে এসেছে সানির বহুদিনের বান্ধবীর দায়িত্ব পালন করতে বিয়ের একজন সাক্ষী হিসেবে। সানির মায়ের মৃত্যুর গল্প সে আগেও কয়েকবার শুনেছে। মন খারাপ হয়ে যাওয়ার মত গল্প দ্বিতীয়বার বা তৃতীয়বার পড়লে সাধারণত আর মন খারাপ হয় না। কষ্টের কাহিনীতে ভরপুর সিনেমা প্রথমবার দেখলে যতটা কান্না পায় পরবর্তীতে ততটা পায় না। কিন্তু অধোরা যতবার সানির মুখে তার মায়ের মৃত্যুর গল্প শোনে ততবারই মন খারাপ হয়ে যায়। চোখ ভিজে উঠে। অধোরা ওড়না দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলল, “আরেকবার ফোন দিয়ে দেখ তো। এখনও ফোনের সুইচ কি বন্ধ পাচ্ছ?”

সানি সে কথার উত্তরে বলল, “তুমি আর কতক্ষণ থাকতে পারবে অধোরা?”

অধোরা বলল, “আমার কোনো তাড়া নেই।”

“এক কাপ চা খাও। কাজী অফিসের সামনে চা ভালো হয়?”

“তুমি এর আগেও খেয়েছ নাকি?”

“হ্যাঁ খেয়েছি। এক বন্ধু আছে জামাল। ও প্রেমিকাকে বিয়ের দিন ভাগিয়ে নিয়ে এসেছিল। সেই মেয়ে রেলমন্ত্রীর ভাইয়ের মেয়ে ছিল। বিয়েতে টেনশনে আমি ছ’কাপ চা খেয়েছিলাম।”

“ভালো। আমার এখন চা খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি বরং মৌ’কে আরেকবার ফোন করে দেখ। ফোনের সুইচ অন করেছে কিনা?”

“প্রয়োজন নেই। সুইচ অন করলে সে নিজেই ফোন দিবে।”

সানি কাজী অফিস ছেড়ে টিপটিপ বৃষ্টিতে নেমে এল। বৃষ্টির ফোঁটায় তার সাদা পাঞ্জাবী ভিজে একাকার হতে লাগল। অধোরা বলল, “কী করছ?”

“বৃষ্টিতে ভিজতে খুব মন চাচ্ছিল অধোরা। চাইলে তুমিও ভিজতে পার।”

“আমি এখনও পাগল হয়ে যাইনি। তুমি কি আমাকে মৌ’দের বাড়ির ঠিকানা টা দেবে? আমি একটা রিকশা নিয়ে গিয়ে দেখি কোনো সমস্যা হল কী না?”

সানি জবাব দিল না। সে আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল। একটা ছেলে উন্মাদের মত সাদা পাঞ্জাবী পড়ে বৃষ্টিতে ভিজছে আর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখে অভিভূত হচ্ছে !

মৌ বসে আছে হাসপাতালের বারান্দায়। সে খুশিখুশি মনে চায়ের কাপে টি-প্যাক ডুবচ্ছে।

বড় ফুফু, মেজ খালা, ছোট মামাসহ আরও লতায় পাতায় আত্নীয় স্বজন ছোটাছুটি করছেন। মৌ পাশে বসে থাকা মধ্য বয়সী ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করল, “মা-কে এম্বুলেন্সে নিয়ে আসার সময় আপনি তার হাত ধরে ছিলেন না?”

লোকটি বললেন, “হ্যাঁ।”

“আপনিই কি আমার বাবা?”

লোকটি থতমত খেয়ে উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ।”

বড় ফুফু মৌ’র সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “তোর মা এমারজেন্সিতে ভর্তি। আর তুই নিশ্চিন্তে চা খাচ্ছিস। আমি তোর কাণ্ড কারখানা সকাল থেকে বুঝে উঠতে পারছি না।”

মৌ হাসপাতালের কেবিনের সামনে ছোট বেঞ্চিতে বসা। সে চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, “ডাক্তার তো বললেন দুশ্চিন্তার কোনো কারন নেই।”

ফুফু বললেন, “তাই বুঝি তুই নিশ্চিন্তে বসে আছিস?”

“নিশ্চিন্তে বসে আছি তোমাকে কে বলল ফুফু? মোটেও নিশ্চিন্তে বসে নেই। চা খেয়ে আবার চিন্তা করব। তবে আমাকে এখন যেতে হবে। তুমি এই ভদ্রলোককে বলবে আমাকে কাজী অফিস পর্যন্ত একটু এগিয়ে দিয়ে আসতে?”

ফুফু চোখ কপালে তুলে বললেন, “নিজের বাবাকে এসব কী আবোলতাবোল বলছিস তুই? আর কাজী অফিসে কেন যাবি?”

