চন্দ্ররাতের_মায়া,০৫,০৬

0
866

#চন্দ্ররাতের_মায়া,০৫,০৬
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
০৫

পেনড্রাইভটা কম্পিউটারে ওপেন করতেই দেখলাম হাত, পা বাধা একটা বাচ্চা মেয়ে চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায়।ভাইয়া বাচ্চা মেয়েটার মাথায় বন্দুক তাক করে ধরে আছে।বাচ্চা মেয়েটার চোখ বাঁধা,ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।ভাইয়ার মধ্যে কোনো মমতা লক্ষ্য করছি না।ভাইয়াকে এরুপ হিংস্র রুপে কখনো দেখিনি আমি।ভিডিওর সাথে সাউন্ড কানে ভেসে এলো

– যা বলছি সেটা কর,নইলে তোর মেয়েকে আজীবন ঘুম পাড়াতে দুই বার ভাববো না।

ভাইয়া এসব কি বলছে?যে ভাইয়া একটা তেলাপোকা দেখলে ভয়ে আড়াল হয়ে থাকে,বাড়িতে থাকা বিড়ালগুলিকে নিজে না খেয়ে সেই ভাত ওদের খাওয়ায়,এতোটাই কোমল স্বভাব,সে কি না এসব বলছে? তাও এতো ফুটফুটে একটা বাচ্চা মেয়েকে বেঁধে রেখে? কে এই মেয়ে? ভাইয়া কি কোনো দূর্নীতিতে যুক্ত হচ্ছে?

এসব ভাবতে ভাবতে নিচ থেকে শেখর চৌধুরী তীব্র তীব্র বলে ডাকতে লাগলেন।তীব্র তরিঘরি করে পেনড্রাইভটা আবার লকারে রেখে লকারটা বন্ধ করে নিচে আসলো।শেখর চৌধুরী তীব্রকে বললো

– এই কাগজ আনতে এতোক্ষন লাগে?

– বাবা অনেক কাগজের ভিড়ে খুজতে দেরি হয়ে গেলো।

-আচ্ছা দাও।

তীব্র হাত বাড়িতে দলিলটা দিলো।শরীর খারাপের অজুহাত দিয়ে ওখান থেকে রুমে চলে আসলো।বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলো,”মাথায় অনেক প্যাচ জমা হয়েছে।এগুলা ছুটানো খুব দরকার”।ভাবতে ভাবতেই সে ঘুমে তলিয়ে গেলো

ঘুম ভাঙলো বিকেলে।ঘুমের মাঝে ধরফর করে উঠে চশমটা চোখে দিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমে গেলো।ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে কাজের বুয়াকে স্যুপ বানাতে বলে ডাইনিং টেবিলে বসে অপেক্ষা করতে থাকলো।

বারবার ঘড়িতে সময় দেখছে তীব্র। “রহিমের মা,তারাতারি করো,সময় নেই ” বলে কয়েকবার চিল্লাচিল্লি করে মাথায় হাত রেখে বসে রইলো।তখনই লক্ষ্য করলো মিহির ভাইয়া সদর দরজা খুলে হাতে ক্যামেরায় কিছু একটা গভীর আগ্রহে দেখতে দেখতে লাগলো হেলেদুলে হাটছে।এক পা এগুচ্ছে, তারপর থামছে,আবার এগুচ্ছে এভাবেই নিজের মতো আসছে।মিহির ভাইয়ার উদ্দেশ্য তীব্র বললো

-ভাইয়া,আজকাল শুটিং নিয়ে অনেক ব্যাস্ত মনে হচ্ছে?

– হ্যা রে,প্রচুর কাজ।নতুন একটা ওয়েব সিরিজ বানাচ্ছি।নাম শুনেই তুই পাগল হয়ে যাবি।

– নাম শুনতে চাচ্ছি না।পাগল হওয়ার ইচ্ছে নেই

– আরে শোন,অনেক ইন্টারেস্টিং সিরিজ।সিরিজের নাম ” কিডন্যাপারের পেটে ইঁদুরের বিষ “।নামটা কেমন লাগলো?

