#চন্দ্ররাতের_মায়া,০৩,০৪
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
০৩
– মা বিষ খেয়েছে মানে?কি বলছো তুমি ভাবী?
– হ্যা, সত্যিই মা বিষ খেয়েছে। বাবা এখনি ফোন করে বললো।
– মা এখন কোথায়?
– বাবা বললো এখানে নিয়ে আসছে।
– ভাবী আমি আর পারছি না।এইদিকে এই চিন্তা আবার ওদিকে মা এরকম একটা কাজ করে বসলো।আমি পাগল হয়ে যাবো ভাবী,আমি পাগল হয়ে যাবো
– তুমি চিন্তা করোনা।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি দেখি ওরা এখন কোথায়।তুমি ডাক্তারের সাথে কথা বলো
– চলো আমিও যাবো।
ডাক্তারের রুম থেকে বেড় হতেই ডাক্তার বললো,”মিঃতীব্র, আপনার স্ত্রীকে অপারেশন করাতে হবে খুব শীঘ্রই। সেটার বিষয়ে বলে যান”। তীব্র মাথা ঘুরিয়ে শুধু বললো ” যদি অপারেশন করা লাগে তাহলে করুন।আমার স্ত্রীর যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।আর হ্যা,আমি আসার পর তবেই করবেন”।
বলেই রুম থেকে বেড় হয়ে গেলো।বেড় হতেই তীব্রর বাবা শেখর চৌধুরীর সাথে মুখোমুখি দেখা।তীব্র মূহুর্তেই বললো
– বাবা, মা কোথায়?
– এতো অস্থির হওয়ার কিছু নেই তীব্র। তোমার মা’কে ওটিতে নিয়ে গেছে।তেমন বিষক্রিয়া ছড়াতে পারেনি।ওই মহিলা কি খেয়েছে শুনতে চাও?
– কি খেয়েছে?
– গত পরশুদিন আমি যে আরশোলা মারার বিষ এনেছিলাম সেটা খেয়েছে।একটু মুখে ঢেলে দিতেই আমি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই।তারপর এখানে নিয়ে আসলাম।গাধা মহিলা
ভাবি- কিন্তু মা বিষ কেন খেতে গেলো?
বাবা-কেন আবার।আমার বিপক্ষে চলতে হবে না? আমি ভাবলাম পরিবারে অশুভ ছায়া নেমে এসছে।একটা পূর্ণ্যর কাজ করা দরকার।অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম প্রাইমারি স্কুলের পাশে যে পুকুরটা আছে,ওটা ভরাট করে ওখানে একটা বৃদ্ধাশ্রম তুলে দিবো।
ভাবি- এজন্যই বিষ খেলো?
বাবা- হ্যা।গাধা মহিলা বলে কিনা কোনো বৃদ্ধাশ্রম হবে না।এভাবে দু,এক কথা হতে হতে সে বিষ খেয়ে নিলো।এসব বাদ দাও।বৌ’মার কি খবর তীব্র?
– বাবা ডাক্তার বলেছে ওর অপারেশন করাতে হবে যত তারাতাড়ি সম্ভব। সেই বিষয়েই কথা বলছিলাম তখন ভাবী এসে বললো মা বিষ খেয়েছে।
– এখন যাও ডাক্তারের সাথে কথা বলো তুমি।আমি এদিকে আছি।
তীব্র কিছুটা চিন্তামুক্ত হয়ে পুনরায় ডাক্তারের ঘরে গেলো।দরজায় কড়া নাড়তেই ডাক্তার সাহেব একটা বইয়ে চোখ রেখেই বললো ” ইয়েস কাম ”
– ডাক্তার সাহেব,অপারেশনটা কি এখনি করাবেন?
