অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেম #পর্ব–১২,১৩

0
619

#অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেম
#পর্ব–১২,১৩
#লেখিকা—ইসরাত বিনতে ইসহাক
১২

বাব্বাহ!!! কেয়া বাত হে ভাইয়া? ব‌উ হতে না হতেই এত্ত ভালোবাসা…

চুপ করতো সারাক্ষণ ফাযলামি করবিনা। আমার মনে হয় ওর একটু রেস্ট নেওয়ার দরকার আছে। সারাদিন তো এভাবেই ছিল।
-মেহের বললো,,,সরি ভাইয়া আসলেই খেয়াল ছিলনা। শুয়ে ছিলাম এতো খারাপ লাগছিলো। আমি এখনি দেখছি বলে মেহের রুমের দিকে গেলো।

রুমে গিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,,, কি ব্যাপার নতুন বউ দেখা শেষ হয়নি এখনো। যা হয়েছে হয়েছে আবার কাল দেখবেন বলে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই, মরিয়ম আপু বললো,,,, এই কি করছিস সবাই বউ দেখতেছে আর তুই ওকে নিয়ে যাচ্ছিস কেন?
মেহের আপুর দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বললো…

আপু তোর কি কোন কমনসেন্স নাই? বেচারি সেই কখন থেকে এক জায়গায় বসে আছে।আমাদের বলতে পারছেনা কিন্তু আমাদের তো বুঝা উচিত ছিল বলে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম ছেড়ে।

মেহের আপু আমাকে নিজের রুমে এনে বললো,ভাবীমনি তুৃমি এবার রেস্ট নাও এখানে কেউ আসবেনা আমি দরজা লক করে দিবো।

আমি মেহের আপুর দিকে একটু কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকাতেই মেহের আপু দুষ্টামি ভরা কন্ঠে হেসে বললেন,আমি না আপনার উনি বলেছে। দেখেছো ভাবীমনি বউয়ের জন্য কত মায়া আমার ভাইয়ার।

আমি লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকালাম।
-থাক এখন আর লজ্জা পেতে হবেনা। সব লজ্জা রাতের জন্য রেখে দাও।
আমি এবার আরও বেশি লজ্জায় পড়ে গেলাম।কি মেয়েরে!

তারপর আস্তে করে বললাম আপু, আমার নামাজ পড়া লাগবে। দুই ওয়াক্তের নামাজ কাযা হয়েছে। মেহের আপু শুনে বললেন,তাহলে শাড়ি চেন্জ করে নিলেই মনে হয় ভালো হতো দাঁড়াও আমি অন্য কাপড় নিয়ে আসছি।

আমি নামাজ শেষ করে শুয়ে আছি। মেহের আপু বাহির থেকে দরজা আটকে দিয়েছে। এখন ঘুম ও আসবেনা। বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে আম্মুর সাথে একটু কথা বললে ভালো লাগতো। কিন্তু ফোন তো আনিনি সেদিন। এতো ঝামেলার মাঝে মনেও ছিলনা।

কিছুক্ষণ পর মেহের আপু ফোন নিয়ে আসলো। ফোনটা আমার দিকে বাড়িয়ে বললো ভাবীমনি তোমার আপু ফোন করেছে কথা বলো।
আমি ফোনটা নিয়ে বাসার সবার সাথে অনেকক্ষন সময় নিয়ে কথা বললাম। মনটা একটু ফ্রেশ লাগছে।

কান থেকে ফোন নামিয়ে ফোনের দিকে তাকাতে স্কিনে ওনার ছবি ভেসে উঠলো।

মেহের আপু বললেন এ মানুষটা আজ থেকে তোমার হয়ে গেছে। এতো বেশি দেখো না নজর লেগে যাবে। বরকে দেখা শেষ হলে খেতে আসুন ভাবীমনি।

-মেহের আপু যে এতক্ষণ এখানেই ছিল আমার খেয়াল ছিলনা।আমি মেহের আপুর কথায় ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম। এই মেয়েটা ও না! উফ!এভাবে কেউ লজ্জা দেয় নাকি।

