#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_১৯,২০
#নন্দিনী_নীলা
১৯
পরদিন আমি বাসায় ফিরে গেলাম। বাসায় ঢোকার আধাঘন্টা পরে বাসার মালিক এসে আমাকে যা নয় তাই বলে কথা শোনায়। আমি মাথা নিচু করে থাকি। আমার খুব খারাপ লাগলে। সবকিছু হয়েছে মামির জন্য মামি বারবার এসে হাঙ্গামা চিল্লাচিল্লি না করলে এসব হতো না। আমাকে খুঁজে না পেয়ে নাকি তাদের সাথে ঝামেলা করেছে এজন্য। তাদের কথা শুনিয়েছে। তিনি বলেছে আমাকে বাসা ছেড়ে দিতে আমি একদম ভেঙ্গে পড়লাম এই সময় আমি বাসা কোথায় পাবো। আর এখানে থেকে চলে গেলেও আমার ক্ষতি হবে। এই বাসার উপর তলার নিচতলা মিলিয়ে আমি চারজন স্টুডেন্ট পড়াই। এসএসসি আর ইন্টারের ছাত্রী। সেই টাকা দিয়ে আমার বাসা ভাড়া ও খাওয়া-দাওয়া চলে যায় এখন এখান থেকে চলে গেলে। আমার থেকে কাজটা হাতছাড়া হয়ে যাবে। আমি খুব নিরুপায় হয়ে উনাকে অনুরোধ করতে লাগি। আমাকে যেন বাসা থেকে তাড়িয়ে না দেয়।
কিন্তু এই মহিলাটা খুবই কঠোর। এক কথার মানুষ কি গম্ভীরভাবে আছেন তার এক কথা তিনি আমাকে রাখবে না তিনি তার শেষ কথা জানিয়ে গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
এই মাসের আর পাঁচটা দিন আছে উনি আমাকে পাঁচটা দিন থাকতে বলেছে মাস শেষ হলে উনি আমাকে চলে যেতে বলেছিলেন। উনি নাকি নতুন ভাড়াটাও ঠিক করে ফেলেছে।
দরজা লাগাতে পারলাম না ওইভাবে আমি থ মেরে বসে আছি। মাথায় এত চিন্তা এখন মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কি করবো না করবো ভেবে পাচ্ছিনা। পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। তখনই আমার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ভেতরে আসলো তাহমিনা আপু।
আপুর হাতে একটা বাটি উনি বাটি নিয়ে আসতে আসতে আমাকে বলল, ‘দরজা খোলা রেখে মুখ বেজার করে বসে আছো কেন? কিছু কি হয়েছে? দেখলাম মালিক গেল তোমার বাসা থেকে কি হয়েছে?’
আমি মলিন মুখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আমাকে বাসা খালি করে দিতে বলেছে।’
উনি বললেন, ‘ হোয়াট? কেন কারণ কি?’
‘ অনেক কারণ আছে আপু কিন্তু আমি এখন কোথায় যাবো কি করবো কিছু বুঝতে পারছিনা।’
তাহমিনা আমার দিকে এগিয়ে এসে বাটিটা দেখিয়ে বলল, ‘তোমার জন্য খিচুড়ি আনছিলাম। কিছু খেয়েছো?’
‘খাবার আর কখন মালিকের কথা শুনে তো খাওয়া-দাওয়া চলে গেছে।’
‘ কাল রাতে তোমার রুমে আমি আসছিলাম। তোমার মামীকে দেখলাম তিনি খুব রেগে ছিল তোমাকে নিয়ে অনেক কথা বলছিলেন আর বাজে বাজে। কাল রাতে কোথায় ছিলে?’
