শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(৩৭) #অন্তিম_পর্ব(শেষাংশ)

0
596

#শুভ্র_নীলাভ_আকাশে_মেঘের_আনাগোনা(৩৭)
#অন্তিম_পর্ব(শেষাংশ)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

ভাবী আপনি পাবলিক ভার্সিটির ছাত্রী হয়েও গৃহিণী জীবন যাপন করছেন কি করে? আপনার জায়গায় আমি হলে,এই সংসার নামক ঝামেলা চুকিয়ে অফিস আদালতে গিয়ে সম্মানের সাথে চাকরি করতাম!

উপরিউক্ত কথাটা পাশের বাসার এক ভাবী বললেন।আলো সবটা শুনে মুচকি হেসে বললো,
-” পড়াশোনা করার এক এবং একমাত্র উদ্দেশ্য হ‌ওয়া উচিৎ জ্ঞান অর্জন। আমিও জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়াশোনা করেছি।আর আপনি যে বললেন, সংসার জীবন ঝামেলা!এই ঝামেলাকে ঘিরে কিন্তু আমাদের জীবন।আমরা বাহিরে যত‌ই কাজকর্ম, সুনাম, টাকা পয়সা অর্জন করি না কেন দিন শেষে এই সংসার নামক ঝামেলা’তেই আমাদের প্রশান্তি মিলে।স্বামীর ভালবাসা, সন্তানের আম্মু বলে জরিয়ে ধরা এ এক অন্যরকম তৃপ্তি।যা চাকরির জন্য দৌড়াদৌড়িতে তৃপ্তি মিলে। সারাদিন অফিস করে, বাসায় ফিরে মাথা ব্যথা নিয়ে পরে থাকা,তখন স্বামী পায় তার অধিকার আর না সন্তান পায় তার স্নেহ,আদর। তখন সংসার উচ্ছন্নে যায়। জীবন তো একটাই সেখানে মহান রাব্বুল আলামীনের ইবাদত করে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখী হতেই বা কজন মেয়ের ভাগ্যে জুটে ভাবী? আমি আমার এ জীবন নিয়ে সুখী আলহামদুলিল্লাহ।

আলোর এমন নীরব ভাষায় মহিলার মুখে ঝা’মা ঘ’ষে গেল।তাই মুখ বাঁচাতে বললেন,
-” আচ্ছা ভাবী আজকে উঠি, কতো কাজ পরে আছে।

এই বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলেন তিনি। আলো এস এস সি তে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। তারপর ফয়জান এর সহযোগিতায় মন দিয়ে পড়াশোনা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে চান্স পেয়ে পড়াশোনা করে। তারপর পড়াশোনা শেষ করলে, ফয়জান অনুমতি দিলেও চাকরি করে না আলো। কি দরকার চাকরি করার?তার কিছুর অভাব আছে? তারচেয়ে বরং মন দিয়ে আপন মানুষ গুলো কে ভালোবেসে আগলে রাখতে পারলেই জীবন সার্থক।

আলো মুচকি হেসে রুমে যেতেই হেঁচকা টান অনুভব করলো! বরকানো মুখশ্রী করে তাকালো ফয়জান হেসে বললো,
-” তোমার এই ফেইস আমাকে বার বার গায়েল করে জানো কি তুমি?
-” বুড়ো বয়সে ভীমরতি হলো নাকি আপনার? দুই বাচ্চার বাবা ভুলে গেলেন?

ফয়জান পাংসুটে মুখশ্রী করে বললো,
-” আমাকে তোমার কোন এঙ্গেলে বুড়ো মনে হয় শুনি? এখনো আমার ছাত্রীরা আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে!

