#ডেভিল,16,17
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
[16]
পিছন থকে আমায় জরিয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো
এই সবগুলা কাপর আমার পিচ্চি বউটার, জানো আমি যখন নিজের জন্য কিছু কিনতে যেতাম তখন যে শাড়িটা আমার পছন্দ হতো সেটাই কিনে রাখতাম
উমমম বুঝলাম।এখন ছাড়েন
কেন? কোথায় যাবা? আর কোথাও যেতে দিবো না তোমায়।সারাজীবন এভাবে জরিয়ে ধরে থাকবো
আচ্ছা ঠিক আছে, আমি চেঞ্জ করবো আর আপনি জরিয়ে ধরেই থাকেন, আচ্ছা?
ঠিক আছে
ওইই কি ঠিক আছে হুম? আমি চেঞ্জ করবো আর আপনি জরিয়ে ধরে থাকবেন? সরম লজ্জা বলতে কি কিছু নেই
সমস্যা কি? আমি আমার বউকে জরিয়ে ধরবো এতে সরমের কি আছে?
ইসসস রে, শখ কতো
আর আমার সব শখ তুমি পুরন করবা বুঝলা
ওনার কাছ থেকে ছাড়িয়ে ওয়াসরুমে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নেওয়ার জন্য।ওয়াসরুমের আয়নায় নিজেকে দেখছি।কাল অব্দি আমি অামার নিজের বাড়িতে ছিলাম,আর আজ আমি কারো স্ত্রী,কারো বউমা,কারো ভাবি।সময়ের ব্যাবধানে কতোকিছু পাল্টে গেলো।বাপির কথা খুব মনে পড়ছে।খুব মিস করছি বাপিকে।কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে নিতেই দেখি টাওয়ালটা আনিনি।এই রে! এবার কি হবে? টাওয়ালটাতো আনতে ভুলেই গেছি।ও মাই গড! শাড়িটাও তো আনিনি।এই লোকটার জন্য সব ভুলে গেছি।এখন কি করবো।ওনাকে ডেকে টাওয়ালটা দিতে বলবো? নাহ্ এটা ঠিক হবে না।ওয়াসরুমের দরজাটা আস্তে করে খুলে দেখিতো উনি আছে কি না,না থাকলে এক দৌড়ে গিয়ে নিয়ে আসবো।
কই ঘরে তো ওনাকে দেখতে পাচ্ছি না। তার মানে উনি বাহিরে গেছে মনে হয়।ওই তো বিছানায় টাওয়ালটা,যাই চট করে নিয়ে আসি।ওয়ান,টু,থ্রি বলে দিলাম এক দৌড়, তারাতারি টাওয়ালটা নিয়ে আবার ওয়াসরুমে আসলাম।মনে হচ্ছে বিশ্বযুদ্ধ জয় করে এসছি।কাপরটা আনতে পারিনি কারন কাপরটা।ড্রপে রাখা আছে।টাওয়ালটা দিয়ে সারা শরীর পেচিয়ে নিলাম।
কাপর বেড় করতেই চোখ পড়লো সোফায় রাখা ওনার সাদা টি-শার্টটার।টি-শার্টটা হাতে নিতেই সেই পারফিউম এর সুগন্ধ পাচ্ছি, উফফ পাগল হয়ে যাবো এবার মনে হচ্ছে। আচ্ছা এটা পড়লে কেমন হয়? রাতে তো আর কেউ দেখতে আসবে না নতুন বউ কি পড়ে আছে।ওনাকেও তো দেখতে পাচ্ছি না, এটাই পরি।এরপর ওনার টি-শার্টটা পরে আয়নার সামনে দারিলাম।
ও মাই গড নেহা! তোকে কি কিউট লাগছেরে! নিজের ওপর নিজেই ক্রাস খাচ্ছি। নিজের চুল দিয়ে গোফ বানাচ্ছি,দাড়ি বানাচ্ছি এমন সময় ওনার আগমনে আমি অনেকটাই ভয় পেয়ে গেলাম
আরেহ এটা কি পড়ছো তুমি?আমার টি-শার্ট পড়ছো কেন
কেন আপনারটা কি আমি পড়তে পারি না?
হুম কেনো পারোনা তবে একটু ভুল ভাবে পড়েছো দারাও আমি ঠিক করে দিচ্ছি (মুচকি হেসে আমার দিকে এগোতে এগোতে বললো)
এই না,না বলছি,আমি নিজেই ঠিক করছি ন….
