অবাধ্য_প্রেম( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) #পর্ব_১১

0
1115

#অবাধ্য_প্রেম( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#পর্ব_১১
#নন্দিনী_নীলা

নিবিড় থপ করে বসে পরল। রাফসান কাকা নিবিড় এর পাশে বসে বলল,” এখন ঝামেলা করিস না একটু শান্ত হ। ছোঁয়া কে যেতে দে আমরা খুব শিগগিরই ওকে জামিন করিয়ে আনব।”
” বিনা দোষে ছোঁয়াকে ওরা কেন নিয়ে গেল কাকু?”
” বিনা দোষে কিনা জানি না। সেটা ছোঁয়া বলতে পারবে। কিন্তু এই অভিযোগ কে করেছে জানিস?”
” কে করছে?”
” ছোঁয়ার মামি।”
” কি বলছো?”
” জমিসের খুন নাকি ছোঁয়া করেছে। আর নিজের আপন মামি এই অভিযোগ করেছে তাও জসিমের ভাইয়ের সাথে মিলে।”
” ওই মহিলা কে আমি খুন করব।”
“মাথা ঠান্ডা করে চল থানায় যেতে হবে।”
রাফসান কাকা নিজের চলে গেল রেডি হতে। এদিকে বাড়ির সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। নিলাশা বেগম নিজের মত চিৎকার করে যাচ্ছে। তাকে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। নিবিড় কাবিননামা দিকে অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকালো। তাকাতেই চমকে উঠল। কারণ কাবিননামায় সই করা ছোঁয়া নামে। এলোমেলো হাতেই স‌ই করেছে। নিবিড় চিৎকার করে বলল,” আমার আর ছোঁয়ার কাবিন বিয়ে হয়ে গেছে। ছোঁয়া তোমাকে নিয়ে এসে খুব শীঘ্রই কবুল পরেও বিয়ে করব। তুমি টেনশন কর না।”

নিলাশা বেগম দৌড়ে এসে বলল,” দে ও‌ই কাগজ দে ছিঁড়ে ফেলি। ওই ফকিন্নি খুনিকে তোর ব‌উয়ের পরিচয়ে আমি থাকতে দেব না।”
নিবিড় ধমকের সুরে বলল,” খবরদার আমার ব‌উ কে নিয়ে বাজে কথা বলবে না। নাহলে তুমি আমার মা আমি ভুলে যাব।”
নিলাশা বেগম বিলোপ করে কাঁদছে সোফায় বসে। এদিকে রিসা বলে উঠল,” আফিয়ার এই অবস্থা তোরা কেউ যাবি না।”
নিবিড় বলল,” তোরা সবাই যেতে পারিস। আমি যাব না।”
যাওয়া নিয়ে নিবিড় কে কেউ কিছু না বললেও রিসা সঠিকই বলল। সবাই চলে গেল হসপিটালে যতই হোক নিজেদের বন্ধু বলে কথা। নিবিড়, রাফসান, আবির চলে এলো থানায়। রাফসান কাকা নিজের ঘনিষ্ঠার এক বন্ধু উকিল হায়ার করেছে। তিনি সবকিছু ইনভেস্টেন্ড করে জামিনের চেষ্টা করছে। কিন্তু ১২ ঘণ্টার আগে কিছুই করা যাবে না থাকতে হবে থানায়। নিবিড় থানায় এসে হাঙ্গামা করে দেখা করল। ছোঁয়ার সাথে দেখা করতে কিছুতে ওকে ঢুকতে দেবে না উকিল নোটিশ ছাড়া। সেসব আনার টাইম আছে নাকি নিবিড়ের কাছে সে ত এখনি এই মুহূর্তে দেখা করবে তার ছোঁয়ার সাথে।

নিবিড় দেখল ছোঁয়া কে একটা নোংরা রুমে বসিয়ে রেখেছে ওর তো মাথা গরম হয়ে গেল। তবুও শান্ত গলায় ডাকল,” ছোঁয়া।”
মাথা নিচু করে বসে ছিল ছোঁয়া নিবিড়ের আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে দাঁড়াল। আর দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো।
” ছোঁয়া আমি জানি তুমি কোন খুন করো নি। করতেই পারো না। ওরা মিথ্যা বলেছে তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে, তাই না।”
ছোঁয়া মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছে। নিবিড় বলল,” কথা বলছ না কেন? ভয় কেন পাচ্ছ এই অপরিষ্কার জায়গায় থাকতে তোমার কষ্ট হচ্ছে তাইনা দাঁড়াও এখনি বের করছি।”
” কি বলছেন এসব আমাকে এখানে থাকতে হবে।”
” কে বলেছে তুমি কোন অন্যায় করো নি তুমি কেন এখানে থাকবে। এখানে থাকবে তোমার ওই মামি তাকে আমি ছেড়ে দেব না ছোঁয়া।”
” আমি খুন করেছি নিবিড়। কেউ মিথ্যা বলেনি।”
বলেই ছোঁয়া ডুকরে কেঁদে উঠলো। নিবিড় লোহার শিক ধরে ছিল ঠাস করে ওর হাত পরে গেল নিচে।
” তুমি মিথ্যা বলছো ছোঁয়া আমি বিশ্বাস করিনা।”
” আমি সত্যি বলছি নিবিড়।”
” ইম্পসিবল। এটা আমি কখনো বিশ্বাস করব না।”
ছোঁয়া আর কিছু বলল না।

