মেঘের_ছায়া (৩)

0
405

#মেঘের_ছায়া (৩)

নীল আকাশে সাদা মেঘের ছড়াছড়ি ফারার মনে এক ফালি কালো মেঘ ভেসে যাচ্ছে অবলীলায়। অনুভূতিরা অবহেলায় আজ ভেঙ্গে পড়েছে। খবরটা শুনবার পর ভেতরটা দুমড়ে মুছরে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আসফাক ভাইকে স্বামী রূপে গ্রহণ করা এ যেন আমার জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জিং।ফারার মা সে অনেকক্ষণ মেয়ের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে, সেদিকে আমার কোন খেয়াল নেই।

ফারার মা মেয়ের হাত ধরে মলিন মুখে জিজ্ঞেস করলেন , ‘ তুই কি সত্যি এ বিয়েতে রাজি?’

ফারার মা খুব ভালো করেই জানে নারী-পুরুষ কারো সম্মতি বা অনুমতি না ছাড়া অভিভাবক একজনকে অপরজনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া মোটেও ইসলামের মূলনীতি নয়।

ফারা চমকালো! আসফাকের করা অসভ্যতা মনে পড়ে ফারার বুক আর্তনাদ করে উঠল। মায়ের চোখে চোখ রেখে জোরপূর্বক হাসি হেঁসে বললো, ‘ কি যে বল মা যেখানে দাদু রাজি সেখানে আমিও রাজি। ফারার মা বেশ আগ্রহী কণ্ঠে বললেন, ‘ আসফাক নিচে বসে অপেক্ষা করছে রেডি হয়ে নে।’

ফারা ভাবলেশহীন হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ কোথায় যাবো?’

-‘ শপিংয়ে। ‘

-‘ আমি কোথাও যাবনা মা। তবে আমি উনার সাথে একবার দেখা করতে রাজি। কেননা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, ‘ যদি কেউ কোনো মহিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে চায়, তাহলে সে যেন যথাসম্ভব ঐ মহিলাকে দেখে নেয়। ( সুনানু আবু দাউদ -২০৮২)

মা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, ‘ ঠিক আছে আমি চললাম তুই আয়।’

সাদারঙের সরিষা কালার মিক্সিং একটা সাধারণ থ্রিপিস পরে মাথায় হিজাব বেঁধে নিচে নামলো ফারা। সাধারণ সাজে ফারাকে অনবদ্য এক অদম্য যুবতী রূপে চারদিক ঝলমল করে যেন উঠল। এ যেন সদ্য যৌবনে পা দেওয়া এক লাবন্যময়ী যুবতী নারী। চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে দেখলো ফারা।
পরক্ষণেই ফারা টের পেল সে ভীষণ ঘামছে। সোফায় বসে থাকা আসফাক ভাইকে দেখে তার বুকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। পা বাড়ায় এগিয়ে যেতে যেনো দু পা ধরে চেপে আছে কেউ। সামনে যেতেই দাদু হাত জড়িয়ে ধরে ফারাকে সোফায় বসিয়ে দিল।

আসফাক হালকা কেসে গলা পরিষ্কার করা ভঙ্গিতে বলল, ‘ তোমার নাতনি কে জিজ্ঞেস করো, সে কি এ বিয়েতে রাজি? ‘

সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে কারো মুখে কোন কথা নেই বেশ কিছুক্ষণ।

ফারা চোখের জল লুকিয়ে জবাবে বলল, ‘ জি আমি রাজি।’

কথাটা বলার সাথে সাথে ফারা বুঝতে পারল সেই থরথর করে কাঁপছে ভীষণ।

ফারার সাথে আসফাকের আর কোন কথা হয়নি। দাদুর সাথে কথা বলতে উনি ব্যস্ত।

নিজেকে কেমন অসহায়ের মত লাগছে ফারার কাছে।আর এক মিনিটও দেরি না করে সে দাদুর অনুমতি নিয়ে রুমে চলে আসল।

খুব ছোটখাটো ভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। কয়েকজন নিকট আত্মীয়কে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। ফারা আগেই পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছে খুব কম আয়োজনে সে বিয়ে করবে বিয়ে বান্দার জন্য এক বিশেষ নেয়ামত সুন্নতের অনুসরণে সহজ ও কম খরচের বিয়ে শান্তি ও বরকতময় হয় বলেছেন বিশ্বনবী।