-এতো লজ্জা পেতে হবেনা। আর এমনিতে ও আজ সব লজ্জার অবসান হয়ে যাবে।
-আমি মেহের আপুকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, আপু প্লিজ আর না।
মেহের আপু হাসতে হাসতে বললেন,আচ্ছা আর বলবোনা এখন খেতে আসো।
-আপু আমি খাবোনা। একদম খেতে ইচ্ছে করছেনা

-এটা বললে হবেনা,না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। এখন তোমার সুস্থ থাকাটা বেশি জরুরী।
-আমি মনে মনে বললাম কি রে মেয়েটা? কথায় কথায় এরকম লজ্জা না দিলে কি হয়না।

-মেহের আপু বললেন, ভাবীমনি কিছু মনে করোনা। আসলে আমি একটু এরকই।
-না আপু আমি কিছু মনে করিনি। বরং অনেক ভালো লাগছে এরকম এজজন সঙ্গী পেয়ে।
-যাক বাবা বাঁচলাম!এখন চলোতো।
-আপু আমি সত্যি খাবোনা।
-আচ্ছা বুঝতে পারছি তুমি ওইদিকে যেতে চাও না। আমি বরং খাবারটা এখানে নিয়ে আসি বলে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে এসে বললো নাও খেয়ে নাও। তোমার শাশুড়ির কড়া অর্ডার পুরোটা খেতে হবে নাহলে আমার অবস্থা খারাপ হবে।

আমি কোনরকমে তিন চার লোকমা খেলাম মুখের ভিতর খাবার যাচ্ছেনা।
-ভাবীমনি এতো আস্তে খেলে হবে? রাত কিন্তু অনেক হয়েছে।
-আপু আর পারছিনা।
-আচ্ছা থাক আর খেতে হবেনা এ মুহুর্তে আর জোরাজোরি করছিনা। তুমি বসো আমি আসছি।

মেহের আপু আমাকে সুন্দর করে আবারো বউ সাজিয়ে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেলেন। আমার মনের ভিতর অজানা ভয় আর লজ্জা এসে ভর করেছে।

শরীফ কে নিয়ে ওর বন্ধুরা অনেক রকম দুষ্টুমি করতেছে।
-রাফি বললো,ভাই আজ থেকে তোরও স্বাধীনতা শেষ। বিয়ে তো করেছেন এখন বুঝবেন বিয়ের জ্বালা৷ আমি জানি বউ কি জিনিস বিয়ে করেছি তো।

-জিহাদ বললো আরে রাফি বাদ দেতো এসব। তোর জ্বালা তুই বুঝিস, শরীফের বউ কিন্তু তোর বউয়ের মত মেয়ে না একটু অন্যরকম। শরীফ ভাই আমার শুন,বিড়াল কিন্তু প্রথম রাতেই মারতে হবে বুঝলি।
– শরীফ বললো,বিড়াল মারতে হবে মানে?
সবাই একসাথে হো হো করে হেসে উঠলো
-নিলয় বললো,বন্ধু আমার বিড়াল মারা কি জিনিস বুঝেনা।

আসলে এই কথা সেই কথা কিছুনা ওরা ইচ্ছে করেই ওকে ভিতরে যেতে দিচ্ছেনা।
-শরীফ এবার অসহায়ের দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,প্লিজ তোরা একটু থামবি। আমার ঘুম আসছে। আমাকে একটু যেতে দে।
-আপনি আজ ঘুমাবেন না জেগে থাকবেন সেটাতো আমরা ভালো করে জানি।

-সময় কিন্তু আমারো আসবে মনে রাখিস তখন আমিও আটকাতে পারবো। শরীফ তালহা কে ইশারায় হাত জোড় করে বললো একটু সুযোগ করে দেনা ভাই?
-তালহা বললো ভাই তোরা কিরে আজ ওর একটা বিশেষ রাত আর তোরা বোকার মত এসব কি করছিস? যেতে দে ওকে
অনেক বলার পরে সবাই ওকে ছাড়লো।

শরীফ আস্তে করে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো। পুরো ঘরটা সাদা গোলাপ আর সাদা অর্কিড দিয়ে সাজানো হয়েছে। এ দুটো শরীফের পছন্দের ফুল। শরীফ আস্তে আস্তে বিছানার দিকে এগুচ্ছে। ওর নিজের হাত পা কাঁপছে প্রচন্ড ভাবে।এরকম হচ্ছে কেন মনে হচ্ছে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকি সামনে আর এগুতে পারছিনা। শরীফা তো আমার আগে থেকেই পরিচিত তাহলে??