– হুম,যত সময় যাবে ব্যাপারটা তত জটিল হবে।বাই দ্যা ওয়ে।আপনার স্ত্রীর রিপোর্টটা এসে গেছে।ওনার পেটে টিউমার হয়েছে।তাও একটা না,দু দুইটা।রীতিমতো সেগুলা অনেক বৃহদাকার ধারন করেছে।এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
তীব্র ডাক্তারের কথা শুনে তীব্র চমকে উঠলো। নন্দিতার পেটের টিউমারকে এতোদিন নিজের সন্তান ভেবে রেখেছিলো সে।অজান্তেই চোখের কোন বেয়ে অশ্রু গাল বেয়ে মাটিতে পড়লো।হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে করুন স্বরে বললো-
– নন্দিতার পেটে দু,দুটো টিউমার?
– হুম
– হায় রে ভাগ্যর পরিহাস।আমরা ভেবে বসলাম
– আমার একটা কথা বিশ্বাস হচ্ছে না মিঃতীব্র।এতে বড় ভুল আপনারা করলেন কিভাবে? সন্তান গর্ভে ধারনের ব্যাপারটা আর টিউমার ধারনের ব্যাপারটা তো একই না।এই পার্থক্যটুকু কি মিস নন্দিতা বুঝতে পারেনি?
– আমি জানিনা ডাক্তার সাহেব।
– সেসব বাদ দিন।হিউম্যান নিউরন অনেক পাওয়ারফুল একটা জিনিস বুঝলেন। আপনি যদি দৃঢ় ভাবে ভেবে বসে থাকেন যে আপনার ডান হাত অবশ হয়ে আছে।তাহলে দেখবেন আপনি সত্যিই হাত নাড়াতে পারছেন না।আমার মতে মিস নন্দিতার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।মানষিক ভাবে তিনি দূর্বলচিত্তের।চা খাবেন?
– না, চা খাবো না।আপনারা তাহলে অপারেশনের ব্যাবস্থ করুন।
– হুম
– ডাক্তার, আমার স্ত্রীর কি কোনো সমস্যা হবে? আই মিন সে সুস্থ হবে তো?
– হ্যা,আমরা আশাবাদী। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে।
– আমি তাহলে আসি।
-হ্যা আসুন।আর কাউন্টারে পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা করুন।আমরা ব্যাবস্থা করছি
– জ্বি আচ্ছা
বলেই রুম থেকে বেড় হয়ে আসলো তীব্র।নন্দিতার কাছে যেতেই দেখলো সেখানে বাবা,ভাইয়া,ভাবী সবাই। ওদের দেখে নিজের মনে কিছুটা সস্তির আভাস ফুটে উঠলো।মৃদু স্বরে সবার উদ্দেশ্য বললো-
– বাবা,ভাইয়া,ভাবী তোমরা একটু বাইরে যাবে প্লিজ?আমার কিছু কথা ছিলো
ভাবী- হ্যা বলো বলো।আমরা বাইরেই আছি।
সবাই বাইরে গেলে তীব্র নন্দিতার কাছে বসলো।পর কপালে হাত বুলিয়ে দিলো।কপালে একটা ভালোবাসার ছোঁয়া একে দিয়ে কাছাকাছি বসলো।নন্দিতা তীব্রর গালে আলতো ভাবে হাত রেখে করুন স্বরে বললো
– তুমি খেয়েছো? সকাল থেকে কিছুই খাওনি তাই না? এভাবে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বা।
– আমি সুস্থই আছি নন্দিতা।শুধু তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো প্লিজ
বলেই নন্দিতাকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে তীব্র। তার ধৈর্য্যর বাধ ভেঙ্গে গেছে।নন্দিতা ওর চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বললো
– এই পাগল,কি হয়েছে? কাঁদছো কেনো?
