অবাধ্য_প্রেম #পর্ব_৭,০৮,০৯

0
1200

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৭,০৮,০৯
#নন্দিনী_নীলা
০৭

‘শুনলাম তোমার বান্ধবী দীপা নাকি তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে গিয়েছে। এই রাতের বেলা তুমিওকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালানোর মতলব করছ নাকি?’

আমি কটমট চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘আমি কার সাথে পালাবো! কোথায় যাবো! কি করবো! সেই সব আমার আপনাকে বলা লাগবে? কি করছো কোথায় যাচ্ছি! না যাচ্ছি! সেসব আমি আপনাকে কেন বলতে যাবো? আর আপনি আমাকে জেরা করছেন কেন? মনে হচ্ছে আপনি পুলিশ আর আমি চোর!’

নিবিড় বাঁকা হেসে বলল, ‘তুমি চোর হবে না তুমিতো চুন্নি হবে। আর আমার তোমাকে জেরা করবার বা তুমি কোথায় যাচ্ছ জানার কোনো আগ্রহ নেই। আমি তো আমার কাজ করতে এসেছি।’

আমি অবাক গলায় বললাম, ‘তাই?? আপনি বুঝি কাজ করতে এসেছেন। তাহলে নিচের কাজ না করে আমাকে কেন জ্বালিয়ে মারছেন?’

নিবিড় আমার দিকে শয়তানি চাহনির দিয়ে বলল, ‘তোমাকে জ্বালানোটাই তো আমার একমাত্র কাজ। ‘

আমি বিস্মিত গলায় বললাম, ‘ কিহহ বললেন?’

নিবিড় আমার কথার উত্তর দিল না। আমার দিকে এগোতে লাগল আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেই যাচ্ছি।

‘আমাকে জ্বালানোটা আপনার একমাত্র কাজ? এসবের মানে কি? আপনি ইচ্ছে করে আমাকে ফলো করছেন। আর আমার পেছনে পরেছেন তাইনা। দেখুন সেই একটা ব্যাপারকে ইসু করে বারবার আপনি আমার কে হেনস্তা করতে পারেন না। এবার যদি আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন তাহলে কিন্তু আমি মেয়েদের ইভটিজিং করার জন্য থানায় যাব আপনার নামে….

আমার কথা সম্পন্ন হতে দিল না শয়তান নিবিড় আমার কাছে এসে আমার কাঁধে থেকে ব্যাগটা একটান মেরে নিলো। আমি বড় বড় চোখ করে আমার কাঁধে থাকা ব্যাগ টা নিবিড়ের হাতে দেখছি।এক টানের আমার কাঁধে থেকে ব্যাগটা নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে।

‘এটা কেমন ভদ্রতা! আপনি আমার ব্যাগ নিলেন কেন? আমার ব্যাগ দিন বলছি।’

বলতে বলতে আমি নিবিড়ের হাতের দিকে নিজের হাত বাড়ালাম ব্যাগ নেওয়ার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে নিবিড় হাত শূন্যে তুলে নিল।

আমি লাফিয়ে ব্যাগ নেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। পারবো কিভাবে এই নিবিড় এমনিতেই তালগাছের মতো লম্বা তারপর হাত উঁচু করেছে আমি কি তার হাতের নাগাল পাবো নাকি। লাফিয়ে সেটা ধরতে পারলাম না।

তাই ব্যর্থ হয়ে থেমে গিয়ে শান্ত চাহনিতে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আপনি আমার ব্যাগ নিয়ে এমন করছেন কেন? এই ব্যাগে লক্ষ লক্ষ টাকা নাই। দয়া করে আমার ব্যাগটা ফেরত দিন।’

‘আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু নো হোয়াট ইন দ্যা ব্যাগ। আমার তো এই ব্যাগটাই চাই।’

‘আমার ব্যাগ আমাকে ফেরত দেন ভালোয় ভালোয় বলছি।’

‘দেবো না কি করবে? আচ্ছা নাও তুমি যদি এটা টাচ করতে পারো আমি তোমাকে ফেরত দিয়ে দেবো।’