শেষাংশ কথাটা বলে জ্বীবে কামড় দেয় ফয়জান। এবার সেই তরুণ প্রজন্মের মতো করেই আলোর রাগ ভাঙাতে হবে তার এই ভেবেই চুপসে গেল ফয়জান।
এই দুই জুটির আরো একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছে।নাম তার “আয়রা”। দুই বোন বাবা মায়ের দুই নয়ন।
.
.
“রাদ শাহমাত” আকস্মিক কোথায় থেকে যেন এসে সন্দিহান দৃষ্টিতে বললো,
-” বাবা তুমি কি করছো?

হঠাৎ ছেলের এই মুহূর্তে আগমনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল কায়েস! সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে আলিঙ্গন বদ্ধ করে রেখেছিল। সেই মূহূর্তেই রাদ শাহমাত এর প্রবেশ।রামিসা মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসে। কারণ পরিস্থিতি এখন বেপাকে,কায়েস কিভাবে সামলায় তা দেখার পালা। কায়েস রামিসা কে দ্রুত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ালো।রাদ শাহমাত এখনো সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
-” বাবা আসলে তোমার বোন কে আদর করছিলাম!

রাদ শাহমাত এদিক ওদিক খুঁজেও তার বোন দেখতে না পেয়ে বললো,
-” বাবা তুমি মিথ্যা কথা বলতে শিখে গেছ?জানো না মিথ্যা কথা বলতে হয় না। একবার আমি মিথ্যা বলার কারণে তাকিয়া আমার সাথে দু’দিন কথা বলেনি। এখন যদি আমিও তোমার সাথে কথা না বলি?

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কায়েস বললো,
-” তোমার বোন আছে তো!চলো তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।

এই বলে রাদ শাহমাত কে নিয়ে গেল রামিসার কাছে।রামিসার বড়ো সড়ো পেট কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-” এখানে তোমার বোন আছে! আল্লাহ চাহেতো কিছুদিন পরেই তোমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে।

সব ভুলে রাদ শাহমাত বললো,
-” আম্মুর পেটে কি করে ও?ওকে বলো এক্ষুনি বেরিয়ে আসতে!তাকিয়া, আরিফা কেউ আমার সাথে খেলাধুলা করে না।ওরা মেয়ে মানুষ বলে নাকি আমার সাথে খেলতে নিষেধ।তাই বোন কে বলো এক্ষুনি বেরিয়ে আসতে! আমি ওর সাথে খেলবো। তখন তাকিয়া আর আরিফা দেখবে আর রুচির মতো ফুলবে!

ছেলের এমন ধারা কথা শুনে কায়েস এবং রামিসা দু’জনের অবস্থা বেগতিক। এই মুহূর্তে কি করে ছেলেকে বুঝাবে তারা যে তার বোন ভূমিষ্ট হওয়ার সময় হয়নি এখনো!
কায়েস এবং রামিসা এই দম্পতি আবারো বাবা-মা হতে চলেছে ইনশা আল্লাহ।রামিসা পড়াশোনা শেষ করে স্বামী,সন্তান পরিবারের সদস্যদের নিয়েই সুখী জীবন যাপন করছে।
.
.
সদ্য শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে ফাইজা। চুল গুলোর পানি নিয়ে তাওয়েল বেলকনিতে ছড়িয়ে দিয়ে ডিভানে আধশোয়া হয়ে বসে আছে। দৃষ্টি তার বিছানায় নিবদ্ধ।
মিরাজ ঘুমিয়ে আছে আর তার সাথে এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে ছোট্ট “মাহেরা”। মিরাজ আর ফাইজার অংশ মাহেরা।বয়স তার আট মাস নয় দিন।

শ্বাশুড়ি মা, স্বামী সন্তান নিয়ে বেশ সুখময় জীবন যাপন করছে ফাইজা। কালো অধ্যায় গুলো তার এই জীবনে ছুঁতেও পারেনি কখনো।তার একমাত্র ক্রেডিট মিরাজ এর। মিরাজ কখনো ফাইজা কে সেই ঘটনা উপলব্ধি করার সুযোগ দেয়নি।

