#মেঘের_ছায়া (৫)
কাটগড়ার অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে রেখেছে ফারা। কয়েক সেকেন্ড সে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার অন্তরাত্মা থর থরিয়ে কাঁপতে লাগলো। সত্যিই কি তার স্বামী আসফাক বিদেশে কোন নারীর সাথে পরকীয়া করছে এক মনে জিজ্ঞেস করলে আরেক মনে উত্তর আসে, করতেও পারে কেননা আমাদের দেশের এবং পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাছাড়া আসফাকের জীবনের বেশি সময় আমেরিকায় কেটেছে। উনিও হয়তো পশ্চিমাদের পছন্দ, অ*শ্লী*লতা নিজের মধ্যে আয়ত্ত করে ফেলেছেন।’
চিঠিটা হঠাৎ কেউ কেড়ে নিল। ফারা
ছল ছল চোখে তাকিয়ে দেখলো,
‘ আশফাক চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে, কপালে ভাঁজ পরেছে।’
আসফাকের তাকানোর এমন ভাব ভঙ্গি দেখে ফারার কলিজা মুছরে উঠলো। ফারার ইচ্ছে করছে আসফাককে একবার খুব গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে বলতে, ‘ যা হবার হয়েছে আমি সেগুলো ভুলে যেতে চাই। বান্দা যখন মহাপাপ করেও মহান রবের কাছে তওবা করে মহান রব তখন খুশি হয়ে তার বান্দাকে আপন করে নেয়; আমিও সব ভুলে গিয়ে নতুন করে আপনাকে ভালবাসতে চাই নতুন করে আবিষ্কার করতে চাই আপনাকে।’
নিজের স্বামী অন্য কারো সঙ্গে পরকীয়া লিপ্ত থাকা তা মোটেও কোন সুস্থ মস্তিষ্কের স্ত্রী মেনে নেবেন না।
আসফাক মুখ কালো করে বলল,’ এই চিঠি আমি লিজের জন্য লিখেছি আগে বাংলা লিখে প্র্যাকটিস করলাম যাতে করে ভুল না হয়, পরবর্তী তে ইংরেজিতে ঠিক করে নেব।’
আসফাক দেখতে পেল ফারা কাঁদছে।
আসফাক সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে ফারার হাত ধরে বলল,’ আমার ধমকে তুই কি খুব কষ্ট পেয়েছিস?’
ফারার মন চাইছে আসফাক তার চোখের জল আদরের আবেশে মুছিয়ে দিক।ফারার যতই কষ্ট হোক না কেন সব এক নিমিষেই বিলীন হয়ে যেতো। ফারার ইচ্ছে করছে হাত ধরে বলতে, যে করেই হোক আপনি ওই বিদেশী মেয়েকে ভুলে যান না! মহান রব কে ভালোবেসে সকল গোনাহকে দূরে ঠেলে আমরা এক হয়ে যাই কিন্তু এই মুহূর্তে সে কিছুই বলতে পারবেনা কান্নায় তার গলা জড়িয়ে আসছে। যেকোনো সময় সে সেন্সলেস হয়ে যেতে পারে। তবে সে মনে মনে পণ করে নিল স্ত্রী হিসেবে সে যতটুকু পারে চেষ্টা করবে তার স্বামীকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে এবার এতে নিজের যত কষ্টই হোক।
ফারা একবার ফুফুর বাসায় বেড়াতে এসে একটা ড্রাগন ফল গাছ লাগিয়েছিল। বাগানে গাছটা অনেকগুলো ডাল ছেলে সবগুলো ফুল গাছকে পাত্তা না দিয়ে রাজার ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। বারান্দা থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে গাছের নতুন ফুলও এসেছে। এই প্রথম গাছের ফুলগুলোকে কাঁটার নেয় মনে হচ্ছে কিন্তু আসলে ফুলগুলো হাত দিয়ে স্পর্শ করে কাঁটাহীন মনে হয়। আসলে কল্পনায় অনেক কিছু স্পষ্ট মনে হলেও বাস্তবে তা অন্যরকম। ফল শেষ হয়ে গেলে আবারও নতুন করে ফুল থেকে ফল হবে ঠিক তেমনি ফারাও নিজেকে আস্তে আস্তে মানিয়ে নিবে