‘আমার ব্যাগ নিতে আমি আপনার শর্ত মানতে যাব কেন? চুপচাপ আমার ব্যাগ দিন আর চলে যান এখান থেকে।’

‘ওকে চলে যাচ্ছি। একটা চান্স দিয়েছিলাম কিন্তু চান্সটা নিলে না।’

নিবিড় ব্যাগ নাচাতে নাচাতে চলে যেতে নিলো। আমি দৌড়ে গিয়ে নিবিড় এর শার্ট টেনে ধরলাম পেছন থেকে।

‘আরে আরে আমি আপনাকে আমার ব্যাগে রেখে যেতে বলছি। আপনি আমার ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছেন কেন?’

নিবিড় রক্ত চোখে আমার দিকে তাকাতেই আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম। আর সাথে সাথে শার্ট থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলাম।

নিবিড় আমার দিকে ঘুরে আমি যেখানে শার্ট স্পর্শ করেছিলাম সেখানে তাকিয়ে বলল, ‘ ডোন্ট টাচ মাই শার্ট রুডি গার্ল।’

আমি মিনমিন করে বললাম, ‘আমি আপনার শার্ট একটু স্পর্শ করলাম আর আপনার এত গায়ে লাগল। আর আপনি যে আমার ব্যাগটা নিয়ে যাচ্ছেন আমার কেমন লাগছে বলেন তো। ‘

‘তোমার ব্যাগ নিয়ে তোমাকে একটা চরম শাস্তি দেওয়াটা আমার অধিকার কারণ তুমি এর প্রাপ্য।’

‘মানে আমি কি করেছি যা হয়েছে সব ত মিটে গেছিল আবার কেন সেগুলো টেনে আনছেন?’

‘তুমি আফিয়াল সাথে যা করছো। সেটা যদি আমি আফিয়া কে জানিয়ে দিই তাহলে তোমার কি অবস্থা হবে তুমি ভাবতে পারছ না। আমি তোমাকে এক দিক দিয়ে বাঁচিয়ে নিজে তোমাকে একটা শাস্তি দিচ্ছি তাই আমার শাস্তি মাথা পেতে নাও।’

‘ দয়া করে আমার ব্যাগটা দিয়ে দিন আমাকে এখন একটা দরকারি কাজে যেতে হবে আমি যদি যেতে না পারি আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে।’

‘আমি তো এটাই চাই।’

বলে নিবিড় আমার ব্যাগটা নিয়ে ওর মাইক্রো গাড়িতে উঠে বসলো তারপর চলে গেলো আমি সেখানে ধপ করে বসে পড়লাম এখন কি করবো।

.
পরদিন মামী আমার বাসায় এসে হাজির। আমি কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলতেই মামীর হাতে একটা জোরে থাপ্পর খেতে হলো। আমি গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে মামীর দিকে তাকালাম।

‘এত করে ফোন দিয়ে যেতে বললাম তাও গেলি না। তোর মত অকৃতজ্ঞ মেয়ে তো আমি দুটো দেখি নাইরে।’

‘বিশ্বাস করো আমি যেতে চাইছিলাম আমি বের ও হয়েছিলাম কিন্তু…
আমাকে থেমে যেতে হল নিবিড়ের কথা মামি কে কি বা বলব! আর বললেও তো মামি উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে বসবে। এটা তো আর মামী কি বলা যাবে না। আমি চুপ করে গেলাম দেখে আমি আর বলার সুযোগ পেয়ে গেল,

‘ আমাকে মিথ্যা বলিস আমার সাথে মিথ্যা কথা? তুই যেতে চাইছিলি বের হয়েছিল তাহলে তুই গেলিনা কেন? তোর জন্য কেন আমাকে এত কথা শুনতে হলো? তোর জন্য সবাই আমাকে যা নয় তাই তাই বলে অপমান করল। এত বড় সর্বনাশ করলি আমার আর শান্তিতে ঘুমাচ্ছিস। বাসায় তাই না তোর শান্তি আমি ছুটাচ্ছি। আজ‌ই তুই আমার সাথে বাড়ি ফিরে যাবি। ‘

‘কী হয়েছে মামী কার কী হয়েছে? আর সবাই তোমাকে কথা শোনাচ্ছে মানে কি?’