আমি দরজা খুলার শব্দ পেয়ে বিছানার মাঝে আরো গুটিশুটি মেরে বসলাম। মানুষটা যতই সামনে আগাচ্ছে ততই আমার বুকের ধুকধুক শব্দটা বেড়ে চলছে। ঘোমটা আরো টেনে নিয়ে বিছানার চাদর খামছে ধরলাম একহাতে।

শরীফ ধীর পায়ে এসে আমার সামনে বসেই সালাম দিলো।
আমি মনে মনে সালামের জবাব দিলাম। এ মুহুর্তে আমার মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ আসছেনা।

-শরীফ আস্তে করে বললো,কেউ সালাম দিলে তার জবাব দিতে হয়।
-আমি এবার আস্তে করে সালাম জবাব দিয়ে নিজেও সালাম দিলাম।

-শরীফ জবাব দিয়ে বললো, কেমন আছো?
-আমি কাঁপা কন্ঠে জবাব দিলাম জী… আলহামদুলিল্লাহ।
-বিয়ের আগে তো খুব চঞ্চল ছিলে এখন, কি হলো তোমার? আমি কিছুই বললাম না, তখন আর এখন যে বিরাট ফারাক।
কিছুক্ষন দুজনে চুপ করে বসে ছিলাম।

স্ত্রীর পবিত্র চেহারাটা দেখার জন্য মন উশখুশ করছে। তাই মনে কিছুটা জড়তা নিয়ে শরীফ বললো, আমি তোমার মোহরানা পুরোটা শোধ করে দিয়েছি এখন কি তোমাকে একটু দেখতে পারি মানে তোমার ঘোমটাটা সরাতে পারি?

আমি এই কথাটা শুনে লজ্জায় আরো মুড়িয়ে গেলাম। মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছেনা।

শরীফ কিছুক্ষণ চুপ করে কোন জবাব না পেয়ে বললো,নিরবতা সম্মতির লক্ষণ মনে করে আমি ঘোমটা সরাচ্ছি আস্তে করে কাঁপা হাতে ঘোমটাটা সরিয়েই বলে উঠলো,,,,

মাশাআল্লাহ!মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদটা আমার ঘরে আজ নেমে এসেছে। আল্লাহ তোমার লাখ লাখ শুকরিয়া।

আমি দুই হাতে বিছানার চাদর খামছে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
-তোমার হাতটা ধরতে পারি।

-শরীফ জবাব না পেয়ে আমার ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোর মাঝে নিলো।

আর বললেন আচ্ছা তুমি কি আমাকে নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করেছো?
-আমি মাথা নাড়ালাম‌।

-তুমি কি কথা বলতে পারো না?
আমি মিনমিন করে বললাম আসুন আগে আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে দু রাকাত নামাজ পড়ে নিই। অজু আছে আপনার?
-শরীফ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,, হুম আছে।

নামাজ শেষ করে উনি বললেন,,, তোমাকে তো আগে থেকেই তুমি করে বলি। তাই এই দিক থেকে একটা ঝামেলা নেই। তবে তুমি আমাকে তুমি করে বলবে? আমি লজ্জা রাঙ্গা হয়ে বললাম এক্ষুনি পারবোনা। আচ্ছা পরে হলেও চলবে, এখনি তোমাকে জোর করছি না।

-এবার উনি আমার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললেন,,, প্রথমে যেটা বলছি আমার বাবা মায়ের জন্যই কিন্তু তোমাকে পাওয়া। না হয় তোমাকে পাওয়া আমার অসম্ভব ছিল, যদিও সব‌ই আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছে। কিন্তু তুমি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই আমার জীবনে আসা। তোমার আসা টা কখনোই কাঙ্ক্ষিত ছিল না।

আমার বাবা মায়ের প্রতি সবসময় এরকম ই শ্রদ্ধাশীল থাকবে। কারন তাদের জন্য‌ই তোমাকে পাওয়া। কখনো কোন কথা বা কাজের দ্বারা তাদের কষ্ট দিওনা প্লিজ। বাবা মা যে আমার পৃথিবী ।জী আমি চেষ্টা করবো তাদের সব কথা মেনে চলার জন্য। আজকে থেকে তারা আমার ও পৃথিবী।

