শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,১৮,১৯

0
360

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,১৮,১৯
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
১৮

শুভ্র নীলাভ আকাশে যেমন মেঘ জমে তেমনি দুইটা পরিবারে মেঘ জমেছে।কারো মনে শান্তি নেই শুধু আছে কষ্টের দীর্ঘশ্বাস।

প্রকৃতির নিয়মে মেঘ গুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। তারপর সূর্য মামার আগমনে এক নতুন ঝলমলে দিন শুরু হয়। প্রকৃতি তখন পুনরায় সচল হয়ে উঠে। তাদের পানে তাকালে অনুভব হয় তারা হাসছে হেসে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে “আলহামদুলিল্লাহ” বলছে।

মানুষের জীবনটাও এরকম হাসি আর কান্না,কান্না আর হাসি। এইতো জীবন বড়ই ভালোবাসি। মানুষের জীবনে যদি দুঃখ কষ্ট না থাকতো তাহলে সুখের আনন্দ’টা কেউ উপলব্ধি করতে পারতো না কখনোই না।

তেমনি সুন্দর অসুন্দর দুটোই আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি করেছেন।যদি সবকিছু সুন্দর’হীন হতো তাহলে আমরা কখনো সুন্দর অসুন্দর এর পার্থক্য বুঝতাম না। আল্লাহ মহাজ্ঞানী তাই তো সবকিছু বিবেচনা করেই সৃষ্টি করেছেন।তাই বিপদের সময় আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা রাখতে হবে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে,
জেনে রেখো,আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে [১]
.
.
রামিসা উঠে বসে বললো,
-“সকাল হয়ে গেছে ভাইয়া?

কায়েস একটু চুপ থেকে বললো,
-“না এখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। তাহাজ্জুদ নামায পড়ার সময়।ফ্রেশ হয়ে অযু করে আসো। একসাথে নামায আদায় করবো।

রামিসা এ কথা শুনে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কায়েসের দিকে।রামিসা বুঝতে পারছে না এই লোকটা এতো ভালো কেন? এতো কিছুর পরেও কেমন আল্লাহ তা’আলার ইবাদত পালন করবে বলছে! আমি তো গতকাল আল্লাহ কে অনেক কিছু বললাম যে তিনি চাইলে তো এরকম কিছুই হতো না! তিনি চাইলে সেদিন আপুই কে ঐ নিকৃ’ষ্ট জানো’য়ার দের হাত থেকে রক্ষা করতে পারতেন! কিন্তু তিনি বাচাননি আপুই কে! কেন এতো নি’ষ্ঠুর হলো আল্লাহ?

রামিসা বসে বসে এসব ভাবছে তখন কায়েস নামাযের জন্য তৈরি হয়ে এসে বললো,
-“এখনো বসে আছো কেন? কিছুক্ষণ পর ফযরের ওয়াক্ত হয়ে যাবে।যাও তাড়াতাড়ি?
-“আল্লাহ তা’আলার প্রতি আমার অনেক রাগ! তিনি ইচ্ছে করলেই সেদিন আপুই কে বাঁচাতে পারতেন কিন্তু কেন বাঁচালেন না? আমি তার ইবাদত পালন করবো না!

রামিসার এমন কথায় বিষ্মিত হলো কায়েস সাথে সাথে বললো,
-” নাউযুবিল্লাহ!
এসব কি কথা বলছো? তাড়াতাড়ি ত‌ওবা করে আল্লাহ তা’আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। আল্লাহ তা’আলা কোরআন এর আয়াতে বলেছেন,
হে ঈমানদারগণ,তোমরা ধৈর্য্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।[২]

এবং তিনি আরও বলেছেন,যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নিয়ামত) বাড়িয়ে দিবো।[৩]

তাই আমাদের সবকিছুর জন্য শুকরিয়া আদায় করতে হবে।আমরা তো এই দুনিয়া ক্ষণিকের জন্য এসেছি অতিথি হিসেবে। আবার তার কাছেই ফিরে যেতে হবে।ক্ষনিকের মোহ মায়ার জান্য জাররা পরিমাণ ও আল্লাহ তা’আলার বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না। আল্লাহ তা’আলা আমাদের হেদায়েত এবং হেফাজত দান করুন আমীন,সুম্মা আমীন!

