শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,১৪,১৫

0
367

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,১৪,১৫
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
১৪

আজকে আকাশে হাজারো তারার মেলা। ভারী সুন্দর লাগছে দেখতে। এতো সুন্দর্যোর মাঝেও রামিসা খুশি নয়। বিষন্ন মনে তাকিয়ে আছে ঐ দূর আকাশের দিকে।

তায়েস কে চুপ করে থাকতে দেখে, নজর সরিয়ে তার দিকে তাকালো।সে মনের অসুখে আক্রান্ত হয়ে সিগা’রেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে‌।

রামিসা এবারো টান দিয়ে সিগা’রেট ফেলে দিয়ে বললো,
-“তারপর কি হয়েছে বলুন?
-“তারপর কাজের প্রেশারে ভুলেই গিয়েছিলাম যে কাউকে পছন্দ করি আমি।যার ফলে একদিন হঠাৎ দেখলাম মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে।

তায়েসের এ কথা শুনে রামিসা হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে বললো,
-“সিরিয়াসলি?কেউ কাউকে পছন্দ করলে ভুলে যেতে পারে বুঝি? বছরের সেরা জোকস বললেন।

তায়েস রামিসার হাসি দেখে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকায়।ক্ষীপ্ত গলায় বলে,
-“তোমার কি মনে হয় আমি পছন্দ করতাম না? শুধু শুধু এসব বকছি?

-“তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন
সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন ”
“কাজী নজরুল ইসলাম”

এ কথাটি গভীর ভাবে উপলব্ধি করে দেখুন আপনার সাথে মিল পান কিনা? আসলে ভালোবাসা এমনি হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও মনে থাকে প্রিয়জনের কথা।যদিও আমি তেমন জানি না ভালোবাসার সংজ্ঞা। তবুও আপনার কথাতে মনে হচ্ছে ঐ মেয়েটা শুধু আপনার মোহ ছিল।আর কিছুই নয়।তাই এই দেবদাস’পনা ছেড়ে ভালো হয়ে যান বলছি।

তায়েস কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। মনে মনে আওড়ালো সত্যি এটা আমার মোহ ছিল? মানুষ তো সুন্দর জিনিষের প্রতি মোহে আকৃষ্ট হয়। মেয়েটি ও তো ভিশন সুন্দর যার কোন তুলনা হয় না।
তাহলে আমি মোহে আকৃষ্ট হয়েছি? ছিঃ ছিঃ আমি তায়েস মাহমুদ কিনা??

মনে মনে এসব ভেবে পকেট থেকে সিগা’রেট এর পুরো বক্সটি ছুড়ে ফেলে দিল ছাদ থেকে।
রামিসা দৌড়ে রেলিং গেসে দাঁড়ায় কিন্তু রাতের অন্ধকারে কিছুই দেখতে পেল না।কি ফেলে দিল তায়েস?তাই বিচলিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
-“কি ফেলে দিলেন আপনি?

তায়েস নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো,
-“সিগা’রেটের বক্স!

রামিসা নেত্রজোড়া সামান্য বড় করে তাকিয়ে বললো,
-“আর খাবেন না?
-“দূর এসব ভালো ছেলেরা খায় নাকি?ওয়াক কি ভিশ্রী গন্ধ।

রামিসা অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছে!এ যে ভুতের মুখে রাম নাম!
ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“আপনি ভালো ছেলে?
-“কোন সন্দেহ আছে?

