#আমিই_কাবেরী-04
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
‘কাবেরী মেয়েটি এখনো জীবিত’
বিষন্নদার মুখ থেকে এরুপ কথা শুনে জয়ের চরম একটা শক খাওয়ার মতো অবস্থা হলো।সে অবাক বিস্ময়ে বিষন্নদার দিকে তাকিয়ে বললো
‘সেটা কিভাবে সম্ভব? আমি নিজে ওর নাকে হাত দিয়ে পরখ করে নিয়েছিলাম’
‘আপনি তো সেদিন পার্টি করে কাবেরীকে ওই বিল্ডিং এ নিয়ে এসেছিলেন তাই না? এবং তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক শেষে যখন ওয়াসরুম থেকে এসে দেখলেন সে নড়াচড়া করছে না,বিছানায় একঢালা হয়ে আছে তখনি আপনার একটু ভয় ভয় হতে থাকে,তাই না?
‘হুম’
‘কাবেরী তখন অজ্ঞান অবস্থায় ছিলো।আর ভয় নিয়ে একটা কথা বলি,যদি আমরা একটি বিষয়ে ভয় ভয় নিয়ে জানতে শুরু করি বা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেটার মুখোমুখি হই তখন আমাদের নিউরন সেই ভয় বিষয়টা সঠিক প্রমাণ করার জন্য মস্তিষ্কে চাপ দেয়।এবং আমাদের মনে হতে থাকে যে, যে বিষয়ে ভয় পাচ্ছি সেটাই হবে।’
‘এর সাথে কাবেরীর মৃত্যুর কি সম্পর্ক?’
‘সম্পর্ক আছে।যখন আপনি ভয় ভয় অস্থির মন নিয়ে কাবেরীর নাকে হাত দেন তার শ্বাস চলছে কি না দেখার জন্য তখন দেখলেন ওর শ্বাস চলছে না।কিন্তু বাস্তবে তার শ্বাস চলছিলো।সে তখন অজ্ঞান অবস্থায় ছিলো।তার শ্বাস ভারি হয়ে পড়ছিলো।যেহেতু আপনি অস্থির মন নিয়ে নাকে হাত দিয়েছেন তখন সামান্য সময় আপনার কাছে অনেকক্ষণ মনে হয়েছে।তখন দুই সেকেন্ড সময় আপনার কাছে ১০ সেকেন্ডের সমান মনে হয়েছিলো’
‘ঠিক বুঝতে পারছি না’
‘ধরুন ১০ টা বাজতেই টিভিতে একটা মুভি দিবে।আপনার পছন্দের মুভি।যেটার জন্য আপনি অস্থির হয়ে আছেন।তখন ১০টা বাজার আগের ১০ সেকেন্ড আপনার কাছে মনে হতে থাকে অনেক্ক্ষণ সময়।১০ সেকেন্ডে সময় সহ্য করতে পারবেন না,মনে হবে এতোক্ষণেও ১০ সেকেন্ড সময় শেষ হয় না কেন।ঠিক একই ঘটনা কাবেরীর ক্ষেত্রেও ঘটেছে।আপনি হয়তো ২ সেকেন্ড হাত রেখে দিয়েছিলেন এবং আপনার মন ছিলো অস্থির তাই সেই দুই সেকেন্ড আপনার কাছে মনে হয়েছিলো অনেক্ক্ষণ।এবার বুঝতে পেরেছেন?’
জয় হ্যা বলে কিছুটা নড়েচড়ে বসলো।সামনে বসা লোকটার যুক্তি তাকে চরমভাবে অবাক করিয়ে দিয়েছে।জয়ের চোখ তীক্ষ্ণ হতে লাগলো।সে বিষন্নদার কাছে দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছুড়ে মারলো-
‘আপনার কথা ঠিক।আমি যথেষ্ট অস্থির ছিলাম।সেই শারিরিক সম্পর্কটা ছিলো আমার জীবনের প্রথমবার।তাই প্রথম থেকেই অস্থির ছিলাম।কিন্তু কাবেরীকে যখন ছাঁদে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে নিচে ফেলে দিই তখন শব্দ পেলাম না কেন?’
