অবাধ্য_প্রেম #পর্ব_৩,০৪

0
1470

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৩,০৪
#নন্দিনী_নীলা
০৩

ক্লাসের একদম লাস্ট বেঞ্চে আমি চুপ করে পাথরের মত বসে আছি। আমার দুইপাশে আমার দুই বেস্টি বসে আছে। ওরা দুই পাশ থেকে আমাকে নানান প্রশ্ন করে যাচ্ছে। নিবিড় আমাকে তখন ওই ভাবে রুমে নিয়ে দরজা আটকে কি করেছে? আর আমি আসার পর থেকেই এমন পাথরের মূর্তির মতো বসে আছে কেন? ওরা খুব দুশ্চিন্তা মুখে আমাকে জিজ্ঞেস করছে। কিছু বলছি না বলে ওরা ভাবছে না জানি কি হয়েছে।এ জন্য সান্তনা দিচ্ছে। আর আমি নিবিড় এর বলা শেষ কথাটা শুধু ভাবছি।

বন্ধ রুমে একটা ছেলের সাথে থাকা কতটা অস্বস্তিকর আর ভয়ে সেটা শুধু একটা মেয়ে জানে। ভয়ে আমার শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছিল। আমি কি রেখে কি করব বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু নিজেকে যেভাবে হোক রক্ষা করবআমি ভেবেছিলাম। আর একবার এখান থেকে বের হয়ে আমি স্যারের কাছে কমপ্লেন করব। যত‌ই ক্ষমতার দাপট থাকুক না কেন আমাদের এইভাবে হেরাজ করতে পারেন না।

নিবিড় অন্ধকারে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আমি চিৎকার দিতে থাকি। উনি আমার মুখে এক হাতে চেপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

‘ এখন ভয় পাচ্ছ কেন? তুমি না খুব সাহসী। কাউকে ভয় পাও না যা খুশি তাই বলে দাও। এখন ভয় কেন পাচ্ছ?’

আমি কথা বলতে পারছি না। উম উম করছি শুধু। নিবিড় আবার বলল, ‘ কি বলছিলে আমার চরিত্রের দোষ আছে? আমি অসভ্য তো এখন অসভ্যতামি করি! এখন তোমার সাথে আমি কিছু করলে আমার এতে কিছু আসে যাবে না। কিন্তু তোমার সারাটা জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। মেয়ে হয়েও এত ওভার সাহস দেখানো তোমার কি ঠিক হয়েছে? এবার তুমি কিভাবে আমার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবে?’

একেতে নিবিড়ের এইসব কথা শুনে আমার ভয়ে আত্মা শুকিয়ে আসছে। তারপর নিবিড় আমার সাথে একদম ঘেঁষে আছে। একটা ছেলে এত কাছাকাছি থাকায় আমার অবস্থা আরো খারাপ। তার উপর আমি কথা বলতে চাইছি কিন্তু আমাকে বলতে দেওয়া হচ্ছে না। উপায় না পেয়ে আমি নিবিড় এর হাত কামড়ে দিলাম। আমার দাঁতের আঘাত পেয়ে আমার মুখ থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিবিড় হাত ঝাকাতে লাগল।

আমি যেন দম ফিরে পেলাম জোরে একটা শ্বাস নিয়ে আমি চিৎকার করে বললাম, ‘ আপনার মত নোংরা চরিত্রের মানুষ আমি দুটো দেখি নাই। মেয়েদের কিভাবে সম্মান করতে হয় সেটা তো জানেন না। আপনি কোন সাহসে আমাকে এই রুমে এনে বন্দি করলেন। আপনি যদি এখন আমার সাথে কিছু করেন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন তো? ওরা আপনার ফ্রেন্ড যাদের আপনি অনেকদিন ধরেই চিনেন। যাদের প্রতি আপনার বিশ্বাস আছে। কিন্তু আপনি আমাকে চেনেন না এজন্য আমার প্রতি আপনার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নাই ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে আপনি কি তাই বলে এভাবে একটা হেনস্থা করতে পারেন?’