– অনেক ইন্টারেস্টিং নাম।ভাইয়া তোমায় একটা কথা বলার ছিলো

– কি কথা?

– না মানে আমার মনে হচ্ছে তাই বললাম,কিছু মনে করবে না প্লিজ

– মনে করার মতো কি আর বলবি,বলে ফেল

– তুমি অনৈতিক কোনো কাজে লিপ্ত হচ্ছো না তো?

– কি বলতে চাচ্ছিস তুই তীব্র

ক্যামেরার থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো ভাইয়া।আমি স্বাভাবিক স্বরেই বললাম-

– দেখো ভাইয়া,আমি এতোটা ভেঙ্গে বলতে পারছি না।বাবার কথাটা মাথায় রেখে কাজ করিও।বাবার অপমান হবে এমন কাজ করবে না এটা আমার বিশ্বাস।

– আম..আম..আমি কিছু করিনি,আমায় এসব কেন বলছিস,? আমি তো কিছুই করিনি

– তোমার ঘরে লকারের মধ্যে পেনড্রাইভে একটা ভিডিও পেয়েছি আমি।একটা বাচ্চা মেয়ের মাথায় বন্দুক তাক করে রেখেছে কাউকে হুমকি দিচ্ছো।

– হ্যা,ওটাতো আমার শুটিং ছিলো।কিডনাফ করে মুক্তিপণ চাইবে,শেষে ইঁদুরের বিষ খেয়ে মারা যাবে এটাই আমার নতুন সিরিজটার কনসেপ্ট।অভিনয় কেউ করতে পারছে না।তাই আমি দেখিয়ে দিয়েছিলাম কিভাবে করতে হয়।

– ওহহ আচ্ছা,সরি ভাইয়া।আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো অন্যায় পথে চলছো।তাই তো বলি,আমার ভাইয়ার মতো ভালো মানুষ একটাও নাই অভিনয় জগতে।

ভাইয়া মুচকি হেসে ক্যামেরায় চোখ দিয়ে নিজের রুমে গেলো।নিজের কাছে নিজেই লজ্জিতবোধ হচ্ছে। সত্যিই তো,ভাইয়া শুটিংয়ের অনেক কনসেপ্ট রেকর্ড করে রাখতেই পারে। সেটা দেখে ভাইয়াকে সন্দেহ করা ঠিক হয়নি।এসব ভাবতে ভাবতে কাজের বুয়া স্যুপটা টিফিনবাক্সে করে দিলো।বক্সটা হাতে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হবো তখনি মা সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে এসে বললেন

– তীব্র

– হ্যা মা,তোমার শরীরের অবস্থা কেমন? নিচে আসতে গেলে কেন?

– আমার আর শরীর।কই যাচ্ছিস?

– হসপিটালে যাচ্ছি মা

– ওই অপয়া মেয়েকে দেখতে?

– মা কিসব বলছো তুমি

– নয় তো কি? অপয়া না হলে তিন তিন বার পর্ভপাত হয়?

– এসব এখন থাক মা,আমি আসি

– দ্বারা,আমার একটা কথা আছে

– হুম বলো

– আমার,তোর বাবার তো বয়স হয়েছে,আমাদের তো ইচ্ছে করে নাতি নাতনির মুখ দেখতে? তাদের সাথে খেলা করতে,তাদের আদর করতে,বল মন চায় না?

– হ্যা

– তোর বড় ভাইয়া তার ও কোনো সন্তান নাই।এখন শেষ ভরসা তুই

– এসব নিয়ে পড়ে কথা বলি মা,এখন…

– না রে,বলতে দে আমায়।জানিস তোর বাবা রাতে ঘুমায় না এসব ভেবে।সারাক্ষণ ছটফট করে।পারে না বলতে,পারে না সইতে।বুড়ো বাপ,মার দিকে তাকিয়ে তোর কিছু একটা করা দরকার আছে কি না?