-হুম এবার আসল কথায় আসি,শুন আজ আমাদের জীবনের বিশেষ এক রাত। আজ থেকে আমাদের জীবনের এক নব অধ্যায়ের সূচনা হলো। আমি জানি তুমি যথেষ্ট পর্দাশীল ইসলাম অনুরাগী তোমাকে ইসলাম সম্পর্কে কিছু বুঝাতে হবেনা মনে হয়।

আমাকে তোমার স্বামী নয় বন্ধু হিসাবে সবসময় আমার সাথে সব শেয়ার করবে। তোমার আমার মাঝে কোন কোন প্রতিবন্ধকতা চাইনা আমি। আমি চেষ্টা করবো তোমার মনের মত হওয়ার। তোমার সব আবদার পূরণ করার চেষ্টা করব। কখনো যদি কোন চাওয়া পূরন করতে না পারি মনে কষ্ট নিওনা, তবে ইনশা আল্লাহ আমি তোমার সব ইচ্ছে পূরণের চেষ্টা করবো।

আমি যাতে তোমার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারি সবসময় সেই চেষ্টায় করবে। যেমন আজকের মত আমার সামনে সবসময় সেজেগুজে থাকবে।

আমি কিন্তু কখনো আমার প্রতি তোমার ভালোবাসার কমতি কখনো সহ্য করবোনা বলে দিলাম। যখনি ডাকবো তখনি আমার ডাকে সাড়া দিতে হবে মনে থাকবে?

আমি মাথা নাড়ালাম। মনে মনে বললাম আল্লাহ এ কি মানুষ আমাকে দিয়েছো? প্রথম রাতেই যা শুরু করেছে। এমন ভাবে লেকচার দিচ্ছে মনে হচ্ছে শিক্ষক ছাত্রীকে জ্ঞান দিচ্ছে। জানিনা কপালে কি আছে আমার? এতো কথা কেমনে বলে?

মনে মনে কিছু বলতে হবেনা কথা আরো বাকি আছে। আমার রাগ খুব বেশি তা তো জান‌ই।কোন কারনে রেগে গেলে মাথা ঠিক থাকেনা মাঝে মাঝে তোমাকে মারতে ও পারি।

মারলে শুন তখন রাগ করে বাবার বাড়ি যাওয়া যাবেনা। আমার বাড়িতে থাকতে হবে সবসময় আমি রাগ ভাঙাবো।

উনি বাবার কথা বলতেই আমার খুব কষ্ট লাগলো, আমি যে চাইলে ও আর বাবার বাড়ি যেতে পারবো না।

উনি আবার বলতে শুরু করলেন আমাদের মাঝে রাগ,অভিমান,ভালোবাসা,ঝগড়া সব থাকতে হবে। সম্পর্কে ঝগড়া না হলে ভালোবাসা বাড়েনা। তাই ভালোবাসা বাড়াতে আমরা মাঝে মাঝে ঝগড়া করবো কেমন?

আমি মনে মনে বললাম,আল্লাহ রক্ষা করো আমাকে।
উনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,আমি চেষ্টা করবো আপনার কথা মেনে চলার ।

উনি বললেন,এইতো আদর্শ স্ত্রী বলে আমার মুখটা দুহাতে ধরে কপালে চুমু খেলো।
আর শুন আজ রাতে কোন ঘুম হবেনা শুধু ভালোবাসা বাসি হবে। আজ রাত আমাদের ভালোবাসার রাত। একে অপরকে আপন করে নেবার রাত। ভালোবাসার রঙে একে অপরকে আজ রাঙাবো।

আমি নিজেকে আরো গুটিয়ে নিলাম।
কি লজ্জা! কি লজ্জা!
মানুষ এভাবে কথা বলে নাকি?
নির্লজ্জ একটা! লোকটার মুখের কোন ব্যালেন্স নেই।তারউপর আবার এভাবে স্পর্শ করলো।