‘তোমার মতো থার্ডক্লাস মেয়ের থেকে আমি অবশ্যই জ্ঞান নিতে চাই না।’

‘আমিতো থার্ডক্লাস মেয়ে কিন্তু আপনার চরিত্র থার্ড ক্লাস মানুষদের থেকেও খারাপ। না হলে আপনি আমাকে এখানে এনে নিজের জোর দেখাতেন না। আমরা থার্ডক্লাস ফ্যামিলির হলেও আপনাদের থেকে সভ্য ভদ্র আর মানুষের সম্মান করতে পারি।’

নিবিড় আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো?

‘হ্যাঁ জানি। আপনাদের সামনে একটা কথা বললেও তো বেশি কথা বলা হয়ে যায়। তো এখন কি করবেন করবেন? আপনি যদি আমার সম্মান কেড়ে নিয়ে খুশি থাকেন হ্যাপি থাকেন তো থাকেন। এখন আপনি কিছু না করলেও এই রুম থেকে বের হলে আমাকে হাজারটা প্রশ্ন সম্মুখীন হতে হবে। আপনি ছেলে বলে আপনাকে কেউ কিছু না বলতে পারে। আপনার ক্ষমতা আছে বলে আপনার দিকে প্রশ্ন ছুরতে পারবে না। কিন্তু এরজন্য আমাকে পদে পদে সবার কাছে ইনসার্ট হতে হবে। গরিব বলে আমাদের তো কোথাও মাথা উঁচু হয়ে চলার অধিকার নাই। আপনাদের জন্য সব জায়গায় আমাদের মাথা নত হয়ে অসম্মানিত হয়ে চলাচল করতে হবে। তার থেকে বড় আজকের পর না হয় আমি নিজের জীবনটা শেষ করে দেবো। তখন না হয় আপনি আপনারা সবাই সুখে থাকবেন।’

নিবিড় আমার ঘাড় শক্ত করে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে একদম মুখের কাছে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘আমি খারাপ হলেও এতটা খারাপ না যে তোমার সাথে এখানে কিছু করার জন্য তোমাকে এখানে ধরে আনবো। এমন হাজার মেয়ে আছে যারা নিজের ইচ্ছে তে আমার সাথে সময় কাটানোর জন্য বসে আছি। কিন্তু আমি তাদের দিকে চেয়েও দেখি না। খারাপ হলেও এতটা খারাপ না ওকে। আর তোমাকে এখানে শুধু এই কারনে এনেছিলাম যে তুমি আমাকে বারবার চরিত্রের দোষ দিচ্ছিলে আর আমাকে বাজে কথা বলছিলে যা আমি সহ্য করতে পারিনি। এজন্য আমি তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য এখানে নিয়ে এসেছি। ভয় দেখানো ছাড়া তোমার সাথে আমি কিছুই করতাম না। হাজারো সুন্দরী মেয়েকে আমি ইগনোর করেছি। আর আমি কিনা তোমার মত একটা মেয়েকে টাচ করব। তুমি ভাবলে কি করে এটা? বের হয়ে যাও এই রুমে থেকে তোমার মুখ যেন আর আমি কোনদিন না দেখি। আর কোনোদিন তুমি আমার সামনে আসবে না। দুটো দিন তোমার সাথে আমার সবচেয়ে খারাপ কেটেছে। তোমার মুখ দেখার পর থেকে আমার মাথাটা আগুন ধরে আছে। তোমার মত একটা মেয়ের সাথে দেখা করে আমি আমার মুডটা নষ্ট করতে চাই না। আজকের পর তুমি আমার ত্রিসীমানায় আসবেনা। আর একটা কথা মনে রাখবে তুমি একজন মেয়ে তাই এতো বাড়াবাড়ি না থাকাটা তোমার নিজের জন্য‌ই ভালো। আমি না হয় তোমাকে ছেড়ে দিলাম কিন্তু এমন চলতে থাকলে যেকোন সময় যে কেউ তোমার দিকে খারাপ নজর দিতে পারে।’

আমি দরজা খুলে বেরিয়ে আসি। সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকি। দীপা আমাকে টেনে ক্লাসে নিয়ে আসে। তারপর থেকেই ওরা জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে আর আমি চুপ করে বসে আছি।

দীপা আমাকে বলল, ‘ কিছু বলবি না আমাদের? আচ্ছা চল আমাদের সাথে স্যার কাকে বিচার দেব নিবিড় শয়তানের নামে। এতো বড় স্পর্ধা ওর ও তোকে নিয়ে দরজা বন্ধ করল।’

আমি ঘাড় বাঁকিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলি, ‘ ও আমাকে টাচ করেনি। শুধু ভয় দেখিয়েছে।’

‘ সত্যি?’