আমি বললাম, ‘এক্সাম দিয়ে এসে দেখেছি মামী এসেছে আমাকে খোঁজতে। তাই আমি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় চলে গিয়েছিলাম সেখানে রাতে থেকেছি।
‘ও আচ্ছা। কিন্তু এটা নিয়ে তোমার মামী অনেক খারাপ কথা বলেছি সবাইকে।’
আমি বললাম,’ সে আমার মামি আমি জানি তিনি কি কি করতে পারে তার মত খারাপ মহিলা আমি দুটো দেখি নি।
তাহমিনা আপু মন খারাপ করে বলল, ‘এক মাস হলো এখানে এসে শিফট হয়েছি। এখানে আশার আমার কোন ইচ্ছে ছিল না জানো। আমি আগে যেখানে ছিলাম সেখানে সবার সাথে আমার খুব ভালো ব্রণ্ডিং ছিল। এখানে কারো সাথে তেমন ভাবে সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারেনি। সবাই কেমন যেন একটা মিশতে চায় না। তোমার সাথে আমার একটা ভালো ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক হয়েছে। তোমার কাছে আসি এখন তুমি যদি না থাকো আমি এখানে কি করে থাকবো সেটাই ভাবছি। আমি না হয় একবার ওনার সাথে কথা বলে দেখি।’
আমি সাথে সাথে না করে দিয়ে বললাম,’ আমার জন্য আপনাকে কথা শুনতে হবে। না থাক আপনি গেলে তিনি রাজি হবে না অযথা উনার কঠিন কথাগুলি শুনবেন।’
‘ তুমি তাহলে চলে যাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ।’
‘ হ্যাঁ কালকে যাব বাসা দেখতে। এই পরীক্ষা মাঝে আবার বাসা চেঞ্জ উফফ। কিন্তু বেশি দূরে যাব না কাছাকাছি বাসা নেয়ার চেষ্টা করব আর এখানে না থাকলেও তোমার সাথে আমি যোগাযোগ তো রাখবোই।’
আপু বাটিটা আমাকে দিয়ে খাওয়ার কথা বলে সান্ত্বনা দিয়ে চলে গেল। আমি অনেকবার ভাবছিলাম রাফসান কাকার কথা একবার জিজ্ঞেস করবো কিন্তু সাহসে কুলাতে পারিনি আর সম্পূর্ণটা না জেনে বলাটা ঠিক হবে না।
.
পরীক্ষা দিতে গিয়ে আমি শুধু লুকিয়ে চুরিয়ে ঘুরছি নিবিড়ের সামনে কিছুতেই পরা যাবে না পড়লেও আমাকে খপ করে ধরে ফেলবে। কিন্তু কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয় আর আজকে একদম পরীক্ষা হল থেকে বের হতে না হতেই শয়তান হাজির। একদম সবার সামনে আমার কাছে এসে বললো,, ‘ চলো তোমার সাথে আমার ইমপর্টেন্ট কথা আছে।’
আমি লিলিকে দুঃখের কথা বলছিলাম বাসা নেব কোথায়। আমাকে হেল্প কর শেষ করতে পারলাম না কথা গুলো তার আগেই শয়তান হাজির হয়ে গেছে।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাধ্য হয়েই আমাকে নিবিড়ের সাথে কফি শপে ঢুকতে হলো। নিবিড় শয়তানি মার্কা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,, ‘এবার বলোতো কাকা তোমাকে কি বলেছে?’
‘আমার পেছনে না ঘুরে এটা তো আপনি আপনার কাকা কি সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারতেন!’
‘কাকা বললে তোমার মত ঝাল লঙ্কার এর পেছনে ঘুরে কে? ‘
আমি নাক পাটা ফুলিয়ে বললাম, ‘ কি বললেন আপনি?’
‘কাকা কি তোমাকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে গিয়েছিল? এত বড় অপমান হয়ে রাগ করে বিয়ে ভেঙে এখন আবার সেটা কি জোড়া লাগাতে চাইছে?’
আমি কটমট চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘ ফালতু কথা বলবেন না।’
নিবিড় বলল, ” আচ্ছা বললাম না সত্যিই তা তুমি বলো।’
হঠাৎ আমার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো। নিবিড় শুধু আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে নাকি আমি কি পারিনা? অবশ্যই পারি। এইতো মোক্ষম অস্ত্র পেয়ে গেছি। ও যেমন উতলা হয়ে আছে কথাটা শোনার জন্য তারমানে নিবিরও সন্দেহ করছে রাফসান কাকা কোন মেয়ের কথাই বলেছে। আর ওরা সেই মেয়েটা কে জানতে চাইছে তার মানে গভীর লম্বা কাহিনী আছে এখানে। আমি নিশ্চিত ওই রাফসান কাকার পুরনো প্রেমিকা হচ্ছে তাহমিনা আপু দুজনেই বিয়ে করেনি। দুজন নিশ্চয়ই প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে দেবদাস হয়ে আছে।
দাঁড়াও চান্দু তোমাকে যদি এবার আমি নাকানিচোবানি না খাইয়েছি তো আমার নাম ছোঁয়া না।
আমি চুপ করে শয়তানি প্ল্যানটা মাথায় ভালো করে মাথায় এঁকে নিলাম। এদিকে নিবিড় আমাকে জিজ্ঞেস করতে করতে হয়রান।
এবার আমার মাথায় থাপ্পর মেরে বলল, ‘ হোয়াটস ইউর প্রবলেম কথা বলছো না কেন?’