– কি করতে বলছো তোমরা বলো

– তুই আরেকটা বিয়ে কর বাবা।আমি জানি তুই নন্দিতাকে অনেক ভালোবাসিস, কিন্তু একটা সন্তান তো প্রয়োজন তাই না? আমাদের ইচ্ছের কথা বাদ দে।তোর নিজেরও তো ইচ্ছে করে বাবা ডাক শুনতে।আমাদের কথাটা একটু শোন বাবা,আরেকটা বিয়ে করে নে।

তীব্রর কাছে এই বিষয়ে কোনো উত্তর নেই।সে মাথা নিচু করে চোখের কোনে অশ্রু নিয়ে প্রস্থান করলো।এরুপ প্রশ্ন উঠলেই সে নিরব থাকে।ইচ্ছে করে দূর কোথাও চলে যেতে। যেখানে তার থাকবে না কোনো পিছুটান।





এরপর কেটে গেলো দুইটি বছর।তীব্র লক্ষ্য করলো নন্দিতা এখন তাকে আর আগের মতো সময় দেয় না।অফিস থেকে বাসায় আসলে সে আর অধির আগ্রহে বসে থাকে না।রাতে বেশিরভাগ সময় ই কোনো কারন ছাড়াই সোফায় গিয়ে ঘুমায়।আগের মতো কথাও বলে না।এরকম আচরণ তিলে তিলে তীব্রকে জ্বালিয়ে দেয়।

অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই দেখলো নন্দিতা আয়নার সামনে বসে চুল আচরাচ্ছে।তীব্র মনে শয়তানটা ভর করে বসলো।টাওয়ানটা ঘাড়ে রেখে পেছন থেকে নন্দিতাকে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে গাঢ় একটা চুমু খায়।কোমড় থেকে তীব্রর হাতটা নন্দিতার পেটে স্পর্শ করলো।নন্দিতা কেঁপে উঠলো।মুহুর্তেই নন্দিতাকে কোলে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।তীব্রর সারা শরীর নন্দিতার ওপর।নন্দিতার নড়াচড়া করার মতো কোনো অবস্থা নেই।তীব্র ওর হাত দিয়ে নন্দিতার হাত দুটো শক্ত করে ধরে ঠোঁট গাঢ় চুমু খেতে থাকে।নন্দিতা ছটফট করছে,কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।তীব্র ইচ্ছে করেই নন্দিতার ঠোঁটে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।নন্দিতা ব্যাথায় শুধু উহু উহু করতে থাকে।ঘাড় থেকে চুলগুলি সরিয়ে ঘাড়ে নাক ডুবাতেই নন্দিতা একটা ঝটকা দিয়ে তীব্রকে সরিয়ে দেয়।তীব্র এবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।কশিয়ে একটা চড় মেরে বসলো নন্দিতর গালে।চড়ের তাল সামলেতে না পেরে সোফায় ধপ করে পড়ে যায়।তীব্র ওর কাছে গিয়ে গালে চাপ দিয়ে বললো

– কি সমস্যা কি তোমার? এভাবে এড়িয়ে চলো কেন আমায়? যখনি আদর করতে চাই তখনি এভাবে সরিয়ে দিচ্ছো।কেন?

– তীব্র গাল ছাড়ো,আমার লাগছে।আর কত বার বলবো আমার ভালোলাগে না এসব।

– ভালোলাগে না মানে কি? কি ভালো লাগে তোর? এখন আমার স্পর্শ ভালোলাগেনা? অন্য কাউকে পেয়েছিস নাকি? যে আমার স্পর্শ এখন আর ভালোলাগে না।অনেক সহ্য করেছি,আর না।

বলেই তীব্র নন্দিতাকে সোফায় ধাক্কা দিয়ে হনহন করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।বেড়িয়ে যেতেই কেউ একজন তীব্রর হাত ধরে টেনে স্টোর রুমে নিয়ে গেলো।তীব্র কিছু বোঝার আগেই নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে তীব্রকে চেপে ধরেই তীব্রর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়,সে নিজের হাত দিয়ে তীব্রর হাত শক্ত করে ধরে তার তল’পেটে স্পর্শ করায়।তীব্রর শরীরে শিহরণ জেগে উঠলো।

চলবে?

