অবাধ্য_প্রেম #পর্ব_৫,০৬

0
1260

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৫,০৬
#নন্দিনী_নীলা
০৫

দীপাকে কল করলাম। ও আজকে কলেজ আসবে না। ফোনটা তাও ও ধরে নি ধরেছে আন্টি মানে দীপার মা ধরেছে। দীপা ধরলে না হয় একটা ধমক দিতাম কলেজে না আসার জন্য। এত ভাল একটা কাজ করেছি ওকে না জানানো অব্দি আমার পেটের ভাত হজম হচ্ছে না যেন।
লিলি আসল ওকে দেখেই খুশি হয়ে বলতে চাইলাম। তার আগেই ও আমাকে একটা ঝাক্কাস খবর দিল

লিলি বলল, ‘জানিস আজকে দীপা আসবেনা। ওর আজকে…

‘ হ্যাঁ এইমাত্র জানলাম আজকে আসবে নাকি। আমাকে জানায়নি আমি ওকে ফোন দিলাম ও ফোন না ধরে ওর মাকে দিয়ে ধরিয়ে বলল। আজকে আসবে না কি বেয়াদব দেখ।’

‘ওর কাছে ফোন থাকলে তো ও ফোন ধরবে। ওর ফোন তো ওর মা কেড়ে নিয়েছে।’

‘কিহহ এমনটা করেছে কেন আন্টি?’

‘আজকে তো দীপার আশীর্বাদ।’

আমি চোখ বড় বড় করে লিলি দিকে মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছি।

‘দীপার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল আর আমাকে কিছু জানালো না। সবসময় বলে আমি নাকি বেস্ট ফ্রেন্ড এই তার নমুনা।’

‘আরে কথা শেষ করতে দে আগে। ও তোকে জানাবো কি করে ও নিজেই তো কিছু জানতো না ও বিয়েতে রাজি হয়না বিয়ে করতে চায় না বলে ওর মা ভাবে ওর নাকি রিলেশন করে। সেতো তুই আমি জানি। ওকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করেছে। আর আশীর্বাদ আজকে ও কালকে জানতে পেরেছে। আমি ওকে কল করেছিলাম একটা দরকারে তখন ও আমাকে বলে কান্নাকাটি করছিল। তোকে ফোন করে জানাবে বলল। সকালে আমি কল করেছিলাম তখন ওর ছোট ভাই ধরে বললো ওকে নাকি ঘরে বন্দি করে রেখেছে আর ফোন নাকি ওর মা নিয়ে নিয়েছে। এখন বলতো তোকে কিভাবে জানাবে আমিতো ভাবছি দুইটাই ক্লাস করে তোকে নিয়ে ওদের বাসায় যাব।’

‘আমি আর ক্লাস করব না এখনি চলে যাই। এখন ওর পাশে থাকা আমাদের দরকার তো শ্রাবণকে খুব ভালোবাসে। আরেক জনকেও কিভাবে বিয়ে করবে। আয় শ্রাবণ ভাইকে ফোন দিয়ে সব জানিয়ে দেই। সে তো নিশ্চয়ই দীপার খোঁজ না পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে গেছে।’

‘ আচ্ছা চল।’

আমি আর লিলি কলেজ থেকে 10 টায় বেরিয়ে এলাম। আসার সময় আমি গেটের বাইরে নিবিড় কে বাইকে বসা দেখতে পায় সে ও হয়ত কলেজ থেকে কোথাও যাচ্ছে। বাইকে স্টার্ট করবে তখন আমাকে দেখে একটা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমি ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে ভাবতে থাকি। এমন রাক্ষসের মত তাকাল কেন আমার শয়তানি কাজটা কি ধরে ফেলল নাকি। আমি অন্য দিকে ঘুরে বুকে ফুঁ দিয়ে মনে মনে বলি ছোয়া ভয় পাস না নিবিড় কিছু ধরতে পারে নাই। হয়তো ওনার মুখটা এমন রাগী। সব সময় উনার মুখটা গম্ভীর থাকে।