ভদ্রলোক সাথে সাথে বললেন, “সমস্যা নেই আপা। আমি মৌ’কে এগিয়ে দিয়ে আসবো।”

ফুফু তখন মৌ’র দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বললেন, ” আর কখনও এসব বলে নিজের বাবাকে কষ্ট দিস না। ভালো হোক মন্দ হোক উনি তোর বাবা। সবকিছু আমরা ভুলে গেছি তুইও ভুলে যা।”

মৌ শান্ত ভঙ্গিতে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে।”

মৌ তার বাবা আসিফ সাহেবের সাথে গাড়িতে বসল। আসিফ সাহেব গাড়ি ষ্টার্ট দেয়ার সাথে সাথে বললেন, “মামুনি আমি কিন্তু কাজী অফিস চিনি না। তুমি আমাকে পথ দেখিয়ে দিও।

মৌ বলল, “আপনি ফিরে এসে আমাদের বড্ড ঝামেলায় ফেলে দিলেন।”

“আমি ফিরে না এলে কী তোমরা খুশি হতে?”

“সেই বিষয়টা এখন মূখ্য না। আপনার জন্য আমি আজ বিয়ে করতে পারলাম না। আপনি না এলে মা অসুস্থ হতেন না এবং আজকের দিনে আমাকে এত ছোটাছুটি করতে হত না। তারাহুরো তে ফোন বাসায় ফেলে এসেছি। আপনার ফোনটা একবার দেওয়া যাবে?”

আসিফ সাহেব প্রশ্নহীন ফোন বের করে দিলেন। মৌ সানির ফোনে ডায়াল করল। ফোনের ওপাশ থেকে নারী কন্ঠস্বর ভেসে এল।

“কে বলছেন?”

মৌ বলল, “আপনি কে?”

“আমি অধোরা। আপনি বোধহয় মৌ, তাই না? সানি সকাল থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করল। সে চলে গেছে দশ মিনিটের মত হয়ে গেছে। ফোন আমার কাছে রেখে গেছে।”

মৌ বলল, “আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। সানি এখন কোথায় গেছে বলতে পারবেন? ফোন কেন আপনার কাছে রেখে গেল? এখন আমি তাকে কোথায় পাব?”

“আমাকে বলল সে গ্রামের বাড়িতে যাবে। কিছুদিন সবকিছু থেকে দূরে থাকবে। আজ যেহেতু বিয়ে হয়নি। এই বিয়ে নাকি আর কোনোদিনও হবে না।”

মৌ বিরক্ত ভঙ্গিতে ফোন কেটে দিয়ে বলল, “গাড়ি ঘুড়ান তো। কাজী অফিস যাব না। যাকে বিয়ে করার কথা ছিল সে এখন চলে গেছে।”

আসিফ সাহেব নির্বিকার ভঙ্গিতে গাড়ি ঘুরালেন। মৌ বলল, “আপনার দ্বিতীয় স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েরা কোথায়?”

আসিফ সাহেব রহস্যময় হাসি হাসল। এই হাসির অর্থ মৌ বুঝতে পারল না এবং বুঝতে চাইলোও না। তিনি বললেন, “তুমি বাসায় যেতে চাও মামুনি? নাকি আবার হাসপাতাল যাবে?”

“বাসায় যাব। আপাতত হাসপাতালে মা’কে দেখাশুনার জন্য অনেক মানুষ আছেন। আর শুনুন কথায় কথায় আপনি আমাকে মামুনি ডাকবেন না। অদ্ভুত লাগে শুনতে। এত বছর পর আপনার আমাদের প্রতি এত ভালোবাসা কোথা থেকে এল, এখনও বুঝতে পারছি না।” – মৌ হাই তুলে গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখল। অস্পষ্ট ভাবে নিজেকে নিজে বলল, “আমার এই ঘুম ঘুম নেশা কখন কাটবে?”

আসিফ সাহেব বললেন, “তুমি যে বিয়ে করতে যাচ্ছ, বিষয়টা আর কেউ জানে না?”

মৌ চোখ বন্ধ অবস্থায় উত্তর দিল, “আপনি তো জানলেন। আপনি আবার বাবা। এখন আর কারোর জানার প্রয়োজন আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। বিয়েটা আজ হলে ভালো হত। আমার দিক থেকে আপনি সাক্ষী হতেন। আর সানির দিক থেকে তার বান্ধবী অধোরা আছে। আমার বাবা বিয়েতে এসেছেন দেখে সানির ছোটখাটো হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত।”

বলতে বলতে সে খিলখিল করে হাসল। আসিফ সাহেব বললেন, “তোমার আমার উপর কোনো রাগ কিংবা অভিযোগ নেই?”