কে শোনে কার কথা! উনার নিশ্বাস অনুভব করতে পারছি এতেটাই কাছে এসেছেন,বুকে হালকা চিনচিন করছে।ভয়ে চোখ বন্ধ করলাম।উনি আমার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নিলেন। এখন আমি যেন অন্য কোনো নেশার ঘোরে। আমিও রেসপন্স দিলাম।কিছুক্ষণ পর নেশার ঘোর কাটিয়ে ওনাকে সরিয়ে দিলাম।
খুব লজ্জা করছে, ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে। লজ্জায় বিছানার এক পাশে বসে আছি।উনি হাতে খাবার নিয়ে আমার সামনে বসলেন
এই নাও হা করো
আমার খিদে নেই
কেন? একটু আগেই তে বললে খুব খিদে পেয়েছে
এখন পাচ্ছে না
ও বুঝতে পেরেছি
ওইই শয়তান পোলা আপনি যেটা ভাবছেন সেটা না
তাহলে খিদে নেই কেন?
ধুর,আপনার লজ্জা বলতে কি সত্যিই কিছু নেই,আচ্ছা দিন আমি নিজে হাতে খাচ্ছি
নো ওয়ে,
কেন?
আমি খাইয়ে দিবো।শুধু আজ নয়, আজ থেকে আমি তোমায় সবসময় খাইয়ে দিবো
আমি কি পিচ্চি নাকি
হুম,আমার পিচ্চি
উহু আমি অনেক বড় হু
এখন এই বিরিয়ানি খাবা নাকি কিস খ…
এই না না,হা করছি তো দেন
এইতো আমার পিচ্চি বউটা, বড় করে হা করো
উনি আমায় খাইয়ে দেওয়ার পর কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিলেন।
ঘড়ে ডিম লাইট জ্বলছে। আমি শুয়ে আছি তবে সেটা বালিশে নয়,ওনার বুকে।উনি আমায় জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে।ওনার জরিয়ে ধরাকে অনেক বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে।
আচ্ছা আপনায় একটা কথা বলি
হুম বলো
আমায় ছেড়ে কখনো চলে যাবেন না তো
কক্ষনও না পাগলি।সবসময় এভাবে জরিয়ে ধরে থাকবো
আই লাভ ইউ
(নিশ্চুপ)
ওই আই লাভ ইউ বলছি তো
তো কি হইছে?
কি হইছে মানে? আপনি এবার আই লাভ ইউ টু বলেন
এই নাও(আমার কপালে একটা ভালবাসার ছোয়া দিয়ে)
এবার খুশি?
খুব,আই লাভ ইউ
হুম এখন ঘুমিয়ে পড়ো
ঘুমাবো মানে?
ঘুমাবা মানে ঘুমাবা
আজ তো আমাদের বাসর রাত
তো?
না কিছু না।
ধুর কি লোকরে বাবা,বাসর রাতে বউকে ঘুমোতে বলছে।ভাল্লাগেনা।মন যারা করে ওপাস হয়ে চোখ বন্ধ করে আছি। কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম উনি আমার জরিয়ে ধরলেন।আমার ওনার দিকে করে নিয়ে ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দিলেন। আর আমরা হারিয়ে গেলাম ভালোবাসার এক অজানা রাজ্যে।
এই যে, শুনছেন,শুনুন না,কয়টা বাজে খেয়াল আছে?
উমম আরেকটু ঘুমাবো এখন যাও
হুম তা তো ঘুমাবেন ই,আমার ঘুৃম নষ্ট করে আরামে ঘুমানো হচ্ছে তাই না।দারান মজা দেখাচ্ছি
আয়ায়ায়া
হাহাহাহাহাহা (ওনার ঠোঁটে একটা কামর দিলাম)
কি করলে এটা ব্যাথা পাইছি তো
ব্যাথা পাওয়ার জন্যই তো কামরেছি
তবে রে, দেখাচ্ছি মজা
বলেই আমার কোমর জরিয়ে ধরলেন।
রাতে অনেক জ্বালাইছেন,এখন ছাড়েন তো
না ছাড়বো না
নিচে আন্টি ডাকছে
আন্টি মানে? মা বলে ডাকো
আস্তে আস্তে হয়ে যাবে।এখন প্লিজ ছাড়েন নিচে খাবার রেডি হইছে,আপনায় ডাকতে এসছি
তোমায় কি আটকে রেখেছি?
আটকেই তো রেখেছেন
চাবিতো তোমার কাছে,খুলে ফেলো
আচ্ছা পড়ে দিবো এখন ছাড়ুন না
না,আগে দাও
বাধ্য হয়ে ওনাকে একটা কিস করে নিচে চলে আসলাম।নিচে আসতেই
চলবে.?