আমি আর লিলি দীপাদের বাসার সামনে এসে নামলাম। বাসায় ভালোই মানুষজন মনে হচ্ছে আজকেই বিয়ে দিয়ে দেবে। দীপারা
ভাল উচ্চ বিত্ত ফ্যামিলির। আমি আর লিলি গুটি গুটি পায়ে বাসার ভেতরে গিয়ে ঢুকতেই দীপার মার সাথে দেখা হলো। তিনি আমাদের দেখেই নাক মুখ কুচকালো। বিশেষ করে আমাকে দেখে একটু বেশিই তিনি আমাকে একদমই পছন্দ করে না একেতে মুসলিম তারপর গরিব।

আমাকে আর লিলিকে দেখেই একটু গম্ভীর স্বরে বলল, ‘তোমরা এখানে কি করছো?’

আমি আর লিলি ঢোক গিলে বললাম, ‘দীপা আজকে কলেজে যাইনি তো তাই ওকে দেখতে আসলাম অসুস্থ নাকি। ফোনও ধরলা না।’

দীপার মা বলল, ‘যখন তখন আমাদের বাসায় এসে ঢুকে পড়বে না। তোমরা আর আমরা আলাদা জাত এটা মাথায় রাখবে। ‘

‘আচ্ছা সরি আন্টি। দীপা কি অসুস্থ? আর বাসায় কি কোন অনুষ্ঠান?’ দীপার যে আজকে আশীর্বাদ এইসব আমরা দুজন জানিনা এমন একটা ভাব করে কথাটা বললাম।

‘ হ্যাঁ আজকে তোমাদের বান্ধবীর আশীর্বাদ।’

‘ সত্যি আন্টির দীপার সাথে একটু দেখা করে আসি।’

অনিচ্ছা শর্তেও উনি বললেন, ‘আচ্ছা যাও আর তোমরা আজকে দিনটা থেকে যাও বান্ধবীর আশীর্বাদ বলে কথা।’

আমি আর লিলি দীপা রুমের দিকে চলে গেলাম। বাইরে থেকে তালা দেওয়া। একটু পরে দীপার মা চাবি নিয়ে এসে বলল।

উনি এসে তালা খুলে দিলেন।
‘বান্ধবীকে রেডি করিয়ে ফেলো।’

আমাদের সাথে তিনি ভেতরে ঢুকলেন আমরা ভেতরে এসে তো অবাক এর চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম। দীপা রুমের কোথাও নাই আর দীপা যে বাসা থেকে পালিয়েছে সেটা বলে দিয়েছে দীপার বারান্দায় শাড়ি ঝুলছে। পালিয়েছে দীপা‌। দীপার মা এসব দেখে এক চিৎকার দিলো। আর সঙ্গে সঙ্গে বাসার সবাই সেই রুমে এসে জড়ো হলো। আমি চোখ বড় বড় করে দাঁড়িয়ে আছি। এখান থেকে পালাতে হবে দ্রুত। দীপা তো আমাদের না জানিয়ে পালিয়ে গেছে। এবার না জানি দীপার মা আমাদের দু’জনকেই আসামি করে রেখে দেবে। ভাববে আমরা সাহায্য করেছি।
আমি মুখ নিচু করে লিলির কানে কানে বললাম, ‘চল পালাই। এদের হাত থেকে রক্ষা পেতে চাইলে চল পালাই। শালী দীপার বাচ্চা আমাদের না জানি এত বড় গেম খেলল। আমরা যে সে বিপদে এসে ফাসতেছি। শ্রাবণ ভাইয়ের সাথে পালিয়েছে এজন্যই তো শ্রাবণ ভাইয়ের ফোন অফ।’

আমি আর লিলি সবার চিৎকার চেঁচামেচির মধ্যে লুকিয়ে বাসা থেকে ছুটে পালিয়ে এলাম। দীপার ছোট কাকা দেখি আমাদের দেখে ফেলল সে আমাদের পেছনে দৌড়ে চিৎকার করে বলতেছে।