নিবিড় নিজের মনে বিরবির করে বেরিয়ে এলো এসেই চিৎকার করতে লাগল ছোঁয়া কে ওই নোংরা রুমে তো থেকে বের করতে বলে।
শায়ের এগিয়ে এসে বলল,” দয়া করে পাগলামি করবেন না। আপনি ছোটো বাচ্চা না যথেষ্ট বুঝ আছে আপনার। চলে যান আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন। উকিল নোটিশ ছাড়া আমরা কি করতে পারব‌ না।”
নিবিড় রেখে শায়ের এর কলার চেপে ধরল,,”আমার ছোঁয়া কে ওই রুমে থেকে বের করেন। না হলে আমি কিন্তু সব কিছু ধ্বংস করে দেব।”
আবির আর রাফসান দৌড়ে এসে নিবিড় কে ছাড়িয়ে আনল। উকিল বোরহান হোসেন আসলো তখনি। তাকে দেখে ভাবল কোন সুখবর নিয়ে আসছে কিন্তু না তা পারে নি। তিনি এসেছে পরিস্থিতি দেখতে। নিবিড় এর এমন পাগলামী দেখে তার ও খারাপ লাগল। রাফসানের থেকে শুনেছে সব কিছু বিয়ের কথা ছিল। পাগলের মতো ভালোবাসে তাকে কিনা জেলে ঢুকিয়ে রেখেছে এসব কি মানা যায়?

অফিসার শায়ের রাগে ফুঁসছে ওর গায়ে হাত তুলেছে এতো বড় স্পর্ধা ওই ছেলের। মন চাচ্ছে জেলে ঢুকিয়ে রাখতে এটাকেও তখন বোরহান হোসেন শায়ের কে এক পাশে নিয়ে কিছু বলতে লাগে। শায়ের এর রাগ একটু পরে আর রাজি ও হয়। একজন কনস্টেবলকে কিছু ইশারা করতেই সে গিয়ে ছোঁয়া কে নিয়ে আসে।
কাঁদতে কাঁদতে ছোঁয়া চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। নিবিড় ছোঁয়া কে আসতে দেখেই দৌড়ে ওকে জাপ্টে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে ছোঁয়া দূর্বল হয়ে গেছে‌। দূর্বল শরীরটা ছেড়ে দিল নিবিড় এর বাহুতে। দুইটা চেয়ার দেওয়া হলো ছোঁয়া আর নিবিড় সেখানে বসে র‌ইল।
আবির বাইরে থেকে খাবার এনে দিয়েছে এই অবস্থায় খাওয়ার মতো মন মানসিকতা নাই কিন্তু একেবারে না খেয়ে ও থাকা যায় না।
নিবিড় ছোঁয়া কে খাইয়ে দিল। ছোঁয়া নিবিড়ের কাঁধেই ঘুমিয়ে পরেছে।

সারারাত থানায় কাটালো নিবিড় ছোঁয়ার সাথে। রাফসান কাকা, আবির বাসায় চলে গেছিল।
সকালেই রাফসান কাকা এলো বোরহান হোসেন কে নিয়ে নোটিশ নিয়ে এসেছে। ছোঁয়া কে জামিন করিয়েছে কিন্তু ছেড়ে দেয়নি। বাসায় থেকেই এই খুনের রহস্য উদঘাটন করা হবে।
ছোঁয়ার হাত ধরে থানার বাইরে এলো নিবিড়। গাড়ি উঠে বসতেই ওর ফোন বেজে উঠল তৌহিদ কল করেছে। নিবিড় ধরবে না ধরবে না করেও ধরল,,” হ্যা বল।”
” তোদের কি খবর? বাসর তো থানায় করলি কেমন কাটল?”
” যা বলতে কল করছিস তাই বল!”
” আফিয়ার লাইফ রিক্স। একবার আসবি?”
” নাহ।”
” একবার আয় ওর কিছু হ‌ইলে ওর বাপ তরেও জেলে পাঠাবে বলতাছে। আফিয়া সুইসাইড করার আগে তোরে নিয়া অনেক কিছু লিখে গেছে!”
” ওর ওই বুড়িওয়ালা বাপরে আমি ভয় পাই? মেজাজ গরম আছে ফোন রাখ।”
” বি নেগেটিভ রক্ত দরকার ভাই পাইলে মাইয়া টারে বাঁচা। এককালে আমাদের বন্ধু আছিল।”
কল কেটে দিল ছোঁয়া সব কথাই শুনেছে ও মাথা নিবিড়ের কাঁধ থেকে সরিয়ে বলল,” হসপিটালে চলুন আমি আফিয়া আপুকে রক্ত দেব।”
নিবিড় চোখ কপালে তুলে বললো,” হোয়াট।”
” হুম চলুন।”