রামিসা নিজের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হলো।ক্ষমা প্রার্থনা করে “আস্তাগফিরুল্ল” বললো। তারপর একটা থ্রিপিস নিয়ে বাথরুমে গেল।শাড়ি চেঞ্জ করে থ্রিপিস পরবে বলে।
.
.
এদিকে কায়েস জায়নামাজে বসে কষ্টে মাথা চেপে ধরে। মুখে যাই বলুক না কেন মন থেকে তো আর ফাইজা কে ভুলতে পারবে না। কিন্তু তারপরও আল্লাহ তা’আলার বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না কিছুতেই। আল্লাহ যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা উত্তম পরিকল্পনাকারী।

রামিসা তৈরি হয়ে আসলে দুজনে একসাথে নামাযে দাঁড়ায়।
.
আলো একাই তাহাজ্জুদ নামায পড়ছে।
ফয়জান কে কয়েকবার ডাকার পরও উঠেনি। হয়তো সারাদিন এতো ঝামেলা পোহাতে হয়েছে বলে উঠতে পারছে না।তাই আলো আর জোর করেনি।
.
ফাইজা’র নামাজরত অবস্থায় চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে।সে যে বড্ড পা’পি!তার পা’পের খোরাক পূর্ণ হয়ে আসছে আর বেশি দেরি নেই! এই পৃথিবীর আনন্দ তার জন্য নয়, তবুও শুকরিয়া আদায় করে নিতে হবে।পরকালে যদি একটু ঠাঁই মিলে।
.
.
পাঁচ মাস পর,
সবাই সবার কর্মক্ষেত্র নিয়ে ব্যস্ত জীবন যাপন করছে।ব্যস্ততার মাঝেও দীর্ঘশ্বাস রয়েই গেছে।
আলো’র এইস‌এসসি পরীক্ষা নিকটবর্তী। দিন, রাত এক করে মেয়েটা পড়াশোনা করছে।তার গাইড লাইন হিসেবে আছে ফয়জান। যেকোনো সমস্যা সমাধান করে দিচ্ছে সে। আলোকে নিয়ে ফয়জান এর অনেক স্বপ্ন। ফয়জান এর বিশ্বাস আলো একদিন খুব বড় হবে, সবার মুখ উজ্জ্বল করবে।

এদিকে ফাহমিদা খাতুন এসবে মোটেও খুশি নন।তার ইচ্ছা ঘরে একজন ফুটফুটে নবজাতক শিশুর আগমন ঘটুক। এতো পড়াশোনা করে কি হবে? তাদের যা আছে এগুলো দিয়েই তো জীবন চলে যাবে।এর চেয়ে বেশি কি প্রয়োজন?
ফাহমিদা খাতুন শুধু অপেক্ষা করছেন পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষা হয়ে গেলেই এ নিয়ে আলোর সাথে কথা বলবেন তিনি।

অপরদিকে ছোট মেয়ের ঘরেও নাতি নাতনির সম্ভাবনা দেখছেন না। জানেন না আদৌও তার মেয়েটা স্বামী ঘর নিয়ে সুখে আছে কিনা। এমনিতে সবার সাথে হাসিখুশি কথা বলে, চলাফেরা করে। ফাহমিদা খাতুন বাচ্চার কথা বললে, কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্য কথা বলে কাটিয়ে নেয়।