রামিসা ভ্যাঙ্গো করে বললো,
-“নাহ।
.
.
আজকে ফয়জান তার সাথে আলো কে নিয়ে কলেজে আসে। দুজনকে এক সাথে গাড়ি থেকে নামতে দেখে দারোয়ান থেকে শুরু করে সবাই বাঁকা চোখে তাকায়।

ফয়জান ঠিক করেছে আজকে সবাই কে বলবে তার আর আলোর বিয়ের কথা। দু’জনে কলেজে ঢুকলে সামনে সমির স্যার এর সাথে দেখা হয়।
আলো দ্রুত এখান থেকে তার ক্লাস রুম তিন তলায় চলে যায়।আর ফয়জান সমির স্যারের সাথে নিচ তলায় অফিস রুমে বসে।

কথায় কথায় উপস্থিত সকল শিক্ষক মহোদয় দের বলে তার বিয়ের ব্যাপারে।বিষ্ময় প্রকাশ হ‌ওয়ার সাথে সাথে একজন ব্যাতিত সবাই শুনে খুব খুশি হলো।
কারণ তারা তো জানে ফয়জান খুবই ভদ্র,নম্র একজন মানুষ।সে আলোকে নিশ্চ‌ই সুখী করবে।

সমির স্যারের মুখশ্রী জুরে অজস্র হিংস্রতা ফুটে ওঠে। সবার থেকে আড়ালে চলে যায় তিনি।

যথা সময়ে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়।
এর মধ্যে পুরো কলেজে খবর ছড়িয়ে পরেছে যে ফয়জান স্যার বিয়ে করেছেন এবং সেকেন্ড ইয়ারের,কমার্সের ছাত্রী আলো ইসলাম কে। অনেক ছাত্র ছাত্রী এ কথা শুনে আলোকে দেখতে আসে।

দ্বিতীয় ক্লাসে ফয়জান আসে ক্লাস করতে।
সবসময়ের মতো মাথা নিচু করে বসে থাকে। ইসমত আরা ফিসফিস করে স্যার কে নিয়ে দুষ্টুমি করে। আর আলো লজ্জায় লাল রঙা হয়ে বান্ধবী কে বলে,
-“প্লিজ চুপ কর স্যার শুনতে পেলে বকা দিবেন।

এ কথা শুনে ইসমত আরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার জোগাড়।আলো ফয়জান কে এখনো স্যার বলে সম্বোধন করছে,এ যেন সে খুব মজা পাচ্ছে।

ফয়জান ক্লাসে রোলকল করছে,এক পর্যায়ে ফয়জান এর চোখে পড়ে ইসমত আরা ক্লাসের পরিবেশ নষ্ট করছে।তাই ধমকে দাঁড় করায় ইসমত আরা কে।
ইসমত আরা কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে বললো,
-“স্যার আজকে অন্তত বকবেন না প্লিজ?

ফয়জান হাজিরা খাতাটা বন্ধ করে বললো,
-“কেন আজকে কি এমন দিন যে ক্লাসের রুলস পাল্টাতে হবে?
-“স্যার আজকে “স্যার আর বান্ধবীর বিয়ে উপলক্ষে” আড্ডা ক্লাস হলে অনেক মজা হবে!

ইসমত আরা’র এ কথা শুনে ক্লাসের সবাই হ‌‌ই হুল্লোড়ে মেতে উঠে। আলো বছচারির লজ্জায় অবস্থা করুণ। সবাই একমত হয়ে বললো,আড্ডা ক্লাস করার জন্য।
কিন্তু ফয়জানের এক ধমকে ক্লাস পুরো বরফের মতো শিথিল হয়ে গেল।

ফয়জান উচ্চ স্বরে বললো,
-“প্রিন্সিপাল স্যার সিসি ক্যামেরায় সব কিছু পর্যবেক্ষন করছেন,এ ব্যাপারে তোমরা অবগত ন‌ও?

সবাই মাথা নিচু করে বসে থাকে।
ফয়জান আবার বলে,
-“এখন চুপ করে বসে আছো কেন?বলো তোমরা অবগত ন‌ও? ভুলে যাও কেন এটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে এসেছো শিক্ষা গ্রহণ করতে আড্ডা দিতে নয়।

কিছুক্ষণ সবার দিকে তাকিয়ে ফয়জান বললো,ব‌ই বের করে সমস্যা দেখাও। তোমাদের টেষ্ট এক্সাম অতি নিকটে। আমার জানা মতে সিলেবাস কমপ্লিট। এখন থেকে তোমাদের কোথায় কোথায় সমস্যা আছে ঐগুলো আমাকে বলবে আমি সমাধান করে দিব ইনশা আল্লাহ।

