শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,৩২,৩৩

0
317

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা,৩২,৩৩
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
৩২

সারাটা সকাল বৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রকৃতি নিস্তব্ধ। প্রকৃতি নতুন করে সতেজতার সহিত প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এখন শুভ্র নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা নেই।

শহরের সমস্ত ধুলোবালি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে। একটা ফুরফুরে অনুভূতি মিশ্রিত এক আবহাওয়া।

আলো’র জ্বরটা এখন ছেড়েছে। শরীর ঘর্মাক্ত হ‌ওয়ায় কাঁথা,কম্বল সব ফেলে দিয়েছে শরীরের উপর থেকে। ফয়জান অনেক জোরাজুরি করে কিছুটা খাবার খাইয়ে মেডিসিন দিয়েছে আলো’কে।

কিন্তু ফয়জান বেচারা বিরতিহীন ভাবে হাঁচি দিয়েই যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত টিস্যু বক্স অর্ধেক অংশ প্রায় খালি করে ফেলেছে। সেই দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই আলো’র। কেমন একটা নিস্তেজ হয়ে গেছে মেয়েটা। কোন কিছুতেই ভাবান্তর নেই যেন।
অথচ অন্য সময় হলে ফয়জান এর জন্য বিভিন্ন মশলা দিয়ে রং চা তৈরি করে নিয়ে আসতো।

আজকে শনিবার বলে কলেজ বন্ধ। এইদিক দেখে ফয়জান এর শান্তি। না হয় আলোকে রেখে আবার নিজেও অসুস্থ অবস্থায় কিভাবে যেত?এ জন্যই বলে আল্লাহ তা’আলা যা কিছু করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন।
“আলহামদুলিল্লাহ”।
.
.
রামিসার বিবশ হয়ে থাকা দেখে ব্যাপারটা সন্দেহজনক মনে হলো “লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক”আয়েশার কাছে। পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-” কি হয়েছে রে? এভাবে আনমোনা হয়ে কি ভাবছিলি?

রামিসা আয়েশার মুখোমুখি বসে বললো,
-” বড় মা তোমাকে একটা খুশির সংবাদ দেওয়া হয়নি!
-” অমা তাই কি সেটা?
-” ভাবীমণি প্রেগন্যান্ট।
-” আলহামদুলিল্লাহ।যাক এতো বছর পর বংশে নাতি নাতনির মুখ দেখতে পাব।

তারপর একটু মন খারাপ করে বললেন,
কিন্তু আমাদের ঘরে কবে যে ছোট ছোট হাত পা ছুড়ে দৌড়ে বেড়াবে।কবে দাদুমণি ডাক শুনবো?বয়স কম হলো না কোন দিন যেন ডাক চলে আসে!

এই কথা শুনে রামিসা কিঞ্চিৎ রেগে বললো,
-” একদম বাজে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি।
-” এটা যে চিরন্তন সত্য কথা। সকলকেই একদিন মৃ’ত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।(দীর্ঘশ্বাস)

রামিসা মলিন মুখে বললো,
-” তুমি দাদু হতে চলেছো বড় মা!

আয়েশার চক্ষু চরক গাছ! তারপর নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
-” এগুলো নিয়ে কেউ মজা করে পাগলী?

রামিসা কিছু না বলে মেইন দরজা খুলে বাহিরে এক পা রেখে বললো,
-” আমি ঐ বাসায় যাচ্ছি বড় মা, তোমার ছেলে খুঁজলে বলে দিও।আর হ্যা যা বললাম তা সত্যি!

এই বলে বেরিয়ে চলে গেল রামিসা। আয়েশা দাঁড়িয়ে পড়ল বসা থেকে।তার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না কিছুতেই। লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক। আচ্ছা কেন বিশ্বাস হচ্ছে না?রামিসা এখনো টিএন‌এজ বলে?

তিনি চললেন কায়েস এর কাছে। গিয়ে দেখলেন কায়েস লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। কপালে হাত রেখে। আয়েশা পাশে বসে বললেন,
-” রামিসা যা বললো তা কি সত্যি বাপ?যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে এভাবে জানতে হলো কেন আমাকে? আমার আর তোর বাবার কতো স্বপ্ন আমাদের ঘর আলো করে নাতি নাতনি আসবো। আমরা শেষ বয়সটা তাদের সাথে কাটাবো।

কায়েস ঠিক হয়ে বসে বললো,
-” তোমার ব‌উ’মার বয়সটা দেখেছো মা? এই বয়সে রামিসার গর্ভধারণের কতো ঝুঁকি থাকবে সেই সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা নেই। আমার হাত পা বাঁধা বলে না হয়..