আর বড় মেয়ের কথা কি বলবেন? এই কয়েক মাসে কয়েকবার এসে শুধু দেখা করে চলে গেছে। মেয়েটার মনের মধ্যে কি এমন যন্ত্র’না তিনি আদৌও এর হিসাব নিকাশ মিলাতে পারেন না।
কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলে,
-“মা কোন প্রশ্ন করো না দয়া করে। আমি উত্তর দিতে পারবো না।আর এই যে দেখছো আমি মাঝে মাঝে আসি, তখন তাও আসবো না।

তখন ফাহমিদা কেন? ভয়ে কেউ ই কোন কথা জিজ্ঞাসা করতে পারে না।

রামিসা যথাসম্ভব মানিয়ে নিচ্ছে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে। তাছাড়া মানুষগুলো যে পূর্ব থেকেই তার বড্ড আপন। এদের মতো পরিবার পাওয়া ও ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে বলেই এমন ভালো স্বামী শ্বশুরবাড়ি পেয়েছে।

বিয়ের পর কয়েক মাস রামিসা’র তায়েস এর সাথে বন্ধুত্বের মতো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ব্যাপারটা কায়েস এর চোখে পড়লে কায়েস রামিসা কে হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যা দিয়ে বলে,
উকবা ইবন আমের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ আলাইহিসসালাম ইরশাদ করেন, সাবধান! তোমরা পরনারীর কাছে ঘেঁষা থেকে বিরত থাকবে। তখন জনৈক আনসারী বললেন, দেবর সম্পর্কে বিধান কী? তিনি বললে, দেবর হচ্ছে মৃত্যু।[৪]

হাদীসে দেবরকে মৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আসলে কি তাই? সত্যিই কি দেবর মৃত্যুতুল্য? নাকি হাদীসের অন্তর্নিহিত কোনও অর্থ উদ্দেশ্য? মূল আলোচনায় প্রবেশের আগে আসুন এ ব্যাপারে ইসলামী মনীষীদের বক্তব্য জেনে নিই। পাঠক! ততক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য না হারানোর অনুরোধ করছি।

এর ব্যাখ্যায় আবূ উবায়দ (রহ.) বলেন, ভাবীর মৃত্যু হলেও সে যেন দেবরদের দেখা না দেয়। ইমাম খাত্তাবী (রহ.) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, মানুষ মৃত্যুকে যেভাবে ভয় করে, দেবরকেও সেভাবে ভয় করা উচিত।[৫]

আল্লামা উব্বী রহ. বলেন, ‘নারীরা যেন পরপুরুষ ও দেবরদের সঙ্গে নিভৃতে না মেশে। কেননা, এতে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে এমন পাপ হয়ে যেতে পারে, যা মৃত্যুর চেয়েও ভয়ানক।’

ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন, দেবরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত, মৃত্যুর সঙ্গে সাক্ষাত হওয়ার মতোই ভয়ানক ও ক্ষতিকর।[৬]

মনীষীগণের এসব বক্তব্যে ফুটে উঠেছে দেবরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের মানসিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষতির কথা।
.
.
হাদীসের এরুপ বানী শুনে রামিসা আর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তায়েসের সামনে যায় না। কিছুদিন পর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তায়েস ও নিজেকে যথাসম্ভব দূরে রাখে। কারণ সে জানে তার ভাই খুবই ধার্মিক মানুষ। ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছে কখনো নামায কালাম বিনা কারণে বাদ দেয় না।তার ব‌উ তো সেরকম ই হ‌ওয়া উচিৎ।
.
আজকে রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে কায়েস ব‌ই পড়ছে।রামিসা ফোন নিয়ে বসে আছে বিছানায় তখন কায়েস বললো,
-“একটা কথা অনেক দিন যাবত জিজ্ঞাসা করবো করে করা হচ্ছে না! জিজ্ঞাসা করবো?