তারপর কিছু অংকের সমাধান করা হলে ঘন্টা বেজে ওঠে। ফয়জান সব কিছু গুছিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়, আবার ফিরে এসে সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আগামীকাল আলো তোমাদের চকলেট ট্রিট দিবে ইনশা আল্লাহ।

এ কথা শুনে আলো মাথা তুলে তাকায় ফয়জান এর দিকে।আর বাকি সবাই “ইয়ে কি মজা” বলে হ‌ই হুল্লোড়ে মেতে ওঠে।

ফয়জান যাওয়ার আগে আলোকে বলে, টিফিন পিরিয়ডে আলো যেন ফয়জান এর সাথে দেখা করে।
তারপর ক্লাস থেকে বেড়িয়ে ফয়জান।
অফিসে এসে আনমনে হাসে তার স্টুডেন্টদের কথা মনে করে। তাছাড়া আলোর আশ্চার্যো চাহনিটা মন্দ ছিল না।ঘন কালো পাপড়ি গুলো ছুঁয়ে দিতে পারলে ভালো লাগতো বলে মনে হলো ফয়জান এর।
.
.
নূর‌আইন ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। তহুরা বেগম সেই কখন থেকে ডেকে চলেছে কিন্তু তার ঘুম ভাঙ্গার কোন নাম গন্ধ নেই। শেষে না পেরে তহুরা বেগম নূর‌আইন এর মাথার নিচ থেকে বালিস টান দিয়ে নিয়ে নিল।

হঠাৎ এমন ঘটনায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে উঠে বসে নূর‌আইন। মুখশ্রী বাংলার পাঁচের মতো করে বললো,
-“মামনি সমস্যা কি তোমার? আমার এত্ত সুন্দর স্বপ্ন টার তেরোটা বাজিয়ে দিলে!
-“কি স্বপ্ন দেখছিলি তুই?
নূর‌আইন আড়মোড়া ভেঙে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তোমার জামাই কে নিয়ে..!

এতটুকু বলে থেমে গেল। তহুরা বেগম সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“কাকে নিয়ে?
-“ক কি কিছু না মামনি।

এই বলে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।
মেয়ের কান্ড কারখানা দেখে তহুরা বেগম প্রথমে আশ্চার্যো হলেও পরে হেসে বললো,
-“মেয়ের নিশ্চ‌ই কাউকে পছন্দ হয়েছে। নূরের বাবাকে বলতে হবে।

নূর‌আইন কে সবাই নূর বলে ডাকে।
.
.
আজকে ফয়জান’রা তাদের এপার্টমেন্ট উঠবে। ইতিমধ্যে সমস্ত ফার্নিচার সেটিং করা হয়ে গেছে। এসবের তদারকি করছে কায়েস।কারণ যত তাড়াতাড়ি সবকিছু গুছানো যাবে তত তাড়াতাড়ি তার আর ফাইজার বিয়ে হবে।তাই সবকিছু দ্রুত শেষ করার জন্য সে এই দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়েছে। সকাল বেলা থেকে এসব করছে। সাথে আছে রামিসা সে কিছু কিছু কাজে সাহায্য করছে কায়েস কে।

আয়েশা আর ফাহমিদা বাসায় টুকটাক যা জিনিষ পত্র লাগবে ঐগুলো ঘুরে ঘুরে শপিং মল থেকে ক্রয় করছে। কায়েস একটু পর পর কল করে জিজ্ঞাসা করছে তাদের শপিং শেষ হয়েছে কিনা? শেষ হলে কায়েস তাদের নিয়ে যেতে আসবে।
.
.
আলো টিফিন পিরিয়ডে অফিস রুমের সামনে আসলে, ফয়জান তাকে নিয়ে ক্যান্টিনে বসে খাবার অর্ডার করে। খাবার আসলে ফয়জান আলোকে বলে খাওয়ার জন্য। এদিকে আলো’র ডান হাতটা ব্যথা করছে খুব নাড়াতে পারছে না। কোন রকম হাতটা খাবারের উপর রাখে কিন্তু খাবার তুলে খাওয়ার শক্তি পাচ্ছে না।
ব্যাপারটা মোটেও এড়ায় না ফয়জান এর চোখে।তাই বললো,
-“খাবার রাখো, হাতটা এখানে দাও?
-“জ্বি?
-“বলছি হাতটা এখানে দাও?