আয়েশা হতচকিত হয়ে বললেন,
-” থাম! আর বলিস না।

আয়েশা বুঝতে পারলেন কায়েস কি বলতে চাইছিল।তাই সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে দিল না। হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন,
-” এবোরশনের বিধি,
কোন মহিলা অত্যাধিক দুর্বল হয়, যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক হয় এবং গর্ভধারণের মেয়াদ চার মাসের কম হয়। তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক গর্ভপাত বৈধ হবে। মেয়াদ চার মাসের অধিক হলে কোনোভাবেই বৈধ হবেনা।

এ ব্যাধি সম্পর্কে বিস্তারিতঃ
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, ভ্রুণের বয়স যখন হয় তেতাল্লিশ দিনের কম, তখন ভ্রুণ একটি রক্তপিন্ড হিসেবে মায়ের গর্ভে অবস্থান করে। এ সময় পর্যন্ত তার কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায় না। এ অবস্থায় ভ্রুনটিকে মানুষের শরীরের একটা অঙ্গ হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। আর মানুষের প্রতিটি অংশের মালিক স্বয়ং
আল্লাহ তায়ালা। অতএব শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো এই অঙ্গটিও নষ্ট করা নাজায়েজ। তবে যদি স্তন্যদানকারিনী গর্ভবতী হয়ে দুধ বন্ধ হওয়া এবং বাচ্চা মারা যাওয়ার আশঙ্কা হয়, এ অবস্থায় গর্ভে বীর্য জমাট রক্ত কিংবা গোশতের টুকরাকারে থাকলে এবং কোনো অঙ্গ প্রকাশ না পেলে চিকিৎসার মাধ্যমে গর্ভপাত করানো জায়েজ আছে।[১]

ভ্রুণের বয়স যখন তেতাল্লিশ দিন হয়ে যায়, তখন থেকে তার প্রয়োজনীয় অরগ্যান, যেমন ফুসফুস, নাক, হাত ও বিশেষ কিছু হাড় ইত্যাদি প্রস্তুত হওয়া শুরু হয়। অতএব তখন থেকে শুরু করে চার মাস পর্যন্ত গর্ভপাতের মাধ্যমে বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় ভ্রুণটি নষ্ট করে ফেলা মাকরুহে তাহরিমি।[২]

ভ্রুনের বয়স যখন ১২০ বা চার মাস হয়ে যায়, তখন আল্লাহ তায়ালা তার মধ্যে রুহ দান
করেন। আর রুহ আসার পর বাচ্চা নষ্ট করা কোনো মানুষকে হত্যা করার শামিল। তাই এ সময় ভ্রুণহত্যা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।[৩]

তাছাড়া আমাদের রামিসা বয়সের তুলনায় বেশ ম্যাচিউর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা করলে ইনশা আল্লাহ কোন সমস্যা হবে না। এখন কতো মেয়েরাই টি‌এন‌এজ বয়সে গর্ভবতী হচ্ছে। আমাদের যুগে তো আমারাই তার প্রমাণ। তুই এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করিস না আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা রাখ আর মোনাজাতে বেশি বেশি দো’আ কর।

কায়েস চুপ করে সবটা শুনে বললো,
-” রামিসা কোথায়?
-” ওর বাবার বাসায় মানে ঐ বাসায় গিয়েছে।
-” ওহ্
.
.
রামিসা বাসায় আসতেই আলো’র ব্যাপারে সবটা শুনলো। ফাহমিদা খাতুন বললেন,
-” আলোকে শান্তনা দেওয়ার জন্য।এ সময়ে হাসিখুশি থাকা খুব জরুরী।অথচ মেয়েটা কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলছে না।

রামিস বললো,
-” আমি দেখছি কিছু করা যায় কিনা।

তারপর ফয়জান দের রুমে গেল।
আলো খাটে বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছে আর ফয়জান একটু দুরত্বে বসে টিস্যু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে।
রামিসা দু’জনকে এক পলক দেখে বললো,
-” ভাইয়া তুমি বাহিরে যাও তো আমি ভাবীমণির সাথে কিছু কথা বলবো।

এ কথা শুনে ফয়জান আলোর দিকে তাকিয়ে টিস্যুর বক্স আর ঝুড়ি হাতে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।

ফয়জান চলে যেতে রামিসা আলোর একদম কাছে বসে বললো,
-” কেমন আছো ভাবীমণি?