#চন্দ্ররাতের_মায়া [৬]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

তীব্র নন্দিতাকে সোফায় ধাক্কা দিয়ে হনহন করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।বেড়িয়ে যেতেই কেউ একজন তীব্রর হাত ধরে টেনে স্টোর রুমে নিয়ে গেলো।তীব্র কিছু বোঝার আগেই নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে তীব্রকে চেপে ধরেই তীব্রর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়,সে নিজের হাত দিয়ে তীব্রর হাত শক্ত করে ধরে তার তল’পেটে স্পর্শ করায়।তীব্রর শরীরে শিহরণ জেগে উঠলো।

অন্ধকার ঘরে জানালা দিয়ে চাঁদের আলো প্রবেশ করছে।তীব্র মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।চাঁদের আলোয় আবছা আবছা তার মুখ দৃশ্যমান হতেই তীব্র হতভম্ব হয়ে যায়।মেয়েটি আর কেউ নয়,তার নিজের ভাবী।তীব্র রেগেমেগে বলে

– এটা কিরকম অসভ্যতামি ভাবী?

– তীব্র,আমি নিরুপায় হয়ে এটা করতে বাধ্য হচ্ছি।

– বাধ্য মানে,কি বলতে চাচ্ছো?

– হুম,কি করবো বলো,তোমার ভাইয়ার আমার জন্য সময় কোথায়,সেতো সারাদিন পড়ে থাকে শুটিং নিয়ে।আমার নিজেরও তো চাহিদা আছে,তাই না

– ভাবী চুপ করো,এাব বলার মানে কি, তুমি কিন্তু ভুলে গেছো আমি তোমার দেবর

– দেবরের আগে, আমি তোমার প্রেমিকা,কি ছিলাম না প্রেমিকা?

ভাবীর মুখে এরুপ কথা শুনে তীব্র চুপ করে রইলো।ভাবী বলতে লাগলো

– মনে পড়ে সেই দিনগুলির কথা? যখন আমরা হাতে হাত রেখে রিক্সায় ঘুরেছি,রাস্তায় রাস্তায় হেটেছি,তুমি আদর করে চুলে বেলী ফুলের মালা দিয়ে দিতে?

– এসব কথা এখন কেনো তুলছো?

– তুলছি কারন তোমার জন্য আমি আজ ভালো নেই,আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছো তুমি,

– আমি কি করেছি?

– কি করেছো? হাহহাহা,ভুলে গেছো সব তাইনা? বউ বানাবে বলে ছিলে,সেখানে…

– ভাবী চুপ করো প্লিজ।এখন এগুলো বলে কি বুঝাতে চাইছো?

– তীব্র, আমার আবদার তুমি আমাকে একটা সন্তানের সুখ দেবে

কথাটা শুনে তীব্রর সারা শরীর হিরহির করতে লাগলো।মনে হতে লাগলো কষে কয়েকটা চড় মারতে।তীব্র কখনো তাকে খারাপ নজরে দেখেনি।হ্যা হতে পারে একসময় সে তার প্রেমিকা ছিলো,কথার ছলে হাতটুকু ধরতে ইতস্ততবোধ হতো তীব্রর।সে নন্দিতাকে ছাড়া আর কাউকে নিয়ে কখনো এসব স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা

– আমার ইচ্ছে করছে তোমার গালে ঠাসঠাস করে কষে চড় মারতে, শুধু বড় ভাবী হও এজন্য কিছু বলতে পারছি না

– তুমি যাই করো,প্লিজ আমার অবস্থাটা একবার ভেবে দেখো।তোমার যেমন বাবা না হতে পারার কষ্ট হয়,তেমনি তো আমারো ইচ্ছে করে মা হতে,মা ডাক শুনতে।আমি কথা দিচ্ছি এসব আমাদের নিজেদের মধ্যেই থাকবে।কেউ কিচ্ছু জানবে না।