‘ কেন আমার কথা বিলিভ হচ্ছে না তোদের? যদি বিশ্বাস না হয় জিজ্ঞেস করছিস কেন?’

‘ উফ রাগ করিস কেন? আমরা দুজনে খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। তোর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিল। আর নিবিড় ভাইয়া তো খুব রাগী ভালো তোকে নিয়ে গেছিল তাই ভাবছি যদি কিছু… থাক যা হয়েছে এবার স্যারদের কাছে যেতেই হবে।’

আমি বললাম, ‘ আমি তো যেতেই চেয়েছিলাম তোরাই তো আটকে দিয়েছিস!’

‘ হ্যা কারণ বিচার দিলেও তোর উপর সমস্ত দোষ চাপিয়ে দেওয়া হবে তাই। কিন্তু আজ যা করেছে এটা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি কাজ। সবার সামনে তোর সাথে এমন করা উচিত হয়নি। এই দোষটা নিবিড় ভাই এরিয়ে যেতে পারবে না।’

‘ আমি স্যারদের কাছে বিচার নিয়ে যাব না।’

লিলি অবাক গলায় বলল, ‘ কেন? আজকে নিবিড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাক্ষী আছে সবাই তোর হয়েই কথা বলবে আমাদের ক্লাসের তুই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছিস কেন?’

‘ কারো স্বাক্ষীর দরকার নাই আমার‌। যখন আমাকে
টেনে রুমে নিয়ে গেল কেউ কি এসেছিল আমাকে বাঁচাতে? অঘটন ঘটে গেলে এখন আর বিচার দিয়ে কি লাভ হতো? এখন আমার কারো স্বাক্ষীর দরকার নাই।’

‘ তুই আমাদের ভুল ভাবছিস!

‘আমার ভালো লাগছে না। চুপ থাক দয়া করে।’

‘ কিন্তু…

‘ আমি নিবিড় এর নামে কোন অভিযোগ করব না। যা করার আমি নিজেই করব। ওই আফিয়ার জন্য এইসব হয়েছে ওকে আমি দেখে নিব‌’

#চলবে….
#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৪
#নন্দিনী_নীলা

দুদিন যাবত আফিয়া মেয়েটা কলেজে আসছে না। শায়েস্তা করার মোক্ষম প্লেন সাজিয়ে রেখেছি আমি কিন্তু তাকেই খোঁজে পাচ্ছি না। আজকেও আমি দুতলা থেকে অধীর আগ্রহে গেটের দিকে তাকিয়ে আছি। আজকে যেন শাকচুন্নিটা কলেজে আসে। কলেজ শুরু হতে আরও আধা ঘন্টা ওই মেয়েটাকে শায়েস্তা করার জন্য আমি প্রতিদিন এক ঘণ্টা আগে এসে কলেজে বসে থাকি। অথচ যার জন্য এত কিছু করি সেই আসেনা। আফিয়া না ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কাউকে দেখতে পায় না।

হুট করে সবগুলো উধাও হয়ে কোথায় গেছে আল্লাহ জানে। আমাকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে সবগুলো মিসিং। বিরক্ত হয়ে আমি দুতালা থেকে নিচে নেমে এলাম। মাঠ দিয়ে ঘোরাফেরা করছি হঠাৎ দেখতে পেলাম গেট দিয়ে আফিয়া আর ওর একমাত্র বেস্টু কি বলে যেন হাসতে হাসতে কলেজ ঢুকছে। আমি চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে লাফিয়ে উঠলাম। আর সাথে সাথে লুকিয়ে পড়লাম বকুল ফুল গাছের আড়ালে। কলেজে আমাদের ছোট মিনি পুকুর আছে সেখানে ওরা ফ্রেন্ড সাইকেল সবাই বসে আড্ডা দেয়। তো ও আর ওর বান্ধবী সেই দিকেই যাচ্ছে। আমি নক কামড়াচ্ছি। ওর সাথের মেয়েটাকে তাড়াতে পারলে কাজটা অনেক সুবিধার হতো। কি করা যায়?