উনার ঠোঁটের স্পর্শে আমার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।বুকের ভিতর ধড়াম ধড়াম করে আওয়াজ হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন বুকের ভিতর খুব জোরে হাতুড়ি পিটাচ্ছে।
এই প্রথম কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করলো। অবশ্য ওনি আর একবার আমাকে স্পর্শ করেছেন তবে এতো ডিপলি না।

এই স্পর্শ ভালোবাসার স্পর্শ যার মধ্যে কোন নোংরামির ছোঁয়া নাই।
উনি আবারো আমার দুচোখের পাতার উপর চুমু খেলো আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলাম।

এই মুহুর্তে কেমন কেমন জানি করছে মনটা। কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে এটাই কি ভালোবাসা?

উনি বললেন এখন আমি তো আমার অধিকারটা আদায় করে নিতে পারি তাইনা। আমার ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত তো আমার পিচ্চি ব‌উটা?

অবশেষে আমি উনার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারলাম না। বিবাহিত দুজন মানব মানবী একাকী একান্তে একসাথে হলে সাড়া না দিয়ে থাকা যায় না।

চুম্বকের মত একে অপরকে টানে,এ দুনিয়াতে যদি বেহেস্তের একটুখানি সুখ থেকে থাকে সেটা হলো বিবাহিত দুজন মানব মানবীর মিলনের সুখ।

শরীফ এক হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে নিজের ঠোট দ্বারা শরীফার ঠোঁট জোড়া দখল করলো।একে একে শরীফার ঘাড়ে পিঠে শরীফ নিজের স্পর্শ ছোঁয়াতে লাগলো, নিজের অস্তিত্বের সাথে শরীফা কে মিশিয়ে নিলো। শুরু হলো দুজন দাম্পত্যির জীবনের এক নতুন অধ্যায়।

#চলবে……

#অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেম
#পর্ব–১৩
#লেখিকা—ইসরাত বিনতে ইসহাক

পরদিন সকালে শরীফ নামাজ পড়তে মসজিদে চলে। যাওয়ার পর আমি নামাজ পড়ে শুয়ে পরি,প্রচন্ড মাথা ধরে আছে৷
আর কাল রাতে উনি একটু ও ঘুমাতে দেয়নি।

শরীফ নামাজ পড়ে বাসায় আসতেই দেখলো সবাই এখনো ঘুমে পুরো বাড়ি নিরব হয়ে আছে।
ও নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

আমি মাত্র বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়েছি উনার পায়ের শব্দ শুনতেই তড়িগড়ি করে উঠে বসলাম।

আমি শাড়ী পড়তে জানিনা কখনো সেভাবে পরা হয়নি। এখন কোনভাবে পেঁচিয়ে রেখেছি তাই খাট থেকে নামতে ও পারছিনা।
খাট থেকে নামলেই খুলে পড়ে যাবে এমন অবস্থা। তাই পায়ের উপরে কাঁথা দিয়ে বসে পড়লাম।
শরীফ আমাকে উঠতে দেখে বললেন, নামাজ পড়োনি এখনো?আমি নিচের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলাম, জী পড়েছি। আসলে কাল রাতে উনি যা করেছে না এখন লজ্জায় উনার দিকে তাকাতেও পারছিনা, পুরো ঠোঁট ফুলে আছে।

গলার দিকে দাগ হয়ে গেছে। এখন প্রচন্ড ব্যথাও করছে জায়গাগুলোতে।
-কি হলো নিচের তাকিয়ে কথা বলছো কেন?
-না এমনি।
-আমার দিকে তাকাতে লজ্জা করছে নাকি? কাল রাতে তো আপনার সব লজ্জা চলে যাওয়ার কথা।

আমি হাত দুটো কচলাতে কচলাতে মনে মনে বলি বাঁদর একটা!! দেখছে লজ্জায় তাকাতে পারছিনা তার উপর মুখের সামনে এগুলো বলছে একটু লজ্জাও লাগছেনা। মুখে কোন বেড়া নাই। পুরুষ মানুষ এতো নির্লজ্জ কেমনে হয়।

-বাব্বাহ লজ্জায় দেখছি লাল,নীল,বেগুনি হয়ে রংধনুর সাত রং ধারন করেছে মুখটা বলে আমার পাশে এসে জড়িয়ে ধরে কাঁথার নিচে নিজের পা টা ঢুকিয়ে আমার পায়ের সাথে পা দিয়েখোঁচা দিচ্ছে।