‘ওইযে দীপার দুই বান্ধবী পালাচ্ছে। ওরা নিশ্চয়ই দীপাকে পালাতে সাহায্য করেছে। ধরো ওদের। ওদের ধরতে পারলেই দীপাকে খুঁজে পাওয়া যাবে।’

আমি আর লিলি গাড়ির জন্য দাঁড়াবো কি। জান বাঁচানোর জন্য ছুটে পালাচ্ছি। লুকাতে হবে আমরা একটা গলির ভেতর দিয়ে ঢুকে লুকিয়ে পড়লাম। যদি আবার চলে আসে সেই গলির ভেতর দিয়ে গিয়ে কোথায় যে দৌড়েছি নিজেরাও জানি না।

দৌড়াতে দৌড়াতে একটা বাইকের সামনে এসে পড়লাম একটুর জন্য বাইক আমাদের দুজনের শরীরে আঘাত করে নি। লোকটা যেখুবভালো ড্রাইভ করে সেটা তার ব্রেক করা দেখেই বোঝা গেছে।
আমি মাথা উঁচু করে বাইট চালককে সরি আর ধন্যবাদ বললাম কারণ দোষটা আমাদের ছিল। লোকটা মাথা থেকে হেলমেট খুলতেই আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। এটাতো নিবিড়। আমি শুকনো ঢোক গিলে ভাবছি এই লোকটা এখানে কোথা থেকে এলো?

নিবিড় ঝড়ের গতিতে গাড়ি থেকে নেমে আমার হাত ধরে রক্ত লাল চোখে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ দৌড়াচ্ছ কেন? আবার কোথায় কি আকাম করে এসেছ?’

আমি তোতলানো গলায় বললাম, ‘ মা- নে? আমি আবার কি আকাম করব? ‘

‘একদম ন্যাকামি করবেনা আমার সাথে। তুমি কোন সাহসে আফিয়ার গায়ে কালি আর রং দিয়েছো?’

নিবিড়ের কথা শুনে আমার চোখ দুটো মনে হয় খুলে পড়ে যাবে। আমার মাথায় যেন বাজ পড়লো। এই চরম সত্য কথাটা নিবিড় জানল কিভাবে?

আমি এখন কি করবো? ধরা পড়ে গেলাম তাও আবার বাঘের কাছে?

‘প্লিজ আমার হাতটা ছাড়োন। এই হাতটা আমার খুব ইম্পর্টেন্ট একটা হাত। ভেঙে গেলে আমি কিন্তু আর রান্না করে খেতে পারব না। তখন কিন্তু আপনাকে আমায় রান্না করে খাওয়াতে হবে।’

‘হোয়াট আর ইউ ম্যাড?’

‘পাগল হতে যাবো কেন শুনুন ডানহাত সবারই খুব ইম্পর্টেন্ট। শুধু ডান হাত না শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সবকিছু ইমপোর্টেন্ট আপনি আমার হাতটা যেভাবে ধরেছেন এখন আমার হাতটা ভেঙে যাবে নিশ্চিত। এটা সুস্থ হলেও যতদিন এটা ভাঙ্গা থাকবে ততদিন আমাকে অনেক কিছু সাফার করতে হবে। এই কয়েকদিন পর আমার এক্সাম তো আজ আমার হাতটা ভেঙে যায় তো আমি জানি পরীক্ষা আগে আমার হাত ঠিক হবে না। তখন আমি পরীক্ষায় কিছুই লিখতে পারবো না। লিখতে না পারলে অবশ্যই আমি ফেল করব। তখন দোষটা কার হবে?

নিবিড় বলল,’ অবশ্যই তোমার?’