আলো হাতটা ফয়জান এর দিকে বাড়িয়ে ধরে। ফয়জান আলো’র হাতটা নিজের হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো হাতে কি হয়েছে?
হাতটা কিছুটা লাল রঙা হয়ে আছে। ফয়জান টিপে দিতে আলো আহ্!করে শব্দ করে উঠে।

ফয়জান বললো,
-“কি হয়েছে হাতে? কলেজে আসা পর্যন্ত তো ভালোই ছিল। হঠাৎ এরকম হলো কিভাবে?

আলো চুপ করে বসে আছে, কি জবাব দিবে সে?তার তো জবাব দেওয়ার কোনো ভাষা নেই।
.
নিজের ক্লাস থেকে বেড়িয়ে অফিস রুমে যাওয়ার পথে সমির স্যার পথ আটকে দাঁড়ায়।সে দিকটায় সিসি ক্যামেরার আওতামুক্ত হ‌ওয়ায় আলোর হাত মুচড়ে ধরে সমির স্যার। এবং হুমকি দেয় ফয়জান স্যারকে বিয়ে করার দুঃসাহসী কাজের জন্য খুব বড় পস্তাতে হবে আলো’কে!…..

#চলবে… ইনশা আল্লাহ

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(১৫)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

আলো চুপ করে বসে আছে দেখে ফয়জান আর জিজ্ঞাসা করলো না হাতের কথা। তবে বললো,
-“কিছুদিন পর তোমার পরীক্ষা তাই এই সময়টা খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। হাতের যদি এরকম করুন অবস্থা করে রাখ তাহলে পরীক্ষার খাতায় কিছু না লিখে ডাবল শূন্য পাবে।
তুমি এখানেই বসে থাক আমি দেখি দোকানে বরফ কুচি পাই কিনা।

আলো লাগবে না বলতে নিলে, ফয়জান রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায়।যা দেখে চুপসে যায় আলো।

তারপর ফয়জান চলে যায়।
আলো হাতের দিকে চেয়ে মিনমিন করে বলে,
-“আপনাকে কিছুতেই এর কারণ বলতে পারবো না স্যার।এ কথা আপনি জানতে পারলে খুব বড় ঝামেলা সৃষ্টি হবে।আর সেই সুযোগে সমির স্যার আমার সম্পর্কে সব কিছু বলে দিবে আপনাকে! আমি এটা কিছুতেই চাই না। আমি কোন কিছুর বিনিময়ে আপনাকে আপনার পরিবার কে হাড়াতে চাই না! আপনি এবং আপনার পরিবার যে এখন আমার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। দ্বিতীয় বার আপনাদের হাড়ালে আমার যে মৃ’ত্যু ছাড়া কোন পথ খোলা থাকবে না স্যার!

টেবিলের উপর মাথা রেখে নিরবে চোখের পানি মুছে আলো।
ফয়জান বরফ কুচি নিয়ে আসে।আলো বলে ডাক দিতে আলো ঠিক হয়ে বসে।
ফয়জান আলোর পাশে বসে খুব যত্ন সহকারে বরফ কুচি লাগিয়ে দিতে শুরু করে।
আলো চুপ করে বসে দেখছে কিভাবে ফয়জান পরম যত্নে তার হাতে বরফ লাগিয়ে দিচ্ছে। তাকে হাড়ানোর কথা মনে হতে বুকটা ব্যথায় হাহাকার করে ওঠে।