তীব্র এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।ঠাস করে একটা চড় মেরে স্টোর রুম থেকে বেড় হয়ে আসলো।বেড় হয়ে সামনে নন্দিতাকে দেখতে পেয়ে তীব্র চরমভাবে একটা ধাক্কা খেলো।মনে হচ্ছে সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তীব্র তলিয়ে যাচ্ছে তলন সমুদ্রে।নন্দিতা চোখের কোনে অশ্রু নিয়ে চোখ লাল করে কাঠ দারিয়ে আছে।তীব্র আমতা আমতা করতে বললো

– নন..নন..নন্দিতা,তু..তু..তুমি এখানে

– এসেতো অন্যায় করে ফেলছি বোধহয়।তাই না মিঃতীব্র

– নন্দিতা তেমন কিছুই নয়,যেমনটা তুমি ভাবছো

– আমার ভাবার কিছু বাকি নেই।বিশ্বাস করেছিলাম তোমায়,সেটার এই মূল্য? বাহ্

– নন্দিতা আমার কথা শুনো (নন্দিতার কাছে এগিয়ে যেতে যেতে)

– আমার কাছে আসবে না, একদম আসবে না।চরিত্রহীন পুরুষ। লজ্জা করলো না এসব করতে? তাও বড় ভাবীর সাথে,,ওহহ সরি উনিতো তোমার ভাবী না,পুরোনো প্রেমিক। প্রেম জেগেছে মনে,তা যাও না যা করছিলো তা করো না

– আমার কথা একটু শু..

– স্টোপ।আই সে স্টপ।ভূল ভেবেছিলাম আমি,ভেবেছিলাম কেউ আমার পাশে থাকুক না থাকুক তুমি থাকবে,কিন্তু এই সময়টাও যে দেখতে হবে,,,আমি আর থাকবো না,এল মূহুর্ত থাকবো না বাড়িতে

– নন্দিতা আমায় একটা সুযোগ দাও বলার

কথাটা বলতেই ভাবী মিহি সুরে কান্না করতে করতে ঘর থেকে বেড় হলো।তীব্র তাকালে যা দেখতে পায় সেটা সে কখনো ভাবতে পারেনি।

ভাবীর শরীরে শাড়ীটা নেই।পরনে ব্লাউজ আর পেডিকোট।ব্লাউজটাও বুকের অংশে ছেঁড়া।চোখের কাজল লেপ্টে সারা গাল হয়ে আছে।তীব্র এমন অবস্থা দেখে নিজের চোখ ভাবীর ওপর থেকে সরিয়ে নিলো।নন্দিতা রেগেমেগে নিজের রুমে চলে গেলো।তীব্রর বলার মতো কিছুই রইলো না।ভাবীকে শুধু বললো ” কাজটা তুমি মোটেও ঠিক করোনি,এর মাশুল তোমায় গুলতেই হবে”। উত্তরে ভাবী বললো ” সোজা আঙ্গুলে যখন ঘি উঠলোই না তখন না হয় আঙুল বাঁকালাম,দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়,আমার জীবনতো এমনিতেও নরক হয়ে গেছে।তুমি শান্তিতে থাকো কিভাবে সেটাও দেখবো।”

তীব্র রুমে এসে দেখলো নন্দিতা শুধু ফোনটা,আর ছোট্ট একটা ব্যাগে নিয়ে রুম থেকে বেড় হচ্ছে। তীব্র আটকাতে গেলে নন্দিতা অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তীব্রর ওপর।যে দৃষ্টিতে রয়েছে এক সাগর ঘৃনা,রাগ,অভিমানে ভর্তি।তীব্র কিছু বলতে পারলো না।

নিচে শেখর চৌধুরী খবরের কাগজ পড়ছে আর চা খাচ্ছে। নন্দিতার হাতে ব্যাগ নিয়ে নামতে দেখে তিনি বললেন

– কোথাও যাচ্ছো বউমা?