আমি বললাম, জি না আপনার। আপনি আমার হাত ভাঙার জন্য দায়ী। তাই ফিল করার জন্যে দায়ী হবেন আপনি। তারপর আমার বাসায় আমি ছাড়া আর কেউ নাই। তো আমাকে বাড়ীতে গিয়ে রান্না করে খেতে হয়। তো হাত ভেঙে গেলে আমি রান্না করতে পারবোনা। তখন আমি খেতে পারব না। আর খেতে না পারলে অবশ্য আমি না খেয়ে অসুস্থ হয়ে যাবো। আর আমি অসুস্থ হলেও তার জন্য দায়ী হবেন আপনি। হাত ভেঙে গেলে আমার আরো আরো অনেক অসুবিধা হবে আর সেই সব কিছুর জন্য একমাত্র দায়ী হবেন আপনি। এতগুলো অপরাধের অপরাধী হয়ে আপনার তখন অনেক গিলিটি ফিল হবে। তখন আপনি ঘুমাতে পারবেন না খেতে পারবেন না। বিনা কারণে একজন মানুষকে এত কষ্ট দেওয়ার জন্য আপনি ডিপ্রেশনে…..

‘স্টপ দেয়ার। চুপ করো প্লিজ তোমার এই বাচাল মার্কা কথা শুনে আমার মাথা ঘুরছে। কেউ এত কথা বলতে পারে।’

#চলবে…..

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৬
#নন্দিনী_নীলা

নিবিড়ের হাত হালকা আলগা হয়ে আসে কথাটা বলতে বলতে। সেই সুযোগটা কাজে লাগালাম আমি। সাথে সাথে হাত ঝামটা মেরে ছাড়িয়ে দৌড় লাগায় আর চিৎকার করে বলে উঠি, ‘ লিলি দৌড় লাগা।’

পেছন থেকে নিয়ে নিবিড় উচু গলায় বলে ওঠে, ‘তুমি কি ভেবেছো? তোমাকে আমি ধরতে পারবো না। হাত ছাড়িয়ে দৌড়ালেই তুমি আমার থেকে নিস্তার পেয়ে যাবে না। আমার থেকে পালাতে পারবে কক্ষনো না।’

আমি দৌড়ে অনেকটা দূর চলে আসছি। তবুও নিবিড়ের উচ্চ স্বরে বলা প্রতিটা কথায় আমি শুনতে পাই। আর থেমে পেছনে ঘোরে বলি, ‘ এইযে শুনুন আমি আপনার থেকে পালাচ্ছি না। আর আপনার থেকে আমি পালাবো কেন আমি কি আপনার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নাকি? আমি অন্য কারণে দৌড়াচ্ছি। এখন আপনার সাথে ঝগড়া করলে আমার বিপদ হয়ে যাবে তার থেকে আমি পালাই পরে না হয় আপনার সাথে ঝগড়া করবো। ‘

.
দৌড়াচ্ছি তখন লিলির ফোন বেজে ও ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে শ্রাবণের নাম্বার থেকে কল এসেছে। আমি ওর হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে রিসিভ করলাম। ফোনের ওপাশে আমার শয়তান বান্ধবী আছে সেটা আমি জানি।

‘এই শাকচুন্নি তুই তোর বয়ফ্রেন্ডের লগে পালিয়ে যাবি আগে আমাদের জানাবি না। তোদের জন্য আমরা দুজন একটু জন্য কেস খেতাম।’

‘কেন কি হয়েছে?’

‘আমরা দুজন তো তোদের বাড়ি আসছি লাম।’

দীপা অবাক সুরে বলে, ‘বলিস কি? পাগল হয়েছিস নাকি আমাদের বাসায় তোদের যেতে বলেছে কে?’

‘ তোর জন্য তো গেলাম। তোর ভালোর জন্য গেলাম। আর তুই আমাদের এভাবে ফাসিয়ে চলে গেলি। আগে থেকে একবারও কিছু জানানোর প্রয়োজন বোধ করলি না। সবসময় তো বলিস আমি নাকি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। এদিকে এত কিছু ঘটে গেছে আমি তার কিছুই জানিনা।’

দীপা বলল,, ‘জানবি কি করে? কাল থেকে ফোন করছি ফোনটা কি একবারও খুলেছিস! সেই যে বন্ধ কাল রাত থেকে আজ অব্দি কতবার কল করেছি। কিন্তু আপনাকে তো পাওয়া যায় না। জীবনে ফোনের দিকে তাকিয়েছিস?’