‘কত ভালো ছেলে পেয়েছিলাম কত কোটি টাকার মালিক। তোর জন্য সেই বিকেল থেকে বসে ছিল। আমি তোকে এত যেতে বললাম তুই গেলিনা তার আমাকে কতো কথা শুনালো।’

‘তুমি আবার আমার বিয়ে ঠিক করছিল? আর আমাকে মিথ্যা কথা বলে ওই ভাবে নিচ্ছিলে? আমি তোমাকে বলেছি আমি এখন বিয়ে করবো না তাও কেন এসব করো।’

‘বিয়ে তাকে করতেই হবে। আর আমার পছন্দই করতে হবে। আমি এক সপ্তাহের ভেতরে তোকে বিয়ে দিব। তাদের হাতে পায়ে ধরে হলেও তোকে আমি ওই বাড়িতেই বিয়ে দেব চল তুই আমার সাথে।’

‘আমি কোথাও যাবেন‌। আর আমার পরীক্ষা কয়দিন পর। আর আমি তো বিয়ে করার জন্য কখনোই যাবো না। তুমি চলে যাও।’

‘আমার মুখের উপর কথা বলছিস তুই?’

‘হ্যাঁ বলছি তোমাদের কাছ থেকে তো এখন আর আমি টাকা নেয় না। আমি নিজের টাকা নিজেই জোগাড় করি‌। আর নিজে জোগাড় করে নিজের চলছি‌। তাহলে তুমি কেন আমার পেছনে পড়ে আছো। তোমার বাসায় থেকে তো আর তোমার অন্ন ধ্বংস করছি না। তাহলে আমাকে আমার মত থাকতে দাও। আমাকে আর জ্বালিয়ো না। ‘

‘ওই বাড়িতে তোকে বিয়ে দেবোই। তুই আমার সাথে যাবি না হলে তোর মামাকে আমি কিন্তু আর একটা ওষুধ ও খাওয়াবো না ঘরের এক কোনায় পড়ে আছে এভাবে পড়ে থাকবে‌।’

‘সে শুধু আমার মামা না সে কিন্তু তোমার স্বামীর তার উপর তুমি এমন টা করতে পারবেন?’

‘কি করতে পারি আর না পারি অবশ্যই তুই আমার কাছে থেকে জেনেছিস। নাকি সেই সব দিনগুলো ভুলে গেছিস। আমি নিজের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারি। যেখানে নিজের সন্তানকে ছাড় দেয় না।’

‘জীবনে তোমার মতো এতো খারাপ বউ আর মা আমি দেখিনি।’

‘মুখে মুখে তর্ক করা বাদ দিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নে তোর লেখাপড়া এখানেই সমাপ্ত যদি শশুর বাড়ি গিয়ে তাদের মানি করতে পারিস তো করিস।’

‘ এই পাপের জন্য একদিন তোমাকে পস্তাতেই হবে। আর সেই দিন না আমার পায়ে পড়ে তোমাকে নিজের জান ভিক্ষা চাইতে হয়।’

#চলবে…..

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৮
#নন্দিনী_নীলা

‘ হ্যালো, ক‌ই তুই?’

‘ আমি মামীদের বাসায়।’

লিলি বলল, ‘ সেখানে কি করিস কলেজ আসবি না। আর পরিক্ষা দুইদিন পর তুই সেখানে গিয়েছিস কেন?

‘ আমি আসি নি আমাকে মামী জোর করে নিয়ে এসেছে!’

লিলি অবাক গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘ মানে কি?’

আমি বললাম, ‘ মামী আমার বিয়ে ঠিক করেছে। তিনি আর আমাকে পরাতে চায় না।’

‘ তুই তো নিজের খরচ নিজে চালাস তাহলে তার না পরানোতে আসে যায় কি?’