আমি সরার চেষ্টা করি, না পেরে বলে উঠি উফ!কি শুরু করেছেন?উনি মুখে দুষ্টু হাসি নিয়ে বললেন,কি শুরু করছি?
-পায়ে শুড়শুড়ি লাগছে তো! আর এভাবে চেপে ধরে থাকলে তো দম বন্ধ হয়ে যাবে।
-ম্যাডাম!আমি অতোটা ও জোরে ধরিনি। আপনি নড়াচড়া না করলেই তো হয়।
-প্লিজ ছাড়ুন না।
-আমার দিকে তাকাওনা একটু দেখি আমার পিচ্চি ব‌উটাকে।
-সারারাত দেখে মন ভরেনি?
-রাতে তোমাকে দেখার সুযোগ পেয়েছি নাকি রাতে তো অন্যকিছু…..

-আপনি কি বলেন তো? নির্লজ্জ একটা!
-নির্লজ্জতা দেখানোর মাধ্যম পেয়েছি। এতোদিন কেউ ছিলনা আজ যখন তাকে পেয়ে গেছি তখন একটুখানি নির্লজ্জ হলে ক্ষতি কি?
দেখিনা একটু লজ্জাবতীর লজ্জা মাখা মুখটা বলে আমার মুখটা হাত দিয়ে তুলে উনি নিজের দিকে ঘুরালেন। মাশাআল্লাহ!সত্যিই ধন্য আমি তোমাকে পেয়ে।

আমার ঠোঁটের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো অনেকটা ফুলে আছে। এজন্য তাকাচ্ছো না তাইনা।হুম।ইশ!তখন আসলে খেয়াল করিনি। কেটে গেছে মনে হচ্ছে?
-হুম
-ঔষধ আছে লাগিয়ে নিও। আর আরেকটু আদর করলে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে বলেই হেসে দিলেন উনি ফাযলামি করবেন না তো । আমি এভাবে বাহিরে কি করে যাবো?

-বাহিরে কে যেতে দিচ্ছে? সারাদিন আমার সামনে বসে থাকবে।কি বলছেন এসব?
-জী ঠিক বলছি। আচ্ছা এগুলো বাদ দাও তো। -এখন একটু ঘুমিয়ে নাও না হলে অসুস্থ হয়ে যাবে। পরে আমারি বিপদ।
-না এখন ঘুমাবোনা। ঘুমালে, তারাতাড়ি উঠতে পারবো না।
-কেন?
ঘুম থেকে উঠতে লেইট হলে কেউ যদি কিছু বলে?কেউ কিছু বলবেনা সবাই বুঝবে আমাদের সবে মাত্র কাল বিয়ে হয়েছে। সবাই তো আপনার মতো না।আমার মতো না মানে?
-কিছুনা। একটু ঘুমাও ভালো লাগবে।

কিছুক্ষণ পর দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো। আমি উঠতে নিলেই উনি থামিয়ে দিলেন। খুলতে হবেনা ঘুমাও।ছাড়েন না!আপনার না হয় লাজ লজ্জা নেই।কি আমার লজ্জা নেই?
-প্লিজ?আচ্ছা গিয়ে দেখুন আপনার ননদিনী হবে মনে হয়।আপনি গিয়ে দরজাটা খুলুন না।
-কেন?আমি নামতে পারছিনা শাড়িটা কোনমতে পেঁছিয়ে রেখেছি নামলেই খুলে যাবে।
-তাই আপনি এতক্ষণ খাটে বসে ছিলেন।

আমাকে বললেই তো হতো পরিয়ে দিতাম।
-কি!আপনি শাড়ি পরাতে জানেন?এতো আশ্চর্য্য হওয়ার কি আছে। না জানলেও চেষ্টা করতাম। আপনি মেয়ে হয়ে না পারলে আমাকে তো শিখে নিতে হবে। কারন আমি আমার পিচ্চি বউটাকে মাঝে মাঝে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখতে চাইবো তখন তো নিজেকেই পরিয়ে দিতে হবে।
-প্লিজ দরজাটা খুলুন না।

উনি গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো। মেহের আপু দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।
-উনি বললেন কি চাই?
-ভাইয়া ঘুমাচ্ছিস নাকি এখনো?
-দেখতেই পাচ্ছিস জিজ্ঞেস করছিস কেন?
-ভাবীমনি ও কি ঘুমে?
-হুম কেন?