– তোমাকে অনেক ভালোবাসি গো,তোমার কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারবো না।মরে যাবো আমি।
তীব্রর এরুপ আচরনে নন্দিতার চোখে জল চলে এলো।সে মৃদু স্বরে তীব্রর কানে কানে বললো
– একবার যখন হাত ধরেছি,তখন মরনের আগ পর্যন্ত ছাড়বো না।তুমি শুধু এভাবেই আমায় ভালোবেসো।
এখন বাজে দুপুর বারোটা।নন্দিতাকে অপারেশন করানোর জন্য ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।তীব্র এক মূহুর্ত স্থির নেই।এখানে,ওখানে পায়চারি করছে আর বিড়বিড় করে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছে।শেখর চৌধুরী বসে আছে চিন্তিত গম্ভীর মুখ নিয়ে।তিনি গালে হাত রেখেই তীব্রকে বললো
– তোমার ভাই,ভাবী কোথায় তীব্র? দেখতে পাচ্ছি না যে
– বাবা ওরা বাসায় গেছে।মাঝরাত থেকে ভাবীর ঘুম হয়নি। মাথা ধরেছে।তাই ভাইয়াকে বলে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
– ও আচ্ছা। তুমি খেয়েছো?
– হুম
– মিথ্যে বলো কেন,যাও কিছু খেয়ে এসো নিচ থেকে।আমি আছি এখানে,কিছু প্রয়োজন হলে তোমায় ডেকে নিবো
-আমি থাকি না বাবা। খাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই।নন্দিতার ভালোয় ভালোয় অপারেশনটা হলেই হয়
ছেলের এই ভালোবাসায় শেখর চৌধুরী মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলেন।মনে মনে ভাবলেন,ছেলেটা দায়িত্ব নিতে শিখে গেছে।
__________
ডাক্তার সিহাব অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন শুরু করে দিয়েছে।তার একটা আলাদা ফোন থাকে সাথে সবসময়। খুবই প্রয়োজন না হলে সেই ফোনে ফোন দেয় না কেউ।এই নাম্বারটাও সবার কাছে নেই।তার খুব কাছের পরিচিত এবং হসপিটালের কিছু স্টাফের কাছে নাম্বারটা দেওয়া আছে।বারবার করে বারন করা আছে,সেই নাম্বারে ফোন দেওয়ার কারনটা হবে মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ।কেননা সেই নাম্বারে ফোন দিলে ডাঃ সিহাবকে ধরতেই হবে। সেই মিনি ফোনটা পকেটে বাজতে থাকলো।
ডাঃসিহাব সাইডে এসে রিসিভ করতেই একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসলো-
– কেমন আছেন ডাঃসিহাব?
– কুশল বিনিময় না করে কাজের কথা বলুন
– আপনি এখন আমার হাতের পুতুল ডাঃ সিহাব।
– রসিকতা করছেন?ফোন রাখুন।আমি এখন থিয়েটারে আছি।রসিকতার জন্য পরে দেখে নিবো আপনাকে।রাবিশ ওম্যান
বলে ফোনটা কেটে দিয়ে পকেটে রাখতেই টুং করে একটা মেসেজের আওয়াজ আসলো।ওপেন করতেই দেখলো একটা ভিডিও। ভিডিওটা ওপেন করতেই ডাঃ সিহাব চমকে উঠলেন।সারা শরীর ঘামতে শুরু করে।যে নাম্বারে ফোন এসেছিলো সেই নাম্বারে ডাঃসিহাব ফোন করলো।ওপাশ থেকে ধরতেই অট্টহাসির আওয়াজ ভেসে এলো
– কি মিঃসিহাব।ভয় পেয়ে গেলেন?
– কি চান আপনি?
– তেমন কিছুই না।এখন যে অপারেশনটা করছেন সেখানে হাল্কা একটা কাজ করতে হবে
– কি কাজ
– আর কোনোদিন ও যেন নন্দিতা মা হতে না পারে,সেই ব্যাবস্থা করবেন আপনি
– কিহ? কি বলছেন এসব?একজন ডাক্তার হয়ে এসব আমি কখনোই করবো না।
– না করলে আমি কি করতে পারি,দেখাবো সেটা?