‘ কোন ভাবেই আমাকে পরতে দেবে না। আমি অনেক বলেছি শুনে নাই‌। তিনি আমায় বিয়ে দিয়েই ছাড়বে। আমি পালাতেও পারব না। সব পথ বন্ধ করে দিছে তুই দীপার সাথে কন্টাক্ট রাখিস।’

‘ আচ্ছা। কিন্তু আমি এটা মানতে পারছি না। এইভাবে তুই আলাদা হয়ে গেলি আমি এখন একা কলেজে কি করে থাকব।’

‘ একটা দোয়া কর যেন পাত্র পক্ষের আমাকে পছন্দ না হয়।’

‘ শোন…

আমি আর লিলি কথা শুনতে পারলাম না। মামি দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। আর বলছে, ‘ আর কতো কাল দরজা বন্ধ করে থাকবি? নাকি পালানোর মতলব করছিস। তারাতাড়ি দরজা খোল ছোঁয়া আমার সাথে চালাকি করলে এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।’

আমি তাড়াতাড়ি কল কেটে দরজা খুললাম। আর বললাম, ‘ আমি ঘুমাচ্ছিলাম। এখন কি একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারব না তোমার জ্বালায়।’

‘ পারবি না কেন? ভালো করে ঘুম পার তাইলে না সুন্দর লাগবে দেখতে। কিন্তু দরজা লক করতে পারবি না। তোকে আমি এক বিন্দু বিশ্বাস করি না।’

‘ এতো অবিশ্বাস তাইলে আসো আমার সাথে ঘুমাও যত্তসব।’

সত্যি সত্যি মামি বালিশ নিয়ে আমার কাছে চলে এসেছে এটা দেখে নিজের কপালে বাড়ি মেরে মেরে যেতে ইচ্ছে করছে। এখন রবিনের ফোনটা ওকে কি ভাবে দেব? রবিন আমার মামাতো ভাই। ক্লাস নাইনে পরে। ওর থেকে ফোনটা নিয়ে আমি লিলিকে কল দিয়েছিলাম। মামি যদি জানতে পারে আমি ফোন নিয়ে কাউকে কল দিয়েছি আমার খবর আছে।

আমি জরোসরো হয়ে শুয়ে আছি মামি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ তোর ফোন ক‌ই?’

আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম কি বলব এখন! ফোনটা তো নিবিড় এর কাছে। আমার ফোন ব্যাগ নিবিড় এর কাছে এসব লিলিকে জানিয়ে দিয়েছি ওর যেন সব নিয়ে নেয়। মামি আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আমি ঢোক গিলে বললাম, ‘ কেন আমার ফোন দিয়ে কি করবা?’

‘ নিজের ফোন থাকতে রবিনের ফোন আনছিস কেন?’

আমি থপ করে উঠে পরলাম, ‘ মানে !’

মামি আমার বালিশের নিচে থেকে ফোন বের করে আমার সামনে ধরল, আমি বললাম,’ আমার ফোনে টাকা নাই তাই আনছিলাম।’

‘ তোর নাগররে কল দিচ্ছিলি তাই না?’

আমি নাক ছিটকে বললাম, ‘ ছিহ মুখের কি ভাষা। একদম বাজে কথা বলবে না।’

‘ একা একা শহরে থাকিস। আবার নিজের টাকা নিজেই ইনকাম করিস কিভাবে হ্যাঁ? এতোই সোজা টাকা কামানো। কতো গুলো ছেলে জুটাইছিস তাই ক

‘ দয়া করে মামি চুপ করো। তোমার মতো নোংরা মস্তিষ্কের মানুষ এসব‌ ছাড়া আর কি ভাবতে পারে।’

‘ সত্যি বললেই গায়ে ফোসকা পরে তাই না‌। কাল পাত্র পক্ষ আসবে কোন রকম ঝামেলা করবি না সুন্দর করে কথা বলবি। তাদের যেন তোকে পছন্দ হয় না হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।’

‘ আমার মতো কালো মেয়েকে তাদের পছন্দ হবে না তাই আগে বলছি এসব করা বন্ধ করো এখনো সময় আছে। আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।’

‘ ঘুমা তো। রাত জাগলে চোখের নিচে কালো দেখা যাবে আয় মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।’