মা বললো যে ভাবীমনি কে ডেকে নিতে পাশের বাসার আন্টিরা আসছে ভাবীমনি কে দেখতে তাই।
কথাটা শুনে আমি ভেতর থেকে বললাম, আপু একটু এদিকে আসবেন ?
মেহের আপু তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে রুমের ভিতরে আসলো।

উনি আমাকে ইশারায় চোখ রাঙিয়ে বিছানার অপর পাশে গিয়ে আবারো শুয়ে পড়লেন।

মেহের আপু বললেন কোন সমস্যা নাকি ভাবীমনি? আমি মাথা নেড়ে বললাম, হুম বিরাট সমস্যা।

-কি? আমি অসহায়ভাবে বললাম, আপু আসলে শাড়ি পরতে পারিনা তো, একটু পরিয়ে দিবেন। কোনরকমে পেঁচিয়ে রেখেছি। এজন্য এতক্ষন রুম থেকে বের হতে পারছিলাম না।

-ও আচ্ছা এই সমস্যা। আচ্ছা আসো আমি পরিয়ে দিচ্ছি। আমি শাড়ি হাত দিয়ে ধরে খাট থেকে নামলাম। মেহের আপু শাড়ি হাতে ধরে খুলতে নিলেই আমি ইশারায় উনাকে দেখালাম।

আপু উনাকে একটু বেরিয়ে যেতে বলেন না?
মেহের আপু হাসি দিয়ে বললেন,, ভাইয়া তুই একটু বের হ তো।

উনি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন,, কেন?
-তোর বউ তুই থাকলে শাড়ি চেন্জ করতে পারবেনা তাই। লজ্জা পাচ্ছে তো তাই।
উনি বিরক্তি ভরা কন্ঠে, আমি কি তাকিয়ে আছি নাকি ওইদিকে।

বিরক্ত করিসনা ঘুমাতে দে বলে আবারো শুয়ে পড়লেন অন্য দিকে ঘুরে। উনি মাথা তুলে আবারো বললেন, মেহের, শাড়ি পরাটা একটু ভালো করে শিখিয়ে দিসতো তোর ভাবীমনি কে।

আমি লজ্জায় নাথা নামিয়ে নিলাম। মনে মনে,, এভাবে না বললে কি হতোনা উনার। এখন হয়তো পারিনা একসময় তো অবশ্যই পারবো। মেহের আপু শব্দ করে হেসে উঠলেন।

এই মেয়েটা ও না কথায় কথায় হেসে উঠে। সবসময় মুখে হাসি লেগে থাকে। অবশ্য হাসলে মেহের আপু কে অসম্ভব সুন্দর লাগে।

আমাকে শাড়ি পরিয়ে মেহের আপু বাহিরে নিয়ে আসলেন। আমাকে দেখে আন্টি এগিয়ে এলো। আমি শান্ত কন্ঠে সালাম দিলাম।
আন্টি সালামের জবাব দিয়ে আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলেন।

তারপর,আন্টি আমার হাত ধরে ড্রয়িংরুমে দিকে নিয়ে গেলো ওখানে কিছু মহিলা বসে ছিল। আন্টি বললেন শরীফা এনারা তোর আন্টি হবে।
আমি সবাইকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিলাম। এক মহিলা সালামের জবাব দিয়ে বললেন বউমা আমার কাছে এসে বসো।
-কেমন আছো মা?
-আলহামদুলিল্লাহ আন্টি। আপনারা ভালো আছেন?
হুম ভালো।

আমি বসতেই আমাকে দেখে ওই আন্টিটা, আন্টাকে মানে আমার শ্বাশুড়ি মা কে বললেন,, মাশাআল্লাহ!ভাবি বউ তো পেয়েছেন লাখে একটা। কি মিষ্টি মেয়ে। দেখেই মায়ায় পড়ে গেছি।