আমি রাগী গলায় বললাম, ‘ আপনি আমাকে আবার টাচ করলে?’
‘ বেঁচে আছে কিনা দেখার জন্য থাপ্পড় মারলাম। তুমি যে আবার কোন ছক কসছো সেটা আমি তোমার ভাবনা দেখে বুঝতে পারছি।’
‘আচ্ছা বুঝতে পেরেছেন গুড, ভেরি গুড। আপনি আমাকে যত ব্ল্যাকমেইল খুশি করুন আমি আপনাকে বলব না কিছুই।’
‘ হোয়াট? তুমি কিছু বলবে না।’
‘ না তো বললাম।’
‘এমনটাই কিন্তু কথা ছিলনা তুমি কি তোমার সেই প্রিয় চেইন আর আমি তোমাকে সেদিন রাতে হেল্প করেছি মনে নাই। তার প্রতিদান হিসেবে কথা ছিল তুমি আমার সব কথা শুনবে। এখনই তো পাল্টি খাচ্ছ। এমন করলে কিন্তু আমি তোমাকে ধরে নিয়ে তোমার মামীর কাছে দিয়ে আসব।’
‘এটা আপনি করবেন না আমি জানি।’
‘এমন বিশ্বাস তোমার কিভাবে আসলো আমি কিন্তু তোমার চির শত্রু তুমি আমাকে কিভাবে বিশ্বাস করছো?’
‘ আপনি এটা করবেন না আমি খুব ভালো করে জানি। করলে অন্তত সেদিন আমাকে বাঁচাতেন না। সেদিনই পারতেন আমাকে ধরিয়ে দিতে। হেল্প না করে। সেদিনও আমি আপনার শত্রু ছিলাম। তো হেল্প কেন করলেন?’
‘এত যুক্তি আমি জানিনা তুমি আমাকে বলো কাকা কোন মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছে।’
‘আচ্ছা সব আপনাকে বলব আপনার আমাকে একটা হেল্প করতে হবে।’
নিবিড় গাছাড়া ভাব নিয়ে বলল, ‘ অসম্ভব। আমি কোন হেল্প করতে পারবো না চুপচাপ মেয়েটা কে কে আমাকে বলো।’
‘আমাকে পাঁচ দিনের মধ্যে একটা কম দামি ছোট্ট বাসা ঠিক করে দিবেন। ওখানে রাতে ঘুমানোর গেলেই হবে। খুব কম দামে আমার কাছে বেশি টাকা নাই। বাসার ব্যবস্থা করে দিবেন তার পরের দিনই আমি আপনাকে সেই মেয়ের সাথে মিট করিয়ে দেব।’
নিবিড় উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘তারমানে সত্যি কোন মেয়ে কথা জিজ্ঞেস করছিল। আচ্ছা তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না আমি নিজেই খুঁজতে পারি। মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছে এটা বলে আমার বড় উপকার করে দিলা।’
মুখে হাত দিয়ে বড় বড় চোখ করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
#চলবে……
#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_২০
#নন্দিনী_নীলা
কালকে মাসের শেষ দিন তো কালকে আমাকে সবকিছু নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে হবে সবকিছু বলতে এখানে আমার তেমন কিছুই নাই। টুকটাক যা আছে সেগুলোই নিয়ে যেতে হবে কিন্তু যাব কোথায়? এদিকে রাফসান কাকা আমাকে একটু আগে ফোন দিয়ে বলেছে আজকে যেন আমি তাহমিনা আপুর সাথে যেভাবেই হোক তার সাথে মিট করিয়ে দিতে। একথা বললে কি আমার সাথে যাবে। আর কাকা আমাকে এসব গোপন রাখতে বলেছে। আমি তাকে কি বলে বাসা থেকে বের হব সেটা ভাবছি। কাকার নাম্বার থেকে আবার কল আসলো।
আমি বিরক্তকর গলায় বললাম রিসিভ করে, ‘আবার কেন ফোন করেছেন?’
কাকা বলল, ‘ প্লিজ ছোঁয়া যেভাবেই হোক ওকে নিয়ে একটু আসো আমার ওর সাথে কিছু ইম্পরট্যান্ট কথা আছে। আমাদের মিট করাটাই জরুরী। আর ওকে আমার কথা বললেও কখন আসবে না। তুমি আমার কথা ভুলেও বলবানা। কিছু একটা বলে ওকে নিয়ে আসো।’
‘ ধ্যাত আমি মরি নিজের জ্বালায়। আপনি আসছেন আরেক ঝামেলা নিয়ে।’
আমার বিরক্ত অসহ্যকর কন্ঠ শুনে রাফসান থেমে গেল। জিজ্ঞেস করল, ‘ কি হয়েছে?’