আমি দাঁত কিড়মিড় করে শুয়ে পরলাম।

.
পরদিন লিলি মন খারাপ করে ভার্সিটিতে আসতেই ওর দেখা হয় নিবিড় দের সাথে। লিলি ছোঁয়ার ব্যাগ নেওয়ার জন্য ওদের দিকে গিয়ে যায়। নিবিড় আর সবাই ফোনে কি যেন খেলছে আর চিৎকার করছে। লিলি ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি বলে ডাকবে বুঝতে পারছে না।
অবশেষে নিবিড় ভাইয়া বলে ডাকল কিন্তু ওর কথা কারো কান অব্দি পৌঁছালো না। ও খুব জোরে ডাকে নি। আস্তে করেই ডেকেছে আর সবাই কথা বলছে হাসছে তাই ওর কথা কাছে যায়নি। হঠাৎ নিবিড়ের নজর পরে ওর দিকে আর ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? সবাই তখন লিলির দিকে নজর দেয়।

লিলি থতমত খেয়ে যায়। আর তোতলাতে তোতলাতে বলে, ‘ ভাইয়া ছোঁয়ার ব্যাগটা দিন প্লিজ। ওর আমাকে আপনার থেকে ব্যাগ নিতে বলেছে।’

নিবিড় নির্লিপ্ত গলায় বলে, ‘ যার ব্যাগ তাকে এসে নিতে বলো।’

লিলি ঢোক গিলে বলে, ‘ ও আসতে পারবে না। আমার কাছে দিন প্লিজ।’

নিবিড় রাষান্বিত গলায় বলে,’ সো সরি। তোমার বান্ধবী কে আসতে বলে। নাহলে ব্যাগের আসা ছেড়ে দিতে বলো। ‘

‘ আপনি বুঝার চেষ্টা করুন ও আসতে পারবে না। আসতে পারলে কি আসতো না। ও আর কোনদিন এই কলেজে আসবে না সেই পথ বন্ধ হয়ে গেছে দয়া করে ব্যাগটা দিন আমি ওর কাছে পৌঁছে দিব। ‘

নিবিড় অবাক স্বরে বলল, ‘ আর আসবে না মানে? আমার ভয়ে কলেজ ছেড়ে দিল নাকি। তোমার বান্ধবী কে তো আমি সাহসী ভাবছিলাম এখন তো দেখছি ভীতুর ডিম। ভয়ে একদম লেখাপড়াই বাদ দিয়ে দিছে।’

‘ দেখুন ভাইয়া ছোঁয়া কে নিয়ে বাজে কথা বলবেন না। ও মুটেও ভীতু না ও যথেষ্ট সাহসী। ও আপনার ভয়ে কলেজ ছাড়ে নি। ও কলেজ ছেড়েছে অন্য কারণে।’

‘ আমি জানি এসব মিথ্যা গল্প বলছো । ভয়ে আমার সামনে আসবে না তাই ব্যাগ তোমাকে দিয়ে নেওয়াতে চাইছে। দুইদিন পর‌ই দেখব কলেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

লিলি এবার কপাট রাগী গলায় বলল, ‘ আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নাই মিথ্যা গল্প বলতে আসবো। আর ছোঁয়া চাইলেও আসতে পারবে না কারণ ওর বিয়ে।’

নিবিড় চমকে উঠল বিয়ের কথা শুনে অস্পষ্ট স্বরে বলল, ‘ হোয়াট? রিয়েলি!’

‘ থাক দিতে হবে না। ওই ব্যাগ আপনি নিজের কাছেই রাখেন গা। আমি তো আমার কাজ করেছি চাইছি আর ছোঁয়ার সাথে আমার ও দেখা হবে না তাই আমিও ওকে দিতে পারব না। তার থেকে আপনার কাছেই থাক।’

বলেই লিলি চলে গেল। আর পেছনে রেখে গেল নিবিড় এর বিস্ময়কর চাহনি। নিবিড় ফট করেই বসা থেকে উঠে চলে গেল। নিবিড়ের ফ্রেন্ডরা ওকে ডাকতে লাগল আর কি হয়েছে জিজ্ঞেস করল নিবিড় উওর দিল না।