আলোর থেকে কোন সারা পাওয়া গেল না।তাই রামিসা আবারো বললো,
-” আচ্ছা ভাবীমণি তুমি তো অনেক কিছু জানো, আমাকে বলতে পারো?গর্ভের ভ্রূণ এবো’রশন করা আর মানুষ হ’ত্যা করা এক‌ই গুনাহ এর সামিল তাই না?

রামিসার এমন অদ্ভুত কথায় চোখ দুটো বড় বড় করে তাকায় আলো। বুঝতে পারলো না রামিসা এই ধরনের কথা কেন বলছে?
রামিসা আলোকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-” আমি প্রেগন্যান্ট ভাবীমণি।

আলো চোখ বন্ধ করে রামিসা কে আঁকড়ে ধরে,অস্পষ্ট স্বরে বললো,
-” আলহামদুলিল্লাহ।দো’আ করি আল্লাহ তা’আলা একজন নেক সন্তানের জননী করুন তোমাকে।

রামিসা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
-” কিন্তু উনি চান না আমি এখনি সন্তান জন্ম দেই!

আলোর কন্ঠ এবার স্পষ্ট হলো।রামিসা কে সোজা করে বসিয়ে কাঁদে হাত রেখে বললো,
-” সেকি!কেন? ভাইয়া এরকম কথা কিভাবে বলতে পারেন, আমি জানি তিনি একজন পরহেজগার মানুষ তবে?
-” উনি আমাকে নিয়ে ভিশন চিন্তিত হয়ে আছেন ভাবীমণি। লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক।তাই বলেছেন সময় থাকতে যেন আমি এবো’রশন করিয়ে নেই! আমি কিছুতেই বুঝাতে পারছি না ভাবীমণি। এখন তুমি বলো আমার করণীয় কি?
-” ভাইয়া কে বোঝাতে হবে, এখন অনেক উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
-” আমি জানি না উনি বুঝবে কিনা!

আলো চিন্তিত মুখে বললো,
-” এটা তো লক্ষ্য রাখতে হবে,দুনিয়ার সামান্য ভোগবিলাস, কষ্ট বা লজ্জার ভয়ে আমরা যেন আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ঈমান ও আখেরাত কে বরবাদ না করে দেই।…
_______
রেফারেন্স:
[১](ফতওয়ায়ে কাজিখান : ৩/৪১০)
[২](আদ্দুররুল মুখতার ১০/২৫৪)
[৩](ফতহুল আলিয়্যিল মালিক খ. ১/৩৯৯)
______

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(৩৩)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

বিকাল বেলা থেকে আবারো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মানুষজনের রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে ভিশন হিমশিম খেতে হচ্ছে।
রামিসা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আশেপাশে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা মানুষজন দের আসাযাওয়া দেখছে।

গ্রিল গলিয়ে বাহিরে হাত বাড়িয়ে দিতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ফোঁটা ছুঁয়ে দিচ্ছে রামিসার হাত।
বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয় । বৃষ্টির পানি স্পর্শও করা (সুন্নত)।
বৃষ্টির সময়ের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না।[১]

আয়েশা [রা.] বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টি হতে দেখলে বলতেন,
বৃষ্টি দেখলে দোয়াঃ উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সায়্যিবান নাফিয়া
অর্থঃ হে আল্লাহ! মুষলধারায় উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন।[২]

আনাস [রা.] বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে থাকাকালে একবার বৃষ্টি নামল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর পরিধেয় প্রসারিত করলেন, যাতে পানি তাকে স্পর্শ করতে পারে। আমরা বললাম, আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, কারণ তা তার রবের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে।[৩]

রামিসা বৃষ্টির পানি ছুঁড়ে সমগ্র বিশ্বের জ্বীন জাতি থেকে শুরু করে মানুষের জন্য দো’আ করলো। নিজের জন্য চাইতে গিয়ে অনাগত সন্তানের জন্য চাইলো, সে যেন সুস্থ সবল ভাবে পৃথিবীতে আসতে পারে এবং তাকে যেন নেক হায়াত দান করেন।তার বাবা যেন এ নিয়ে কোন ঝামেলা না করে আমীন,সুম্মা আমীন!
মাঝে মাঝে নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দূরুদ শরীর পাট করতে ভুললো না রামিসা। কেননা দোয়া কবুল হয় (কোনো দোয়ার মধ্যে দুরূদ অন্তর্ভূত না থাকলে সেই দোয়া আল্লাহ্‌র কাছে পৌঁছায় না।)
.
.
মাগরিব নামায পড়ে ফাইজা, আলো,নূর আর রামিসা মিলে পপকন খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে।

