অবাধ্য_প্রেম #পর্ব_১৮,১৯

0
1081

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_১৮,১৯
#নন্দিনী_নীলা
১৮

গাড়িতে উঠে বসতেই রাফসান কাকা আমার দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,, ‘ তোমাকে একটা প্রশ্ন করব। তার ঠিক উত্তর দেবে মিথ্যে বলবে না একদম।’

আমি কপাল কুঁচকে ভাবছি এমন করে বলছে কেন কি কথা জিজ্ঞেস করবে?
আমি মাথা দুলিয়ে বললাম, ‘ আচ্ছা বলুন কি জানতে চান!’

উনি কথাটা বের করবেন বলে বলে আমতা আমতা করতে লাগল। নিজেই কেমন যেন কথাটা বলতে গিয়ে মনে হচ্ছে বলতে পারছে না। কথা বলতে অনেক দ্বিধা বোধ করছেন কেমন যেন। আমি হা করে তাকিয়ে আছি।

উনি নিজের আমতা-আমতা ভাব কাটিয়ে অবশেষে বলে উঠলো, ‘ গতকাল দুপুরে একটা মহিলার সাথে তুমি এই বাসায় ঢুকতে ছিলে ওই মহিলার সম্বন্ধে আমাকে কিছু ইনফরমেশন দিতে হবে।’

আমি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছি। চোখে মুখে আমার চরম বিষ্ময়। আমি কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে প্রশ্ন তোক চোখে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি আমাকে কিভাবে দেখলেন আমি কোন মহিলার সাথে কথা বলছিলাম। বাসায় ঢুকছিলাম।’

রাফসান কপালের ঘাম মুছে বলল, ‘ আমি এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন দেখতে পেয়েছি তোমাদের।’

‘ তো দেখতে পেয়েছেন তো কি হয়েছে আপনি ওই আপু টার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছেন কেন? চিনেন ঐ আপুটাকে?’

আমার মুখে আপু ডাক শুনে রাফসান বলে উঠলো, ‘ আমাকে যদি চাচা বয়সী লাগে তোমার কাছে তাহলে তাহমিনা কে আপুর মতো লাগে কোন দিক দিয়ে! বয়স্ক কি শুধু আমাকে লাগে ওকে লাগে না।’

আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, ‘ এ্যা কি বলেন কাকা? আপনি তাহমিনা আপু কি চিনলেন কিভাবে?’

উনি বললেন, ‘ সে অনেক কাহিনী। তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর গুলো দাও দয়া করে ও এখানে কেন এসেছিলে তুমি কিভাবে চেনো ওকে।’

‘আপনি কিভাবে তাহমিনা আপুকে চিনেন সেই কাহিনী আগে বলেন। তারপর না হয় আমি আপনাকে সব ভাবে হেল্প করার চেষ্টা করব এবং বলব।’

‘টাইম লাগবে রাত হয়ে যাচ্ছে তো।’

‘আচ্ছা তাহলে না হয় আমরা একদিন মিট করি তখন না হয় দুজনে দুজনের কথাই বলব নি। এখন আমাকে আমার বান্ধবীর বাসায় পৌছে দিন রাত হলো আবার ওদের বাসায় ঢুকতে পারব না।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। তাই হোক কিন্তু তুমি নিজের বাসা ছেড়ে ওখানে যাচ্ছ কেন?’

‘আর বইলেন না কাকা আপনার সাথে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে এটা ঠিক করছে না বলেন। আপনি আমাকে পছন্দ করতেন না আমি জানি। আপনিও বেঁচে গেছেন আমিও বেঁচে গেছি দু’জনের জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমার মামী কে সেটা কে বোঝাবে সে তো আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য পাগলপ্রায় আপনার সাথে বিয়েটা ভাঙার পর আরেক শয়তানের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। এজন্য আমি পালিয়ে এসেছি আর এখন সে আমার পেছনে গোয়েন্দার মতো ঘুরছে এজন্য তো তার থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’

রাফসান কাকা গাড়িতে যেতে যেতে আমাকে কিছুটা বলল তাতে আমি বুঝতে পারলাম তাহমিনা আপুর সাথে রাফসানের পরিচয় ভার্সিটি লাইফ থেকে তারা বন্ধু ছিল তারপর তাদের সম্পর্ক প্রেম পর্যন্ত গড়িয়েছিল। তারপর আর জানা হয়নি আমি চলে এসেছি। লিলি আমাকে দেখে তো খুশিতে আত্মহারা অনেক দিন ও এসে থাকতে বলে ওদের বাসায় কিন্তু আমি কখন এসে থাকিনি। আজ অপ্রত্যাশিতভাবে আমাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে। কিন্তু ওদের বাসায় আমার একটু ভালো লাগেনা ওর ভাইয়ের জন্য। ওর ভাইয়ের বেহায়াপনা দেখলে আমার গা পিত্তি জ্বলে যায় এজন্য আমি ওদের বাসায় সচরাচর আসিনা। আর ওর ভাই যে এমন করে এটা আমি লিলি কে বলতেও পারিনি কারণ তাহলে লিলি আমার কাছে অনেকটা ছোট হয়ে যাবে। নিজের ভাইয়ের এমন লুচ্চামি পানা কে সহ্য করতে পারে। তখনও আমার সামনে মুখ দেখাতে পারবে না। একথা ভেবে আমি ওর থেকে কথাটা গোপন রেখেছি। নিজের মত হারামীটাকে ইচ্ছে মতো টাইট দেই।

.
রাতে আমার ফোনে কল দিলো নিবিড়।

আমি কল রিসিভ করে বললাম, ‘ কি ব্যাপার আমাকে কল দিলেন যে?’