রামিসা ফোন রেখে ভাবনার মগ্ন হয় কি জিজ্ঞাসা করতে চাইছে কায়েস?
________
রেফারেন্স:
১)[সূরা বাক্বারাঃ২১৪]
২)[সূরা বাক্বারাঃ১৫৩]
৩)[সূরা ইব্রাহিমঃ৭]
৪)[বুখারী : ৫২৩২]
৫)[আ‘লামুল হাদীস : ৩/২০২৫]
৬)[ফাতহুল বারী : ৯/২৪৩]
_______
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

(আসসালামু আলাইকুম।
রামিসা আর কায়েসের বিয়ে নিয়ে হয়তো অনেকেই আমার উপর রেগে আছেন। আসলে এই গল্পটা আমি প্রায় সাত আগে থেকে ভাবছি এবং কিছুটা লিখে রেখেছিলাম। কিন্তু গল্পটা পাবলিক করার সাহস হয়ে উঠেনি।এর মাঝে অন্য গল্প দিয়েছিলাম।তাই এতো দিনের পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে পারলাম না দুঃখিত ?)

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(১৯)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

খোলা আকাশের নিচে এক রেস্তোরাঁয় বসে কফি খাচ্ছে কায়েস আর রামিসা।

হুট করেই কায়েস বললো,
-“চলো বাহিরে থেকে ঘুরে আসি?

প্রথমে রামিসা একটু চমকালেও পরে তৈরি হয়ে নেয়। এখন আর সে বে-পর্দা চলাফেরা করে না। সংস্পর্শ ব্যাপারটা এরকম ই মানুষ ভালো সংস্পর্শ পেলে ভালো হয় এবং খারাপ সংস্পর্শ পেলে খারাপ।
সে জন্যই বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে ছেলেটা দ্বীনদার কিনা সেটা দেখে বিয়ের কথা আগানো উচিৎ। একটা দ্বীনদার ছেলে কখনোই তার স্ত্রীকে আঘাত করে কথা পর্যন্ত বলে না কারণ এর জন্য সে ভয় পায়! মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে দাঁড়ানোর ভয় তাকে সর্বোক্ষন ভাবায়।
আজকে বাহাদুরি করে পার পেয়ে গেলেও পরপারে এর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে এর ভয় পায়।
তাছাড়া একজন দ্বীনদার ছেলের মধ্যে ভিশন লজ্জা থাকে।আর এই লজ্জার কারণে সে অন্যায় করতেও লজ্জাবোধ করে।
লজ্জা ও শালীনতা মানুষের জীবনে অপরিহার্য একটি গুণ। এ জন্য আল্লাহ তাআলা আদম (আ.) ও তাঁর সঙ্গিনী হাওয়া (রা.)-কে সৃষ্টির শুরু থেকেই লজ্জাশীলতার গুণ দান করেছেন। যার বিবরণ সবিস্তারে কোরআনে উল্লেখ আছে। কোরআনে তাদের লজ্জাশীলতার কথা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে, ‘…অতঃপর যখন তারা সেই বৃক্ষফলের আস্বাদ গ্রহণ করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়ল এবং তারা জা-ন্না-তে-র পাতা দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল।[১]

হাদিসে রাসুল (সা.) এই গুণটির প্রাচীনতার কথা এভাবে বলেছেন, নবুয়তের সূচনাকাল থেকে যে বিষয়গুলো মানুষের মাঝে (অবিচ্ছিন্নভাবে) আছে তার অন্যতম হলো, তুমি যখন নির্লজ্জ হয়ে পড়বে তখন যা ইচ্ছা তা-ই করবে।[২]

লজ্জা ঈমানের শাখা : শালীনতা শুধু মানবিক বিষয় নয়; বরং তা ঈমানের অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ঈমানের ৭০ বা ৬০-এর অধিক শাখা আছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা। আর সর্বনিম্ন হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জাশীলতাও ঈমানের একটি শাখা।[৩]
.
.
রামিসা এদিক সেদিক এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে। আসলে এই প্রথম এভাবে একান্তে কায়েসের সাথে সময় কাটানোর জন্য একটু অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।

দুজনের নিরবতা ভেঙ্গে কায়েস বললো,
-“আচ্ছা রামিসা একটা কথা বলবে?