#ডেভিল
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
[17]
নিচে এসে সকালের নাশতা করলাম।এখন ঘরে কাপর গোছাচ্ছি হঠাৎ কি যেন খুজতে ড্রয়ারটা খুললাম,খুলতেই সেখানে কিছু চিরকুট ছিল,সাথে কয়েকটা কার্ড।আরে এই কার্ডেই তো আমার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ছিল সেই লোকটা।কার্ডগুলা এখনো আমার কাছে আছে।এমনকি ওই চিরকুট গুলাও রেখেছি।জন্মদিনের দেওয়া কার্ডের সাথে মিলিয়ে দেখলাম।একদম সেম টু সেম,এই কার্ডগুলার ওপর লিখেই তো আমায় শুভেচ্ছা জানিয়ে ছিল। এ কার্ডগুলা এখানে আসলো কিভাবে?ওখানে আর কি কি আছে সেগুলা খুজতে লাগলাম। আরেহ এটা তো একটা মুখোশ, এই মুখোশটা পড়েই তো!
তার মানে কি ওই লোকটা উনি ? নাহ্ তা কি করে সম্ভব,উনি চুপিচুপি এরকম কেনো করতে যাবে।কিছুই বুজতে পারছি না।তখন উনি বাসায় ছিলো না। ওনার বন্ধুদের সাথে গেছে।রাতে আসবে বলেছে।তাই সব প্রশ্নের উত্তর রাতে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করলাম।
রাত আটটা বেজে গেলো এখনো উনার আসার কোনো নাম নেই। বারবার ফোন করছি কিন্তু ফোন বন্ধ। আমার টেনশন আরো বেড়ে গেলো।বেলকনিতে দারিয়ে আছি এমন সময় গাড়ির হর্ন শুনলাম।তার মানে উনি এসে গেছে। এরপর ওনাকে খেতে দিলাম,উনি নিজে আর আমাকেও খাইয়ে দিলেন।যদিও আমি না করেছিলাম।
এখন বাজে রাত ১১টা।উনি বিছানায় বসে গেম খেলছে। আমি একটা সাওয়ার নিয়ে ভেজা চুল আয়নায় সামনে গিয়ে মুছতেছি।মাথায় আমার সে প্রশ্নগুলা এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে।আর ভাবতে পারছিনা, এবার বলেই ফেলি
এই যে শুনুন
হুম বলো
গেম খেলা বাদ দিন,আমি একটা কথা জিগ্যেস করবো
হুম করো আমি শুনছি
না,মনোযোগ না দিলে বলবো না
আচ্ছা ঠিক আছে। বলো
এই কার্ডগুলা এখানে কেন? (কার্ডগুলা দেখিয়ে বললাম)
ও ওগুলা নীলার জন্মদিনে কিনেছিলাম এ কয়টা বেশি হয়েছিলো তাই রেখে দিয়েছি
ওও,আর এই মুখোশটা?
এটা কোথায় পেলে
সেটা বড় কথা নয়,এটা দিয়ে কি করেন আপনি?
আমি জোকারের ওপর একটু বেশি ইন্টারেস্টিং,তাই মুখোশটা কিনেছিলাম, কিন্তু এগুলা আমায় বলছো কেন?
তার মানে আমি যা ভাবছি সেটাই ঠিক
কি ভাবছো?
না কিছু না,
উনি এখন সব বলবেন না বুঝতে পারছি।তাই আর কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়লাম।একটু পর উনি আমায় জরিয়ে ধরলো।ওনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।
আমি জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,আচ্ছা ঠিক আছে,সত্যিটা বলেই দিই
মানে?
মানেটা হলো সেই লোকটা আমি ছিলাম
আপনি ছিলেন? কিন্তু কেন? কেনো আসতেন এতো রাতে?
কি করবো বলো,তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করতো,তাই তো ছুটে চলে যেতাম তোমায় দেখতে
তা না হয় বুঝলাম।আচ্ছা এটা বলুন তো আমার জন্মদিনের সেই সারা ঘরে বেলুন দিয়ে আপনি সাজিয়েছেন? গিফটটা আপনি দিয়েছিলেন?
হুম
আর সেদিন কলেজে যে আদনানের সাথে পার্কে গিয়েছিলাম ওখান থেকে ওকে আপনি নি..