আপরদিকে,
দুই বেয়াইন মিলে, আয়েশা আর ফাহমিদা খাতুন এর আনন্দের সীমা নেই। কেননা দুই ফ্যামিলি’তেই নতুন অতিথি আসতে চলেছে। আয়েশা বিকেলে আসার পথে সুখবর নিয়ে আসার সাথে সাথে মিষ্টি কিনে নিয়ে আসেন, সাথে নূর’কে ও নিয়ে আসেন তাহলে। প্রথমে আয়েশার মুখেই শুনতে পান মেয়ের প্রেগনেন্সির কথা ফাহমিদা।”লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক”এক খুশির মধ্যে আরেকটি খুশীর সংবাদ শুনে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে প্রায় কেঁদেই দেয়।

রামিসা তার মা’কে জরিয়ে ধরে।
ফাহমিদা খাতুন বলে,
-” “মা শা আল্লাহ” আমার মেয়েটা কবে যে বড় হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।

তারপর আলোর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছেন। সেদিনের পর থেকে তিনি অনুতাপে নিপীড়িত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এতো আনন্দের মাঝেও মেয়েটাকে একটু আদর করতে পারছেন না। এতেও এক ধরনের শাস্তি ভোগ করছেন ফাহমিদা খাতুন।
.
কথায় কথায় রামিসা নূর কে বললো,
-” আপু সম্পর্কে আমি আপনার বড় হলেও বয়সে ছোট তাই তুমি সম্বোধন করলে খুশি হব আমি।

নূর খুশি হয়ে বললো,
-” আমারো আপনি করে বলতে ভালো লাগছিল না,কিন্তু তুমি বা অন্যরা কি মনে করবে তাই বলা হয়নি।
-“আচ্ছা ঠিক আছে এখন থেকে বলবেন তাহলেই হবে।

ফাইজা বললো,
-” ইশ আমার ভাবতেই আনন্দে কেমন যে লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না তোমাদের। বেবিদের কোলে নিয়ে আদর করতে আমার ভিশন ভালো লাগে।
আচ্ছা নূর তোমাদের খুশীর সংবাদ কবে শুনবো বলো তো?

নূর লজ্জা পেয়ে বললো,
-” আসলে আপু পড়াশোনা শেষ না করে ভাবতে পারছি না। মাষ্টার্স কমপ্লিট করে ইনশা আল্লাহ।

তারপর নিজেদের মধ্যে এটা ওটা নিয়ে কথা বলে আড্ডা দেয় তারা।এর মধ্যে ফয়জান আসলে আলো’র মুখের কথা এবং হাসি দুটোই মিলিয়ে যায়। বোঝা গেল আলো এখানো ফয়জান এর উপর অভিমান করে আছে।

অপরদিকে,
কায়েস অফিস থেকে ফিরে দেখলো রামিসা এখনো বাসায় আসেনি।রিনু জানালো আয়েশা আর নূর ও ঐ বাসায় গিয়েছে।তাই বসে অপেক্ষা করছে নিশ্চয়ই তার মায়ের সাথে ফিরবে রামিসা এই ভেবে।

তারপর,
আয়েশা আর নূর ফিরে আসলে কায়েস এদিক ওদিক তাকিয়ে রামিসা কে কোথায় দেখতে পেল না।তাই আর অপেক্ষা না করে বললো,
-” মা রামিসা কোথায়?

আয়েশা আড়ালে মুচকি হেসে বললেন,
-” রামিসা এ বাসায় আর আসবে না বলেছে!ঐ বাসায় থাকবে।

নিমিষেই কায়েসের মুখশ্রী জুরে আঁধার নেমে এলো। কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেল।
.
এদিকে ফাইজা রামিসা কে অনেক বুঝিয়েও ঐ বাসায় পাঠাতে পারলো না।ফাইজা বললো,
-” কায়েস রাগের মাথায় অমন কথা বলেছে তাছাড়া রামিসা’কে ভালোবাসা বলেই দুশ্চিন্তা থেকে এসব বলেছে।যখন রাগ পরে যাবে তখন ঠিক মানিয়ে নিবে নিজেকে।

কিন্তু রামিসা এতো সহজে ভুলার পাত্রী নয়। সে ঠিক করেছে ঐ বাসায় যাবেই না।
.
রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ফাইজা আলো কে নিয়ে যেতে এলে আলো জানালো সে খাবে না খিদে নেই সে জন্য।পরে ফাইজা তাকে বোঝাতে বললো,
-” রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“রাতের আহার ত্যাগ করো না
যদিও তা এক মুঠো খেজুরও হয়। কারণ রাতের আহার ত্যাগ মানুষকে বৃদ্ধ করে দেয়”[৪]