– জ্বি বাবা ( ব্যাগটা ফ্লোরে ধপাস করে রেখে দিয়ে সালাম করতে করতে বললো)

– আরে থাক থাক, সুখী হও।কিন্তু এতো রাত্রে কোথায় যাচ্ছো?

– এ বাড়িতে আমার দিন শেষ বাবা।এই বাড়ির কাউকে তো কোনোদিন আপন করতে পারিনি। রাত জাগবেন না বাবা।আসি

– বউমা এসবের মানে কি?দারাও আ….

– প্লিজ বাবা আমায় আটকাবেন না।আমি আপনার কথা রাখতে পারবো না।

শেখর চৌধুরী আর আটকালেন না।স্বামী,স্ত্রীর ঝগড়া হয়,তাদের মাঝেও হয়।নন্দিতা রেগে বাবার বাড়িতে গেলে তীব্র নিয়ে আসে।বরাবর এমনটাই হয়।তাই শেখর চৌধুরী তেমন জোর করলেন না।

সারারাত তীব্র নেশায় কাটালো। একটার পর একটা সিগারেটের প্যাকেট শেষ করে।ঘরের মেঝেতে প্যাকেটগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।নন্দিতার প্রতি তার ভালোবাসার কমতি ছিলো না কখনো,তবুও নন্দিতা তার কথা না শুনেই এরকম করবে এটা তীব্র কখনো ভাবে নি।পরোক্ষণে নিজেই নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,নন্দিতাতো ঠিকি করেছে। নিজের স্বামীকে এরুপ অবস্থায় দেখলে কোনো স্ত্রীই ভালোভাবে নিবে না সেটা।কাল সকালে ওর রাগ ভাঙ্গিয়ে নিয়ে নিয়ে আসবে,এসব ভাবতে ভাবতেইফ্লোরেই ভোর রাতে ঘুমিয়ে গেছে।

ঘুম ভাঙ্গলো চেচামেচিতে।বাইরে বেড় হয়ে দেখতে পেলো সারা বাড়ি সাজানো হচ্ছে। মুহূর্তেই তীব্রর সারা শরীর ঝাঁকি দিয়ে উঠলো।মনে পড়ে গেলো কাল রাতের কথা।ভাবী কি আবার কোনো ফাঁদ পেতেছে তাকে বিপদে ফেলার জন্য?এসব ভাবতে ভাবতে নিচে নামলো তীব্র।

পেছন ফিরতেই ভাবী তীব্রকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় চোখ টিপে মুচকি হাসলো।তীব্র শক্ত করে তার হাত ধরে সাইডে নিয়ে গিয়ে বললো

– কি হচ্ছে বাড়িতে? সাজানো হচ্ছে কেন?তুমি কোনো ঝামেলা করলে কিন্তু

– আরেহ কুল, কুল।আমি কি করতে পারি সেটাতো এখনো দেখাইনি তোমায়,এখন দেখাবো।রেডি থাকো।আমার ওপর দেওয়া প্রতিটি কষ্টের হিসেব আমি নিবো।

– এখন বুঝেছি, আমার আগের দুই সন্তান নষ্ট হওয়ার পেছনে তোমার কারসাজি আছে।তোমায় আমি ছাড়বো না, (কটকটে গলায় বললো)

– ছিহ্, এতোটা নিচ ভাবনা তোমার?কিভাবে ভাবলে তুমি?যে কিনা পৃথিবীর আলোই দেখেনি তার ওপর আমি প্রতিশোধ নিবো?

– সেটা তুমিই ভালো জানো

নিচ থেকে রাবেয়া চৌধুরী চেচিয়ে ডাকতে লাগলেন ” তীব্র, এই তীব্র, দেখে যা কে এসেছে।বড় বউমা দেখে যাও কে এসেছে,আমার ঘরের লক্ষী এসছে”

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here