হুম।তোমার দিকে কেউ তাকালেই আমার সহ্য হতো না,সেখানে ও তোমায় নিয়ে পার্কে গিয়েছিল এটা কি করে মেনে নিতাম,তাই জয়কে বলে ওকে কিডনাফ করেছিলাম।
ও মাই গড! আপনি এতো
তো কি করতাম? ইচ্ছে করছিলো ওখানেই ওকে মেরে ফেলতে, শুধু মাত্র জয়ের কথায় ওকে একটা চান্স দিয়েছিলাম।কিন্তু সেদিন যখন ও আমায় কিডনাফ করলো তারপর আর মাফ করতে পারিনি ডিরেক্ট
আপনার যাকে ভালো লাগবে না তাকেই এভাবে।আমি ভাবতেই পারছি না
কি করবো বলো,একটু বেশিই ভালোবাসি।যাই হোক আর কিছু জানার আছে?
হুম,আপনি আড়াল থেকে কেনো এসব করলেন?
সেটা না হয় না জানাই থাক
আপনি যান,আমি রাগ করছি
কেনো? কি হলো আবার?
কি হবে মানে?বুঝলাম আপনি আমায় দেখতে এসছিলেন কিন্তু কিস কেনো করেছিলেন
তোমার ওই গোলাপি ঠোঁট গুলার জন্যই তো করছি।যখন যেতাম তখন তোমার ঠোঁট বলতো ওর নাকি অক্সিজেনের অভাব হচ্ছে তাই আমি অক্সিজেন দিতাম।আমি কি ভুল করেছিলাম? তুমিই বলো
এতোদিন আপনি অক্সিজেন দিছেন আমি চুপচাপ নিছি,আর আজ আমি দিবো আপনি নেবেন বুঝলেন।
বলে ওনার ওপর ঝাপিয়ে পড়লাম।ওনার ঠোঁট আমার ঠোঁটের দখলে নিয়ে নিলাম।হারিয়ে গেলাম ভালোবাসার সমুদ্রে।যেখান থেকে চাইলেও ফিরতে পারবো না,আর ফিরতে চাই ও না।
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হচ্ছে।দরজার শব্দে নীলকে ছেড়ে নিজেকে সামলে নিয়ে নেহা দরজা খুলতেই ৫ জন পুলিশকে দেখে ভয়ে দুকদম পিছিয়ে যায়।ওদের সামনে যিনি দারিয়ে আছে সে গম্ভীর গলায় বললো
‘মিঃ নীল,চলুন’
‘কোথায় যাবে ও? কি করেছে নীল?’ নেহা বললো
‘উনার নামে খুনের অভিযোগ আছে।আদনান নামের একজনকে উনি খুন করেছে।তদন্ত চলছে।আপাতত ওনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে’
কথাগুলি যেনো নেহার বুকে বুলেটের মতো বাঁধলো।অজানা ভয়ে হুহু করে কেঁদে ফেললো।নীল কিছু না বলে শার্টটা গায়ে দিয়ে তাদের সাথে নিচে নামলো।নীলের বাবা রেগেমেগে নিজের মান সম্মান হারানোর ক্ষোপে যেনো ফেটে পড়ছে।তিনি চুপ করে সোফায় বসে আছে কনুই য়ে ভর করে।নীলের মা নীলকে জরিয়ে কান্না করছে।নেহা দারিয়ে আছে হতবাক হয়ে।বর্তমান তার কিছুই করার নেই।
হাতে হাতকড়া পড়িয়ে অফিসার নিয়ে যাচ্ছে নীলকে।সবার চোখে হতাশার ছাপ।বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে।নেহা শেষ বারের মতো নীলের সাথে কথা বললো
‘তোমায় কতবার বলেছি এসব মারপিট না করতে,এখন কি হলো দেখছো?আমি কিভাবে থাকবো তোমায় ছাড়া?বাবা-মা সবাই কতোটা কষ্ট পাচ্ছেন দেখছো তুমি?’
‘চিন্তা করোনা নেহা।আমি ফিরে আসবো।এসব জেল আমায় আটকে রাখতে পারবে না।তুমি বাবা,মায়ের খেয়াল রেখো’
‘আমি পারছি না, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।তোমার যদি কিছু হয়ে যায় আমি বাঁচবো না নীল,আমি বাঁচবো না’
বলে নীলকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেললো নেহা।নেহাকে শান্তনা দিয়ে নীলকে নিয়ে অফিসার জিপে তুললো।নীল যাওয়ার সময় শুধু একটা কথা বললো।আমায় মাফ করে দিও।
নীলের মা ছেলের চিন্তায় প্রায় আধমরা হয়ে বিছানার পড়ে আছেন।স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে তাকে।নেহা বাকরুদ্ধ হয়ে ছাদের কার্নিশ ধরে দারিয়ে আছে যেদিকে নীলকে নিয়ে অফিসারের জিপটা চলে গেলো সেদিকে।রাত পেরিয়ে সকাল হতেই নীলের বাবা উপস্থিত হলেন থানায়।থানায় যেতেই অফিসার তাকে বসতে বললেন।
‘স্যার কি খাবেন? কপি,চা কি খাবেন?’