আড়ালে ঠোঁট কামড়ে রাগ ধমন করে সমির স্যার।তার ইচ্ছা করছে ফয়জান কে খু’ন করে ফেলতে!তার জিনিষে হাত দিয়ে ফয়জান খুব বড় ভুল করেছে!যদি আগে এরকম কিছুর পূর্বাভাস পেত তাহলে আজকে এই দিনটি দেখতে হতো না।
এখানে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে যাবে তাই সমির স্যার অফিস রুমে চলে গেল।

এদিকে হাতে বরফ দেওয়া শেষ হলে ফয়জান নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে আলোকে। আলো বললো, আপনি খাবেন না?
-“তুমি খাও, খেয়ে মেডিসিন নিতে হবে।

আলো আদুরে গলায় বললো,
-“আপনিও খান প্লিজ?

ফয়জান মুচকি হেসে রোল মুখে দেয়।
.
.
আসর নামাযের কিছু মুহূর্ত পূর্বে সবাই একসাথে দুপুরের খাবার খেতে বসে। সবাই সারাদিন বাসা গুছিয়ে শেষ করেছে যদিও এখনো টুকটাক কিছু কাজ বাকি আছে। তবে আগামীকাল সব শেষ করা যাবে ইনশা আল্লাহ।

কায়েস এতো ক্লান্ত শরীরের ঠোঁটের কোণে প্রশান্তির হাসি ফুটে আছে।রামিসা পাসের চেয়ারে বসে নানা কথা বলে দুষ্টুমি করছে হবু দুলাভাই এর সাথে।

ফয়জান আর আলো ও কলেজ থেকে এসেছে। আলো রুমে বসে নিজের খাবার খাচ্ছে আর ফয়জান সবার সাথে বসে খাচ্ছে।
তায়েস তখন বললো,
-“ফয়জান ভাইয়া আমাদের ছাড়াই বিয়ে করে নিলেন এটা কিন্তু ঠিক কাজ করলেন না?

ফয়জান মুখের খাবার শেষ করে একটু পানি খেয়ে বললো,
-“আমি দুঃখিত ভাই। আসলে পরিস্থিতি এমন ছিল যে তাড়াতাড়ি বিয়েটা করতে হয়েছে।
-“কি হয়েছিল বলা যায়?
-“আসলে আলো মানে আমার ওয়াইফের মা মারা গেছে কয়েক মাস আগে।আর তাই ওর পরিবারের কিছু মানুষ ওর জীবনটা দূর্বিসহ করে তুলে।যার ফলে ওর পড়াশোনায় ভিশন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শুধু তাই নয় মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরতো।

ফয়জান এর কথা শুনে তায়েস কিছু কথা ভেবে বললো,
-“তাহলে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভাইয়া।হজরত মোহাম্মদ (সা.) পিতৃহীন অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। ছয় বছর বয়সে তার পরমপ্রিয় মা দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। তিনি তার দাদা ও চাচার অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ ও তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তিনি কি আপনাকে এতিমরূপে পাননি? অতঃপর দিয়েছেন আশ্রয়।[১]

(সুরা দোহা, আয়াত : ৬)

বাবা-মায়ের আদর-ভালোবাসা ও স্নেহ-মমতার শূন্যতা কতটা বেদনাদায়ক নবীজি (সা.) তা শতভাগ উপলব্ধি করেছেন। তার জীবনচরিতে দেখা যায়, এ উপলব্ধি থেকে তিনি এতিমদের অত্যধিক স্নেহ করতেন, আদর-মমতায় জড়িয়ে নিতেন।
-“ধন্যবাদ ভাই।
.
.
এক সপ্তাহ পর,
ফয়জান তার পরিবার নিয়ে নতুন বাসায় সিফ্ট হয়েছে।এ কয়েকদিনে সমস্ত কিছু গোছানো হয়ে গেছে।এ বাসায় এসে খুব স্বস্তি বোধ করছে কারণ এখানে গায়রে মাহরাম পুরুষ নেই। চিন্তা মুক্ত ভাবে চলাফেরা করা যায়।

আগামীকাল কায়েস আর ফাইজার বিয়ে ইনশা আল্লাহ। আজকে ফাইজার গায়ের হলুদের কথা তুললেন ফাহমিদা খাতুন। তখন ফাইজা বললো,
-“গায়ের হলুদের কোন প্রয়োজন নেই। এগুলো ইসলামে জায়েজ নেই।

তখন আলো বললো,
-“যদি তোমরা অনুমতি দাও তাহলে কিছু কথা বলতে পারি?