রামিসা তাকিয়ে আছে প্রশ্নটা শুনতে। তখন কায়েস বললো,
-“আমি না হয় তোমার আপুর ইচ্ছে পূরণ করতে তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু তুমি কেন রাজি হলে?

রামিসা একটু ভেবে বললো,
-“সেদিন আপুই আমাকে তার সাথে যে জ’ঘন্য কাজ হয়েছে তার প্রত্যেকটি কথা খুলে বলে! আমি বোধহয় সেদিন প্রথম বারের মত এতোটা যন্ত্রনা উপলব্ধি করি। ছোট বেলা থেকেই আমি আনন্দে বড় হয়েছি। কোন দুঃখ কষ্ট আমাকে ছুঁতে দেয়নি আমার পরিবার। তেমনি আপুই কে ও। অথচ ঐ অ’মানুষ গুলো..

এতটুকু বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে রামিসা। সাথে কায়েসের ভিতর পুড়ে। খুব কষ্টে নিজেকে সংযত করে।রামিসা কে শান্তনা দেয়।

রামিসা কিছুটা শান্ত হয়ে বলে,
-“আমার সেই দুঃখিনী আপুই সেদিন প্রথম আমার থেকে কিছু চেয়েছে! কি চেয়েছে জানেন?

কায়েস উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় জানার জন্য।
রামিসা তখন বলে,
-“আপুই’র প্রিয় মানুষ’টির “ছায়া সঙ্গিনী” হ‌ওয়ার জন্য!তার সমস্ত দুঃখ,কষ্ট গুলো নিজের ভেবে তার ভরসা হ‌ওয়ার জন্য।

আপুই কোন মায়ার চাদরে জড়াতে চায় না।আর সে জন্যই তার প্রিয় মানুষটি অন্য নারীর সঙ্গ নিবে না এটা আপুর দৃঢ় বিশ্বাস। সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবে আপুকে তার সঙ্গিনী করতে যদি না পারে তো সারাটা জীবন একাকিত্ব কে সঙ্গী করবে।যা আপুই কখনো চায়না।

বিশ্বাস করুন আমি আপুই কে অনেক বুঝিয়েছি এরকম যেন না করে। সবটা ভুলে আপনার সাথে যেন নতুন করে শুরু করে। কিন্তু আপুই শুনলো না আমার কথা, কিছুতেই শুনলো না।

কায়েস এর মস্তিষ্ক কিছুটা নড়েচড়ে উঠল, আঁখিপল্লব দুটো ঝাপসা হয়ে এলো। দুই হাতে মুখশ্রী চেপে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো।

রামিসার বিবশ হয়ে এলো শরীর, মনে মনে ভাবছে এটাই ভালোবাসা। আমি তো এমন করে কাউকে ভালোবাসিনি কখনো।হ্যা কিছুদিন একটু ঝুঁকের মধ্যে ছিলাম এই যা।
সেটাও একতরফা ছিল।
.
.
ফয়জান মসজিদ থেকে ফিরে দেখলো,আলো ব‌ইয়ের উপর মাথা রেখে বসে আছে। কাছে গিয়ে মাথায় হাত রাখলে,আলো দ্রুত ঠিক হয়ে বসে ব‌ইয়ের পাতায় মনোনিবেশ করে। ফয়জান আলোর হাত ধরে বেলকনিতে নিয়ে দাড় করিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আলোর গালের সাথে নিজের গাল মিশিয়ে বলে,
-“ক্লান্ত লাগছে খুব?

আলো ফয়জান এর হাত দুটো আঁকড়ে ধরে বললো,
-“খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে পরিক্ষা নিয়ে। মনে হচ্ছে আমি ঠিক ভাবে লিখলেও ভুল হয়ে যাবে!