‘কিছু খেতে আসিনি আমি।রিপোর্ট এসেছে?’
‘হ্যা স্যার,এসেছে।খুনটা উনিই করেছে তার প্রমান আমাদের হাতে’
কথাটা বলে টেবিলের ওপর থেকে একটা ফাইল বেড় করে নীলের বাবার সম্মুখে এগিয়ে দিলেন।তিনি হাতে নিয়ে দেখলেন সত্যিই নীলকে খুনি হিসেবে প্রমানিত করা হয়েছে।
‘অফিসার ‘
‘জি বলুন’
‘আমি কখনো দূর্নীতি করিনি।আজ করতে হচ্ছে নিজের ছেলের জন্য।আপনার যত টাকা লাগে আমি দিবো।কেইচটা এখানেই ক্লোজ করুন’
‘সরি স্যার।এটা এখন আদালতের পর্যায়ে চলে গেছে।আমাদের কিছুই করার নেই’
নীলের বাবা চশমাটা খুলে টেবিলে রাখলেন।কিছুক্ষণ মৌন থেকে টেবিল থেকে চশমাটা পড়ে বললেন
‘অফিসার,ওর এই খুনের দায়ে কিরুপ শাস্তি হতে পারে?’
‘শুধু খুনের দায় হলে কথা ছিলো,মিঃনীলের নামে আরো অনেক কেইচ উঠে এসেছে।যেমন মার-পিট।এরসঙ্গে নারী জনিত কেইচ ও দেওয়া হয়েছে।যদিও এটা একদম মিথ্যা। তবুও কেইচ কার সময় সত্য মিথ্যা সব মিলিয়ে কয়েকটা কেইচ একসাথে দেওয়া হয়’
‘তবুও কিরুপ শাস্তি ওর হতে পারে?’
‘অন্তত ১০ বছরের জেল তো হবেই।এর থেকেও ভয়ংকর শাস্তিও হওয়ার আশংকা বেশি’
‘কেইচটা আদালতে উঠবে কবে? ‘
‘আগামী পরশু।আপনারা ভালো একজন উকিল ঠিক করুন।নইলে মিঃনীল কে ছাড়ানো সম্ভব হবে না’
তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীলের সাথে দেখা না করেই থানা থেকে বেড় হয়ে গেলেন।নীল জেলের ভেতর থেকে সবটা শুনতে পেলেও তার এখন করার কিছুই নেই।সে এখন আশামিতে পরিণত হয়েছে। এটাই তার প্রাপ্য ছিলো হয়তো।
তিনি কয়েকজন উকিলের সাথে পরামর্শ করে রাতে বাসায় যেতেই দেখলো নেহা সোফায় কাঠ বসে আছে।উনাকে দেখে নেহা কাছে গিয়ে করুন স্বরে বললো
‘বাবা,নীল ছাড়া পাবে তো?জানো আমার না দম বন্ধ লাগছে,কিচ্ছু ভালোলাগছে না।মনে হচ্ছে আমার সবটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। অফিসার কি বললো? বাবা চুপ করে আছো কেন বলো না কি বললো অফিসার?’
‘কিচ্ছু করার নেই রে মা।আমি কিচ্ছু করতে পারলাম না’
‘পারলে না মানে?তুমি নীলকে নিয়ে আসতে পারলে না? আমি যে ওর জন্য অপেক্ষা করছি,বাবা তুমি কিছু একটা করো,ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে বাবা,ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে’
নেহা কান্নায় ভেঙে পড়লো।নীলের বাবা তাকে শান্তনা দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন।নেহা অনবরত কেঁদেই চলেছে।একসময় সে নিজের রুমে গেলো।রুমে গিয়ে নীলের চিহ্নগুলি দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে আবারো হুহু করে কাঁদতে লাগলো।
নীল তুমি না বলেছিলে সারাজীবন আমার কাছে থাকবে? কেনো এমনটা হলো? তোমায় একটি দিন কাছে পেলাম না আমি,তোমায় ছাড়া কিভাবে থাকবো আমি?আমার কষ্ট হচ্ছে নীল,প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে,আমি পারছি না।আমি আর পারছি না’
চলবে?