– নাহ্ প্লিজ,আমার মেয়েকে কিছু করবেন না।আমি করবো,যা বলবেন তাই করবে আমার মেয়েকে ছেড়ে দিন প্লিজ।
চলবে?
#চন্দ্ররাতের_মায়া [৪]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
– আপনারা যা বলবেন আমি তাই করবো,আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি করবেন না প্লিজ
– গুড।এমন ব্যাবস্থা করবেন যেনো নন্দিতা আর কখনোই মা হতে না পারে।আর যদি এর বেতিক্রম করেছেন তো নিজের মেয়ের মুখের বাবা ডাক শুনতে পারবেন না। গট ইট।
– আমি করবো।যা বলবেন তাই করবো।আপনারা আগে আমার মেয়েকে ছেড়ে দিন
– হা হা হা,যা বলেছি সেটা করবি,তা না করে তোর মুখে এতো কথা ফুটছে কেন?
তখনই ডাঃসিহাব ফোনের অপর পাশ থেকে চিৎকারের আওয়াজ পায়।এটা যে তার আদুরে মেয়ের গলা সেটা বুঝায় অভিপ্রায় রইলো না।ডাঃসিহাব আকুতি-মিনতি করতে লাগলো-
– প্লিজ এরকম করবেন না।আমি আর কিছু বলবো না।
– গুড।কাজ শেষে তোর মেয়ে ঠিকি বাড়িতে পৌঁছে যাবে।
টুট টুট শব্দ করে ফোনটা কেটে গেলো।ডাঃসিহাবের সারা শরীর কাঁপতে লাগলো। এটা কিভাবে করবে সে? এর মতো বড় পাপ যে আর হয় না।কিন্তু নিজের মেয়েকে বাঁচাতে এটা তাকে করতেই হবে।একরাশ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে অপারেশনটা শেষ করলো।নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানালো।আজ তার জন্য একটা মেয়ে মা ডাক শুনতে পারলো না,একটা ছেলে বাবা হতে পারলো না,বাবা ডাক শুনতে পারলো না।বাবা,মা ডাক শুনার মতো এতো সুন্দর অনুভূতি সে নিজের হাতে কেটে ফেললো।এই পাপ কিভাবে খেয়া করবে? এর শাস্তি যে তাকে পেতেই হবে।শুধু অপেক্ষা।
অপারেশন শেষে নন্দিতার মায়াবী মুখখানা দেখে ডাঃসিহাব নিজেকে আর ক্ষমা করতে পারলো না।অজ্ঞানরত নন্দিতার পা ছুঁয়ে বললো
– আমি অন্যায় করেছি আপনার সাথে।মাতৃসত্তাকে আমি শেষ করে দিয়েছি।একটা মেয়ের জীবনে সব থেকে বড় পাওয়া হলো সন্তানের মুখে মা ডাক শুনা।আমি সেই পথ আজ নিজ হাতে বন্ধ করে দিয়েছি।আমার কোনো ক্ষমা নেই।আমার কোনো ক্ষমা নেই।
কয়েক ফোঁটা অশ্রু গাল বেয়ে নন্দিতার পায়ের ওপর পড়লো।ডাঃসিহাব স্বাভাবিক হয়ে অ্যাফ্রোন দিয়ে বেড় হতেই দেখলো তীব্র দরজার সামনে দারিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে দারিয়ে আছে।তাকে দেখতে পেয়েই তীব্র বললো
– ডাঃ আমার স্ত্রী কেমন আছে?ও ঠিক আছে তো?
