আমিই_কাবেরী-06

0
661

#আমিই_কাবেরী-06
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

নিজে যার কাছে ধ’র্ষি’ত হয়েছিলো তার বোন বিষন্নদার মতো অদ্ভুত একটা লোককে পছন্দ করে ভাবতেই কাবেরীর রাগ হতে থাকলো।মনে মনে ভাবলো যার বোন আছে সে কিভাবে পারে অন্য একটি মেয়ের সাথে এরকম পিশাচের মতো কাজ করতে? কাবেরীর ভাবনা ভেঙে দিয়ে বিষন্নদা বললেন-

“কাবেরী”

“হুম”

“আমি তোমার সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো।আমি তোমার সাথে আছি”

“বিষন্নদা,আমি নিজেও জানিনা আমি কি করবো।অশরীরী আতঙ্ক দিতে দিতে এভাবেই তার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তাকে শাস্তি দিতাম।কিন্তু আদৌও তো এটা সম্ভব হলো না।আপনি সবটা ধরে ফেললেন।ওনাকে বলেও দিলেন”

“এখানে আমি আসতাম না,যদি না বিষয়টা আধিভৌতিক ব্যাপারে না পৌঁছাতো।তুমি হয়তো জানোনা,আমি ভূত,প্রেৎ,অশরীরী এসব বিষয়ে মনে থাকা ভ্রান্ত ধারণা কখনোই মেনে নেই না।তবে আমি তোমার হয়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো”

“বিষন্নদা কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ জানাবো আমার জানা নেই।”

“কিন্তু তুমি এভাবে কিছুই করতে পারবে না।আইন নিজের হাতে তুলেও নিতে পারো না তুমি।এই বিষয়ে আইনি ব্যাবস্থা আমি নেবো”

কাবেরী ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। বিষন্নদার প্রতিটি অবয় যেনো তার নতুন করে বেঁচে থাকা আশ্বাস জোগাড় দিচ্ছে।চোখের জল মুছে কাবেরী বিষন্নদার পানে করুন চোখে তাকিয়ে বললো

“বিষন্নদা, আমার একটা চাকরির ব্যাবস্থা করে দিতে পারবেন?”

“আমি নিজেই ভবঘুরে।আমি তোমায় কি চাকরির ব্যাবস্থা করে দিবো।তবে আমার একটা বন্ধু আছে।তাকে বললে হয়তো একটা ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।”

“না থাক।আমার জন্য আপনাকে বিরক্ত করতে চাই না”

“তুমি তো আমার বোনের মতোই।বোনকে ভাই দেখবে না তো কে দেখবে?”

বিষন্নর মুখে এরুপ কথায় কাবেরীর চোখোর জলের বাঁধ যেনো ভেঙে গেলো।সে বারান্দায় হাটু গেরে বসে কাঁদতে কাঁদতে বললো আপনি অনেক ভালো।

পরেরদিন বিষন্নদা রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে। এমন সময় কেউ একজন তার নাম ধরে ডেকে উঠলো-

“বিষন্নদা,এইযে এইখানে আমি,এইদিকে”

“বিষন্ন আশেপাশে তাকালো।রাস্তার ওপারে একটা মেয়েকে নজরে পড়লো তার।লাল ড্রেস পড়া,খোলা চুল।হাত উঁচু করে ইঙ্গিতে তাকে ডাকছে।বিষন্ন চা টা রেখে রাস্তা পার হয়ে তার কাছে যেতেই মেয়েটি বললো “কেমন আছেন বিষন্নদা”।

“হুম ভালো।তুমি ভালো আছো স্পৃহা?”

“হুম,আমায় চিনতে পেরেছেন? আপনি তো শুধু আমাকেই ভুলে যান,কতবার যে আপনাকে আমার পরিচয় দিয়েছি”

“চিনতে পেরেছি”

“ওহহ গড।আমিতো ভাবলাম এবারো পরিচয় দিতে হবে।আমার কি মনে হয় জানেন?পৃথিবীর সব মেয়ের পরিচয় আপনার জানা থাকলেও আমার পরিচয় আপনার মনে থাকবে না” কথাটি বলে মুখ ঢেকে মুচকি হাসলো মেয়েটা।কি সুন্দর তার হাসি।আমি অবাক হয়ে তার হাসি দেখছি।বহুদিন এমন লজ্জায় ভরা হাসি দেখিনি।আমায় তাকিয়ে দেখা দেখে মেয়েটা হাসি থামিয়ে

“কি দেখছেন?”