ফুল সাজানো বিশাল কক্ষে খাটের ওপর বসে আছে ফারা। ফুলের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে পুরো রুম জুড়ে। বারবার করে শঙ্কায় কেঁপে উঠছে দেহ মন। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও আসফাক ভাইকে বিয়ে করতে হলো তাকে। মন থেকে সে আসফাক ভাইকে মেনে নিতে পারবে কিনা সে জানেনা, তবে চেষ্টা করবে কেননা উনি এখন স্বামী হয় ফারার। আর যাই হোক বাঙালি নারীরা মনে মনে স্বামীর জন্য আলাদা টান অনুভব করে । স্বামী নামক পবিত্র শব্দটা এখন থেকে ফারার সাথে যুক্ত। চাইলেও সে শরীয়ত মোতাবেক স্বামীকে অবহেলা করতে পারবে না। এই যে ফারার শিক্ষার এক দীক্ষিত আলো। কেননা সে আল্লাহর কাছে আগেই ওয়াদাবদ্ধ সেটা হলো, স্বামীকে মাথায় করে রাখবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসফাকের মত স্বামী যে তার ভাগ্যে জুটবে সে কখনো ভাবেনি। বোরকা পরে বিয়ে করেছে ফারা। ফুলশয্যার খাটে বসে বসে ঘামছে, গরমে দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।

ধারালো কন্ঠে কারোর আওয়াজ শুনতে পেল। ফারা সামনে তাকিয়ে দেখলো শুভ্র পায়জামা পাঞ্জাবি করা আসফাক ভাই গম্ভীর ভাব ভঙ্গি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন।

কর্কশ কণ্ঠে বলল, ‘ তোকে তো এখন থেকে আর তুই করে বলা যাবে না নয়তো মা-বাবা খারাপ ভাববে আমাকে। তাই তুমি করে বলতে হবে বাধ্য হয়ে। তা এমন প্যাকেটের মত সেজেছিস কেন বোরকাটা খুলে বস।

আসফাকের করা অপমান গায়ে মাখালো না সে। এক মুহূর্ত দেরি না করে বোরখাটা খুলে শাড়িটা ঠিকঠাক করে দাঁড়িয়ে রইল।

আসফাক শক্ত কণ্ঠে বললো, ‘তুমি যদি ভেবে থাকো, তোমাকে কোলে করে খাটে বসাবো তারপর বাসর রাত উদযাপন করব তাহলে এ হবে মস্ত ভুল ধারণা। আমি তোমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হইনি বাবা-মা এবং দাদুর কথা ভেবে বিয়ে করেছি। নয়তো তোমার মত এমন আনকালচার, আনম্যাচিউরড মেয়েকেই বিয়ে করার জন্য লাফানোর মত আসফাক চৌধুরী নয়।’

আসফাকের সব কথা এতক্ষণ খুব বেশি একটা খারাপ না লাগলেও লাস্ট কথাটা শুনে ভেঙ্গে পড়ল ফারা।

আসফাক আবারো উচ্চ বাক্যে বলল,
‘ আর ইউ ক্লিয়ার! আমেরিকা একটা মেয়ের সাথে আমি রিলেশনে আছি অতএব তোমার সাথে ফুলশয্যা করা কল্পনাতেও নয়।’

আসফাকের কথা শুনে ফারার মাথা ঝিমঝিম করছে চোখে ঝাপসা দেখছে সে। চারপাশ যেন তার পৃথিবী ঘূর্ণায়মান দন্ডে ঘুরছিল। ছলছল চোখে তাকালো ফারা। চোখ পরল আসফাকের দিকে।
ফারার বুক কেঁপে উঠল অজানা কঠিন ব্যথায়। চোখ নামিয়ে নিল বুকভরা আর্তনাদে। বিছানায় ছড়ানো সব ফুল ঝেড়ে নিল।
মৃদু কন্ঠে আসফাককে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘ ভয় পাবেন না আমি আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বো না, আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ুন।’

আসফাক পোশাক পাল্টে ঘুমিয়ে পরলো নিশ্চিন্তে যেনো কিছুই হয়নি।

এই রাতের সাক্ষী হয়ে থাকলো দু’টি হৃদয় আর দূর আকাশের একফালি চাঁদ।

চলবে–
আফরিন ইভা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here