ফাইজা বললো,
-“ভাবী মনি তুমি নির্দ্বিধায় বলো।আর শুন অনুমতি নিয়ে আমাদের সাথে কথা বলতে হবে কেন তোমার? আমরা সবাই মিলে একটা পরিবার সেখানে তুমি আমি সবাই বাবা মায়ের কাছে সমান।

রুহুল আমিন ও বললেন,
-“ঠিকই তো তুমি যা বলতে চাও বলবে তার জন্য অনুমতি নিতে হবে কেন? এবার বলোতো মা কি বলবে?

আলো খুশি হয়ে বললো,
-“শুনো সবাই।
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দ‍র্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

জিজ্ঞাসার ১৭৭৪তম পর্বে ঢাকার রামপুরা থেকে চিঠির মাধ্যমে বিয়েতে গায়ে হলুদের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন শহীদুল ইসলাম। অনুলিখনে ছিলেন সজীব খান।

প্রশ্ন : বিয়ের সময় বর-কনের গায়ে গলুদ লাগানো হয় এবং গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়। এগুলো করা কি ইসলামসম্মত?

উত্তর : গায়ে হলুদ শুধু আমাদের কালচার, তা ঠিক নয়। ইসলামী কালচারের মধ্যে এটা আসেনি। কিন্তু এটা কোনো গুনাহের কাজ নয়। এটা যদি ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে ভুল হবে। এটা ইবাদতের বিষয় নয়। এটা হচ্ছে এলাকার প্রচলন হিসেবে। সৌন্দর্যের জন্য এটা করা যেতে পারে। এখন ছেলেরা মেয়েদের আবার মেয়েরা ছেলেদের আনুষ্ঠানিকভাবে গায়ে হলুদ দেয়, তা ঠিক নয়। এগুলো পুরোটাই শরিয়াহ অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। এই আনুষ্ঠানিকতা ইসলামে কোথাও আসেনি। তবে ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ গায়ে হলুদ মাখে, তাহলে সেটা জায়েজ। অনানুষ্ঠানিকভাবে যদি কেউ সৌন্দর্যের জন্য মেহেদি দিয়ে কাউকে সাজায়, সেটা জায়েজ আছে।

এই অনুষ্ঠান আমি দেখেছিলাম তাই আপনাদের বললাম। ভুল কিছু বললে মাফ করবেন প্লিজ।

ফাহমিদা খাতুন খুশিতে আটখানা হয়ে বললেন,
-“আরে না ব‌উ তুমি ভালো কথা বলছো। তাহলে আজকে ফাইজার গায়ের হলুদের ব্যবস্থা করবো।চলো আয়োজন করতে হবে তো নাকি?

ফাইজা ব্যাতিত সবাই খুব খুশি হয়ে বললো তাই তো চলো বসে থেকে সময় নষ্ট করার কোন প্রয়োজন নেই।

সবাই চলে গেলে ফাইজা মন মরা হয়ে বসে থাকে। তার মতে এসব অহেতুক সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই নয়।

সন্ধ্যার দিকে ফাইজা কে হলুদের শাড়ি আর ফুলের গয়না দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দেয় রামিসা।

ফাইজা এবং কায়েস এর সাথে সাথে দুই পরিবার সাজে সজ্জিত হয়ে উঠে।আলো আর রামিসা ও হলুদ শাড়ি পরে।
সবাই কে মা শা আল্লাহ খুবই সুন্দর লাগছে।

অপর দিকে কায়েস এর সাথে সাথে ফয়জান এবং তায়েস ও শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরে।
দুই পরিবারের এত্ত আনন্দ মূহূর্ত পাথরে না পরিনতি হয়!