‘ তোমাকে কাকা কি বলেছে সত্যি করে বলতো!’

‘ আপনি জানেন কিভাবে আপনার কাকা আমাকে কিছু বলেছে।’

‘ সকালে আমাকে কল দিয়ে তোমার নাম্বার চাইছিল। বুঝলাম না কাকা কিভাবে জানল তোমার নাম্বার আমার কাছে থাকতে পারে। কাকা কোন ভাবে বোঝা যায় নি তো আমি তোমার সাথে প্ল্যান করে বিয়েটা ভাঙতে চাইছিলাম। মাই গড এটা বুঝতে পেরে গেলে আমি কাকার সামনে মুখ দেখাব কিভাবে? বাইরের একটা মেয়ের হাত ধরে ছিলাম নিজের কাকার সর্বনাশ করতে।’

আমি ককর্শ আওয়াজ করে বললাম, ‘ ফাউল একটা ছেলে ফোনটা রাখুর জীবন আমাকে ফোন দেবেন না আপনার নাম্বার এখন আমি ব্লক লিস্ট করতাছি দাঁড়ান।’

‘কাকা তোমার সাথে দেখা করেছে। আর কথা ও বলেছে আমি জানতে পেরেছি তাই কি বলেছে তোমাকে ফটাফট বলে ফেলো।’

‘আপনি জিজ্ঞেস করবেন আর আমি বলে দেবো? আজকে আপনি আমাকে অপমান করেছেন আমি কি লজ্জা টাইনা পেয়েছি সবার সামনে সবগুলো মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাঁসছিল। আর এখন আসছেন আমার কথা শুনতে জীবনে বলবো না।’

নিবিড় বলল, ‘ও হ্যালো শোন আমি বলেছিলাম না তোমার সাথে আমি কথা বলবো না কখনো। কিন্তু আজকে তোমার ভাবনাটা ঠিকই ছিল আমি এই বিষয়ে কথা বলার জন্যই তোমার দিকে যাচ্ছিলাম কিন্তু আমি তোমার শয়তানি বুদ্ধি তা তো বুঝে ফেলেছি হয়তো ভুলে গেছো তোমার শয়তানি বুদ্ধি আগে থেকে টের পেয়ে যায় আমি। যাইহোক কাকা তোমাকে কি ইম্পরট্যান্ট কথা বলার জন্য এত হাইফাই হয়েছে আমাকে সবটা জানাবে কালকে এখন আমি কথা বলতে পারছি না আর যদি না বলো। তাহলে তোমার একটা প্রিয় জিনিস আমার কাছে রয়ে গেছে সেটা জীবনে পাবে না। ‘

‘ এই যে শুননে‌ আর ব্ল্যাকমেইল করতে পারবেন না আপনি কারণ আপনি হয়তো ভুলে গেছেন ব্যাগটা অলরেডি আমাকে দিয়ে দিয়েছেন তাই আপনার আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার মত আর কিছুই নাই।’ দাঁতে দাঁত চেপে বললাম।

নিবিড় শয়তানি গলায় বলল, ‘ তাই সব দিয়ে দিয়েছি আচ্ছা তুমি তোমার ব্যাগটা একটু খুলে দেখো তো। সব ঠিকঠাক আছে নাকি।’

‘এটা কিন্তু চিটিং এরকম কথাটা ছিল না আপনি এটা করতে পারেন না।’

‘আমি এটা করে ফেলেছি এবার রাখি।’

ঠাস করে বদের হাড্ডিটা ফোন কেটে দিল আমি রুমে এসে সত্যি সত্যি ব্যাগটা চেক করে দেখলাম আমার সেই ছোটবেলা রকেট ওয়ালা চেইনটা খাটাশ রেখে দিছে। আমি সাথে সাথে কল দিলাম রিং হল কিন্তু কল রিসিভ হলো না দুই বার কল দিলাম ঠিক তৃতীয় বার ফোনটা অফ পেলাম। এখন মন চাচ্ছে এই ফোনটা নিবিড়ের মাথায় মারতে।

লিলি এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, এই কি হয়েছে তোর এমন পাগলের মত লাফালাফি করছিস কেন? আর কি বিড়বিড় করছিস একাই পাগলের মত।’

আমি রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, ‘ ওই নিবিড় কি করেছে জানিস? ‘

লিলি না জানার মত করে বলল ,’ না তো কি করেছে?’

‘ও আবার আমার সাথে চিটারি করছে। এত নিমো হারামি কেন রে ও আমার কি যে মন চাচ্ছে। তোকে বোঝাতে পারব না কিছু। কিন্তু ওকে যদি সামনে পেতাম ঠিক ওর মাথাটা আমি ফাটিয়ে দিতাম।’

‘বইন থাম এত চিৎকার করিস না আমার মায় আমারে মাইরালাইবো এমন করলে।’

আমি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বিছানায় বসে বললাম , ‘ একটু পানি দে বেশি রাগ করছি তো আমার গলা শুকিয়ে গেছে।’

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here