ফয়জান বুঝতে পারলো,আলোর প্রতি বেশি প্রেশার ক্রিয়েট করে ফেলেছে সে!যার কারণে মেয়েটা ভয় পাচ্ছে। এরকম হলে এর ফল ভালো হবে না।তাই পড়াশোনার পাশাপাশি তাকে সঙ্গ দিতে হবে। ভালোবাসা দিয়ে ভয় কাটাতে হবে। এখান যেহেতু সব পড়া কমপ্লিট শুধু রিভিশন চলছে।তাই অত প্রেশার ক্রিয়েট করার মানে নেই।

ফয়জান বললো,
-“প্রতিদিন অল্প করে রিভিশন দিলেই হবে। এতো চাপ নিও না। তুমি যেমনি রেজাল্ট করবে সেটাই আলহামদুলিল্লাহ।এর জন্য তোমাকে কেউ কিছু বলবে না কথা দিচ্ছি।

আলো ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,
-“সত্যি?

তার মুখশ্রী তে খুশি ঝলমল করছে। খুব বড় চাপ যেন নেমে গেছে।
ফয়জান ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-“এতো খুশি?

আলো লজ্জায় মুখ লুকায় ফয়জান এর প্রশস্ত বুকে, ফয়জান তার কপালে উষ্ণতার আদর ছুঁয়ে দেয়।আলো লজ্জায় আরো গুটিয়ে নেয় নিজেকে।
.
.
কায়েস চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে এসে নিজেকে সংযত করে বললো,
-“আমি বিয়ের ফজিলত সম্পর্কে তোমাকে কিছু বলছি মনোযোগ দিয়ে শুন।
মহান রাব্বুল ’আলামীন সৃষ্টি জগতের সকল কিছুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে তিনি মানবজাতিকে তৈরী করেছেন। তাদেরকে নারী ও পুরুষ এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। সৃষ্টিগত ভাবেই এক শ্রেণী আরেক শ্রেণীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এই বিপরীতমুখী দুই শ্রেণীর পারস্পরিক সমন্বয় সাধন প্রক্রিয়া হিসেবে তিনি শরী‘আতে বিবাহ নামক বন্ধন ব্যবস্থার আদেশ দিয়েছেন।

বিবাহ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যে, এতদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “বান্দা যখন বিবাহ করল তখন তার দ্বীনদারী অর্ধেক পূর্ণ হয়ে গেল। অবশিষ্ট অর্ধেকের ব্যাপারে সে যেন আল্লাহকে ভয় করতে থাকে।[৪]

মানুষের অধিকাংশ গুনাহ দুটি কারণে সংঘটিত হয়। একটি হয় তার লজ্জা স্থানের চাহিদা পূরণের কারণে আর অন্যটি হয় পেটের চাহিদা পূরণের কারণে। বিবাহের কারণে মানুষ প্রথমটি থেকে হেফাজতের রাস্তা পেয়ে যায়। সুতরাং তাকে কেবল রিযিকের ব্যাপারে চিন্তান্বিত থাকতে হয়। যাতে করে সে হারাম থেকে বেঁচে থাকতে পারে। একজন লোক খুব বড় আবেদ, তাহাজ্জুদ-চাশত-আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামায খুব পড়ে; কিন্তু সংসারের সাথে তার কোন সংশ্রব নেই। আরেকজন লোক ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুআক্কাদা আদায় করে এবং বিবি বাচ্চার হক আদায়ে তৎপর থাকে ফলে তার বেশী বেশী নফল পড়ার কোন সময় হয় না। এতদসত্বেও শরীআত কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তিকেই ইবাদাতগুজার হিসেবে মর্যাদা প্রদান করেছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত মুতাবিক বিবাহ-শাদী করে পরিবারের দায়দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে হালাল রিযিকের ফিকির করছে, সে ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক মর্যাদাশীল যে চব্বিশ ঘণ্টা মসজিদে পড়ে থাকে বা বনে জঙ্গলে সন্ন্যাসীর মত জীবন যাপন করে আর সব রকমের সাংসারিক ঝামেলা থেকে মুক্ত থেকে তাসবীহ তাহলীলে মশগুল থাকে।