এবার আমার নিজের ফোনে কথা মনে পড়ল। কাল মামির সাথে কথা বলার সময় ফোনটা অফ হয়ে গেছিল। আর চার্জে বসানোর কথা মনে নাই সেই ফোনটা টেবিলের উপরে আছে।

‘ আচ্ছা বাদ দে। তোরা এখন কোথায় আছিস?’

দীপা ফুঁসে ওঠে বলল, ‘কেন এখন বাদ দেবো কেন? নিজের দোষ এখন তো বাদ দিতেই বলবি।’

‘বলবি কোথায় আছিস? নাকি ফোনের ভিতরে দিয়ে কিল খাবি!’

‘ দে পারলে। আমরা ***** আছি।’

‘ ওকে আমি আসতেছি।’

বলেই ফোন কেটে দিলাম। দীপা কি যেন বলছিল আমি না শুনে কল কেটে দিয়েছি।
এবার সাথে সাথে একটা মেসেজ এলো।

‘ তোরা আসিস না। এখানে আমরা থাকব না। এখানে থাকলে ধরা পরে যাবো আমরা চলে যাচ্ছি গাড়িতে আছি। কথা না শুনেই তো কেটে দিস। বাসায় ফিরে যা। আমি সুযোগ পেলে কল করবোনি। এখন ফোন অফ করে দিব অফ পেলে চিন্তা করিস না।’

আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি লিলি আমার হাত ধরে বলল, ‘দোস্ত চল বাসায় চলে যায়। ও দের কাছে গিয়ে কি করব। ওরা ওদের মতো থাক। কলেজ ছুটি দিয়ে দিছে। এখন বাড়ি না গেলে আমাকে বকা খেতে হবে মা’র কাছে।’

‘আচ্ছা চল।’

‘হ্যাঁ কিন্তু নিবিড় ভাইয়া তোকে কি বলল রে। তুই আবার আফিয়া মেয়েটাকে কি করেছিস?’

আমার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল কারণ আমি দীপাকে নিয়ে খুব চিন্তা করছিলাম। ওর কাছে যেতে চাইছিলাম কিন্তু দীপা কোথায় যাচ্ছে সেটা আমাকে বলল না‌। আর ফোনটা অফ করা। এজন্য খুব কষ্ট পেয়েছি। তাই মন খারাপ করে চলে যাচ্ছিলাম। লিলির কথা শুনে আমার আফিয়ার কথা মনে পড়ে গেল। আফিয়ার কি অবস্থা করছিলাম মনে পড়ে হাসি চলে এলো।
ওকে শুরু থেকে শেষ অব্দি সব খুলে বললাম। লিলি গালে হাত দিয়ে বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

‘নিবিড় ভাইয়া তো সব বুঝে ফেলছে এবার কি করবি?’

‘কি আবার করব?আমি কিছু করেছি নাকি?’

লিলি কপাল কুঁচকে বললো, ‘মানে?’

আমি শয়তানি হাসি দিয়ে বললাম, ‘আমি কিছু করেছি নাকি? আমি তো এটাই বলব।’

লিলি বলল, ‘তুই এত কষ্টের মাঝেও এত হাসিখুশি আর দুষ্টুমি বুদ্ধি কোথায় থেকে বের করিস বলতো।

আমি বললাম, ‘ গাঁধী আমার আবার কষ্ট কিসের রে। চল আমার খিদে পেয়েছে বাসায় গিয়ে খাব। ‘

‘ আমার সাথে চলো খেয়ে বাসায় যাস নি।’

‘ তোর সাথে যাব কেন?’

‘ বাসায় গিয়ে খিদে পেটে রান্না করবি কি করে?’