.
মামি আমাকে গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে‌‌। এটা মামির ফেবারিট শাড়ি‌। একদিন আমি এই শাড়িটা ধরেছিলাম বলে মামি আমাকে ঠাস করে থাপ্পড় মেরেছিল। আর আজ সেই শাড়িটাই মামি স্ব‌ইচ্ছায় আমাকে পরিয়ে সাজিয়ে দিচ্ছে ভাবা যায়‌।

আমি নিজ ইচ্ছায় সাজাচ্ছে পাত্র পক্ষকে জোর করেই মনে হয় পছন্দ করাবে। মুখ দিয়ে না বের হতেই দিবে না। আমি দাঁত চেপে সহ্য করছি এই ন্যাকামি।

‘ কোন গন্ডগোল করবি না বলছি।’

‘ আচ্ছা।’

মামি খুশি হয়ে চলে গেল। একটু পর শুনলাম সবাই চলে এসেছে আমি জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম বড় বড় কয়টা গাড়ি এসেছে। লোকরা যে বিরাট ধনী তাদের গাড়ি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
গাড়ি থেকে এতো এতো ফল মিষ্টি নামাচ্ছে তা দেখে আমার মাথাই ঘুরে উঠলো। আমি হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছি। সাথে অবাক হলাম পুলিশ দেখে। কোন পুলিশ অফিসারের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে নাকি মামি?

এতো লোক এলো আমি ভাবছি এই ছোট ঘরে এই এতো মানুষের জায়গা হবে কীভাবে।

#চলবে….

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৯
#নন্দিনী_নীলা

অবশেষে আমাকে কাকতাড়ুয়া সাজিয়ে তাদের সামনে নিয়ে এলো মামি। আমি মাথা নিচু করে না এসে মাথা উঁচু করে তাদের সামনে ট্রে হাতে চলে এলাম। চাচি কয়েকবার ইশারায় মাথা নিচু করে ভদ্র সেজে আসতে বলেছে আমি ইশারা বুঝি নি এমন ভাব করেছি।
পুরুষ মানুষ তিনজন আর মহিলা আছে দুজন একজন আমার বয়সী ছেলে আছে। আমি সবাইকে দেখছি সালাম দেয় নি। তার জন্য চাচি আমাকে জোরে এক ধাক্কা দিল আমি চমকে উঠে তার দিকে ফিরতেই ইশারা করল সালাম করতে। আমি দাঁড়িয়ে মুখে হাসি এনে সালাম দিলাম। মামি এবার রাগে আমার পাশে থেকে চলে গেল আমি ছেলে কোনটা বুঝার চেষ্টা করছি এখানে আমার বাবার বয়সী বসে আছে দুজন আর একজন আমার বয়সী। আমি ভাবছি এই আমার বয়সী ছেলেটার সাথে কি আমার বিয়ে ঠিক করতে আসছে নাকি। আমি বিহ্বল চোখে তাকিয়ে ভাবছি। সবাই আমার সালামের উত্তর দিয়ে দিল‌‌। আমি কি করে বিয়ে ভাঙব ভাবছি। এমন কিছু করতে হবে এরা নিজে থেকে বিয়ে ভেঙে চলে যায়‌ আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে ভাবছি।

তখন আমার বয়সী ছেলেটার ফট করে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল, ‘ হবু চাচি আপনি এখানে বসেন।’

আমি থমকে গেলাম। এই পোলা আমারে চাচি বলছে কেন? আমি বড়বড় চোখ করে তাকালাম। সবার দিকে তাকালাম‌। বসে থাকা এক মহিলা আমাকে তার পাশে বসতে বলল। আমি বিস্মিত মুখেই বসলাম।

তিনি আমাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে লাগল। আমি ছেলে কোনটা ভাবছি এই দুজনের মধ্যে কি নাকি আসেই নি? তখন আমার সব চিন্তা ভাবনার অবসান ঘটিয়ে আমার পাশে বসা মহিলাটা আমার বাবার বয়সী একজন লোক কে দেখিয়ে বলল, এই তোমার হবু বর। আমার মাথা ঘুরে উঠলো। আমি মামির রুচি দেখে হাত ছড়িয়ে কাঁদতে চাইছি এই বিয়ে আছি জিন্দিগি তবে করব না‌। এই বয়স লোকটাই বা কি মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করতে আসছে ছিহ। আমার চোখে জল চলে এলো আমি মাথা নিচু করে বসে আছি‌। কান্না কান্না মুখে।