ভাবনার মাঝে হঠাৎ আফিয়ার পাশের মেয়েটার ফোন বেজে উঠল আর মেয়েটা কি যেন বলে আবার পিছন দিকে আসলো তাকে পেছন দিকে আসতে দেখে আমি তো ভয়ে ছুট্টে অন্যদিকে ঘুরে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম।

উনি হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। এবার দেখলাম ঐ শাকচুন্নি টা একাই বসে আছে। সকাল সকাল বলে দিকটাই বেশি মানুষ নাই কারণ সব ডিপার্টমেন্টের ক্লাস এক টাইমে না। আজকে আমাদের ডিপার্টমেন্টে ক্লাস 9 টা থেকে আর বাকিদের দশটা এগারোটা। এটাই যেন আমার জন্য সুবর্ণ সুযোগ। আমি আমার ব্যাগ থেকে তাড়াতাড়ি কালো কুচকুচে রং টা বের করে আনলাম তারপর আমার কাছে পানির বোতল ছিল সেটার ভেতরের রঙ ঢেলে গুলিয়ে নিলাম। পা টিপে টিপে একদম আফিয়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বোতলের সম্পন্ন পানি ওর মাথায় দিয়ে দিলাম। ওর গায়ে ছিল আকাশী রঙের থ্রি পিস। কালো রঙের ওর অবস্থা নাজেহাল আমি আরো কয়টা রঙ বের করে ওর সারা শরীরে ঠেলে দিলাম। এরকম একটা পরিস্থিতিতে ও চিৎকার চেঁচামেচি ছাড়া আর কি করবে বুঝতে পারছে না। আমি পেছনের দিকে ছুট লাগালাম আর তখনই কারো সাথে একটা ধাক্কা লাগল। তার বাহুতে আমার কপাল লাগে আমি ব্যথা পেয়েছি। মনে হল কোন লোহার সাথে বারি খেয়েছি।

আমি কপাল ঠলতে ঠলতে সামনে তাকিয়ে দেখি নিবিড় বাহু ধরে বিরক্তিকর মুখে আমার দিকে তাকিয়েছে।

আমি তাকাতেই একটা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ‘ ইউ? তোমাকে বলেছিলাম না আমার চোখের সামনে আসবে না নেক্সট টাইম?’

‘ আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নাই। আমি মনে হয় আপনার সামনে আসার জন্য আমি লাফাচ্ছি। আমি কি করে আসি নাই। এক্সিডেন্টলি চলে আসা হয়েছে। এক কলেজেতে পড়ি সামনে আসতেই পারে। সেইটা নিয়ে এত রিয়েক্ট করার কি আছে? এখন একটা লুকোচুরি কাজ করে এসেছি একদম আমাকে এখানে আটকে দিয়ে আমার কাজটা ভেস্তে দেওয়াবেন না।’

নিবিড় অবাক স্বরে বলল, ‘ তুমি আমাকে ধমকাচ্ছ? তোমার সাহস তো কম না! ‘

‘ও ভাই আমি কেন আপনাকে ধমকাতে যাব? আমি জাস্ট আমার সমস্যাটা আপনাকে বললাম। আর আমি আপনার সামনে চলে এসেছি। আচ্ছা আমার ভুল হয়ে গেছে। সরি! মাফ করে দিবেন! এবার আমাকে যেতে দিন ভাই দয়া করে!’

‘তুমি কি লুকোচুরি কাজ করেছো?’ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল নিবিড়।

এবার আমার টনক নড়লো কাকে আমি কি বলে দিলাম? হায় আল্লাহ। ব্লেন্ডার কাজ করে ফেলেছি।

আমি তাড়াতাড়ি মুখে হাত দিয়ে ঢোক গিলে চোখ ছোট ছোট করে অন্য সুরে বললাম, ‘আমি লুকোচুরি সেটা আবার কি? এভাবে আবার কাজ করা যায় না কি? আমি এমন কোনো কাজ করিনি আমি তো কলেজে এসেছি। আমি আসি আমার ক্লাস শুরু হয়ে গেছে 9 টায় থেকে আমার ক্লাস।’