আলো সাজগোজ করেছে ঠিকই কিন্তু এখন পর্যন্ত তার একটুও প্রশংসা করলো না।এই নিয়ে তার আকাশ সম মন খারাপ।
বার বার ফয়জান এর সামনে দিয়ে আশা যাওয়া করছে অথচ তার কোন রিয়েক্ট ই দেখা যাচ্ছে না।

অপরদিকে তায়েস রামিসা কে দেখে বললো,
-“পেতনি কে সাজলে মন্দ লাগে না!

এ কথা শুনে রামিস বুঝতে পারলো না তায়েস তার প্রশংসা করলো নাকি বিদ্রুপ করলো?

দুই পরিবারের কিছু আত্মিয় এসেছে। কায়েস এর কাজিন রুহি বয়সে রামিসার থেকেও ছোট কিন্তু এই পিচ্চি মেয়ের হাতে জাদু আছে মনে হয়।ফাইজার হাতে মেহেদি দিয়ে খুব সুন্দর ডিজাইন করে রাঙিয়ে দিচ্ছে।
এরপর রামিসা, আলো দিবে তারপর বাদবাকি সবাই।

ফয়জান রুমে ঢুকেছে দেখতে পেয়ে আলো দ্রুত রুমে গেল। গিয়ে দেখে ফয়জান কাবার্ড খুলে কি যেন করছে।
তখন আলো হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে এটা ওটা করছে।যার ফলে হাতে পরিহিত কাঁচের চুড়ি ঝংকার তুলছে অবিরাম।

আকস্মিক পিছন থেকে তার কোমর জড়িয়ে ধরে সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় ফয়জান! ঘটনার আকস্মিকতায় বরকে যায় আলো।অধর দুটো তে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে ফয়জান বললো,
-“আমাকে শুনাচ্ছ?
-“কি?
-“তোমার এই মন মাতানো চুড়ির ঝংকার?

নিজের কাজে নিজেই লজ্জিত হয় আলো। মাথা নিচু করে রাখে।
ফয়জান আলোর দুই গালে হাত রাখলে আলো মাথা তুলে তাকায়।
ফয়জান বলে,
-“এত্ত কিউট কেন তুমি? না না শুধু কিউট বললে ভুল হবে তুমি হচ্ছ কিউট এর ডিব্বা বুঝলে?

আলো লজ্জায় লাল রঙা হয়ে মুচকি হাসে।যা দেখে ফয়জান এগিয়ে গিয়ে আলোর অধরপল্লব দুটো আঁকড়ে ধরে নিজের দখলে নিয়ে নেয়।
.
.
দুই পরিবার বিয়ের আমেজে নিজেদের মাতিয়ে তুলে।ফাইজা সহ বাকি মেয়েরা আগেই পার্লারে সাজতে চলে গেছে। ওখান থেকে তারা কমি‌উনিটি সেন্টারে যাবে। তাদের গার্ড হিসেবে আছে এস.আই. তায়েস মাহমুদ
হা হা হা..

আলো যায়নি কেননা সে এতো সাজগোজ করে বাহিরে বের হবে না।সে বোরকা পরে নিজেকে পর্দায় ঢেকে নিয়েছে। ফয়জান এর সাথেই সে যাবে।
.
.
সব কিছু ম্যানেজমেন্ট করতে করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়।সবার খাওয়া দাওয়া শেষ। এখন শুভ বিবাহ কার্যক্রম শুরু করার পালা।
ব‌উয়ের জন্য আলাদা রুম রাখা হয়েছে সেখানে গায়রে মাহরাম পুরুষ এর প্রবেশ নিষেধ।

তো খবর পাঠানো হয় এখন বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজি সাহেব আসবেন।

অতঃপর যিনি খবর নিয়ে গেলেন তিনি ফিরে এসে জানালেন বিয়ের কনে কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
এ কথা শুনে সবার মাথায় যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হল!….

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here