একজন বললো দেখেছেন কত শালীনতা বউটার মাঝে। আজকাল বউদের মাথায় কাপড় দেয়া তো দূরের কথা ভদ্রতার ছিটেফোটা ও নেই তাদের মাঝে।

সাবিনা বেগম অনেকটা আনন্দের সাথে বলে উঠলেন ভাবি দোয়া করবেন মেয়েটার জন্য।
অনেকক্ষণ আলাপের পর সবাই চলে যেতেই, আমার শাশুড়ি আমাকে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন, আমার শশুর রুমেই ছিলেন। আমি আংকেল কে গিয়ে সালাম দিলাম।

আংকেল সালামের জবাব দিয়ে বললেন,, কিরে মা কেমন আছিস?
-আলহামদুলিল্লাহ আংকেল। আপনি কেমন আছেন?

শরীফা তুমি এখনো আমাকে আংকেল বলে ডাকবে?বাবা বলে ডাকবে না? আমি আংকেলের কথা শুনে বললাম বাবা কেমন আছেন?
আজ থেকে আমরা তোমার বাবা মা, তাইএকদম মন খারাপ করবে না, এটা নিজের বাড়ি মনে করে চলবে কেমন?
-জী বাবা।
-বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন মেয়েটাকে সকাল থেকে কিছু খেতে দিয়েছো নাকি শুধুই কথা বলে যাচ্ছো?
-না এখনো কিছু দেইনি।
-কি বলছো? কত বেলা হলো তোমার খবর আছে? ওকে নাস্তা দাও। তারপর কাজ আছে বলে বাবা বেরিয়ে গেলেন।

মা বললো শরীফা আজ রাতে ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান আছে তোদের বিয়ে উপলক্ষে। বড় ছেলের বিয়ে অথচ কাউকে সেভাবে দাওয়াত করা হয়নি তাই।
মা মেহের আপু কে উদ্দেশ্য করে বললো, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? মেয়েটা কাল থেকে কিছু খায়নি। এখনো না খাইয়ে রাখবি নাকি?
বাব্বাহ!মা বউয়ের জন্য এতো আদর আমরা খেয়েছি কিনা জিজ্ঞেস ও করোনি। এইনা হলে মা।
তুই থামতো তোদের আর কি খাওয়াবো অনেক করেছি। যা মেয়েটাকে নাস্তা দে। মেহের আপু আমাকে নাস্তা দিলে আমি বললাম,, আপু উনি উঠলে পরে খাবো এখন থাক।

-আপনার উনি এখন ডাকলে ও দুপুরের আগে উঠবেনা। উনার অপেক্ষায় থাকলে দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হবে।
আমি একটু নরম কন্ঠে বললাম তখন না হয় খাবো।
-ভাবীমনি খেয়ে নাও। এখন তোমার একটু ঘুমানো দরকার। মায়ের সাথে কথা বলার সময় লক্ষ্য করেছি ঘুমে তোমার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসছিলো। কাল রাতে যে একটু ও ঘুমাওনি দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আর তোমার বরতো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।

আমি অসহায়ের দৃষ্টিতে মেহের আপুর দিকে তাকালাম।

ভাবীমনি তোমার ঠোঁট অনেক ফুলে আছে ৷ কানের পাশে লাল হয়ে আছে।
আমি এবার সত্যি অনেক লজ্জা পেলাম,এই ভয়টা এতক্ষণ পাচ্ছিলাম।
-আমি দেখেছি সমস্যা নেই আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু এ অবস্থায় অন্য কারো সামনে পড়লে আরো বেশি লজ্জা পেতে হবে। তাই ভালোর জন্য বলছি খেয়ে গিয়ে একটু ঘুমাও।
আমি কোন রকমে একটুখানি খেয়ে ধীর পায়ে রুমের দিকে আগালাম।

দরজা আটকে খাটের একপাশে বসে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেললাম। এতক্ষণ অনেক কষ্টে নিঃশ্বাসটা আটকে রেখেছি।
এভাবে মেহের আপুর কাছে লজ্জা পেতে হবে ভাবনায় ছিলনা।
আর উনি কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে। শান্তি আছে উনাদেরই।

আমি খাটে পিঠটা লাগাতেই উনি আমাকে হেঁচকা টানে দুই হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here