“কেন থাকবে না। অবশ্যই আছে।”

“তোমার একটা কথা জানার দরকার আছে মৌ। আমি কখনোই তোমার মা’কে ছেড়ে যেতে চাইনি। তোমার মা আমাকে ছেড়ে দিয়েছিল।”

মৌ এবার চোখ খুলে আসিফ সাহেবের দিকে তীব্র দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল, “এই কথা আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে বলছেন?”

“বিশ্বাস করবে কী করবে না সেটা তোমার বিষয়। তোমার মা একজন মানসিক রুগী। তিনি আমাকে ছেড়ে একটি গাছের প্রেমে পড়েছিল বলে আমাকে ছেড়ে দিয়েছিল।”

মৌ এই কথার কী উত্তর দিবে ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। তার গলা শুকিয়ে এল। গতরাতের কথা আবার মনে পরল। নিজেকে সামলে বলল, “এগুলো কেমন ধরনের কথা? গাছের প্রেমে পড়েছিল মানে কী?”

“তোমার মা আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। কিন্তু আমাদের সাংসারিক জীবন সুখের হয়নি। দিনরাত একটা গাছের ছায়া নাকি তার সাথে ঘুরঘুর করত। সে সেই গাছের সাথে হাসাহাসি করত, গল্প করত। একসময় সে তার প্রেমে পড়ে গেল। তখন আমাকে তার অসহ্য লাগতে শুরু করল। একটা সময় আমাকে গভীর রাতে মারধর শুরু করল। আমি অনেক কষ্টে ঘর ছেড়েছি। তোমাকে নিয়ে আসতে অনেক চেষ্টাও করেছি যা সম্ভব হয় নি।”

“আপনার গল্প শুনে মনে হচ্ছে আপনি রুপকথার কোনো বইয়ের গল্প আমাকে শোনাচ্ছেন।”

“মৌ এখন তোমাকে আমি আরও একটা কথা বলব যেটা শুনে তুমি আমাকে কিছুসময়ের জন্য পাগল ভাববে কিন্তু তোমাকে তা বিশ্বাস করতে হবে। অবশ্য ধীরে ধীরে তুমি তার প্রমাণও পাবে।”

মৌ আড়চোখে তাকিয়ে বলল, “কী কথা?”

“আমি তোমার বাবা নই। আসিফ সাহেব তার স্ত্রী পুত্রের সাথে বিদেশেই আছেন। আমি সেই তেঁতুল গাছ। যে গাছের প্রেমে তোমার মা পড়েছিল। এবং গতরাতে তুমি তার সাথে কথাও বলেছ।”

গাড়ি বাসার সামনে এসে থামল। মৌ প্রায় পাঁচ মিনিট গাড়ির ভিতরে একভাবে শক্ত হয়ে বসে রইল। আসিফ সাহেব বললেন, “গাড়ি থেকে নামো মৌ। ভয়ের কিছু নেই। তুমি যা দেখছ সত্যি দেখছ। যা শুনছ সত্যি শুনছ।”

মৌ গাড়ি থেকে নামল। চুপচাপ হেঁটে বাসার মধ্যে ঢুকে হাতমুখ ধুয়ে আয়নার দিকে খানিকটা সময় তাকিয়ে রইল। তার সাথে ঘটে যাওয়া গতরাতের কাহিনীকে দুঃস্বপ্ন বলে চালিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু আজ যা তার সাথে ঘটেছে তা অস্বীকার করার কোনো অযুহাত নেই। একটা গাছ জলজ্যান্ত মানুষের মত বসার ঘরে তার বাবার আকৃতিতে সোফায় বসে আছেন। শুধু যে বসে আছেন তা নয়, তিনি সাউণ্ড দিয়ে টিভি অন করে টিভি দেখছেন। দিব্যি মানুষের মত হাঁটাচলা করছেন। কথা বলছেন। গাড়ি চালিয়ে তাকে বাসা পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। এটা কীভাবে সম্ভব?

গতরাতের মত মৌ’র মাথা ব্যথাটা ক্রমশ বাড়তে লাগল। সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে প্রশ্ন করল। তারপর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বসার ঘরে এল।

আসিফ সাহেব হাসিমুখে বললেন, “কী ব্যাপার বলতো মৌ। তুমি কি এখনও আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না?”

মৌ ক্লান্ত শরীরে মুখ হাসিমাখা করার চেষ্টা করে বলল, “কেন পারব না? পেরেছি তো। আপনি চা খাবেন? আমার চা খেতে হবে। মাথা ব্যথা করছে। অবশ্য গাছেরা চা খায় কিনা না জেনেই জিজ্ঞাসা করলাম।”

আসিফ সাহেব রিমোর্ট হাতে টিভির চ্যানেল ঘুরিয়ে বললেন, “দুধ চা হলে খেতে পারি। আমি আবার রং চা খাই না।”

মৌ রান্নাঘরে গিয়ে কেটলি তে চা বসানোর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে মাথা ঘুরে পড়ে গেল।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here