আমার পাশে বসা মহিলাটা দুজনের মাঝে এক লোক কে ডেকে বলল,, ‘ রাফসান দেখো তোমার হবু ব‌উকে একবার তো তাকাও।’

আমি তার দৃষ্টি দেখে তাকালাম লোকটা ফোন ঘাটছে চোখ মুখ শক্ত। আমি রাগে দুঃখে চুপ করে আছি। চাচি একটু পর পর এসে কথা বলছে আর আমার দিকে কড়া চাহনি দিচ্ছে আমি যেন আবার গন্ডগোল না করি তাই‌। আমি তো চাইছি একা কথা বলতে তাইলে এই বিয়েটা ভাঙার কিছু করা যাবে।
এখানে আমি কি করব।

মামি সবাইকে তাদের আনা ফল মিষ্টি দিয়েছে একজন ছাড়া কেউ হাত ও দেয়নি। আমার বয়সী ছেলেটার নাম নিশান সেই শুধু খাচ্ছে আর হাসছে।
একটু পর সবাই মিলে ঠিক করল আমাকে আর রাফসান কে আলাদা করে কথা বলতে পাঠাবে। আমি শুনেই তো উঠে খুশি হয়ে ভেতরে চলে গেলাম।

এদিকে রাফসান উঠে ফোন কানে নিয়ে বলল, ‘ আমার একটা জরুরী কাজ পরে গেছে আমি আসছি।’

কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল। আমি অপেক্ষা করছি আসার আসলেই বিয়ে করব না বলে দিব। কিন্তু যার জন্য অপেক্ষা করছি তার খবর নাই রবিনের থেকে জানতে পারলাম লোকটা নাকি চলে গেছে। তার যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সবাই বিদায় নেয় সবাই চলে যাওয়ার পর মামি মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বসে আছে। আমি পায়ের উপর পা তুলে আরামশে বসে আছি। কিছুই করা লাগল না তার আগেই সব বন্ধ আহ কি শান্তি। আল্লাহ তুমি এইভাবে আমাকে বাঁচিয়ে দিলে।

মামি মুখটা গোমরা করে বসে র‌ইল বিকেল ভর। আর আমি খুশিতে কাটালাম। কিন্তু আমার সব খুশি কেড়ে নিল রাতের এক কলে। পাত্র পক্ষরা কল করে জানায় তারা নাকি আমাকে পছন্দ করেছেন। আর তারা খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করতে চায়। আমার মাথায় যেন বাজ পরল।

আমার আনন্দিত মনটা নষ্ট হয়ে গেল। এবার আমি মনখারাপ করে বসে আছি আর মামি খুশিতে বাকবাকুম করছে। একটু পর পর এসে বলে, ‘ খুব নাচতে ছিলি না খুশিতে এখন নাচ তোর বিয়ে তো ঠিক করে ফেললাম।’

‘ সরো তো। একদম জ্বালাতে আসবে না।’

.
এদিকে রাফসানের বাসায় যুদ্ধ চলছে। রাফসান চিৎকার চেঁচামেচি করছে এই বিয়ে কিছুতেই করবে না। ওই টুকু বাচ্চা মেয়েকে ও বিয়ে করবে ইম্পসিবল। কিন্তু ওর কথার গুরুত্ব দিচ্ছে না কেউ। সবাই যেন জোর করেই ওকে বিয়ে দিয়ে ছারবে। সবাই ওর‌ই সামনে ফোন করে পাকাকথা বলল ও রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে গেল।

সবাই মিলে ওকে ওই বাসায় নিয়ে যাওয়ার আগে বলেছিল মেয়ের বয়স ৩০+ হবে কিন্তু গিয়ে দেখতে পেল ২০+ মেয়ের বয়স হবে। যেখানে ওর নিজের বয়স ৪০+ সেখানে ওই হাফ বয়সী মেয়েকে ও বিয়ে করবে অসম্ভব। রাগে দরজা বন্ধ করতে যাবে তখন কেউ একজন দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে আসে‌ তাকে দেখে দরজা থেকে সরে যায় রাফসান।