এ কথা শুনে আলো আর দ্বিমত পোষণ না করে খেতে আসলো ফাইজার সাথে। তবে খাবার নিরবে শেষ করে রুমে চলে এলো।যা দেখে সবাই হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
.
তিন দিন পর,
কলিং বেল শুনে দরজা খুলে দিল রামিসা। দরজা খুলে যাকে দেখলো তাকে মোটেও প্রত্যাশা করেনি রামিসা।
হাতে ফলের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কায়েস। ভিতরে ঢুকে মনি কে ইশারা করলো যে কিনা এ বাসার হেল্পিং হ্যান্ড। তিনি ব্যাগ গুলো কায়েসের হাত থেকে নিয়ে কিচেনে চলে গেলেন।
রামিসা ও চলে যেতে নিলে কায়েস দ্রত হাত চেপে ধরে রামিসার।রামিসা নিজের জায়গায় স্থির থেকে গাড় গুড়িয়ে বললো,
-” ছাড়ুন আমাকে! কেন এসেছেন এখানে?যার কাছে আমার বেবির মূল্য নেই তার সাথে কথা পর্যন্ত বলতে চাই না আমি!

কায়েস সাথে সাথে রামিসা কে হেঁচকা টানে নিজের খুব কাছে নিয়ে এলো।বাম হাতে রামিসার কোমর জড়িয়ে ধরে,ডান হাতে রামিসার গাল আঁকড়ে ধরে বললো,
-” আমার উপর খুব অভিমান হয়েছে বুঝলাম সে জন্য একদম বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হবে? আমি কি তোমাকে জোর করে নিয়ে এবো’রশন করিয়ে নিতাম? অবশ্যই তোমার মতামতের বিরুদ্ধে যেতাম না আমি। তাহলে না বুঝে আমাকে শাস্তি দিচ্ছ কেন?

রামিসা নত মুখে দাঁড়িয়ে থাকে, কিছু বলার ভাষা নেই তার।সে ভেবেছিল কায়েস হয়ত জোর করবে তাকে এবো’রশন করানোর জন্য। কিন্তু সে যে ভুল ছিল এখন বুঝতে পেরে লজ্জিত হলো।

কায়েস আবারো বললো,
-” কি হলো জবাব দাও?

রামিসা মিনমিনে গলায় বললো,
-” সরি।

কায়েস ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো,
-” এখন সরি বললে তো হবে না, শা’স্তি পেতে হবে!

চমকে তাকায় রামিসা। কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী করে বললো,
-” কি শা’স্তি দিবেন আপনি?
-” ভালোবাসাময় শা’স্তি!

লজ্জায় লাল রঙা হয়ে মাথা নত করে রামিসা।
আড়ালে থেকে সবটা লক্ষ্য করলো ফাইজা!তার চোখের কোণে জমে আছে পানি!অথচ ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি ফুটে আছে। তারপর নিঃশব্দে নিজের রুমে চলে গেল।
.
তায়েস আর নূর ছাদে বসে আছে। তখন তায়েস বললো,
-” মামা,চাচা সব হয়ে যাচ্ছি।বাবা কবে হবো মিসেস নূর‌আইন?

নূর‌আইন মন খারাপ করে বললো,
-” এক বছর সময় দাও প্লিজ?
-” আচ্ছা মন খারাপ করে না। এমনি বললাম আর কি। আল্লাহ তা’আলা যেদিন চাইবেন সেদিন হবে ইনশা আল্লাহ।
.
.
আলো পিছন ফিরে শুয়ে আছে। তিন দিন যাবত এমনি চলছে। ফয়জান মনমরা হয়ে তাকিয়ে থাকে পিছন থেকে। তবে আজকে আর ভালো লাগছে না এভাবে দুরত্ব বজায় রেখে থাকতে। ইচ্ছে করছে জোর করে হলেও আলো কে কথা বলাতে তার সাথে।আর তাই আকস্মিক টানে নিজের খুব কাছে নিয়ে আসলো আলো’কে!আলো বেচারি খুব ভয় পেয়ে ইয়া আল্লাহ বলে চিৎকার করে উঠল..!
____
রেফারেন্স:
[১][আবু দাউদঃ ২৫৪০]
[২][বুখারীঃ১০৩২]
[৩][মুসলিমঃ ৮৯৮]
[৪](ইবনে মাজাহ,হাদিস:৩৩৫৫,তিরমিজি, হাদিস:১৮৫৬)
______

#চলবে ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here