আমি বললাম, ‘ জেনে কি করবেন আপনি কি আমাকে সাহায্য করতে পারবেন। পারবেন না। পারলেও করবেন না। জানি আপনারা সবাই একইরকম। আপনাকে আমি আমার সমস্যার কথা বলে আর..
আমার কথা শেষ করতে দিল না রাফসান কাকা বলে উঠল, ‘ বলো হেল্প তো করতে পারি। তুমি আমার এত বড় হেল্প করছো তোমার জন্য আমি এইটুকু করতে পারব না।’
আমি বলে উঠলাম,,, ‘ আমি আপনাকে কি হেল্প করছি আমি এখনো কিন্তু তাহমিনা আপুর সাথে আপনার সেটিং করায় দেই নাই। তাই আগেই এত পাম দেওয়া লাগবো না।’
‘ দাও নাই দিবা তো।’
‘ কইছে দিমু দিমু না আমি কাউরে হেল্প করি না।’
‘আচ্ছা না করলে তা বল তোমার কি হেল্প দরকার যদি আমি করতে পারি তো চেষ্টা করব।’
তখন আমার মনে হলো উনার থেকে আমার হেল্প নেওয়া দরকার কারণ উনার জন্য আজকে আমি বাসা ছাড়া হচ্ছি। উনার সাথে যদি আমার বিয়ে ঠিক না হতো তাহলে মামী আমার পেছনে পড়তো না। আর না বিয়েটা ভাঙতো তাহলে জসিম আসতো না। আর মামি আমাদের বাসায় এসে সবার সাথে মিস বিহেভ করতো। আর আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হতো সব দোষের মূল উনি। তাহলে ওনার থেকে আমি সাহায্য নেব না কেন?
আমি গরগর করে সবকিছু বললাম আর সব বলার সময় ভালো করে উনার দোষ দেখিয়ে দিলাম উনি যেন পরে আবার পাল্টি খেতে না পারে।
সব শোনার পর উনি বললেন,’ আচ্ছা আমি দেখছি তোমাকে বাসা খোঁজে আমি দেবো। তুমি কালকে সবকিছু নিয়ে চলে এসো। আমি তোমাকে নিয়ে যাব ।’
‘বললাম আর বাসা ঠিক হয়ে গেল?’
‘ হুম। তুমি ঠিক সময় তাহমিনা কে নিয়ে এসো প্লিজ।’
আমি বললাম, ‘ আচ্ছা তা নিয়ে আসবো নি। বাসা ঠিক করতে না পারলে কিন্তু আপনাদের আবার আমি জন্মের আলাদা করে দিব।’
বলেই আমি ফোন রেখে দিলাম।
.
তাহমিনা আপুকে অনেক ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য রাজি করালাম। আমার মেইন টপিক ছিল কালতো চলে যাবো তারপর তো চাইলেও আর প্রতিদিন যেখানে খুশি যেতে পারব না তোমার ছোট্ট বোনের সাথে একটু বেড়াতে গেলে কি হয়।
‘আমার এখন কোথাও যেতে ভালো লাগেনা রে বয়স হয়ে গেছে না। ঠিক সময় বিয়ে করলে তোর থেকে বড় বড় আমার ছেলে মেয়ে থাকতো কিন্তু ভাগ্যে তো সেসব নাই এজন্য এখনো আইবুড়ো হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।’
আমি বললাম, ‘এসব বলে লাভ নাই তোমাকে যেতেই হবে।’
‘আচ্ছা যাব নি কিন্তু আমাকে কেন সাজাবি সেটাইতো বুঝতে পারছিনা।মনে হচ্ছে বিয়ে করতে যাচ্ছি। ‘
‘তোমাকে তো সবসময় সাজগোজ ছাড়াই দেখি তাই ভাবলাম আজকে একটু তোমাকে সাজিয়ে দেখি। তোমাকে সাজলে কেমন লাগে। তুমি তো এখনো যে সুন্দরী আছো আগে কতোই না সুন্দর ছিলে । আর আমাকে দেখো বুড়ি হয়ে গেছি তুমি তো এখনও যথেষ্ট স্মার্ট।’
‘ তোমার চোখে এটা কারণ তুমি আমাকে পছন্দ করো। কিন্তু বাকি সবার চোখে তা নয়।’
‘এমনিতে কালকে কথাটা ভেবে আমার মন খারাপ তুমি এসব বলে আমার মনটা আর খারাপ করো না চলো তৈরি হবে।’
আপু আর কিছু বলতে পারলো না। রাফসান কাকার কথা মতো জায়গায় চলে এলাম আমরা। আপুকে রেখে আমি একটু সরে এলাম তখন রাফসান কাকাকে তার কাছে পাঠিয়ে দিলাম। আমি আর যাব না তারা দুজন নিজেদের মতো করে কথা বলুক।
আমি একটু দূরে এসে দাঁড়িয়ে দেখছি আপু আমাকে খুঁজছে। তখনই রাফসান কাকা তার সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি। তখনই কেউ একজন আমার এই সুন্দর মনোযোগটা নষ্ট করে দিয়ে কানের কাছে কথা বলে উঠলো,
‘ বাহ কাকি তো পুরোনো বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার জন্য শাড়ি পরে এসেছে। কাকাও একদম পাঞ্জাবি পরে এসেছে। কি রোমান্টিক তাই না!’