– আপনি চিন্তা করবেন না মিঃতীব্র। উনি একদম ঠিক আছে।এখন ঘুমাচ্ছে।ওনাকে এখন ডিস্টার্ব না করলেই ভালো হয়।
– ডাঃ আমি কি দেখতে পারি? আমি কোনো কথা বলবো না শুধু দেখবো
– হুম।
নন্দিতাকে দেখার অনুমতি পেয়ে যেনো তীব্রর ভেতর খুশির বাঁধ ভেঙ্গেছে। সে এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে ওটির ভেতরে গেলো।দূর থেকেই নন্দিতাকে দেখে চোখের জল বিসর্জন দিয়ে বাহিরে বেড় হয়ে আসে।বেড় হয়ে দেখে সামনের ওয়েটিং চেয়ার গুলিতে ভাবী বসে আছে। তীব্রকে দেখে সে বললো
– তীব্র, মা এখন সুস্থ।ডাক্তার রিলিজ করে দিয়েছে।দ্রুত ডাক্তারের কাছে আনায় তেমন বিষক্রিয়া ছড়াতে পারেনি। বাবা,মা নিচে আছে।তুমি ওনাদের নিয়ে বাড়িতে যাও,বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।সারারাত ঘুমাও নি।তোমার ঘুম দরকার
– আমি যাবো না ভাবী।নন্দিতা জেগে উঠলে আমায় না পেলে মন খারাপ করবে।
– ডাক্তার বলেছে ১২ ঘন্টার আগে ওর ঘুম ভাঙ্গবে না।এতক্ষণ করবা কি? বরং তুমি যাও,আমি আছি এখানে।আসার সময় রহিমের মা কে বলে স্যুপ নিয়ে আসিও।নন্দিতাকে এখন বাইরের খাবার খাওয়ানো যাবে না।
– ভাবী, তোমাকে কি বলে যে কৃতজ্ঞতা জানাবো
– এইই,আমি কি বাইরের কেউ নাকি হ্যা? এখন যাও তো।তেমাকে দেখে আমার হিংসা হয়,নন্দিতাকে কত্ত ভালোবাসো।আর আমারটাকে দেখো, সারাদিন ওয়েব সিরিজ,নাটকের শুটিং করতেই যায়।
– আচ্ছা ভাবী আমি আসি থাহলে।তুমি খেয়াল রেখো।
তীব্র নিচে আসতেই দেখলো তার বাবা শেখর চৌধুরী,মা রামেয়া চৌধুরী দারিয়ে আছে।তীব্র দৌড়ে গিয়ে তার মাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।আর অভিমানী সুরে বলে ” তুমি এমনটা কেন করলে মা,আমার কথা মনে পড়লো না? তোমাদের কিছু হলে আমি যে সহ্য করতে পারিনা”। ছেলের এরুপ মায়াবী ভালোবাসার সুর শুনে রামেয়া চৌধুরীর চোখে জল চলে এলো।
বাড়িতে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে তীব্র নাশতার জন্য নিচে আসলো।সকাল থেকে কিছুই পেটে যায়নি তীব্রর।সে নিচে এসে ডাইনিং টেবিল থেকে একটা আপেলে কামড় দিয়ে খাবার আনতে বললো।শেখর চৌধুরী খবরের কাগজ হাতে নিয়ে তীব্রর সাথেই টেয়ায়টায় বসলেন।খবরের কাগজ টেবিলে ঠাস করে রেখে তীব্রকে বলতে লাগলো
– দেশটার কি হচ্ছে দিন দিন? ছেলে-মেয়েরা নিজেদের বাবা-মাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে? তাহলে এই শিক্ষা দিয়ে করবেটা কি? যদি বৃদ্ধ বাবা মায়ের যায়গা না দিতে পারে,তেমন ছেলের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।পাষাণ হয়ে গেছে সবাই
– বাবা,তুমি এসব নিয়ে খেবে কিছু করতে পারবে?শুধু শুধু মাথা গরম করছো।
– করবো,আমাকে কিছু একটা করতেই হবে
– কি করবে শুনি?
– শোন তীব্র,আমাদের পুকুরটা ভরাট করে সেখানে বৃদ্ধাশ্রম করে দিতে কেমন হয়? কত অসহায় বাপ-মায়ের যায়গা হবে সেখানে ভাবো একবার?