“তোমার হাসিটা সুন্দর ”

“থ্যাঙ্কিউ” হালকা লজ্জা পেয়ে

“বিষন্নদা কফি খাবেন? আমার এই রোদে খুব তৃষ্ণা পেয়েছে”

“তৃষ্ণা পেলে কফি খেলে তৃষ্ণা মিটবে?”

“আমি আইসক্রিম খাবো।আপনিতে এসব আইসক্রিম খাবেন না,তাই আপনি কফি খাবেন,আর আমি আইসক্রিম”

“হু চলো”

স্পৃহা মেয়েটির পেছন পেছন হাটছি।এই কড়া রোদে আমি বেশিরভাগ সময় হাটিই না।অথচ আজ হাটতে বেশ লাগছে।

টেবিলে বসে আছি।সামনে বসে আছে স্পৃহা। মেয়েটি মজা করে আইসক্রিম খাচ্ছে।আমি খাচ্ছি চা।চা’য়ে তেমন মজা পাচ্ছি না।রাস্তার ধারের চায়ের কাছে এই দামি রেস্টুরেন্টের চা একদম ফেলনা।আইসক্রিম খাওয়া শেষে সে বিলটাও দিয়ে দিলো।আমি হালকা লজ্জা পেলাম।একটা ছেলে সাথে থাকতে একটা মেয়ে বিল দিবে কেনো?এ ভারি অন্যায়।

রেস্টুরেন্ট থেকে বেড় হয়ে স্পৃহা হাটছে।আমিও হাটছি তার পেছন পেছন। এই মেয়েকে বিদায় জানানের ইচ্ছে হচ্ছে না।আমি কি তার মায়ায় পড়ে যাচ্ছি? না এ হতে দেওয়া যায় না।মায়া কাটাতে এখন আমার কি করা উচিৎ? পেছন পেছন না হেঁটে যদি সামনে যাই তাহলে কেমন হয়? আমি সামনে হাঁটবো, মেয়েটা হাটবে আমার পেছন পেছন।তখন মেয়েটি মায়ায় পড়ে আমার পেছনে হাঁটবে।

আমার চিন্তাভাবনার পতন ঘটিয়ে মেয়েটা বললো-

“বিষন্নদা, এই পার্কে আমার সাথে একটু বসবেন?যদি আপনার সময় হয়।আমার জানা মতে আপনার সময়ের কমতি নেই।ভবঘুরে জীবনে সময়ের কমতও থাকার কথা না”

“হুম,চলো বসা যাক।রোদে হেটে পায়ে ব্যাথা করছে”

পার্কের একটা ব্রেঞ্চে আমি আর মেয়েটি বসে আছি।ব্রেঞ্চগুলির সাইজ দিন দিন ছোট হচ্ছে। দুজন পাশাপাশি বসতে গেলে একজনের গায়ের সাথে আরেকজনের গা লেগে যায় এরকম একটা অবস্থা।

“বিষন্নদা”

“হুম”

“এই জায়গাটার কথা আপনার মনে পড়ে? কলেজের ফাইনাল পরিক্ষা শেষ।আমি মজা আনন্দে ছন্নছাড়া হয়ে মনে আনন্দে বন্ধুদের সাথে এইখান দিয়ে যাচ্ছিলাম,হাতে কৃষ্ণচূড়া ফুল নিয়ে।আপনাকে দেখে সেই ফুল দিয়ে..”