‘এটাই তো মজা। চাইলে তুই আমার সাথে চল‌।’

‘জানিস তো আমার ভাই জানলে আমারে বাসায় ঢুকতে দিব না। 2 মিনিট দেরি হলে আমার সাথে কি বাজে ব্যবহারটাই না করে‌।’

বাসায় এসে কোন রকম রান্না করে খেয়ে ঘুম দিয়েছি। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা যখন জাগানা
পাই তখন ফোনের শব্দে জাগানা পাই। বাসায় এসেই ফোনটা চার্জে লাগিয়ে ছিলাম ওপেন করে। ফোন হাতে নিয়ে দেখি আননোন নম্বর থেকে কল এসেছে আর এদিকে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি অন্ধকার হয়ে গেছে ঘড়িতে বাজে সাড়ে সাতটা। আমি শুয়েছিলাম চার টার দিকে। তিনঘন্টা ঘুমিয়েছি বাবা গো এত সময় কিভাবে ঘুমালাম।

ফোন কানে নিয়ে হ্যালো বলতেই আমার বুক ধক করে ওঠে। ওপাশ থেকে কথা বলছে আমার মামি,

‘হ্যালো আসসালামু আলাইকুম!’

‘হ্যালো ছোঁয়া কোথায় তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয় সর্বনাশ হয়ে গেছে‌।’

আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ কি হয়েছে মামী? এসব কি বলছ তুমি? কি সর্বনাশ হয়েছে?’

‘তুই বাসায় আয় ফোনে আমি কিছু বলতে পারছিনা।’

‘বাইরে তাকিয়ে দেখো রাত হয়ে গেছে আমি এখন কিভাবে আসবো কি হয়েছে বল প্লিজ।’

‘ তোর যদি আমাদের প্রতি মায়া থাকে তাহলে আয় না হলে আসতে হবে না।’

বলে ফোনটা কেটে দিলো। আমি এখন কি করবো এখন যাব। যদি কারো কোন বিপদ হয়ে থাকে।
বাস ধরতে হবে তাড়াতাড়ি বের হয়।

কোন মতে হিজাব আটকে পার্স হাতে বেরিয়ে পরলাম। এবার বাসটা ঠিকমত পেলে হয়। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। ঠিক ৮:৪৫ বাস আসলো কিন্তু এত এত মানুষ দাঁড়িয়ে ছিল যে ভীরের মধ্যে আমি ধাক্কাধাক্কিতে বাসে উঠতে পারলাম না। বাসটা আমার চোখের সামনে একদম ফুল হয়ে চলে গেল‌। আমি বোকা চোখে বাসটার দিকে তাকিয়ে আছি। দ্বিতীয় বাস আসতে আর আধা ঘন্টা। সাড়ে নয়টার আগে পরের বাস আসবে না।

এতো সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো। এমনিতে যাইতে দু’ঘণ্টার কম লাগবে না তার ওপর যদি এখানে আমি আধাঘন্টা বসে থাকি। তাহলে তুমি বারোটার আগে পৌঁছাতে পারবো না।
কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশে বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে তাকাচ্ছি। হঠাৎ কানের কাছে মনে হল কেউ ফিসফিস করে আমাকে ডাকলো। আমি লাফ মেরে দূরে সরে পেছনের একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। তার মুখের লাইট পরে নি এজন্য অন্ধকার চেনা যাচ্ছে না‌‌। আমি বুকে ফুঁ দিয়ে কাঁপা গলায় বললাম, ‘ ক কে আপনি? আমার নাম জানলেন কিভাবে? আর এমন অভদ্রের মতো আমার কাছে আসলেন কেন?’

এবার লোকটা আলোর দিকে মুখ করে তাকাতেই আমি চমকে উঠলাম।

অস্পষ্ট স্বরে বললাম, ‘আপনি এখানে কি করছেন?’

নিবিড় এখানে কোথা থেকে এলো।

নিবিড় আমার দিকে এক পা দু পা করে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, ‘শুনলাম তোমার বান্ধবী দীপা নাকি তার বয় ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে গিয়েছে। এই রাতের বেলা তুমিও কি বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালানোর মতলব করেছো নাকি?’

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here