নয়তো আসফাকের জীবন থেকে দূরে চলে যাবে। ফাইনালি সে ভেবে নিলো, তার স্বামীকে আর কোন গুনাহে জড়াতে দিবে না। আসফাক যদি চায় লিজকে বিয়ে করতে তাতেও ফারা রাজি। কেননা ইসলামে একজন পুরুষের বউ থাকা সত্ত্বেও একাধিক বিয়ের অনুমতি রয়েছে। মানুষ হিসেবে হয়তো ফারার কষ্ট হবে কিন্তু যেখানে মহান রব অনুমতি দিয়েছেন সেখানে পাড়ার আপত্তি থাকবার কোন প্রশ্নই যুক্তিতে আসে না। স্ত্রী হিসেবে ভালোবাসাকে অবৈধ পন্থায় উপলব্ধি করবার সুযোগ করে দিতে পারে না। তাই সে ঠিক করল আসফাকের ভালোলাগা ভালোবাসাকে যেহেতু সে প্রায়োরিটি দিতে চায় তাহলে আসফাকের সাথে লিজ কে বিয়ে দেওয়াটাই উত্তম হবে বলে মনে করছে। ফারা নিজেকে কঠিন করে অশ্রুজল মুছে সামনে এগিয়ে চলল।
আসফাক হতবাক ফারার কর্মকাণ্ডে।ফারা আসফাকের হাত চেপে ধরে বললো,
‘ আপনি কি সত্যি লিজকে ভালোবাসেন?’
আসফাস সিরিয়াসলি মুডে বললো, ‘ হুম! তাঁর সাথেই বেশিরভাগ সময় আমি কাটিয়েছি এবং তাকে সবসময় সামনে চাই। তাকে না দেখতে পেয়ে আমার কেমন জানি ভালো লাগছে না।’
ফারা ভেজা চোখে আসফাকের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার স্বামীর চোখে অন্যনারীর জন্য আলাদা কিছু দেখতে পাচ্ছে সে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকিয়ে ফারা আসফাককে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ মহান আল্লাহ তাআ’লা পবিত্র কোরআনে বলেনঃ তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ। (সূরা বনী ইসরাঈল -৩২)
পরকীয়া কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে বিবাহিত নারী-পুরুষ যদি জিনায় লিপ্ত হয় তাদের জন্য ইসলামের রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।
ফারা আসফাকের গালে এই প্রথম স্পর্শ করলো।নিজের শরীরে আলাদা ভালো লাগা কাজ করলো, দেহ মন কেঁপে উঠলো। ফারা এই প্রথম কোনো পুরুষ মানুষের এতো কাছে এসেছে, তাও আসফাক নিজের স্বামী বলে সকল দ্বিধা ভুলে এতোটা কাছে আসতে পেরেছে।
ফারা বললো, ‘ আমি চাই আপনি আমেরিকা গিয়ে লিজকে বিয়ে করে দেশে নিয়ে আসেন বা আমেরিকায় সেটেন হোন।’
ফারার কথা শুনে আসফাককে বেশ খুশি দেখালো।
আশফাক উৎফুল্ল মনে ফারাকে বলল,
‘ সত্যি ফারা তুই অনেক ভালো একজন মানুষ এই বলে উনি ফারাকে জড়িয়ে ধরল।’
ফারার মন হুহু করে কেঁদে উঠলো আসফাকের কথায়। আসফাক এই প্রথম ফারার ভালো দেখলো। ফারা ভাবছে,
-‘সময়টা যদি আজ এখানেই থেমে যেত পাখিরা সব সুখের গান গাইতো আর তার আসফাক যদি তাকে এভাবেই সারা জীবন ভালবাসত! ঠিক যেমনটি একজন স্বামী তার স্ত্রীকে প্রকৃত ভালোবাসে, যেখানে থাকবে না কোন ছলনা, থাকবে না কোন মিথ্যে, আর থাকবে না কোন কলহ।’
আসফাক ফারাকে ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেঁসে বললো, ‘ তোকে জড়িয়ে ধরাতে তুই কিছু মনে করিসনি তো?’
ফারা তো মনে মনে অনেক কিছুই ভেবেছে কিন্তু আসফাকের কাছে তা প্রকাশ করেনি।
আসফাক মুচকি হেঁসে ফারার কাছ থেকে দূরে সরে বললো, ‘ আমি টিকেট কাটার ব্যবস্থা করছি।’
এই বলে তিনি চললেন।
চলবে–
(আফরিন ইভা)