আমি চমকানো চোখে পেছনে তাকিয়ে দেখি নিবিড় বড় বড় চোখ করে সামনে তাকিয়ে আছে। আমি পেছনে ঘুরতে আমার দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে চোখ টিপলো।
আমি কোমরে হাত দিয়ে বললাম, ‘আপনি এখানে কি করছেন? আপনি আমাদের ফলো করছেন তাই না। এত বড় সাহস আপনার আপনি আমাদের ফলো….
আমার কথা অফ করে দিয়ে শয়তান নিবিড় আমার মুখে হাত দিয়ে বলল, ‘ স্টপ । এমন করে চিল্লাচ্ছো কেন? তোমার চেঁচামেচির জ্বালায় তো আমার কাকা কাকি প্রেম ও করতে পারবে না। চলো এখান থেকে। তাদেরকে একটু একা সময় কাটাতে দাও। বাচ্চা মেয়ে বড়দের প্রেম দেখছো লুকিয়ে লজ্জা করে না।’
বলে আমাকে সেখান থেকে টেনে নিয়ে আসলো। আমি তো রাগে আগুন হয়ে আছি।
ঝামটা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, ‘ আপনার সাহস তো কম না আপনি আমাকে এখানে টেনে নিয়ে আসলেন কোন সাহসে? আমি যা খুশি তাই করব আপনার কি? একদম আমার উপর অধিকার দেখাতে আসবেন না। আমি ওইখানে যাব এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো যা খুশি তাই করব।’
‘ আচ্ছা যাও না করেছে কে। ওখানে না গিয়ে তুমি লুকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?’
‘ আমার মন চাইছে তাই।’
‘আমাকে কি যেন বল চরিত্রহীন, নির্লজ্জ বাজে ছেলে। কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে তোমার থেকে কম। লুকিয়ে লুকিয়ে আরেকজনের রোমান্স দেখার ইচ্ছা তোমার। এর থেকে নিজে রোমান্স করে দেখো অন্যের টা দেখতে যাও লজ্জা করে না।’
আমি রাগে ফুঁসছি। মন চাচ্ছে এখানেই নিবিড় কে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি এত বড় কথা বললে আমাকে।
এই ভাবে অপমান করল।
নিবিড় শয়তানি চাহনিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ উনারা গুরুজন ওনাদের রোমাস না দেখে আসো আমরা ও রোমান্স করি। জায়গাটা খুব সুন্দর তাই না। শুনেছি কাকারা নাকি আগে এখানেই কাকিকে নিয়ে এসে প্রেম করতো। তোমার যেহেতু বয়ফ্রেন্ড নাই আমারও গার্লফ্রেন্ড নাই আসো আমরা দুজনে একদিনের জন্য গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড হয়ে যায়। জাস্ট ইনজয়।’
রাগে আমার হাত উঠে গেল আমি ঠাস করে কে চড় মারতে গেলাম কিন্তু পারলাম না নিবিড় আমার হাত খপ করে ধরে ফেলেছে। ধরে শান্ত হয়নি একদম মুচড়ে ধরেছে আমি আহ করে উঠলাম।
নিবিড় আমার দিকে এতক্ষণ তাকিয়েছিল একভাবে আর এখনই ওর চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে ও দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘ আমার দিকে হাত উঠানোর সাহস করবে না মাইন্ড ইট।’
#চলবে…..