বাকি কথাটা বলতেই লজ্জায় নিজের মুখ ঢেকে নিলো মেয়েটা।আজও তার বাচ্চাদের মতো স্বভাব যায় নি।কে বলবে এই মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়ছে।তার লজ্জা উপেক্ষা করে বললাম

“তোমাদের বাসার ঠিকানাটা দাও তো”

“কেন? আপনি আসবেন? ”

“হু”

“সত্যি আসবেন? ”

“হু যাবো।”

“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না,প্লিজ সত্যি করে বলুননা আপনি সত্যিই আসবেন? ”

“হুম সত্যিই যাবো।তোমার ভাই জয়ের সাথে কিছু কথা বলতে হবে”

“কবে আসবেন?”

“কাল যাবো”

“কাল কখন? ”

“সময় বলতে পারছি না,কোনো একসময় যাবো”

“আমি অপেক্ষায় থাকবো।আসবেন কিন্তু, আমায় কথা দিয়েছেন”

বলেই মেয়েটা আমার হাতে একটা কার্ড দিয়ে চলে যাচ্ছে। আর আমি চেয়ে রইলাম তার চলে যাওয়ার দিকে।

পরেরদিন দুপুরে আমি তাদের বাড়িতে উপস্থিত হলাম।দুপুরের কটকটা রোদে আমার সারা শরীর ঘেমে একাকার। দরজায় মিহি টোকা দিলাম।কিছুক্ষন পর দরজা খুলে দিলো স্পৃহা মেয়েটি।সে কেনো জানি আজ সেজেছে।যত্ন করে চুলে ফুল দিয়েছে,চোখে হালকা কাজল দিয়েছে,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়েছে,হালকা মেক-আপ করেছে।সবকিছু হালকা হলেও তার সৌন্দর্য যেনো প্রবল গাঢ়।দরজা খুলেই মুচকি হেসে ভেতরে আসতে বললেন।আমি ভেতরে এসে বসলাম।বসার ঘরটা সুন্দর। চারিদিকে ফ্রেমে বাধা ছবি।এগুলি দেখতে দেখতে সময় পার করছি। আমার সামনের টেবিলে পিরিচে করে চা আর কয়েকটা বিস্কুট, আলাদা পিরিচে ফল কেটে রাখা,অন্যটায় কয়েকরকমের মিষ্টি,দই। আমি কিছুটা অবাক হয়ে মেয়েটাকে বললাম-

“আমি এখানে মেয়ে দেখতে আসিনি তো,এতোকিছু কেন? শুধু চা হলপই যথেষ্ট”

“আজ প্রথন আপনি আসছেন।আমার যে কি ভালো লাগছে। ”

“আমি কিছু না বলে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম।

” আচ্ছা বিষন্নদা আমায় কেমন লাগছে?”

“সুন্দর লাগছে”

“শুধুই সুন্দর? ”

“খুব সুন্দর”

“সেটাতো আগে বলেননি,আমি বললাম তারপর বলছেন”

আমি উত্তর না দিয়ে চুপ করে চায়পর কাপে আবার চুমুক দিলাম।মেয়েটি আমার ওপর নির্ভরতা বেড়েই চলেছে।এটা হতে দেওয়া যায় না।কিছুক্ষণ পর একজন বয়স্ক লোক এসে বসলেন।তার ছেলেকে নিয়ে তার কষ্টের কথা বললেন।আমি শুনেই গেলাম।কিছুক্ষণ পর ওনাকে বললাম

“জয়কে নিয়ে আসুন।ওনার সাথে আমার কিছু কথা বলার আছে”

“স্পৃহা, মা যাও তো,ওকে নিয়ে এসো”।স্পৃহা গিয়ে জয়কে নিয়ে এলো।আমি স্পৃহাকে বললাম চলে যেতে।তার সামনে সবকিছু বললে বিষয়টা কেমন দেখায়।জয় এবং তার বাবা সামনের সোফায় বসে আছে।আমি বসে আছি ঠিক তাদের বিপরীতে থাকা বেতের চেয়ারটায়।একটু পর দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হলো।কাজের মেয়েটা খুলে দিলো।জয় দরজার দিকে তাকিয়ে চরমভাবে একটা ঝটকা খেলো।মূহুর্তেই চেহারায় কাঠিন্যে ভাব চলে এসেছে।ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। গা ঘেমে একাকার। যে মেয়েটি এসেছে সে…..

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here