‘আপনি যখন কাবেরীকে ৩ তলা ছাদ থেকে নিচে ফেলে দিলেন তখন শব্দ পাননি কারন বিল্ডিং এর নিচে প্রচুর ঝোপঝাড় ছিলো।সেখানে এক প্রজাতির গাছ আছে যার নাম ক্যানপিসম্পন্ন।৫০ ফুট গাছের এই শিকড়ের বিস্তার হতে পারে ১৫০ ফুট। বৃক্ষের অধিকাংশ শিকড়, বলতে গেলে প্রায় ৯০ শতাংশই থাকে মাটির মাত্র ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতার মধ্যে। বৃক্ষের মোটা কাষ্ঠল শিকড়গুলো এফোঁড়ওফোঁড় হয়ে প্লেট সৃষ্টি করে যাতে পাথর পর্যন্ত শক্তভাবে আটকে থাকতে পারে।যখন মেয়েটিকে ৩ তলা থেকে নিচে ফেলে দিলেন তখন মেয়েটি সেই জালের মতো শেকড়ের ওপর পড়ে।তাই শব্দ হয়নি।ঠিক যেভাবে আপনাকে কুয়োয় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো,আমার কথা বুঝতে পারছেন?’
জয় হ্যা সূচক মাথা নাড়লো।এবং বললো-
‘তাহলে দ্বিতীয়বার যে মেয়েটিকে নিয়ে গিয়েছিলাম তখন মেয়েটি বদলে গিয়ে কাবেরী রুপ কিভাবে নিলো কিভাবে? এর ব্যাখ্যা কি? ‘
‘আমার হাইপোথিসিস মতে,আপনি যখন রাতে পার্টি করে মেয়েটিকে নিয়ে সেই বিল্ডিংয়ের দিকে যান তখন হতে পারে কাবেরী সেই ঘরের কাছেই তারা লুকিয়ে থাকে,কি থাকতে পারেনা?
‘পারে’
‘দেখুন আমি প্রথমেই বলেছি আমি উক্ত বিষয়টির ওপর একটা হাইপোথিসিস দার করিয়েছি।পুরোটাই আমার কাছে ধোঁয়াশা।এখনে পরিষ্কার না।’
‘আপনি বলুন’
‘মেয়েটি যখন ওয়াসরুমে যাবে বলেছিলো, হতে পারে তখন সেই ওয়াসরুমের ভেতরেই কাবেরী ছিলো।এবং মেয়েটি ওয়াসরুমে ঢেকার সাথে সাথে কাবেরী কোনো তরল পদার্থ দিয়ে তাকে মুহূর্তেই অজ্ঞান করে দিয়ে তার বদলে নিজেই আপনার সামনে উপস্থিত হলো।এমনটা হওয়া খুব অস্বাভাবিক কিছু?’
‘না,কিন্তু আমি তখনি চিনতে পারলাম না কেন?’
‘তারন আেনি তখন কিছুটা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন।ততটা লক্ষ্য করেননি’
‘হুম।তাহলে যখন কাবেরী চলে যায় তার আগে জানালার দিকে তাকাতেই তার অগ্নিদৃষ্টিতে আগুন জ্বলে উঠলো।সেটা কিভাবে হলো?’
‘আপনি বলেছিলেন, মেয়েটি আপনার মুখ থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে বলেছিলে মেয়েটি বলেছিলো,সে থাকতে আপনি সিগারেট কেনে খাচ্ছেন।সেই জ্বলন্ত সিগারেট সে জানালা দিয়ে নিচে ফেলার কারনে সেখানে থাকা শুকনা পাতা থেকেই ক্ষিনে ক্ষিনে আগুন জ্বলে উঠেছিলো’
‘আমার ঘরে তাকে নগ্ন হয়ে দেখেছিলাম।সে কেনো এরকম নগ্নতা অবস্থায় আসতো?’
‘সে যে আত্মা এটা আপনাকে বিশ্বাস করাতেই নগ্নতায় ছিলো।সাধারন জামা কাপড় পড়ে আসলে হয়তো আপনাকে প্রভাবিত করতে পারতো না।আর তার লজৃজার বিষয় ও ছিলো না,কারন আপনার দারা তার লজ্জাহরন অনেক আগেই হয়েছিলো’
‘তার মানে সে আত্মা না,সে বেঁচে আছে’
‘হুম’
‘কিন্তু সে এরকম কেনো করছে?আমায় পুলিশের অধীনে করলেই তো হতো,এতেকিছু করার মানে কি?’
‘সেটা ও নিজপই বলবে’
‘কোথায় কাবেরী?
‘এখনো তাঁকে পাইনি,আশা করি খুব শীঘ্রই পাবো।চা খাবো,অনেক্ষন হলো চা খাই না।আরেকবার চা বানিয়ে আনতে পারবেন?
চলবে?