রাফসানের বড় ভাইয়ের বড় ছেলে নিবিড় এসেছে কাকার কাছে। রাফসান নিবিড় কে খুব ভালোবাসে। আর নিবিড় তার বন্ধুর মতো।
নিবিড় কলেজ থেকে মুড করে বাসায় এসে জানতে পারে সব তারপর সবার আসার অপেক্ষায় ছিল‌।
ঘুমিয়ে ছিল ও চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বেরিয়ে আসে আর কাকাকে রাগ করছ রুমে যেতে দেখে পিছনে আসে।

‘ হোয়াটস হ্যাপেন্ড কাকা। তুমি এতো রেগে আছো কেন? তুমি তো বিয়ে করবে বলে রাজি হয়েছিলে এখন বাধা দিচ্ছ কেন? ‘

রাফসান রাগান্বিত গলায় বলল, ‘ হুম রাজি হয়েছিলাম তাই বলে একটা হাঁটুর বয়সী মেয়েকে বিয়ে করবো। ঠিক সময়ে বিয়ে করলে ওর থেকে বড় আমার একটা মেয়ে থাকতো।’

‘ হোয়াট। মেয়ের বয়স কম এজন্য রাজি হচ্ছো না?’

‘ হুম আর তা ছাড়া ওই মেয়েও রাজি না আমি তার মুখ দেখেই বুজেছি‌। সেখানে সবাই কিনা রাজি হয়ে বসে আছে।’

নিবিড় বলল , ‘ মেয়ের বয়স যাইহোক সেটা বাদ দাও। কাকা মেয়ে স্ব ইচ্ছায় রাজি থাকলে তুমি বিয়েটা করবে তাই তো?’

রাফসান বলল, ‘ হুম।’

‘ আচ্ছা। মেয়েটার সাথে একদিন দেখা করার প্লান করতে হবে। তারপর জানা যাবে তার মনের খবর। ‘

‘ আমি দেখা ফেখা করতে পারব না। তুমি সবাইকে এই বিয়ে নিয়ে এগুতে মানা কর।’

‘ উফফ এতো মাথা গরম করো না তো। এতো দিন পর আমার কাকা বিয়ে করবে তা এতো সহজেই ভাঙা যায় নাকি। ওই মেয়েকে আমি বিয়ের জন্য রাজি করিয়ে আনব‌। তুমি মাথা গরম করো না।’

‘ রাজি করিয়ে আনবি মানে। তোকে আমি রাজি করাতে বলি নাই। জাস্ট ওর মনের খবরটা বলবি।’

‘ তুমি চাইতাছো আমি গিয়ে দেখা করি একা?’

‘ হুম।’

‘ না না না তুমি চলো প্লিজ।’

‘ তাইলে বাদ দে আমি কোথাও যেতে পারব না।’

নিবিড় চলে এলো রুমে থেকে। নিজের রুমে এসে আলমারী খুলে ছোঁয়ার ব্যাগটা বের করে আনলো। ব্যাগের ভেতর কি আছে ও জানে না আনার পর থেকে এইভাবে তুলে রাখছিল। ও ভেবেছিল এই ব্যাগ দেওয়া নিয়ে ছোঁয়াকে কোনটা শর্ত দিবে। কিন্তু লিলির কথা শুনে মনে হচ্ছে না আর ছোঁয়ার দেখা পাব এখন এই ব্যাগ ও করবে কি?
ব্যাগের ভেতর নাকি ছোয়ার ফোন আছে সেখানে থেকে ওর বাসার কারো নাম্বার নিয়ে কল দেয়।
ফোনের জন্য ব্যাগটা বের করল নিবিড়‌। লিলিকে জিজ্ঞেস করেছিল ওর বাসায় কোথায় লিলি কিছু বলেনি এমনি আর কথাই বলে নি ওর সাথে। নিবিড় ও যায় নি ঠেকা কি এতো?

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here