বিবাহের অন্যতম আরো একটি ফায়দা হচ্ছে এই যে, এর দ্বারা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ পালন করা হয়। কেননা, তিনি ইরশাদ করেছেনঃ “বিবাহ করা আমার সুন্নাত।” আরেক হাদীসে এসেছেঃ“ তোমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে, তারা বিবাহ কর।কারণ এর দ্বারা দৃষ্টি ও লজ্জা স্থানের হেফাজত হয়।[৫]

এছাড়াও বিবাহের দ্বারা মানুষ নিজেকে অনেক গুনাহের কাজ থেকে বাঁচাতে পারে। নেক আওলাদ হাসিল করতে পারে। আর নেক আওলাদ এমন এক সম্পদ যা মৃত্যুর পরে কঠিন অবস্থার উত্তরণে পরম সহযোগিতা করতে সক্ষম হয়। কারো যদি নেক সন্তান থাকে তাহলে তারা যত নেক আমল করবে, সেগুলো পিতা-মাতার আমলে যোগ দেয়া হবে। বিবাহ-শাদী যেহেতু শরীআতের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি ইবাদত, সেহেতু এর মধ্যে কোনভাবে গুনাহ এবং আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানীর কোন সংমিশ্রণ না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাছাড়া এতে বেপর্দা, নাচ-গান, অপব্যয়-অপচয়, ছবি তোলা, নাজায়িয দাবী-দাওয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে দুরে থাকতে হবে। নতুবা মুবারক বিবাহের সমস্ত বরকতই নষ্ট হয়ে যাবে এবং স্বামী-স্ত্রী দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি সূচনাতেই ধ্বংস হয়ে যাবে।[৬]

সবটা শুনে চুপ করে বসে আছে রামিসা। কায়েস কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
-” এ হাদীস দ্বারা তুমি কি বুঝতে পারলে বলো?

রামিসা নিজের মতো করে সাজিয়ে নিচ্ছে এর জবাব…
.
.
কিছুদিন যাবত ফয়জান লক্ষ্য করছে আলো ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই ছাদে চলে যায়। কৌতূহল বশত ফয়জান এর ইচ্ছে করছে আজকে দেখাবে আলো ছাদে কি করে? হয়তো ভোরের আলোয় সময় কাটাতে যায় যদি তাই হয় তাহলে একটা বার ফয়জান কে বলতে পারতো, ফয়জান ও তার সাথে ঐ সুন্দর মূহুর্ত অবলোকন করতে পারতো….
_____
রেফারেন্স:
১/(সুরা : আরাফ, আয়াত : ২২)
২/(বুখারি, হাদিস : ৬১২০)
৩/(মুসলিম, হাদিস : ৩৫)
৪/(মিশকাত শরীফ -২৬৭)
৫/(মিশকাত শরীফ- ২৬৭ পৃঃ)
৬/(মিশকাত শরীফ- ২/২৬৮)
________
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

(আসসালামু আলাইকুম।
একটা কথা আমাকে কঠোর হয়ে বলতে হচ্ছে!যারা শুধু প্রেম/ভালোবাসা নিয়ে গল্প পড়তে চান তারা আমার গল্প পড়বেন না প্লিজ। আমি এই উদ্দেশ্যে গল্প লিখি না তাই আমার লেখার সাথে আপনাদের মতামতের মিল ঘটবে না।
আমার জ্ঞানের পরিধি খুবই নগণ্য তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।”জাযাকিল্লাহু খাইরন”)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here