নিবিড় ছোঁয়ার জন্য বাধ্য হয়ে হসপিটাল গেল। এই শরীরে রক্ত দিতে মানা ও কম করে নাই কিন্তু ছোঁয়া নাছোড়বান্দা দিয়ে খান্ত হলো। রক্ত দিয়ে ছোঁয়া ও একেবারে দূর্বল হয়ে পরল। রাত থেকে এতো দৌড়াদৌড়ি টেনশনে তার উপর রক্ত দেওয়ায় ওর মাথা ঘুরে উঠলো। নিবিড় চিৎকার চেঁচামেচি করে ছোঁয়া কে বকে যাচ্ছে। এদিকে আফিয়ার মা বাবা ছোঁয়া কে কৃতজ্ঞতা সহিত অনেক কথাই বলল। আফিয়ার মা ছোঁয়া কে জরিয়ে পর্যন্ত ধরল।
নিবিড় ছোঁয়া কে নিজের হাতে পানি খাইয়ে বলল,” সারারাত থানা ছিলাম এখন হসপিটালে ভর্তি থাকি। বাড়ি আর যাওয়া লাগবে না।”
‘ আচ্ছা!”
” আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে।”
” তো রাগ দেখান আমি কি না করেছি?”
” নতুন ব‌উ এর উপর রাগ দেখাতে হয় না।”
” তাহলে কি দেখাতে হয়?”
” ভালোবাসা দেখাতে হয়।”
ছোঁয়াকে নিয়ে বাড়ি আসল নিবিড়। নিলাশা বেগম ওদের দেখেই বলল,” আমার সংসারটা ধ্বংস করতে চলে আসছে।”
ছোঁয়াকে নিয়ে নিবিড় চলে আসল নিজের রুমে। আশা কে চিৎকার করে ডেকে বলল খাবার পাঠাতে। সাথে গরম দুধ পাঠাতে এক গ্লাস। কাল থেকে বিয়ের বেনারসি পরে থাকতে থাকতে ছোঁয়ার অবস্থা কাহিল। হসপিটালের নার্স টা রক্ত নেওয়ার সময় ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল,” আপনার কি বিয়ে নাকি? লাল বেনারসি, দোপাট্টা পরে ঘুরেছেন? পেশেন্ট কি আপনার আপন কেউ হঠাৎ সুইসাইড করল কেন আপনার বিয়ের সময়?”
ছোঁয়া নার্স কে বলেছিল,” পেশেন্ট আমার স্বামীকে ভালোবাসে। আমার সাথে তার বিয়ে হচ্ছে তাই তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল।”
মেয়েটা মুখে হাত দিয়ে বলল,” বলেন কি? সব জেনেও তাকে বাঁচাতে চলে এসেছেন?”
ছোঁয়া আর কিছু বলল না।
নিবিড় ছোঁয়া কে অন্যমনষ্ক হয়ে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে দুগালে হাত রেখে কপালে ওষ্ঠ স্পর্শ করে বলল,” আমি আমার কাগজ কলমে ব‌উকে চুমু খেলাম।”
ছোঁয়া চোখ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরল।
” আমাকে আবার ওই জেলে যেতে হবে। শুধু শুধু নিয়ে আসলেন।”
” আমি বেঁচে থাকতে আর যেতে পারবে না। দেখি কে তোমাকে নেয়। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।”
” আমার আপনাকে অনেক কিছু বলার আছে।”
নিবিড় ছোঁয়া কে ওয়াশ রুমে পাঠিয়ে দিল। ছোঁয়া ওর ড্রেস আনতে বলল ওই রুমে থেকে নিবিড় নিজের আলমারি খুলে এক সেট ড্রেস এনে ওকে দিলো।
ছোঁয়া হাতে নিয়ে বলল,” এটা কার ড্রেস?”
” আমার ব‌উয়ের!”
” এটা তো আমার না।”
” এটা তোমা‌র‌ই তাড়াতাড়ি যাও।”

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here