– বাবা, তোমায় নিয়ে আমার গর্ব হয়।তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা।মানুষের জন্য এতোকিছু করেও তোমার শান্তি নেই।এই বয়সেও তুমি অন্যর কথা ভাবছো।
– ভাবতে হয় রে বাপ।সৃষ্টিকর্তা দিয়েছে, সেগুলো ভালো কাজে না লাগালে তাকে যে অপমান করা হবে
– আচ্ছা বাবা মা কোথায়,? এসব শুনে আবার বিষ খেয়ে বসলে কি করবে? হাহাহহা
– গাধা মহিলাকে জানাবো না।কথাটা আমাদের মধ্যে থাকবে,ওকে? ( ডান হাতটা তীব্রর দিকে এগিয়ে দিয়ে)
– ওকে।
– আরেকটা কাজ করো ঝটপট।ওই গাধা মহিলা আসার আগেই। তোমার বড় ভাইয়ার রুম থেকে লকারে রাখা দলিলটা নিয়ে আসো,দেখি ওখানে কতটুকু যায়গা আছে।
– ঘরে তো কেউ নেই।ভাবী হসপিটালে।ভাইয়া নতুন নাটকের শুটিং করতে ব্যাস্ত।না বলে যাওয়াটা কেমন দেখায় না বাবা?
– ধুর,বড় ভাইয়ের ঘরে যাবে,সেখাবে এতো ভাবার কি আছে, যাও নিয়ে এসো।
তীব্র তার ভাইয়ার ঘরের দিকে গেলো।দরজা লক করা নেই।দরজাটা সামান্য আটকে রাখা।দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে লকারটা খুললো।এই লকারের একটা পিন আছে।যেটা শুধু শেখড় চৌধুরী, তীব্র আর তার ভাইয়া জানে।আর কেউ জানেনা। লকারটা খুলতেই সেখানে অনেক কাগজের মধ্যে সেই পুকুরের দলিলটা খুজতে বেশ সময় লেগে গেলো।অবশেষে খোঁজা খুজি শেষে দলিলটা পাওয়া গেলো।দলিলটা হাতে নিয়েই দলিলের ভাজ থেকে একটা পেনড্রাইভ ফ্লোরে পড়ে গেলো।
আরেহ? লকারের মধ্যে এই পেনড্রাইভটা কেন? এটাতো ভাইয়ার কম্পিউটারের সাথে থাকে সবসময়। এখানে তার করা শুটিং এর ভিডিওগুলি রেখে দেয়।এটা এখানে থাকার কথা নয় তো।
তীব্রর মনে একটু খটকা লাগলো।পেনড্রাইভে কি আছে সেটা দেখার প্রবল ইচ্ছে জাগলো।আবার অন্যর জিনিস দেখা কেমন এটা ভেবেও পিছুপা হচ্ছে। কিন্তু না মনকে মানাতে এর ভেতরে এমন কি আছে সেটা দেখতেই হবে।নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে,নইলে লকারে রাখার তো কারন নেই।
দলিলগুলি বিছানায় রেখে তীব্র ওর ভাইয়ার কম্পিউটার ওপেন করলো।কম্পিউটারে কোনো পাসওয়ার্ড দেওয়া নেই।পাসওয়ার্ড না দেওয়ার কারন হলো ভাইয়া পাসওয়ার্ড মনে রাখতে পারেনা।যাইহোক,পিসিতে পেনড্রাইভটা ঢুকিয়ে ভেতরে থাকা ফাইলে যেতেই তীব্র একটা ভিডিও পায়।পেনড্রাইভে শুধু একটা ভিডিও দেখে তীব্রর খটকাটা বেড়ে যায়।ভিডিওটা ওপেন করতেই যা দেখতে পেলো সেটা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।চোখ বড় বড় করে মনিটরের দিকে চেয়ে রইলো। ভাইয়ার পেনড্রাইভে এই ভিডিও কিভাবে??
চলবে?