মাহেরা ঘুমের ঘোরে গড়িয়ে পড়ে যাওয়া ধরলে ফাইজা দৌড়ে যায়।তার আগেই মিরাজ মাহেরা’র পা ধরে টেনে নিজের বুকে চেপে ধরে। খুব ভয় পেয়েছে বেচারা, আল্লাহ না করুন যদি পরে যেত কি হতো? ভাবলেই কলিজা কাঁপছে মিরাজ এর।তার সাত রাজার ধন তার মেয়ে।যার একটু অসুস্থতায় নাজেহাল অবস্থা হয় মিরাজ এর।

মিরাজ ভয় পেয়েছে বুঝতে পেরে ফাইজা পাশে বসে তার চুলে বিলি কেটে দিয়ে বললো,
-” এতো অল্পতেই ভয় পেলে হবে? পা’গল লোক একটা।
-” আমার মেয়ে ব্যথা পেলে আমারো ব্যথা লাগে। তুমি সেটা বুঝবে না।

ফাইজা বুঝলো তার কথায় অভিমান হয়েছে মিরাজ এর।তাই অল্প জায়গায় তেই নিজেও শুয়ে মিরাজ কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,সরি মেয়ের বাবা। তারপর মুখ গুঁজে রাখে।ফাইজা জানে মিরাজ তার উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না।মানুষটা তাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে। কেন যে এতো ভালোবাসে তা অজানা।
.
.
তায়েসের পোস্টিং কক্সবাজার পরেছে সে জন্য নূর কে সাথে পাঠিয়ে দিয়েছে রামিসা। এখানে একা একা স্ত্রী সন্তান ছাড়া থাকা যায় নাকি?সে জন্য। আয়েশা মাঝে মাঝে এখানে এসে ঘুরে যান।এ সপ্তাহে এসেছেন তিনি। আজকে ছুটির দিন তাই তায়েস এবং নূর সকালটা যেন কিছু মুহূর্ত একান্তে কাটাতে পারে সে জন্য আয়েশা আরিফা কে নিয়ে বাহিরে হাঁটতে বেড়িয়েছে।

নূর উঠতে নিলে তায়েস বাধা দিয়ে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখলো নূর কে। নূর ঠোঁট কামড়ে ধরে বললো,
-” কি করছো?মা আছেন সে খেয়াল আছে তোমার? এতো লেইট করে ঘুম থেকে উঠলে কি ভাববেন তিনি?
-” কিছুই না। আমার মা’কে আমি চিনি।দেখ গিয়ে মা বাসায় ই নেই।

এই বলে নূর কে শক্ত বাঁধনে আবদ্ধ করে ঘুমে বিভোর হলো। নূর তায়েসের সাথে না পেরে সেও ঘুমিয়ে পড়লো।

নূর পড়াশোনা শেষ করে অবসর ই ছিল। যখন এখানে এলো তখন তার এক ফ্রেন্ড কলেজের শিক্ষিকা হিসেবে কলেজে জয়েন করার অফার দিল।আরিফা কিছুটা বড় হ‌ওয়ায় নূর রাজি হয়ে গেল। তখন থেকেই কলেজ টিচার হিসেবে নিযুক্ত আছে। অন্যান্য দম্পতির মতো তারাও বেশ ভালো আছে, “আলহামদুলিল্লাহ”।
.
.
এ পর্যন্ত সবাই থাকলেও পরিবারের প্রিয় সদস্য গুলো আর এ দুনিয়ায় বেঁচে নেই! প্রথমে তো ফাহমিদা গত হয়েছেন তারপর একে একে রুহুল আমিন এবং শফিক মাহমুদ!আজোও তিনজন মানুষের কথা মনে হলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না তাদের সন্তান’রা।
তাছাড়া আলো তার জন্মদাত্রী পিতা মাতা কে খুব মিস করে, তাদের কথা মনে পড়লেই চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।তারা আজো মানতে নারাজ আলো কে।

? সমাপ্ত ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here