নিবিড় কিছু বলার আগে আমি পাশ কাটিয়ে চলে এলাম। ওখানে আর দুই মিনিট থাকলে আমার পেটের সব কথা বের করে নিতো। তাহলে নেক্সট টাইম নিবিড় কে আমি কিভাবে জব্দ করতাম। আজকের ব্যাপারটা যদি জানাজানি হয়ে যায় তাহলে তো ওরা সতর্ক হয়ে যাবে। আমাকে ওদের সামনে মাথা নিচু করে থাকতে হবে আর খুব ভদ্র ভাবে চলতে হবে। বোঝাতে হবে আমি ওদের ভয় পাইছি। আমি ওদের সাথে টক্কর দেয়ার চেষ্টা করতেই পারি না এতো সাহস আমার নাই। এটা ওদের বোঝাতে হবে।

এদিকে নিবিড় মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি দ্রুত পা চালিয়ে চলে যাচ্ছি। সন্দেহজনক লাগলেও আমাকে আর পিছু ডাকলো না। সামনে এগিয়ে গেল।

তখ‌ন‌ই আফিয়া ছুটে এসে নিবিড়ের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘দেখ কে যেন আমার….

আফিয়া সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে পারল না তার আগেই নিবিড় ওকে ধাক্কা দিয়ে নিজে থেকে সরিয়ে বলল, ‘ও মাই গড তোর এই অবস্থা কেন? তুই দেখতে পাচ্ছিস না আমি সাদা শার্ট পড়েছি। এই অবস্থায় তুই আমাকে আবার ধরেছিস। আমার হাতার কি অবস্থা করলি? এসব কি করে হলো?’

আফিয়া বলল, ‘আমি কিছু জানি না। আমি ওখানে বসে ছিলাম দ্যুতির ফোন আশায়ও ওইদিকে গেছে। ওর বয়ফ্রেন্ড নাকি কলেজের সামনে আসছে তাই দেখা করতে । আমি বসে ছিলাম হঠাৎ কে জানি এসব দিয়ে আমাকে ভূত বানিয়ে চলে গেছে।’

‘হোয়াট? কেউ তোকে ইচ্ছে করে এসব মাখিয়ে দিয়ে চলে যাবে কেন? এসে আবার কারো সাথে ঝগড়া করছিলি নাকি?’

‘তোর কি মনে হয় আমি সবসময় সবার সাথে ঝগরা করি। আজকে আমি কারো সাথে কথা বলিনি। আর আমি ঝগড়া করলেও কখনো কেউ আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস পায় না। এতো দুঃসাহস দেখানো সাহস পাবে? এখন আমি কি করব?’

নিবিড় আফিয়াকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে সেকেন্ডে ওর চোখের সামনে একটা মুখ ভেসে উঠলো। সেই মুখটা আর কারো না ছোঁয়ার। ছোঁয়া কে ও ঠিক এভাবেই রঙের কালি দিয়ে ভুত বানিয়ে ছিল। আর সেম কাজ টা আফিয়ার সাথে ও হয়েছে। আর এখন ওই মেয়েটাও এই দিক দিয়ে গেল বলেছিল লুকোচুরি একটা কাজ করেছে। তাহলে কি এটাই সেই কাজ? যা বুঝার বুঝে গেছি নিবিড়।

দ্যুতি আর বাকি সবাই চলে এসেছি আফিয়ার এই অবস্থা দেখে হতভম্ব। রিসা এসে তো আফিয়ার এই অবস্থা দেখেই পেট চেপে হেসে ফেলল সাথে আকাশ ও। বাকিরা মুখ টিপে হাসছে। ওদের হাসতে দেখে আফিয়া রাগ দেখালো ওদের।

আফিয়া নিবিড় এর সামনে এসে বলল, ‘চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমার এই অবস্থা কে করছে তাকে খুঁজে বের করবি না?’

‘তুই এই ভূতের বেসে সাড়া কলেজ ঘুরে তাকে খুজবি?’

‘কেন কি হয়েছে?’

‘ চুপচাপ বাসায় যা। যা করার পরে করব।’

‘আমি বাসায় গিয়ে শান্তি পাবো না। তাকে ধরে পচা পানিতে চুবালে আমার শান্তি লাগে।’

‘ কলেজের সবাই তোকে দেখে হাসছে তাড়াতাড়ি বাড়ি যা। এখন সিনক্রিয়েট না করে।’

আফিয়া রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল‌। কলেজের অনেক উঁকি দিয়ে দেখছিল আর হাসছিল ও তো রাগে ক্ষোভে ফুঁসছিল শুধু।

#চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here